তেইশতম বসন্ত
পরিসংখ্যা ৭
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)
কথার সমাপ্তি হয়নি।এর আগেই হন্তদন্ত হয়ে কল কেটে উধাও খুশবু।তবে ফাহাদ এর মুখে স্পষ্ট শুনেছে খুশবুর জন্মদিনের কথা। জানা ছিলো না।রাতের খাবারের পর খুশবুর টানে ফোনের দিকে এসেছিল দুদিন পর। ব্যস্ততায় সময় হয়ে উঠেনি।সাথে খুশবুর অভিমানী সুর।দুটোই ভীষন ভাবাচ্ছে আফতাবকে।
উঠোনের বাইরে পা বাড়াতেই জরিনা বেগম থামিয়ে দেন ফাহাদকে।বলে উঠেন,
-“বাগানের দিকে যাইস না।এই রাত্রের বেলায় মাছ ভাজবি।জ্বীন ভূতের আছড় হইবো”
ফাহাদ হেঁসে উত্তর দেয়, -“কি যে বলো নানী!এসব কিছুই নেই।”
জরিনা বেগম এগিয়ে এসে ফাহাদ এর কান মলা দিয়ে বললেন,
-“জ্বীন আছে।বদ জ্বীন।আজকালকের পোলাপান বেশি পাকনা!উঠানে বইসা যা করার কর”
নানীর কথামত উঠোনেই কয়লা ধরিয়েছে ফাহাদ।সাথে আছেন জিতু মামা।মামী মাছ মেরিনেট করে তাদের সামনে এনে দিয়ে তিনিও পাশে বসলেন।পারিবারিক উৎসবের মহল।খুশবু জরিনা বেগমের দুর্বল কাঁধে কনুই ঠেকিয়ে বলে উঠলো,
-“আজকে তোমার আর তোমার জামাইর প্রেমের গল্প বলবে আমাদের।”
জরিনা বেগম শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন,
– “ছিঃ!”
খুশবু বললো,
-“ওমা! ছিঃ করার কি আছে?এতবছর সংসার করেছো গল্প বলতে দোষ।”
-“এমনে প্রেম বিয়ার কথা কইতে হয় না।”
-“তোমাদের এই লজিক আমার মাথায় ঢুকেনা। পৃথিবীর সব মানুষ বিয়ে করছে।অথচ বিয়ের নামটা উঠলে একেকজন লজ্জায় নুয়ে পড়ে।এটা কেনো?”
ফাহাদ চেঁচিয়ে বললো, -“তুই নির্লজ্জ যে!”
ইচ্ছেকৃত বাড়ির সমস্ত লাইট নিভিয়ে রাখা হয়েছে।তেমন ঠান্ডা নেই।তারপরও কিছু দুরত্বে কাঠে ধরানো আগুন আলোর কাজ করছে। মৃদু বাতাসটা প্রশান্তির।সাথে ধোঁয়া উঠছে কয়লা হতে।ফাহাদ এক্সপার্ট এসবে।ফিশ বার্বিকিউ করতে করতে শুনতে লাগলো জরিনা বেগমের গল্প।
তিনি বলতে লাগলেন, -“আমিতো ঢাকার মাইয়া।তোর নানায় ছিলো সিলেটি। খাস সিলেটি। আমরার যখন বিয়া হয় আমি হাফ প্যান্ট পইড়া ঘুড়ি।একদিন বাড়িতে রোল পড়লো সিলেটি মেহমান আইবো। বুবুরে দেখতে।ঘরের মধ্যে আম্মা সব তামঝাম শুরু করে।আমার অত চিন্তা আছিলো না। বিয়া কি বুঝতাম না।গাছ থিকা আম পাইরা লবণ মরিচ দিয়া মাখায় খাইতে খাইতে দেখলাম ছোট খালাম্মা বুবুরে সুনো পাউডার মাইখা সাজাইতাছে।তার নাকি কতদিন বাদে বিয়া।আমি খুশিতে ফাল পারতে শুরু করছি।দিন শেষ কইরা সন্ধ্যাবেলায় মেহমান আইলো।আমিও কাপড় পাল্টায় গোলাপী কালার সেলোয়ার কামিজ পড়ছিলাম।আমারে আম্মায় কইলো চা দিয়া আইতে।তোর নানা আইছিলো বুবুরে দেখতে আর আমি জানতাম না নানার বন্ধু আমারে দেখতে আইছিলো।কিন্তু আল্লাহর কি লীলাখেলা।দুইজনের জামাই পাল্টায় গেলো।বন্ধুর পছন্দ হইলো বুবুরে।আর তোর নানায় পছন্দ করলো আমারে।”
খুশবু হা করে চেয়েছিলো।জরিনা বেগম থেমে গেলে খুশবু বলে উঠে,
– “তারপর!তারপর!”
জরিনা বেগম চাপা হেঁসে বলতে লাগলেন, -“আম্মায় গোসা করলেও আব্বায় রাজি হইছিলো।তার কথা হইলো যার কপালে যে আছে।দুইজনই ভালো মানুষ। তারপর কি বুবুর বিয়া হইলো।এরপর আমার পালা।আমি বিয়া করতে রাজি না।মাটিতে গড়াগড়ি কইরা কানছি। আম্মায় আমার জিদ দেইখা আমারে মারছিলো অনেক।কিন্তু আব্বায় আমারে পুকুর পাড়ে নিয়া বুঝাইছে।এক বছর সময় নিছে তোর নানার বাড়ির মানুষ থিকা।আকদ করায় রাখছে পড়ে এক বছর বাদে উঠায় নিছে।”
রূপা প্রশ্ন করলো, -“সংসার কেমনে করলেন আম্মা ওই বয়সে?”
জরিনা বেগম উত্তর দেন, “লাল শাড়ি পিন্দা এদিক ওদিক ঢ্যাং ঢ্যাং কইরা ঘুইরা বেড়াইতাম।তোর নানায় আমার লগে লগে ঘুরতো।আমার শাশুড়ি আছিলো জিদ্দি। শাশুড়ির বকা খাওয়া থিকা বাঁচাইতো।কি করতে হইবো,কেমনে চলতে হইবো,সংসার কি এগুলা বুঝাইতো রাত্রের বেলা।চুলে তেল দিয়া দিতো।আমি একদিন রানতে গেছিলাম।সবকিছু উল্টা পাল্টা কইরা ফালাইছি।তোর নানায় বাড়ির অন্য দরজা দিয়া রান্দন ঘরে আইয়া সব ঠিক কইরা দিয়া গেছে।নিজে রাইন্দা আমার নাম দিছে।ধীরেধীরে শিখায় পাক্কা গিন্নি বানাইলো।আর ওই ব্যাটা এখন দিব্যি আমারে ফালায় রাইখা ঘুমায়”
গল্পের মোড় ঘুরে বেদনার অনুভব হলো। উৎসুক মুখগুলো মিয়ে এসেছে।সবাই চক্ষু নত করে বসে।জরিনা বেগমকে দুর্বল হয়ে পড়তে দেখে খুশবু বললো,
-“তোমাকে এই কারণেই বিরক্ত লাগে বুড়ি।খালি কান্না করো।কান্না থামাও বলছি।নাহয় আমি গেলাম!”
খুশবুর রুক্ষতার পেছনের মায়া বুঝেন জরিনা বেগম।লজ্জা পায় ভালোবাসা প্রকাশ করতে।সেটাও জানেন।মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“আমাকে বুড়ি বলিস?তোর বয়স কত হলো এবার?”
খুশবু লাগাতার পলক ঝাঁপটে জানান দেয়, -“তেইশ”
-“বুড়িতো তুই!ভালো একটা দামান দেইখা তোর বিয়াটাও দিতে হইবো”
-“খুঁজো।পেলে আমাকে জানিও।আমি রাজি।”
ফাহাদ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো।বড় ছোট না মেনেই রাজি হয়ে গেল বিয়েতে।চোখের শরমটাও দেখা গেলো না।তাকে প্রশ্ন করা হলে সে মিনমিন করতো।তার বোন তার চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে।সাইলেন্ট ফোনটা হঠাৎ জ্বলে উঠে।তার কয়েক সেকেন্ড পর নিভেও গেলো আলো। খুদে বার্তা এসেছে।খুশবু সবার আড়ালে ফোন হাতে তুলে নেয়।
মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখলো,
-“কোনো এক বসন্তের হাওয়ায় মিশে পৃথিবীতে আগমনের জন্য ধন্যবাদ।শুভ জন্মজয়ন্তী ক্যামেলিয়া”
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো খুশবু।তাকে ক্যামেলিয়া বলে সম্বোধন করলো?সেতো এক ফুলের নাম।এক চিলতে হাসি ফুটে আছে।আনমনে নেত্র স্থাপিত সৌন্দর্য্য মাখা লেখাগুলোর দিকে।বাবা,মা,ভাই ব্যতীত সকলেই তাকে বিশেষ অনুভব করাতে অক্ষম।আজ সেই আক্ষেপেরও অবসান।
প্রতু্যত্তরে ছোট্ট করে লিখে ফেলে, -“ধন্যবাদ।”
-“রেগে আছেন?”
ফিরতি উত্তরের দ্রুততা দেখে কিছুটা অবাক হয় খুশবু।হয়তো বার্তা লিখেই বসে ছিলো।শুধু খুশবুর জবাবের অপেক্ষা বিলম্বিত করে রেখেছিল।
খুশবু জবাব দেয়, -“আমি রেগে নেই।সময় কাটাচ্ছি পরিবারের সাথে।”
-“বিশেষ সময়টা উপভোগ করুন।শুভ রাত্রি”
__
দেশের সীমান্ত এক নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।আত্মিক সুখ মেলে এখানে।পাহাড়ে মোড়ানো এই শহরে ভয়ানক প্রশান্তি।বাকি সেনা সদস্যদের সাথে নিয়ে তল্লাশিতে মশগুল আফতাব।এক ঝাঁক মাল বোঝাইকৃত ট্রাক আসছে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে।মুখে একফোঁটা বিরক্তির ছাপ নেই।দেশ রক্ষার সাথে সাথে প্রেম জাগে কর্মের প্রতি।কোনো ক্লান্তি যেনো ক্লান্তি মনে হয়না। ভারি রাইফেলকে নিতান্তই কম ওজনের বস্তু মনে হয়।তীব্র গরম আর ভারী বর্ষণ কোনোটাই তোয়াক্কা করতে ইচ্ছে হয়না।আজও সেই নিয়ম,সেই রুটিন। বহিরাগত অপশক্তি থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে মাঠে নেমেছে।
বিরতির সময় আরিফ এসে হাজির।জানিয়ে গেলো দুপুরের খাবারের কথা।আফতাব হাত মুখ ধুয়ে বরাদ্দকৃত স্থানে এসে হাজির। খাবারে হাত দিতেই মনে পড়লো দুটো কথা।এতদিন বাড়িতে মায়ের হাতের খাবার খেয়ে যেনো অভ্যস্ত হয়ে পড়ছিলো।বাড়ি থেকে ফিরলেই প্রথমে এই কথাটি সর্বপ্রথম মনে পড়ে।আরো একটি বিশেষ জিনিস যোগ হয়েছে।ফাল্গুনের হাওয়ায় খুশবুর কথা মনে পড়লো।আগামীকাল আরো গহীনে যেতে হবে।নেটওয়ার্ক পাওয়া যেখানে দুঃসাধ্য।কে জানে কবে আবার কথা হবে?
অন্যমনস্ক আফতাবকে আরিফ প্রশ্ন করলো,
-“তোমার টেলিফোনের প্রেম কতদূর?”
আফতাব কল্পনার ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। জবাবে বলে, -“দেখা দিয়েছে সাথে কিছু সময়ও দিয়েছে।”
-“বাহ!তাহলে প্রেম জমে ক্ষির”
-“এখনও দ্বিধা আছে।”
-“কেনো ভাই?”
-“সময় দরকার হুট করেই কিছু হয়না।কোনো কমিটমেন্টে আসিনি।”
আরিফ হেঁসে বলে উঠলো, -“ডাইরেক্ট বিয়ে।কোনো কথা নেই”
আরিফ এর কোথায় বাঁকা হাসে আফতাব।বিয়ে? খুশবু করবে তাকে বিয়ে?করার কোনো কারণতো দেখছে না সে।ভাগ্যে সঙ্গ লেখা আছে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।তবে বিয়ে শব্দটি শুনে বেশ ভালো অনুভব করছে আফতাব। আরেকদফা হাসলো।
আরিফের পানে চেয়ে বললো, -“শুরু হওয়ার আগেই একটা ঝামেলা বেঁধে গেছে।”
-“কি ঝামেলা?” জানতে চায় আরিফ।
-“ফেরার পথে খুশবুর সাথে কথা বলেছি।বিদায় নিয়েছি আর কি। সেটা বাবা দেখে ফেলেছেন। খুশবুকে নাকি সরাসরি প্রশ্নও করেছেন।বুঝতে পারছি না বাবা কিভাবে নিবেন বিষয়টাকে।আমি কি বলে দিবো তাদের?”
আরিফ ব্যঙ্গ করে আফতাব এর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি বলবেন ক্যাপ্টেন আফতাব মির্জা?”
-“খুশবুর কথা”
-“হ্যাঁ খুশবুর কথাই কি বলবেন?”
-“বলবো আমি খুশবুকে…..”
কথাটি অসম্পূর্ণই রয়ে গেলো।শব্দ অধর অব্দি এসে থেমে গেছে। আড়চোখে চেয়ে বুঝলো আরিফ এর মতলব।সরাসরি শুনতে এই নীতি প্রয়োগ করেছে।আফতাব কপাল কুঁচকে নিতেই আরিফ হেসে উঠলো।
মন গহ্বর থেকে অবলীলায় বাক্য এলো,
-“অন্তরালে মোহে ডুবেছি ক্যামেলিয়া ফুলের”
বিরতির সময় আর পাঁচ মিনিট বাকি।ফোনের নেটওয়ার্ক ভালো না।পকেটে ফোনটা অনবরত বেজে চলেছে।সময় দেখে ফোনটা রিসিভ করে অন্যদিকে চলে যায় আফতাব।মায়ের কল।
-“আসসালামু আলাইকুম”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম।ব্যস্ত তুমি?”
-“না মা।ব্রেক টাইম”
রুমানা মির্জা নরম গলায় জানতে চান, -“খেয়েছো?”
-“হ্যাঁ।তোমরা খেয়েছো?”
-“খেয়েছি।নিজের যত্ন নিবে কিন্তু।খাবার ঠিকঠাকমতো খাবে।এমনেতেই শরীরের উপর ধকল যায়।”
এই চিন্তাটা প্রতিবারের।যখনই কল করে প্রতিবারই এই কথা বলে রুমানা মির্জা।যেনো প্রথমবার বাড়ি থেকে দূরে।খারাপ লাগে না একই কথা বারংবার শুনতে।উল্টো ভালো লাগে।
আফতাব বললো, -“কি করছো?”
-“বসে ছিলাম।ভাবলাম ফোন করে খোঁজ নেই আবার কবে না কবে নেটওয়ার্ক পাই।তাছাড়া একটা কথা ছিলো।শুনবে?”
-“হ্যাঁ মা বলো”
কিয়ৎ হাঁসফাঁস করে রুমানা মির্জা প্রশ্ন করেন,
-“তোমার বাবা একটা মেয়ের কথা বললো।সেদিন তোমাদের কথা বলতে দেখেছে।ঢাকার মেয়েটা।তুমি ওকে চেনো?”
যে চিন্তাটা কিছুক্ষন আগে এসেছিল সেটাই হলো।বাবা মায়ের স্বভাব অজানা নয়।ছেলের সবটার মধ্যেই তাদের বিশেষ নজরদারি।তাতে আফতাবেরও কোনো সমস্যা নেই।একমাত্র ছেলের প্রতি এতটুকু অধিকারতো আছেই তাদের।
আফতাব নির্দ্বিধায় বলে উঠে,
-“চিনি মা।শুধু ওকে নয় ওর ভাইকেও চিনি।তাছাড়া আমাদের পাশের বাড়িতেই এসেছে বেড়াতে।”
-“ওহ আচ্ছা”
মায়ের ছোট্ট জবাবের অর্থ বুঝে আফতাব।বলে,
-“আমার বন্ধু বলতে পারো”
বন্ধুসুলভ আচরণতো তার মায়েরও আছে।শুধু কাজে থাকলেই স্পষ্ট কথা বলেন।সামান্য হেঁসে প্রশ্ন করলেন,
-“শুধু বন্ধু?”
এক লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে আফতাব জবাব দেয়,
-“আপাদত শুধু বন্ধুই….”
__
অনেকদিন বাড়ির মধ্যে পরে থাকতে থাকতে দেহে জং ধরে যাচ্ছে।তখনই ফাহাদ এসে জানালো নোমান আসবে।আজ তাদের পরিবার সমেত দাওয়াত সেখানে।জরিনা বেগম,জিতু এবং রূপা যেতে চাচ্ছে না বিধায় ফাহাদ আর খুশবু একাই চলে গেলো নোমানের সাথে।যৌথ পরিবার নোমানদের।তিন চাচা একসাথে একই বাড়িতে থাকেন।বড় দুইজন রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও ছোটজনের পছন্দ সাধারণ জীবন।শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন পাড় করছেন।
বিশাল খাবারের টেবিলে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।পরিবারের সকলে আর ফাহাদ,খুশবু।গল্প করতে করতে নোমানের মা ফাহাদ আর খুশবুর পাতে সাতকরার তরকারি তুলে দিয়ে বললেন,
-“সিলেটের জনপ্রিয় খাবার সাতকরা।খেয়ে দেখো”
খুশবু বললো, -“আগে কখনো খাইনি আন্টি।কেমন টেস্ট?”
-“আমাদেরতো ভালোই লাগে স্বাদ।গরুর গোস্ত দিয়ে রান্না করেছি।আমাদের সিলেটে সবাই শখ করে খায়।খেয়েই দেখো না কেমন লাগে।”
খুশবু খেতে শুরু করলো।তার দেখাদেখি ফাহাদও।প্রথমে অদ্ভুত মনে হলেও ধীরেধীরে মুখে স্বাদ আসছে।একদম ভিন্ন।বেশ লাগলো খেতে।
ফাহাদ বললো, -“খুব ভালো হয়েছে আন্টি।”
বিনয়ী হাঁসি ছুঁড়ে নোমানের মা।খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে ছাদে আড্ডা জমে তাদের।নেহা তাদের পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছে।চায়ের কাপ ধরিয়ে নেহা বললো,
-“ছবিগুলো এখনও দিলেন না।”
ফাহাদ হাসলো।পকেট থেকে পেনড্রাইভ বের করে নেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“নাও। ছবিতো না যেনো আলী বাবার খাজানা।”
নেহা বলে উঠে, -“ধন্যবাদ।আপনাকে অনেক জ্বালাতন করলাম না?”
-“তাতো অবশ্যই।”
-“এর বিনিময়ে কি করতে পারি আমি?”
ফাহাদ দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বললো,
-“এত এত খাবার খাইয়েছে তোমার মা বিনিময়ে কিছু চাইলে লোভী দেখায়।”
দুজনেই একত্রে হেঁসে উঠে। খুশবু কিছুই বুঝতে পারলো না।জিজ্ঞাসু নয়নজোড়া দুজনার দিকে ঘোরালে তাকে সবটা খুলে বলে ফাহাদ।তাদের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁসি ফুটে তার ঠোঁটেও।
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরেছে। খুশবুকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে ফাহাদ আবারো বেরিয়ে পড়লো নোমানের সাথে।যাওয়ার পথে পাঁচশত টাকা ঘুষ দিয়ে গেছে।যেনো এই খবর বাবার কান অব্দি না পৌঁছায়।টাকা ব্যাগে গুঁজে আয়েশী ভঙ্গিতে টিভির সামনে এসে বসলো।আর মনে হলো স্মার্টফোন আসার পর থেকে এই টিভি জিনিসটা কত অকেজো।কেউ তাকে পাত্তাই দেয় না।ঘরে থাকার পরও অপ্রয়োজনীয়।খেলা দেখার সময় আবার তার প্রয়োজনীয়তা মনে পড়ে।
টিভির জায়গা আবার দখল করে দিলো ফোন।মেসেজ এসেছে,
– “দরজার বাহিরে আপনার জন্মদিনের উপহার আছে।দ্রুত গিয়ে গ্রহণ করুন।ফাস্ট!”
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতটায়।এমন অদ্ভুত মেসেজের অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না খুশবু।দরজা থেকে দু’কদম দূরে সে।আসলেও উপহার পাঠিয়েছে?নাকি মিথ্যে!
মাথায় কাপড় টেনে দরজার বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে।আধাঁরে কালচে সবুজ রাঙা বিশেষ পোশাকে পুরুষ অবয়ব দাঁড়িয়ে।হাত দুটো পকেটে গুঁজে।পিঠ এলিয়ে দেহের সমগ্র ভার তার পোশাকের সাথে মিলেমিশে যাওয়া জিপটার উপর।মস্তিষ্কে সবটা স্পষ্ট হওয়ার আগেই সুর ভেসে আসে,
-“আজ বসন্তের প্রথম তারিখ খুশবু।সিলেট শহরকে আপনার সুঘ্রাণে মাতোয়ারা করছেন তাই না?”
ধ্যান ফিরে।কল্পনাও করতে পারেনি আফতাবকে দেখবে এই সময় এখানে। কোথা থেকে এলো? হঠাৎ! প্রশ্নেরা ঝাঁক বেঁধে ঝুঁকার পূর্বেই আফতাব এর ঠোঁটের হাঁসি দেখতে পায় খুশবু।প্রশ্নের জবাবে বলে হেয়ালি করে,
-“মাতোয়ারা করার মতন বিশেষ কেউ আমি নই”
-“বিশেষ নন?”
-“উহু!”বাঁকা ঠোঁটে জবাব দেয় খুশবু।
-“তাহলে কি নির্বিশেষে চোখ ঠেকলো আমার?”
-“হ্যাঁ একদম তাই”
মুগ্ধতার চোখে চাইলো আফতাব।কিছু সময় চুরি করে ছুটে এসেছে।আসতে বাধ্য হয়েছে। আগামীদিনগুলো দর্শনতো দূরে থাক কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া হয়ে উঠবে দুর্লভ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফতাব শীতল গলায় বলে,
-“তাহলেতো বেশ।বিশেষ কিছুতে মাতোয়ারা হয় সর্বকুল। বিনা কারণে নির্বিশেষে যেহেতু মন মজেছে তাহলে বুঝে নিন গল্প অনেক দূর এগোবে”
চলবে…