তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি পর্ব-৫০

0
100

গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ৫০
লেখিকা- রিয়া খান

দ্বীপের মুখে নিশানের যে মৃত্যুর ঘটনা শুনেছিলো সবাই, সেটা পুরোটাই দ্বীপের সাজানো একটা গল্প।
দ্বীপ যেহেতু একজন ফার্মাসিস্ট, যে কোম্পানিতে জব করে সে কোম্পানির সাথে অনেক ঘনিষ্ঠ।কোম্পানির চেয়ারম্যানের সাথে প্ল্যান করে বড় বড় সাইন্টিস্টদের নিয়ে এমন একটা ভাইরাস আবিষ্কার করে যেটা ওরা প্রতিটা ওষুধে মিশিয়ে দেবে।ঐ ওষুধ সেবনের ফলে যে রোগের কারণে খাবে সে রোগ খুব তাড়াতাড়িই সেরে যাবে, এবং বেশ কিছুদিন পর ভেতরে একটু একটু করে নতুন একটা রোগের সৃষ্টি হবে,যার ওষুধ টা কেবল অই কোম্পানিতেই তৈরী হবে, ওষুধের ফর্মুলা কেবল অই কোম্পানিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
এরপর রোগী যখন ওষুধ কিনে খাবে তখন সুস্থ হয়ে যাবে,ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিলে আবার কিছুদিন পর অই রোগ হানা দেবে,পুনরায় আবার ওষুধ খেতে হবে। এভাবে জীবন ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়বে,আর কোম্পানির লাভ হবে।কোম্পানিকে সাহায্যের কারণে দ্বীপের জায়গা আরো উপরে উঠবে,টাকার এমাউন্ট বাড়বে,খ্যাতি পাবে,হাই কোয়ালিটির পজিশন পাবে,হতে পারে এমডি খুশি হয়ে পুরো ব্রাঞ্চের দায়িত্ব দিয়ে দেবে তখন ইচ্ছে মতো টাকা লুট করবে ।

এটা দ্বীপের ক্লাইন্টের সঙ্গে আলোচনার সময় নিশান জেনে যায়।এরপর থেকে নিশানের যুদ্ধ শুরু হয় দ্বীপের সাথে,যেনো এরকম কাজ না করে। এতে যারা গরীব নিরীহ তাঁদের মাঝে এই রোগ বাঁধলে তাঁরা রোজ রোজ ওষুধ কিনে খেতে পারবে না, ফলে অকালেই প্রাণ হারাবে।
কিন্তু দ্বীপ ছিলো লোভের ঘোরে, নিশানের কথায় কোনো পাত্তাই দেয় না।

নিশান চুপচাপ সয়ে যায়, মিশানকেও বলে না। কারণ সেসময় মিশানকে বললে মিশান নিশানকে নিয়ে চিন্তা করতো, হতে পারতো কুয়েত থেকে এসে পড়তো নিশানের জন্য।
পরামর্শ করার জন্য সেসময় ঝলকও ছিলো না, একমাত্র ছিলো তীব্র। কিন্তু তীব্রর সাথে নিশানের সম্পর্ক অতোটা ঘনিষ্ঠ ছিলো না,যেহেতু মিশান তীব্রকে অপছন্দ করতো সেহেতু নিশান তীব্রকে বিশ্বাস ভরসা করতে চেয়েও করতে পারেনি, যার ফলে ওকেও বলা হয়নি।

দিনের পর দিন যেতে থাকে দ্বীপের আসল রূপ টা নিশানের সামনে স্পষ্টতর হতে থাকে।এই সুন্দর মার্জিত চেহারার আড়ালে বাস করে কলুষিত এক হিংস্র রূপ।
নিশান দ্বীপের সামনে এমন ভাবে থাকতো যেনো কিছুই জানে না ওর ব্যাপারে,যতটুকু জানে তা মেনে নিয়েছে।

একপর্যায় নিশান এটাও জানতে পারে দ্বীপ নিশানকেও ভালোবাসে না কেবলই অভিনয় করে, মেয়েদের প্রতি দ্বীপের প্রচ্চুর নেশা।
রাত বিরাত কাজের ছুতোয় বাড়ি ফিরে না, মেডিকেল ক্যাম্পেইনের ছুতোয় দিনের পর দিন অন্য মেয়েদের নিয়ে ঘুরাফেরা এগুলোই চলে ওর জীবনে।

নিশানের প্রতি দ্বীপের একটা বাজে আকর্ষণ ছিলো। তাই সেই আকর্ষণকে সফলতা দিতে নিশানের সাথে প্রেমের অভিনয় করে,মিশানের সামনে ভালো সেজে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।নিশান যেহেতু বেশিদিন বাঁচবে না তাই বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে দু বার ভাবতে হয় নি দ্বীপের।
দ্বীপের এটাও ধারণা ছিলো নিশান আর দ্বীপের ব্যাপার টা মিশান পরিবারে জানাতে দেবে না।
যদি বিয়ে না করেই দ্বীপ নিশানের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ব্যভিচার করতো তবে মিশান দ্বীপকে মেরে ফেলতো নিজের বোনের ক্ষতি করার জন্য।

তাই সব কিছু প্ল্যান করে নিজের আয়ত্তে রাখে দ্বীপ।

দ্বীপের রূপ যখন নিশানের সামনে পুরোপুরি ক্লিয়ার নিশানের ভেতর দ্বীপের প্রতি বিস্বাদে ভরে যায়,সিদ্ধান্ত নেয় দ্বীপের এই কর্মকান্ডের সমস্ত তথ্য জোগাড় করে ফাঁস করে দেবে, সবার সামনে এনে দেবে ওর হিংস্র রূপকে।
কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কেউ কিছুই বিশ্বাস করবে না।

সময় যেতে থাকে নিশান দিন রাত এক করে অনুসন্ধান করতে থাকে দ্বীপের মুখোশের আসল রূপ।
নানা কৌশলে নিশান তথ্য সংগ্রহ করে পেনড্রাইভে আবদ্ধ করতে থাকে, সব সময় আড়াল থেকে দ্বীপকে ফলো করতে থাকে। দ্বীপ কখন কোথায় কার সাথে দেখা করে কি করে সব ওর ক্যামেরতে বন্দী করে।
এরকম করে দিনের পর দিন ছোটো ছোটো প্রমাণ জোগাড় করতে থাকে।
কিন্তু দ্বীপ বুঝে যায় কোনো ভাবে নিশান ওকে ফলো করছে। বাড়িতে যখন কেউ ছিলো না নিশানকে দ্বীপ থ্রেড করে অনেক।নিশান ধরেই নেয় ওর মৃত্যু আবশ্যক অতি শীঘ্রই।

এরমধ্যে ঘটে অই ঘটনাটা, যেটার পিছু লেগে নিশান থানা অব্ধি যায় ছেলেগুলোর শাস্তি কামনায়।

ছেলেগুলো যখন খোঁজ পায় নিশানের ব্যাকগ্রাউন্ডের। তখন ওরা থেমে যায়, নিশানকে কিছু করা যাবে না ভেবে।কিন্তু কোথা থেকে দ্বীপ এসে ছেলেগুলোর সাথে হাত মেলায়। ছেলেগুলোকে সুযোগ করে দেয় নিশানকে মারার।

নিশানের মন বার বার বলছিলো দ্বীপ হয়তো কিছু একটা করবে নিশানকে থামানোর,সেজন্য ও সমস্ত তথ্যের কপি একটা মেমোরিতে নিয়ে সেই মেমোরি জুতার নিচের অংশ খুলে সেখানে রেখে আবার লাগায় জুতোটাই।এরপর
তীব্রকে ফোন করে।
-হ্যালো ভাইয়া!
-নিশান?
-ভাইয়া আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?খুব জরুরী।
-কোথায় দেখা করবে?
-আমি লোকেশন এসএমএস করে দিচ্ছি।
-ওকে আসো, আমি বের হচ্ছি।
-ঠিক আছে ভাইয়া চেষ্টা করবেন একটু তাড়াতাড়ি করে আসার।দেরি হলে যা কিছু হয়ে যেতে পারে।
-কি হয়েছে নিশান?তোমাকে এতো নার্ভাস লাগছে কেনো?
-আপনি আগে আসুন,সামনা সামনি বলছি, ফোনে বলা সম্ভব নয়।
-ওকে আসো।
নিশান ফোনটা রেখেই বাড়ি থেকে বের হয়। বাড়িতে দ্বীপের মা যখন জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে নিশান বলে যায় দ্বীপের সাথে ঘুরতে,দ্বীপ বাইরে অপেক্ষা করছে।

নিশান বাড়ির গাড়ি না নিয়ে একা একাই বেরিয়ে যায়, একটা সিএনজিতে করে যাচ্ছিলো, তীব্রকে জায়গার নাম এসএমএস করে দেয়ার পর তীব্র সেখানে অনেক আগেই পৌঁছে দাঁড়িয়ে থাকে।

সিএনজি অনেক দূর যাওয়ার পর নিশান বুঝতে পারে ও যেখানে যেতে বলেছে গাড়িটা সেদিকে যাচ্ছে না। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করতেই ড্রাইভার বলে শর্টকাটে যাচ্ছে।
কিন্তু নিশানের মনে অন্যকিছু গায়, তাই সাথে সাথে তীব্রকে কল করে, তীব্র ফোন রিসিভ করতেই নিশান যেহেতু প্যান্টের সাথে কামিজ পড়া ছিলো, মোবাইলটা ব্যাগে না রেখে পকেটে রেখে তীব্রকে শুনিয়ে শুনিয়ে ড্রাইভারকে বলতে থাকে শর্টকাট না নিয়ে এক্সাক্ট রাস্তা দিয়ে যেতে, আর কৌশলে নিশান সেইসব জায়গা গুলোর নাম উল্লেখ করছে যেদিকে যাচ্ছে গাড়িটা।
তীব্রর বুঝার বাকি থাকে না নিশান বিপদে পড়েছে ।
-আরে ভাই এই রাস্তা তো পদ্মা নদীর দিকে গিয়েছে,আপনি ওদিক দিয়ে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?আর গাড়ির স্পিড এতো বাড়িয়েছেন কেনো?আস্তে চালান।
-আরে আপা আপনি চুপচাপ বইসা থাকেন খালি, সময় মতো পৌঁছাইয়া পারলেই হইলো আপনার।ঢাকার জ্যাম আমার পছন্দ না, তাই শর্টকাট দিয়াই চলি আমি, যাতে জ্যামে না পড়া লাগে,এইটুকু স্পিডে না চালাইলে রাস্তা ঘাটে পুলিশে ধরবো ।

তীব্রও গাড়ীর বেগ বাড়িয়ে পদ্মার দিকে যায়, কিন্তু তীব্র ছিলো নিশানের চেয়ে অনেক দুরত্বে।এরমাঝেই সে জায়গাটাতে এসে সিএনজি থামে আর সিএনজির পেছন থেকে একটা বাইক এসে সামনে থামলো,বাইকে দ্বীপ!
নিশান আস্তে করে দ্বীপ নাম উচ্চারণ করলো,ভেতরে জানার বাকি রইলো না ওর,সব কিছু দ্বীপের প্ল্যান ছিলো,নিজের অজান্তেই দ্বীপের ফাঁদে পা রেখেছে।
দ্বীপ বাইক থেকে নেমে নিশানের দিকে তাকিয়ে ডেভিল স্মাইল দেয়।
-তু তু তুমি এখানে?
দ্বীপ রহস্যময় ভাবে নিশানকে জিজ্ঞেস করলো,
-কোথায় যাচ্ছিলে নিশান?
-আম আ আমি এসাইনমেন্টের জন্য আফসানার বাসায় যাওয়ার জন্য সিএনজিতে উঠেছি , কিন্তু উনি আমাকে এখানে এনে গাড়ি থামালো।
-চলো এসেই পড়েছো যখন পদ্মার তীরে ঘুরে আসি।
-না না দ্বীপ আমার এসাইনমেন্ট আজকেই কমপ্লিট করে কাল জমা দিতে হবে ভার্সিটিতে।আমি কোথাও যাবো না।
দ্বীপ থমথমে গলায় বললো,
-তুমি যাবে! এসেছো যখন তুমি যাবেই।নামো
-না, আমি যাবো না কোথাও, ছাড়ো।

দ্বীপ কোনো কথা না শুনে নিশানকে টেনে বের করে গাড়ি থেকে। নিশান দ্বীপের থেকে ছুটার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না।দ্বীপকে অনেক রিকুয়েস্ট করছিলো কেঁদে কেঁদে কিন্তু দ্বীপ সেসব কানে নেয়ার ই না।

কিছুদূর নিশানকে টেনে নিয়ে দ্বীপ নিশানকে ধাক্কা মেরে কতগুলা ছেলের দিকে ঠেলে দেয়।
-নাও তোমাদের শিকার!
দ্বীপের মুখে এই কথা শুনে নিশান থমকে যায়।
-দ্বী দ্বীপ! শিকার মানে?
-সুখে থাকতে ভূতে কিলায়, তাই না নিশান?দুনিয়াতে ভালো মানুষের কোনো দাম নেই,কবরে থাকলে থাকতে পারে।কিন্তু আমার কাছে দুনিয়াটাই আসল।এই যে তুমি একটা ভালো মেয়ে তোমার কাছে দুনিয়া নেই।
এমনিতেও তো তুমি বেশিদিন বাঁচবে না, একটু আগে মরলে কি আসে যায়?
বেশি পাকনামো আমার পছন্দ না,তুমি ভালোমতো থাকলে আমিও ভালোমতো থাকতাম।
নিশান অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলতে থাকে,
-তোমার এই দম্ভ, লোভ, ভেতরের বিশ্রী রূপ সব ই একদিন প্রকাশ পাবে জনসম্মুখে, সেদিন মুখ লুকানোর জায়গা পাবে না তুমি।এমন দিন আসবে যেদিন তোমার এই এতো প্রত্যাশার দুনিয়া তোমাকে ঠেলে দেবে মৃত্যুর দিকে।এতো এতো নিরীহ মানুষের অনিষ্ট করে তুমি পার পেয়ে যাবে ভেবেছো? তাদের অভিশাপে তোমার জীবন পঁচে গলে যাবে।এমনও হতে পারে তোমার জানাজা পড়ানোর মতো একটা হুজুরও পাবে না,শেয়াল কুকুর খাবে তোমার রক্ত মাংস, তখন তোমার আত্মাটা চিৎকার করে বলবে আমাকে কবর দাও,শেয়াল কুকুর গুলোর থেকে বাঁচাও ।

নিশান কাঁদতে কাঁদতে বলে,
এতোটা খারাপ কি করে হলে তুমি দ্বীপ?কতোটা অন্ধবিশ্বাস করেছিলাম তোমায়,কতোটা ভালোবেসেছিলাম,সেই তুমি কি রূপ দেখালে!
-এই থামো তো যত্তসব সিনেমাটিক ডায়লগ।
মরার আগে মানুষ এত্ত উল্টাপাল্টা বকবক করতে পারে রে বাবা! এই তোরা দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? কি করবি কর ওকে নিয়ে, আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো।

দ্বীপের রূপটা খুব বেশি অপ্রত্যাশিত লাগছিলো নিশানের কাছে।কতোটা ভালোবাসতো ওকে। যে কিনা ভালোবাসার কথা বলে বিয়েটাও করেছিলো, আজ সেই তুলে দিচ্ছে অন্য ছেলেদের হাতে, মেরে ফেলার জন্য।
নিশান কোণঠাসা হয়ে নিরব হয়ে যায়,এক দৃষ্টিতে দ্বীপের দিকে তাকিয়ে থাকার পর নিশানের মনে পড়লো মিশানের কথা। দ্বীপের কথা মনে পড়লে মনে হচ্ছে এই মূহুর্তেই মরে যেতে ,কিন্তু মিশানের কায়া চোখে ভাসতেই ভেতরে জোর এলো যেভাবেই হোক বাঁচতে হবে বোনের জন্য।
ছেলেগুলোর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোনো মতেই পেরে উঠছিলো না।বাকিটা দ্বীপের বয়ানের মতোই হয়েছিলো শুধু পার্থক্য এইটুকুই যে ওরা দ্বীপকে কিছু করেনি , দ্বীপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো কেবল। নিশান মারা যাওয়ার পর যেনো কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য দ্বীপ একটা ছেলেকে বলে ওর মাথায় একটা বাড়ি দিতে যেনো রক্তপাত হয়, ঠিক সেরকম ই হয়। রক্তাক্ত মাথা চেপে ধরে মুখে শয়তানি হাসি নিয়ে নিশানের করুণ পরিণতি দেখতে থাকে।

ওদিকে তীব্র গাড়ির বেগ সর্বোচ্চ নিয়ে ওদিকে যাচ্ছিলো, মোবাইলের অপর পাশ থেকে নিশানের কথোপকথন শুনে গায়ে ঘাম ছুটে যায়,ভেতরে দুশ্চিন্তারা ভর করতে থাকে।এমন সময় হঠাৎ তীব্র খেয়াল করে ওপাশ থেকে নিশানের শব্দ আসছে না,ব্লুটোথ অফ মনে হচ্ছে, মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তীব্রর ফোনটাই অফ হয়ে গেছে, মোবাইলে চার্জ শেষ হওয়ার কারণে ফোনটা অফ হয়ে যায়।তীব্র তাড়াহুড়ো করে পাওয়ার ব্যাং খুঁজতে থাকে।
সব সময় পাওয়ার ব্যাং সাথেই থাকে কিন্তু সেদিন ই অমন হতে হয়েছিলো।

নিশান ছেলেগুলোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়াতে থাকে।পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখে তীব্র ফোনের লাইনে নেই,দৌড়ানো অবস্থায় ই তীব্রকে ফোন দিলে তীব্রর নাম্বার সুইচ অফ দেখায়,কয়েকবার কল দেয়ার পর মিশানের ফোনে কল দিয়ে চিৎকার করে আর্তনাদ করতে থাকে। তীব্রর ফোন অন করার পর নিশানকে কল দিয়ে ওয়েটিং পায়। সব কিছু গুলিয়ে যায় একসাথে।

অমনিই পেছন থেকে নিশানকে গুলি করে নিশানের হাত থেকে মোবাইল ফসকে যায়।

গুলি গুলো দ্বীপ ই করে পেছন থেকে।
এরমধ্যেই তীব্র নিশানকে পেয়ে যায়। দ্বীপ তীব্রকে দেখে অন্ধকারে লুকিয়ে যায়।
তীব্র নিশানকে সরাসরি গাড়িতে তোলে হসপিটালের দিকে যায়।সেখানেই কথার মাঝে নিশানের কাছে তীব্র ওর আসল পরিচয় দেয়, এরপর নিশান দ্বীপের কথা সবটা বলে দেয় তীব্রকে।
হসপিটালে নেয়ার আগেই নিশানের দেহ থেকে আত্মাটা আলাদা হয়ে যায়।

শুধু একটু সময়ের দুরত্বের কারণে তীব্র নিশানকে বাঁচাতে পারে না।সেদিন খুব বেশি অসহায় লাগছিলো।চোখের সামনে থেকেও নিজের ভাইকে বাঁচাতে পারলো না, বোনের মতো নিশানটাকেও বাঁচাতে পারলো না।
সেই পুরোনো ক্ষততে আবারও আঘাত পড়লো।বার বার পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেয় মৃত্যুর কাছে মানুষ কতটা অসহায়।তীব্রর তো টাকা পয়সা প্রভাব কোনো কিছুর অভাব নেই,তারপরেও কাছের মানুষ গুলোকে বাঁচাতে পারলো না।

সেদিনের পর তো দ্বীপের মুখোশ টা তীব্রর সামনে ক্লিয়ার হয়।
দিনের পর দিন তীব্র দ্বীপের নাটক গুলো দেখে যাচ্ছিলো।
যার কারণে তীব্র দ্বীপের ব্যাপারে একটু ক্ষিপ্তই থাকতো।

অই ছেলেগুলো দ্বীপের কর্মকান্ডের সাক্ষী থেকে যায় বলে,দ্বীপ ওদেরকে মারার চিন্তা করে,তখন মিশানকে লেলিয়ে দেয়। আর মিশান একে একে সব কটাকে মারতে থাকে।

কিছুদিন আগে যে মিশান মার্ডার করার জন্য তীব্রর বাড়িতে চলে যায় ভূল এড্রেসের জন্য। সেদিন দ্বীপ একজন লোক হায়ার করেছিলো তীব্রকে মারতে, মিশানের সাথে ধাক্কা লেগে এড্রেস চেঞ্জ হয়ে যায়।
দ্বীপ তীব্রকে মারতে চাওয়ার কারণ,
একদিন দ্বীপকে ধরে অনেক শাসন করে তীব্র,যার কারণে দ্বীপ চিন্তা করে তীব্র যেকোনো সময় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে তাই তীব্রকে মেরে রাস্তা ক্লিয়ারের চিন্তা করে।একবার ভাবে মিশানকে ভুলভাল বুঝিয়ে তীব্রকে ওকে দিয়ে খুন করাবে, কিন্তু মিশানের অবস্থা দেখে বুঝতে পারে মিশান এটা পারবে না।
পরে মাথায় বুদ্ধি আসে,মিশান তীব্রর উপর অনেক ক্ষিপ্ত। যদি অন্য কাউকে দিয়ে তীব্রকে মারা যায় তবে মিশানের সামনে দ্বীপ আরো মহান হয়ে যাবে।মিশানকে নিয়ে দ্বীপের কখনো চিন্তা হয় নি, কারণ মিশানকে এলকোহলে ডুবিয়ে রাখলেই ওর দিন দুনিয়ার দিকে কোনো খেয়াল থাকবে না, একটা সময় নিজেই পঁচে মরে যাবে।
যার কারণে ওকে সাহায্য করে ড্রিঙ্ক করতে।

দ্বীপ চুপচাপ ভাবছে মিশানের সাথে তীব্রর কি করে এতো ভাব হলো যে তীব্র বলার পর মিশান সেটা বিশ্বাসও করে নিয়েছে।এতোদিন তো এইটুকু কনফিডেন্স নিয়েই চলছিলো দ্বীপ , তীব্র সত্যিটা মিশানকে বললে মিশান উল্টো তীব্রকে আরো ভূল বুঝবে।

-কি এমন পাপ ছিলো আমার বোনের? তোর অবৈধ কাজ গুলোকে আমার বোন সাপোর্ট করেনি বিরোধিতা করেছে এটুকুই তো? তুই আমাকে একটাবার জানাতি ।তুই আমাকে সবটা নির্দ্বিধায় সবটা খুলে বলতি,আমিই নিশানকে থামাতাম। নিশান আর যাই হোক আমার কথা অমান্য করতো না।ও থেমে যেতো, তোর নামও উচ্চারণ করতো না।
কিন্তু তুই সুযোগ দিলি না দ্বীপ!মেরে দিলি আমার বোনটাকে! বিশ্বাস কর এই কাজটা যদি মামা করতো তাহলে একটুও কষ্ট হতো না , কারণ সে আমাদের লালন পালন করেছে।কিন্তু তাঁর মতো একটা মানুষের ছেলে হয়ে তুই এমন কাজ করলি?

আমার বোনটা মরে গেছে সেটা নিয়ে আফসোস নেই,মৃত্যু ওর ললাটে লিখা ছিলো তাই মরে গেছে,কিন্তু অমন বাজে মৃত্যু? বোনটাকে কত কথা দিয়েছিলাম,ওর মৃত্যুর সময় পাশে থাকবো সব ইচ্ছে পূরণ করবো, একটা সুন্দর দিনে সুন্দর ভাবে মৃত্যু হবে আমার বোনের! সব মিথ্যে হয়ে গেলো,আমি হয়ে গেলাম প্রতারক!
-মিশান তুই কেনো এসব কথা বলছিস।দেখ আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য এটা কারো চাল। তুই এতো বুদ্ধিমান হয়ে এটা কেনো বুঝিস না?
-ঘাবড়ে যাস না দ্বীপ।আর সবার মতো তোকে আমি মারবো না। তোকে চোখের সামনে দেখলে ভেতরে যন্ত্রণা হবে , এটা ভেবে আমার বোনের খুনি আমার সামনে ঘুরছে।
কিন্তু তোর অবস্থা আমি এমন হাল করবো তোর আত্মা তোর সাথে থেকেও থাকবে না। নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতে চাইবি, যতদিন বাঁচবি ভেতরে অনুতাপ করতে করতে আর সুযোগ চাইতে চাইতে শেষ হয়ে যাবি।

যদি পারিস নিজের পরিস্থিতি সামলে নিস। ইউর কাউন্ট ডাউন স্টার্ট নাও!

মিশান চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে যায়। দ্বীপের সামনে খুব একটা কাঁদেনি।কিন্তু তীব্র যখন সাহস করে জানায় সবটা,মিশান হাউমাউ করে কাঁদছিল। বেশি কাঁদছিলো দ্বীপ এমনটা করেছে বলে, যাকে এতোটা ভালোবাসতো। ভাইয়ের তুল্য হয়ে এমন একটা কাজ করেছে।

মিশান চলে যাওয়ার পরপরই দ্বীপের ফোনে কল আসে অফিস থেকে,দ্বীপ চিন্তিতো অবস্থায় অফিসে যায়।
মাথায় শয়তানি বুদ্ধি ছুটাছুটি করছে কিভাবে মিশানের থেকে বাঁচা যায়।
অফিসে যেতেই দেখে কিছু অপরিচিত মুখ,সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যান, হুলুস্থুল অবস্থা।
কোম্পানির এমডি মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন।দ্বীপের বুঝার বাকি নেই কোম্পানিতে রেট পড়েছে, চারদিক দিয়ে সমানে ওদের ছবি তুলছে, এমডি দ্বীপের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে,কারণ এই বুদ্ধিটা দ্বীপের ই ছিলো, দ্বীপের কথা শুনে আজ কোম্পানি পথে বসে যাওয়ার উপক্রম।

টিভিতে সেকেন্ডে সেকেন্ডে নিউজ টেলিকাস্ট হচ্ছে, কোম্পানিটার সাথে অপকর্মে জড়িত প্রতিটা সদস্যের চেহারা স্পষ্ট দেয়া হয়েছে।

এয়ারপোর্টে টিকিট হাতে নিয়ে বসে আছে তীব্র। মিশান বাসের জানালার পাশের সীটে বসে আছে,বাইরের দিকে তাকিয়ে অনবরত চোখের পানি মুছে যাচ্ছে।
এয়ারপোর্টের এরিয়াতে আসতেই বাস থেকে নেমে এয়ারপোর্টের ভেতরে যায়।
-ফ্লাইট কয়টায়?
-আরো দু ঘন্টা পর।
-দশ মিনিট আগেও কল দিয়ে বলছিলে ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে,প্লেন ছেড়ে দিলো বলে!
-আরে মাত্রই জানালো,কি যেনো প্রবলেম হয়েছে বললো।
-খিদে পেয়েছে অনেক।
-রেস্টুরেন্ট আছে তো,চলো খাইয়ে আনি।
-আবার যদি ফ্লাইট এগিয়ে দেয়?
-দিলে দিলো আবার টিকিট কাটবো।

মিশানকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতর গেলো, ফাঁকা টেবিলটার কাছে গিয়ে, সৌজন্যতা স্বরূপ চেয়ার টেনে দিয়ে বসতে বলার আগেই মিশান অন্য দিকে ঘুরে আনমনে বসতে গিয়ে ধপাস্ করে পড়ে যায়, এবার তীব্র নিজের কপালে নিজেই থাপ্পড় মারলো।মিশান চোখ বড় বড় করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে আছে।
-স সরি!
-ইচ্ছে করে করলে এমন তাই না?
-সরি বললাম তো!মনে ছিলো না, তুমি ভদ্রতা নিয়ে খেতে পারো না।
মিশান ধমক দিয়ে বললো,
-ভদ্রতা অন্যভাবেও করা যায়! এরকম আর কখনো করবে না!
-ওকে ওকে আর করবো না।তুমি উঠো,এভাবে নিচেই বসে থাকবে নাকি।
মিশান চুপ করে তীব্রর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রইলো।
তীব্র হাত বাড়িয়ে দিতেই মিশান হাত ধরে উঠে বসে।

১১টা ৪৫ এ ফ্লাইট।
ইমিগ্রেশন ক্রস করে দুজনে, মালদ্বীপের ফ্লাইটে।
-গান গুলো আনতে প্রবলেম হয়নি তো?
তীব্র ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
-মাথা খারাপ?ওরা তো আমাদের ই লোক!

মিশান ভ্রু বাঁকিয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে রইলো।

(চলবে)