তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি ২ পর্ব-২৪+২৫

0
1028

#তোমাকে_ঘিরে_আমার_অনুভূতি💖 (সিজন-২)
#পর্ব_২৪
#Anika_Fahmida

অনু গোসল করে রুমাল দিয়ে চুল মুছচ্ছিল৷ এখন অনুর পরণে গোলাপী রঙের সেলোয়ার-কামিজ। আদ্র দরজা খুলে রুমে ঢুকে অনুকে ভেজা চুল মুছতে দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আদ্র ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেই অনুর চুলে মুখ ডুবিয়ে নেয়। আদ্রের ছোঁয়ায় অনু শিউরে ওঠে। আদ্র রুমে এসে পড়েছে? দরজাটা লাগাতে অনু ভুলে গিয়েছিল। ভয়ে অনু পেছন ফিরতে নিলেই আদ্র ফিসফিস করে অনুকে বলল,

‘না অনু। এখন একদম পেছন ফিরবে না।’

অনু কাঁপতে কাঁপতে আদ্রকে বলল,

‘আদ্র আ ..আমাকে ছা.. ছাড়ো।’

আদ্র অনুর গলা থেকে চুল সরিয়ে নিল। অনু বুঝতে পারছে না আদ্র কি করতে চাইছে? হঠাৎ করেই আদ্র অনুর গলায় ঠোঁট ছোঁয়ালো। অনু কেঁপে উঠে ধাক্কা দিয়ে আদ্রকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ঘন নিশ্বাস নিতে লাগলো। আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,

‘কি হলো? ধাক্কা দিলে কেন? আমাকে একটু আদর করতেও দিবে না? এটা কিন্তু ঠিক নয় অনু।’

অনু রুমাল টেবিলের একপাশে রেখে ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

‘আদ্র তুমি মাঝে মাঝে আমার এতো কাছে কেন চলে আসো? আমার ভয় লাগে তো।’

অনুর কথা শুনে আদ্র অনুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অনু শুকনো ঢুক গিলে রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিলে আদ্র অনুর হাত চেপে ধরলো। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,

‘কি হলো? আমাকে যেতে দাও?’

আদ্র অনুর চোখের দিকে তাকিয়েই শান্ত স্বরে বলল,

‘কোথায় যাবে তুমি? এটা বাংলাদেশ নয় অনু। যে তুমি যখন মন চায় যেখানে খুশি চলে যাবে। এটা সুইজারল্যান্ড। আমার নির্দেশ ছাড়া তুমি এক পাও রুমের বাইরে ফেলতে পারবে না।’

অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

‘আর কত রুমে বসে থাকবো? আমার রুমে বন্ধী হয়ে থাকতে ভালো লাগে না। আমাকে এই বিদেশের সুন্দর জায়গা গুলোতেও নিয়ে যাবে না আদ্র? আমার যে সুইজারল্যান্ডের সব জায়গা ঘুরে দেখতে মন চাইছে।’

আদ্র হেসে অনুর গালে হাত রেখে বলল,

‘হুম তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো। তবে এখন নয়। আমাদের বিয়ের পর আবারও আমরা সুইজারল্যান্ড আসবো। তখন নাহয় যতখুশি তুমি ঘুরতে চাও তত বেশি তোমাকে সাথে নিয়ে আমি ঘুরবো। আমাদের আগামীকাল বাংলাদেশে ফিরতে হবে।’

অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

‘সত্যি আগামীকাল আমরা বাংলাদেশে ফিরে যাবো?’

আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,

‘হ্যা। এই কয়েকদিন ধরে আমার বাবা আমাকে ফোন দিয়ে দেশে ফেরার জন্য প্রচুর জ্বালাচ্ছে। তাই আগামীকালই আমাদের ফিরতে হবে। তোমাকে এই বিষয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না।’

অনু হেসে আদ্রকে বলল,

‘আমি কোনো চিন্তা করছি না।’

অনু খুব খুশি কারণ অনু তার মা-বাবার কাছে আবারও ফিরে যাবে। আবারও ভার্সিটি যেতে পারবে। এমন সময় দরজায় কেউ কলিংবেল দিলো। কলিংবেলের শব্দ পেয়ে অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

‘কে এলো?’

আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

‘দাঁড়াও আমি দেখছি।’

আদ্র দরজা খুললো। দরজার বাইরে একটা কমবয়সী বিদেশি ছেলে হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র ইংরেজীতে তার সাথে কথা বলে খাবার হাতে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। অনু বিছানায় মন খারাপ করে বসে রইল। আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে হেসে বলল,

‘অনু খাবার খেয়ে নাও।’

অনু কপাল কুঁচকে আদ্রকে বলল,

‘তুমি খাইয়ে দেও। নাহলে আমি খাবার খাবো না।’

আদ্র হেসে অনুর পাশে বসে অনুকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো। খাবারটা চিকেন আইটেমের। কিন্তু অনু এই খাবারের নাম জানে না। আদ্রকে অনু আর খাবারের নাম জিজ্ঞেস করল না। চুপচাপ আদ্রের হাতে খেতে লাগলো। আদ্র নিজেও খাবার খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষ হলে আদ্র রুম থেকে বের হয়ে গেল। অনু বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আকাশটা নীল। সাদা মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু একটুও বৃষ্টি নেই।

পল্লব নিজের রুমের জানালার গ্রিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। বার বার অনুর হাতে চড় খাওয়ার কথাও মনে পড়ে যাচ্ছে। পল্লব মনে মনে হাসলো। কারণ অনুর হাতে একটুও জোর নেই। চড়টা অনু আস্তেই মেরেছিল। তবুও সবার সামনে লজ্জা দিতে পল্লব অনুকে সবার সামনে ভালোবাসার কথা বলতে বলেছিল। অনুও ভয়ে ভালোবাসি বলেছিল। যদিও বাধ্য হয়ে বলেছিল। তবুও অনুর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনে কেন যেন পল্লবের মনটা খুশি হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করেই পল্লবের মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে বলল,

‘অনুর সাথে আদ্র নামের ছেলেটা কে? অনুর বয়ফ্রেন্ড? তাই হয়তো হবে। তাতে আমার কি? আমার অনুকে ভালো লেগেছে। কিন্তু আজ কয়েকদিন হয়ে গেল ভার্সিটিতে অনুকে দেখলাম না। এতোবার ভার্সিটিতে যাওয়াও আমার বৃথা হলো। অনু তুমি কোথায়?’

এমন সময় পল্লবের ছোট বোন রিনি রুমে আসলো। পল্লবকে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,

‘ভাইয়া কি করছিস তুই?’

পল্লব পেছন ফিরে রিনিকে দেখে হেসে বলল,

‘নারে কিছু করছি না। এমনি বাইরের প্রকৃতি দেখছিলাম। কত অপরূপ সুন্দর প্রকৃতি।’

রিনি মুচকি হেসে বলল,

‘হুম তুমি ঠিক বলেছো ভাইয়া। কিন্তু এই সুন্দর প্রকৃতির মাঝেও আমার মনটা বড় বিষাদ হয়ে যাচ্ছে।’

রিনির কথা শুনে পল্লব রিনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল রিনি হাসছে ঠিকই কিন্তু চোখে জল। পল্লব মন খারাপ করে রিনিকে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,

‘রিনি কি হয়েছে তোর?’

রিনি অবাক হয়ে পল্লবকে বলল,

‘কই কি হয়েছে ভাইয়া? আমার কিছু হয় নি।’

পল্লব রাগী স্বরে রিনিকে জিজ্ঞেস করল,

‘তাহলে তোর চোখে জল কেন?’

রিনি নিজের চোখের জল মুছে বলল,

‘এমনি ভাইয়া। মনটা ভালো নেই।’

পল্লব ভ্রু কুচকে রিনিকে জিজ্ঞেস করল,

‘তোর মন ভালো নেই কেন? বল আমাকে?’

রিনি কাঁপা কাঁপা গলায় পল্লবকে বলল,

‘ভাইয়া আমার পড়া আছে। আমি গেলাম।’

রিনি দৌড়ে রুম থেকে চলে গেল। পল্লব বুঝে উঠতে পারলো না তার বোন রিনির হলো টা কি? রিনি নিজের রুমে এসেই কাঁদতে লাগলো। ভাইয়াকে কি করে বলবে যে রিনি একজনকে ভালোবাসে? খুব বেশি ভালোবাসে। কিন্তু সেই মানুষটা তো রিনিকে ভালোবাসে না। রিনির বান্ধবী সুমিকেও আদ্র রিজেক্ট করেছে। রিনিকেও রিজেক্ট করলো। এই কষ্ট কি মেনে নেওয়া যায়? রিনি মুখে দুই হাত দিয়ে কাঁদতে লাগলো।

অনু বিছানার একপাশে তাকিয়ে আদ্রের মোবাইল ফোনটা দেখতে পেল। অনুর মুখে হঠাৎ করেই হাসি ফুটে উঠল। তাড়াতাড়ি করে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে অনু দেখল আদ্রের লক স্ক্রিনে অনুর ছবি। অনু অবাক হয়ে মনে মনে বলল,

‘আদ্রের মোবাইলের লক স্ক্রিনে আমার ছবি? আমাকে এতোটা বেশি ভালোবাসে আদ্র?’

আদ্রের মোবাইল ফোনের লক খুলতে গিয়েও অনু পারলো না। পাসওয়ার্ড দেওয়া। কি পাসওয়ার্ড হতে পারে? অনু বুঝতে পারছে না। অনু অনেকভাবে চেষ্টা করেও আদ্রের মোবাইলের পাসওয়ার্ড খুলতে পারলো না। খুব ইচ্ছে করছে আদ্রের ফোনে কি কি আছে তা দেখার জন্য। কিন্তু পাসওয়ার্ড খুলবে কি করে? অনু আরেকবার পাসওয়ার্ড খুলার ট্রাই করল। এবার অনু
টাইপ করলো ‘I love you Anu’। টাইপ করার সাথে সাথেই মোবাইলের লক খুলে যায়। অনু প্রচুর অবাক হলো। আদ্রের কল লিস্ট চেক করে দেখল অনেকগুলো মেয়েদের নাম। রিনি, সুমি, জিনিয়া, পিউ, লিজা, টিনা, আরও অনেক নাম। সবগুলোই মেয়েদের মিসড কলড। অনুর মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। এতো এতো মেয়ে আদ্রকে ফোন দেয়? অনেক পপুলার ছেলে বলতে হবে। এদের একটারও ফোন আদ্র রিসিভ করে না? কেন রিসিভ করে না? শুধু অনুকে ভালোবাসে বলে? তাই তো হবে। অনু খুব খুশি হলো। আদ্র রুমে এসে দেখল অনু মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। নিজের মোবাইল ফোন অনুর হাতে দেখে আদ্র জিজ্ঞেস করল,

‘আমার মোবাইল ফোন নিয়ে তুমি কি করছো অনু?’

আদ্রকে চোখের সামনে দেখে অনু লাফিয়ে উঠলো। মোবাইল বিছানার একপাশে রেখে অনু আদ্রের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

‘কিছুই না আদ্র। এমনি দেখছিলাম।’

আদ্র অনুর পাশে বসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে অনুকে জিজ্ঞেস করল,

‘তুমি আমার পাসওয়ার্ড জানলে কি করে?’

অনু শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

‘অনেকগুলো পাসওয়ার্ড ট্রাই করলাম। তারপর একসময় পাসওয়ার্ড মিলেও গেলো। আমিও অবাক হয়েছিলাম যখন দেখলাম তোমার ফোনের পাসওয়ার্ড খুলতে পেরেছি।’

আদ্র মোবাইল ফোনটা পকেটে রেখে অনুর দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,

‘তো আমার মোবাইল ঘেঁটে তুমি কি কি পেলে?’

অনু শান্ত স্বরে আদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কিছু না।’

আদ্র সন্দেহী গলায় অনুকে বলল,

‘সত্যি কিছু না?’

অনু আদ্রের থেকে চোখ সরিয়ে মাথানিচু করে বলল,

‘হুম।’

আদ্র অনুর থুতনিতে হাত রেখে মুখটা আবারও নিজের দিকে ফেরালো। অনু লজ্জা পাওয়া চাহনিতে আদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্রের মনে অনুর ঠোঁট ছোঁয়ার তীব্র ইচ্ছে জাগছে। হঠাৎই ঘোর লাগা দৃষ্টিতে অনুর দিকে আদ্র তাকিয়ে রইল। আদ্র ডান হাত এগিয়ে নিয়ে অনুর পেছনের চুলে আঁকড়ে ধরল। এতে অনুর বুকের ভিতরটা হুট করেই কেঁপে উঠল। অনু চোখ বন্ধ করে নিলো। আদ্র অনুকে নিজের দিকে টেনে নিয়েই অনুর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি হলো যে অনুর মাথা কাজ করলো না। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো। অনু আদ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে নিয়েও পারলো না। কারণ অনুর হাত- পা পাথরের মতো হয়ে গেছে। নাড়তে পারছে না। যখনই আদ্র অনুর ঠোঁট ছাড়লো অনু আর লজ্জায় আদ্রের দিকে তাকাতে পারলো না। দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে হাঁপাতে লাগলো। অনুর নিশ্বাস আঁটকে যাচ্ছিল। অনু এভাবে দৌড়ে চলে যাওয়ায় আদ্রের হুঁশ ফিরলো। নিজের উপর নিজেই রাগ হয়ে আদ্র মনে মনে বলল,

‘এটা আমি কি করলাম? অনু আবার আমাকে ভুল বুঝবে নাতো? কিন্তু আমিই বা কি করতাম? অনুকে একটু ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছেটা মন থেকে সরাতে পারছিলাম না। নিজের অজান্তেই ছুঁয়ে ফেললাম।’

আদ্র বারান্দায় গিয়ে দেখল অনু ভয়ে কাঁপছে। অনুর কাঁধে আদ্র হাত রাখল। অনু চমকে আদ্রের দিকে তাকাল। আবারও চোখ সরিয়ে নিয়ে অনু বাইরের বড় বড় দালানের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র অনুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারও অনুর দিকে আদ্র তাকালো। আদ্র অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

‘অনু আই এম সরি। তোমার পারমিশন না নিয়ে তোমার সাথে এমন করাটা আমার উচিত হয় নি। আসলে আমি নিজের অজান্তেই ভুলটা করে ফেলেছি।’

অনু কিছু বলল না। অনুর গলাটা ভীষণ শুকিয়ে যাচ্ছে। আদ্র অনুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

‘কি হলো অনু? কথা বলছো না কেন? বললাম তো আই এম রিয়েলি সরি। কথা বলবে না আমার সাথে?’

অনু সরল দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘একটু পানি খাবো। আমাকে একটু পানি এনে দিবে?’

আদ্র রুমে থেকে পানির বোতলটা নিয়ে এসে অনুর হাতে দিল। অনু বোতল থেকে এক দমে পানি খেতে লাগলো। আদ্র দেখলো অনু স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই পানি খাচ্ছে। আদ্র এবার বিরক্ত হয়ে অনুর হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিল। অনু এখনও ঘন নিশ্বাস ফেলছে। আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘আমাকে ভয় পাচ্ছো?’

অনু কিছু না বলে আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে অনুর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত স্বরে বলল,

‘অনু ভয় পেয়ো না। তুমি এতো কেন ভয় পাচ্ছো? আমি কি বাইরের কোনো মেয়েকে আদর করেছি বলো? করি নিতো। আমি তো আমার হবু বউকে একটু আদর করেছি। তাও তো তোমাকে আমি সরি বললাম। তুমি যদি এতো ভয় পাও তাহলে কি করে হয় বলো? কই তুমিও আমাকে একটু চুমু দিবে তা না..

আদ্রের মুখে এমন কথা শুনে অনু আদ্রের বুক থেকে মাথা সরিয়ে চলে যেতে নিলেই আদ্র অনুকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

‘আমার কথা এখনও শেষ হয় নি অনু। তুমি একটুও নড়বে না। আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে।’

অনু আদ্রের বুকে মাথা রাখা অবস্থাতেই নিজের দু চোখ বন্ধ করে শান্ত স্বরে বলল,

‘আমি তোমার কথা কেন শুনবো? তুমি সবসময় সবকিছুতে আমার উপর এতো জোর দেখাও কেন?’

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

‘কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা এখনও তুমি আমাকে বলো নি। তাতে আমারও কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। তাই আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে।’

অনু আদ্রকে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

‘আমাকে এতো ভালোবাসো কেন?’

আদ্র অনুকে এবার হালকা করে জড়িয়ে ধরলো। অনু মাথা তুলে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুর চোখের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বলল,

‘যদি বলি তোমার পাগলামির জন্য তোমাকে আমি খুব বেশি ভালোবাসি।’

অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

‘কি? আমার পাগলামির জন্য? আমি পাগল?’

আদ্র অনুকে এবার ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘শুধু পাগল না। তুমি পুরোই পাগলী একটা মেয়ে। আমার স্বভাবিক মেয়েদের একদমই ভালো লাগে না। আমি কিছুটা অস্বাভাবিক মেয়েই বহুদিন ধরে খুঁজছিলাম। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তোমাকে আমার পাগলী বলে মনে হচ্ছিল।’

অনু রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,

‘আদ্র তুমি আমাকে পাগলী বলতে পারলে? এই তুমি আমাকে ভালোবাসো?’

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

‘হ্যা বলতে পারলাম। তোমার এই পাগলামিতেই পাগল হয়েছি আমি। তুমি রোগে আক্রান্ত আমি। আর আমি যে তোমাকে খুব ভালোবাসি সেটা তুমি নিজেও খুব ভালো করে জানো অনু। ‘

অনু অন্যদিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে রইল। আদ্র এবার দুষ্টুমি করে হেসে অনুকে বলল,

‘তুমি একটু আগের কথা ভুলেই গেলে অনু। আচ্ছা বলো না আমার লিপকিসটা তোমার কেমন লাগলো?’

অনু অবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুর তাকানোর ভঙ্গি দেখে শব্দ করে হাসতে লাগলো। আদ্রের একটুও লজ্জা নেই। একটুও না। অনু মুগ্ধ হয়ে আদ্রের হাসি দেখছে। হাসলে যে কোনো ছেলেকে এতো সুন্দর লাগে অনুর জানা ছিল না। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসলো।

#চলবে…

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব -২৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা
—“কাজল তুই যদি আমার এতো কাছে থাকিস। তাহলে আমি কিন্তু রোমান্টিক মুডে চলে আসবো।পরম ভালোবাসা নিয়ে, রুদ্রিকের বুকে লেপ্টে রয়েছে কাজল। কাজলের দুষ্টুমির কথা আন্দাজ করতে পেরে রুদ্রিকের বুকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলে,
—-“তাহলে আপনার মনে সারাদিন এইসব চলে? চলবে-ই’ তো এত্তো গুলো গার্লফ্রেন্ড থাকলে তো হবে-ই’।
রুদ্রিক কাজলের কোমড় চেপে ধরে বলল,
—“নাহ রে কাজল। শুধু তুই কাছে থাকলে-ই’ আমার মুড টা রোমান্টিক হয়ে উঠে। ”
কাজল কিছু একটা ভেবে রুদ্রিকের থেকে দূরে সরে এসে বলে,

—“বাট এখন থেকে সবগুলো গার্ল্ফ্রেন্ড এর সাথে আপনার ব্রেকাপ হুহ। ”

রুদ্রিক ভ্রু কুচকে বলে,

—-“কেনো করবো? ওরাও তো আমার গার্লফ্রেন্ড তাইনা? আমি যদি ব্রেকাপ করে ফেলি ওদের ও তো খারাপ লাগবে তাইনা? মনটা ভেঙে যাবে। আমি কারো মন ভেঙে দিতে পারিনা৷ রাফসিন শেখ রুদ্রিকের মনটা আবার বিশাল বড়। ”

ছোটসাহেবের কথা শুনে আমার কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠলাম,

—-“ঠিক আছে তাহলে আপনার সেই গার্লফ্রেন্ডের নিয়ে-ই’ থাকেন আমি গেলাম ”

কথাটি বলে আমি চলে যেতে নিলে-ই’ উনি পিছন থেকে আমার জড়িয়ে আমার কাঁধে নিজের থুত্নি রেখে বললেন,

—“সত্যি কাজল তুই ও বাচ্ছা-ই’ রয়ে গেলি।
তোর রুদ্রিকের মনে শুধু তুই ছাড়া আর কে আছে বল?

আমি উনার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম,

—-“হুম আমি আপনার মনে নিজের উপস্হিতি ছাড়া আর কাউকে সহ্য করবো নাহ হুহ বলে দিলাম। ”
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

আমার কথা শুনে উনি কিছুটা সিরিয়াস ভঙিতে বলে উঠলেন,

—-“কিন্তু আমার মনে আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। যাকে আমি তোর থেকেও বোধহয় বেশি ভালোবাসি। ”

ছোটসাহেবের কথা শুনে আমার মনে অজানা ভয় ঢুকে গেলো। আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,

—“কে সে? ”

ছোট সাহেব বললেন,

—“কে আবার? আমার ছোট্ট গার্লফ্রেন্ড মুসকান। ”

কথাটি বলে-ই’ উনি হেঁসে উঠলেন। যাকে বলে খিলখিলানো হাঁসি। আমিও হেঁসে উঠলাম সত্যি উনিও পারেন।

_________

তনয় কিছুটা রাগ নিয়ে-ই’ বেড়িয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। আজ কাজল তাকে যথেষ্ট অপমান করেছে বটে। তার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা বলে লাপাত্তা। তার মধ্যে ফোনটাও ধরছে নাহ। তনয় ভেবে নিয়েছে কাজলের কাছে এর জবাব চাইছে।
কথাটি ভেবে তনয় পা বাড়ালে, সে খেয়াল করে ছুটকি (কাজলের বোন) রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে। ছুটকি হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে কেন? নাহ ব্যাপারটা দেখতে হবে।

কথাটি ভেবে তনয় ছুটকির কাছে গেলো।

এদিকে,
ইকবাল শিকদার তার মেয়ে মিশুকে নিয়ে আজ শেখ বাড়িতে এসেছেন। ইকবাল শিকদারকে দেখে আফজাল শেখ এবং ইশানিশেখ এগিয়ে আসেন।

আফজাল শেখ বলে উঠেন,
—“আসুন ইকাবাল সাহেব। ”

ইকবাল শিকদার তার মেয়েকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে পড়ে। ইশানি শেখ মিশুর থুত্নি উচু করে বললেন,

—“ভারি মিষ্টি মেয়ে তুমি। নাম কী তোমার? ”

মিশি হেঁসে বলে,
–“জ্বী মিশু। ”

ইশানি শেখ ইকবাল শিকদারের দিকে তাঁকিয়ে বললেন,

—“ভারি মিষ্টি মেয়ে আপনার। আমার রুদ্রিকের জন্যে একেবারে উপযুক্ত। ”

মিশু খানিক্টা লজ্জা পায়।

তখনি জেসমিন শেখ এসে ইকবাল শিকদারকে সালাম দেয়।

ইকাবাল শিকদার এইবার আফজাল শেখের দিকে তাঁকিয়ে বললেন,

—“সবাইকে-ই’ তো দেখছি,কিন্তু রুদ্রিক কোথায়। ”

ইকবাল শিকদারের প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় ইশানি। সে তো রুদ্রিককে ফোনে-ই’ পাচ্ছে নাহ । ইশানি শেখ কোনোরকম হেঁসে বললেন,

–“রুদ্রিক একটা কাজে আটকে গেছে এখুনি চলে আসবে। ততক্ষনে নাহয় কিছু নাস্তা সেরে নিন। ”

ইকবাল শিকদার বললেন,

—“হুম তা মন্দ বলেননি। তাহলে আমরা না হয় রুদ্রিকের জন্যে-ই’ অপেক্ষা করি। ”

ইশানি শেখ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।

________অন্যদিকে,

——“নিশ্চই মুসকান এবং ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ির সম্পর্কে তুই সবকিছু-ই’ জানিস তাইনা? আমাকে দিদুন সব কিছু-ই’ বলে দিয়েছে। কীভাবে তোরা আমার পিছন পিছন ‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়িতে চলে গিয়েছিলি। ”

ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে বললাম,

—“আমি জানি কাজটা আমার ঠিক হয়নি। আমি সত্যি দুঃখিত। ”

—-“হয়তো ঠিক হয়নি, কিন্তু কাজল তুই যদি আমার
‘মায়া কুঞ্জ ‘ বাড়ির সম্পর্কে না জানতি, তাহলে তোর মনে একটা সংষয় থাকতো। তার থেকে সবকিছু ক্লিয়ার হওয়া-ই’ ভালো তাইনা? ”

আমি মাথা নাড়িয়ে উনার বুকে মাথা রেখে বললাম,

—“আমাকে এত্তো সুন্দর মূহুর্ত উপহার দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ ছোটসাহেব। ”

উনি বলে উঠলেন,

—“ধন্যবাদ তো আমার তোকে দেওয়ার উচিৎ কাজল। আমার জীবনে আসার জন্যে। জানিস কাজল? লাইফ টা তখনি সুন্দর যখন নিজের জীবনে সঠিক কোনো মানুষের প্রবেশ হয়। ”

উনার কথা শুনে আমিও মাথা নাড়িয়ে বললাম,

—“হুম জীবনে তো কত মানুষের-ই’ আগমন হয়,কিন্তু সঠিক মানুষ একবার-ই’ আসে। তনয় ভাই আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা হলেও আমার জীবনের সঠিক ভালোবাসা হলো আপনি ছোটসাহেব। ”

ছোটসাহেব মিষ্টি হেঁসে বললেন,

—“ভালোবাসি। ”

আমি লাজুক হাঁসলাম।

ছোট সাহেব কিছু একটা ভেবে ‘এক সেকেন্ড ‘ বলে একটু সাইডে চলে গেলেন।

আমিও নৌকার এক পাশ দাঁড়ালাম।
সামনে বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে জলরাশি,ওপরে রক্তিম উদার আকাশ,গোধূলি লগ্নে উন্মুক্ত নদীতীরে দাঁড়ালে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আকাশের রক্তিম রঙে নদীর জল রঙিন হয়ে ওঠে।

ছোটসাহেব ও এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।

উনার কাঁধে মাথা রেখে বললাম,

—“আজকের দিনটা আমার জীবনের সবথেকে বেশি বিশেষ মূহুর্ত। যা আমার গোধূলী_বেলার_স্মৃতিতে
লিপিবদ্ধ থাকবে। ”

উনি অবাক হয়ে বললেন,

—“গোধূলী বেলার স্মৃতি? ”

—“হুম ‘গোধূলী_বেলার_স্মৃতি ‘। গোধূলী আমার বড্ড
পছন্দ বলে-ই’ আমার সাথে গোধূলীতে ঘটে যাওয়া সবকিছু আমি আমার প্রিয় ডাইরিতে আবদ্ধ করে রেখেছি । যার নাম ‘গোধূলী_বেলার_স্মৃতি ‘।

—–“বাহ ভালো-ই’ তো। আচ্ছা কাজল তুই তোর চোখ বন্ধ কর। ”

ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি বলে উঠলাম,

–“কেনো? ”

উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন,

—-“তুই বন্ধ করবি না নাকি? বেশি কথা বলিস। ”

—-“ওকে আমি এখুনি বন্ধ করছি। ”

আমি চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে-ই’ আমার পায়ে কারো আলতো হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে দেখি, ছোট সাহেব আমি পরম যত্নে এক জোড়া সোনার নুপুর পড়িয়ে দিচ্ছেন।

—“আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন ছোটসাহেব? ছাড়ুন….

কথাটি বলার সাথে সাথে-ই’ উনি ধমকে বলে উঠলেন,

—-“কাজল একদম নরাচড়া করবি নাহ। ”

কথাটি বলে-ই’ উনি নুপুরটি পড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

—“নুপুরটা তোর পায়ে বড্ড মানিয়েছে কাজল। আজকের দিনে আমার দেওয়া ছোট্ট উপহার। কখনো এই নুপুর নিজের কাছ থেকে দূরে রাখবি নাহ।”

আমি উনার চোখের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

—“কিসের ছোট্ট উপহার? আপনার দেওয়া প্রত্যেকটা উপহার আমার কাছে খুব খুব স্পেশাল।”

উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,

—“হুম এই উপহারগুলো-ই’ প্রত্যেক মূহুর্তে তোকে মনে করিয়ে দিবে, আমি তোর অস্তিত্বে সবটুকু অংশ জুড়ে রয়েছি। ”

কথাটি বলে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে আচমকা কোলে তুলে নেন। আমি কিছু বলবো তার আগে-ই উনি আমাকে থামিয়ে বলেন,

—“তোকে কুড়েঘরটা ঘুড়িয়ে দেখাবো চল। ”

—-” আমি হাটতে পারি। তাই যেতে পারবো। ”

—-“তুই বড্ড আনরোমান্টিক কাজল। দেখছিস আমি একটু রোমান্টিক হওয়ার ট্রাই করছি,কিন্তু তুই আমার রোমান্টিকের মুডের বারোটা বাজাচ্ছিস। ”

ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি হেঁসে উঠি। ছোটসাহেব ও আমাকে নিয়ে হাটতে থাকেন সেই বেলিফুলের রাস্তা দিয়ে। উনি আমাকে কোলে করে কুড়েঘরের সামনে নিয়ে নামিয়ে দেন। আমিও নেমে পড়ি। ভিতরটা যেনো আরো সুন্দর। চারপাশে ছোট্ট ফুলের তোরা। পাশে ছোট্ট একটি দোলনা তাও বেলীফুল দিয়ে সাজানো। দোলনার পাশে ছোট্ট একটি টি টেবিল। ছোটসাহেব আমাকে ইশারা করে টি টেবিলে পাশের চেয়ারে বসতে বললেন। আমিও বসে পড়লাম। চারদিকে চোখ বুলিয়ে বললেন,

—“এই কুড়েঘরের সম্পর্কে কখনো তো কিছু শুনেনি। তাছাড়াও ঢাকা শহরেও এইরকম জায়গা সত্যি দেখতে পাওয়া মুশকিল। ”

ছোটসাহেব ও বসে বলে উঠলেন,

—“এই কুড়েঘরটা নাম ‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘।”

আমি আনমনে বলে উঠলাম,

—-‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘।

—-“হুম। আমার ফুপি আম্মুর বড্ড শখের একটি জায়গা ছিলো এই ‘বেলীফুলের কুঞ্জ ‘ জায়গাটি। আমার ফুপি আম্মু নিজে এইরকম নির্জন জায়গা খুঁজে নিজের হাতে এখানে এই কুড়েঘরটা সাজিয়েছিলো। আমাকেও এখানে সবসময় নিয়ে আসতো ফুপি আম্মু। ফুপি আম্মুর যখন মন খারাপ থাকতো তখন আমাকে নিয়ে এখানে আসতো। আমাকে বড্ড ভালোবাসতো ফুপি আম্মু। ”

কথাটি বলতে বলতে উনার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। আমি ছোটসাহেবের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

—“কে এই ফুপি আম্মু ছোটসাহেব? আমি তো যতটুকু জানি আপনার দুজন পিপি। ”

—“নাহ। আমার তিনজন পিপি। তার মধ্যে আমার মেঝ পিপিকে আমি ভালোবেসে ‘ফুপি আম্মু ‘ বলে ডাকতাম। সে আমার মায়ের থেকে কোনো অংশে কম আমাকে ভালোবাসেনি বরং আমাকে বেশি ভালোবাসি। ”

ছোট সাহেবের কথায় আমি বলে উঠলাম,

—“তার কথা তো কখনো শুনেনি। ”

—“শুনবে কী করে? তার অস্তিত্ব যে সকলের থেকে আড়াল করেছে আফজাল শেখ। আমার ফুপি আম্মুকে
আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছিলো আফজাল শেখ এবং জেসমিন শেখ। বলতে গেলে একপ্রকার মেরে-ই’ ফেলেছিলো তারা আমার ফুপু আম্মুকে। ”

ছোট সাহেবের কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। কী বলছেন উনি? বড় সাহেব এবং বড় ম্যামসাহেব মিলে ছোটসাহেবের ‘ছোট পিপিকে ‘ মেরে ফেলেছে?

আমার ভাবনার মাঝে-ই’ উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

—“সত্যি বড় কঠিন রে কাজল। কি ভয়ংকর ঘটনা আমি নিজের ছোটবেলায় দেখেছি তোকে ঠিক বলে বুঝাতে পারবো নাহ। শুধুমাত্র ওদের জন্যে আমার সবথেকে কাছের মানুষকে আমি হারিয়েছি। ”

আমি বলে উঠলাম

—“কী এমন হয়েছিলো অতীতে? ”

ছোট সাহেব অশ্রুমাখা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললেন,

—“জানতে চাস কী হয়েছিলো অতীতে? শুনতে পারবি তো সেই ভয়ংকর অতীত? ”

—-“পারবো। ”

ছোটসাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

—“তাহলে শুন। ”

চলবে..