তোমাকে নিয়েই গল্প পর্ব-২৩+২৪

0
1023

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২৩
#জুনাইনাহ_তাসনিম

*দেখতে দেখতে আপুর বিয়ে হয়ে গেলো।আপুর আজ থেকে নতুন একটা সংসার হয়ে গেলো।আপুর কবুল বলার সময় মা কেঁদে ফেলেছিলো আর আপুও।আপু আর মায়ের কান্না দেখে মামি বলেছিলো,
–মনি তুমি কি আমাকে ভরসা করতে পারছো না?তোমার মেয়েকে আমি বাড়ির বউ না মেয়ে করে নিয়ে যাচ্ছি।
মামির কথা শুনে মা মামিকে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।
আলহামদুলিল্লাহ সব ভালোই ভালোই হয়ে গেছে।কিন্তু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো এই প্রথমবার আমি কোন মেয়েকে বিয়ের দিন বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে যেতে দেখলাম না।অবশ্য এটাই তো আকাশ ভাইয়াদের বাড়ি।তবে পরশুদিন সকালে আপুরা সবাই আকাশ ভাইদের ঢাকার বাসায় যাবে।আপুরা যাওয়ার পর আমরা নানিকে নিয়ে বিকালে নিজেদের বাসায় যাবো।

৩১.
রাত আপু আর আকাশ ভাইয়ার বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছি।আমি,মারিয়া,সৌরভ,স্নিগ্ধা ভাবি আর পাশের বাড়ির কয়েকজন।উদ্দেশ্য টাকা নেয়া।আকাশ ভাইয়ের কাছে আমরা ১৫হাজার টাকা দাবি করলাম।উনি তো টাকার এমাউন্ট শুনে একেবারে না বলে দিলেন।কিন্তু আমরাও নাছোড় বান্দা।ঠিকি ১৫ হাজার টাকা নিয়েই ছাড়লাম।টাকাটা সবাই ভাগাভাগি করে ভাগের ভাগ ১৩০০ করে আসলো।যে যার টাকা নিয়ে ঘরে আসলাম।মারিয়া তো খুব ক্লান্ত সেই কথা বলছে অবশ্য আমিও খুব ক্লান্ত।মারিয়ার ফোনে আন্টি মানে ওর আম্মুর কল আসলো ও জানালার কাছে দাড়িয়ে কথা বলতে লাগলো।এদিকে আমার মনের মধ্যে ঘুরছে অন্যকিছু।
–আচ্ছা অভ্র ভাইকে তো সেই সকালের পর আর দেখলাম না তেমন।কোথায় ছিলেন উনি??অন্যসময় তো সারাদিন চোখের সামনে ঘুর ঘুর করে বাদরামি করে।তাহলে আজ কোথায় গেলো?(মনে মনে ভাবছিলাম)

–কি ভাবছিস এতো সূচী?

–অভ্র ভাইয়ের কথা।

–কার কথা?
মারিয়ার মুখে কার কথাটা শুনেই আমার হুশ ফিরলো।আমি তাড়াহুড়া করে বললাম,

–না না কারো কথা না।আপুর কথা ভাবছিলাম।

–আপু কাল চলে যাবে তাই খারাপ লাগছে না??কষ্ট পাস না সূচী।আপু তো আর দূরে যাচ্ছে না।কাছেই তো যখন ইচ্ছা যেয়ে দেখে আসবি।

–হুম।(আমি জোর করে মুখে হাসি দিয়ে)

–হ্যা।এইবার শুয়ে পড়।আজ তিন দিন যে ধকলল গেলো তাই শুয়ে পড় তাড়াতাড়ি।আমারো খুব ঘুম পাই।হা..(মারিয়া হায় তুলতে তুলতে বলে)

–গুড নাইট মারু।

–গুড নাইট।

মারিয়া শুয়ে পড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে।কিন্তু আমার মনের মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।অভ্র ভাই কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে?এটাও ওনার কোন প্রাংক না তো?খুব বিচলিত লাগছে।ওনার সাথে কথা না বলা পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া সম্ভব না।কিন্তু কথা বলবোই বা কিভাবে?আচ্ছা উনি কি ছাদে আছেন আজও?একবার যেয়ে দেখবো?যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতে যেয়ে দেখেই আসি ঠিক করলাম।খুব আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে ওড়না পরে নিলাম।তারপর পা টিপে টিপে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আস্তে করে দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম।সিড়ির দিকে যেতেই দেখি বাবা হেটে যাচ্ছে।বাবাকে দেখে আমি তো খুব ভয় পেয়ে গেলাম।বাবা যদি আমাকে এখন দেখে অনেক প্রশ্ন করবে?তাই তাড়াতাড়ি সিড়ির নিচে চলে গেলাম।ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।ভাগ্য ভালো যে বাবা চলে গেলো তাড়াতাড়ি এদিকে আর তাকালো না।আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।তারপর এদিক ওদিকে উকি মেরে বের হয়ে আসলাম।তারপর মিলখা সিং এর মতো দৌড় দিয়ে একবারে ছাদে।চিলেকোঠার দরজাই দাড়য়ে এসে ঠিকই ওনাকে দেখলাম,রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে।চাঁদের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওনাকে।জনাব এখন ধুমপানে ব্যস্ত।
–রোজ রাতে ছাদে দাড়িয়ে সিগারেট খাওয়ায় লাগবে??
আমার কথা শুনে পিছনে ঘুরেই উনি যেন চমকে ওঠেন।তাড়াতাড়ি হাত থেকে সিগারেট ফেলে,
–তুমি কখন এলে?
–এখনই।রোজ রাতে ছাদে দাড়িয়ে সিগারেট খাওয়া কি বাধ্যতামূলক আপনার?
–না না সেরকম কিছু না।আচ্ছা এসব কথা বাদ দাও।হটাত ছাদে এলে যে?
–আপনাকে খুজতেই এসেছি(ফট করে বলে ফেলি)
–আমাকে?কেন?কোন স্পেশাল কথা ছিলো নাকি যে এতো রাতে আমার খোজ পড়লো?

(উনি কথাটা আমার দিকে ঝুকে এসে নিজের মুখটা ঠিক আমার মুখের সামনে এনে মিষ্টি করে বলেন।ওনার এরকম এগিয়ে আসাতে আমি ভয় পেয়ে যায় আর আমার হার্টবিট হুট করেই বেড়ে যাই।তাড়াতাড়ি এক পা পিছনে চলে যাই)
–না স্পে স্পেশাল কোন কথা না(আমি মাথা নিচু করে বলি)
–তাহলে এতো রাতে কেন এলে?সবার সামনেই তো বলতে পারতে।(উনি আবার উল্টো ঘুরে রেলিং ধরে দাড়ায়)
–আপনি কি সত্যিই আমাকে…আমি মিন..মানে বলতে চাচ্ছিলাম যে..আসলে কথাটা হলো..(আমি কিছুতেই জিজ্ঞেস করতে পারছি না উনি আমাকে ভালোবাসেন কিনা?)
–ভালোবাসি তোমাকে সূচী।

উনি উল্টা দিকে ঘুরেই কথাটা বলেন।আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করিনি তারপরও উনি ভালোবাসার কথাটা বললে আমার হার্টবিট যেন থেমে যাই।গলা শুকিয়ে আসছে,মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।আমাকে এইভাবে চুপ থাকতে দেখে উনি আমার দিকে ঘুরে তাকালো।
–কি হলো চুপ করে আছো কেন?এটাই তো জানতে চাচ্ছিলে,যে আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি কিনা?আমি তো সেটারই উত্তর দিলাম যে আম তোমায় ভালোবাসি।
–না না আমি এটা জানতে চাইনি।
–তাহলে কি জানতে চাচ্ছিলে?
–…………(আমি কিছু বললাম না)
–কি হলো বলো?অন্য কোন কথা ছিলো কি তাহলে?
–আপনি মজা করছেন তাই না?ওই ডায়েরি,ডায়েরিতে লেখা কথাগুলো সব মজা করে লেখা তাই না?
–হাহহাহাহাহহহহহ..
(উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকতেন।যা দেখে আমার খুব বিরক্ত লাগে)
–হাসছেন কেন?আমি হাসির মতো কি এমন বললাম?
–হাসবো না তো কি করবো?আচ্ছা আমার কি লাভ বলতো তোমার সাথে এরকম মজা করে?আর এরকম বিষয় নিয়ে কেউ মজা করে?
–আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।আপনি সব করতে পারেন।
–তোমাকে নিয়ে তাই বলে এরকম একটা মজা করতে পারি না আমি(উনি হাসি থামিয়ে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন কথাটা)

(আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি কিন্তু বেশিক্ষন ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না।চোখ সরিয়ে নিই)
–আচ্ছা আপনি ডায়েরিতে লিখেছেন যে আমি আপনার ফুপাতো বোন সেটা জানেন।কখন জানলেন বলুন তো?
–প্রথম দেখাতেই চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো।তোমার সাথে ফুপির অল্প বয়সের চেহারার অনেক মিল আছে।
–হুম তা একটু আছে।
(মায়ের অল্প বয়সের চেহারার সাথে আমার এখনকার চেহারার সত্যিই নাকি বেশ মিল পাওয়া যাই।অনেকেই বলেছে কথাটা আমাকে)
–হুম ওখান থেকে হালকা মনে হয়েছিলো তবে ফুপির মেয়ে ওতোটাও মনে হয়নি যদিও।তারপর তো….
–তারপর?তারপর কি?(আমি কৌতুহলি হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকি)
–তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর পরের দিন সকালে যখন মেডিকেল কলেজে যাওয়ার জন্যে গাড়িতে বসি,পায়ের কাছে একটা ছবি পড়ে পাই।ব্যাস ছবিটা দেখেই শিউর হয়ে গেলাম যে তুমি আর কেউ নয় আমার আপন ফুপির মেয়ে।
–ছবি?কোন ছবি?(অবাক হয়ে শুনি)
–তোমাদের ফ্যামিলি ফটো।বেশ আগেরই।তোমরা অনেক ছোট।সূমনার বয়স ১০ মতো হবে।তোমার ৭-৮ আর সৌরভ তো আরো ছোট।ওটা দেখেই চিনলাম।মানে ফুপিকে দেখে আরকি,ফুপির ছবিতো বাড়িতে ছিলোই সো চেহারা তো চিনতামই।বুঝলে ম্যাডাম?
–ওহহহহ!ছবিটা তার মানে আপনার কাছে আছে।এই জন্যেই আমি খুজে খুজে পাইনা বাসায়।কিন্তু ছবিটা আপনার গাড়িতে গেলো কি করে?ওটা তো আমার ব্যাগে ছিলো।
–আমি কিভাবে জানবো ছবিটা ক্যামনে আসলো।হয়তো তোমার ব্যাগ থেকেই ওই রাতে পড়ে গিয়েছিলো।
–হুম হতে পারে।আচ্ছা শোনেন ছবিটা আমাকে ফেরত দিয়ে দিবেন।
–সেটা তো হবে না।
–কেন?(আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি)
–ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া প্রথম উপহার ওটা।তাই ওটা তো আর আমি তোমাকে ফেরত দিতে পারবো না পাখি।
–এই এই শুনুন খবরদার আমাকে পাখি বলে ডাকবেন না।আমি আপনার পাখি টাখি না।আর তা ছাড়া আমি তো আর ইচ্ছা করে ওটা আপনাকে দেইনি।
–হ্যা তা দাওনি।কিন্তু জিনিসটা তোমারই।তাই ওটা আর কোনদিন তোমাকে ফেরত দিবো না আমি।
–আপনি তো খুব খারাপ।
–…………….(উনি কোন কথা বললেন না,আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।চোখের পলক ও পড়ছে না ওনার)
–ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?(আমি আবার ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি)
–…………..(উনি এবারও কিছু বললেন না)
–ও হ্যালো কি হলো?স্ট্যাচু হয়ে গেলেন কেন?
(আমি ওনার সামনে হাত ঝাকাতে লাগলাম।ওনার হুশ ফিরলো।উনি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।তারপর কিচ্ছুক্ষন পর আবার আমার দিকে খুবই শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন)
–তুমি কি আমাকে একটু হলেও পছন্দ করো সূচী?(উনি খুব শান্ত সূরে বলেন)
–আমি আসলে…..
(আমি আর কিছু বলার আগেই উনি আমার হাতটা ধরে ফেলেন।এরকম হটাত করে হাত ধরাতে আমি কেঁপে উঠি।নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি)
–আমি জানি তুমি আমাকে একটু হলেও পছন্দ করো সূচী।হয়তো এখনো অনুভব করতে পারছো না।আমি তোমাকে তাড়া দেবো না।তুমি সময় নাও।কিন্তু আমাকে ফিরিয়ে দিও না সূচী।আমি যে তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
(ওনার মুখে ভালোবাসার কথাটা শুনে আমি ওনার মুখের দিকে তাকাই।চাঁদের আলোই ওনার মুখটা ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।এই প্রথম সাদা বাদরটাকে আমার চোখে এতো সুন্দর লাগছে।কিন্তু এতো সুন্দর কেন লাগছে?আমি তো ওনাকে পছন্দ করি না)
–সূচী।কি হলো?আমার কোন কথা কি তোমার খারাপ লেগেছে?
–হু হুম?
–আমার কোন কথা কি খারাপ লেগেছে তোমার?কোন কথাতে কি হার্ট হয়েছো?
–না।না আমি হার্ট হইনি(আমি ওনার হাত ছেড়ে অন্যদিকে ঘুরে যাই)
–আচ্ছা শাড়িটা নিয়ে কিছু বললে না যে?তোমার কি এখন আর ওটা ভালো লাগছে না।
–না না শাড়িটা অনেক সুন্দর তো(আমি হাসিমুখে লাফিয়ে কথাটা বলে উঠি)
–তার মানে তুমি খুশি হয়েছো পাখি?(উনি চোখে মুখে হাসি নিয়ে এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞেস করেন)
–খুশি হওয়ার কি আছে আজব!?আর তাছাড়া ওই শাড়ি আমাকে দিয়েছেন কেন হ্যা?(আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে মুখ গম্ভীর করে বলি কারন ওনার সামনে ওইভাবে থাকা যাবে না।মানুষটা তো বেশি সুবিধার না।ঠিকই বুঝে যাবে)
–তোমাকে ছাড়া কাকে দেবো পাখি?(ঠোঁট উল্টে বলে)
–আবার পাখি??
–রাগ করো কেন?আমি কতো ভালোবেসে ডাকছি আর তুমি শুধু রাগ দেখাচ্ছো।তবে জানো আমার না খুব নার্ভাস লাগছিলো শাড়িটা কেনার সময়।আগে তো কোনদিন ওরকম কিছু কারো জন্যে কিনিনি।সেই জন্যেই।আচ্ছা তুমি না শাড়িটা পরে আমাকে দেখাবে।

উনি আরো দশ মিনিট মতো বকবক করতে লাগলেন।আমি শুধু শুনলাম,তারপর নিচে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।

*সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।তাই হাতে এক কাপ চা নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলাম।চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার পর কাল রাতের কথা মনে পড়লো।আর রাতের কথা মানেই অভ্র ভাইয়ের কথা।ওনার কথা মনে পড়তেই এদিক ওদিক খুজতে লাগলাম,বাড়ির মধ্যেও পেলাম না।এতোক্ষনে তো উঠে যাওয়ার কথা।বাইরে কোথাও খুজে পেলাম না।চা শেষ করে বাড়ির মধ্যে গেলাম,মামার পাশে বসলাম।মামা ফোনে কথা বলছিলো তখন।
–হ্যা বাবা,পৌছে গেছিস ঢাকাই?
–……
–ঠিক আছে।রাখি।
মামা ফোন টা টেবিলের ওপর রাখলেন।আমি মামার দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করি,
–মামা কে ঢাকাই গেলো?
–কেন অভ্র।(মামা টেবিল থেকে খবরের কাগজ নিতে নিতে বলে)
–অভ্র ভাই?কিন্তু তোমাদের তো কালকে যাওয়ার কথা ছিলো।
–অভ্রর ফাইনাল পরীক্ষার তো আর বেশি দেরি নেই।তাই আজ ভোরেই চলে গেছে।আচ্ছা বাবা,সূচী সবাই খেতে আসুন(স্নিগ্ধা ভাবি সামনে দিয়ে যেতে যেতে বলে গেলো)

অভ্র ভাই ঢাকাই চলে গেছে শুনে কেন জানি না হালকা খারাপ লাগলো।কিন্তু কেন তা আমার জানা নেই।

চলবে……

#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২৪
#জুনাইনাহ_তাসনিম

৩২.
মামারা আপুকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।আপুর বিয়ের সময়ও এতোটা খারাপ লাগেনি যা এখন লাগছে।আপুকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়ার সময় মা কেঁদে ফেললো সমানে আপুও।মা আর আপুকে কাঁদতে দেখে আমি আর সৌরভও আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম।আমাদের সবার থেকে বিদায় নিয়ে আপু বাবার কাছে গেলো।বাবা অন্যদিকে ঘুরে আছে।আপু বাবার মুখে হাত দিয়ে কান্নারত অবস্থায় বলে,
–বাবা,ও বাবা।
বাবা ঘুরে তাকায় না।আপু বাবাকে জড়িয়ে ধরে।বাবা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না।আপুকে জড়িয়ে ধরে বাবা ও কেঁদে দেয়।আমাদের পরিবারের জন্যে ওই মুহুর্তটা খুবই ইমোশোনাল ছিলো।
আপুরা চলে যাওয়ার পর বিকেলে আমরাও নানীকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।গাড়িতে একদম পিছনের সীটে জানালার পাশে বসেছি।

*–সূচী,সূচী।
অভ্র ভাইয়ের ডাকে আমার ঘুম ভাঙে।ওনাকে দেখে আমি তো পুরো শকড।উনি কিভাবে এলেন এখানে।উনি তো গতকালই ঢাকায় চলে গেছিলেন তাহলে আমাদের সাথে গাড়িতে আসলেন কিভাবে?আর আমার পাশে তো মারিয়া ছিলো ও কোথায় গেল।আমাকে এরকম চুপ করে থাকতে দেখে অভ্র ভাই জিজ্ঞেস করে,
–কি ভাবছো এতো?আর এভাবে তাকিয়ে আছো যে,আমাকে কি নতুন দেখছো নাকি?
–আ আপনি?আপনি এখানে এলেন কিভাবে?
–সেটা বড় কথা না।বড় কথা হলো কিছু কি ভাবলে?
–কি ভাববো?
–কি ভাববা মানে?আমার ভালোবাসার কথাটা ভাববা পাগল।
(উনি কথাটা বলেই দুই হাত দিয়ে আমার চোয়াল দুটো টেনে নিজের দাত গুলো বের করে হাসেন।সামনে মা,বাবা,বসে তারপরেও উনি এরকম করছেন।আমি তো ভয়তে অর্ধেক শেষ।তাড়াতাড়ি ওনার হাত সরিয়ে দিলাম)
–আরে আরে কি করছেন?মা বাবা আছে তো।
–তো??
–তো মানে? এসব দেখলে কি ভাববে?
–কিচ্ছু ভাববে না।বলো না কিছু কি ভাবলে?(উনি ক্ষপ করে আমার হাত ধরে ফেলেন)
(উনি আমার হাত ধরার সাথে সাথে আমি আরো ভয় পেয়ে যাই।এই লোকটা আজকে আমাকে বাশ দিয়েই ছাড়বে দেখছি।মা বাবা যদি একবার বুঝে ফেলে বা শুনে ফেলে আমি তো আজ শেষ।আমি ওনার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।উনি আরো শক্ত করে আমার হাতটা ধরলেন।আমি একবার ওনার দিকে তাকাচ্ছি আর আরেকবার সামনের দিকে তাকাচ্ছি।ভয়ে তো আমার অবস্থা যাই যাই।)
–পাখি কি করছো এটা?(উনি একটু রাগ করার অভিনয় করে জিজ্ঞেস করেন)

এই লোকটা আজকে আমাকে মার খাওয়াবেই খাওয়াবে।মা-বাবার সামনে কি সব বলছে এ।কিন্তু মা বাবা কি কিছু শুনতে পাচ্ছে না।কি যে হচ্ছে কিছুই তো আমার মাথাই ঢুকছে না।আমি মরছি ভয়ে আর অভ্র ভাই হটাত আমার হাতটা ধরে নিজের কাছে টান দেন।আমি গিয়ে পড়ি ওনার বুকের কাছে।এতোক্ষন তো এক ভয় ছিলো এখন মা বাবার ভয় প্লাস ওনার এইভাবে কাছে টেনে নিয়ার ভয় সব মিলে আমি যে কি অবস্থাই আছি!ওনার কপালের ওপর আসা সিল্কি চুলগুলোর ঠিক নিচেই ওনার সুন্দর চোখদুটো।আমি ওনার চোখের দিকে তাকাতেই সবকিছু ভুলে গেলাম যেন।ডুবে গেলাম ওনার চোখে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুক্ষন পর উনি মুচকি হেসে বলেন,,
–বলে দিলেই তো পারো তুমি আমাকে ভালোবাসো।
(আমি চোখ সরিয়ে নিই)
–বাসি না ভালো আমি আপনাকে।
–মিথ্যে কথা।
–না সত্যি সত্যি সত্যি।

*–সূচী,সূচী।
–হুম?
–পৌছে গেছি আমরা ওঠ…
মা আমাকে ডেকে চলে যায়।আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কোথাও তো অভ্র নেই।তারমানে আমি এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম।আমি বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।তারপর গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।

বিকালে বের হয়েছিলাম,এখন রাত।বাবা নিজে গিয়ে মারিয়াকে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে এসেছে।রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে আমি ঘরে আসলাম।ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে গেলাম।বিয়ের দৌড়াদৌড়িতে ১০-১২ দিন অনলাইনেই যাওয়া হয়নি।তাই আজকে গেলাম।অনলাইনে গিয়ে কিছু নিউজফিড স্ক্রল করছি।মাত্র ১০-১২ দিন মতো অফলাইন ছিলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যেন কতো বছর পর আসলাম।ঘন্টাখানিক স্ক্রল করার পর অন্তু ভাইয়ের আইডি সামনে এলো।আমি প্রোফাইলের ভিতরে ঢুকলাম।প্রোফাইল পিকচার অন্তু ভাইয়ার হলেও কভার ফটোতে অন্তু ভাইয়া,স্নিগ্ধা ভাবি আর আয়ানের সুন্দর একটা ছবি।খুব সুন্দর হাসিখুশি একটা পরিবারের ছবি।আমি বেশকিছুক্ষন ধরে ছবিটা দেখলাম তারপর অন্তু ভাইয়াকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম।ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর পর আমি আইডির ভিতরের ছবিগুলো দেখতে লাগলাম।ছবি দেখতে দেখতে ওনাদের তিন ভাইয়ের খুব সুন্দর একটা ছবি সামনে আসলো।একই রকম সাদা পাঞ্জাবি পরে আছে তিন ভাই।মানে অন্তু,আকাশ আর অভ্র।বড় দুইভাই দুইপাশে আর মাঝখানে ছোট নবাবটা।অন্তু ভাইয়া আর আকাশ ভাইয়া সুন্দর ভাবে দাড়িয়ে থাকলেও মাঝের জনকে তো বাদরামি করা লাগবেই।সাদা বাদর বলে কথা!ঠিকই চোখ টিপে দাতগুলো বের করে দুষ্টুমি করে ছবিটা তুলেছে।তবে ওনার এই দুষ্টুমির কারনেই হয়তো ছবিটা আরো বেশি সুন্দর হয়েছে।আমি ওইটা ছবিটা ছাড়িয়ে আরো ছবি দেখতে লাগলাম।দেখতে দেখতে একটা পোস্ট সামনে আসলো।পোস্টের ছবিটাতে একটা ছোট্ট বাচ্চা বসে আছে।গালে ৩-৪টা দাত,খুব মিষ্টি করে হাসছে।ছবিটা দেখার পর আমি ছবির উপরে থাকা ক্যাপশনটা পড়ি।

“বাড়ির সব থেকে আদরের দুষ্টু ছেলেটিকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।”

ক্যাপশনটা পড়ে বুঝতে বাকি থাকলো না এটা কার ছবি।অভ্র ভাই যে ছোটবেলাই এতো সুন্দর ছিলেন না দেখলে জানতামই না।কেন জানি না ছবিটা সেভ করে নিলাম।তারপর অফলাইন হয়ে গেলাম।

*দুদিন কেটে গেছে।আজকে আমরা আপুর বাসাই যাবো।যদিও মা-বাবা যাবে না।বাবার কিছু কাজ আছে আর নানী থাকাই মা ও যেতে পারবে না।তাই আমি আর সৌরভ যাবো।কয়েকদিন থাকবোও।বিকালে রেডি হয়ে নিলাম আমরা দুজন।মামা গাড়ি পাঠিয়েছে ও বাসা থেকে,আমরা সেই গাড়ি চড়েই গেলাম।আমাদেরকে দেখে আপু তো মহাখুশি।অবশ্য সবাই খুশি।

মামার বাসায় এসেছি তাও ২ ঘন্টা মতো।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সবার সাথেই দেখা হয়েছে শুধু মাত্র সাদা বাদরটারই কোন খোজ নেই।ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও কেন জানি না বারবার ওনার কথা মনে পড়ছে।কিন্তু উনি কোথায় আছেন?হয়তো বাড়িতে নেই,থাকলে তো দেখতামই।সবার সাথে গল্প করছিলাম,দেখতে দেখতে কখন যে রাত হয়ে গেলো বুঝলাম না।মামি সবাইকে খেতে ডাকলেন।আমরা খেতে গেলাম।খাবার টেবিলে বসে মনে হলো এবার হয়তো জনাবের দেখা পাবো।কারন এতোক্ষন বাইরে থাকলেও এখন তো চলে আসার কথা।সবার খাওয়াও প্রায় শেষ হয়ে গেলো কিন্তু ওনার আসার কোন ভাব দেখছি না।কাউকে জিজ্ঞেসও তো করতে পারবো না।আমার খাওয়াও শেষ আমি হাত ধোয়ার জন্যে উঠেই যাচ্ছিলাম তখন মামি ওনাদের বাড়ির কেয়ারটেকারকে বলেন,

–অভ্রর খাবারটা ওর ঘরে দিয়ে এসো ভাই।ওর খাবার সময় হয়ে গেছে তো।
–আইচ্ছা ভাবি যাচ্ছি।

খাবার নিয়ে উনি দোতলায় চলে গেলেন।কিন্তু ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকলো না।খাবার নিয়ে অভ্র ভাইয়ের রুমে যাচ্ছে মানে উনি বাসাতেই আছে।কিন্তু কথা হলো বাসায় থাকলে নিচে এলেন না কেন একবারো?আমার মাথাই কিচ্ছু ঢুকলো না।আমি হাত ধুয়ে নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকাল বেলা উঠে সবার সাথে গল্প করলাম কিছুক্ষন তারপর ব্রেকফাস্ট করার জন্যে টেবিলে গেলাম।সবাই খেতে আসলো।অন্তু ভাই আর আকাশ ভাই তো খুব তাড়াই ছিলো।অফিসে যেতে হবে তো।আকাশ তো অন্তু ভাইয়ার থেকে আরো বেশি তাড়াই আছে কারন বিয়ের পর আজকেই প্রথম অফিসে যাচ্ছেন উনি।আপু,মামি আর স্নিগ্ধা ভাবি আগে ওনাদের খাবার দিয়ে দিলেন।নাকে-মুখে খেয়ে দুজনেই বের হয়ে গেলেন অফিসের জন্যে।তারপর আমরা ধীরে সুস্থে খেতে বসি কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো এবারও অভ্র ভাই নিচে এলেন না।ওনার খাবার উপরে দিয়ে আসা হলো।ব্যাপারটা আমার মাথাই ঢুকলো না কিচ্ছু।

*বেলা ১২টা।আপু আর স্নিগ্ধা ভাবি রান্নাঘরে মামিকে হেল্প করছে।আমার একা একা বসে থাকতে খুবই বোর লাগছিলো তাই আমিও রান্নাঘরে গেলাম।আমাকে রান্নাঘরে দেখে স্নিগ্ধা ভাবি জিজ্ঞেস করলো,
–সূচী।তুমি এখানে,কিছু লাগবে কি?
–না ভাবি ঘরে একা একা ভালো লাগছিলো না তাই এলাম।ভাবলাম তোমাদের একটু সাহায্য করে দিই সেই ফাকে গল্পও হয়ে যাবে।
–কোন দরকার নেই মা।তুই ঘরে যা।তুই তো আমাদের মেহমান যা যা ঘরে যা(মামি বলে)
–মামি তুমি আমাকে এইভাবে বললে?মানলাম আমি তোমার বউমার বোন কিন্তু আমার সাথে তো তোমার আরো একটা সম্পর্ক আছে।আর সেই সম্পর্কটা হিসাব করলে তো আমি বাড়ির মেয়ে তাই না??তাও তুমি আমাকে মেহমান বলে পর করে দিলে?(আমি মুখ শুকনো করে বললাম)
–এই দেখো আবার কষ্ট পাচ্ছে। ঠিক আছে বাবা ভুল হয়েছে আমার।থাক তুই এখানে।
–সত্যি?
–হ্যা হ্যা সত্যি।
–তিন সত্যি?
–তিন সত্যি।
–এই তো আমার লক্ষী মামি(আমি মামিকে জড়িয়ে ধরলাম)

মামিদের সাথে কিছুক্ষন গল্প করলাম।বেলা ১২:৩০টার সময় মামি কমলাকে ডেকে এক কাপ কফি পাঠালেন অভ্র ভাইয়ের জন্যে।কমলা কফি নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেলো।আমিও সুযোগ বুঝে কমলার পিছু পিছু বের হয়ে গেলাম।কমলা সীড়ি দিয়ে উঠতে গেলে আমি ডাক দিই,
–কমলা।
–জী আপা কিছু বলবেন?(কমলা খুব সুন্দর করে উত্তর দেয়)
–কোথায় যাচ্ছো?
–ছোট ভাইজানের ঘরে।
–ওহ।আচ্ছা বলছিলাম কি উনি কি সারাদিন ঘরেই থাকে?না মানে এসে ধরে একবারও দেখলাম না তো তাই আর কি।
–হ আপা ঘরে থাকে।ভাইজানের তো সামনে ফাইনাল পরীক্ষা।পরীক্ষার আগে তো ভাইজান সারাদিন ঘরে থাকে আর পড়ে।খাবারও ওনার ঘরেই খায়।বাইরেও আসে না কারোর সাথে কথাও বলে না।কেউ যদি ওনার ঘরে যায় সেইটাও পছন্দ করে না।আচ্ছা আপা কফি জুড়ায় যাচ্ছে।আমি যাই?
–হুম যাও।

ফুলি চলে গেলো।আমি দাড়িয়ে রইলাম।তবে বুদ্ধি খাটিয়ে জেনে তো গেলাম সাদা বাদরটার বাইরে না আসার কারনটা।আমি গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিজের ঘরে চলে গেলাম।

চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন.কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
ধন্যবাদ)