#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২৭
#জুনাইনাহ_তাসনিম
৩৫.
দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে গেছে।আমার ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে।ভালোই কাটছে সেকেন্ড ইয়ারের নতুন নতুন ক্লাস।তবে এতো কিছুর মাঝেও অভ্র ভাইয়ের কথা প্রায়ই মনে পড়ে।বেশি মনে পড়ে ওনার সাথে গল্প করে কাটানো চাঁদনি রাত গুলোর কথা।ওমার হাসি,ইয়ারকি,ভয় সব কিছু মনে পড়লেই আপন মনেই হেসে উঠি।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলেই আগে ক্যালেন্ডার দেখি,আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটা করে তারিখ কেটে দিই।আমি যে কেন করছি এসব আমার জানা নেই।এগুলোকে ভালোবাসা নাম দেওয়া যাই কিনা তাও জানা নেই আমার।তবে আমি তাকে মিস করি।
*ভার্সিটি থেকে ফিরে গোসল করার জন্যে ওয়াশরুমে গেছি।ঘন্টাখানিক পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি সৌরভ আমার খাটের ওপর বসে পা দুলাচ্ছে আর আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিচ্ছে।আমি চুল মুছতে মুছতে আড় চোখে একবার ওর দিকে তাকাই।তারপর পাত্তা না দিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে চুল মুছতে লাগি(এটা আমার অভ্যাস।ছোট থেকেই আমি গোসল শেষে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে চুল মুছি)।আমি চুল মুছা শেষ করে টাওয়ালটা বেলকনিতে নেড়ে দিয়ার জন্যে যাচ্ছিলাম।সৌরভ এখনো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।আমি হাটতে হাটতেই খেয়াল করলাম ওর হাতে কিছু একটা আছে।কিন্তু খুব ভালো করে আর খেয়াল করা হলো না।বেলকনিতে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম,
–কি চায়?এই ভর দুপুরে আমার ঘরে কি করতে আসা হয়েছে?আর হাতেই বা কি??
কথা বলতে বলতেই আমি বেলকনিতে চলে গেছি।টাওয়ালটা নেড়ে দিচ্ছিলাম তখনই কানে এলো,
–নাথিং স্পেশাল।গতকাল তোর ফোনের পাসওয়ার্ড দেখে ফেলছিলাম তাই আজ ট্রাই করে দেখছিলাম মনে আছে কিনা।
সৌরভের কথা শুনে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম।আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো,যেন বেরিয়েই আসবে।হাতও টাওয়াল নাড়া অবস্থাই থেমে গেছে।৩-৪ সেকেন্ড পর যখন হুশ ফিরলো আমি দৌড়ে রুমে এসে সৌরভের হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিলাম।
–তোর সাহস হলো কি করে আমার মোবাইল হাতে নেয়ার??আর কত্তো বড় খারাপ তুই,যে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ফোনের পাসওয়ার্ড দেখেছিস।চোর কোথাকার!তোরে তো আমি….
(আমি ওরে বকা দিয়া থামিয়ে আগে ফোন অন করে গ্যালারি,মেসেঞ্জার,ফেসবুক এসবে ঢুকলাম।না সব তো ঠিকই আছে।যাক বাবা,আমার কিছুটা হালকা হলাম)
–আমি তোর কোন সোসাল সাইটে ঢুকিনি।তোর ছবিটবিও দেখেনি(সৌরভ মুচকি হেসে বলে)
–ঠ্যাং ভেঙে দিতাম ওরকম কিছু করলে।যা দূর হ আমার ঘর থেকে।(আমি হাত দিয়ে দরজার বাইরে ইশারা করে বলি)
–দূর হতে বলছিস কেন?থাকি না একটু!
–না এক্ষুনি বের হবি তুই।বের হয়ে যা আমার ঘর থেকে।
–ওকে ফাইন।
(সৌরভ উঠে চলে যায়।আমি খাটে বসি।সৌরভ বের হয়ে যাওয়ার পর আবার দরজাই এসে দাড়ায়।)
–আমি তোর গ্যালারিতে ঢুকিনি,সোসাল সাইটেও না তবে..
–তবে??
–তোর ফোন লিস্টের সব নাম্বার ডিলিট করে দিছি।
সৌরভ কথাটা বলেই দৌড় দেই।আর আমি,
–মাআআআআআআআআআ………
*
–সৌরভ তুই এটা কেন করেছিস?ওর ফোনের সব নাম্বার ডিলিট কেন করেছিস?(মা সৌরভের কাছে জিজ্ঞেস করে)
–মা তুমি এতো শান্তভাবে কেন কথা বলছো ওর সাথে? পিঠে দু ঘা দাও আগে।ওর কত্তো বড় সাহস আমার ফোন থেকে নাম্বার ডিলিট করে।আমার কতো ফ্রেন্ড,স্যার,কতো ক্লোজ মানুষের নাম্বারর ছিল।সব হারাই গেলো এক নিমিষে।ওরে তো আমি….(আমি সৌরভকে মারতে যাই কিন্তু মা আমাকে ধরে ফেলে)
–সূচী।আমি কথা বলছি না?
–কিন্তু মা..
–সূচী।চুপ!
(মা সৌরভের দিকে তাকালো)
–সৌরভ কেন করেছো এটা?তুমি জানো না,না বলে কারো পারসোনাল স্পেসে হাত দেয়া ঠিক না।
–মা আমাকে বলছো কেন?ওউ তো আমার জিনিসে না বলে হাত দিয়েছে(সৌরভ আমার দিকে তাকিয়ে ঝগড়ার সুরে বলে)
–এই এই।আমি আবার তোর কিসে হাত দিলাম রে?
–তুই না বলে আমার ঘরে ঢুকে আমার ব্যাট লুকিয়ে রেখেছিলিস না??
–আমি??!!আমি কখন তোরর ব্যাটে হাত দিলাম(আমি মা আর ওর সামনে না জানার ভান করলেও সত্যি হলো আমি ওর ব্যাট লুকিয়ে রেখেছিলাম।ও তিন দিন পর খুজে পেয়েছে)
–হ্যা তুই।
–না আমি ওসব করিনি।
–মিথ্যা বলবি না।করেছিস মানে করেছিস।
–আমি সত্যিই বলছি।
–একদম মিথ্যা বলবি না পেত্নি।
–তুই আমাকে আবার পেত্নি বললি?হ্যা আমিই লুকিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু তাই বলে তুই এটা করবি?
–হ্যা করবো।আর এতো ক্ষেপছিস কেন তুই?তোর ফোনে তো আর নিশ্চয় এরকম কেউ ছিলো না যার নাম্বার আর সহজেই পাবিই না এমন।
আমি সৌরভের কথায় আর কিছু বলতে পারলাম না।তবে সত্যিই তো,অভ্র ভাইয়ের নাম্বার তো হারিয়ে ফেল্লাম।কারো কাছে তো চাইতেও পারবো না।উনি কন্টাক্ট না করলেও তো হবে না।আমার রাগ আরো বেড়ে গেলো সৌরভের ওপর।আর মনটাও খারাপ হয়ে গেলো।
*কেটে গেলো আরো একটা সপ্তাহ।রাতের বেলা প্রতিদিনের মতো আজকেও তারিখ কাটতে গিয়ে দেখি,আর একটাই আছে।আগামীকাল অভ্র ভাইয়ের পরীক্ষা শেষ।আমার আনন্দে নাচতে ইচ্ছা হলো।রাতে ঘুমই আসছে না,অনেক রাতে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নাই।সকালে ঘুম থেকে উঠলাম মায়ের ডাকে।ঘুম ভাঙার সাথে সাথে ফোন চেক করলাম উনি কল/মেসেজ কিছু দিলেন কিনা জানার জন্যে।
–ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে?ক্লাস নেই তোর?কটা বাজে দেখেছিস?যা তাড়াতাড়ি রেডি হ।(মা আমার ঘরের জানালার পর্দা সরাতে সরাতে বলে)
–…………..
–এখনো বসে আছিস তুই?যা তাড়াতাড়ি।ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তো।
–উফ মা!আজ অফ।যাবো না ভার্সিটিতে।
–অফ কেন?
–জানি না কেন।যাও তো এখান থেকে(আমি মেজাজ খারাপ করে বলি)
–রেগে যাচ্ছিস কেন?ভালো করে বললেই তো হয়।তোদের যে কখন কি হয় বুঝিনা বাপু।
মা চলে যায়।আর আমি আবার শুয়ে পড়ি।আমার খুব রাগ হচ্ছে অভ্র ভাইয়ের ওপর।উনি কেন মেসেজ/কল দিলেন না?কিন্তু কিছুক্ষন পর খেয়াল হলো এখন তো সকাল।ওনার এক্সাম শেষ তো পরের কথা শুরুই তো হয়নি হয়তো।ধুর!আমিও একটা পাগল।দুপুরে খেয়ে এসে বিছানায় আবার শুলাম,হাতে ফোন।অভ্র ভাইয়ের মেজেস বা কলের অপেক্ষা।অপেক্ষা করতে যেয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি ঠিক নেই।
ঘুমের মধ্যে কোনরকম চোখটা খুলে দেখি কেউ একজন আমার ঘরের মধ্যে হাটাহাটি করছে।ঘুমটা এখনো ভালো করে কাটিনি তাই বুঝতে পারছি না মানুষটা কে।তবে এটা বুঝতে পেরেছি পুরুষ মানুষ।আমি ভাবলাম সৌরভ হয়তো।তাই চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসি।
–তুই আবার এসেছিস আমার ঘরে?তোরে না বলেছি আমার ঘরে আসবি না আর।
–আমাকে কখন মানা করলে আবার?(খুবই পরিচিত কন্ঠ।কন্ঠ শুনেই আমার বুক কেঁপে উঠলো।আমি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে দেখি সামনে অভ্র ভাই দাড়িয়ে)
–আপনি?
–হুম আমি।আমাকে কখন মানা করলে তোমার রুমে না আসতে?আচ্ছা আমি কি চলে যাবো?
–না না কথাটা আপনাকে বলিনি।আই থট ইট’স সৌরভ।ওরেই মানা করছিলাম।
–ওহ আচ্ছা।তাই বলো।
–হুম।কিন্তু আপনি এখানে??
–পরীক্ষা শেষ হলো আজ।তাই চলে এলাম।কেন আমাকে দেখে খুশি হওনি তুমি?
–খুশি হবো না কেন?আমি তো অনেক খুশি(আমি এক্সাইটেড হয়ে বলে ফেলি।তারপর খেয়াল হতেই জিহবায় কামড় দিই)
–আচ্ছা আচ্ছা ব্যাপার।
— না মানে..
–মানে ইউ লাভ মি।
–না না ওসব কিছু না।
–ওসবই।তুমি যতোই বলো ওসব কিছু না আমি তো জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো
–না।আমি আপনাকে ভালোবাসতে যাবো কেন আজব?
–সেটা তো তুমিই ভালো জানো।কিন্তু ভালো তো বাসোই।
–না বাসি না।
–হ্যা বাসো
–না
–হ্যা(উনি আমার পাশে এসে বসে পড়েন)
–না মানে না
–হ্যা মানে হ্যা।মিথ্যা কথা বলতে হয় না পাখি।আল্লাহ পাপ দেবে তো।
–মিথ্যা বলিনি আমি।যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।
–তুমি মিথ্যাই বলেছো।
–বললাম না আমি যে না।না মানে নাআআআআ..
–আমিও তো বললাম যে হ্যা।হ্যা মানে হ্যায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া..
–অভ্র ভাই না।
–সূচী হ্যা।
–ধুর না।(আমি ওনাকে ধাক্কা দিতে গেলাম)
–ও মা গো…(আমি দড়াম করে মাটিতে গিয়ে পড়লাম।মাটিতে পড়েই আমি পুরো ব্লাক আউট।কি হলো কিছুই বুঝলাম না।অভ্র ভাই কোথায় গেলো?এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও পেলাম না।তার মানে আমি এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম আর ওনাকে ধাক্কা মেরে ফেলতে গিয়ে নিজেই পড়ে গেছি।ধুর!নিজের মাথাই নিজেই চাটি মারলাম।তারপর ফ্লোর থেকে উঠে দেখি ৬:৩০টা বাজে।টাইম দেখে আমি শকড।৩ টার পর পর ঘুমিয়েছি আর এখন এতো বেজে গেছে।আমাকে কেউ ডাকতেও আসিনি।কিন্তু এর মাঝেও খারাপ লাগলো অভ্র ভাই এখনো আমাকে কোন কল বা মেসেজ দিলো না।
ঘর থেকে বেলকনিতে গেলাম।বেলকনিতে দাড়িয়ে নিচে রাস্তার দিকে তাকাতেই মনে হলো অভ্র ভাই।সাথে মা আর সৌরভ।অভ্র ভাই মায়ের সাথে কথা বলছে।আমি বেশ কিচ্ছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করলাম এটা সত্যিই উনি কিনা।যখন বুঝতে পারলাম ওটা সত্যিই উনি আমি কোন কিছু না ভেবে দৌড় দিলাম।দৌড়ে দৌড়ে গেটের বাইরে মা আর সৌরভের কাছে গেলাম কিন্তু ওখানে অভ্র ভাই নেই।আমাকে দেখে সৌরভ বলে,
–কুম্ভকর্ণর বংশধর আপনার ঘুম ভাংলো?অভ্র ভাই এসেছিলেন দেখা করতে তা আপনি তো ঘুমে মরে ছিলেন।কতোবার আপনার দরজা ধাক্কানো হলো তা খুললেনই না।চলে যাওয়ার আগে সবার সাথে একবার দেখা করতে চাচ্ছিলো তা আপনি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই বুড়ি হয়ে গেলেন।
–চলে যাওয়ার আগে মানে?(অবাক হয়ে শুনি)
–অভ্র ঢাকার থেকে ১৩৭ কিলোমিটার দুরের এক গ্রামে চলে গেছে ইন্টারনি করার জন্যে।যদিও ওর আজই পরীক্ষা শেষ হয়েছে,রেজাল্টের দেরি আছে।তাও ওর স্যার ওকে যেতে বলেছে তাই চলে গেলো আজকেই(মা কথাটা বলে ভিতরে চলে আসে।আর আমি রাস্তার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকি)
৩৬.
রাতে,মা টেবিলে খাবার বাড়ছে।আমি সেই সুযোগে মায়ের ফোন টা নিলাম।উদ্দেশ্য অভ্র ভাইয়ের নাম্বার নেয়া।কারন গতকাল উনি বাসায় আসার পর আর কোন যোগাযোগ করেননি।কোথায় গিয়েছেন,কেনোই বা গিয়েছেন কিছুই ভালো করে জানা নেই আমার।তাই ওনার নাম্বারটা নেয়া খুবই দরকার।আমি মায়ের ফোন নিয়ে ওনার নাম সার্চ দিলাম।নাম্বার নিতেই যাবো তখনই সৌরভ আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়।
–মার ফোন নিছিস কেন?নিজের ফোন নেইই?
–কাজ আছে আমার ফোনটা দে।
–দেবো না।কি করবি?
–দিতে বলেছি দে।
–বললাম তো দেবো না।
–সৌরভ ঝামেলা করবি না কিন্তু।ফোনটা দে।
সৌরভের সাথে হাতাহাতি করার সময়য় ফোনটা মাটিতে পড়ে খন্ড খন্ড হয়ে গেলো।মা তো আমাদের দুজনকে প্রচুর ঝাড়লো সাথে রাতের খাবার টাও আজ অফ করে দিলো।
আমি নিজের ঘরে এসে বসে রইলাম।রাতে খাইনি এতে কিছুই হচ্ছে না আমার কিন্তু অভ্র ভাইয়ের নাম্বারটা পেলাম না তাই কেন জানি না খুব কষ্ট লাগলো।কান্না পাচ্ছিলো।
চলবে……
#তোমাকে_নিয়েই_গল্প
#পর্ব:২৮
#জুনাইনাহ_তাসনিম
অভ্র ঢাকার বাইরে গেছেন ১৩ দিন হয়ে গেছে কিন্তু আমি ওনার কোন খোজই জানি না।আপু বা মা কারোর কাছে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারি না এই ভয়ে যে,আমাকে যদি সন্দেহ করে বা ভুল বোঝে।যদি বাই চান্স আমাকে উল্টো জিজ্ঞেস করে বসে আমি কেন ওনার খবর নিচ্ছি তখন কি উত্তর দেবো আমি?ওনার খবর জানার এতো আগ্রহ কেন সেটা আমি নিজেও তো জানি না।কেন জানি না কিছুই ভালো লাগে না এখন।ক্লাসে মন বসে না,ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে ইচ্ছা করে না,বাইরে ঘুরতে/খেতে যেতে ইচ্ছা করে না,সোসাল সাইটেও ভালো লাগে না।সবসময় ওনার কথা মনে পড়ে।কিন্তু কেন তা আমার জানা নেই।
আমি মুখ শুকনো করে মারিয়াকে এই কথাগুলো বলি।আমার কথাগুলো শুনে মারিয়া যে কি বলবে বা রিয়াক্ট করবে ওর নিজেরও জানা নেই।প্রথমত ও স্বপ্নেও আশা করিনি আমি ওকে এরকম কিছু বলতে পারি।দ্বিতীয়ত ও নিজেও কোনদিন প্রেমেটেমে পড়িনি তাই এরকম ফিলিংস ওর বুঝার কথাও না।তাও আমি তো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে কিছু একটা তো ওর বলতে হবেই।ও কিছুক্ষন আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে হুট করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।ওর এরকম হুট করে বের হয়ে যাওয়াতে আমি প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে পাত্তা দিলাম না।আমি বর্তমানে মারিয়ার বাসায় এসেছি।ওর ঘরে বসেই কথাগুলো ওকে বলছিলাম।কিন্তু মারিয়া ম্যাডাম তো আমার কথা শুনে কোন কিছু না বলেই হাটা দিলেন।আমি ওর খাটের ওপর পা ছড়িয়ে বসে রইলাম।হাতে আন্টির মানে মারিয়ার আম্মুর হাতের রান্না করা পায়েস তাও আমার খেতে ইচ্ছা করলো না।পায়েসের বাটিটা বেডের পাশে থাকা সাইড টেবিলটাই রেখে দিলাম।
১০ মিনিট মতো পর মারিয়া আসলো।
–সূচী।(বাচ্চাদের মতো ফেস নিয়ে বলে)
–কি হয়েছে?আর তুই ওইভাবে চলে গেলি কেন কোনকিছু না বলে?
–সুচী,তোর প্রিন্স চারমিং ও এসে গেলো।তুই ও মিংগেল হয়ে গেলি।আমি আর সালমান খানই সিংগেল থেকে গেলাম রে।
–কি?কি বকছিস এসব?আমি মিংগেল হলাম ক্যামনে?
–কেন অভ্র ভাইয়াকে তুই ভালোবাসিস আর উনিও।তাহলে তো তোরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফেন্ডই হলি।
–আমি ওনাকে ভালোবাসি??
–হ্যা বাসিসই তো।প্রেম করিনি বলে কিছুই কি বুঝি না।আমি সব বুঝি।
–আন্ডা বুঝিস তুই।আমি ওনাকে ভালোবাসি না।আরে ভালোবাসা কি এতোই সহজ যে হুটহাট করে হয়ে যাবে।আর ভালোবাসা হলে তো আমি বুঝতামই।
–হয় সূচী,হয়।আমি মুভিতে দেখেছি ভালোবাসা হুট করেই হয়।
–তোর সাথে কিছুই বলাই ভুল হয়েছে আমার।চললাম আমি।(আমি বেড থেকে উঠে নিজের ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে গেলাম)
–কোথায় যাচ্ছিস?
–বাসায়।
–কেন?
–কারন এখানে বেশিক্ষন থাকলে তোর উল্টা পাল্টা কথা শুনা লাগবে।যা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে।(আমি চলে আসলাম)
–কিন্তু সূচী,দাড়া…
আমি মারিয়ার কোন কথা না শুনেই চলে আসি।এমনিই মন মেজাজ তেমন ভালো এর মধ্যে ওর বকবকানি একদম শুনার ইচ্ছা নেই।
*রাত ১টা।আমি ঘুমে বিভোর।ঘুমের মধ্যেই ফোন বেজে উঠার শব্দ পেলাম।কিন্তু ইগনোর করলাম।পর পর দু বার কল আসলো।ঘুমটাই ভেঙে গেলো সাথে মেজাজটাও বিগড়ে গেলো।ফোন সাইলেন্ট করে আবার ঘুমালাম।সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি রাতে পরে আরো দু বার কল এসেছিলো ওই নাম্বার থেকে।কিন্তু আমি ওতো মাথা ঘামালাম না কারন এরকম রং নাম্বার থেকে মাঝে মাঝেই কল আসে।আর রাতের বেলা তো ফালতু ছেলেরা কল করে ডিস্টার্ব করে।তাই ওতো প্রেশার না নিয়ে ভার্সিটিতে গেলাম।
ভার্সিটির সব বন্ধুরা মিলে আজকে অফ ক্লাসের সময় ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছে।কিন্ত আমার একটুও ইচ্ছে করছে না ওখানে যেতে তাই ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ে এসে বসলাম।আমার পিছু পিছু মারিয়াও এসে গেছে।ব্যাগটা আগে রেখে ধপাস করে আমার পাশে বসে পড়লো।তারপর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো অর্ধেক বোতল।আমি ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিলাম,আমাকে দেখে বোতলটা একটু এগিয়ে দিয়ে বললো,
–খাবি?
আমি না ইশারা করলাম।ও বোতলটা ব্যাগে রেখে দিলো।তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
–সূচী একটা কথা বলবো?
–কি কথা?
ও নিজের চশমাটা ঠিক করে,ঢোক গিলে বলে,
–রাগ করবি না তো বল?
আমি ওর এই কথাটাই বুঝে গেছি ও ঠিক কোন ব্যাপারে বলতে চাচ্ছে।কিন্তু আমি তো ওই বিষয়ে কোন কথাই শুনতে ইচ্ছুক না।কারন ও এখন আবার শুরু করবে যে আমি অভ্র ভাইকে ভালোবাসি।কিন্তু এটা তো ভালোবাসা না।ভালোবাসা কি এভাবে হয় নাকি?ওনার কথা মনে করলেই যে সেটা ভালোবাসা হবে এটা তো না।তাই মারিয়ার বকবকানি না শুনে আমি ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়লাম।আমি ক্লাসের দিকে হাটছি আর ও কালকের সেই কথাগুলোই বলতে বলতে দৌড়াচ্ছে আমার পিছুপিছু।
–সূচী আমি ড্যাম শিউর তুই ওনার প্রেমে পড়েছিস।ভালোবাসিস তুই।শুনবি তো একবার কথা,দাড়া।সূচী দাড়া না…
ওর কোন কথাই শুনলাম না আমি।কারন ওর কথা আমি মানতে নারাজ।যে আমি অভ্র ভাইয়ের প্রেমে পড়েছি।কিন্তু মারিয়া বারবার একই কথা বলায় আমার বেশ রাগ হলো।আমি পিছু ঘুরে মারিয়ার দিকে চোখ গরম করে বলি,
–তুই যদি আরেকটা কথা বলেছিস রে কানা,তোরে আমি আস্ত চিবিয়ে খাবো।
আমার বকা শুনার পর মারিয়ার আর সাহস নেয় যে ও আর কিছু বলবে।মারিয়ার এই ব্যাপারটা আমি খুব মজা লাগে।আমি যখনই ওর ওপর একটু রেগে কথা বলি ও ভয়ে চুপসে যায়।কোন কথায় আর বলে না।আজও তাই হলো।
৩৭.
ঘুমের মধ্যে আজ আবার কল এলো।একটু আগেই ঘুমিয়েছি তাই ঘুমটা কাচা আছে।কাচা ঘুম ভাংতে খুব বেশি সময় লাগে না।তাই একবার কলেই ঘুম ভেঙে গেলো।নাম্বার দেখেই চিনে গেলাম কাল রাতের নাম্বার।রাগে গজগজ করতে করতেই রিসিভ করি।কিন্তু ওপাস থেকে কোন সাড়াশব্দ পেলাম না।তাই আমিই রেগে বলে উঠলাম।
–হ্যালো।কে?
–………
–হ্যালো।আরে কে ভাই আপনি?এতো রাতে কল দিয়েছেন কিন্তু কোন কথা নেয়।সমস্যা কি??রাতের বেলা এরকম অসভ্যতামি করার মানে…….(আমি কথা শেষ করতে পারি না)
–সূচী,আমি।
(ওপাশ থেকে আমার নামটা শুনার সাথে সাথে আমার হার্টবিট থেমে গেলো কিছুক্ষনের জন্যে।গরমের মধ্যেও আমার শরীরে কেমন শীত লাগা শুরু হলো।আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না।ওপাশ থেকে আবার আমার নাম নিলো)
–সূচী..
–……..
–সূচী শুনতে পাচ্ছো কি আমার কথা?হ্যালো..
–হুম?হুম(আমার হুশ ফিরলো)
–কেমন আছো পাখি তুমি?
–অভ্র ভাই।
–হ্যা আমিই।কেমন আছো তুমি?
–ভালো আছি।
–তোমার শরীর ভালো আছে তো?
–হ্যা শরীরও ভালো।
–আমি সেদিন তোমার বাড়িতে গেছিলাম।মানে যেদিন এখানে চলে আসি সেদিন কিন্তু তুমি তো রুমে দরজা লাগিয়েই ছিলে।ফুপি তোমাকে কতো ডাকলো তাও উঠলে না।খুব খারাপ লেগেছিলো জানো?তোমাকে একবার দেখে আসা হলো না।আমি রোজ তোমার ছবিগুলো দেখেই কাটাই।আচ্ছা এখানে না অনেক বেশি নেটওয়ার্কের প্রবলেম।বেশিক্ষন কথা বলা যাই না।তুমি রাতে খেয়েছো?
–হ্যা খেয়েছি।
–কি খেয়েছো?
(কি খেয়োছো শুনে বেশ অবাক লাগলো আমার)
–ভাত।আলু ভর্তা,মসুর ডাল আর ইলিশ মাছ ভাজা।
–ইলিশ মাছ ভাজা?!জানো আমার না খুব ভালো লাগে ইলিশ মাছ ভাজা।কিন্তু অনেকদিন খাইনা।এখানে এসে নিজের রান্না নিজেই করা লাগে।আমি তো রান্নাবান্নার কিছুই জানি না।প্রতিদিন হাড়ির নিচে লেগে যাওয়া পোড়া ভাত আর এটা ওটা ভর্তা দিয়েই খাওয়া লাগে।শুকনো খাবারে গলা এটে আসে।
(উনি এতো কথা বলছেন কিন্তু কেন জানি না আমার এসব কথা শুনার থেকে উনি এতোদিন কেন কল করেননি সেটা জানার খুব ইচ্ছা হলো)
–আচ্ছা আপনি এতো দিন কল দেননি কেন?
–…………(ওপাশ থেকে চুপ)
–হ্যালো….
–সূচী কথা বুঝা যায় না তোমার।(ওনার কথা বেধে বেধে আসছে।
–হ্যালো।আমার কথা বুঝতে পারেন নি?আমি জিজ্ঞেস করছি এতোদিন কল করেননি কেন?
–হ্যা হ্যা লো….
–হ্যালো
আর কোন কথা বলতে পারলাম না।কলটা কেটে গেলো।আমি আবার ট্রাই করলাম ওনার নাম্বারে কিন্তু নট রিচেবল দেখালো।হয়তো নেটওয়ার্ক চলে গেছে।আমার একটু খারাপ লাগলো কিন্তু কেন জানি না এতোদিন পর ওনার ভয়েস শুনে বেশ ভালো লাগছে।মনে আলাদা এক শান্তি লাগছে।আমি ওনার নাম্বারটা সেভ করে আবার শুয়ে পড়লাম।
*ভার্সিটিতে,
–আজ এতো হ্যাপি।ব্যাপার টা কি রে?(মারিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে)
–রাতে উনি কল দিছিলো।
–উনি?উনি টা আবার কে?
–আরে উনি।
–অভ্র ভাই??
–হ্যা(আমি হালকা লজ্জা পেলাম)
–সূচীইই তুই লজ্জা পাচ্ছিস?আমি তোরে আগেই বলেছিলাম তুই ওনাকে ভালোবাসিস।ভালো না বাসলে আর কি তুই এতো খুশি হতিস বা লজ্জা পেতিস?
–মারু,মার খাবি কি এখন??
–না না।আমি আর বলছি না।(ও মুখ শুকিয়ে বলে)
–হাহহাহাহহাহ।চল
–কোথায়?
–ফুচকা খাবো।অনেকদিন খাওয়া হয়নি।
–তুই খাওয়াবি?
–হুম।
–চল চল।তাড়াতাড়ি চল।
মারিয়া আমার হাত ধরে তাড়াতাড়ি ফুচকার দোকানের দিকে টেনে নিয়ে যায়।ওর এরকম বাচ্চামি দেখে আমার খুব হাসি পাই।
*সন্ধ্যাই মা বাবার সাথে বসে টিভি দেখছিলাম তখনই অভ্র ভাইয়ের কল এলো।মা বাবার সামনে কলটা রিসিভ ও করতে পারছি না।পর পর দুবার বাজলো।আমি রিসিভ করলাম না।আমাকে কল রিসিভ করতে না দেখে বাবা বলে,
–সূচী কল রিসিভ করছিস না কেন?
–রং নাম্বার বাবা।বাদ দাও.
–আচ্ছা।
*খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে এসে শুলাম।অনেকদিন পর ফেসবুকে গেলাম।আধা ঘন্টা মতো ফেসবুক স্ক্রল করলাম।তারপর ফোনটা রেখে এক পাশ হয়ে শুলাম।মনে মনে ভাবছি,
–উনি তখন কল দিলেন আমি তো রিসিভ করলাম না।রাগ করলো না তো আবার?আমি তো মা বাবার জন্যে কথা বলতে পারিনি তখন।আমি এসব ভাবতে ভাবতেই ওনার কল।আমি ওনার কল রিসিভ করলাম।
–হ্যালো সূচী।কেমন আছো?
–ভালো আছি।
–রাতে খেয়েছো?
–হ্যা খেয়েছি।
–কি খেলে?
–ভাত।বেগুন বড়ি রান্না আর চিংড়ি মাছের মালাইকারি।
–মালাইকারি?!আহ!কতো দিন খাইনা..
–হুম
–আচ্ছা কি করছো এখন?
–শুয়ে ছিলাম।
–এই তুমি ঘুমাবে নাকি?আচ্ছা সরি সরি।আমারই ভুল আমিই এতো রাতে কল দিলাম।কাল তো আবার তোমার ভার্সিটি আছে,সকাল সকাল উঠা লাগবে।আচ্ছা তুমি ঘুমাও।গুড নাইট পাখি।
উনি কল কেটে দেন আমার আর কোন কথা না শুনেই।ধুর!আজকেও জানা হলো না এতোদিন কেন কল দিলো না।
চলবে……
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন।কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।)