#তোমাতেই_আমি_মগ্ন 🌸
#পর্ব_১৪
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
ফারাবী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।অন্না তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ করে ফারাজ খান তাদের রুমের দরজায় এসে নক করলো।অন্না আর ফারাবী একসাথে পিছনে ফিরে দেখে ফারাজ খান দাঁড়িয়ে আছে।
বাবা ভিতরে আসুন।(অন্না)
ফারাজ খান ভিতরে এসে অন্নার সামনে দাঁড়ালো।
মা তোমার শ্বাশুড়ি যা বলেছে তা ভেবে কষ্ট পেয়ো নাহ্।আসলে ও একটু বেশিই রাগী।(খান সাহেব)
বাবা এইসব নিয়ে আর চিন্তা করার দরকার নেই।আমি কিছুই মনে করি নাই।(অন্না)
আমি আর রুমানা মিলে ডিসিশন নিয়েছি কালকে ফারাবী আর তোমার রিসিপশনের পার্টি থ্রো করবো।তোমরা দুজনে যাকে যাকে ইনভাইট করবে করতে পারো।(খান সাহেব)
খান সাহেব রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।অন্না ফারাবীর রুমের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু বলবে কি তুমি?(ফারাবী)
এইসবের কি দরকার ছিলো!(অন্না)
আলবাত দরকার ছিলো।আর তোমাকে এতো পাকনামি কেউ বলতে বলেনি।এমনি তো শিশু বউ।(ফারাবী)
শিশু বউ মানে কি হ্যাঁ?(অন্না)
দেখো তোমার বয়স সবে উনিশ হবে।তেমন তো বেশি না।সো তুমি তো শিশু বউ-ই হলে।(ফারাবী)
আমি মোটেও ছোট না।আপনি একদম আমাকে এইসব বলবেন না।(অন্না)
হ্যাঁ তুমি ছোট হবে কেনো তুমি তো পাকনা বুড়ি।(ফারাবী)
ফারাবী মুচকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
/🦋/
ফাহাদ বসে বসে সিগারেট টানছে।হঠাৎ রাফসান এসে তার সামনে দাঁড়ালো।
বস একটা খবর আছে।(রাফসান)
কি খবর?(ফাহাদ)
আপনার ভাই ফারাবী ওই অন্না নামের মেয়েটাকে বিয়ে করেছে।আর কাল তাদের রিসিপশনের অনুষ্ঠান আছে।(রাফসান)
ওয়াও!এক ভাই রাত কাটালো।আর আরেক ভাই বিয়ে করলো!সো সুইট||(ফাহাদ)
ফাহাদ কথাগুলো বলে জোরে হেসে দিলো।
আমিও আসছি তোমাদের দুজনকে সারপ্রাইজ করতে।(ফাহাদ)
!💙!
সূর্যের আলো এসে ফারাবীর চোখে পড়লো।ফারাবী টিপটিপ চোখে তাকিয়ে দেখে অন্না জানালার পর্দা সরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফারাবী বিছানা থেকে উঠে অন্নার পিছনে দাঁড়ালো।
এই যে মিস……(ফারাবী)
অন্না পিছনে ফিরে দেখে ফারাবী দাঁড়িয়ে আছে।অন্না ফারাবীকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
জ্বি বলুন ফারাবী বাবু।(অন্না)
অন্নার মুখে ‘ফারাবী বাবু’ডাক শুনে ফারাবী মুচকি হাসলো।
যাক তাহলে আমার মনের ইচ্ছাটা পূরণ করলে।(ফারাবী)
একটু-আকটু ইচ্ছা তো পূরণ করতেই হয় তাই-না!(অন্না)
অন্না মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।
ইয়াহু!একটু হলেও অন্নার মনে জায়গা করতে পেরেছি।(ফারাবী)
ফারাবী ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে সারাবাড়ি সাজানো হচ্ছে।ফারাবী চারিপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো অন্না রান্নাঘরে আছে।অন্না আর রুমানা বেগম হেসে হেসে কথা বলছেন আর ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।
রুমানা বেগম আর অন্নাকে একসাথে দেখে ফারাবী মুচকি হেসে চলে গেলো।
—————————
সন্ধ্যা হয়ে গেলো।গেস্ট আসা শুরু করেছে।ফারাবী নেভি ব্লু রঙের কম্পিলিট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে অন্নার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।সিঁড়ি দিকে তাকাতে দেখলো অন্না নিচে নামছে।সঙ্গে দিশা আর তিথি।ফারাবীর চোখ অন্নার দিকে আটকে গেছে।অন্না-ও নেভি ব্লু রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে।সঙ্গে কিছু গহনা পড়েছে।অন্নাকে অপূর্ব লাগছে।
ফারাবী এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে দিশা বললো,
কি রে জিজু তো একদম হা হয়ে গেছে।(দিশা)
চুপ কর তো।(অন্না)
অন্নার আজ প্রথম ফারাবীর এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণে লজ্জা পাচ্ছে।অন্নাকে এনে ফারাবীর পাশে দাঁড়া করানো হলো।
কি জিজু বউকে দেখে ফিদা হয়ে গেলেন নাকি?(তিথি)
আসলে আপনাদের বান্ধবী এতো সুন্দর ফিদা না হয়ে উপায় আছে নাকি!(ফারাবী)
হ্যাঁ তাই বলে এমন হা হয়ে থেকেন না যে মুখে মশা ঢুকে যায়।(নিশান)
আপনার মুখে যখন ঢুকে নাই তাহলে আমার মুখেও ঢুকবে না।(ফারাবী)
মানে?(নিশান)
ওই যে সিলেটে বসে হা হয়ে দাঁড়িয়ে দিশাকে দেখছিলেন।(ফারাবী)
ফারাবীর কথায় সবাই হেসে দিলো।
ফারাবী আর অন্নাকে স্টেজে বসানো হয়েছে।
কেমন ফিল হচ্ছে অনুমা?(ফারাবী)
আপনার যেমন ফিল হচ্ছে আমারও তেমন ফিল হচ্ছে।(অন্না)
ওয়াও!তাহলে তো তুমিও অনেক ইনজয় করছো।(ফারাবী)
একদম।(অন্না)
ফারাবী আর অন্না হেসে হেসে কথা বলছে।হঠাৎ করে ফাহাদ এসে তাদের সামনে একটা ফুলের তোরা এগিয়ে দিলো।
ফাহাদকে দেখে অন্না আর ফারাবী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।অন্না মুখ ফিরিয়ে নিলো।ফারাবী রাগে ফুসছে।
ফাহাদ বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
আমার সুইটহার্ট হয়ে তুমি আমার ভাইকে বিয়ে করে ফেললে?(ফাহাদ)
জাস্ট সাট-আপ।তুই এখানে এসেছিস কেনো?(ফারাবী)
আরে তোর বিয়ে হয়েছে আর তোর বউকে দেখতে আমি আসবো নাহ্!(ফাহাদ)
রুমানা বেগম এসে সজোরে ফাহাদের গালে একটা থাপ্পড় মারলো।চারিদিক নিশ্চুপ হয়ে গেলো।অন্না এসে রুমানা বেগমের পাশে দাঁড়ালো।
তোর লজ্জা বলতে কিছু নেই।তুই এই বাড়িতে এসেছিস কেনো?দিনের পর দিন মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করে এখন এসেছিস এই অনুষ্ঠান নষ্ট করতে!(ফারাবীর মা চিৎকার করে বললো)
মা তুমি আমাকে মারলে!যাক বাদ দেও।তুমি মারতেই পারো।তবে এই মেয়ের সাথে রাত কাটিয়ে ঠিক মজা পাইনি।অচেতন অবস্থায় ছিলো তো।(ফাহাদ)
অন্না আর সহ্য করতে না পেরে ঠাসস করে ফাহাদের গালে একটা চড় মারলো।
নির্লজ্জ,বেহায়া লোক কোথাকার!যখনই অতীত ভুলে যেতে চাই তুই এসে হাজির হয়ে যাস।(অন্না)
অন্না দাঁড়িয়ে কাঁদছে।ফাহাদ অগ্নি দৃষ্টিতে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে।ফাহাদ এসে যেই অন্নার হাত ধরতে যাবে তার আগে ফারাবী এসে তার সামনে দাঁড়ালো।ফারাবী ফাহাদের কলার টেনে বললো,
একটু মনুষ্যত্ব বোধ জাগানোর চেষ্টা কর।একদম পশু হয়ে গেছিস।মেয়েদের সাথে নোংরামি ছাড়া তো আর কিছু জানিস না।আর একটা কথা শুনে রাখ অন্না গায়ে হাত লাগানোর স্পর্ধা একদম করবি নাহ্।তুই তো জানিস ফারাবী খান নিজের জিনিসকে খুব সুন্দর ভাবে আগলে রাখতে জানে।(ফারাবী দাঁতে দাঁত চেপে বললো)
আমি পুলিশকে খবর দিয়েছি।এই অসভ্যটাকে এখনি ধরে নিয়ে যাবে।(ফারাবীর বাবা)
ফাহাদ যেই পালাতে যাবে তার আগে ফারাবী ফাহাদের হাত চেপে ধরলো।
অনেক তো পালিয়ে বেরিয়েছিস।এখন না হয় একটু জেলের হাওয়া খেয়ে আয়।(ফারাবী)
এর মধ্যে পুলিশ এসে হাজির হলো।তবে ফাহাদ চমকে গেলো পুলিশের দিকে তাকিয়ে।কারণ পুলিশের পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে মিমি।যা দেখে ফাহাদের মুখে হাসি ফুটলো।সে এগিয়ে গেলো মিমির দিকে।
তুই এতোদিন কোথায় ছিলি মিমি?আমি তোকে কত খুঁজেছি জানিস!(ফাহাদ)
আমি এতোদিন তোর আড়ালে ছিলাম জেনো তোকে গ্রেফতার করতে পারি।(মিমি)
মিমি ফাহাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দিলো।
ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মি.ফাহাদ খান।(মিমি)
কি বলছিস এইসব?তুই না আমাকে ভালোবাসিস?(ফাহাদ)
হ্যাঁ তোকে আমি কলেজ লাইফ থেকেই ভালোবাসতাম।বাট তোর মতো এমন দুশ্চরিত্রবান-রা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।আর আমি অনেক আগেই পুলিশের চাকরিতে জয়েন করেছি।কিন্তু তোকে জানায়নি।কারণ আমার ইচ্ছাই ছিলো তোর মতো পাপীকে নিজের হাতে ধরে নিয়ে যাওয়া।আর আমি নিজেকে তোর কাজে বিলিয়ে দিয়েছি কেনো জানিস?কারণ এই দুনিয়ায় আমার কেউ নেই।একমাত্র তোকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতাম।একটা আশা সবসময় ছিলো যে তুই ভালো হয়ে যাবি।কিন্তু তুই তো ভালো হবি না।তুই মেয়েদের শরীর ছাড়া আর কিছুই বুঝিস নাহ্।,(মিমি চিৎকার করে বললো)
মিমি রাগে ফুসছে।ফাহাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মিমি ফাহাদকে টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে বসালো।তারপরে তাকে নিয়ে থানায় চলে গেলো।রুমানা বেগম শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে কাঁদছেন।অন্নার খুবই ভালো লাগছে।তবে আরও ভালো লাগবে যখন সে জানতে পারবে ওই ফাহাদের কঠিনতম শাস্তি হয়েছে।
—-🍂—-
পরের দিন,
ফারাবী বসে বসে টিভি দেখছে।হঠাৎ ব্রেকিং নিউজে দেখলো ফাহাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।নিউজটা দেখে অন্নার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটলো।তার সাথে যে এতো বড় নোংরামি করেছে।সে তার উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে।
হঠাৎ করে ফারাবীদের বাড়ির দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো।অন্না গিয়ে দরজা খুলে দেখে দুইজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।ফারাবী গিয়ে অন্নার পিছনে দাঁড়ালো।
আরে ফুপি তোমরা!ভিতরে এসো।(ফারাবী)
মহিলা দুজন বাড়ির ভিতরে ঢুকে সোফায় বসলো।অন্নাকে উদ্দ্যেশ করে একজন বললো,
এই মেয়েটা কে রে?(বড় ফুপি)
তোমাদের বউমা।(ফারাবী)
মাশাআল্লাহ।(ছোট ফুপি)
বউমা আমাদের দুজনকে কিন্তু আজ তোমার রান্না করে খাওয়াতে হবে।(বড় ফুপি)
রান্না করার কথা শুনে অন্নার হার্টবিট বেড়ে গেছে।কারণ সে তো কখনো রান্না করাই শিখে নাই।এদিকে তো তার শ্বাশুড়িও নেই।ফারাজ খান আর রুমানা বেগম গিয়েছেন অনাথ আশ্রয়ে।সারাদিন কাটিয়ে তারপরে আসবেন।কথা ছিলো ফারাবী বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসবে।কিন্তু এখন তো আর তা সম্ভব না।
ফারাবী অন্নার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
কি হয়েছে অনুমা?(ফারাবী)
আমি আসলে রান্না করতে পারি নাহ্।(অন্না)
অন্নার কথা শুনে ফারাবী একটা ঢোক গিল্লো।
বড় ফুপি যা মুখ দিয়ে একবার বের করে তা না হলে তিনি রেগে যান।(ফারাবী)
অন্না ভয়ে চুপসে দাঁড়িয়ে আছে।
#চলবে…………
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]