তোমাতেই নৈঃশব্দ্য প্রহরে পর্ব-১০

0
158

#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_১০

” বউ! অহন কেমন লাগতাছে? শরীর খারাপ করে? ”

নিস্তব্ধ রজনী ধরনীর বুকে। অমৃতাংশু হেসে বেড়াচ্ছে গগণের চাদর তলে। বিছানায় শুয়ে উক্তি। মুদিত চক্ষুপল্লব। শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ ধীর। সময় গড়ালো কতক। একটুখানি অস্থির শ্বাস ফেলে নড়ে উঠলো মেয়েটা। তখনই ঘরে প্রবেশ করলো মুয়ীয। তার উৎকণ্ঠিত দৃষ্টি স্থির অর্ধাঙ্গিনীর পানে। স্ত্রীকে স্বল্প নড়তে দেখেই হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে গেল। বসলো উক্তির শিয়রে। কণ্ঠে উদ্বেগের ছাপ,

” বউ! অহন কেমন লাগতাছে? শরীর খারাপ করে? ”

উক্তি শুষ্ক কাশি দিয়ে তাকিয়ে স্বামীর আদলে। কেমন অর্থহীন চাহনি। মুয়ীয ভ্রু নাড়িয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,

” অহন কেমন লাগতাছে? ”

উক্তি আস্তে করে ঠোঁট ফাঁক করলো। অস্ফুট স্বরে উচ্চারিত হলো ‘আ’ ধ্বনি। হাতের ইশারায় পান করার ভঙ্গিমা প্রদর্শন করছে। মুয়ীয ত্বরান্বিত জানতে চাইলো,

” পানি খাবি? ”

উক্তি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। চট করে উঠে দাঁড়ালো মুয়ীয। ছুটে গেল কাঠের টেবিলের ধারে। স্টিলের গ্লাসে পানি ঢেলে চলেছে। উক্তি এক ধ্যানে তাকিয়ে সেথায়। দুরন্ত হৃদস্পন্দন। মুয়ীয দ্রুত কদম ফেলে পানি সমেত ছুটে এলো। গ্লাসটা দিলো বাড়িয়ে। উক্তি অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করে উঠে বসতে চাইলো। তা লক্ষ্য করে মুয়ীয গ্লাসটা রাখলো মেঝেতে। ঝুঁকে গেল স্ত্রীর পানে। উক্তি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে। মুখের ওপর অনুভব করতে পারছিল এক উত্তপ্ত নিশ্বাসের হলকা। ওর হৃদয়ে চলছিল অবিরাম অস্থিরতার রা”হাজানি। মুয়ীযের পুরুষালি হাতটি যখন ওর পিঠের ত্বকে স্থাপিত হলো, তখন এক মুহুর্তের জন্য কেঁপে উঠলো মেয়েলি সত্তা। শক্তপোক্ত, রূক্ষ হাতটি আলতো করে পিঠে স্থাপিত। আরেক হাত মাথার পেছনাংশে চুলের ভাঁজে গলিয়ে। ধীরে সুস্থে ওকে উঠে বসতে সহায়তা করলো মানুষটি। উক্তি দেখছিল। অবাকতার রেশ বিরাজমান দু চোখের তারায়। এই মানুষটির দ্বারা এমনও নীরব যত্ন পাওয়া সম্ভব, কষ্মিনকালেও ভাবেনি সে। ভাবনার বাহিরে ছিল এই মুহুর্ত, এই উদ্বেগ, এই যত্নমেশানো লগ্ন! বালিশে হেলান দিয়ে বসে উক্তি। চোখে টলমল করছে অশ্রু রাশি। মুয়ীয বিপরীত দিকে বসে। বাড়িয়ে ধরেছে পানির গ্লাস। উক্তি একটুখানি নৈকট্যে এলো। ঠোঁট ছুঁলো গ্লাস। একটু একটু করে পানি পান করতে লাগলো মেয়েটি। মেটাতে লাগলো বহুকালের তৃষ্ণা। পানি পানরত মেয়েটির দেহ কেঁপে উঠছিল ক্ষণে ক্ষণে। সে কম্পন লক্ষ্য করে ঈষৎ চমকালো মুয়ীয! চট করে পানির গ্লাস সরিয়ে নিলো। দেখতে পেল সে-ই হৃদয় বিদীর্ণ করা চিত্র। চোখমুখে আরক্ত তুলির ছোঁয়া। নাকের ডগায় এক রক্তলাল জবা গেঁথে। চোখের কোল বেয়ে গালের ত্বক ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ছিল নোনাজল। কান্নার দমকে ওর কোমল, ছোট শরীরটায় তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছিল যেন। মুয়ীয আর সহ্য করতে পারলো না। পানির গ্লাসটা অত্যন্ত অবহেলিত হয়ে সশব্দে লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। পানির ঠাঁই হলো মেঝের বুকে। অযত্নে, অবহেলায়। ডান হাতটি বাড়িয়ে দিয়ে স্ত্রীকে কাছে টেনে নিলো মুয়ীয। নিজের চওড়া, প্রশস্ত বুকের নিরাপদ বেষ্টনীতে একদম লুকিয়ে ফেললো। লুকিয়ে ফেললো দুনিয়ার সকল প্রকার অশান্তি, কটূক্তি, কষ্ট, যন্ত্রনা, দুঃখবেদনা হতে। এ প্রথমবারের মতো কারোর শক্ত, বিশ্বস্ত বেষ্টনীতে ঠাঁই হলো। হুঁ হুঁ করে সশব্দে কেঁদে উঠলো উক্তি। দু হাতের সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ করে আঁকড়ে ধরলো বিশাল পিঠটার সীমানা। নখ ডেবে যাচ্ছিল। মৃদুমন্দ যন্ত্রনা হচ্ছিল পিঠে। তবুও ছেড়ে দিলো না মুয়ীয। বরং আরো যতনে আগলে নিলো। যতটা যত্ন, ভালোবাসা দিলে এই মেয়েটার এক বুক কষ্ট লাঘব হবে, ঠিক তারচেয়ে কয়েক গুণ বেশি দিলো সে। মনে মনে আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো,

‘ দুঃখের শেষে ঠোঁটের কোলে সুখের একফালি হাসি ফুটুক,
তার একান্ত নারীটি সকল যন্ত্রনার অভেদ্য উপশম হয়ে উঠুক ‘

স্ত্রীর কপালের ঠিক মধ্যিখানে ঠোঁটের কারুকার্য অঙ্কন করে দিলো মুয়ীয। পৌরুষালি ঈষৎ কালচে ঠোঁট দু’টো অত্যন্ত মোলায়েম রূপে শুষে যাচ্ছিল স্ত্রীর সকল মনোবেদনা, পীড়াদায়ক অস্বস্তি। দু হাতের শান্তিপ্রবণ আলিঙ্গনে অশ্রু ভুলতে বাধ্য হলো রমণী। আস্তে ধীরে হ্রাস পেল ক্রন্দন। তবুও অপার সুখের সাগরে ভেসে সে। আলিঙ্গনাবদ্ধ হাত দুটোর বেড়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে এলো না। বরং সকল আড়ষ্টতা, সংকোচ বলি দিয়ে চুপটি করে মিশে আপন মানুষটির বুকে। সেথায় লুকিয়ে যে ‘ এক অনাবিল সুখের তটিনী ‘….

ঘড়ির কাঁটা তখন বারোর কাছাকাছি পৌঁছেছে। বিছানায় পাশাপাশি দু’জনে। একে অপরের মুখোমুখি হয়ে শুয়ে। উক্তি’র দৃষ্টি নত। মুয়ীয সুস্থির চোখে তাকিয়ে। মৃদু স্বরে প্রথম কথাটা বললো সে ই,

” বিয়াশাদির প্রতি কহনোই অত আগ্রহ ছিল না। চাইরপাশে মাইয়া মাইনষের যত রঙ্গলীলা দেহি! মন উইড্ডা গ্যাছিল গা। মাইয়া মানেই প্যারা। অশান্তি একছের। ”

উক্তি আস্তে করে চোখ তুলে তাকালো। সে শুনছে। স্বামীর মুখনিঃসৃত প্রতিটি শব্দে, বাক্যে খুঁজে পাচ্ছে কৌতূহল।

” তবুও ব্যাডা মানুষ তো। আল্লাহ্ প্রদত্ত সুখকর একাকীত্ব অনুভূত হইতো। বেলাশেষে রাইতের আন্ধারে একখান নরম, কোমল হাতের যত্ন পাইতে মনডা আনচান করতো। আঁকুপাঁকু করতো কারোর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওনের লেইগ্গা। জানোছ, মুই হগল সময় চাইতাম মোর বউ গুণবতী হইবো। ম্যালা প্রতিবাদী, ন্যায়ের পথিক হইবো। মোর লাহান শ্যামলা, কালা হইলেও সমস্যা নাই। তয় ওরে ভালোমনের হইতে হইবো। আল্লাহ্’র ধারে লাখ লাখ শুকরিয়া মোর মনের বাসনা পূরণ করনের লেইগ্গা। ”

উক্তি কোমল চাহনিতে তাকিয়ে। মনে প্রবাহিত হচ্ছে একরাশ সুখের মোহনা। স্বামী মানুষটি শুকরিয়া আদায় করছে, তাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে! সে কারোর শুকরিয়ার কারণ হতে পারে! এ-ও সম্ভব! এক জীবনে দেখার ছিল!

” মুই একটুও মিছা কইতাছি না। তুই মাইয়াডা ভালা আছোছ। মানুষ চিনতে এই মুয়ীয বেম্যালা ওস্তাদ। আলহামদুলিল্লাহ্ সহজে ভুল করে না। তোরেও চিনছি। তোর মনডা এক্কারে নদীর স্বচ্ছ পানির লাহান। একটু বেশিই সরল তুই। নরম মনের। আইজকের দুনিয়ায় ভালার ভাত নাই রে বউ। শক্ত হবি, অন্যায়ের থোবড়া বাড়াইয়া থাবড়া দিবি, তাইলেই বাঁচতে পারবি। মাটি আঁকড়াই থাকতে পারবি। যত নরম তত বেশিই দুঃখকষ্ট, যন্ত্রনা। ”

এতটুকু মনোভাব পোষণ করে মুয়ীয মধ্যকার দূরত্ব মেটালো। নিসংকোচে ডান হাতটি রাখলো স্ত্রীর গালের কোমল ত্বকে। চোখে চোখ রেখে নিঝুম কণ্ঠে বললো,

” মুই কহনোই চাই না মোর বউ পরের লা’ত্তি উ’ষ্টা খাইয়া বাঁচুক। চাই না মোর অনুপস্থিতিতে কেউ হ্যারে মৌখিক আঘাত করুক। তুই হবি শেরনি। এই মুয়ীযের অপরাজেয় শেরনি। ঝলসানো রূপের অধিকারিণী, এক অপরাজিতা! কিরে বউ! বল। হবি না আমার অপরাজিতা? ”

ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো উক্তি। বিনা দ্বিধায় একটুও বিলম্ব না করে, ঝাঁপিয়ে পড়লো স্বামীর বুকে। দু হাতে খামচে ধরলো পিঠ। বুকের ঠিক বাঁ পাশে গুঁজে দিলো মুখ। একটুখানি নির্ভরতা, যত্ন, ভালোবাসার কাঙাল মেয়েটি… চিরকালব্যাপী চাইলো এ বুকেতেই ঠাঁই। মুয়ীযও আবেশে সিক্ত হয়ে আগলে নিলো সঙ্গিনীকে। কপালের কার্নিশে ছুঁয়ে রাখলো অধর। তবে কি ঘুচলো অভাগিনীর চির দুর্ভাগ্য!

নতুন এক উজ্জ্বল দিনের সূচনা। চনমনে, ফুরফুরে মেজাজে ঘুম ভাঙ্গলো কন্যার। ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে ছোট্ট করে হাসি। সমস্ত কাজকর্ম বেশ খোশমেজাজেই সম্পাদন করছে সে। বিছানার চাদর উড়ু উড়ু রূপে ঠিকঠাক ভঙ্গিতে সজ্জিত হচ্ছে। গুছিয়ে ফেলছে আলনা। সমস্ত কাপড় ভাঁজ ভাঁজ করে রাখছে সেথায়। টেবিলে থাকা টুকিটাকি কাগজপত্র, পত্রিকা, কলম প্রমুখ ফিটফাট করে রাখছে। ঠোঁটে তখনো ঝুলে খুশির প্রলেপ। ঠিক সে মুহূর্তে ঘরে প্রবেশ করলো হাসান সাহেব। গোসল সেরে উদোম দেহে ঘরে এলো সে। দুরন্ত হাত লিপ্ত গামছার মাধ্যমে চুল হতে জলকণা শুষে নিতে। ঘরে প্রবেশ করেই এক প্রফুল্লতার আভাস পেল সে। চঞ্চল হলো চোখের তারা। মরিয়া হলো খুঁজে পেতে সঙ্গিনীকে। বামে তাকাতেই মুয়ীযের দৃষ্টিগোচর হলো সহধর্মিণীর খুশিময় অবয়ব। উক্তিও ঠিক সে মুহূর্তে ঘুরে তাকালো। চোখের ক্যানভাসে বন্দী হলো একজোড়া মুগ্ধকর চোখ! কিয়ৎক্ষণ বাদেই সলজ্জ হেসে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো মেয়েটি। শিরশিরানি মিষ্টি অনুভূতি ছেয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মুয়ীয মুচকি হেসে অবাধ্য চোখ দুটোকে বশে আনলো। সরিয়ে নিলো দৃষ্টি। চুল মুছতে মুছতে বিছানার ধারে এলো। চক্ষু স্থির হলো বিছানায় পরিপাটি রূপে রাখা জলপাই বর্ণের শার্ট, কৃষ্ণকালো প্যান্ট, শুভ্র রঙা স্যান্ডো গেঞ্জি, কালো রঙের মোজা দুটোয়। মানুষটির হৃদ গহ্বরে তখন অবর্ণনীয় খুশির ঝলকানি। এমন নীরবে, নিঃশব্দেও কারোর সামান্য একটুকরো যত্ন নিয়ে… মন জয় করা যায়! মুয়ীয স্বল্প ঘুরে তাকালো স্ত্রীর পানে। শব্দহীন উক্তি তখন স্বামীর জন্য বোতলে পানি ভরতে ব্যস্ত।

অপরাহ্ন প্রহরে মিঠা রোদ্দুরের আহ্লাদী ছোঁয়া। মাঝের ঘরটিতে মোড়ায় বসে উক্তি। পালং শাক বেছে চলেছে। বেছে বেছে রাখছে এক প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ঝাঁপিতে। জানালা গলিয়ে প্রবেশ করছে সোনারোদ। ছুঁয়ে কোমলমতির দেহপল্লব। স্বর্ণালি লাগছে তাকে! মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের একটুখানি জীবন্ত আভা। ব্যস্ত উক্তি। খানিক বাদে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। প্রথমবার উক্তি তেমন গুরুত্ব দিলো না। দ্বিতীয়বারের মতো কড়া নাড়লো কেউ। এবার উঠে দাঁড়ালো উক্তি। দু হাত ঝেড়ে হাঁটতে লাগলো। পৌঁছালো দরজায়। নিজ নির্বাক ভাষায় ‘ আ ‘ সূচক শব্দ করে শুধালো, কে এসেছে। ওপাশ হতে এলো অপ্রত্যাশিত জবাব। তৎক্ষণাৎ খুশির ফোয়ারা বয়ে গেল উক্তি’র অধরোষ্ঠে। দরজা খুললো মেয়েটি। দৃশ্যমান হলো দুই আপনজনের মুখশ্রী। তার ভাবী এবং একমাত্র সহচর শিমু। উক্তি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে হাস্যোজ্জ্বল বদনে সালাম দিলো,

” আসসালামু আলাইকুম। ”

” ওয়া আলাইকুম আসসালাম ননদিনী। কেমন আছো? ”

আদুরে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে হালচাল শুধালো নিশাত। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছে মূক মেয়েটি। ‘ আ ‘ ‘ আ ‘ ধ্বনি প্রকাশিত হতে লাগলো ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে। নিশাত অনুভব করতে পারলো ননদের মানসিক অবস্থা। প্রিয় বান্ধবীকে চোখের পানি ফেলতে দেখে শিমু নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছে। সেও ভাবী সমেত আলিঙ্গন করে ফেললো বান্ধবীকে। তিন নারীর সে এক হৃদয়স্পর্শী আলিঙ্গনাবদ্ধ মূহুর্ত! কিছুটা সময় সেভাবেই পেরোলো। প্রথমে সরে গেল শিমু। দু হাতের পিঠে মুছে নিলো অশ্রুজল। অকৃত্রিম হাসি উপহার দিয়ে বললো,

” আরে আরে! আর কত কাঁদবে? এবার তো থামো। ঢাকা শহর চোখের জলে ভেসে গেল বলে। এবার তো থামো বাবা।”

বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে,

” এই যে উক্তি আপা! এবার তো থামেন। এত কাঁদলে শরীর খারাপ করবে যে। ”

উক্তি আস্তে ধীরে ভাবীকে আলিঙ্গন হতে মুক্ত করলো। ছাড়তে চাইছিল না মেয়েটি। এতদিন পর আপন কারোর অপ্রত্যাশিত দর্শন যে, অবর্ণনীয়-অব্যক্ত সুখের। তবুও ছাড়লো উক্তি। ভাবি নিশাত আদর করে ননদের অশ্রু কণা মুছে দিলো। ঠিক করে দিলো অগোছালো চুল। এক ছোট্ট স্নেহের চুম্বন এঁকে দিলো ললাট মাঝে। উক্তি মায়াবী হাসলো। সে হাসিতে চোখ জুড়ালো বাকি দুই নারীর। শিমু সহসা মনমাতানো হাসি উপহার দিলো,

” আরে বাহ্! আমাদের উক্তি রাণী দেখি শাড়ি পড়েছে! হোয়াট অ্যান অ্যামেজিং ট্রান্সফর্মেশন! ”

নিশাত আগেই লক্ষ্য করেছে। তা-ও পুনরায় আপাদমস্তক তাকালো ননদের পানে। মুচকি হেসে উক্তির মাথায় হাত বুলিয়ে নিলো।

” মাশাআল্লাহ্! খুব সুন্দর লাগছে আমার ননদিনীকে! ”

উক্তি লাজুক হাসলো। চকিতে স্মরণে এলো দাঁড়িয়ে অতিথিরা। তাদের বসতে দেয়া উচিত। উক্তি ব্যস্ত হয়ে পড়লো তাদের বসার ব্যবস্থা করতে। ওর এই ছোটাছুটি লক্ষ্য করে চমকিত দু’জনে! শিমু তৎক্ষণাৎ শুধালো,

” কিরে দোস্ত কি হয়েছে? এমন পা`গলা ঘোড়ার মতো ছুটছিস কেন? ”

উক্তি জবাব না দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে এলো। মাদুর পেতে দিলো মেঝেতে। ভাবীর হাত ধরে তাকে মাদুরে বসিয়ে দিলো। শিমু বসে পড়লো আপনাআপনি। নিশাত ননদকে শান্ত করতে বললো,

” ননদিনী আমার। শান্ত হয়ে পাশে বসো তো। উই আর ফাইন। এত ব্যতিব্যস্ত হতে হবে না। ”

উক্তি একথায় ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারছে না। বুঝতে পারছে না শাশুড়ি মায়ের অনুপস্থিতিতে ঠিক কিভাবে অতিথি আপ্যায়ন করবে। চিন্তা বোধ হচ্ছে যে। শিমু বললো,

” এই দোস্ত! বয় না পাশে। এদিকে আয়। ”

শিমু হাত টেনে ধরে বান্ধবীকে বাম পাশে বসালো। মুচকি হেসে বলল,

” কেমন আছিস দোস্ত? ”

উক্তি একপলকের জন্য থমকালো। অতঃপর চোখের পর্দায় ভাসমান পালতোলার ন্যায় ভেসে উঠলো সেই র”ক্ষক, উজ্জীবিত মুখটি। আরক্ত তুলির আঁচড়ে লাল হলো কন্যার মুখখানি। দৃষ্টি সামান্য নত হলো। হাতের শব্দহীন ভাষায় বুঝালো,

‘ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। ‘

নিশাত নিশ্চিত হতে পুনরায় শুধালো,

” উক্তি তুমি সত্যিই ঠিক আছো তো? এ বাড়িতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো? মুয়ীয ভাইয়া? উনি কেমন? সব ঠিকঠাক আছে তো? ”

উক্তি হালকা হেসে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে জবাব দিতে যাচ্ছিল। তখনই সকলের কর্ণপাত হলো,

” বাব্বাহ! বাড়ি বইয়া আইয়া চোরের লাহান লুকাচুপি জেরা করা হইতাছে? ”

চলবে।