তোমাতেই নৈঃশব্দ্য প্রহরে পর্ব-১১

0
154

#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_১১

” বাব্বাহ! বাড়ি বইয়া আইয়া চো’রের লাহান লুকাচুপি জেরা করা হইতাছে? ”

উপস্থিত তিন নারী চমকালো! ভড়কালো এহেন প্রশ্নবিদ্ধ আচরণে! তিন জোড়া চক্ষু ঘুরে তাকালো বাড়ির প্রবেশদ্বারে। সেথায় দাঁড়িয়ে মোমেনা বেগম। অপ্রসন্ন মুখভঙ্গি। বিকেল চারটা নাগাদ প্রতিবেশী বাড়িতে যান উনি। চারটা থেকে পাঁচটা টিভিতে পুনঃপ্রচার হয় ওনার পছন্দের দু’টো ভারতীয় টিভি সিরিয়াল। বাড়িতে টিভি নেই। মুয়ীযের বিধিনিষেধ আরোপ করা। তাই প্রতিবেশীর বাড়িতে এই এক ঘন্টা সময় ব্যয় করে থাকেন উনি। বরাবরের মতো আজও গিয়েছিলেন। আর ফিরে এসে কি দেখছেন! বেয়াই বাড়ি হতে আগত অনাহুত আগন্তুক, চুপিচুপি ওনার কনিষ্ঠ পুত্রবধূকে জেরা করছে! সহ্য হলো না। ঘরে প্রবেশ করলেন উনি। পেঁচার মতো লটকে মুখ। পিছুপিছু প্রবেশ করলো বড় পুত্রবধূ জান্নাত। মোমেনা বেগম দাঁড়ালেন নিশাতের বিপরীতে। গম্ভীরভাবে শুধোলেন,

” কি চাই? ”

নিশাত অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো এমন অভাবনীয় প্রশ্নে। কোনোমতে হেসে কোমল স্বরে সালাম দিলো,

” আসসালামু আলাইকুম মাওয়ই মা। কেমন আছেন? ”

সালামের জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না মোমেনা বেগম। পাল্টা জবাবে বললেন,

” কহন আইছো এম্বে? আমগো লুকাইয়া লুকাইয়া প্রায়ই আহো বুঝি? এমন ফ’টকামি করো? জেরা করা হয়? ”

বাকশূন্য হয়ে পড়লো নিশাত, শিমু! এসব কি বলছেন উনি? ওরা তো আজ প্রথমবার এই বাড়িতে এলো। এসেই এমন মিথ্যা অপবাদ! এ কি কাণ্ড! শাশুড়ি মায়ের অবাঞ্চিত আচরণে উক্তি চরমভাবে লজ্জিত। মা ওর সঙ্গে যেমন তেমন করেন, এখন ওর পরিবারের সঙ্গেও করবেন! ওরা কি ভাববে? হৃদয়ে কষ্টের বাণ আঘাত হানবে যে। উক্তি ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এলো। শাশুড়ি মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় বলতে লাগলো কিছু। মোমেনা বেগম বুঝতে পারছেন না। খ্যাঁ’ক করে উঠলেন উনি,

” বোবা ছেড়ি! হাত নাচাই নাচাই একি কও? কিছুই তো বুঝি না। ”

নিশাত স্তব্ধ! শিমু ম্লান বদনে মোমেনা বেগমকে বললো,

” উক্তি বলছে যে আমরা মাত্রই এসেছি। আগে আসিনি। ”

” হ্যার কি গারান্টি( গ্যারান্টি ) আছে? যেই চালু মাইয়া! ওরে দিয়া এক ফোঁডাও বিশ্বাস নাই। ”

নিশাত অবাকতার রেশ কাটিয়ে বললো,

” এসব কি বলছেন মাওয়ই মা! আমরা আজই প্রথম এলাম। আগে আসলে আপনারা কি জানতে পারতেন না? আমরা কি লুকিয়ে আসবো? ”

” আইতেই পারো। মাইয়ার কানে কানপড়া দেওন লাগবো না? মোর পোলাডার মাথা নষ্ট করন লাগবো না? অপয়া, অলক্ষ্মী ছেড়ি একখান। ”

মোমেনা বেগম চরম অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। বিরক্তির ছোঁয়া উপস্থিত চোখেমুখে। শিমু দুঃখী নজরে বান্ধবীর পানে নিষ্পলক তাকিয়ে। উক্তির চোখেমুখে অমাবস্যা। জল থৈ থৈ করছে অক্ষি কোলে। নিশাত এমন বাজে আচরণ সহ্য করতে পারছে না। তাই তো প্রতিবাদের স্বরে বললো,

” আপনি এমন করে বলতে পারেন না। কি করেছে আমার ননদ? কিসের ভিত্তিতে ওকে এমন ডার্টি উপাধি দিচ্ছেন? আমরা এতটাও চিপ মাইন্ডেড নই যে জামাইদের মাথা নষ্ট করবো। কাউকে কানপড়া দেবো। ”

মোমেনা বেগম আঙ্গুল তাক করে শাসিয়ে দিলেন,

” ওই ছেড়ি! একদম চুউপ। বেশি ফডরফডর করবা না। বয়স তো কম হইলো না। দুনিয়াদারি তোমার চেয়ে বেশি মুই চিনি। দেখছি। ”

নিশাত কণ্ঠ কিছুটা নরম করে বললো,

” হ্যাঁ। বয়সে আপনি অনেকটা বড়। অভিজ্ঞ মানুষ। দিনদুনিয়া বেশি দেখেছেন। তাই বলে ভুলকে সঠিক বলে চালিয়ে দিতে পারেন না। এটা অন্যায়। ”

জান্নাত এতক্ষণ চুপ ছিল। এবার ফোঁড়ন কেটে বলে উঠলো,

” আর আমনের ননদ যা করে? হেইয়া বুঝি অন্যায় না? ”

শিমু কোমরে দুই হাত স্থাপন করে আয়েশি ভঙ্গিতে দাঁড়ালো। কাট-কাট কণ্ঠে শুধালো,

” কি করেছে ও? শুনি একটু। আপনার দেবরের মাথা নষ্ট, কানপড়া দেয়া ছাড়া আর কি করেছে, বলুন। ”

জান্নাত এমন সুস্পষ্ট মৌখিক আ”ক্রমণে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। হারিয়ে গেল মুখের বুলি।

” কি হলো, চুপ করে গেলেন কেন? বলুন। আমরাও শুনি আমাদের মেয়ে ঠিক আর কি কি আকাম করে। ”

শিমু ভালোমতো পাকড়াও করেছে। যথাযথ জবাব দিতে ব্যর্থ হয়ে মোমেনা বেগম তেজ দেখিয়ে উঠলেন,

” ওই মাইয়া! একছের বে’য়াদবি করতাছো কিন্তু। ”

” হ্যাঁ। আমরা তো বে•য়াদব। আর আপনারা তো সব লেডি দরবেশ। একদম সাধু। দেখতেই পাচ্ছি সাধুগিরির নমুনা। ”

শিমুর কণ্ঠে বিদ্রুপাত্মক ছাপ। মোমেনা বেগম কিছু বলতে উদ্যত হলেন তখনই উক্তি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে ওনাকে কিছু বলতে লাগলো। যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে লাগলো শিমু,

” মা, দয়া করে আর কিছু বইলেন না। ওরা আমার বাবার বাড়ি থেকে এসেছে। এই প্রথমবার এসেছে। ওরা আমাকে কোনো কানপড়া দিচ্ছিল না। শুধুমাত্র আমার খোঁজখবর নিচ্ছিল। ”

শিমু, উক্তির নির্বাক মনোভাব সকলের মাঝে পেশ করলো। মোমেনা বেগম বাঁকা হেসে বললেন,

” মিছা কথা কওনের আর জায়গা পাও না? আরেক জায়গাত গিয়া কও। এইহানে না। ”

উক্তি ইশারায় বললো। তা শোনালো শিমু,

” আমি মিথ্যা বলছি না মা। এখন আপনি যদি আমার বলা সত্যিকে মিথ্যা হিসেবেই ধরে থাকেন, আমি কি বলবো বলুন? সত্যি এটাই যে ওরা আজ প্রথমবারের মতো এসেছে। এ-ই শেষ। আর কখনো আসবে না। ”

চোখে উপস্থিত অবাধ্য অশ্রুকে মুছে নিলো উক্তি। ঘুরে দাঁড়ালো পরিবারের সদস্যদের পানে। হাতের ইশারায় বলতে লাগলো,

‘ দেখলে তো আমি কেমন আছি। দয়া করে আর কখনো দেখতে এসো না‌‌। আল্লাহ্ যেমন রেখেছেন, আমি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আর হ্যাঁ। আমার পক্ষে অবশেষে কেউ একজন রয়েছে। সে আমার বিশ্বস্ত ঢাল হয়ে উঠেছে। তোমরা দুশ্চিন্তা করো না ভাবী। আমি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই আছি। শুধু একটাই অনুরোধ রইলো। বাবা, ভাইয়াকে কখনো বলতে যেয়ো না তাদের মেয়ে ঠিক কতটা ভালো আছে, সুখে আছে। তারা থাকুক। ভালো থাকুক। আল্লাহ্ ভালো রাখুক সকলকে। ‘

ঠোঁটের সীমানায় অকৃত্রিম হাসি ফুটে উঠলো উক্তি মেয়েটির। নিশাত ও শিমু অনুজ্জ্বল চাহনিতে তাকিয়ে। এ কি পরিণতি পেল তাদের নিঃশব্দ সঙ্গিনী!

সন্ধ্যার শেষভাগ চলছে এখন। ঘন আঁধারে নিমগ্ন দুনিয়া। বাহিরে বইছে ঝিরিঝিরি হাওয়া। কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলে দিলো একজন পরিচারিকা। লহু স্বরে সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো নিশাত। পরিচারিকা মিষ্টি হেসে সালামের জবাব দিলো। বললো,

” ভাবীমণি! আপনে বহেন। আমি পানি আনতাছি। ”

নিশাত আলতো মাথা নাড়িয়ে সোফায় বসলো। হ্যান্ড পার্স রাখলো বামে। বড্ড অস্থির তনু মন। ঝিমঝিম করছে মাথা। তিন আঙ্গুলের স্পর্শে কপালের ডান পাশ ডলতে লাগলো সে। নত দৃষ্টি। সে মুহূর্তে শোনা গেল,

” কোথায় গিয়েছিলে? ”

নিশাত আজ একটুও ভড়কালো না। অমন অবস্থায় থেকেই কপাল ম্যাসাজ করতে করতে জবাব দিলো,

” উক্তি’র শ্বশুরবাড়ি। ”

উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলো না জাওয়াদ। আসলো। এসে বসলো স্ত্রীর বিপরীত দিকের একটি সোফায়। কণ্ঠে অসন্তোষের ছোঁয়া,

” ও বাড়িতে যেতে নিষেধ করেছিলাম না? ”

” এ বিয়েটা দিতে নিষেধ করেছিলাম না? ”

পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো নিশাত। চোখ তুলে তাকালো। ওর র•ক্তলাল চোখ দু’টো দেখে ঈষৎ অপ্রস্তুত হলো জাওয়াদ। স্ত্রীর চাহনি, কথার ধরনে আজ কেমন ভিন্নতা। অন্যরকম ফ্লেভার। কিন্তু কেন?

” হঠাৎ এসব বলছো যে? ফালতু মেয়েটা ও বাড়িতেও ঝামেলা শুরু করেছে নাকি? অশান্তি সৃষ্টি করছে? ”

ব্যঙ্গাত্মক হাসলো নিশাত। কষ্টের সে হাসি। বললো,

” উক্তি। আমার সহজ-সরল বোনটা আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছে। আল্লাহ্ যেমন রেখেছেন ঠিক তেমনই আছে। ওহ হ্যাঁ। অশান্তি, ঝামেলা উক্তি করে না। আনফরচুনেটলি ওর আশপাশে থাকা মানুষগুলো করে থাকে। ওকে দমিয়ে রাখতে চায়। ”

জাওয়াদ নাখুশ বদনে তাকিয়ে। নিশাত অত্যন্ত গূঢ় স্বরে বলে উঠলো,

” শুকরিয়া আদায় করো যে, উক্তি বোবা। আজ যদি ওই মেয়েটি বলতে জানতো না… ওর মুখ ফুটে বেরোনো প্রতিটি হাহাকার, কষ্টকর ধ্বনি তোমাদের কান ঝ’লসে, নিগড়ে দিতো। শান্তিতে বাঁচতে দিতো না। বি অলওয়েজ থ্যাংকফুল ফর দিস, মিস্টার জাওয়াদ কায়সার। ”

আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না নিশাত। বড়বড় কদম ফেলে ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। পেছনে রয়ে গেল কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাওয়াদ। তাদের অগোচরে আড়ালে আবডালে এ আলাপণের সাক্ষী রইলো আরো এক ব্যক্তি! যার অভিব্যক্তি বোঝা মুশকিল।

রাত্রির মোহমায়ায় তলিয়ে ধরণী। রাতের খাবার খেতে বসেছে পরিবারের সদস্যরা। মুয়ীয প্লেটে পানি ঢেলে প্লেটের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করছে। উক্তি ভাতের বোল হতে একে একে উপস্থিত সকলকে ভাত পরিবেশন করে দিচ্ছে। জান্নাত পরিবেশন করছে পাঁচমেশালি সবজি। এক ফাঁকে শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে চোখাচোখি হলো তার। মোমেনা বেগম চোখের ইশারায় কিছু বললেন। সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল জান্নাত। ছোট ননদের প্লেটে সবজি দিতে দিতে বললো,

” মুয়ীয ভাই! আইজ বাসায় মেহমান আইবে, আগে কইবেন না? হেইলে ভালোমন্দ কিছু ব্যবস্থা কইরা রাখতাম। মেহমান খালি মুহে যাইতো না। ”

উক্তি চমকালো! ওর সরল মস্তিষ্ক বুঝে উঠতে পারলো না, বড় ভাবী এভাবে মেহমান প্রসঙ্গ তুলছে কেন। মুয়ীয ভাতের সঙ্গে সবজি মাখাতে মাখাতে বললো,

” কিয়ের মেহমান? কেডা আইছিল? ”

জান্নাত এমন মুখভঙ্গি করলো, যেন সদ্য আকাশ থেকে টুপ করে খসে পড়লো!

” এ মা! আমনে জানেন না? ”

” কি জানি না? ঢঙ না মারাইয়া খোলাসা কইরা কও। ” মুয়ীয এক নলা মুখে দিয়ে বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো।

জান্নাত শাশুড়ি মায়ের ইশারায় সাহস সঞ্চয় করে রসিয়ে রসিয়ে বলতে লাগলো,

” ভাবী মনে হয় কইতে ভুইল্লা গ্যাছে। আইজ বিকালে তো ভাবীর বাপের বাড়ি থে লোক আইছিল। মোরা অবশ্য বাড়ি ছিলাম না। ভাবী একলাই ছিল। ”

” তোমরা কোম্বে গেছিলা? ” জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে মুয়ীয।

আশানুরূপ প্রশ্নের বদলে বিপদজ্জনক প্রশ্নে ভড়কে গেল জান্নাত। স্বামী মারুফ, সে-ও জিজ্ঞেস করলো,

” হ। কই গেছিলা তোমরা? ”

জান্নাত কৃত্রিম হেসে বললো,

” আরে কি মুশকিল! কি মুশকিল! মোরা তো ওই… ওই পাশের বাড়ি গেছিলাম। ভাবীর বাপের বাড়ি থে লোক আইছে। জিগাবা না কেডা আইছে? ”

মুন্নি মুখ লটকে শুধিয়ে উঠলো,

” কেডা আইছিল? বাপ না ফা°জিল ভাইডা? ”

ছোট মেয়েটির এমন লাগাম ছাড়া প্রশ্নে রীতিমতো নির্বাক উক্তি। চুপচাপ নিজের স্থানে বসে খাবার খাচ্ছে। দেখছে, শুনছে এদের নাটুকেপনা। মুয়ীয বলে উঠলো বোনকে,

” ভাবীর বাপ, ভাই তোর খেলার সাথী না। বয়সে ম্যালা বড়। যথেষ্ট সম্মান দিয়া কথা ক, মুন্নি। ”

ভালো আদেশ যথারীতি ভালো লাগলো না মুন্নির। মুয়ীয ভাবীকে বললো,

” বাপ, ভাই আহে নাই। চোখ বুইজ্জা কইতে পারি। তয় কেডা আইছিল? ভাবী? ”

শেষের প্রশ্ন স্ত্রীর পানে তাকিয়ে শুধালো মুয়ীয। উক্তি আলতো করে দৃষ্টি তুললো। হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, ভাবী এসেছিল। মোমেনা বেগম মুখ বাঁকিয়ে বললেন,

” হয়। ভাবী আইছিল। তয় একলা আহে নাই। লগে বউয়ের বে*দ্দপ একখান বান্ধবীও লইয়া আইছিল। ”

” ভালো। অগো মেহমানদারি করছিলা তো ঠিকমতন? ”

উক্তি’র চোখেমুখে হতাশার অন্ধকার! যে মেহমানদারি করা হয়েছে ওদের, এক জীবনে ভুলবে না কখনো। ছেলের তরফ থেকে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া পেয়ে যথেষ্ট নিরাশ মোমেনা বেগম। এই ছেলেকে দশ মাস দশ দিন পেটে ধরেছিলেন উনি! এমন অজ্ঞাত, অজাত হলো কি করে? সম্পূর্ণ ওনার বিপরীত স্বভাবের, মনোভাবের। এত বিপরীতধর্মী! কিভাবে সম্ভব!

” বউ! ”

স্নিগ্ধ, কোমল ডাকে চোখ তুলে তাকালো উক্তি। মুয়ীয মিহি স্বরে বললো,

” ভাবীগো কিছু খাইতে দিছিলি? ”

উক্তি দ্বিধা ভরে মিথ্যেটা প্রকাশ করলো। মাথা নাড়লো ইতিবাচক। হ্যাঁ, খেতে দিয়েছিল সে। মুয়ীয আর কিচ্ছুটি বললো না। খাওয়া শেষ। প্লেটে হাত ধুয়ে, উঠে দাঁড়ালো সে। ঘরে যাওয়ার পূর্বে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে গেল,

” খাওন শেষে জলদি ঘরে আহিস। ”

চক্ষু বন্ধ রমণীর। চোখেমুখে লজ্জালু আভার প্রলেপ। বদ্ধ চোখের পাতায় অঙ্কিত হচ্ছে পুরুষালী ঈষৎ কালচে ঠোঁটের পরশ। মাঝারি আকৃতির নখ ডেবে গেল মানুষটির মাংসল বাহুদ্বয়ে। তবুও দমলো না সে। চালিয়ে গেল নিজ প্রণয় উপাখ্যান!

চলবে।