#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_২৫ [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]
” অ্যাই খালি! দাঁড়াও দাঁড়াও। ”
চারদিকে ঘনিয়ে এসেছে ভূতুড়ে শিহরণ জাগানিয়া আঁধার। ঝড়বৃষ্টির নি’র্মম পা°শবিকতায় পরিবেশ তখন বড্ড অশান্ত। বাতাসের তীব্র চোখ রাঙানির তোপে পথপ্রান্তর ক্ষতিগ্রস্ত। তুমুল বেগে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রাস্তায় গাড়িঘোড়া খুবই কম। যা আছে সব ছুটছে নিজ নিজ বাড়ির দিকে। ফাঁকা ওই হলদে ডিজাইন আঁকা রিকশাটিও ছুটে চলেছে। গ্যারেজের উদ্দেশ্যে। সেখানে মালিককে রিকশা বুঝিয়ে দিয়ে চালক ছুটবে তার নিজ আবাসের উদ্দেশ্যে। এ-ই আ’তঙ্কে ডুবন্ত আবহাওয়ায়… কম্পিত দেহে রিকশাওয়ালা এগিয়ে যাচ্ছিল। আকস্মিক শোনা গেল এক পুরুষালী কণ্ঠস্বর,
” অ্যাই খালি! দাঁড়াও দাঁড়াও। ”
কাঁপা কাঁপা দেহে রিকশা থামিয়ে ফেললো রিকশাওয়ালা। পড়নে তার ভেজা শার্ট। প্যান্ট। গলায় ঝুলছে গামছা। বৃষ্টির জলে সিক্ত মুখশ্রী। ডাক দিয়ে থামানো সে-ই পথচারী লোকটি দ্রুত পায়ে ছুটে এলো। উঠে বসলো রিকশায়। দেহের নিম্নভাগ নীলাভ পলিথিনে মুড়িয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
” জলদি চলো। মধ্য বাড্ডা। ”
বাড্ডা! এখান থেকে বেশ দূর। এই ঝড়ো পরিবেশে অতদূর যাওয়া ঠিক সমীচিন মনে হলো না। বিপদজ্জনক। তাই তো রিকশাওয়ালা বৃষ্টি ভেজা শরীরে নম্র স্বরে বলে উঠলো,
” ভাই, বাড্ডা ম্যালা দূর। অতদূর অহন যামু না। ”
” যাবা না মানে কি? আমি কি বিনে পয়সায় যাচ্ছি? ভাড়া দেবো। চলো চলো। ” অসন্তুষ্ট হয়ে উঠলো আগন্তুক।
বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটায় পোশাক সে-ই কখন ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। চুল চুয়ে পড়ছে পানি। কণ্ঠনালী ঠাণ্ডায় কাঁপছে। দেহের লোমকূপ সব দাঁড়িয়ে, অধিক শীতলতায়। মুয়ীয গলায় জড়িয়ে রাখা লালচে ভেজা গামছায় মুখমণ্ডল মুছে বললো,
” ভাই, একটু বোঝার চেষ্টা করেন। আবহাওয়া ভালা না। মোর গ্যারেজ যাইতে হইবো। রিকশা জমা দিয়া বাড়ি যামু। বাড়ির লোকে অপেক্ষা করতাছে। বাড্ডা এহান থে ম্যালা দূর। মোর লস হইয়া যাইবো। ”
” শালা ** দুই পয়সার ফ°কিন্নি হয়ে আমায় ভাব দেখাচ্ছিস? কথা না বাড়িয়ে চল। কুইক। ”
এমন নোংরা-বিশ্রী গা`লিতে মুয়ীয হাসানের অভ্যন্তরীণ বেপরোয়া সত্তা ক্ষি`প্ত হয়ে উঠলো। ভেতরকার সিংহ ভয়ালু হুঙ্কার ছেড়ে খাঁচা ভেঙেচুরে বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন। চট করে চক্ষু বুঁজে নিলো সে। আল্লাহ্ আল্লাহ্ স্মরণ করে আস্তে ধীরে শান্ত হলো। মেজাজ খারাপ করা যাবে না। যেকোনো মূল্যেই তাকে শান্ত থাকতে হবে। আগের সে-ই অবস্থা এবং পরিস্থিতি কোনোটাই আর নেই। বদলেছে সব। তাকেও পরিস্থিতি বিবেচনায় বদলাতে হবে। নইলে ঘরে দু’মুঠো খাওন জুটবে ক্যামনে? মুয়ীয কথা না বাড়িয়ে ম্লান মুখে চুপটি করে ভেজা শরীরে দখল করলো চালকের স্থান। চলতে আরম্ভ করলো রিকশা। বি`ক্ষুব্ধ বায়ুপ্রবাহ এড়িয়ে চলছে সে। বাতাসের মা`রমুখো ঝাপটা, বৃষ্টির দাবড়ে ঘনঘন পীড়া হচ্ছিল শরীরে। তবুও দু’টো পয়সা হালাল ভাবে উপার্জনের জন্য ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে… দারিদ্রতার কাছে হার না মানা এ-ই নিম্নবিত্ত মানুষটি।
.
পথঘাট ততক্ষণে পুরো ভিজে চুপচুপে। ধূলোবালি ধুয়েমুছে সাফ। সবুজাভ রঙে রেঙেছে বৃক্ষরাজি। চকচক করছে তাদের পাতাগুলো। বৃষ্টির বৃহৎ ফোঁটাগুলো অবিরাম জমিনের বুকে আছড়ে পড়ছে। শোঁ শোঁ বাতাস যেন নি’র্দয়তার সহিত সব উড়িয়ে নিতে প্রস্তুত। জনমানবশূন্য সে আঁধারিয়া পথটি। বাড্ডায় নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে এসে থেমেছে রিকশা। অভদ্র লোকটি দ্রুত রিকশা হতে নেমে এলো। ভেজা শরীরে পকেট হাতড়ে বের করলো টাকা। অর্ধ ভেজা টাকা হতে গুণে গুণে ওর ভাড়ার টাকাটা বের করলো। মুয়ীয অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে। থরথরিয়ে কাঁপছে। দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছে। যন্ত্রনা হচ্ছে মাথায়। বুঁজে আসছে নাসিকা পথ। লোকটি কেমন অহংকার দেখিয়ে ওর হাতে একপ্রকার টাকাটা ছুঁড়ে দিয়ে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলো। মুয়ীয টাকায় চোখ বুলিয়ে অত্যন্ত নিরাশ। এই অদমনীয় তাণ্ডবের লীলাখেলায় লোকটি স্বাভাবিকের চেয়েও কিছুটা কম টাকা ভাড়া দিয়েছে। মুয়ীয তৎক্ষণাৎ পিছু ডাকতে হাত বাড়ালো। ততক্ষণে লোকটি দৃষ্টি সীমার বাহিরে। বাড়ির ভেতরে চলে গেছে। মুয়ীয হাতে থাকা টাকাটার দিকে তাকিয়ে হাসলো। করুণ, যন্ত্রনাপ্রদ, কষ্টসহিষ্ণু সে হাসিটি!
•
মধ্যাহ্ন হতে বিরামহীন ক্রো`ধোন্মোক্ত আচরণ করে চলেছে প্রকৃতি। সময় গড়িয়ে এখন রাত আটটা। এ বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যকার পরিবেশও আজ অশান্ত, অস্থির। চতুর্দশী ও একাদশী দুই বোন তাদের ঘরে ভয়ে কাঁপছে। একে অপরের হাতটি জাপটে ধরে বসে তারা। বাইরে দা`নবীয় বৃষ্টি-বাতাসের হিসহিসানি। আর ভেতরে মা, বাবার তুমুল ঝগড়া। চতুর্দশী কেয়া ছোট বোন খেয়ার কপালে আলতো করে চুমু খেল। অশ্রুমাখা চোখের ইশারায় ভয় পেতে মানা করলো। এতে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো খেয়া। বোনের কাঁধে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগলো। ভয়ে কাঁপছে মেয়েটা। কেয়া স্নেহের সহিত বোনকে আগলে নিলো। ক্রমশ ভয় তাকেও যে কব্জা করে নিচ্ছে। কি করবে সে! কোথায় এই অসহনীয় তাণ্ডবের সমাপ্তি….?
~~
” কু** বাচ্চা। তোর সাহস তো কম না। তুই আমার খাইয়া আমার থালেই পিছা মা`রোছ? ”
ময়নার চুলের মুঠি বাঁ হাতে নির্দয়ভাবে আঁকড়ে ধরে, ডান হাতে জোরালো চ ড় মে;রে বসলো স্বামী কামাল। ময়না এতে বিন্দুমাত্র দমে গেল না। পা`ষণ্ড স্বামীর মুখে একদলা থুথু ছুঁড়ে ঘৃণিত কণ্ঠে বললো,
” হ মা;রি। তোর মতো শুয়ো** থালায় মুই হাছাই পিছা মা রি। কতবড় কইলজা তোর! মোর ভাইরে খু-ন করতে চাছ? ”
” হ চাইছি। আলবাত চাইছি। তয় আফশোস! কৈ মাছের প্রাণ তোর ভাইডার। ম`রলোই না। ”
” রাখে আল্লাহ্ মা-রে কে! তোর মতো জা°নোয়ার! অসম্ভব।”
এক ঝটকায় চুলের মুঠি মুক্ত করে দু’কদম পিছে সরে গেল ময়না। ঘৃণামাখা চোখ দু’টো স্বামীর দিকে স্থির। কামাল নিজের শুষ্ক চুলে আলতো হাত বুলিয়ে নোংরা হাসলো। বললো,
” তোর ভাই আমারে মা`রছিল। কিচ্ছু ভুলি নাই রে ময়না। কিচ্ছু ভুলি নাই। তোর গায়ে হাত তুলছিলাম বইলা তুই অশান্তি কইরা বাড়ি গিয়া উঠলি। ভাইয়ের ধারে ম রা কান্দন দিয়া বিচার দিলি। এরপর রাইতের আন্ধারে তোর খান* ভাইডা আমারে কু*ত্তা পিডান পিডাইলো। ছাল চামড়া উডাই ফালাইলো। অরে আমি এমনি এমনিই ছাইড়া দিতাম? কক্ষনো না। ”
” তুই অন্যায় করছোছ। এই লেইগ্গা ও মা;রছে। অ্যাম্বালে মা’রে নাই। ”
” না। আমারে ও দেখতে পারে না। শত্রু ভাবে। এই লেইগ্গাই তো সুযোগ পাইয়া শোধ তুলছে। ”
” বেশ করছে। মোর ভাই বেশ করছে। তোর মতো জা°নোয়ারের এইয়াই প্রাপ্য। ” কাটকাট কণ্ঠে বললো ময়না।
এতেই ক্ষে’পে গেল কামাল। তেড়ে এসে ওর গলাটা শক্তপোক্ত দু হাতে চেপে ধরলো। কাশি উঠে গেল ময়নার। ছটফটিয়ে উঠলো। গোঙাচ্ছে অস্ফুট স্বরে। দুই হাতে এলোমেলো আঘাত করছে স্বামীকে। নিজেকে মুক্ত করতে চাইছে। চোখে পানি। গাল বেয়ে নামছে পানি। তবুও মায়া দয়া দেখাতে নারাজ কামাল। আজ একে মে;রেই ফেলবে। কতবড় সাহস! তার খেয়ে, তার পড়ে তার পাতেই থু! ছাড়বে না একে। গোঁড়া থেকে পুরো উপড়ে ফেলবে। কামালের দা°নবীয় শক্তির কাছে ময়না যেন চুনোপুঁটি। হার মানতে বাধ্য। তাই তো ধীরে ধীরে চোখের সামনে অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছিল। এ-ই বুঝি সব শেষ। মেয়ে দু’টো চিরতরে মাতৃহারা হবে। আকস্মিক এক ভ’য়ানক আঘাত! চকিতে সব স্থির হয়ে গেল। বাইরের প্র-ধ্বং-সী অবস্থা ভেতরে প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। গোল গোল বড় চোখে তাকিয়ে ময়না। চোখের পলকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো দেহটি। এ কি অনর্থ ঘটে গেল!!
___
সময়কাল আজ থেকে পনেরো বছর আগে। সপ্তদশী কিশোরী ময়না। আল্লাহ্ প্রদত্ত অপূর্ব সৌন্দর্য নিয়ে জন্মেছে সে! কৃষ্ণবর্ণ হয়েও বেশ রূপসী! চেহারায় এক পরম মমতা, মায়া লুকিয়ে। এই মায়াবী মুখখানির জন্য পথেঘাটে চলতে তাকে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কেননা গরীবের সামান্যতম সৌন্দর্যও থাকতে নেই। এ যেন পাপ। নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য হওয়ায় তারা ঢাকার এক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করতো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তখন বাবা মানুষটি। স্থানীয় এক গার্লস কলেজে পড়তো ময়না। আসা-যাওয়ার পথে সে পাড়ার কামালের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় ওর ওপর। লোলুপ দৃষ্টি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান কামাল। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বড়ই খারাপ। মেয়ে দেখলেই জিভ লকলক করে ওঠে। কৃষ্ণবর্ণ ময়নাকে দেখেও তার নোংরা জিভটা লকলক করে উঠলো। পিছু নেয়া শুরু করলো সে। বিরক্ত করতো রোজ আসাযাওয়ার পথে। ভীত ময়না ভয় পেতো। আতঙ্কিত চোখে মিনতি করতো। কাজ হতো না তাতে। কামাল ঠিক ইভটিজিং করে যেতো। একদিন বাবা বাড়ি ফেরার পথে বিষয়টা দেখে নিলেন। মেয়েকে বাঁ হাতে বুকে আগলে নিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানালেন উনি। তর্জনী তাক করে কামালকে শাসিয়ে গেলেন। ওনার মেয়েকে যেন আর বিরক্ত না করে। এই সামান্য প্রতিবাদ সহ্য হলো না কামালের। তার শিরা উপশিরায় আগুন জ্বলে উঠলো। দাঁত কিড়মিড় করে দেখে নিলো বাবা ও মেয়ের প্রস্থান। সেদিনের পর থেকে কামাল পিছু নেয়া বন্ধ করলো। স্বস্তি পেল ময়না। যাক। আপদ অবশেষে ঘাড় থেকে নেমেছে। তবে সেদিন বোঝেনি অবুঝ সপ্তদশী কিশোরী। আজ বোঝে সে। সবটাই ছিল পরিকল্পিত ষ°ড়যন্ত্র। তাই তো সপ্তাহ তিনেক বাদে হঠাৎ এক দুপুরে কলেজ থেকে ফেরার পথে অ;পহৃত হলো ময়না। শান্ত, নীরব রাস্তা ধরে একাকী বাড়ি ফিরছিল ময়না। আকস্মিক বাম পাশেই এসে ব্রেক কষলো সাদা রঙচটা এক প্রাইভেট কার। ময়না কিছু বুঝে ওঠার আগেই, ওকে বেহুঁশ করে গাড়িতে তুলে নিলো মুখোশধারী লোকেরা। ঘন্টাখানেকের মধ্যে টনক নড়লো ময়নার পরিবারের। হৈচৈ পড়ে গেল। বাবা, বছর চৌদ্দ’র মুয়ীয এবং বিশ বছর বয়সী মারুফ মিলে ওকে খুঁজতে বের হলো। সন্ধ্যা নাগাদ সঙ্গ দিলো চৌদ্দ বছরের চয়ন এবং তার বাবা। রাতভর খোঁজা হলো ময়নাকে। মোমেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাকে সামলাতে ব্যস্ত প্রতিবেশীরা। গোটা রাত আতঙ্কে, ভয়ে দিশাহারা হয়ে অতিক্রান্ত হলো। মুয়ীয, মারুফ দুই ভাই ভয়ে জর্জরিত। কু’চিন্তা বারবার হানা দিচ্ছে মনে। কিশোর মুয়ীয আল্লাহ্’র সাহায্য প্রার্থনা করে চলেছে। রাত পেরিয়ে নতুন দিন এলো। হলো দুপুর। ঠিক দুপুর তিনটে নাগাদ এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় চমকটা এসে হাজির হলো বাড়ির দোরগোড়ায়। নবদম্পতি ময়না এবং কামাল। হাসিমুখে দোয়া চাইছে কামাল। অশ্রুমাখা চোখ লুকাতে অবনত মস্তকে পাশেই দাঁড়িয়ে ময়না। মোমেনা বেগম এক চিৎকার করে চেতনা হারালেন। বাবা মানুষটি অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে মেয়ের অবয়বে। অশ্রু টলমল করছে চোখ দু’টো।
সেদিনের সে-ই গোপন সত্যি আজও এ প্রকৃতির বুকে লুকায়িত। কেউ জানে না সেদিনের নোংরা, জঘন্য সত্যটুকু। দুনিয়ায় নজরে স্বেচ্ছায় গতরের জ্বালা মেটাতে কামাল পত্নী হয়েছে ময়না। তবে আল্লাহ্ জানেন। জানেন সে-ই ঘটনাস্থলে উপস্থিত পশুগুলো এবং ওই জা•নোয়ার কামাল। বী`ভৎস শ্লী-ল-তাহানির শিকার হয়ে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছিল ময়না। ওকে তুলে নিয়ে কামাল ও কামালের সঙ্গীরা যে পশুবৎ আচরণ করেছে তা অভাবনীয় ছিল! সেদিন সে-ই রাতে বারংবার ওর নরম, কোমল দেহের অলিগলি মেপেছে একাধিক নোংরা পুরুষালী হাত। বুকের ধারের পোশাক খু°বলে ছিঁড়েছে কুকুরগুলো। দৃশ্যমান হয়ে ওঠা অভ্যন্তরীণ ক্ষুদ্র পোশাকে চোখ আটকাতেই জিভে জল এসেছে ওগুলোর। দেহের বিভিন্ন অংশে দাঁতের ভ’য়ঙ্কর ছাপ এঁকেছে কামাল। স•ম্ভ্রম বাঁচাতে বাঁধভাঙা চিৎকার করে কেঁদেছে ময়না। আকুতিমিনতি করেও মন গলাতে পারেনি। রাতভর ওর আকুতি উপভোগ করেছে কামাল। নানাভাবে নোংরামি করেছে। তবে চূড়ান্ত সর্বনাশ ঘটায়নি। ভোরের দিকে কি থেকে কি মনে হলো কে জানে। বিয়ের ইচ্ছে জাগলো মনে। বিয়ের প্রস্তাব শুনেই হতবিহ্বল হয়ে গেল ময়না। তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানালো। সে প্রতিবাদের ফলাফল ছিল অতীব ভয়ানক! ওর অর্ধ ন-গ্ন শরীরটা উন্মোচিত হলো অতগুলো মানুষরূপী উ’গ্র পশুর সামনে। তাদের বি’শ্রী হাসি, আত্মা কাঁপানো চাহনিতে হাউমাউ করে কাঁদলো ময়না। হাত-পা মোটা রশি দিয়ে বাঁধা। সাহায্যের জন্য কোথাও কেউ নেই। চরম অসহায় পর্যায়ে ময়না কাঁদতে কাঁদতে উচ্চ স্বরে ডাকলো রব’কে। শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করতে অবশেষে হার মানলো পশুর বি•ধ্বংসী পা;শবিকতায়। সকাল সকাল বিবাহ নামক এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো ময়না, কামাল। এক জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা এভাবেই অকালে মৃ•ত্যুবরণ করলো। বিয়ে হয়ে গেল। এরপর নাটকীয় ভাবে শ্বশুরবাড়ি বউ নিয়ে উপস্থিত হলো কামাল। বাবা বড় কষ্ট পেলেন। ওদের নীরবে সসম্মানে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হলো।
ময়নার ভয়ার্ত অতীত কেউই জানলো না। ধীরে ধীরে সময় গড়াতে লাগলো। মা ও দুই ভাই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে আসে। বাবা তখনো রাগ কিংবা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে। ময়না চতুরতার সহিত নিজের পীড়াদায়ক জীবন লুকিয়ে রাখে। সকলের চোখে সে এক সুখী মানবী। স্বামী সোহাগে আদরিণী। মাস কয়েক বাদেই শোনা গেল সুখবর। মা হতে চলেছে ময়না। স্বামী দ্বারা নিত্য বৈধ ধ-র্ষ-ণের শিকার হয়ে আজ সন্তানসম্ভবা সে। গোটা পরিবার যেখানে খুশিতে ভরে উঠলো। ময়না সেখানে গোপনে মুখ লুকিয়ে কাঁদে। ‘ এই শ°য়তানের অংশস্বরূপ তুই দুনিয়ায় কেন এলি! ‘ এ কষ্টে কাঁদে ময়না। আদরের বড় মেয়ে মা হতে চলেছে। বাবা আর অভিমান ধরে রাখতে পারলেন না। ছুটে এলেন কয়েক কেজি মিষ্টি, মেয়ের পছন্দের অধিকাংশ খাবার নিয়ে। সামর্থ্যের মধ্যে নিজের সেরাটা হাজির করলেন বাবা। ময়না সেদিন বাবাকে আলিঙ্গন করে হাউমাউ করে কেঁদেছিল। বাবা আদর করে কাছে টেনে নিলেন। পা`গলি মেয়ে ওনার। বাবার ভালোবাসা ফিরে পেয়ে এভাবে কেউ কাঁদে?
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ময়নার কোল আলো করে এলো প্রথম সন্তান কেয়া। প্রথম সন্তান হিসেবে কন্যা পেয়ে চরম নাখুশ কামাল। সকলের সামনে খুশি প্রকাশ করে স্ত্রীর কপালে চুমু এঁকে দিলো। আর রাতের আঁধারে প্রসূতি স্ত্রীকে একাধিক চ ড় মা:রলো সে। সে রাতে কেন যেন আর বাঁচার জন্য আকুতি করলো না ময়না। নীরবে সব সয়ে নিলো। সে-ই শুরু। সময়ের পরিক্রমায় দুর্বল, ভীতু ময়না নতুন করে গড়ে উঠতে লাগলো। আজ আর ভীতু নয় সে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক সাহসী নারী। স্বামী কাপুরুষটার জন্য ইন্টারের পর আর পড়ালেখা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। দুই সন্তানের মা সে। ধীরে ধীরে উপলব্ধি হলো। অর্থ উপার্জনের স্পৃহা জন্ম নিলো মনে। নিজের ও সন্তানদের খরচাপাতি নিজেই বহন করতে ইচ্ছুক সে। কিন্তু করবে তো করবেটা কি? সামান্য ইন্টার পাশ করে কোন চাকরি মিলবে? চাকরির বাজার যে বেশ গরম। জটিল। অবশেষে অনেক ভাবনা শেষে এক উপায় মিললো। প্রতিবেশী এক ভাই বুদ্ধি দিলেন। সে বুদ্ধি মোতাবেক গার্মেন্টস সেক্টরে কাজের চেষ্টা করতে লাগলো ময়না। নতুন হিসেবে সে যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। স্বামীর ব্যঙ্গাত্মক হাসি কত যে সহ্য করতে হয়েছে! তবুও হার মানেনি সে। সৎ ভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছে। পুরো সাত মাসের চেষ্টা বাদে অবশেষে সফলতা ধরা দিলো। আলহামদুলিল্লাহ্। এক গার্মেন্টসে চাকরি হলো ময়নার। নিচু পোস্ট। বেতন কম। তবুও দু’টো পয়সা হাতে আসবে তো। যার উপর সম্পূর্ণ মালিকানা হবে নিজের। ছোট মেয়ে দুটোকে শাশুড়ি মায়ের কাছে রেখে কাজে যেতো ময়না। শাশুড়ি মা চলনসই স্বভাবের। ভালো-মন্দের মিশেলে তৈরি। ওর চাকরিতে আপত্তি ছিল ওনার। আবার টাকার লো’ভটাও রয়েছে। তাই তো ঘোর আপত্তি জানালেন না। বরং ওর অনুপস্থিতিতে ছোট ছোট মেয়ে দু’টোর আগলে রাখার দায়িত্ব নিলেন। এতে সুবিধা হলো ময়নার। নিশ্চিন্তে কাজে যেতো সে। বছর দুই ওভাবেই কাটলো। অভিজ্ঞতা বাড়লো। বাড়লো কর্ম দক্ষতা। পদোন্নতি পেয়ে অন্য শাখায় ট্রান্সফার হলো তার। সেখানে অপেক্ষা করছিল আরেক যন্ত্রনা। সে-ই শাখায় যে তার জীবনের অন্যতম বড় সর্বনাশ কর্মরত। কামাল। সে-ও ওখানে কাজ করে। ময়নার চেয়ে সিনিয়র পোস্টে। ব্যাস। শুরু হলো আরেক দফা যন্ত্রনা। প্রতিনিয়ত উঠতে বসতে কর্মক্ষেত্রেও কামাল নামক যন্ত্রনা পোহাতে হতো ময়নার। ঘরে ও বাইরে একদণ্ড শান্তি নেই। জীবনটা জাহান্নামের ক্ষুদ্র এক নমুনা ঠেকছিল। এভাবেই এগিয়ে গেল সময়।
বোনের অতীতের করুণ পরিণতি সম্পর্কে জানেনা মুয়ীয। তবুও সে-ই কিশোর বয়স থেকে কামালকে করে ঘৃণা। দু’চোখে দেখতে পারে না। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক একপ্রকার সাপে নেউলে। এই তো কয়েক মাস পূর্বের কথা। ঝগড়াঝাঁটির এক পর্যায়ে কামাল আঘাত করে বসলো ময়নাকে। রাতের আঁধারে চূড়ান্ত অশান্তি করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলো ময়না। হাজির হলো বাপের বাড়ি। অত রাতে ওকে দেখে ঘাবড়ে গেল মুয়ীয ও পরিবারের সদস্যরা। বোনের অবস্থা দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না কি হয়েছে। বড় আপার বর্তমান পরিস্থিতি যে বেশ ভালো করে জানা। ময়না’র চুলগুলো এলোমেলো হয়ে খোঁপা হতে বেরিয়ে এসেছে। ডান চোখের কিনারে কালশিটে দাগ জায়গা করে নিয়েছে। দু গালে বড় বড় আঙ্গুলের ছাপ। যা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছিলো কোনো ব্যক্তির নির্দয়-নির্মম অমানোবচিত আচরণের শিকার হয়েছেন আপা। কিন্তু কার? বুঝতে বাকি নেই।
” আপা! ঠিক আছোছ? ”
উদ্বিগ্ন মিহি স্বরে শুধালো মুয়ীয। হালকা কৃত্রিম হাসি অধরে ঝুলিয়ে মাথা নাড়লেন ময়না। তবে এ হাসিতে মন গললো না মুয়ীয হাসানের। দাঁতে দাঁত পিষে শুধালো সে,
” কু** বাচ্চাডা কই? ”
ময়নাকে কিছু বলতে হলো না। রাতের আঁধারে সেদিন বেরিয়ে গিয়েছিল মুয়ীয। বন্ধু চয়নকে সাথে নিয়ে এক ম°দের আখরায় খুঁজে পেল মা;তাল কামালকে। ব্যাস। বেড়ধক মে রে র•ক্তাক্ত করে ছাড়লো মুয়ীয। নিজেও হাতে হালকা ব্যথা পেল। তর্জনী তাক করে ইচ্ছেমতো শাসিয়ে গেল। কামাল অর্ধ অচেতন অবস্থায় মা র খেলো শুধু। তেমন কিছু করতে ব্যর্থ হলো। সেদিনের ক্ষো’ভ মনে রয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও আরেকটা কারণ নতুন করে সৃষ্টি হলো। তাই তো…
চলবে।
#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_২৬
” আপা! ঠিক আছোছ? ”
উদ্বিগ্ন মিহি স্বরে শুধালো মুয়ীয। হালকা কৃত্রিম হাসি অধরে ঝুলিয়ে মাথা নাড়লেন ময়না। তবে এ হাসিতে মন গললো না মুয়ীয হাসানের। দাঁতে দাঁত পিষে শুধালো সে,
” কু** বাচ্চাডা কই? ”
ময়নাকে কিছু বলতে হলো না। রাতের আঁধারে সেদিন সে মুহূর্তে বেরিয়ে গিয়েছিল মুয়ীয। বন্ধু চয়নকে সাথে নিয়ে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে এক ম°দের আখরায় খুঁজে পেল মা;তাল কামালকে। ব্যাস। বেড়ধক মে রে র•ক্তাক্ত করে ছাড়লো মুয়ীয। নিজেও হাতে হালকা ব্যথা পেল। তর্জনী তাক করে ইচ্ছেমতো শাসিয়ে গেল। কামাল অর্ধ অচেতন অবস্থায় মা র খেলো শুধু। তেমন কিছু করতে ব্যর্থ হলো। সেদিনের ক্ষো’ভ মনে রয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও আরেকটা কারণ নতুন করে সৃষ্টি হলো। সেটি হলো একটি আকাঙ্ক্ষী ডিল হাসিল করা। মুয়ীযের অফিস এবং কামাল বর্তমানে যেখানে কর্মরত সে দুই পক্ষই একটি ডিল হাসিল করতে চাইছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের প্রতিষ্ঠান এই নিয়ে হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী। এ নিয়েও ক্রো’ধ জন্মালো কামালের মনে। পুরনো শ*ত্রুতার জের ধরে নতুন এই সামান্য কারণে কষলো এক নি’র্মম পরিকল্পনা। ফলস্বরূপ সে রাতে এক চ্যালা এসে বললো…
” ভাই, এইডাই ফকফকা এক সুযোগ। ময়লা সাফ কইরা দিই? ”
যুবকের জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। তা অবলোকন করে কুটিল হাস্য আভা ফুটে উঠলো কামাল নামক মানুষটির ঠোঁটের কোণে। সিগারেটে লম্বা সুখটান দিয়ে হালকা মাথা নাড়লো সে। অর্থাৎ ইতিবাচক সাড়া। যুবকটি আশানুরূপ ইতিবাচক সাড়া পেয়ে দা`নবীয় হেসে উঠলো। নিঃশব্দ সে হাসিতে যুক্ত হলো ওই কামাল দ্য ন•রপশুটিও।
অফিসিয়াল কাজে রাজশাহী গিয়েছে মুয়ীয। এটাই মোক্ষম সুযোগ তাকে পাকড়াও করার। নতুন এক জায়গায় প্রাণে মে রে দেয়ার। তাই তো ওই বিশেষ দিনটা বেছে নিলো কামাল বাহিনী। কুচ°ক্রীদের ষ-ড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আকাঙ্ক্ষিত ডিলটা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফোনে বেশ করে ঝেড়েছেন। অপমানজনক কথাবার্তায় ওকে হেয় করেছেন। এতে মুয়ীয বেশ হতাশ। দুঃখ ভারাক্রান্ত। সন্ধ্যা পূর্ববর্তী মূহুর্তে একাকী আনমনে হোটেলের দিকে হাঁটছিল মুয়ীয। আকস্মিক আ°ক্রমণ! কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই আরম্ভ হলো মা`রপিট। যে মা`রপিট মুয়ীয হাসানের জীবনে বয়ে আনলো এক সমুদ্র দুঃখ, দৈন্যদশা। এরপরের ঘটনা কারোর অজানা নয়। পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লো মুয়ীয। দিবারাত্রি সেবাশুশ্রূষা করে গেল স্ত্রী। কখনোবা জন্মদাত্রী মা। বিপদের দিনে বেশ করে লোক চেনা গেল। বোঝা গেল কে আপন আর কে পর। বন্ধু চয়ন যথাসম্ভব অবদান রেখেছে। খোঁজখবর নিয়েছে। সাধ্যের মধ্যে সহায়তা করেছে। আর নিজের ঘরের লোকেরা? হাহ্! কিচ্ছু বুঝতে আর চিনতে বাকি নেই। সমস্ত বোঝাপড়ার সমাপ্তি ঘনিয়ে এসেছে তবে।
•
বায়ুর অক্লান্ত উ’ন্মত্তায় প্রকৃতি বি’ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে। আকাশ ভেঙে পড়ছে যেন বড় বড় বজ্রপাত। চট করে আলোক রশ্মিতে আলোকিত হয়ে উঠছে রাতের বসূধা। অতঃপর সে-ই ভয়াল আঁধার। আশপাশের বাড়ি হতে শোনা যাচ্ছে বহুজনের ভয়ার্ত চিৎকার। কয়েকটি বাড়ির টিনের চালে ভেঙে পড়েছে বৃহদাকার গাছ। গাছের প্রবল ভার সইতে না পেরে ভাঙন ধরেছে টিনের চালে। দু’টো বাড়ির টিন বাতাসের পৈ•শাচিক নৃত্যে উড়েই গিয়েছে। সেসব বাড়ির লোকেদের চিৎকার, আহাজারি তনুমনে ভয়ের সৃষ্টি করে চলেছে। এখন অবধি অত্র এলাকায় বজ্রপাতে নিহত হয়েছে চারজন। বাড়ি ভাঙনে নিখোঁজ প্রায় দশ, বারোজন। উক্তি, মুয়ীয সহ তাদের বাড়ির প্রতিটি সদস্য শঙ্কিত চিত্তে মাঝের ঘরটিতে দাঁড়িয়ে। কেউবা বসে। উদ্ভ্রান্ত অবস্থা তাদের। টিনের অবস্থা ভালো নয়। ভাঙন ঘনিয়ে আসতে চলেছে বুঝি। ইতিমধ্যে ফুঁটো হয়ে টিনের চালের বিভিন্ন জায়গা হতে বৃষ্টির পানি পড়তে আরম্ভ করেছে। ভিজে যাচ্ছে অন্দরে অবস্থিত মানুষগুলো। উক্তি ভীত মনে স্বামীর বাঁ হাতটি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। মনে মনে দোয়াদরূদ পাঠ করে চলেছে। মুয়ীয কাকভেজা হয়ে ঘরে ফিরেছে এইতো ঘন্টা দুয়েক হবে। সময় তখন রাত্রি দশটা বেজে চল্লিশ মিনিট। নাওয়াখাওয়া ভুলে জীর্ণশীর্ণ অবস্থা তাদের। আশায় রয়েছে এই বুঝি থামবে বর্ষণের লীলাখেলা। শান্ত হবে পরিবেশ। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির বেগ একটুখানি হ্রাস পাচ্ছে। তারা প্রাণ ভরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই আবার আরম্ভ তোলপাড়। বিগত ঘন্টাগুলো ছিল তাদের কাছে অতীব ভ’য়ঙ্কর। না জানি কেয়ামত লগ্ন এরচেয়ে কত কোটি গুণ বী^ভৎসতা নিয়ে আসবে!
ভারী বর্ষণ তখনো চলমান। চোখে ঘুমের মায়া। পেটে তীব্র ক্ষুধা। খেতে মন চাইছে না। টিনের চালের অবস্থা আরো করুণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাড়ির ভেতর বৃষ্টির পানি অবাধে প্রবেশ করছে। ভিজে যাচ্ছে অন্দরমহল। এই ঝড়োহাওয়ার মধ্যে তারা যে সাহায্যের জন্য কোথাও বেড়োবে সে উপায় অবধি নেই। এ বাড়িটাই তাদের কাছে নিরাপত্তার শেষ আবাস। আল্লাহ্ আল্লাহ্ স্মরণ হচ্ছে ঘরের অলিগলি। কখনো তেমন ভক্তি করে না ডাকা মানুষটাও আজ রব’কে আকুলতার সহিত স্মরণ করে চলেছে। ভয়ে কাঁদছে। শঙ্কিত মনটা শুকিয়ে এতটুকুতে পরিণত হয়েছে।
মোমেনা বেগম পানির তৃষ্ণায় ছটফট করে চলেছেন। অবশেষে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। এক গ্লাস পানি না খেলেই নয়। ম•রণ যেন আসন্ন। ওনাকে উঠতে লক্ষ্য করলো উক্তি। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ভাষায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি হয়েছে মা? কিছু লাগবে? ‘
মোমেনা বেগম নেতিবাচক মাথা নেড়ে ঘরের অপর দিকে দেয়াল পাশ্ববর্তী টেবিলের কাছে গেলেন। পানির জগ, গ্লাস সেখানেই রাখা। অল্প একটু পানি জগে অবশিষ্ট রয়েছে। দু গ্লাসের মতো হবে। এই নি’র্দয় আবহাওয়ায় টিউবওয়েল থেকে পানি আনা সম্ভব হয়নি। সে-ই দুপুর নাগাদ দু কলসি আনা হয়েছিল। তা-ই চলছে এখন অবধি। বুঝেশুনে কিপ্টেমি করে পানি পান করতে হচ্ছে। মোমেনা বেগম গ্লাসে পানি ঢেলে নিচ্ছেন। শ্রবণ পথে পৌঁছাচ্ছে কেমন অদ্ভুতুড়ে শব্দ। খ্যাচর খ্যাচর শব্দ। আকস্মিক ঘটে গেল এক অভাবনীয় অঘটন। অস্ফুট বোবা স্বরে চিৎকার করে উঠলো উক্তি,
‘ আঃ…..! ‘
এক ধাক্কায় শাশুড়ি মা’কে সরিয়ে ফেললো মেয়েটা। শাশুড়ি, পুত্রবধূ দু’জনেই ছিটকে পড়লো দেয়াল ঘেঁষে। মুন্নি অঝোরে কাঁদছে। ও ছোট ভাইয়ের সহায়তায় সময়মতো সরতে তো সক্ষম হয়েছে। তবুও হালকা আঁচড় লেগে ছড়ে গেছে ডান বাহুর চামড়া। র’ক্ত বেড়োচ্ছে সেখান থেকে। মুহূর্তের মধ্যেই ঘরের পরিবেশ বদলে গেল। চিৎকার, ভয়ার্ত কন্ঠে হৈচৈ লেগে গেল। তড়িঘড়ি করে একপ্রকার ঘরের দরজা ভেঙে এই পা’ষাণ বৃষ্টিতে বেরিয়ে এলো তারা। ওরা বেড়োনোর ঠিক সাত সেকেন্ডের মাথায় মাটিতে ভূপাতিত হলো টিনের চালের অবশিষ্ট বৃহৎ ভাঙা অংশ। ভেতরে থাকলে এতক্ষনে হয়তো তাদের সলিল সমাধি হয়ে যেতো। কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহ্ বলে উচ্চ কলরব তুললো মেয়ে গোষ্ঠী। উক্তি ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে এখনো। ওকে ডান হাতে আগলে ধরে মোমেনা বেগম। দু’জনেই প্রায় মৃ ত্যু দেখে এলেন যেন। ইয়া রাব্বুল আলামিন! জীবন তার চাচুর কোলে বসে। কাঁধে মুখ লুকিয়ে ঝরঝরিয়ে কাঁদছে। বড় ভয় পেয়েছে বাচ্চাটা। মুয়ীয অবিরাম ওর পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চাইছে। মুন্নি তার হাতের রক্তাক্ত অংশ ওড়নায় চেপে কাঁদছে। চোখের পলকে ওদের ছোট্ট ঘরটার এ কি হাল হয়ে গেল! শেষ। স…ব শেষ। সহসা এক বি-ধ্বংসী বজ্রপাতে হুঁশ ফিরলো ওদের। এলোমেলো ছোটাছুটি আরম্ভ হয়ে গেল। মুয়ীয চেঁচিয়ে সতর্কবাণী জানালো,
” হগলে একলগে থাকো। দল ভাইঙ্গা যাইয়ো না। ”
•
রাতের অন্তহীন পা`শবিকতা সমাপ্ত হয়ে আগমন হলো নতুন এক দিনের। সকাল নয়টা অবধি চললো ধ্বং-সলীলা। অবশেষে রবের অশেষ রহমতে বর্ষণ থামলো। শান্ত হলো পরিবেশ। বাতাস তখন স্বাভাবিক। শান্ত। তবে জনজীবন চরম বিপর্যস্ত। জায়গায় জায়গায় লাগামহীন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানি হয়েছে বহু মানুষের। দেশব্যাপী যেন এক নৃ`শংস ধ্বং-সযজ্ঞ চলেছে। গৃহহারা হয়েছে অসংখ্য জন। তন্মধ্যে মুয়ীয পরিবার অন্যতম। রাতের বাকি সময়টুকু তাদের কেটেছে প্রতিবেশী এক বাড়িতে। রাতটা সেখানেই ভয়ার্ত মনে দোয়া দরুদে অতিবাহিত হয়েছে। সকালে তাদের ঠাঁই মিলেছে স্থানীয় এক প্রাইমারি স্কুলে। স্কুলের হলুদাভ তিনতলা ভবনটি এখন আশ্রয় কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। মুয়ীয পরিবারের মতো অসংখ্য অসহায় পরিবার এসে এখানে ঠাঁই নিয়েছে। মুয়ীয ও তার পরিবারের জায়গা মিলেছে দোতলার একটি শ্রেণিকক্ষের একাংশে। সেখানেই জড়োসড়ো হয়ে সরকারি হাসপাতালের মতো থাকছে তারা। তাদের পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি গৃহহীন পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের এখানে বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে মুয়ীয ও ভাই মারুফ বের হলো বাইরে। মারুফ ছুটলো পরিবারের জন্য সামান্য কিছু খাবারের আয়োজন করতে। রাতভর অভুক্ত মানুষগুলো এবার যে খিদেয় প্রাণ ত্যাগ করবে। আর মুয়ীয…? সে ছুটেছে এক বিশেষ গন্তব্যে।
•
ঘড়িতে সময় তখন বেলা এগারোটা। উক্তি ও পরিবারের সদস্যরা শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে বসে। অশ্রুভেজা কারো কারোর চোখমুখ। পাউরুটি ও কলা খাচ্ছে তারা। আপাতত ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে এতটুকু ব্যবস্থা করতে পেরেছে মারুফ। মুয়ীয এখনো ফেরেনি। কোথায় গিয়েছে তাদের নেই জানা। উক্তি স্বামীর জন্য উদ্বিগ্ন। একটি পাউরুটি ও পানি খেয়ে গলা ভিছিয়েছে মাত্র। আর কিছু গলা দিয়ে নামতে নারাজ। মানুষটা এভাবে না বলেকয়ে গেল কোথায়?
” উক্তি! উক্তি! ”
উঁচু কণ্ঠে মেয়ের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে হন্তদন্ত পায়ে সে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করলেন কায়সার সাহেব। ওনার পিছুপিছু নিশাত। আকস্মিক বাবা মানুষটির কণ্ঠে ঠিক এতগুলো বছর বাদে নিজের নাম শুনে বজ্রাহত উক্তি! ফ্যাল ফ্যাল করে ডানে তাকিয়ে সে। বাবা এদিক ওদিক তাকিয়ে চলেছেন। খুঁজছেন কাউকে। শঙ্কিত হৃদয়ে মেয়েকে খুঁজছেন বুঝি? নিশাত আস্তে করে শ্বশুরকে তার কাঙ্ক্ষিত মানবীর অবস্থান দেখিয়ে দিলো। কায়সার সাহেব এক মূহুর্তের জন্য স্থবির হয়ে গেলেন মেয়েকে লক্ষ্য করে। বাবা ও মেয়ে একে অপরের দিকে নিষ্পলক ভেজা চোখে তাকিয়ে। অন্তরে কিসের যেন দামামা বেজে উঠলো। একবিন্দুও কালক্ষেপণ না করে ত্রস্ত পায়ে ছুটে গেলেন কায়সার সাহেব। উক্তিও আস্তে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই সে এক স্নেহাতুর গাঢ় বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়লো। বাবা মানুষটি বুকে জড়িয়ে নিয়েছে ওকে। এ প্রথমবার বোধহয়! হ্যাঁ, এ প্রথমবার উক্তি অনুভব করতে পারলো বাবার আলিঙ্গন ঠিক কেমন হয়। এর স্বাদ, শান্তি কেমন হয়ে থাকে। উক্তি না টেরও পেল না কখন যে ওর চোখ দু’টো কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। বাবার প্রথম আলিঙ্গনে এমন অশ্রু ঝড়ে বুঝি! আশ্চর্য তো! উক্তি প্রতিক্রিয়াহীন দাঁড়িয়ে ছিল। ওর এই মুহূর্তে ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত, কি করা উচিত জানা নেই। তাই সে নিষ্প্রভ দাঁড়িয়ে। নিশাত আনন্দঅশ্রু চোখে বাবা ও মেয়ের মিলন দেখে চলেছে। আর জাওয়াদ? সে চুপটি করে শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে শ্রেণিকক্ষের দরজায়। মনের ভেতরে কি চলছে বোঝা দুষ্কর। কায়সার সাহেব মেয়ের চোখেমুখে কতগুলো চুমু খেলেন। বারবার ওকে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন। চেক করে দেখছেন মেয়ে ওনার অক্ষত রয়েছে কিনা। কোথাও লেগেছে কিনা। উক্তি এই অবিশ্বাস্য মুহূর্তটুকু নির্বাক অনুভব করে যাচ্ছিল। স্মৃতির পাতায় বুনে রাখছিল। পাছে আর কখনো যদি এমন স্বপ্নময় মুহুর্তের দেখা না মিলে!
মেঝেতে দেয়াল ঘেঁষে বসে মানুষটি। স্বনামধন্য ব্যক্তি জনাব কায়সার সাহেব এভাবে মেঝেতে বসে। এ যে ভাবনাতীত সুন্দর মুহুর্ত! ওনার বাঁ হাতে আবদ্ধ হয়ে ছোট্ট পাখির মতো বাবার বুকে মিশে উক্তি। উক্তির শ্বশুরবাড়ির লোকগুলো বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে! মুয়ীয সেথায় অনুপস্থিত। কায়সার সাহেব আনমনে মৃদু কণ্ঠে বলে চলেছেন,
” তোমার মায়ের বড় শখের সন্তান তুমি। তোমাকে ঘিরে ওর এক বুক স্বপ্ন গাঁথা ছিল। আজ তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি দুনিয়ার সবচেয়ে নি’কৃষ্টতম বাবার উদাহরণ হয়ে যেতাম। তোমার মা তার দুঃস্বপ্নেও আমাকে ক্ষমা করতেন না। আমিওবা ওপাড়ে তাকে কি জবাব দিতাম? লজ্জায় এ মুখ দেখাতে পারতাম? পারতাম না। ”
উক্তি ও উপস্থিত মানুষগুলো চুপ। অপরিচিত আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোও চুপচাপ অবলোকন করে চলেছে। কায়সার সাহেব মেয়ের বাহুতে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললেন,
” বাড়ি ফিরে চলো মা। এখানে তুমি বেমানান। কষ্ট হবে তোমার। ”
উক্তি যেন এতক্ষণ কোনো সুখকর অচেতন অবস্থায় তলিয়ে ছিল। বাবার শেষোক্ত কথায় হুট করে তার হুঁশ ফিরলো। এক ঝটকায় বাবার বাহুবন্ধন হতে বেরিয়ে এলো সে। দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। পরিবারের সদস্যরা এমন আচরণে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চলেছে। কায়সার সাহেব হতভম্ব মনে আস্তে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। মেয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে উনি।
” উক্তি! ”
ভাবীর ডাকে উক্তি ঘুরে দাঁড়ালো বাবার দিকে। আলতো ছোঁয়ায় চোখের পানি মুছে ফেললো। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ভাষায় আস্তে ধীরে নি’র্দয়ভাবে বললো,
‘ দেখা শেষ? আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ঠিক আছি। আপনি এবার আসতে পারেন। ‘
মেয়ের শব্দহীন ভাষা ওনার কাছে দুর্বোধ্য নয়। তাই তো কায়সার সাহেব পুরোটা বুঝলেন। মিহি স্বরে বললেন,
” আমার সাথে বাড়ি চলো মা। তোমাকে কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে না। ”
‘ আমি এখানেই ঠিক আছি। আমার পরিবারকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। ‘
” এখানে তোমার কষ্ট হবে যে। একটা ক্লাসরুমে তুমি কিভাবে থাকবে? ” বোঝানোর চেষ্টা করছেন উনি।
‘ এতদিন তোমাদের মর্জিতে বস্তি বাড়িতে ছিলাম। সেখানে যখন কোনো অসুবিধা হয়নি, ইনশাআল্লাহ্ এখানেও মানিয়ে নেবো। অহেতুক চিন্তা করতে হবে না। ‘
বড় ভাইয়ের দিকে অপলক তাকিয়ে কথাটি বললো উক্তি। জাওয়াদ আস্তে করে দৃষ্টি হটিয়ে নিলো। বোন জেনেবুঝে লজ্জায় ফেলছে তাকে?! কায়সার সাহেব অনুতপ্ত। ওনার চেহারায় তা প্রবলভাবে দৃশ্যমান। উনি মেয়ের নিকটে এলেন। ওর হাতটি ধরে আকুল স্বরে বললেন,
” এ বাবাকে কি একটুও ক্ষমা করা যায় না, মা? আজ এখানে এতগুলো মানুষের সামনে আমি স্বীকার করছি… এতকাল আমি ভুল ছিলাম। অবুঝের মতো দিনের পর দিন তোমার সাথে অন্যায় করেছি। আজ ক্ষমা ভিক্ষা চাইছি, মা। আমাকে একটু ক্ষমা করো। একটুখানি। ”
বয়স্ক মানুষটির কণ্ঠে আকুলতা, ওনার ভেজা অক্ষিপুট উপস্থিত মানুষগুলোর হৃদয় ছুঁয়ে গেল। উক্তি আবেগী হয়ে পড়ছে। এখানে আর একদণ্ড থাকা অসম্ভব। অনুচিত। নিজেকে কোনোমতে সামলাতে শাশুড়ি মায়ের কাছে এলো সে। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ভাষায় শুধালো,
‘ মা আপনার ছেলে কোথায় গিয়েছে? কিছু বলে গিয়েছে? এখনো ফিরলেন না উনি। ‘
সময় গড়াতে লাগলো। উক্তি নিজের মতো রয়েছে পরিবারের সঙ্গে। অর্থাৎ শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোর সঙ্গে। আর কায়সার সাহেব? শ্রেণিকক্ষের এক জানলা বরাবর দাঁড়িয়ে উনি। ওনার দৃষ্টি নিবদ্ধ বাহিরে। বিস্তীর্ণ ভেজা মাঠে। ঝড়ের শেষে শান্ত হয়েছে পরিবেশ। তবে ওনার মনে চলমান ঝড় থামবে কখন, কোথায়, কি করে…?
‘ যদি অনুতাপ ভীষণ গভীর
সহ্য করা দায়,
যদি ভীষন ঘৃনায় এ দেহ মন
আপনি ছেয়ে যায়।
যদি অনুতাপের কঠিন আগুনে পু*ড়ছো সারাটা দিন,
যদি মনকষ্টে এ জীবন প্রদীপ জ্ব*লিতেছে হয়ে ক্ষীণ।
যদি দুফোটা সুখের আশায় সারা রাত ঘুম হীন,
যদি একমুঠো সুখের আশায় হাতাশ সারা দিন
যদি ঘৃনার তোড়ে বালিশ ভেজে চোখের অশ্রু ধারায়,
যদি নিজের প্রতি ঘৃনার পাহাড় আকাশ জমিন ছাড়ায়।
যদি ঘৃন্য কাজ করিয়া নিজে ঘৃনাতে ভাসো,
যদি বুকের কষ্ট আড়াল করে মধুর হাসি হাসো।
তবে কিছু না! শুধু ক্ষমা চাইবে জোর হাতে,
পাহাড় সমান ঘৃনার কাজ করিয়াছো যাহার সাথে।
চাও ক্ষমা, নিজের ভুল শুধরে নাও চিরতরে,
বন্ধু হয়ে পাশে দাড়াও সরিয়াছিলে যেমন করে।
যদি ক্ষমা না চাও….
তবে কষ্টের পাহাড় দ্বিগুণ হয়ে ভাঙ্গবে এই মন,
পাহাড় সমান আত্ব ঘৃনা বইবে আজীবন। ‘
~ মেহেদী হাসান
°
পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিল সে কক্ষে। আকস্মিক শোনা গেল,
” মা! ”
পিছু ঘুরে তাকালো প্রতিটি মানুষ। মুয়ীয দাঁড়িয়ে দরজায়। মুয়ীয হতে দৃষ্টি ওর বাম পাশে স্থানান্তরিত হতেই বিস্ময়ে বিহ্বল হলো সকলে! কেননা……
চলবে।