তোমাতেই বসবাস পর্ব-০৪

0
197

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৪

(নির এর নাম পরিবর্তন করে নীড় দেওয়া হয়েছে)
দুই দিন পরে “শান্তি নীড়ে” নিয়ে আসা হলো আদ্রিতাকে।বাড়িতে আসতেই আদ্রিতার দুই মামি মামা খালারা সাদরে বরণ করে নিলো নিজের আদরের ছোট পরিকে।খালাদের দিকে তাকাতেই চোখ জোড়ায় পানি চলে এলো আদ্রিতার। মনে পড়ে গেলো মায়ের বলা কটু কথা।দুশ্চরিৎা শব্দটা কানে বাজতে লাগলো।মাথার যন্ত্রণা বাড়তে নিলেই পিছন থেকে পুরুষালী গম্ভির কন্ঠ কানে এলো।

—এখানে কারো এতো শক্তি হয়নি আশি কেজির আটার বস্তাকে কোলে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করবে৷ আটার বস্তাকে নিজেকেই যেতে হবে।

নীড়ের কথায় সবাই হেসে উঠলো।আদ্রিতা গাল ফুলাতেই তার দুই মামি দুই দিক থেকে এসে জড়িয়ে নিলেন

—মার দিবো আর একবার যদি আমাদের সোনা মাকে মোটা বলেছিস তো দেখে তো মনে হয় খাওয়া দাওয়াই করেনা।

ওদের কথা শুনে নীড় ভেংচি কেটে বলে উঠে
—হ্যা খাই না তাতেই এমন খাইলে না জানি কতোটা হতো।বুঝলা ওল্ড ম্যান তোমার বউমাদের জন্য এবার সব ঘরের দরজা আরো বড় করতে হবে কারণ ওতো ছোট দরজা দিতে তোমার আশি কেজির বস্তা ঢুকবেনা।

আদ্রি রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠে
—নানা জান তুমি তোমার নাতিকে বের করবা। রাক্ষস একটা নিজে তো দেখতে একটা দানব আর আমাকে বলে।

—হ্যা আমি দানব আর তুমি রাক্ষসী।
—আপনি জলহস্তী।
—তুমি জলহস্তীনি।
—আপনি একটা শয়তান
—তুমি শয়তানি।

আদ্রিতা এবার না পেরে রাগে চিল্লিয়ে উঠে।হলরুমে উপস্থিত সবাই হেসে উঠে।যা শুনে আদ্রিতা রেগে সেখান থেকে চলে যায় উপরের দিকে।আদ্রিতা যেতেই শামসুর রহমান নীড় এর কাধে হাত রাখে বলে উঠে

—ধন্যবাদ ইয়্যাং ম্যান।
—ধন্যবাদ কেনো ওল্ডম্যান?
—তোমার মতো আমিও তার চোখে পানি জমতে দেখেছিলাম তুমি যেভাবে ওর মাইন্ড ডাইভ্রাট করেছিলে তাতে ওই ভুলেই গেছিলো। এইভাবেই তাকে অতীত থেকে বেরিয়ে আনা লাগবে আর আমি জানি তুমি পারবে।
—আই উইল ট্রাই মাই লেভেল বেস্ট ওল্ড ম্যান।
—আই ট্রাস্ট ইউ মাই বয়।

অন্ধকার রুমে বসে আছে নাহিদ খান সারা রুম জুড়ে আদ্রিতার ছবি।উনার বুকেও লেপ্টে আছে আদ্রিতার অষ্টম শ্রেনীতে পড়া সময়ের ছবি।কিছুক্ষন পড়েই রুমের দরজা খুলে প্রবেশ করেন মিসেস খান হাতে খাবারের ট্রে।

—আর কতোদিন এইভাবে রুমে বন্দি থাকবা তুমি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে কি অবস্থা করেছো নিজের ঔষধ ও ত খাচ্ছোনা।

—কি করে খাই বলতে পারো গলা দিয়ে একটা দানাও কিভাবে নামাই আমি। আমি আমার মেয়েকে চিনি রেনু। তার দুনিয়া আমি। সে আমি বলতে পাগল তাও জানি। যে মেয়েটার দিন দুনিয়া সম্পর্কে ধ্যান জ্ঞান নাই সেই মেয়েকে আমি বাহিরে একা ছেড়ে দিয়েছিলাম। যদি সেদিন বাবা(শামসুর রহমান) ঠিক সময়ে না পৌছাতেন তাহলে আমার মেয়েটার কি হতো রেনু তা ভাবতেই যে আমার অন্তরআত্না কেপে উঠছে।

রেনু হাসলেন এই হাসিতে ছিলো বেদনা।

—তুমি এইটুকুতে কষ্ট পাচ্ছো আর আমি। আমি মা হয়ে নিজের মেয়েকে মরে যেতে বলেছি।চরিত্রহীনা বলেছি।যে মেয়েটাকে নিজের গর্ভে দশমাস ধারণ করেছি।যার শরীরে একটা ফুলের টোকা অব্দি দেয় নাই সে মেয়েটাকে আমি নিজ হাতে আঘাত করেছি।

কথাগুলো বলতেই কান্না করে দিলেন মিসেস খান।নাহিদ খান ও আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না তিনিও নিজের প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন।

—আমাদের যে কিছুই করার ছিলোনা রেনু এই একটা উপায় ছাড়া নিজের মেয়েকে বাচানো সম্ভব ছিলোনা।আমাদের দেওয়া কষ্ট সে ভুলে যাবে ওই বাড়ির প্রতিটা মানুষ এর ছোয়াই আর সেখানে তো সেও আছে। সে আগলে রাখবে আমাদের মেয়েকে ।

—আসলেই কি আগলে রাখবে তুমি ত তার রাগ সম্পর্কে অবগত।সে যদি কোন ভাবে টের পায় তাকে দেওয়া কথা ভেংগে আমরা আদ্রিতার বিয়ে অন্যজায়গায় ঠিক করেছি।

নাহিদ খান আৎকে উঠলেন। ভিতর ভিতর নতুন ভয়ে গ্রাস হলেন তিনি।এক হাতে প্রিয়তমাকে আরেক হাতে মেয়ের ছবি আকড়ে ধরলেন তিনি।

গোসল সেড়ে বেলকনিতে আসতেই আদ্রিতা অবাক হয়ে গেলো। ব্যালকনি জুড়ে হরেকরকমের ফুলের টব ঝুলানো। পাশেই একটা গামলাই নীলপদ্ম রাখা যা দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো আদ্রিতা এক এক করে সব গুলো দেখতে শুরু করলো।

—পছন্দ হয়েছে?

পাশ থেকে কারো আওয়াজ পেতেই চমকে উঠে। আওয়াজ অনুসরণ করে তাকাতেই চোখ ছানাবাড়া হয়ে যায় আদ্রিতার
—আ আপনি এখানে।

—হুম কেন আসতে পারিনা নাকি। এইটা তোমার নানী বাড়ি হলে আমার ও নানী বাড়ি ভুলে যাও কেন।

—হু হু জানি জানি।

—পছন্দ হয়েছে আদরপাখি?

আদ্রিতা হতবাক হয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো নীড় সেখানে নেই। তারমানে কি সে ভুল শুনলো কই তার কানে তো এখনো বাজছে “আদরপাখি” ডাকটা।

—আরে ধুর রাক্ষস রাজা আমাকে এইভাবে ডাকবে কেন। তিনবছর আগে তার রুমে ঢুকাই যে চিল্লানি দিয়েছিলো বাবাগো। ওর মুখে এই নরম কথা জীবনেও সম্ভব না হয়তো আমার ভ্রম ছিলো।

আদ্রি নিচে নামতেই আদ্রির নানী এগিয়ে আসলো নাতনির মাথায় সোহাগের হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের পাশে বসালো

—কি গো সতিন এই বুড়ি টাকে মনে পড়েনা।
—এই দেখো একদম চলে এসেছি তোমার কাছে।
—পাগলী টা। কি হাল করেছিস বুনি মায়াবী চোখ টাকে একদম কালো কালীর ঢের বানিয়ে দিয়েছিস।
—কিসের মায়া নানীজান এইসব চোখের মায়া টায়া কিছু হয়না বুঝলা।

নানী হাসলেই বুনির মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেলেন। আদ্রিতাকে দেখতে একদম উনার শাশুড়ীর মতোন। ওই হাসি ওই চঞ্চলতা হাসলে দুইজনার ই চোখ হেসে উঠে।তাই জন্যই আদ্রির নানাজান ও আদ্রিতাকে বেশি ভালোবাসে।

—সোনাবাচ্চা?

আদ্রিয়ানের ডাকে সবাই সেইদিকে তাকায়

—হুম ভাইয়ু বলো।
—আমি তোর সার্টিফিকেট দেখেছি তোর রেজাল্ট ভালো আর সাইন্সে যেহেতু ছিলি মেডিকেলে চান্স নিবি কারণ তোর ও তো নানাভাইয়ের মতোই সাইকোলজিস্ট হওয়ার ইচ্ছা ছিলো।কিন্তু তোর একটা ফাইলে দেখলাম তুই বাংলা ডিপার্টমেন্ট নিয়েছিস কিন্তু কেন?

আদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চোখের সামনে ভেসে উঠে রেজাল্টের পরের দিনের কথা
প্রতিবারের মতো সেইবার ও আদ্রিতা গোল্ডেন প্লাস পেয়েই পাস করেছিলো। কিন্তু লিনার রেজাল্ট প্রতিবারের মতোই এ মাইনাস পেয়েছিলো।যার কারণে দুই পরিক্ষার রেজাল্ট মিলিয়েও ভালো কিছু আসা করা যেতোনা।তবুও দুইজনেই মেডিকেলের জন্য প্রিপারেশান নিচ্ছিলো।মেডিকেল কলেজে আদ্রিতার চান্স হলেও লিনার টা হয়েছিলোনা। লিনা সেদিন কুমির কান্না করে সবার মন বদলে দিয়েছিলো তখন লিনার মা বলে উঠেন

—দেখ ভাইয়া একই পরিবারে দুই মেয়ে একজন ভালো কিছু পড়বে আরেকজন খারাপ এতে আমার মেয়েটা কষ্ট পাবে আদ্রিতাকে বলে ওকেও জেনারেল।সাবজেক্ট পড়তে বল এতে আমার মেয়ে কষ্ট পাবেনা।

সেদিন লিনার আম্মুর কথা সবাই মেনে নিয়েছিলো আদ্রিতাকেও তাদের পরিচিত এক কলেজে বাংলা ডিপার্টমেন্টে ভর্তি করায় দিয়েছিলো।আদ্রিতা চুপচাপ বোনের জন্য সব মেনে নিয়েছিলো কিন্তু সেই বোন তার পিছনে এইভাবে ছুড়ি চালান করবে সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।

আদ্রিয়ানের ডাকে অতীত থেকে বেরিয়ে আসে আদ্রি

—কি রে বাংলা নিয়েই পড়বি।

আদ্রির বলার আগেই সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে নীড় বলে উঠে
—নাহ কাল আমি ওকে নিয়ে আমাদের মেডিকেল ডিন এর কাছে যাবো তাদের সাথে কথা আমার আগেই বলে রাখা আছে।কাল তার মৌখিক কিছু পরিক্ষা হবে।আর সেটাতে উতীর্ন হলেই হয়ে যাবে।

—এতোসব কবে কখন করলি।
—হস্পিটালে থাকা অবস্থায় সব করে রেখেছি আমি।
—বাহ ভাই বাহ তুই তো সুপার ফার্স্ট।
—তোর মতো লেট লতিফ হলে তো হতোই কাজ।

শপিং মলের সামনে দাড়ায় আছে নীড় আদ্রিতা । নীড়ের পাশে গাল ফুলায়ে দাঁড়ায় আছে আদ্রিতা। একপ্রকার টানে হিচরেই নীড়ের সাথে সবাই পাঠায়েছে তাকে এখানে।আদ্রিতা মনে মনে বলে উঠলো
—বুঝিনা সব আমাকে এই রাক্ষস রাজার সাথে একা একা কেন পাঠায় বুঝিনা এদের কি আমার প্রতি মায়া দয়া নাই। নিষ্ঠুর বুড়িবুড়া।

চলবে?