#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পর্বঃ৬
নীড় গাড়ি থেকে বের হতেই তার চোখ পড়ে আদ্রিতার পিছনে একটা বিলাই দৌড়াচ্ছে আর সেটা দেখেই আদ্রিতা চিল্লাচিল্লি করছে একপ্রকার লাফাচ্ছে বলা চলে।নীড় রাগ করবে নাকি হাসবে ভেবে কুল পাচ্ছেনা কারন এই মহূর্তে আদ্রিতাকে দেখে কেউ বলবেনা সে বিশ বছরের কোন যুবতী মেয়ে বরং তাকে দেখে যেকেউ বলবে তেরো কিংবা চৌদ্দ বছরের এক বাচ্চা মেয়ে। নীড় দেখেই আদ্রীতা দৌড়ে তার পিছে দাঁড়ায় পড়ে তার শার্ট খামচে ধরে যেনো তার সামনে গুন্ডাদের দল আর তাদের ভয়ে আদ্রিতা নীড়ের পিছনে আশ্রয় নিয়েছে।এদিকে আদ্রিতার হালকা বড় নখের থাবাই নীড়ের পিঠে দেবে গেছে ইতিমধ্যে তবুও নীড়ের হেলদোল নেই মুখে ব্যাথার লেশ মাত্র আভাস ও নেই না আছে বিরক্তি।এতোক্ষন আদ্রিতার জন্য জন্ম নেওয়া সকল অভিমান অভিযোগ যেনো এক নিমিষেই পালায় গেলো বাতাসের সাথে।
—প্লিজ ওইটাকে সরান আমার ভয় করে।
—আজ অব্দি কাউকে দেখেছো বিলাই দেখে ভয় পাইতে সামনে আসো।
—নাহ নাহ হাচড় দিবে একবার দিয়েছিলো ডাক্তার আট আটটা ইঞ্জেকশান দিয়েছিলো জানেন আব্বু কতো না করলাম তাও দিলো।আপনি ওইটাকে সরান।
(আরো গভীর ভাবে নীড়ের শার্ট খামচে ধরে রাখে)
বিলাই এবার আদ্রিতার পায়ের সামনেই বসে পড়ে আদ্রিতা পায়ে নরম কিছুর আভাস পেতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় আর তাতেই তার জান পাখি উড়ে যায়। এক চিৎকারে নীড়ের কাধে।নীড় সহ আশেপাশের মানুষ ও হতদম্ভ হয়ে যায়। একটা মানুষ বিলাই দেখে যে জমের মতো ভয়ে পেতে পারে তা আদ্রিতা না দেখলে হয়তো কেউ বুঝতেই পারেনা।
নীড় আর কোন উপায় না পেয়ে কাধে নিয়ে গাড়ির রুফে বসায় দেয়।
—ওপেন ইউর আইস বিলাই নাই চলে গেছে।
আদ্রিতা এবার তাকায় দেখে সত্যি সত্যি বিলাই রাস্তার দিকে দৌড় দিয়েছে।এবার আশেপাশে তাকাতেই হচকচিয়ে যায় কারন প্রায় সবার চোখ তাদের দিকেই। এবার আদ্রিতার মাথায় আসে সে এতোক্ষন কি কি করেছে লজ্জাই নিজেই লাল হয়ে যায়
—ইশ কি কান্ডই না করলাম রাক্ষস রাজা নির্ঘাত ক্ষেপে বোম হয়ে আছে এবার আমার কল্লা হারানো থেকে যে কেউ বাচাতে পারবেনা তা আমি একশত শতাংশ নিশ্চিত। এই বেডা কখন বলে আমাকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবাবে।
(মনে মনে)
আদ্রিতা ভয়ে ভয়ে নীড়ের দিকে তাকাতেই তার চোখ আটকে যায় নীড়ের ধূসর বর্ণের চোখের দিকে।নীড়ের চোখ তখন ও তার দিকেই স্তব্ধ।আদ্রিতা নীড়ের দিকে ভালো করে খেয়াল করে আজ এই প্রথম।আদ্রিতা মনে মনে বলে উঠে
— দুধে আলতা লোকটি।যেনো বিদেশী আর হবেও না কেন বড় খালা আর খালু তারাও যে এমনই একদম নানুজানের মতো।অতিরিক্ত রোদের তাপে ফর্সা মুখটা কেমন লালচে হয়ে এসেছে যা তার সৌন্দর্য কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিচ্ছে কইগুন । লম্বাই হবে ৬ফুটের কাছাকাছিই বা তার চেয়ে এক দুই ইঞ্চি কম বেশি। গালে হালকা দাড়ি মনে হয় কিছুদিন আগেই কাটিয়েছে।থুতনির পাশে কেমন একটা কাটা দাগ।
আদ্রিতা এইসব ভাবতে ভাবতে কখন নীড়ের কাটাদাগের দিকে হাত বাড়ায় দেয় নিজেও টের পায়না। এদিকে নীড় নিজেও আদ্রিতার দিকে তাকাই থাকায় সেও টের পায়না। হঠাৎ দুইজনার ধ্যান ভাংগে রিয়াজের ডাকে।
—বনু এইনে তোর আইস্ক্রিম। এবার চল বাসায় যায় অনেক গরম
—মেহের কই?(নীড়)
—কই আর থাকবে শপিং করছে তার বান্ধবিদের সাথে।
—তো তুই ওকে রেখে চলে যাবি ইডিয়াট(রিয়াজের গালে থাপ্পড় দিয়ে)
—এটা কিন্তু ঠিক না আমি বড় হয়েছি তুমি এইভাবে সবার সামনে আমাকে হেরেস করতে পারোনা(কাদো কাদো হয়ে)
সাথে সাথেই নীড় আরেকটা থাপ্পড় বসায় দেয়।আদ্রিতা নিচে নেমে ভয়ে দাঁড়ায় পড়ে এতো বড় ভাইয়ের গায়ে যেমনে বিনা দোষে মারছে সে আজ অব্দি যা যা করসে তার জন্য না জানি কইটা মারে তাই আগেভাগেই দূরে সরে দাড়ায়েছে। এই জন্মে সে নীড়ের সাথে যাবেনা নাজানি এক পায়ে তাকে কইটা মারে।
—এবার কিন্তু আমি পুলিশ এর কাছে যাবো তোমার নামে হেরেসমেন্ট এর চার্জ লাগাবো।
সাথে সাথেই পরে আরেকটা থাপ্পর। রিয়াজ এবার আদ্রিতার পিছে যায়ে দাড়ায়ে আঙুল তুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীড় নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করে আগাতে নিলেই আদ্রিতা রিয়াজ দুইজনেই দেয় ভো দৌড়।সাথে সাথেই আদ্রিতা একটা ইটের সাথে বেজে পড়ে যেতে নিলেই নীড় দৌড়ে আসতে নেয় রিয়াজ ও হতদম্ভ হয়ে যায় ততোক্ষনে কেউ একজন আদ্রিতার হাত কেউ টেনে দাড় কড়িয়ে দেয়।আদ্রিতা পিছনে তাকিয়ে দেখে তখনকার শপিংমলে দেখা সে লোকটি।
—কি মেডাম যখন দেখি তখন ই হয় ধাক্কা খান নাহলে পড়ে যান এটা তো শপিং মল বাচ্চাদের পার্ক না।লাগেনি ত আপনার।
আদ্রিতা লজ্জিত ভাবে মাথা নিচু করে মাথা ঝুকাই।যা দেখে নীড়ের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।
সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে ততোক্ষনে রিয়াজ ছেলেটির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়
—ওর তরফ থেকে আমি সরি বলছি ভাইয়া। বাই দা ওয়ে আমি রিয়াজ চৌধুরী।
—হায় আমি আয়াজ। আয়াজ সুবহান শেখ।
—নাইস টু মিট ইউ এন্ড থ্যাংক ইউ অলসো।ওকে বাচানোর জন্য।
—উনার জন্য আজকের পর থেকে সবসময় আমি আছি (মনে মনে)ব্যাপার না ইটস মাই প্লেজার। আজ আসি।আর এইযে বিগ বেবি নিজের খেয়াল রাখবেন আশা করি এইভাবে পড়তে থাকলে ব্যাথা পাবেন সবসময় ত আমি থাকবোনা আপনার এই ভয় পাওয়া ফেস টা দেখার জন্য।
—চিন্তা করবেন না মিস্টার আয়াজ আমি আছি আপনাকে প্রয়োজন পড়বেনা।
—আজকেও ত ছিলেন মিস্টার নামটা ত আপনার জানা হলোনা। যায়হোক আজকেও তো ছিলেন তাও তো বাচাতে পারলেন না।
—পারিনি বা পারবোনা এমনটা নয় মিস্টার আয়াজ সে ব্যাথা পেলে ঔষধ লাগাবোও আমি দরকার পড়লে ব্যাথা দিবোও আমি।আর বাচাবোও আমি।তার ভয় তার হাসি তার কান্না তার নিচু মুখ সব আমার বিষয়।
—দেখা যাবে আব্বার দেখা হবে সি ইউ সুন।
কথাটা বলেই আয়াজ চলে গেলো। নির রেগে আদ্রিতার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো গাড়ির দিকে।আদ্রিতার হাতটা যেভাবে নীড় রেগে ধরে আছে তাতে আদ্রিতার মনে হচ্ছে তার হাড্ডি এই মহূর্তে ভেংগে গুড়িয়ে যাবে।
—আহ কি করছেন লাগছেত আমার (হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে)
নিড় আদ্রিতাকে নিয়ে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে পিছিনের সিটে একপ্রকার ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করে।কিছু দূর যেতেই গাড়ি থামিয়ে পিছনের সিটে যেয়ে বসে আদ্রিতাকে নিজের দিকে ঘুরায়।আদ্রিতার ব্যাথা হয়ে আসা হাতটা পুনরায় চেপে ধরায় আদ্রিতা পুনরায় কুকিয়ে উঠে
—ব্যাথা লাগে তাইনা। আমার ও ব্যাথা লাগে।কেন তুই ওর সামনে ভয় পাবি কেন তুই মাথা নিচু করবি বল আমাকে। তোর দ্বায়িত্ব আমার। তোর ব্যাথা তোর লজ্জা তোর হাসি তোর কান্না সব কিছুর দ্বায়িত্ব এই আমি বাদে আর কারো না কথাটা মাথায় গেথে রাখ। এই জীবনে আমি মরি বা বাচি আমার নিশ্বাস চলুক বা না চলুন আমার হাত পা সক্ষম থাক বা না থাক আমি এই দেশে থাকি বা জাহান্নামে তোর প্রতিটা নিশ্বাস শুধু আমার জন্য।
আদ্রিতা এবার রেগে যায়
—মানে কি আমার হাত ছাড়ুন। আমি মানুষ কোন পুতুল নয় যে সবার কথা শুনে চলবো আমাকে কি মনে হয় আপনার হ্যা আপনি যায় বলবেন তাই করতে আমি বাধ্য নয়।
—আলতাব তুই বাধ্য আর আমার কথার হেরফের হলে আমার চেয়ে ভয়ংকর কেউ হবেনা।
—আপনার চেয়ে ভয়ংকর আদৌও কেউ আছে।রাক্ষস রাজা একটা। সবার উপর আপনার হম্বিতম্বি চলবেনা আমার উপর তো একদম ই না।
নীড় কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোন বেজে উঠে।সে নাম্বার টা দেখে আদ্রিতাকে ছেড়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।মিনিট দুয়েক পরে গাড়িতে ঢুকতেই,,,,,
চলবে?