তোমাতেই বসবাস পর্ব-০৭

0
324

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকা_নওশিন আদ্রিতা
#পর্বঃ৭

নীড় গাড়ির ভীতরে ঢুকতেই দেখতে পাই আদ্রিতা গাড়িতে নেয়।কল আসায় বিনা গাড়ি লক করেই বেরিয়ে গেছিলো নীড়ের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে মন চাচ্ছে হয় আবিরকে মেরে ফেলতে।সব রাগ যায়ে কেন জানি তার আবিরের উপরেই তার পরছে।খালি সে কখনো আদ্রিতাকে নিজের সাথে জড়ায়নি বা কোন প্রকার অপমান করেনি সেজন্য তাকে কিছু বলেনি কারন কারো প্রতি ভালোবাসা না আসাটা তো দোষের কিছু নেই।সবাই সবাইকে ভালোবাসেনা। কিন্তু নীড় নিজের বেলাই তেমনটা হতে দিবেনা দরকার পড়লে জোড় করে হলেও নিজের কাছে আটকে রাখবে দরকার পড়লে হাত পা ভেংগে দিবে তাও নিজের কাছেই রাখবে।নীড় ফোন বের করে লোকেশান অন করতেই আদ্রিতার লোকেশান পেয়ে যায়।বাকা হেসে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যায় সেদিকে। কিছুদূর যেতেই চোখ পড়ে রিক্সাতে হালকা লাল আভার অর্না। যেহেতু বিকাল টাইম সেজন্য এই রাস্তাই তেমন কোন মানুষ না থাকাই নীড় গাড়ির স্প্রীড বারিয়ে রিক্সাটাকে অভার টেক করে হঠাৎ এমন হওয়াই রিস্কা আলা টাল সামলাতে না পেরে হঠাৎ ব্রেক কষতে যেয়ে আদ্রিতা সহ রিক্সাচালক সামনের দিকে ঝুকে পড়ে।

আদ্রিতা রেগে মেগে রিক্সা আলার পাওনা মিটিয়ে নিচে নেমে হাটা শুরু করে নীড় ও গাড়ি সাইড করে আদ্রিতাকে কাধে তুলে নেই।

—আরে কি করছেন নামান আমাকে এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছেনা আমি আপনার নামে মা,,,

মামলা বলতে যেয়ে থেমে যায় আদ্রিতা মনে পড়ে যায় রিয়াজের মামলা বলাই কতোগুলা থাপ্পড় খেতে হয়েছে।
আদ্রিতা ইচ্ছা মতো ঘুষি মারতে থাকে কিন্তু নীড়ে হেলদোল না দেখে থেমে যায়৷ একসময় গাড়িতে নামিয়ে দেয়।আদ্রিতাও গাল ফুলিয়ে বের হতে নিলেই নীড় বলে উঠে
—আবার যদি কোলে উঠার মন চায় তাহলে বের হতে পারো এমন নরম জিনিস কাধে নিতে আমার খারাপ লাগবেনা অবশ্যই।

নীড়ে কথা শুনে আদ্রিতা নাকমুখ কুচকে ফেলে

—ছি অসভ্য।
—সভ্য হলে আমাকে আর এই জন্মে বাবা ডাক শুনা লাগবেনা।
—এই আপনার মুখে লাগাম নেই
—নাহ।
—অসভ্য অসভ্য নাহ মুখে লাগাম আছে আর না কাজের।(মুখ ফুলিয়ে)

নীড় এবার আদ্রিতার দিকে ঝুকে যায় হঠাৎ এমন হওয়াই আদ্রিতা হচকচিয়ে উঠে
—তুম পাস হো ওর হাম হাদ মে রাহে
মাফ কিজিয়েগা জাননিসার
পেয়ার মে কয়ি ইতনা ভি সারিফ নেহি হতা (তুমি পাশে থাকো আর আমি নিজের লাগামে থাকি তো দুঃখিত প্রিয়তমা ভালোবাসায় কেউ এতোটাও ভদ্র হয়না)

নীড় আদ্রিতার মুখে ফু দিয়ে দূরে সরে আসে।আদ্রিতার কানে এখনো বাজছে নীড়ের স্লো ভয়েজের কথাগুলো। সে হিন্দি বুঝে এই লাইন টাও বহুবার অনলাইন জগতে দেখেছে।কিন্তু সরাসরি এই কথায় যে এতোটা নেশা থাকে তা সে জানতোনা।এই কথাটা তো সেও আওড়েছিলো বহুবার কিন্তু কই তার কথাতে কি আদৌ এই নেশা ছিলো কই তাহলে তো সেদিন আবিরের ও এমনই অনুভূতি হওয়ার কথা কিন্তু নাহ সেদিন তো আবির তার মতো গ্রাস হয়নি বরং তার ঝাঝালো কথায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলো ষড়োশী কন্যা।

****
এক সপ্তাহ পড়ে।আদ্রিতা চান্স পেয়েছে দা মেমোরিয়াল মেডিলেন কলেজে(তার নানার) মৌখিক পরিক্ষাই তার কথার দক্ষতা এবং আত্নবিশ্বাস দেখে প্রতিটি মানুষই মুগ্ধ হয়েছিলো।

ভার্সিটিতে প্রবেশ করতেই তার চোখ যায় তার বন্ধুমহলের দিকে।খুব কম সময়েই মানুষ গুলা তার বড্ড আপন হয়ে গেছে যেনো বহু দিনের চিনা তারা পাচজনের এই বন্ধু মহল তার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে সব গুলাই প্রানচ্ছল। সবার আগেই চোখ যায় তার রামিসার দিকে চশমা পড়া লম্বাটে মুখটার দিকে তাকাতেই তার একটাই কথা মাথায় আসে পারাক্ষু।মেয়েটা সারাদিন বই নিয়েই পড়ে থাকে যার জন্য কম ক্ষেপাই না তাকে সিয়াম আর রাদিব কিন্তু এই মেয়ে বই থেকে মুখ তুলবেই না। যেখানে অবসর সময়ে সবাই গল্প আর আড্ডা করতে ব্যাস্ত সেখানে সে বইয়ের পাতা উল্টাতে ব্যস্ত কিন্তু অদ্ভুত এক কারণে সে আদ্রিতাকে খুব ভালোবাসে। এই ভালোবাসার কারনটা কিছুতেই বুঝেনা আদ্রি।রামিসার থেকে চোখ সরাতেই তার চোখ যায় চাঁদনীর দিকে মহূর্তেই যেনো চোখ মুখে শান্তি শান্তি একটা ভাব অনুভব করে সে। চাদনী কে চিনে ৬দিন এর মতো। তবুও মেয়েটার কথা চালচলন সব ই যেনো তার মস্তিষ্কে একটা শান্তি তৈরি করে।
আদ্রিতাকে দেখেই চারজন হাত নাড়ায়।আদ্রিতাও খুশিমনে সেখানে যেয়ে দাঁড়ায়
রাদিব বলে উঠে

—কিরে হবু সাইক্রেক্টিস তুই কি এই জীবনে তাড়াতাড়ি আসতে পারবিনা।
—আরে আমি তো তাড়াতাড়িই আসতে চায়েছিলাম কিন্তু আমার বাড়িতে তিনটা হিটলার আছেনা আমাকে না খাইয়ে বের ই হতে দিবেনা সবচেয়ে বড় হিটলার ওই রাক্ষস রাজা জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে দিলো আজ ওর জন্য নানু কত গুলা বকা দিলো। আমি নাকি খাইনা পানি খাইনা রাত জাগে ফোন চালায়(গাল ফুলিয়ে)

—আহারে বেচারা আমার আদু বুড়িটা থাক কান্দে না ললিপপ কিনে দিবোনি।

চাদনীর কথায় সবাই কিটকিটিয়ে হেসে উঠে।আদ্রিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।
তখন ই পাশ থেকে সিয়াম বলে উঠে
— ওই দেখে দোস্ত তোর রাক্ষস রাজা আইসে। ওই কিছু গিলে খাক আর না খাক তোর রাক্ষস রাজাকে সব মেয়েই চোখ দিয়ে গিলে খাবে পাক্কা।

সিয়ামের কথায় সবাই ওইদিকে তাকায়।রামিসাও এবার বইয়ের মাঝখান থেকে চোখ মেলে নীড়ে দিকে চোখ দেয়।সাথে সাথেই তার চোখ ঘুরিয়ে নেই আদ্রিতার দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় চোখ মেলে ধরে বইয়ের পাতায়

এই দুনিয়ায় হয়তো সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো নিজের প্রিয় মানুষ টাকে অন্যের প্রিয় হতে দেখা।

আদ্রিতা নীড়ের দিকে তাকায় আসলেই নীড়কে আজ অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগছে।ব্লু শার্ট হোয়াইট পেন্ট হাতে একটা এপ্রোন শার্টের বোতামে সানগ্লাস গুজে রাখে।ডান হাতে ব্রেন্ডেড ওয়াচ। সবমিলিয়ে যেকোন মেয়েই তার দিকে তাকাতে বাধ্য হবে।হঠাৎ করেই পাশ থেকে চাদনী আদ্রিতাকে খোচা মারে

—ব্যাপার কি রে আদুভাই(আদ্রিতা) তুই আর তোর রাক্ষস রাজা কি আজ টুইনিং করে ড্রেস আপ করে এসেছিস নাকি।

চাদনীর কথায় আদ্রিতা একবার নিজের দিকে তাকায় ত একবার নীড়ের দিকে আসলেই আদ্রিতাও আজ ব্লু লঙ গাউন সাদা লেডিস জিন্স সাদা হিজাব পড়ে এসেছে।

—কিন্তু বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তো উনি ব্লাক পড়েছিলেন রোজদিনের মত হঠাৎ করে ব্লাক ব্লু হয়ে গেলো কি করে।

সাথে সাথেই সিয়াম আদ্রিতার মাথায় টোকা দেয়
—তুই আসলেই একটা মাথা মোটা তোর চেয়ে বেশি তো এখনকার ক্লাস সিক্সের মেয়ের মাথার বুদ্ধি। যা রামিসার মতো বই নিয়ে বসে থাক।

আদ্রিতা রেগে সিয়াম কে তাড়া করতে শুরু করে। রামিসাও বয় বন্ধ করে তাদের দুষ্টুমি দেখে হেসে উঠে। আর সে হাসির দিকেই মুগ্ধ হয়ে তাকায়ে থাকে রাদিব। প্রথম দিন থেকেই এই মেয়েটার প্রতি অদ্ভুত টান অনুভব করে তারা একে অপরকে চিনে দীর্ঘ ছয় বছর শুধু সে আর রামিসাই না বরং চাঁদনী আর সিয়াম ও ৬বছরের মতোই পরিচিত। রাদিব দেখতে কম সুন্দর না নীড়ের পড়ে যদি কলেজের কেউ ক্রাশ বয় হয় তাহলে সেটা নিসন্দেহে রাদিব এমনকি সিনিয়র আপুরাও রাদিবের সাথে ফ্লার্ট করতে ছাড়েনা রাদিব ও তাদের সাথে তাল মিলায় কিন্তু এই ফ্লার্টবাজ রাদিব ও যে এক পারাক্ষু চাশমিশের জন্য পাগল সে খোজ কি আদৌ কারো আছে।

*****
খান বাড়িতে একপ্রকার শোকের ছায়াই নেমে এসেছে বলা যায়। কিছুক্ষন আগেই স্লিপ খাওয়ার জন্য লিনার বাচ্চা পেটেই মারা যায়।সবার মুখেই কষ্টের ছাপ স্পষ্ট কিন্তু লিনার চোখ মুখে স্পষ্ট রাগ।
—আমি জানি এইসব তোরই বদদোয়ার জন্য হয়েছে আদ্রিতা।আমি ছাড়বোনা তোকে তোকে তোর কাজের শাস্তি যদি না দিয়েছি আমিও লিনা নয়।তোর জন্য আমি আমার বাচ্চাকে হারালাম তুই ও তোর জীবনে সব হারাবি যেইটুকু অবশিষ্ট আছে তাও হারাবি।আমি লিনা বেচে থাকতে তোর সুখ স্থায়ী হবেনা।(মনে মনে)

হঠাৎ করে আদ্রিতা বিষম খেতেই চাঁদনী আদ্রিতার দিকে পানি এগিয়ে দেয়
—কিরে আদুভাই কে গালি দিতাসে তোরে
—কে আর দিবে দেখ ওই রাক্ষস রাজাই কিছু একটা নিয়ে বকছে মনে হয়।কাজ কি আর তার পারে তো শুধু একটাই আমা,,,,,,
আর কিছু বলার আগেই জ্বিহবাই কামড় দেয় তাকে এইভাবে দেখে চাদনী সামনে তাকাতে সেও ঢোক গিলে,,,,

চলবে?