তোমাতেই বসবাস পর্ব-১২

0
183

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকা_নওশিন_আদ্রিতা
#পর্ব_১২

আদ্রি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।কি বলবে করবে কিছুই মাথায় আসছেনা।
—এই বিয়ে সম্পর্কে সবাই জানে।
—ভাইয়ারা বাদে সবাই জানে।
—ভাইয়ারা জানেনা কেন?
—কারন তখন কেউই এখানে ছিলোনা সবাই তাদের নিজ নিজ বাসাতেই ছিলো। আর নীড় ভাইয়া কিছু কাজে দেশের বাহিরে গেছিলো।
—দারুন। যা ফ্রেশ হয়ে ঘুমা আমি দেখি কি করতে পারি।
—নাহ কিছু করা লাগবেনা ওই লোক যেহেতু আমাকে চায়না সেজন্য আমিও তাকে চায়না। ডিভোর্স দিয়ে হয়ত সে মেয়েটাকেই বিয়ে করতে চায়।আমি ততোদিনে পুরাতন হয়ে গেছিলাম আবেগ কেটে গেছিলো হয়তো তার।

আদ্রিতা সাথে সাথেই আরও একটা থাপ্পর দেয়
—আরে আজব কথায় কথায় মারিস কেন লাগে ত(কাদো কাদো হয়ে)
—সামনে থেকে সর নাহলে আরও খাবি একে এতোবড় কথা জানাইনি আবার আসেছে বড় বড় কথা বলতে।যা সর।

নওমি গালে হাত দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।সে যেতেই আদ্রিতা ভাবতে লাগে।
—সব গল্পের দুই সাইড থাকে একটা সাইড ত জানা গেলো এখন ভাইয়ার সাইড ও জানা উচিত কারন ভাইয়া তো চিট করার মতো ছেলেনা। আর যদি কাউকে ভালোবাসতো তাহলে এতোদিন হলো আমি আসলাম কই ভাইয়াকে তো কোন মেয়ের আশেপাশেও দেখিনি।ওই রাক্ষস রাজার কাছেই সব উত্তর আছে বেডার (ছেলে)চার চোখ না দশ বিশ চোখ তার চোখে আবার ফাকি দেওয়াও সম্ভব না। যায়।

আদ্রিতা দৌড় লাগায় নীড়ের রুমে। আর সে দৃশ্য দেখে ফেলে লিনা। লিনার ঠোঁটে সাথে সাথে হাসি চওড়া হয়।
—একবার তো ফেক ভিডিওর জন্য তেমন কিছু করতে পারিনি বাট এবার ত দেখছি লাইভ দেখতে পাবো।(শয়তানি হাসি দিয়ে)

আদ্রিতা নীড়ের রুমে প্রবেশ করতেই অবাক হয় নীড় পুরা রুম অন্ধকার করে রেখে দিয়েছে।
—আরে এ কোন ভুতের ঘরে প্রবেশ করলাম লাইট কই সুইচ কই কিছুইত খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা ধুরু।

আদ্রিতার বিড়বিড় এর মাঝেই কোমড়ে ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই সিউরে উঠে তার লোমকুপ।ঘাড়ের কাছে গরম নিশ্বাসের প্রকটও হয়ে উঠে তীব্র। আদ্রিতা মহূর্তে জমে যায় সেখানেই। হঠাৎ ঘাড়ে নরম ঠোঁটের ছোয়া পেতেই কেপে উঠে তার শিরদাঁড়া। নীড় আসতে আসতে নিজের আঙুল আদ্রিতার হাত থেকে তুলে ঘাড়ে নিয়ে আসে স্লাইড করতে করতে।ঠোঁট যেয়ে আদ্রিতার ঠোঁটের দিকে এগুতে নিলেই আদ্রিতা নিজের শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দেয়।হঠাৎ এমন হওয়াই চোখ মেলে তাকায় নীড়।আদ্রিতাও ততোক্ষনে সুইচ অন করে লাইট জ্বালিয়ে দেয়।আর সাথে সাথেই চোখ পড়ে আদ্রিতার নীড়ের চোখের দিকে।আর তাতেই তার বুকের মাঝে ছ্যাত করে উঠে।নীড়ের ধূসর বর্ণের চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে।

—আপনার চোখ।

কথাটা বলেই নীড়ের কাছে এগিয়ে আসে। নীড় বাকা হাসে
— সামান্য ব্যাথায়া জান যায়না
তোমার অবহেলাই মৃত্যু এসে দরজাই দাঁড়ায়
সব ব্যাথা হাসি মুখেই গিলা যায়
কিন্তু তোমার চোখ অন্যকারো দিকে তাকালে
বুকটা জ্বলে উঠে।
যার বাস আমার হৃদয়ে
সে তুমিটার টার চোখেই,,,,, ,,

নীড় আর কিছু না বলে আদ্রিতাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে এসে তার হাত নিজের বুকের বামপাশে এনে রাখে। চূলের ভাজে নাক ডুবিয়ে বলে উঠে

— বুঝলে আদর পাখি এই জায়গায় যে থাকে সে বড্ড খারাপ এতো সুন্দর স্থানে দিয়েছি তাকে বাস৷ কিন্তু সে তার বাসস্থানেই আঘাত করে।বুঝতেই চায়না এই জায়গায় দারুন যন্ত্রণা হয় যখন তাকে দেখি অন্যের দিকে ভালোবাসা মিশ্রিত চোখ তাকাতে কি করবো বলো মানুষ টা আমি বড্ড খারাপ নিজের জিনিস আর মানুষ দুইটাই আগলে রাখি আরা তারা হাত ফসকাতে নিলে হাত ও আকড়ে রাখি।
দরকার পড়লে হিংস্র হবো
ভয়ানক পশু হবো
তার ঘৃনার কাতারে নামবো
শিকলে বাধবো
পিঞ্জিরায় বন্ধ করবো
তবুও তাকে কারো কাছে যাওয়ার
অনুমতি দিবোনা।
আমি মরলে তাকে নিয়েই মরবো,,,,

কথাটা বলেই আদ্রির ঘাড়ে চুমু খাই নীড়।এদিকে আদ্রিতা নীড়ে কন্ঠে কষ্ট বুঝতে পারছে স্পষ্ট তখন আরচোখে আবিরের চুপচাপ হয়ে থাকা নিস্তেজ মুখটা দেখে তার খারাপ লাগছিলো সেজন্যই বারবার লুকিয়ে তাকেই দেখচ্ছিলো।হাজার হোক ছোট থেকে বড় হয়েছে এক সাথে মাঝে কই বছর ভুল দিকেই পা বারিয়েছলো। কিন্তু তবুও আর সেটাই যে নীড় দেখে এমন করছে তা বেশ বুঝতে পারছে আদ্রিতা।আনমনেই প্রশ্ন করে উঠে

—ভালোবাসেন আমাকে??
—সব কিছুই কি মুখে বলতে লাগে আদরপাখি বুঝোনা তুমি নাকি বুঝতে চাওনা। নাকি চিল্লিয়ে পুরো শহরের জানাবো।
—জানান পুরো শহরকে।
—ভেবে বলছো ত,,
—জানিনা।(আনমনেই বলে উঠে কথা গুলো আদ্রিতা)

নীড় হাসলো আলতো করে। সে নীড়ের হাসিটা দেখলোনা কিন্তু তার গলাই এখনো নীড়ের মুখ লেগে থাকার কারনে ঠিকই বুঝলো নীড়ের ঠোঁট প্রসারিত হয়েছে।

—দূরে সরুন আমার কথা আছে।
—কেন এইভাবে বললে কি হবে?
—আমার কেমন কেমন লাগছে সরেন না প্লিজ..
—বিয়ে করবা আদরপাখি।
—হুম করবো চলেন,,
—সত্যি?
—মিথ্যা বলবো কেন চলেন ডাকেন আপনার বাবা মাকে বলেন আমার কথা আমার বিয়ে ভাংগার কথা বিয়ের দিনের ঘটনা।
—কি বুঝাতে চাও??
—অনেক কিছু যা আপনি বুঝেও বুঝতে চাচ্ছেন না।

নীড় আদ্রিতার থেকে দূরে সরে আসে কথাটা তার পছন্দ হয়নি কিন্তু আদ্রিতা অন্যকিছু ভেবে নিলো আর তাতেই কেনো যেনো তার কষ্ট হতে শুরু করলো
—কেউ আমাকে ভালোবাসেনা। বাবা মাকে বলার কথাতেই দূরে সরে গেলো।সে নাকি শহরে এলান করবে।(মনে মনে)

—কেন এসেছিলে??
—ওহ হ্যা আমি নওমি আর ভাইয়ার কথা বলতে এসেছিলাম
—কেনো ওদের আবার কি হলো?(ভ্রু কুচকে)

আদ্রিতা নীড়কে সব বলে দিলো। সব শুনেও নীড়ের ফেস স্বাভাবিক দেখে শিউর হলো নীড় আগে থেকেই সব জানতো আর হলোও তাই
—আপনি সব জানতেন তাইনা?
—হুম না জানার কি আছে এখান থেকে য্দি আমি খান আর চৌধুরী বাড়ির খোজ রাখতে পারি তাহলে যেখানে থাকি সেখানে খোজ পাওয়া আমার কাছে খুব কঠিন ব্যাপার না।
—তাহলে কিছু করুন
—কেন আমি করবো আমি কি ওদের বিয়ে দিয়েছি। দেয়নি আমাকে জানানোও হয়নি সেখাবে এখন তারা ডিভোর্স নিবে তাতে আমি কি করবো বিয়ে করেছে তারা ডিভোর্স নিবে তারা। (আরাম করে সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়)
—আপনি আসলেই একটা রাক্ষস রাজা।
—কেন তুলে নিয়ে তোমাকে খায়ে ফেলেছি নাকি।তোমাকে ত কোনদিন কামড় ও দিলাম না একটু কিস করতেই রাক্ষস। আর যখন,,,,
—আপনি আসলেই একটা বেসরম।
—লজ্জা করলে আমার আর বাচ্চা কাচ্চাদের মুখ দেখতে হবেনা। তাই এইসব লজ্জার ভং ধরে লাভ নাই।
—কলেজে ত বহুত এটিটিউড নিয়ে চলেন তাহলে এখানে এমন করেন কেন
—নিজেকে সবার সাথে মিলাও কেন?
—কেন আমি বাকীদের মতো না।
—কচু গাছের সাথে গলাই দড়ি দেওয়া আর তোমার সাথে কথা বলা এক। বের হও।
(বিরক্তি নিয়ে)
—আরে রাগেন কেন।
—নাহ তোমাকে কোলে নিয়ে নাচবো আসো।(রেগে)
—শুনেন না।
—থাপ্পড় দিবো নাটক করলে।
—এইভাবে বলতে পারলেন শুনেন না প্লিজ(আদুরে কন্ঠে)।

নীড় আর কি করবে এইভাবে যদি প্রিয়সীর মুখের সামনে আদুরে করে ডাকে তাহলে কি আর রাগ বিরক্তি ধরে রাখা যায়।
—কি চায়?
—ভাইয়া আর নওমির?
—করবো শর্ত আছে।
—কি শর্ত(চোখ ছোট ছোট করে)
—গালে একটা কিস করতে হবে।
—জীবনেও না।(আতকে উঠে)
—তাহলে ভুলে যাও। (হামি তুলতে তুলতে)
—এই এই এমন করেন কেন।
—কেমন করি?
—এতোটা নির্দয় হয়েন না।
—তুমি প্রতি নিয়ত আমার সাথে নির্দয়ের মতো আচরণ করো তখন ত আমি বলিনা আর সামান্য কিস চাওয়াই নির্দয় বানায় দিলা বাহ। বাটপার সব।
—আপনি ভালোনা।
—বের হও নাহয় কিস দেও যখন দিবা তখন কাজ করে দিবো এখন যাও এককাপ কফি করে নিয়ে আসো।
—আমাকে কি চাকর মনে হয়।
—নাহ বউ মনে হয় যাও। নাহলে ভুলে যাও হ্যাল্প এর কথা।
—ধ্যাত(ফ্লোরে পা বারি দিয়ে)

আদ্রিতা যেতেই নীড় বিছানাই শুয়ে পড়লো চোখ বন্ধ করে।বুকটা কেমন ভারি ভারি লাগছে মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলছে।
—চায়না আদর পাখি আবার ঝড় আসুক।এতো ঝড় ঝাপটা পার করার মতো শক্তি এখনো তোমার হয়নি।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

চলবে?