তোমাতেই বসবাস পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0
397

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকা_নওশিন_আদ্রিতা
#পর্ব_১৯

সকালের আলো ফুটতেই চোখ মেলে তাকায় আদ্রিতা নিজেকে নিজের বেডরুমে দেখে একদম অবাক হয়না বরং নিজেকে নীড়ের বুকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
কিন্তু তবুও একদম নড়া চড়া না করে চুপচাপ নীড়ের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে।হঠাৎ কি মনে করে নীড়ের ঘাড়ে হালকা করে কামড় বসিয়ে দেয় এমন ভাবে বসায় যেনো দাগ হয়ে যায় কিছুক্ষন সে ভাবে রেখে মুখ সরিয়ে পুনরায় বুকে মাথা রাখে। যে বুকের মালিক তাকে খন্ড বিখন্ড করেছে সে বুকেই তার শান্তি তার অস্থিরতার ঔষধ। এই বুকের মাঝে চলা একেকটা শব্দ তার কানে ঔষধ এর মতো শ্রবন হয়। নীড় হালকা নড়ে উঠতেই আদ্রিতা পুনরায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।নীড় ঘুম থেকে উঠে নিজের বুকে আদ্রিতাকে দেখে খুশি হয় এইভেবে যে আদ্রিতা এখনো উঠেনি আদ্রিতার কপালে ঠোঁট ছুয়ে উঠেপরে।জরুরি কাজের জন্য আজকেই তার অফিসে যেতে হবে কিন্তু অভিমানি বউকে রেখে যেতেও তার মন সায় দিচ্ছেনা আবার ভাবে যদি সামনা সামনি থাকে তখন রেগে মাথা টাথা না ফাটিয়ে ফেলে সে ভেবে চলে যাওয়াই ভালো।

নীড় যেতেই চোখ মেলে তাকায় আদ্রি কপালে হাত স্পর্শ করে ঠোঁট ছুয়াই।
—কেন করেছিলে এমন নীড় তা না করলে আজকের সকাল টা অন্যরকম হতো এভাবে লুকিয়ে তোমার স্পর্শ গুলা পেতে হতোনা আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো খুব ভালোবাসো সেটা আমি সেদিন ই টের পেয়েছিলাম কিন্তু তুমি কি করলে নীড় দূরে সরিয়ে দিলে একটাবার ভাবলেনা আমার কথা আমার রাত দিন কিভাবে কাটবে।তুমি নিষ্ঠুর হয়েছিলে নীড় তুমি নিজের ভালোবাসা পেতে নিষ্ঠুর হয়েছিলে আর সে নিষ্ঠুরতা দূর করতে এবার আমি নিষ্ঠুর হবো। ভালোবাসার মানুষ দূরে সরে গেলে ঠিক কতোটা কষ্ট হয় আজ তুমি বুঝবে নীড়।(নিজের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু কোণা মুছে)

আদ্রিতা উঠে বসতেই দেখে নীড় গোসল সেরে বেরিয়ে এসেছে। আদ্রিতা আলতো হেসে নীড়ের দিকে এগিয়ে যায় নীড় তো অবাক।নীড়কে আরও অবাক করে দিয়ে আদ্রিতা নীড়ের শার্টের কলার আর হাতা ফোল্ড করে দিয়ে ঘামছা দিয়ে নীড়ের চুল মুছে দিতে থাকে নীড় ভাবে আদ্রিতা হয়ত ভুলে গেছে সব ঠিক সেই মহূর্তে নীড় আলতো হাতে আদ্রিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে তার চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয় সাথে সাথে আদ্রিতা ধাক্কা দিয়ে নীড়কে দূরে সরিয়ে দেয়। হঠাৎ এমন হওয়াই অবাক হয়ে যায় নীড়। যে মুখে এতোক্ষন আলতো হাসি ফুটে ছিলো সে মুখ পুনরায় গম্ভীর হতে দেখে নীড় বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

—আমাকে স্পর্শ করার ভুল ভুলেও করবেন না।

রাগ মিশ্রীত কন্ঠে কথাটা বলেই ওয়াসরুমে ঢুকে যায় আদ্রিতা ফ্রেশ হতে এদিকে নীড় হতদম্ভ হলো কি তার সাথে

— এইতো ভালোবেসে কাছে টেনে নিলো নিজেই তো আসলো আমি কি করলাম। (ঠোঁট উলটে)

হঠাৎ নীড়ের মনে পড়ে আদ্রির বলা কাল রাতের কথা গুলো

” আমি আপনাকে বিয়ে করেছি ঠিক আছে কিন্তু সংসার করতে না। কাছে টেনেও কিভাবে দূরে সরাতে হয় আর সেয় অনুভূতি কতোটা জঘন্য হয় সেটা বুঝাতে তিলে তিলে নিজের কষ্ট বুঝবেন আপনি আর আমি নিজ দ্বায়িত্ব নিয়ে সেটা বুঝাবো আই প্রমিজ আর খান রা কখনোই তার প্রমিজ ভাংগে না”

নীড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে টাই বেধে কোট নিয়ে নিচে নেমে যায়।আদ্রিতাও শাওয়ার শেষ করে নিচে নেমে আসে আজ আদ্রিতা শাড়ি পরেছে।হাজার হোক বিয়ের প্রথম দিন তাদের মধ্যে কি চলছে সেটা তো সে পরিবারকে জানাতে দিতে চায়না এইটা তার আর নীড়ের বিষয় বিবাহিত জীবনে থার্ড পার্সন আনার ব্যাপারটা তার মৌটেও পছন্দ না।নিচে নামতেই দেখে নীড় মাথা নিচু করে বসে আছে আর আদ্রিয়ান আদ্রফ ভাইয়া রিয়াজ তাকে কি জেনো বলে খুচাচ্ছে।একটু নামতেই দেখে নীড়ের কান লাল নীড়ের কান হয় রাগ করলে লাল হয় নাহলে লজ্জা পেলে রাগ করার কোন বিষয় তো হওয়ার কথা না।পরে আদ্রির মনে পরে কামড়ের কথা এদিকে আদ্রিতাকে ভিজা চুলে নিচে নামতে দেখে তাদের হাসাহাসি বেরে যায় দ্বিগুন এদিকে আদ্রিকে এই অবস্থায় দেখে নীড়ের তো গলায় খাবার আটকে যাওয়ার উপক্রম মেরুন শাড়ি সাথে কালো ঘণ চুল ছাড়া নীড়ের অবাধ্য মনে আবার এক অবাধ্য ইচ্ছা জাগে বউ এর এই ভিজা চুলে মুখ ডুবিয়ে দেওয়ার।

—এইসব ঠিক করছোনা বউ। এইভাবে জ্বালানো কি আদৌ ঠিক হচ্ছে। একে তো দূরে দূরে থাকছো তার উপরে এমন ঘায়েল করে দেওয়া আদা এমন রুপ কিভাবে কন্ট্রোলে থাকবে এই প্রেমিক পুরুষ কেন যে সেদিন যোগাযোগ বন্ধ করতে গেলাম এইজন্য মানুষ বলে মস্তিষ্কের কথা শুনতে নেয়।এতো সুন্দরী বউ থাকতেও সন্যাসীদের মতো থাকা লাগছে।এইটা কি প্রেমিক সমাজ মেনে নিবে। Shame on you Nir ছিঃ।(বিরবির করে)

—কি নতুন জামাই কি বিরবির করো বউ কে দেখে বুঝি আবার রুমে যেতে মন চায় এমন আরও দুই চারটা কামড় খেতে।

আদ্রিয়ানের কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠে।
—আমি নতুন জামাই হলে কি হবে চান্দু তুমিও কোন পুরাতন নও। ওইযে তোমার বউ আসছে।

নীড়ের কথায় আদ্রিয়ান ও উপরে তাকায় সাথে সাথে তার হিচকি উঠে যায়। পানি খেয়েও যেনো হিচকি থামার নাম গন্ধ নাই।ফর্সা শরীরে গোলাপি রঙটা যেনো একদম মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ভিজা চুলের ফোটা ফোটা পানি অসম্ভব মায়াবতী লাগছে নওমিকে।

—কি চান্দু তোমার ও কি রুমে যেতে মন চায়।
—চুপ তোর বোন হয়।
—তো আদর পাখি কি তোর ভাবি হয়।(চোখ ছোট ছোট করে)
—ভুল হইসে আমার ক্ষমা করে দেন।(হাত জোড় করে)
—পা ধর তারপর ভাবে দেখবো।
—তোর পায়ে গন্ধ যা সর।

*****
দেখতে দেখতে কেটে গেলো তিনটা মাস। তিনমাসে বদলে গেলো সব কিছু নীড়ের ভালোবাসা বেরে গেলো যেনো আরও দ্বিগুন চায়েও আদ্রিতা নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলোনা আর নীড় ও দিলোনা নিজের আদর পাখিকে রেগে থাকতে।আজ বাড়ির সবাই গেছে নিজের গ্রামের বাসায় সেখান থেকেই তাদের পারিবারিক এতিম খানায় যাবে।নীড়ের অফিসে কাজ থাকায় সে কাল যাবে বলে জানায়। এদিকে আদ্রিতাও নীড়ের কথা ভেবে থেকে যায়। সবাই তাদের কিছুটা কোয়ালিটি টাইম দিতেই আর জোড় করেনা। এদিকে আদ্রি যে বাড়িতে থাকবে নীড়ের তা ধারণা ছিলোনা। সে নিজের মনে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে এসেই সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়। হঠাৎ চোখ যায় সিড়ির দিকে মোমবাতি আর ফুল দিয়ে পুরো সিড়ি ভরে আছে। নীড় অবাক হয় পরক্ষনেই আবার ছুটে যায় রুমে আর ঢুকতেই সে যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায় নিজের স্ত্রীকে পুনরায় বউ সেজে খাটের উপর দেখে। নীড়ের আর বুঝতে বাকি থাকেনা আদ্রিতা তাকে মাফ করেছে একপ্রকার ছুটে যেয়ে জড়িয়ে ধরে আদ্রিকে আদ্রিতার সারা মুখে চুমু খেয়ে বলে উঠে

—ভালোবাসি আদর পাখি নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি।আমার মন হৃদয় সব জায়গায় শুধু তোমার বসবাস। তোমার জন্য সব ছাড়তে রাজি কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমি শূন্য। তুমি আমার পুরো দুনিয়া তুমি থমকে দাড়ালে আমি থমকে যায়।
আমাকে ছেড়ে যেও না #তোমাতেই_বসবাস আমার।

—আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি আমার নীড়। আমার একান্ত ব্যাক্তিগত নীড় যেখান থেকে আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেয়। আমি যতোই উচুতে উড়ি না কেন আমার শেষ ঠিকানা আপনি #আপনাতেই_বসবাস আমার ।

এতো বছর পরে পেলো নীড়ের ভালোবাসা পূর্ন্যতা। আদ্রিতার অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো তাকে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসার মতো মানুষ এলো।যে সব কিছির বিনিয়মে তাকে আগলে রাখবে। বেচে থাকুক ভালোবাসা বেচে থাকুক তাদের সব সৃতি তাদের পথ চলা হোক অসীম।

সমাপ্তি!!!