তোমাতেই রহিব বিলীন পর্ব-০২

0
1402

#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_২
#নিশাত_জাহান_নিশি

উনার গাঁ জ্বলা মুখভঙ্গি এবং বেহুদা প্রশ্নের কোনো রূপ প্রতিত্তুর না করে আমি রাগে গজগজ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিস্তার হাত ধরে দ্রুত পায়ে দু তলার ছাঁদের দিকে অগ্রসর হলাম।

ছাদের দরজাটা খুলেই আমি তিস্তার হাতটা ছেড়ে ধপাধপ পায়ে হেঁটে প্রখর রাগে রাগান্বিত হয়ে ছাদের ঠিক পশ্চিম প্রান্তের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালাম। রাগে, দুঃখে, অপার জেদে আমার গাঁ টা যেমন তুষের আগুনের মতোন জ্বলছে তেমনি মাথাটা নিদারুন যন্ত্রণায় কিলবিল করছে। হাত, পা কঁচলে আমি দাঁতে দাঁত চেঁপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলে ও রাগটা যেনো কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছি না। হা, এই জন্মে আমার নিজস্ব রাগটাকে আমি কন্ট্রোল করতে পারলাম না। যতক্ষণ না রাগের কারণটা আমার মন মতোন হচ্ছে কিছুতেই যেনো আমার রাগ কমবে না। রাগ নিবারণের জন্য আমি শক্ত রেলিংয়ের পিঠে আমার নরম হাত জোড়ায় অনবরত আঘাত করে চলছি। আঘাতের কোনো ব্যাথাই যেনো আমার হাতে লাগছে না। আমার এহেন অসহ্যকর অবস্থা দেখে তিস্তা আমার পাশে দাঁড়িয়ে নখ কাঁমড়ে সন্দিহান কন্ঠে বলল,,

“আমার কি মনে হয় জানিস প্রভা? “আহনাফ শেখ” সমস্ত গুপ্ত রহস্য জেনে গেছেন!”

আমি দাঁত চেঁপে হেয়ালী কন্ঠে বললাম,,

“সো হোয়াট? জেনেছে তো কি হয়েছে? ভয় পাই নাকি আমি ঐ চাশমিশটাকে? বেটা কানার হদ্দ! চার চোখ ছাড়া তো উনি চোখেখেখেই দেখেন না। সেই কানার হদ্দ নাকি এসেছে এই প্রভাকে বিয়ে করতে! প্রভা অর্থ জানে সে?”

তিস্তা অকস্মাৎ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,,

“তোর ই তো উডবি হাজবেন্ড প্রভা! বিশ্বাস কর, আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না, এই চাশমিশ আহনাফ শেখ নাকি তোর উডবি হাজবেন্ড! যাকে তুই কানার হদ্দ বলে ডাকছিস সেই ব্যক্তিটাই হলো তোর উডবি! হাউ ফানি ইয়ার। আমি না, জাস্ট আর হাসতে পারছি না!”

রাগে গজগজ করে আমি তিস্তার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,

“এই তুই যা, এক্ষনি আমার সামনে থেকে যা। তুই আমার ফ্রেন্ড নাকি শত্রু রে? কোথায় আমায় এসে একটু শান্তনা দিবি, তা না উল্টে আমাকে উসকাতে এসেছিস। তোর মতোন “দু মুখো” বান্ধুবীর কোনো প্রয়োজন নেই আমার। এর’চে ভালো আমি আজীবন “বান্ধুবীহীনা” থাকব! যেকোনো ডিসিশান নিতে নিজেই নিজেকে হেল্প করব, নিজেই নিজের সাথে কথা বলব, নিজেই নিজেকে বুদ্ধি দিবো। তোর হেল্প আমার চাই না। তুই হলি ছলনাময়ী!”

তিস্তা হাসির মাএা অধিক বাড়িয়ে বলল,,

“হয় হয়, এমন হয়। সত্যি কথা বললে এমনই হয়। আমি ছলনাময়ী, সেল্ফিস আরো কতো কি! অথচ দু মিনিট পরে সেই আমাকেই তোর প্রয়োজন পড়বে। তখন উঁচু গলায় বলতে পারবি তো আমি ছলনা ময়ী?”

রাগটা কিঞ্চিৎ হ্রাস করে আমি তিস্তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হাতের আংটির টার দিকে নজর দিলাম। ফট করে রাগটা যেনো হ্রাসের বদলে বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হতে আরম্ভ করল। আংটিটায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে আমি মাথায় জবরদস্ত একটা প্ল্যান এঁটে দাঁত কেলিয়ে হেসে তিস্তার দিকে চেয়ে বললাম,,

“আংটি টা যদি আমি হাত থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেই তাহলে নিশ্চয়ই পরিবারের সবাই খুব রেগে বিয়েটা ভেস্তে দিবেন বল তিস্তা? সবাই তখন বলবেন এত্তো এক্সপেন্সিভ একটা আংটি যে মেয়ে কেরি করতে পারে না, হাত থেকে পড়ে যায়, চূড়ান্ত কেয়ারফুল তার সাথে ভালো পরিবারের কোনো ছেলের বিয়ে হওয়া যায় না! ব্যাস, তাহলেই তো বিয়েটা ভেস্তে গেলো বল?”

তিস্তা বেকুব ভঙ্গিতে আমার দিকে চেয়ে আচমকা আমার মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,

“বুদ্ধি সুদ্ধি লোপ পেয়েছে নাকি তোর? আংটি একটা গেলে আরেকটা কেনা যাবে। সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে তারা বিয়ে ভেস্তে দিবে?”

গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে আমি তিস্তার চোখকে এড়িয়ে সুন্দর করে আঙ্গুল থেকে আংটি টা খুলে টুপ করে নিচে ছুড়ে মারলাম। আনন্দে বশীভূত হয়ে আমি দাঁত কেলিয়ে হেসে আপন মনে আওড়ে বললাম,,

“মিঃ চাশমিশ আহনাফ৷ দেখলেন তো? আপনার দেওয়া বিবাহ বন্ধনীকে কিভাবে আমি নিশ্চিহ্ন করে দিলাম? আস্তে ধীরে আপনাকে ও নিশ্চিহ্ন করে দিবো! আপনি আমার ফিউজ উড়াবেন বলছিলেন তাই না? এবার দেখুন, আমি কিভাবে আপনার ফিউজ উড়াই! আপনার পড়ানো আংটি আমি এই জন্মে হাতে পড়ব না। প্রয়োজনে আমার হাত খালি থাকতে। পরিবারের সবার গাল মন্দ ও আমি ঠিক হজম করে নিবো! তবু ও আপনার পড়ানো কোনো জিনিস আমি শরীরে বহন করব না। এর দ্বারা বিয়ে না ভাঙ্গুক অন্তত আপনার মন তো ভাঙ্গবে!”

ইতোমধ্যেই মনে হলো ছাঁদে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটল। কারো ধপধপ পায়ের শব্দ আমার কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। পিছু ফিরে তাকাতেই দেখলাম আহনাফ শেখ ফুল মোডে ফোনে স্ক্রলিং করতে করতে আমাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তিস্তা থরথর করে কেঁপে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,

“দোস্ত আমি পালাই। এই বদরাগী জিজুকে আমি ফেইস করতে পারব না দোস্ত। তুই তোর উডবিকে সামলা ভাই, আমি পালাই!”

তিস্তা ভৌঁ দৌঁড়ে প্রস্থান নিলো। কিছু বলার সুযোগ ই দিলো না আমায়। ভয়, ভীতি আমার মধ্যে কাজ করলে ও আমি যথেষ্ট শক্ত থাকার চেষ্টা করছি। দুর্বলতা ঢেকে রাখতে হয়, বুঝতে দিলেই যন্ত্রণা৷ বিশেষ করে এই চাশমিশ আহনাফকে তো ভ্রান্তিতে ও আমার দুর্বলতা বুঝানো যাবে না। নয়তো এই ডেভিল বেছে বেছে আমার দুর্বল জায়গায় গুলোতেই আঘাত করতে তৎপর থাকবেন। বেশি বেশি করে আমাকে ভয় দেখাতে উঠে পড়ে লাগবেন। গলা খাঁকিয়ে আমি বুকের পাজরে দু হাত গুজে ভ্রু উঁচিয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে বললাম,,

“এই যে মিঃ চাশমিশ? আপনার এইখানে কি হুম?”

ফোনের স্ক্রীন থেকে মুখ তুলে আহনাফ আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে অকস্মাৎ বাঁকা হেসে ফোনটা পায়জামার পকেটে ঢুকিয়ে হেলে দুলে হেঁটে বেসুরো কন্ঠে গেয়ে উঠলেন,,

“বুকে চিনচিন করছে হায়, মন তোমায় কাছে চায়। আমরা দুজন দুজনারি প্রেমের দুনিয়ায়…..

অল্প সময় থামলেন উনি। তাজ্জব হয়ে আমি প্রকান্ড চোখে উনার দিকে চেয়ে আছি। পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি এই লোক? হঠাৎ গানের সাথে নাচতে আরম্ভ করলেন কেনো? মনে কি সত্যিই রং লেগেছে এই চাশমিশের?

গানটা পুনরায় প্লে করে উনি আচমকা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার বাহুতে খানিক ধাক্কা মেরে বাঁকা হেসে বললেন,,

“তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়, আমার কি যে হয়ে যায়! তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়, আমার কি যে হয়ে যায়!”

রাগে গাঁ, পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে আমার। এই লোকের বেহায়াপনা দেখে আমি আশ্চর্য না হয়ে পারছি না। চোয়াল শক্ত করে আমি আহনাফের দিকে চেয়ে আছি। ইচ্ছে করছে, এই পাঁজি লোকটাকে এক্ষনি গলা টিপে মেরে দেই৷ প্রভার মতোন সুন্দুরী, রূপবতী, গুনবতী একটা মেয়েকে উডবি ওয়াইফ হিসেবে পেয়ে এই লোকের যেনো খুশি আর ধরছে না৷ হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে, চাঁদ। চাঁদের তেজী ছ্যাঁকা তো এখনো খাও নি বাছা। খেলে এরপর বুঝবে, চাঁদ পাওয়াটা আসলে কি জিনিস!”

আকস্মিক দাঁত কেলিয়ে হেসে আহনাফ কপালের লেপ্টে থাকা চুল গুলো পেছনের দিকে ঠেলে চশমাটা উপরের দিকে তুলে আমার দিকে হালকা ঝুঁকে বেশ সিরিয়াস কন্ঠে বললেন,,

“আশা করি, আনসার পেয়ে গেছো? আমি এখানে কেনো এসেছি?”

আমি অট্ট হেসে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বললাম,,

“মানে? আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আপনার বুক চিনচিন করছে? তাই আপনি হ্যাংলাদের মতোন চলে এসেছেন আমাকে দেখতে?”

আহনাফ বেশ ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললেন,,

“উহু। ওটা হ্যাংলা হবে না মিসেস প্রভা। ওটা প্রেমিক পুরুষ হবে।”

আমার পাশ থেকে সরে এসে উনি আমার একদম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এবার অন্তত সুরেলা কন্ঠে গেয়ে উঠলেন,,

“হয়তো তোমারি জন্য, হয়েছি প্রেমে যে বন্য, জানি তুমি অনন্য, আসার হাত বাড়াই।”

এই লোকের ঠোঁট থেকে যেনো বাঁকা হাসি সরছেই না। উল্টে হাসির মাএা প্রশ্বস্ত হচ্ছে। মস্তিষ্কে ভয়ঙ্কর ভাবে আঘাত হচ্ছে আমার। এই লোকটাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না আমি। চোয়াল শক্ত করে আমি আগপাছ না ভেবে আহনাফের পাঞ্জাবির কলার চেঁপে ধরে ক্ষিপ্র কন্ঠে বললাম,,

“সমস্যাটা কি আপনার হুম? সমস্যাটা কি? এতো বেহায়াপনা করার কারণটাই বা কি?”

উনি নির্লিপ্ত কন্ঠে বললেন,,

“আমি তো প্রেমে পড়েছি জানেমান। তাই হয়তো একটু আধটু বেহায়াপনা হয়ে যাচ্ছে। দিল বেসামাল হয়ে পড়েছে আপনার এই চোখ ধাঁধানো রূপে, কি করব আমি বলুন? এর থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় জানা আছে কি আপনার?”

আমি দ্বিগুন রেগে আহনাফের পাঞ্জাবির কলারটা অধিক জোরে আঁকড়ে ধরে বললাম,

“কি ক্ষতি করেছিলাম আমি আপনার হুম? কি ক্ষতি করেছিলাম? কেনো আপনি আমার পিছনে এভাবে আদা জল খেয়ে লেগেছেন বলুন? বুঝতে পারছেন না আপনার এসব উদ্ভব কথা বার্তায়, বেসামাল আচার, আচরণে আমি বিরক্তবোধ হচ্ছি?”

নরম ভাব ভঙ্গি পাল্টে আহনাফ এক ঝটকায় উনার পাঞ্জাবির কলার থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে চোখে, মুখে কাঠিন্যতার ছাপ ফুটিয়ে আমার মুখের কাছে এগিয়ে এসে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,,

“অনেক হিসেব নেওয়ার আছে তোমার থেকে আমার! কড়া গন্ডায় সব হিসেব শোধ করব আমি৷ “আহনাফ তোমার হাজবেন্ড নয় তোমার যম রূপে এসেছে।” তোমার মতো “দু মুখো” মেয়েদের সাথে দু মুখো রূপটাই দেখাতে হয় বুঝলে? এইবার থেকে প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্তে তুমি এই আহনাফের “দ্বিমুখী” রূপ দেখবে। কিছুক্ষন নরম তো কিছুক্ষণ কঠিন। এসব দেখতে দেখতে হাঁফিয়ে উঠবে তুমি, অতিষ্ট হয়ে উঠবে। অতঃপর “যন্ত্রণা” কি জিনিস তখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারবে। আর তখনই হবে তোমার “পাপ মোচন!”

চোখ জোড়ায় আতঙ্ক নিয়ে আমি প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে আহনাফকে বললাম,,

“কি হিসেব হুম? কি হিসেব? কি পাপ করেছি আমি? আমার জানা মতে তো আপনার সাথে কোনো রকম পাপ করি নি আমি। আপনাকে চিনিই বা কতোদিন হলো? আপুর বিয়ের তো সবে মাএ ১ বছর পূর্ণ হলো। বিয়ের পর দিন থেকে আপনাকে প্রায় ১১ মাসের জন্য কোথাও দেখি নি আমি, না আপনার সাথে কোনো রূপ যোগাযোগ ছিলো আমার৷ এইতো ১ মাস হলো আপনি কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন। আপনাকে চেনার মাএ ১ মাস হলো আমার। এর মধ্যেই আমি আপনার কি ক্ষতি করলাম বলুন? আর আপনিই বা কেনো পরিবারের কথায় আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলেন? কিছুদিন আগে ও তো কথার প্রসঙ্গে আপনি বলেছিলেন, আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে!”

“একটা প্রশ্নের উত্তর ও তুমি পাবে না। তবে হ্যাঁ এটা ঠিক, আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো, তবে সে আমার সাথে চিট করেছে। আমার ইমোশন, দুর্বলতা, আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নিয়ে সে মজা করেছে। ভেতর থেকে আমাকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এর শাস্তি সে নিশ্চয়ই পাবে। পেতে তাকে হবেই! এই আহনাফ তার জীবদ্দশায় কখনো কাউকে ক্ষমা করতে শিখে নি। সে ও তার অন্যথায় হবে না।”

উনার কঠোর দুচোখে আমি যেমন মেয়েটার জন্য ক্রোধের অগ্নি দেখছিলাম, তেমনি অফুরন্ত ভালোবাসার অনুরক্তি ও সূক্ষ্ম ভাবে আঁচ করছিলাম। পলকহীন চোখে আমি আহনাফের দিকে চেয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“এখনো ভালোবাসেন ঐ মেয়েটাকে?”

আহনাফ আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ঘাঁড়ের রগ গুলো টান টান করে উচ্চ শব্দে বললেন,,

“সে আমার ভালোবাসার যোগ্য না! একদমই না।”

অধৈর্য্য কন্ঠে আমি আহনাফকে বললাম,,

“এর মধ্যে আমার ভুলটা কোথায় আহনাফ? আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনার সাথে অন্যায় করেছে, এর মধ্যে আপনি আমাকে দোষারোপ করছেন কেনো? প্লিজ একটু বলবেন? আমার পাপটা কোথায়? আমি আপনার ঠিক, কোন ক্ষতিটা করেছিলাম? কেনো আপনি আমায় বিয়ে করার মতোন এতো বড় সিদ্ধান্তটা নিলেন?

উনি স্পষ্ট কন্ঠে বললেন,,

“তোমরা সব মেয়েরাই এক তাই! সবাই দ্বিমুখী। তুমি ও কিন্তু কম যাও না। তোমার হিস্ট্রি ও আমার বেশ ভালো ভাবেই জানা আছে। নিজেকে খুব ভালো একটা মেয়ে ভেবো না তুমি। অন্তত নিজেই নিজেকে বড় ভাবা থেকে দূরে থাকো!”

লোকটা কখন থেকে মেয়েদের সম্পর্কে যা নয় তা বলেই যাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রতিটা কথায় আমাকে ইঙ্গিত করছেন। না, এভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না। লোকটাকে এক্ষনি ভালো করে শাসাতে হবে। মুখে রাগী ছাপ ফুটিয়ে আমি জিগ্যাসু কন্ঠে আহনাফকে বললাম,,

“কি কখন থেকে দ্বিমুখী দ্বিমুখী করেই চলছেন? দ্বিমুখীতার কি পরিচয় দিয়েছি আমি হুম?”

আহনাফ ভ্রু যুগল উঁচিয়ে বললেন,,

“ভেবে দেখো কি করেছ!”

থতমত খেয়ে আমি চোখ দুটো নিচে নামিয়ে নিলাম। আহনাফ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, ফ্রেন্ডদের সাথে বাজি ধরে ছেলেদের সাথে ফোনে দুষ্টুমির স্বভাব আছে আমার। তবে উনি এই বিষয়টা বুঝলেন কিভাবে? লোকটার কি দিব্য দৃষ্টি আছে? জিগ্যেস করব? কিভাবে উনি বিষয়টা বুঝলেন? ইতোমধ্যেই আমার মৌণতা দেখে আহনাফ গলা ঝাঁকিয়ে বললেন,,

“হিসেব মিলাতে পারছ না তাই তো? কোনো ব্যাপার না। তোমাকে একটা কাজ দিচ্ছি এক্ষনি করে দাও! হিসেব মেলানোর কাজটা না হয় আপাতত ছেড়েই দাও।”

কপাল কুঁচকে আমি আহনাফের দিকে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আহনাফ উনার বাম হাতটা আমার মুখের কাছে ধরে বললেন,,

“দেখো, কতোটা ক্ষত হয়ে গেছে নখের। অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দাও। আমার ডেস্কের ড্রয়ার থেকে অয়েন্টমেন্ট টা নিয়ে এসো, গো ফার্স্ট!”

আমি এক রোঁখা ভাব নিয়ে মুখটা বাঁ দিকে হালকা বাঁকিয়ে বললাম,,,

“উহ্। পারব না আমি!”

আহনাফ ভাবশূণ্য কন্ঠে বললেন,,

“ওহ্ সিরিয়াসলি? পারবে না তুমি?”

আমি হেয়ালী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

“ইয়েস। পারব না আমি!”

“যদি নাই পারো? তাহলে ব্যাথাটা দিলে কেনো?”

“দিয়েছি, বেশ হয়েছে।”

আমি ক্ষুব্ধ হয়ে পরক্ষণে আবারো বললাম,,

“ইচ্ছে করছে আরো দিতে!”

আচমকা উনি বাঁকা হেসে ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসতে আরম্ভ করলেন। শুকনো ঢোক গিলে আমি একটু একটু করে পিছু হেঁটে একদম ছাঁদের রেলিংয়ের সঙ্গে ঘেঁষে দাঁড়ালাম। উনি আমার ঠোঁটের দিকে বিশ্রী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“আমি আর একটু এগুলেই তোমার ঠোঁটের সঙ্গে আমার ঠোঁটের সংঘর্ষ হবে। আর তুমি একটু পিছুলেই দু তলা ছাঁদ থেকে পিছলে নিচে পড়বে। সামনে, পিছনে দুয়ের মাঝখানে আটকে আছো তুমি। উভয় দিকেই রিস্ক। নাও ডিসিশান ইজ ইউর’স। আমার হাতে অয়ন্টমেন্ট লাগিয়ে দিবে নাকি সামনে, পেছনে যেকোনো একটা পথ বেছে নিবে? বলে রাখি, উভয় দিকেই আমি রাজি!”

উৎসুক দৃষ্টিতে আমি পেছনের দিকে তাকাতেই যেনো মৃত্যুকে দেখতে পেলাম। অবিশ্বাস্য ভয় নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চাশমিশ আহনাফের বিশ্রী দৃষ্টি এবং হালকা লাল রঙ্গের ঠোঁট জোড়া দৃষ্টিলোকন হলো আমার। ছাদের চতুর্পাশে ডেকোরেট করা বিভিন্ন ঝাঁড়বাতির আলোতে আমি আহনাফের চশমার দু ফ্রেমে নিজের আতঙ্কগ্রস্থ মুখটা সশীরে দেখতে পাচ্ছি৷ ভয়ে জিভ বেরিয়ে আসছে আমার। চোখ জোড়া ও অস্থিরতায় মিইয়ে আসছে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে আমি ফটাফট চোখ জোড়া বুজে অকুল পাথারে ডুব দিলাম। অল্প সময় মৌণ থেকে আমি রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে তেজর্শিনী কন্ঠে বলে উঠলাম,,

“ওকে ওকে, যেতে দিন আমায়। অয়েন্টমেন্ট এনে দিচ্ছি আমি!”

#চলবে….?