তোমাতেই রহিব বিলীন পর্ব-০৭

0
876

#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

শনিবার আজ। বিকেল ৫ টা বাজতেই ঐ বাড়ি থেকে ফোন কল আসতে আরম্ভ করল। নেহাল ভাই আজ দেশে ফিরছেন! সেই খুশিতে ঐ বাড়ির প্রত্যেকেটা সদস্য আত্নহারা। আহনাফ তো বিকেল হতেই এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেছেন, নেহাল ভাইকে পিক করতে। আম্মু সহ আমি রেডি হয়ে বিকেল ঠিক ৫ঃ৩০ বাজতেই ঐ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যদি ও আমার ইচ্ছে নেই ঐ বাড়িতে যাওয়ার, আহনাফকে ফেইস করার। তবু ও আপু, জিজু এবং আঙ্কেলের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে আমাকে রাজি হতে হলো!

গৌধূলীর অন্তিম লগ্ন ঘনিয়ে এলো। ঘড়িতে ৬ঃ১০ মিনিট বাজতেই আশেপাশের প্রতিটা মসজিদে পালাক্রমে মাগরিবের আযান পড়তে আরম্ভ করল। গাড়িতে বসেই আমি একাগ্রচিত্তে আযানের সুমধুর ধ্বনি শ্রবণ করছিলাম। মনটা যেনো বিশেষ এক ভালো লাগা এবং পবিএতায় ভরে উঠছিলো। রবের প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করছিলাম। হৃদয়ে জমে থাকা সমস্ত ক্লেশ যেনো মুহূর্তের মধ্যেই উধাও হয়ে গেলো। মনটা প্রাণোচ্ছ্বলায় ভরে উঠল। আযান শেষ হতেই গাড়ি এসে আহনাফ শেখের বাড়ির পার্কিং লনে বিকট শব্দে থামল। মাথায় বড় করে ঘোমটা টেনে আমি গাড়ি থেকে নেমে আম্মুসহ ঐ বাড়ির সদর দরজায় পা রাখলাম। পর পর দুবার কলিং বেল চাপতেই মাঝ বয়সী শিউলি আপা (বাড়ির কাজের মহিলা) হাতে ঝাড়ু নিয়ে খুব ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে সদর দরজাটা খুলে দিলেন। আমাদের দেখা মাএই শিউলি আপা আশ্চর্যিত ভঙ্গিতে ঝাড়ুটা নিচে নামিয়ে মুচকি হেসে বললেন,,

“আরে। আফনারা আইসা পড়ছেন? ভাবী তো হেই কখন থাইক্কা আফনেগো লাইগ্গা অফেক্ষা করতাছিলো। দেহি, আহেন আহেন। তাড়াতাড়ি ঘরে আহেন।”

আম্মু উর্ধ্ব আওয়াজে হেসে বললেন,,

“আসছি, আসছি। তুমি এতো ব্যস্ত হয়ো না তো শিউলি!”

বাড়ির ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই শিউলি আপা সদর দরজাটা আটকে দৌঁড়ে আমার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আমায় প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“কি গো আফা? আফনের মন খারাপ ক্যান?”

শিউলি আপা অবশ্য ভুল কিছু বলেন নি। মুখটাকে আমি সত্যিই মন খারাপের রেশে অসম্ভবভাবে ফুলিয়ে রেখেছি। শুধু শিউলি আপা কেনো? যে কোনো ব্যক্তি আমাকে দেখলেই অনায়াসে বলতে পারবেন, আমার প্রচন্ড মন খারাপ। বিষাদের নীল রঙ্গ ফুটে আছে সমস্ত মুখমন্ডলে!

শিউলি আপা প্রতিত্তুরের আশায় আমার মুখেপানে অধীর আগ্রহে চেয়ে আছেন। প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমি উনাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে ইতস্তত কন্ঠে বললাম,,

“এনগেজমেন্টের দিন কোথায় ছিলে তুমি? বাড়িতে কোথাও দেখলাম না যে!”

“পাশের বাসায় নতুন কাজ নিছি আফা। ঐ বাড়িতেই আছিলাম। কাজের চাপ একটু বেশিই আছিলো! তাই আফনার আংটি পড়ানোর অনুষ্ঠানে থাকতে পারি নাই।”

“ওহ্ আচ্ছা।”

“আমি যাই আফা। কাজ আছে। ভাবীরে ও ডাকতে হইব৷ আফনারা আইছেন, বলতে হইবো না?”

“আচ্ছা যাও।”

“আফনারা সোফায় বহেন। আফা উপরে আছে। আমি ডাক দিয়া আইতাছি।”

শিউলি আপা হাসি মুখে প্রস্থান নিলেন। ড্রইং রুমটা বেশ পরিপাটি ভাবেই সাজানো হয়েছে। সোফা সেট গুলো সম্পূর্ণ নতুন মনে হচ্ছে। ডাইনিং টেবিলের ধরনটা লম্বায় একটু বেশিই প্রশ্বস্ত মনে হচ্ছে। তিনটে চেয়ার বেশি দেখা যাচ্ছে। হয়তো ডাইনিং টেবিলটা ও সদ্য কেনা। গোলাপী রঙ্গের প্রতিটা দেয়ালে দেয়ালে লাল, নীল রঙ্গের টিমটিমে ঝাড়বাতি জ্বলছে। এতে রুমের আকর্ষনীয়তা যেনো দ্বিগুন বেড়ে উঠছে। উপর তলা থেকে মহিলাদের হাসি হট্টগোলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। পরিচিত দু, একজনের কন্ঠস্বর ও আমার কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে নেহাল ভাইয়ের আম্মুর (রাহেলা হক) কন্ঠস্বর অন্যতম।

সোফায় প্রায় দু মিনিট বসতেই লক্ষ্য করলাম আপু খুব প্রফুল্লিত মনে তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি টপকে নিচে নামছেন। আপুর পেছনে আপুর একজন খালা শ্বাশুড়ী, ফুফু শ্বাশুড়ী, দুই চাচাতো ননাশ, এমনকি নেহাল ভাইয়ের ছোট বোন ও আসছেন। ঐ দিকে আম্মু আমাকে পই পই করে বুঝিয়ে বলছিলেন, একটু হাসিখুশি থাকতে, তাদের সাথে যতোটা সম্ভব মেশার চেষ্টা করতে, কৌশল বিনিময় করতে, ভদ্রভাবে কথা বলতে। অযথা মন খারাপ করে না থাকতে। আমার এই বিরূপ মুখভঙ্গি দেখলে বাড়ির সবাই নানা ধরনের প্রশ্ন তুলবেন। আম্মু এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না। দয়া করে আম্মুকে এই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না ফেলতে।

আম্মুর বলা প্রতিটা কথায় সম্মতি জানিয়ে আমি জোর পূর্বক হাসি টেনে আপু এবং আপুর শ্বশুড় বাড়ির প্রতিটা লোকের দিকে হাসি মুখে তাকালাম। বয়োজৈষ্ঠ্যদের সালাম জানিয়ে আমি তাদের সাথে কৌশল বিনিময় করলাম। তারা ও আমার সাথে খুব হাসি হাসি মুখে কথা বলে আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন। বিশেষ করে নেহাল ভাইয়ের আম্মু। উনি প্রথম থেকেই আমার ভীষণ প্রশংসা করতেন৷ সেই ধারাটা এখনো অবধি বজায় আছে। আপুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমি আপুর ননাশদের সাথে আলাপে মগ্ন হয়ে গেলাম। হৃদি আপু (নেহাল ভাইয়ের ছোট বোন) আমার থেকে প্রায় দু বছরের বড় হবেন। খুব বন্ধুসুলভ আচরণ উনার। আপুর দুই চাচাতো ননাশ (শশী এবং শ্যামা) আপু বিবাহিত দুজনই। হাজবেন্ডের বাড়ি থেকে উনারা নেহাল ভাইকে দেখতে এই বাড়িতে এসেছেন। কিছুক্ষন পর উনাদের হাজবেন্ডরা ও চলে আসবেন নেহাল ভাইকে দেখতে!

,
,

ঘন্টা খানিক পর। ড্রইং রুমে আড্ডার মহল বেশ জমতে শুরু করেছে। সবাই কফি এবং স্ন্যাকসে সাথে আড্ডাটাকে অধিক জাকজমক করে তুলেছে। কফিতে চুমুক দিয়ে আপু আচমকা শিউলি আপাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“শিউলি আপা। আর একটু কষ্ট করেন। আহনাফের রুমটা একটু গুছিয়ে দিয়ে আসুন। এই আড্ডার মহল ছেড়ে আমার উঠতে ইচ্ছে করছে না একদম।”

শিউলি আপা কিছু বলার পূর্বেই আম্মু উদগ্রীব কন্ঠে বলে উঠলেন,,

“শিউলি কেনো? প্রভা আছে না? প্রভা গুছিয়ে দিবে আহনাফের রুম।”

আম্মু এবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বেশ চড়া কন্ঠে বললেন,,

“যা। আহনাফের রুমটা গুছিয়ে দিয়ে আয়। আহনাফরা হয়তো চলে ও আসছে। এসে যেনো রুমটা গোছানো দেখে।”

আমি কটমট চোখে আম্মুর দিকে চেয়ে বললাম,,

“আমাকেই যেতে হবে?”

আপুর সব ননাশরা বাঁকা হেসে একসাথে বলে উঠলেন,,

“তুমি নয়তো কে? বিয়েটা কার সাথে হচ্ছে শুনি?”

নিরত্তুর থেকে আমি চোখে, মুখে প্রবল রাগ নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। বিরক্তি মনোভাবটা তড়তড় করে আমার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। হাত, পা কচলাতে কচলাতে আমি সিঁড়ি টপকে আহনাফের রুমে প্রবেশ করলাম। রুমের দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে আমি রাগান্বিত ভঙ্গিতে বিছানার উপর দুহাতে ভর করে বসলাম। পুরো রুমটা অগোছালো হয়ে আছে। বিছানার চাঁদর, বালিশের কাভার সব খসে খসে পড়ছে। টেবিলের উপর কফির মগ, বিভিন্ন ফাইলপএ, ল্যাপটপ, পেন, ডায়েরীসহ আদার’স অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কাবার্ডের উপর শার্ট, প্যান্ট, টাই, মৌজা, কোট সব এলোমেলো হয়ে আছে। দাঁতে দাঁত চেঁপে আমি পুরো রুমটা অত্যধিক অগোছালো করতে উঠে পড়ে লাগলাম। মিনিট কয়েকের মধ্যে আমার লাগামহীন জেদে রুমটা আপাতত জঙ্গলে রূপান্তরিত হয়েছে!

টেবিলের এক কোণায় পড়ে থাকা নীল রঙ্গের ডায়েরীর মলাটটা পাখার বাতাসে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। ডায়েরীর প্রতিটা পাতা জুড়ে দূর থেকে আমি গোটা গোটা হাতের অক্ষর দেখতে পারছি। ডায়েরীটার একটা পাতা ও খালি নেই। কালো কালিতে ছেঁয়ে আছে শুভ্র ডায়েরীটা। তবে কি ছেলেরা ও ডায়েরী লিখে? তাদের মনের ও গোপন থাকে? পার্সোনাল লাইফ কি তারা ও ডায়েরীতে শেয়ার করে?

উৎসুক চিত্তে আমি এক পা দু পা করে টেবিলের দিকটায় এগিয়ে গেলাম। চোখে, মুখে ঘোর কৌতুহল নিয়ে আমি ডায়েরীটায় হাত দিতেই মনে হলো দরজায় কড়াঘাত পড়ল। ভয়ে আতকে উঠে আমি দরজার দিকে তাকাতেই আহনাফের ক্ষিপ্র কন্ঠস্বর আমার কর্ণকুহরে খুব ভয়াল ভাবে প্রতিধ্বনিত হলো। দরজায় সশব্দে কড়া নেড়ে আহনাফ উত্তেজিত কন্ঠে বলছেন,,

“হোয়াট দ্যা হ্যাল! হু ইজ ইন মাই রুম?”

অস্থিরতা নিয়ে আমি পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে কম্পিত কন্ঠে বিড়বিড়িয়ে বললাম,,

“ইসসস, রুমের যা অবস্থা করেছি আমি। লোকটা তো আজ আমাকে মেরেই ফেলবেন। কিভাবে ফেইস করব উনাকে আমি?”

দরজার কড়াঘাতের আওয়াজ যেনো বাড়ছিলো মাএাতিরিক্তভাবে।। কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বুকে থু থু ছিটিয়ে আমি এক দৌঁড়ে রুমের দরজাটা খুলে দিতেই চাশমিশ আহনাফের মুখোমুখি হয়ে গেলাম। চশমা ভেদ করে উনার রাগী দৃষ্টি আমার ভয়ার্ত দৃষ্টিকে নাড়িয়ে তুলছিলো ভয়ঙ্করভাবে। শরীর আমার এতোটাই কাঁপছিলো যে, মনে হচ্ছিলো যেনো ভূমিকম্পের তান্ডব আরম্ভ হয়েছে এই মুহূর্তে। ভ্রু যুগল খড়তড় ভাব কুঁচকে উনি দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,

“ইউ ইস্টুপিট গার্ল৷ আমার রুমে কি করছিলে তুমি?”

কম্পিত চোখে আহনাফের দিকে চেয়ে আমি শুকনো কন্ঠে বললাম,,

“রুরুরুম গোছাতে এসেছিলাম!”

আমাকে হালকা ধাক্কা মেরে সামনে থেকে সরিয়ে আহনাফ ঝড়ের বেগে রুমে প্রবেশ করলেন। উন্মাদের মতোন উনি পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে অবশেষে টেবিলের উপর থাকা ডায়েরীটার উপর স্বস্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। দ্রুততার সহিত উনি ডায়েরীটাকে হাতে নিয়ে উদগ্রীব দৃষ্টিতে পুরোটা ডায়েরী উলটে পাল্টে দেখলেন। পরক্ষনে আমার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উনি প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“ডায়েরীটা পড়েছিলে তুমি?”

“নানানাহ্৷”

কপাল কয়েকটা তিক্ত ভাজ ফেলে উনি সন্দিহান কন্ঠে বললেন,,

“সিউর?”

“হুহুহুম।”

তড়িঘড়ি করে উনি ডায়েরীটা বেডের তোশকের তলায় রেখে দ্রুত পায়ে হেঁটে আমার সম্মুখে দাঁড়ালেন। অল্প সময় উনি আমার চোখের দিকে সম্মোহিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেশ শান্ত কন্ঠে বললেন,,

“এক সপ্তাহ খুব শান্তিতেই ছিলে তাই না?”

নিরুত্তর ভঙ্গিতে আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি হঠাৎ শান্ত ভাব ভঙ্গি পাল্টে বুকে দু হাত বেঁধে মুডি ভাব নিয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,,

“উইদাউট পারমিশান তুমি আমার রুমে ইন করলে কেনো?”

আমি নতজানু হয়ে কম্পিত কন্ঠে বললাম,,

“আআম্মু বললেন, আআআপনার রুমটা গুছিয়ে দিতে!”

পুরো রুমটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পুনরায় পর্যবেক্ষন করে উনি আমার দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“আর ইউ সিউর প্রভা? তুমি আমার রুম গুছাতে এসেছিলে?”

শুকনো কন্ঠে আমি মাথা নত করে বললাম,,

“হুহুম।”

আহনাফ ফিক করে হেসে বললেন,,

“রুম গুছানোর এই নমুনা? এভাবে কে রুম গোছায় ভাই?”

চোখ তুলে আমি মুগ্ধিত দৃষ্টিতে উনার দিকে চেয়ে আছি। লোকটা এতো সুন্দর করে হাসতে পারেন, আমার সত্যি জানা ছিলো না। রাগী আদলে এক চিলতে মন মাতানো হাসি। বিষয়টা সত্যিই খুউব রোমাঞ্চিত৷ আপাতত রোমাঞ্চে ধ্যান দিতে চাইছি না আমি। তাই ধ্যান পাল্টাতে আমি এক ভ্রু উঁচিয়ে নাক ফুলিয়ে উনার দিকে চেয়ে বললাম,,

“আমি আপনার কোন জাতের ভাই লাগি শুনি?”

উনি থতমত খেয়ে খানিক ইতস্ততবোধ করে বললেন,,

“কথার কথা বললাম জাস্ট। কথা না ঘুড়িয়ে মেইন পয়েন্টে আসো। এভাবে রুম গোছায় কে? পৃথিবীতে কোন মেয়েরা এই তুফান স্টাইলে রুম গোছায়?”

ফ্যাল ফ্যাল চোখে আমি উনার দিকে চেয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললাম,,

“কেন? আমি গুছাই! আমি এভাবেই রুম গুছাই। ফার্স্টে পুরো রুমটা পূর্বের তুলনায় বেশি এলোমেলো করি দেন আরো সুন্দর করে গুছাই।”

আমার দিকে খানিক ঝুঁকে এসে উনি ট্যারা চোখে বললেন,,

“ওহ্ রিয়েলি?”

“হুম। আপনার কোনো ডাউট আছে?”

“তুমি বলতেই ডাউট। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব বলো?”

আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম,,

“সবক’টাই বলুন। আমি সব শুনব!”

“ক্ষমতা আছে শোনার?”

“থাকবে না কেনো?”

এক পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আহনাফ আমার কানের কাছে খানিক ঝুঁকে এসে ফিসফিসে কন্ঠে বললেন,,

“নিজের কুকীর্তি ঠিকভাবে নিতে পারবে তো? মানে হজম করতে কোনো প্রবলেম হবে না তো?”

আমি সাবলীল স্বরে বললাম,,

“যথেষ্ট ধৈর্য্য আছে আমার। যদি ও আমি কোনো কু-কাজ করি নি। তা ও আপনার মুখ থেকে আমি সেই না করা কু-কাজ গুলোই শুনতে চাই!”

উত্তেজিত কন্ঠে উনি আচমকা বলে উঠলেন,,

“মৃ না লি নী। ফেইসবুক একাউন্টটা কার?”

থতমত খেয়ে আমি কাঠ কাঠ গলায় বললাম,,

“জাজাজানি না। আআমি জানব কিভাবে?”

ক্ষুব্ধ হয়ে উনি দুহাত দিয়ে আমাকে ঝাঁকিয়ে বললেন,,

“মিথ্যে বলছ তুমি? মিথ্যে বলছ?”

ভয়ে কাত হয়ে আমি কম্পিত কন্ঠে বললাম,,

“আআআমার একাউন্ট৷ ততবে ওওওটা আমার ফেইক একাউন্ট।”

“এই ফেইক একাউন্ট দিয়েই কুকীর্তি চলছে তাই না? ছেলেদের প্রেমের জালে ফাসিয়ে তাদের সাজানো জীবনটাকে নরক করে তুলছ তুমি তাই না?”

“আআআপনি কিভাবে জানলেন এএএটা আমার ফেইক একাউন্ট। আপনার সাথে তো আমার ঐ একাউন্টের এড নেই!”

উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

“ব্লকটা খুলো। পুনরায় এড হয়ে যাবো!”

“আজব তো! আমি ব্লক করব কেনো আপনাকে? আমি তো আপনার ফেইসবুক একাউন্টের নাম, ডিটেলস কিছুই জানি না। আপনার সাথে এড পর্যন্ত নেই আমার। তাহলে ব্লক খুলার কথা আসছে কেনো এখানে?”

আহনাফ আমার দিকে হাত বাড়িয়ে রুক্ষ কন্ঠে চেঁচিয়ে বললেন,,

“দেখি ফোনটা দাও। এক্ষনি ফোনটা চেইক করে তোমার ড্রামা আমি অফ করছি৷”

“ফোন তো ড্রইং রুমে, আমার সাইড ব্যাগে!”

ইতোমধ্যেই রুমের দরজায় টোকা পড়ল। অপরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো। আহনাফ কটমট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“নেহাল এসেছে। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবে। স্বাভাবিক মানে হাসি খুশি ওকে?”

আমি জড়তা ভরা কন্ঠে বললাম,,

“ওকেহ্।”

আহনাফ হম্বিতম্বি হয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিতেই আমার চোখ পড়ল নেহালের দিকে। ব্লু শার্টের সাথে ব্ল্যাক জিন্স পরিহিত অবস্থায় উনি প্রাণোচ্ছ্বল হাসিতে আহনাফের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“এই? তুই একা রুমে কি করছিস?”

আহনাফ জোর পূর্বক হাসি টেনে আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে বললেন,,

“একা কোথায়? তোর ভাবি ও আছে!”

নেহাল ভাই চোখ তুলে আমার দিকে তাকালেন। দৃষ্টি উনার কেমন যেনো উদ্ভট টাইপ। মনে হচ্ছে উনি আমাকে দেখে খুশি হন নি। তিক্তার ছাপে ছেঁয়ে গেছে সমস্ত মুখ মন্ডলে। অপ্রত্যাশিতভাবে আমার থেকে চোখ সরিয়ে নেহাল ভাই ছোট আওয়াজে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“এতো কিছুর পরে ও তুই প্রভাকেই বিয়ে করবি? এই সারপ্রাইজটা দেওয়ার জন্যই তুই আমাকে সুদূর কানাডা থেকে ইমার্জেন্সি দেশে ফিরতে বলেছিস?”

আহনাফ আমার দিকে মিহি চোখে চেয়ে হালকা হেসে বললেন,,

“বেহায়া হতে হয়। নয়তো এতো শতো দুঃখের বোঝা বইবে কে? আমার শান্তি চাই, ব্যাস এটুকুই। আমি রিয়েলাইজ করতে পেরেছি, তার মাঝেই আমার দুনিয়ার সমস্ত সুখ, শান্তি নিহিত।”

#চলবে…?