#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২০
আবরার বাড়ি ফিরে একটা হ*ট শাওয়ার নিলো। দিনে দুইবার শাওয়ার নেয়া তার ডেইলি রুটিন। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে শাওয়ার না নিলে শান্তি পায় না সে। সোফায় বসে টাওয়াল দিয়ে চুল মু*ছ*তে মু*ছ*তে আরশি কে রা*গা*নোর মোমেন্ট গুলো ভেবে মিটমিট করে হাসছে সে। এমন সময় একটা মেয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে বসে বললো,
— কিরে প্রেমে ট্রে*মে পড়লি নাকি? একা একা পা*গ*লের মতো হাসছিস যে? ইহা তো নয়া নয়া প্রেমে পড়ার লক্ষণ।
হাসি বন্ধ হয়ে গেলো আবরারের। গলা থেকে মেয়েটার হাত টা সরিয়ে কপাল কুঁ*চ*কে বললো,
— আহির বাচ্চা স*ম*স্যা কি তোর? যখন তখন বাঁ*দ*রের মতো গলা ধরে ঝু*লে পড়িস কেনো? আর বেশি পেঁ*কে গেছিস না? বাবাই কে বলে জলদি তোকে বি*দা*য় করার ব্যবস্থা করছি দাঁড়া। আর কয়েকটা দিন। তারপর তোকে বি*দা*য় করবো।
মুখ টা অ*ন্ধ*কার হয়ে গেলো আহিয়ানার। আহিয়ানা সম্পর্কে আবরারের একমাত্র ছোট বোন। বাড়ির সবার অনেক আদরের সে। সবার চোখের মনি। ভীষণ আদুরে আর নরম মনের। তাই তো আবরারের মজা করে বলা কথাগুলোতেও ক*ষ্ট পেলো সে। আবরার একমাত্র আদরের বোন কে এভাবে মুখ কালো বসে থাকতে দেখে বুঝলো তার ছোট বোন টা ক*ষ্ট পেয়েছে। তাই সে আহি কে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
— কি হয়েছে আমার ছোট্ট বুড়িটার? এই সামান্য কথায় এতো ক*ষ্ট পেয়েছিস? আমি তো মজা করে বলেছি।
আহি ভাইয়ের আদর পেয়ে ফুঁ*পি*য়ে উঠলো। ফুঁ*পা*তে ফুঁ*পা*তে বললো,
— তোর এতো তা*ড়া আমাকে ভা*গা*নোর? ছাড় আমাকে। তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না। ছাড় তুই। তোর সাথে আ*ড়ি। কথা নাই আমার।
আহি ছাড়তে বললেও ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা করলো না। ছোট বেলা থেকেই ভাই পা*গ*ল সে। ভাই কে অনেক ভালোবাসে। তাই ভাই একটু উনিশ থেকে বিশ কিছু বলে ফেললেই কাঁ*দ*তে বসে সে। আবরার বোনের স্বভাব ভালোই জানে। সে আহির মাথায় হাত বু*লাতে বু*লাতে বললো,
— আচ্ছা যা তোর বিয়ে ক্যা*ন*সে*ল। আমি রাদিফ কে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি বিয়ে ক্যা*ন*সে*ল। তুই ওকে বিয়ে করবি না। কাউকেই বিয়ে করবি না।
আবরার কথা টা বলে ফোন হাতে নিতেই চ*ট করে ফোন কে*ড়ে নিলো আহি। কা*ন্না গা*য়েব তার। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,
— অ*সভ্য, ফা*জি*ল ছেলে। কথায় কথায় রাদিফ কে ফোন দিতে যাস কেনো হ্যা? তুই এখন একটা বলবি আর ওই বেটা আমাকে সারারাত ফোন দিয়ে দিয়ে পা*গ*ল বানাবে। আর এই কথা বললে ফোনের ভেতর থেকেই আমার গলা না চে*পে ধরে?
আবরার বোনের কথায় শব্দ করে হেসে ফেললো। আহি আবরারের বাহুতে কি*ল দিয়ে বললো,
— শুন আমি অন্য একটা কথা জানতে এসেছিলাম।
আবরার হাসি থামিয়ে ভ্রু কুঁ*চ*কে তাকালো। বললো,
— কি?
আহি আবরার কে মনে করানোর ভ*ঙ্গিতে বলতে লাগলো,
— ওই যে আমার ফ্রেন্ড আছে না আরশি? মনে আছে তোর?
আবরার না চেনার ভা*ন ধরে বললো,
— কোন আরশি?
আহি বললো,
— আরে ভার্সিটি তে অনুষ্ঠানের দিন বাসায় ফিরে যে আমাকে আমার সব ফ্রেন্ড এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলি? মুন, আরশি। তুই তো মুনের সাথে কথাও বলেছিস, মুনের পাশেই তো আরশি ছিলো।
আবরার মনে পড়ার ভ*ঙ্গিতে বললো,
— হ্যা হ্যা মনে পড়েছে। কি হয়েছে তার?
আহি বললো,
— সে তো আমাদের অফিসে চাকরি পেয়েছে। তোর সাথে দেখা হয়েছে?
আবরার আহির কথায় তা*ল মিলিয়ে বললো,
— হ্যা আমাদের অফিসেও একজন নিউ এসেছে, নাম আরশি রহমান। সেই নাকি? আমি তো চিনতেই পারি নি তোর ফ্রেন্ড কে।
আহি মাথা কা*ত করে বললো,
— তুই আবার এতো ভো*লা মন কবে হলি? যাই হোক কেমন কাজ করেছে ও? কেমন মনে হলো তোর? আমিই ওকে আমাদের অফিসের খোঁজ দিয়েছিলাম আর সে চাকরি ও পেয়ে গেছে। বাবাইয়ের তো সেই পছন্দ হয়েছে ওকে। ইন্টারভিউ নিয়ে আসার পর থেকে শুধু ওর প্রশংসা করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে। আসলে ও মেয়েটাই এমন। তোর কেমন লাগলো?
আবরার হাই তু*লে বললো,
— মেয়ে টা একটু বে*য়া*দব আছে বুঝলি? প্রথম দিন এসেই মিস প্রিয়ার সাথে ঝা*মে*লা পা*কি*য়েছে। তাই ওকে আমার পিএ বানিয়ে ফেলেছি। এখন আমি সোজা করবো ওকে।
আহি মুখ বাঁ*কা করে বললো,
— তোর মিস প্রিয়াই একটা শ*য়*তা*ন্নি, পে*ত্নী মহিলা। আমার বান্ধুবীর দো*ষ দিবি না। ও অনেক ভালো হুহ।
আবরার আহি কে ভে*ঙি*য়ে বললো,
— হয়েছে আর বান্ধুবীর তারিফ করতে হবে না। এই নে আমার ক্রেডিট কার্ড। কালকের দিনটার জন্য এটা তোর। যা ইচ্ছা করতে পারিস।
আহি চোখ বড় বড় করে লা*ফ দিয়ে উঠলো। দুই গালে হাত দিয়ে বললো,
— সত্যি বলছিস? তুই আমাকে নিজের ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছিস তাও আবার নিজের ইচ্ছা তে? এই এটা তুই তো? নাকি অন্য কেউ? দেখি দেখি তুই ঠিক আছিস তো?
বলে আবরারের কপালে, গালে হাত দিয়ে প*রী*ক্ষা করতে লাগলো আহি। আবরার কপাল কুঁ*চ*কে বললো,
— তোর না লাগলে দিয়ে দে। দে আমার কার্ড ফিরত আর বি*দা*য় হ যাহঃ।
আহি এক লা*ফ দিয়ে দূরে সরে গেলো। কার্ড হাতের মুঠোয় পুরে দাঁ*ত কে*লি*য়ে বললো,
— আরে না না কি যে বলিস? এতো বড় একটা সুযোগ হাত*ছা*ড়া করা যায়? কালকে তোর টাকা দিয়ে জ*ম্পে*শ শপিং করবো, ফ্রেন্ডদের ট্রিট দিবো। হুরররে।
আহির কা*ণ্ডে হাসলো আবরার। আহি আবার আবরারের কাছে এসে বললো,
— কিন্তু আমাকে নিজের কার্ড দেয়ার মতো মহান কাজ কিভাবে হলো তোর দ্বারা? সেটা তো বল?
আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,
— তুই এতো বড় মহান কাজ করলি, আমার এতো বড় উপকার করলি তাই তো ট্রিট হিসেবে দিলাম।
আহি বাঁ*কা চোখে তাকালো আবরারের দিকে। সে আবার কবে কোন মহান কাজ করলো যে তার ভাই এতো খুশি হলো? আবরার আহি কে স*ন্দি*হান চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
— এবার ভা*গ আমার রুম থেকে নাহলে কার্ড ফেরত নিয়ে নিবো কিন্তু।
আহি আবরার কে জিজ্ঞাসাই করতে যাচ্ছিলো যে সে কোন মহান কাজ টা করেছে। কিন্তু আবরার কার্ড ফেরত নিয়ে নেওয়ার থ্রে*ট দেয়ায় দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এতো বড় সুযোগ সে কিছুতেই হাত*ছা*ড়া করতে পারে না। আবরার যেই জন্যই দিক, দিয়েছে তো। এখন সে ধু*মি*য়ে শপিং করবে ভেবে নাচতে নাচতে নিজের রুমে চলে গেলো আহি।
আহি কে পা*লা*তে দেখে মুচকি হাসলো আবরার। বিড়বিড় করে বললো,
— না জেনেই অনেক বড় উপকার করলি আহি বুড়ি…
আবরার নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে গ্যালারি তে প্রবেশ করলো। একটা পিক জুম করে খুঁ*টে খুঁ*টে দেখতে লাগলো সে। পিক টা দেখে যেনো তার চোখে মুখে একরাশ মুগ্ধতা ছ*ড়ি*য়ে পড়লো। আপন মনে বলতে লাগলো,
— কি মায়ায় ডু*বা*ইলা হে কন্যা,
কি মায়ায় ডু*বা*ইলা?
একবার তাকাইলে,
পলক যেনো পড়ে না।
আবরার নিজের ভেজা, এ*লো*মে*লো চুলে হাত চা*লাতে চা*লাতে বললো,
— আমি বোধহয় সত্যিই পা*গ*ল হয়ে গেছি। এক শুভ্র মায়াবিনীর প্রেমে পা*গ*ল হয়ে গেছি। যেখানে আগে প্রেম, ভালোবাসা কি তাই বুঝতাম না আর এখন কিনা সেই আমি ছন্দ রচনা করছি। মানুষ প্রেমে পড়লে বুঝি কবি হয়ে যায়? নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে হাজারো জ*ল্পনা ক*ল্পনা করে? আমি জানিনা ভালোবাসা কি, কিভাবে কাউকে ভালোবাসতে হয়। তবে আমি প্রতি মুহূর্তে তাকে অনুভব করছি, খুব করে অনুভব করছি। আমার মন আমাকে প্রতি মুহূর্তে জানান দেয়, তাকে ভু*লে থাকা আমার পক্ষে অ*সম্ভব। সে আমার জীবন, আমার প্রতিটা শ্বাসের সাথে জ*ড়ি*য়ে গেছে। খুব বা*জে ভাবে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি আমি।
চলবে?
#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২১
কল লিস্ট এ ঢুকে একটা নাম্বার বের করলো আবরার। নাম্বার টা তার ফোনে “মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি” নামে সেভ করা। আবরার বাঁ*কা হেসে সেই নাম্বারে কল দিলো।
অন্যদিকে ফ্রেস হয়ে, রাতের খাবার খেয়ে একবারে পড়তে বসেছে আরশি। রিফা তাকে এক মগ ভ*রে ক*ড়া করে বানানো চা দিয়ে গেছে। যাতে তার পড়ার সময় ঘুম না আসে। মেয়ে টা তার সব কিছুর খেয়াল রাখে ভেবে হাসলো আরশি। চায়ে চু*মু*ক দিতে দিতে শী*ট দা*গা*তে লাগলো সে। এমন সময় ফোন টা বে*জে উঠলো তার। পড়ার সময় ফোন বে*জে উঠায় বি*র*ক্ত হলো আরশি। কপাল কুঁ*চ*কে ফোন হাতে নিলো সে। সেভ করা নাম্বার নয় তবে এই নাম্বার টা চেনে আরশি। হ্যা, এটাই তো সেই নাম্বার যেই নাম্বার থেকে কল পাওয়ার অপেক্ষা করতো সে। চাইতো একটা কল অন্তত আসুক তার ফোনে। কিন্তু আসে নি। তবে আজ কেনো? না চাইতেও অ*ভি*মান হলো আরশির। ধরবে না সে এই লোকের ফোন। কেনো ধরবে? এতগুলো দিন তো লোকটা একবারও তাকে ফোন দেয় নি। তার খোঁজ নেয় নি। সে ফোন টা সাই*লেন্ট করে রেখে আবার শী*ট দা*গা*নোতে মনোযোগ দিলো। কিন্তু সেই মনোযোগ বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারলো না। কারণ আবরার একাধারে কল দিয়েই যাচ্ছে।
রা*গ হলো আরশির। রে*গে ফোন রিসিভ করে তে*জের সাথে বললো,
— স*ম*স্যা কি আপনার? এতদিন পর কেনো ফোন দিয়েছেন? এতদিন তো একবারও ফোন দিয়ে খোঁজ নেন নি। তাহলে আজ কেনো ফোন দিচ্ছেন? আর একাধারে কেনো ফোন দিয়ে যাচ্ছেন হ্যা?
কথাগুলো বলে জো*রে জো*রে শ্বাস নিতে লাগলো আরশি। অপর পাশে আবরার বো*কার মতো ফোন কানে লাগিয়ে বসে আছে। আরশি এতো রে*গে গেলো কেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো তার। কয়েক সেকেন্ড নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে আবরার বললো,
— আর ইউ ওকে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? এতো রে*গে আছো কেনো? কিছু হয়েছে কি?
হু*স ফিরলো আরশির। জিভে কা*ম*ড় দিলো সে। বুঝতে পারলো রা*গের ব*শে উ*ল্টা*পা*ল্টা কথা বলে ফেলেছে। আবরার কেনো তাকে ফোন দিবে, তার খোঁজ খবর নিবে? তার কি ঠে*কা পড়েছে নাকি খোঁজ খবর নেয়ার? আর সে কিনা ব*ল*দের মতো আবরার কে এসব বলেছে। এসব ভেবে দেয়ালে নিজের মাথা পি*টা*তে ইচ্ছা করছে আরশির। এখন নিশ্চয় এই অ*সভ্য লোক তার কথার মজা উ*ড়া*বে, তাকে খোঁ*চা দিবে। আরশি একটা ঢো*ক গি*ল*লো। নাহ দ*মে গেলে চলবে না। নাহলে এই লোক তাকে আরও ল*জ্জা দিবে। আরশি নিজেকে বুঝ দিয়ে গলা ঝা*ড়*লো। ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,
— আমি ঠিক আছি। আমার আবার কি হবে? আর কোথায় আমি রে*গে আছি? কিছুই হয় নি আমার। কিন্তু আপনি কেনো এতো রাতে ফোন করেছেন?
আরশির কথা বার্তা অ*স্বাভাবিক লাগলো আবরারের। কিছু একটা মাথায় আসতেই শ*য়*তানি হাসি দিলো সে। বললো,
— তুমি যে আমার পিএ তা কি ভু*লে গেছো মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?
আরশি মুখ বা*কি*য়ে বললো,
— আমি আপনার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, পার্সোনাল সম্পত্তি না যে যখন ইচ্ছা তখন ফোন করবেন।
আবরার আরশির কথা শুনে বিড়বিড় করে বললো,
— হতে কতক্ষন?
আরশি স্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলো না আবরারের কথা। কপাল কুঁ*চ*কে বললো,
— কি বলছেন এতো আস্তে? কিছুই তো শুনতে পাচ্ছি না। আর কি জন্য ফোন দিয়েছেন জলদি বলুন।
আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,
— আমি তো অফিসিয়াল কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো অন্য একটা বিষয় জানতে ইচ্ছা করছে।
আরশির কপাল আরও কুঁ*চ*কে আসলো। জিজ্ঞাসা করলো,
— কি?
আবরার স*ন্দি*হান কণ্ঠে আরশি কে জিজ্ঞাসা করলো,
— তুমি কি আমাকে মিস করছিলে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? তোমার কথাগুলো শুনে মনে হলো তুমি আমাকে খুব বেশি মিস করছিলে। অপেক্ষা করছিলে আমি কখন তোমায় কল করবো। চাচ্ছিলে আমি ফোন করে তোমার খোঁজ খবর নেই। কিন্তু এমন টা না করায় ভীষণ অ*ভি*মান হয়েছে তোমার। আমার ধারণা কি ঠিক?
আবরারের কথাগুলো শুনে কান গরম হয়ে আসলো আরশির। বুঁকের ধু*ক*পু*কা*নি বে*ড়ে গেছে তার। ঠিক এটারই ভ*য় পাচ্ছিলো সে। আর তাই হলো। আবরার ধরে ফেলেছে আরশির রা*গ করে বলা কথাগুলোর মানে। আরশি শুকনো একটা ঢো*ক গি*ল*লো। তার শ্যাম মুখশ্রী ফ্যা*কা*সে বর্ণ ধারণ করলো। এখন কি বলবে সে? অন্যদিকে আরশির কোনো সারা শব্দ না পেয়ে আবরার ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। বলে উঠলো,
— তারমানে আমি যা ভাবছি তাই ঠিক? তুমি আমাকে মিস করছিলে? কিন্তু কেনো মিস করছিলে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?
আরশি ফোন টা কানের কাছ থেকে সরিয়ে দুই তিনবার বড় বড় শ্বাস নিলো। মনে মনে নিজেকে বললো,
— যেভাবেই হোক কথা কা*টা*তে হবে। নাহলে এই অ*সভ্য এমপি সাহেব আমাকে ল*জ্জা দিতেই থাকবে। তারচেয়ে বড় কথা উনি ভাববে আমি বে*হা*য়া। নাহ, উনাকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না। আর আমারও নিজেকে সামলাতে হবে। আমার উনার প্রতি দু*র্ব*ল হওয়া মোটেও ঠিক নয়।
আরশি ফোন টা আবার কানের কাছে নিলো। ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,
— এসব গাঁ*জা*খু*রি চি*ন্তা ভাবনা করা ছাড়ুন। আমি আবার আপনাকে মিস করতে যাবো কেনো? ইন ফ্যাক্ট আমার ফোনে তো আপনার নাম্বার টাও সেভ করা নেই। তাই আমি অন্য একজন কে ভেবে আপনাকে কথাগুলো বলে ফেলেছি। তাই এসব আ*ও*ফা*ও ভাবনা মাথা থেকে ঝে*ড়ে ফেলুন। আর আমি আপনার পিএ আপনার অফিসে, বাসায় আসার পর আমি আপনার পিএ নই আর আপনিও আমার বস নন। তাই যখন তখন ফোন দিবেন না। আমি পড়তে বসেছি। আশা করছি আর ফোন দিবেন না।
কথা শেষ করে খ*ট করে কল কে*টে দিলো আরশি। আবরার কে কিছু বলার সুযোগটাও দিলো না। ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ছাড়লো সে। এমন টা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না তার। চুলগুলো খা*ম*চে ধরলো সে। আবরারের সাথে এভাবে কথা বলে বুকের মধ্যে কেমন একটা চি*ন*চি*ন ব্য*থা অনুভব করছে আরশি, ভীষণ ক*ষ্ট হচ্ছে তার। চোখে জল চলে এসেছে কিন্তু গ*ড়ি*য়ে পড়তে দিচ্ছে না। আরশি নাক টে*নে বিড়বিড় করে বললো,
— কেনো এমন হচ্ছে আমার সাথে? কেনো? এ কোন অ*সুখে আ*ক্রা*ন্ত হলাম আমি? আমি তো উনাকে নিয়ে ভাবতে চাই না। তবুও কেনো উনি সর্বদা আমার ভাবনায় বিচরণ করে? কেনো আমি নিজেকে, নিজের অনুভূতি কে ক*ন্ট্রো*ল করতে পারছি না? আমি তো এমন নই। কোথায় অন্য কাউকে হাজার টা ক*ড়া কথা শুনালেও তো আমার কিচ্ছু যায় আসে না। তবে এমপি সাহেবের বেলায় এমন কেনো? তাকে কেনো দুটো ক*ড়া কথা শুনাতে আমার বুক কাঁ*পে? কেনো ক*ষ্ট হয়? কেনো? কেনো? আমার এই কেনোর জবাব কে দিবে? আর… আর এমপি সাহেব তো আমাকে আর ফোন ও দিবে না হয়তো আজকের ব্যবহারের পর।
আরশি আরও শ*ক্ত করে চুল খা*ম*চে ধরলো। এমন সময় তার ফোন টা ভা*ই*ব্রে*ট করে উঠলো। আরশি দ্রুত ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো আবরারের নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। অ*জান্তেই আরশির ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসির রেখা ফু*টে উঠলো। মেসেজ টা ওপেন করে দেখলো তাতে লেখা,
— তুমি আ*স্ত একটা বে*য়া*দব মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। বসের মুখের উপর কিভাবে কল কে*টে দাও হ্যা? কালকে আসো অফিসে তারপর তোমার বে*য়া*দ*বি ছা*ড়া*নোর ব্যবস্থা করছি আমি।
আবরারের মেসেজ টা পড়ে হাসলো আরশি। মনের মধ্যে অদ্ভুত প্রশান্তির দেখা মিললো যেনো। মেসেজ দিবে না, দিবে না করেও দিয়ে ফেললো।
— আপনি একটা অ*সভ্য লোক এমপি সাহেব…
অপর প্রান্তে আবরার ও আরশির মেসেজ পড়ে হাসলো। মাথা ঝা*কি*য়ে বললো,
— আমি তো অ*সভ্যই। তবে সবার জন্য না।
নিচ থেকে আহিয়ানার চি*ৎ*কার শুনে ফোন রেখে বাইরে আসলো আবরার। ডিনার করার জন্য ডা*ক*ছে তাকে। অন্যদিকে আরশি ও ফোন রেখে পড়ায় মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলো।
——–
ক্লাস শেষে ভার্সিটি থেকে বের হলো আরশি আর তার বন্ধুরা। আহিয়ানা বললো,
— আজকে আমি তোদের সবাই কে লাঞ্চ ট্রিট দিবো।
আবির আর রাহুল লা*ফি*য়ে উঠে বললো,
— সত্যিই?
আহিয়ানা ভাব নিয়ে বললো,
— অবশ্যই মি*থ্যা কেন কমু?
আবির দাঁ*ত বের করে বললো,
— চল, চল আজকে তোরে ফ*কি*র বা*না*মু।
আহিয়ানা ভাবের সাথে বললো,
— হমু না ফ*কি*র। কতো খাইতে পারোস দেখমু।
আরশি ঘড়ি দেখে মুখ টা কালো করে বললো,
— আমি আসতে পারবো না রে। আমাকে অফিসে যেতে হবে। এমনিতেই লে*ট হয়ে গেছি আজকে। ঠিক টাইমে পৌঁছাতে পারবো কিনা কি জানি? তোরা যা।
আরশির কথায় সবার মুখ টা ছোট হয়ে গেলো। মোহনা বললো,
— আহি দোস্ত আমরা অন্য একদিন ট্রিট টা নেই। আজকে তো আরুর সময় নাই। যেদিন ছুটি থাকবে সেদিন যাবো।
সবাই মোহনার কথায় সায় জানালো। কিন্তু আরশি ওদের কে বললো,
— আরে তোরা যা তো। একদিন আমি না থাকলে কি হবে? আমি নাহয় অন্যদিন আহির থেকে ট্রিট নিয়ে নিবো। তোরা এনজয় কর।
কেউ রাজী হলো না। তারা কিছুতেই যাবে না আরশি কে ছাড়া। আরশি অনেক বুঝিয়ে ওদের রাজী করালো। একটা লাঞ্চ ই তো। তাকে ছাড়া করলে কি এমন হবে? শুধু শুধু ওর জন্য কেনো ওরা মিস করবে? সব মুখ কালো করে আহির সাথে গেলো। আর আরশি হাঁ*টা ধ*র*লো রিকশা নেয়ার জন্য। কিন্তু একটু আ*গা*তেই অনেক গুলো গাড়ি এসে থামলো আরশির সামনে। আরশি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো গাড়িগুলোর দিকে।
চলবে?