#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩২
ফ্রেস হয়ে টাওয়াল দিয়ে মাথা মু*ছ*তে মু*ছ*তে বের হলো আবরার। চো*রা চোখে আবরারের দিকে তাকালো আরশি। অমনি আবরারের চোখে চোখ পড়ে গেলো তার। হৃদযন্ত্র টা লা*ফি*য়ে উঠলো আরশির। শুকনো ঢো*ক গি*লে দ্রুত নজর সরিয়ে নিলো। অপেক্ষা করতে লাগলো আবরারের কিছু খোঁ*চা মা*রা কথার। আরশির অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসতে লাগলো আবরার। কিন্তু কিছু বললো না। নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে বেলকনি তে চলে গেলো। হাফ ছেড়ে বাঁচলো আরশি। দ্রুত আবরারের দেয়া প্যাকেট টা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছু*ট*লো।
——–
শাওয়ার নিয়ে ভীষণ বি*প*দে পড়লো আরশি। সে তো টাওয়াল আনে নি। তখন ওয়াশরুমে ঢুকে হুস হারিয়ে ফেলেছিলো সে। মনে হচ্ছিলো শাওয়ার না নিতে পারলে শান্তি পাবে না। তাই বাম ডান চি*ন্তা না করে শাওয়ার নিয়ে ফেলেছে সে। কিন্তু এখন কি করবে ভেবে কপাল চা*প*ড়া*লো আরশি। হ*তা*শ হয়ে আবরারের দেয়া প্যাকেট টা খুললো সে। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো শুভ্র সালোয়ার কামিজ। সালোয়ার কামিজ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আরশি। প্যাকেটে যদি শাড়ি থাকতো তাহলে তার যে কি অবস্থা টা হতো! ভাগ্যিস শাড়ি নেই নাহলে সারারাত ওয়াশরুমে বসে কা*টা*তে হতো তার।
আরশি ড্রেস টা পড়ে গায়ে ওড়না জড়িয়ে পা টিপে টিপে বেরিয়ে আসলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আবরার নেই। বুঝলো আবরার বেলকনি তে আছে। চুল দিয়ে ট*প*ট*প করে পানি পড়ে জামা ভিজে যাচ্ছে আরশির। বি*র*ক্ত হয়ে আরশি চুলগুলো এক হাতে মুঠ করে নিজের থেকে কিছু টা দূরে সরিয়ে দিলো, যাতে গায়ে পানি না পড়ে। তারপর টাওয়াল খুঁজতে লাগলো সে।
অন্যদিকে ফোনে কথা বলছিলো আবরার। কথা শেষ হতেই কল কে*টে রুমে প্রবেশ করলো সে। কিন্তু রুমে প্রবেশ করে সামনে তাকাতেই থ*ম*কে গেলো আবরার। এক শুভ্র পরী তার রুমে হেঁটে বেড়াচ্ছে। তার এ*লো*মে*লো, ভেজা দীঘল কালো কেশ হতে ট*প*ট*প করে পানি পড়ছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ বি*র*ক্ত পরী টা। তবে সেই বি*র*ক্তি ভ*রা চেহারায় ও যেনো আলাদা মুগ্ধতা বিরাজ করছে। কি স্নিগ্ধ লাগছে তাকে! আবরার একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইলো তার সেই একান্ত ব্যক্তিগত পরীটার দিকে। মনে মনে ভাবলো,
— আচ্ছা কারোর বি*র*ক্তি ভ*রা মুখ ও বুঝি এতো সুন্দর হয়? নাকি আমার কাছে সুন্দর লাগছে? কাউকে ভালোবাসলে বুঝি তাকে সব অবস্থাতেই সুন্দর লাগে! আমার যে ইচ্ছা করছে সারাজীবন এভাবে তাকিয়ে থাকতে? তবুও বুঝি এ মুগ্ধতা শেষ হবার নয়।
আবরার যেনো এক ঘো*রে*র মাঝে চলে গেলো। ধীর পায়ে এগোতে লাগলো আরশির দিকে। কিছুদূর এগোতেই পা পি*ছ*লে ধু*ম করে ফ্লোরে পড়লো সে। মুগ্ধতা উ*বে গেলো তার। চোখ মুখ কুঁ*চ*কে ফেললো সে। অন্যদিকে কোনো কিছু পড়ার শব্দে চ*ম*কে তাকালো আরশি। আবরার কে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। তারপর হঠাৎ খিলখিল করে হাসা শুরু করলো সে। আরশি কে হাসতে দেখে রে*গে গেলো আবরার। রা*গে চি*ৎ*কার করে বললো,
— স্টু*পি*ড মেয়ে একে তো সারা ফ্লোরে পানি ছড়িয়ে রেখেছো। তারপর আমি পড়ে গেছি দেখার পরও না তু*লে হাসছো। তোমাকে তো আমি….
আবরারের রা*গ কে পা*ত্তা দিলো না আরশি। কোমরে হাত রেখে বললো,
— বেশ হয়েছে। আমার সুন্দর, কিউট, সুইট নখ কে*টে ফেলার শা*স্তি এটা। ভাবা যায় এমপি সাহেব ফ্লোরে আ*ছা*ড় খেয়ে পড়েছে। মানুষ জানলে আপনার আর সম্মান থাকবে না। আরে আপনি কেমন এমপি বলেন তো নিজেকেই সামলাতে পারছেন না, জনগন কে কি করে সামলাবেন? আর আমাকেই বা কি করে সামলাবেন?
ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো আবরার। আরশির দিকে এগোতে এগোতে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— জনগন কে কিভাবে সামলাবো তা তোমার না জানলেও চলবে। তবে তোমাকে কিভাবে সামলাবো তা অবশ্যই দেখাতে পারি।
আবরার কে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে ভী*ত হলো আরশি। হাসি বন্ধ হয়ে গেলো তার। এই বুঝি আবরার তাকে আ*ছা*ড় মা*র*লো! আরশি কে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ কিছু একটা ভাবতে দেখে ওর হাত চে*পে ধরলো আবরার।
আবরার হাত ধরতেই এক প্রকার লা*ফি*য়ে উঠলো আরশি। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
— এই এই হাত ধরলেন কেনো? ছাড়ুন বলছি! এখন কি আমাকে তু*লে আ*ছা*ড় মা*র*বে*ন নাকি? আপনি আপনার দো*ষে পড়েছেন। আমি কি বলেছি পড়ে যান? না দেখে হাঁটলেন কেনো?
বাঁ*কা হাসলো আবরার। আরশির কোমর জড়িয়ে নিজের আরও কাছে টে*নে আনলো। আবরারের গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে, গলায় আ*ছ*ড়ে পড়তেই চোখ বন্ধ করে ফেললো আরশি। আবরারের ঠোঁট আরশির কান স্পর্শ করতেই থ*র*থ*র করে সর্বাঙ্গ কেঁ*পে উঠলো আরশির। আবরার আরশির কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বললো,
— তুমি আমার একটা মাত্র আদরের বউ। তোমাকে কি আমি আ*ছা*ড় মা*র*তে পারি বলো? তবে আদর করতে পারি, যখন তখন চু*মু টু*মু খেতে পারি। এখন এই মুহূর্তে আমার তোমাকে খুব করে একটা চু*মু দিতে ইচ্ছা করছে। দিয়েই ফেলি কি বলো? মনের ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে কি লাভ? বলা তো যায় না কখন কি হয়ে যায়। পরে যদি আর চুমু দেয়ার সুযোগ না পাই? অনেক বড় ল*স হয়ে যাবে তো!
কথা শেষ করেই আরশির কানের ল*তি*তে আলতো করে একটা চু*মু খেলো আবরার। আর স*হ্য করতে পারলো না আরশি। এক ধা*ক্কা*য় আবরার কে দূরে সরিয়ে চোখ বন্ধ করে জো*রে জো*রে শ্বাস টা*ন*তে লাগলো।
মাথায় কারোর হাতের ছোঁয়া পেতেই চোখ খুললো আরশি। বুঝতে পারলো আবরার তার চুল মু*ছে দিচ্ছে। এই চুল মু*ছা*র জন্যই হয়তো এগিয়ে এসেছে আবরার। আর সে কি না কি ভাবলো। আবরার আরশির চুল মু*ছ*তে মু*ছ*তে দু*ষ্টু কণ্ঠে বললো,
— এভাবে ভেজা চুলে আমার সামনে এসে আমাকে পা*গ*ল করার ধা*ন্দা ছিলো বুঝি মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি! তুমি কিন্তু দিনদিন ভা*রি দু*ষ্ট হয়ে যাচ্ছ। তোমার আদর লাগবে বললে কি আমি আদর করতাম না! এভাবে ইশারা ইঙ্গিতে বোঝানোর কি আছে? আমি তোমার একমাত্র জামাই, তার কাছে তুমি আদর চাইতেই পারো। তোমার পুরো অধিকার আছে। এরপর থেকে আদর লাগলে সোজাসোজি বলে দিবে কেমন! পুরো অধিকারের সাথে এসে বলবে ‘জামাই আমার আদর চাই’।
আবরারের কথা শুনে কান গরম হয়ে গেলো আরশির। মুখ টা হা হয়ে গেলো তার। মনে মনে আবরার কে একশো একবার পা*গ*ল এমপি বলতে ভু*ল*লো না সে। তবে মুখে কিছুই বললো না। কারণ এখন কিছু বললে আবরার তাকে আবার অন্যকিছু বলে লজ্জা দিবে। আরশি বুঝতে পারছে না আজ তার মধ্যে এতো লজ্জা কোথা থেকে আসলো! আবরার ও আর কিছু বলে জ্বা*লা*লো না আরশি কে। যত্ন সহকারে ধীরে ধীরে আরশির চুল মু*ছে দিতে লাগলো। সারাদিন এতো দৌ*ড় ঝাঁ*প, দুইদিন যাবৎ ঠিকমতো না ঘুমানোর কারণে ভীষণ ক্লা*ন্ত আরশি। আর এখন মাথায় এতো যত্নের ছোঁয়া পেয়ে তার মনে হচ্ছে সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে যাবে। আবরার সুন্দর করে আরশির চুল মু*ছে দিয়ে তাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসালো। চিরুনি চালিয়ে সুন্দর করে চুল গুলো মেলে দিলো। যাতে দ্রুত শুকিয়ে যায়। আয়নায় চোখ যেতেই দেখলো তার শুভ্র পরী ঘুমে ঢু*ল*ছে। যেকোনো সময় ঠা*স করে পড়ে যাবে। এই মুহূর্তে আরশি কে দেখে মনে হচ্ছে সে কোনো বাচ্চা। আরশি কে এভাবে ঢু*ল*তে দেখে নিঃশব্দে হাসলো আবরার। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— নিজে নিজে বেডে যাবে নাকি আমার কোলে উঠে যেতে চাও?
আবরারের কথা কানে যাওয়া মাত্র লা*ফি*য়ে উঠলো আরশি। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে তার। এই মুহূর্তে আবরারের সাথে ত*র্ক করতে মোটেও ইচ্ছুক নয় সে। এনার্জি নেই আর শরীরে। আরশি বন্ধ হয়ে যেতে চাওয়া চোখ জোড়া কোনো মতে টে*নে খুললো। ঢু*ল*তে ঢু*ল*তে বেডের এক সাইডে গিয়ে এ*লো*মে*লো হয়ে শুয়ে পড়লো সে। আবরার আলতো হেসে এগিয়ে আসলো। রুমের লাইট অফ করে টেবিল ল্যাম্প জ্বা*লি*য়ে দিলো। আরশির পাশে শুয়ে পড়লো সে। দুই মিনিট পর আরশি অনুভব করলো কেউ তাকে নিজের দিকে টে*নে নিচ্ছে। বাঁ*ধা দেয়ার আগেই বুঝতে পারলো লোক টা তাকে শ*ক্ত করে জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ গু*জে দিয়েছে। লোকটার গরম নিঃশ্বাস এসে বা*রি খাচ্ছে আরশির ঘাড়ে। আরশি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো,
— এমন করছেন কেনো এমপি সাহেব? আমাকে ছাড়ুন প্লিজ। ঘুমাতে দিন না!
আবরার আরশির ঘাড়ে মুখ গু*জে রেখেই বললো,
— ঘুমাও কে মানা করেছে? তুমিও ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।
আরশি জড়ানো কণ্ঠে বললো,
— এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে কি করে ঘুমাবো? আমার শ্বাস নিতে স*ম*স্যা হচ্ছে। আপনি বালিশ জড়িয়ে ঘুমান।
আবরার আরশি কে আরেকটু শ*ক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
— জীবনের এতগুলো বছর তো বালিশ কে জড়িয়ে ধরেই ঘুমালাম। এবার বউ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর পালা বুঝতে পেরেছো মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি? এখন আর বি*র*ক্ত করো না। নাহলে কিন্তু অন্য কিছু করা শুরু করবো।
চুপ রইলো আরশি। আর ন*ড়া*চ*ড়া করলো না। আবরার ভাবলো ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। এভাবেই কিছু সময় অতিবাহিত হলো। হুট করে আরশি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠলো,
— ভালোবাসেন আমায় এমপি সাহেব?
মনে মনে চ*ম*কা*লো আবরার। এভাবে হুট করে আরশির কাছ থেকে এমন প্রশ্ন আশা করে নি সে। নিশ্চুপ রইলো আবরার। যেনো গভীর ঘুমে ত*লি*য়ে আছে। আবারও নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে গেলো রুমে। আরশির গাঢ় নিঃশ্বাস পড়তেই আবরার বুঝলো গভীর ঘুমে ত*লি*য়ে গেছে আরশি। ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করলো সে। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় দেখতে লাগলো তার শুভ্র পরীর মায়াবী মুখ টা। এই অদ্ভুত চোখের অধিকারী মেয়েটা এখন সম্পূর্ণ রূপে তার, এই মেয়েটার উপর এখন শুধুমাত্র তার অধিকার আছে। এই মেয়েটার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকানোর অধিকার শুধুমাত্র তার।
এই তো সেই অদ্ভুত চোখের অধিকারী মেয়ে টা, যার চোখের দিকে তাকিয়ে সময় থ*ম*কে গিয়েছিলো আবরারের। এই তো সেই অদ্ভুত চোখের অধিকারী মেয়ে টা, যাকে এক পলক দেখার জন্য সে অ*স্থি*র হয়ে থাকতো। এখন থেকে মেয়ে টা সারাক্ষন তার চোখের সামনে থাকবে, তার স্ত্রী রূপে। এসব ভাবতেই প্রশান্তির হাসি খেলে গেলো আবরারের ঠোঁটে। সে আরশির দুই চোখে আলতো করে পরপর কয়েকটা চু*মু খেলো। মৃদু স্বরে বললো,
— সবসময় ‘ভালোবাসি’ শব্দ টা মুখে আনা কি জ*রু*রী? মুখে না বললে বুঝি ভালোবাসা যায় না? আমার এই চোখে কি নিজের জন্য অসীম ভালোবাসা দেখতে পাও না মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি? আমার এই চোখ কি তোমায় জানান দেয় না আমার মনে তোমার জন্য কতটুকু জায়গা রয়েছে! কতোটা ভালোবাসা জমে আছে এই বুঁকে তা কি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করো না! ভালোবাসি তো, ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। অন্যদের মতো ভালোবাসি, ভালোবাসি বলে মুখে ফে*না তু*ল*তে পারবোনা আমি। তবে নিজের প্রতিটা কাজের মাধ্যমে তোমায় বুঝিয়ে দিবো আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি।
আরশির কপালে বেশ সময় নিয়ে চু*মু খেলো আবরার। তারপর পুনরায় আরশির ঘাড়ে মুখ গু*জে চোখ বন্ধ করলো সে। অন্যদিকে চোখ বন্ধ অবস্থায় আরশির ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এ যেনো অনেক বড় কিছু প্রাপ্তির হাসি।
চলবে?
#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩৩
নিস্তব্ধ রাত। চারপাশে মানুষের কোনো অস্তিত্ব, সারাশব্দ নেই। শোনা যাচ্ছে শুধুমাত্র ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। গা ছ*ম*ছ*মে পরিবেশ। এমন সময় একটা প*রি*ত্যা*ক্ত বাড়ির সামনে একটা কালো গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে নেমে আসলো একজন লোক। তার সাথে আরও কিছু লোক নামলো। লোক টা পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। পিছন পিছন বাকি লোকগুলোও আসতে লাগলো। বাড়ি টা দেখলে মনে হবে এটা কোনো ভূ*তে*র বাড়ি। অন্য কেউ হলে হয়তো ভ*য় পেতো। কিন্তু সেই ব্যক্তির মাঝে ভ*য়ে*র লেশমাত্র নেই।
ভিতরে প্রবেশ করতেই একটা লোক এগিয়ে আসলো। একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,
— বস আপনি আসলেন তাহলে?
লোক টা চেয়ারে পায়ের উপর পা তু*লে বসে পড়লো। পা নাচাতে নাচাতে বললো,
— হ্যা রে কাল্লু। আসতে তো আমাকে হতোই। আমার উদ্দেশ্য যে এখনো সফল হয়নি! এমপি আবরার বিয়ে করেছে শুনেছিস তো নাকি?
কাল্লু অবাক হয়ে বললো,
— কি বলেন বস? বিয়ে করে ফেলেছে?
লোক টা চোখ বন্ধ করে বললো,
— হু। কেন তুই জানতিস না?
কাল্লু মুখ গো*ম*ড়া করে বললো,
— কিভাবে জানবো বস? সারাদিন তো এই ভূ*তে*র ঘরে ঢুকে থাকি। তবে আমার কিছু প্রশ্ন আছে বস…
লোক টা চোখ বন্ধ অবস্থায় ই বললো,
— কি প্রশ্ন কর।
কাল্লু কৌতূহলি কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— আচ্ছা বস আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন? আর এমপি বিয়ে করে ফেললো তারপরও আপনি এতো শান্ত কি করে? আর এতদিনে আপনি এমপি কে মা*রা*র কোনো চেষ্টাই বা করলেন না কেনো?
লোক টা চোখ খুলে হাসলো। যেনো সে জানতো কাল্লু এমন কিছুই প্রশ্ন করবে। সে শান্ত কণ্ঠে বললো,
— সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। সেই সময় ওই আবরার আমাকে ধরার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। তখন যদি আমি ওকে মা*রা*র চেষ্টা করতাম তাহলে নিজেই হয়তো ফেঁ*সে যেতাম। তাই নিশ্চুপ ছিলাম আমি। যাতে করে আবরার শা*লা আমার কথা ভুলে যায়। আর এতদিনে ওর মাথা থেকে হয়তো আমার ব্যাপার অনেকটাই বেরিয়ে গেছে। ঠিক এই সময়টার অপেক্ষাই আমি করছিলাম। যখন ও আমার কথা অনেকটাই ভুলে বসবে তখন ওর উপর অ্যা*টা*ক করবো আমি। তবে শা*লা নিজে আর নিজের পরিবার কে এতো ক*ড়া সি*কি*উ*রিটির মধ্যে রাখে যে কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
কাল্লু বুঝলো তার বসের প্ল্যান। তার বস বড্ড চালাক এটা মানতেই হবে। সে উদাস কণ্ঠে নিজের বস কে বললো,
— বস আমার আর এমন লাইফ ভালো লাগছে না। কিছু একটা করুন। আর কতদিন এই ভূ*তে*র বাড়িতে থাকবো? বাইরেও যেতে পারি না। যদি ওই এমপির লোকেরা ধরে ফেলে!
কাল্লুর কথা শুনে শ*য়*তা*নি হাসি দিলো লোক টা। হুট করে নিজের পকেট থেকে গা*ন বের করে কাল্লুর দিকে তা*ক করলো সে। চ*ম*কে উঠলো কাল্লু। ভী*ত কণ্ঠে তো*ত*লাতে তো*ত*লাতে বললো,
— ব… বস ক… কি করছেন?
লোক টা এবার শব্দ করে হাসতে লাগলো। তার হাসির শব্দে অ*ন্ত*রা*ত্মা কেঁ*পে উঠলো কাল্লুর। লোক টা হাসতে হাসতে বললো,
— কেনো তুই ই তো বললি তোর আর এমন লাইফ ভালো লাগছে না। তাই তোকে এমন লাইফ থেকে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করছি!
কাল্লু বোধহয় এবার কেঁ*দে*ই ফেলবে। সে কাঁ*প*তে কাঁ*প*তে হাত জো*র করে বললো,
— এটা কি বলছেন বস? আমি ম*র*তে চাই নি। আমি বাঁচতে চাই। এমন করবেন না বস। এতগুলো বছর ধরে আপনার গো*লা*মী করছি। আপনি কি করে আমার সাথে এমন টা করতে পারেন?
লোক টা নিজের গা*ন কাল্লুর বুক বরাবর তা*ক করে বললো,
— মাঝে মাঝে মালিক কে বাঁচাতে গো*লা*মদের জীবন ত্যা*গ করতে হয় জানিস না? তুই আর কোনো কাজের নেই। ওই আবরার শা*লা তোকে পেলে আমিও ধরা পড়ে যাবো। তুই আমার অনেক বেশি কাছের লোক ছিলি তাই তোকে মা*র*তে চাই নি। কিন্তু এখন আমার মা*র*তেই হবে তোকে। নাহলে আমার এতো বছরের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে তা তো আর আমি হতে দিতে পারি না।
কথা শেষ করেই কাল্লুর গায়ে শু*ট করে দিলো লোক টা। মাটিতে লু*টি*য়ে পড়লো কাল্লু। চি*র*ত*রে চোখ বন্ধ করার আগে চোখের সামনে ভে*সে উঠলো পরিচিত একটা মুখ। কানে বা*জ*তে লাগলো কিছু কথা।
— “লো*ভে পা*প, পা*পে মৃ*ত্যু”।
হ্যা এই কথা তাকে তার স্ত্রী বলেছিলো। একটা এতিম মেয়ের সাথে প্রেম ছিলো তার। প্রেম করে বিয়ে করেছিলো দুইজন। মেয়ে টা তাকে বড্ড ভালোবাসতো। কিন্তু যখন জানতে পারে সে খা*রা*প কাজ করে তখন অনেক বুঝিয়েছিল মেয়ে টা তাকে। পা*পে*র রাস্তা থেকে ফিরে আসতে বলেছিলো। কিন্তু কাল্লু তার একটা কথা শুনে নি। টাকার লো*ভে অ*ন্ধ ছিলো সে। এতোটাই অ*ন্ধ যে নিজের স্ত্রী কে মা*র*ধ*র করতো সে। একদিন তার স্ত্রী কে এতোটাই মা*র*ধ*র করেছিলো যে মেয়ে টা না ফেরার দেশে চলে যায়। তখন এই বসের সহায়তায় নিজের স্ত্রী কে মাটি চা*পা দিয়েছিলো সে। সব স্মৃতি আজ তার চোখের সামনে ভা*স*ছে। আজ হয়তো তার মৃ*ত্যু*র পর তাকেও কোনো এক জায়গায় মাটির নিচে চা*পা দেয়া হবে। নিজের লো*ভে*র শাস্তি পেয়ে গেলো সে। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো কাল্লুর।
বস লোক টা চেয়ার থেকে উঠে কাল্লুর নাকের সামনে হাত দিয়ে চেক করলো সে ম*রে*ছে কিনা। শ্বাস পড়ছে না দেখে উঠে দাঁড়ালো সে। নিজের সাথে থাকা লোকদের বললো,
— লা*শ মাটি চা*পা দিয়ে দিও। কেউ যেনো এর হ*দি*স না পায়।
সবাই মাথা ঝা*কা*লো। লোক টা আর দাঁড়ালো না। দা*প*টের সাথে হেঁটে বেরিয়ে গেলো সে। যেনো কিছুই হয় নি।
——
— বন্যাআআ! তুমি কি আমায় ভা*সি*য়ে দিবে তোমার ক্রো*ধে*র বন্যায়!
বি*র*ক্ত হলেন মিসেস বন্যা। মনে মনে বললেন,
— বুড়ো হয়ে গেলো, তবুও আগের স্বভাব ছুটলো না।
মিসেস বন্যা কে পা*ত্তা দিতে না দেখে আব্বাস আহমেদ দুঃ*খি দুঃ*খি কণ্ঠে বললেন,
— ও গো বন্যা, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না আমার হা*হা*কার? আর কতক্ষন রা*গ করে থাকবে? এবার তো কথা বলো? আমার কর্ণ তোমার গলার মিষ্টি মধুর স্বর শোনার জন্য আ*কু*পা*কু করছে।
মনে মনে হাসলেন মিসেস বন্যা। বুড়ো টা কে একটু শা*স্তি দেয়া দরকার। তাই কোনো কথা বললেন না তিনি। চুপচাপ শুয়ে পড়লেন। একটু আগে আব্বাস আহমেদ ভু*ল*ব*শত মুখ ফ*স*কে বলে ফেলেছেন আবরারের বিয়েতে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি সব টা জানতেন। তারপর থেকেই মিসেস বন্যা মুখে তা*লা মে*রে বসে আছেন। তাকে না জানিয়ে কি করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হলো? ছেলে নাহয় তার অমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিন্তু এই বুড়ো সব জেনেও তাকে বললো না কেনো? কথা বলবেন না তিনি, কিছুতেই বলবেন না।
বউ কে কথা না বলেই শুয়ে পড়তে দেখে হ*তা*শ হলেন আব্বাস আহমেদ। বউ টা তার বড্ড জে*দি। একসময় এই জে*দে*র প্রেমেই পড়েছিলেন তিনি আর আজ…. হা হু*তা*শ করতে করতে তিনি ও শুয়ে পড়লেন। মনে মনে নিজের ছেলে কে ব*ক*তে ভুললেন না। ছেলে তার আরামে বউ নিয়ে আছে আর সে এক অ*স*হায় পুরুষ। তার বউ তার সাথে কথা বলছে না, ফিরেও তাকাচ্ছে না, পা*ত্তাও দিচ্ছে না। সব তার ওই ব*দ ছেলের জন্য হয়েছে।
——
ফুলে সজ্জিত কক্ষে গাল ফু*লি*য়ে বসে আছে আহি। রাদিফ অনেকক্ষণ ধরেই কথা বলার চেষ্টা করছে আহির সাথে। কিন্তু আহি পা*ত্তা দিচ্ছে না। কারণ একটাই। সে বাবার বাড়ি থেকে আসতে চাচ্ছিলো না। আর রাদিফ তাকে ধ*ম*কে ধা*ম*কে নিয়ে এসেছে। বিষয় টা এমন নয় যে সে বাবা মাকে ছেড়ে আসতে চাচ্ছিলো না। বিষয় টা হলো সে বান্ধুবী কে ছেড়ে আসতে চাচ্ছিলো না।
রাদিফ গালে হাত দিতে অ*স*হায় চোখে তাকিয়ে আছে নিজের বউয়ের দিকে। শেষে না পেরে হ*তা*শ কণ্ঠে বললো,
— হয়েছে তো! আর কতক্ষন গাল ফু*লি*য়ে রাখবে? আজকের রাত টা আমাদের জন্য কতো স্পেশাল বলো। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আ*ব*দ্ধ হলাম আমরা। আর তুমি সেই থেকে গাল ফু*লি*য়ে বসে আছো। এবার তো একটু কথা বলো। চকলেট দিলাম, ফুল দিলাম, গিফট দিলাম তবুও তোমার রা*গ গ*ল*ছে না?
রাদিফের দিকে একবার ত্যা*ড়া চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো আহি। আহি কে এবারও কোনো কথা না বলতে দেখে রাদিফ অ*ভি*মা*ন করে বললো,
— আচ্ছা যাও তোমার বান্ধুবীর কাছে। কথা বলতে হবে না আমার সাথে। আমি আজকেই চলে যাবো। তুমি থাকো তোমার বান্ধুবী কে নিয়ে।
রাদিফ কে সত্যি সত্যি উঠতে দেখে দ্রুত এগিয়ে আসলো আহি। রাদিফের কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরলো। বাঁকা হাসলো রাদিফ। শেষমেশ তার বউ টা লাইনে আসলো। আহি রাদিফের বুঁকে মাথা রেখে বললো,
— আমি রা*গ করেছি আর আপনি আমার রা*গ না ভা*ঙি*য়েই চলে যাচ্ছেন?
রাদিফ এক ভ্রু উঁচু করে বললো,
— রা*গ ভা*ঙা*নোর চেষ্টা করি নি বলছো?
থ*ত*ম*ত খেলো আহি। আসলে এতক্ষন ধরে তার রা*গ ভা*ঙা*নোর জন্য অনেক চেষ্টাই করেছে রাদিফ। নিশ্চুপ হয়ে রাদিফের বুঁকে লে*প্টে রইলো আহি। মনোযোগ সহকারে তার হৃদস্পন্দন শুনতে লাগলো। রাদিফ আহির চুলে নাক গু*জে ফিসফিস করে বললো,
— বউয়ের রাগ ভা*ঙ*লো তবে?
আহি লাজুক স্বরে বললো,
— হু…
হাসলো রাদিফ। হঠাৎ মাথা উঁচু করলো আহি। উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,
— রা*গ তো ভে*ঙে গেছে। আচ্ছা আপনি কি যেনো বলছিলেন আবার চলে যাবেন… কবে যাবেন?
হা হয়ে গেলো রাদিফ। এ কেমন বউ রে বাবা! বান্ধুবীর সাথে বাপের বাড়িতে রাজত্ব করবে বলে জামাই কে ভা*গা*নোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। রা*গ হলো রাদিফের। তার কোনো দাম নেই নাকি? সে আহির উন্মুক্ত ঘাড়ে একটা কা*ম*ড় বসিয়ে দিলো। ফিসফিস করে বললো,
— আমাকে রা*গি*ও না আহি। আর একটা ফা*ল*তু কথা শুনতে চাচ্ছি না এখন।
অ*ভি*মান হলো আহির। তার কথা ফা*ল*তু মনে হয়? সে রাদিফের কোল থেকে নামতে চাইলে শ*ক্ত করে আঁ*ক*ড়ে ধরলো রাদিফ। কা*ম*ড় দেয়া জায়গায় আলতো করে চু*মু বসিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— ইটস রোমান্স টাইম জান। সো আর একবারও বি*র*ক্ত করবে না। এতক্ষন অনেক স*হ্য করেছি। এবার তোমার স*হ্য করার পালা।
ল*জ্জায় গাল লাল হয়ে আসলো আহির। সে তো শুধুমাত্র রাদিফ কে জ্বা*লা*নোর জন্য এমন করছিলো। আর তার ব*জ্জা*ত জামাই তাকে কিভাবে ল*জ্জা দিচ্ছে! নিজের ল*জ্জা লু*কা*তে রাদিফ কে ঝা*প্টে ধরে তার বুঁকে মুখ গু*জ*লো আহি। রাদিফ ও আলতো হেসে নিজের প্রিয়তমা কে আগলে নিলো।
চলবে?