#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩৬
বিশ মিনিট যাবৎ আবরারের সামনে বসে আছে আরশি। আর আবরার গালে হাত রেখে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু তাকানোতেই থেমে নেই আবরার, মাঝে মাঝে মিটমিট করে হাসছে সে। আরশি স্বেচ্ছায় আবরারের সামনে বসে আছে বললে ভু*ল হবে। আবরার আরশির এক হাত শ*ক্ত করে ধরে নিজের সামনে বসিয়ে রেখেছে। আরশি বেশ কয়েকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ছাড়ে নি আবরার। বরং হাতের বাঁধন আরও শ*ক্ত হয়েছে। সেই যে কোলে করে এনে নিজের সামনে বসিয়েছে আর ছাড়ার নাম নেই। কি এতো দেখছে কে জানে!
আবরারের কোনো হে*ল*দো*ল না দেখে বি*র*ক্ত হলো আরশি। এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কেমন টা লাগে! ভীষণ অ*স্ব*স্তি হচ্ছে তার। আবরারের এমন দৃষ্টি আর নিতে পারলো না আরশি। চোখ মুখ কুঁ*চ*কে বললো,
— স*ম*স্যা কি? মাথার কয়টা তার ছি*ড়ে*ছে আপনার? এভাবে অ*সভ্য, লু*চু লোকের মতো তাকিয়ে আছেন কেনো? হাত ছাড়ুন। আমার অ*স্ব*স্তি হচ্ছে।
ঠোঁট বা*কি*য়ে হাসলো আবরার। বললো,
— বউ এতো সুন্দর করে সেজেগুঁ*জে বসে থাকবে আর জামাই তাকাবে না এটা কি হয়! তোমার ভাগ্য ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ ভালো মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি।
আবরারের এতগুলো ‘ভীষণ ভালো’ শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আরশি। মুখ বি*কৃ*ত করে বললো,
— তা আমার ভাগ্য এতোটা ভালো হওয়ার কারণ টা কি শুনি।
লাজুক হাসি দিলো আবরার। যেনো আরশি অনেক লজ্জার কিছু জিজ্ঞাসা করেছে। স*ন্দে*হের চোখে তাকালো আরশি। এই লোকের হাবভাব সে বুঝে না। আরশির মনে হয় এই লোকের মাথার কয়েকটা তার সত্যিই ছি*ড়া আছে। নাহলে হুটহাট এমন আচরণ করে কেনো! আরশির ভাবনার মাঝে মুখ খুললো আবরার। লাজুক কণ্ঠে বললো,
— আমার মতো একটা অতি মাত্রায় ভদ্র বর পেয়েছো। এই জন্যই তো তোমার ভাগ্য ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালো।
চোখ বড় বড় করে তাকালো আরশি। মুখ টা হা হয়ে গেলো তার। কোনোরকমে হা করা মুখ বন্ধ করলো সে। মুখ বা*কি*য়ে বললো,
— এটাও আমাকে মানতে হবে? মানে আপনার চরম লেভেলের অ*সভ্য, অ*ভদ্র, লু*চু, বে*হা*য়া পুরুষ আবার অতি মাত্রায় ভদ্র! যেই সেই ভদ্র না অতি মাত্রায় ভদ্র!
আরশির রিঅ্যাকশন দেখে ভীষণ মজা পেলো আবরার। মনে মনে হাসলো সে। কিন্তু উপরে প্রকাশ করলো না। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে বউ কে এই রূপে দেখে কি করতো জানো?
কথা বলতে বলতে আরশির দিকে এগিয়ে আসলো আবরার। আবরার কে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে মাথা পিছিয়ে নিলো আরশি। তি*র্য*ক দৃষ্টিতে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— আমি তো শুধু দেখাতেই থেমে আছি। অন্য কেউ হলে এতক্ষনে বউ কে চুমু টুমু দিয়ে বসতো। তাহলে বুঝো আমি কতোটা ভদ্র। কিন্তু এখন যেহেতু তুমি আমাকে এতসব সুন্দর সুন্দর উপাধি দিয়েই দিলে তাহলে আমার দায়িত্ব সেই উপাধিগুলোর নাম রক্ষা করা। তাই না?
আবরারের কথায় ভী*ত হলো আরশি। দূরে সরে যাওয়ার প্রয়াস করলো কিন্তু সফল হলো না। তার পূর্বেই কোমর আঁ*ক*ড়ে ধরলো আবরার। সেকেন্ড ব্যয় না করেই আরশির অধরে অধর ডু*বি*য়ে দিলো। থ*ম*কে গেলো আরশি। হৃদস্পন্দন ও যেনো থেমে গেছে তার। ন*ড়া*চ*ড়া করার শক্তিটাও যেনো হা*রি*য়ে ফেলেছে সে। আবরারের গভীর স্পর্শ অনুভব করতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো আরশি। না বলা প্রিয় মানুষটার প্রথম গভীর ছোঁয়া হৃদয়ে ঝ*ড় তু*লে*ছে তার।
কিছু সময় পর আরশির কাছ থেকে সরে আসলো আবরার। তাকিয়ে দেখলো তার প্রিয়তমা নিজের অদ্ভুত সুন্দর আঁখি জোড়া মুদে রয়েছে। কোনো ন*ড়া*চ*ড়া নেই তার, যেনো জ্ব*ল*জ্যা*ন্ত মূর্তি। আরশির অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসলো আবরার। মেয়েটা কে এভাবে হুট করে স্পর্শ করার কোনো ইচ্ছা তার ছিলো না। কিন্তু কেনো যেনো আজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না সে। মেয়ে টা আবার রা*গ করবে না তো ভাবলো আবরার। পরক্ষনে নিজেই নিজের বি*রো*ধি*তা করে বললো তার বউ কে সে আদর করবে না তো কে করবে! তার বউ টা এতো কিউট, আদর না করে কি থাকা যায়! আবরারের ইচ্ছা হলো আরেকবার আরশির অধর স্পর্শ করতে, ওই অধরের মাঝে ডু*ব দিতে। কিন্তু নিজেকে দ*মি*য়ে নিলো সে। বলা তো যায় না যদি তার বউ একদিনে এতো চা*প স*ই*তে না পেরে অ*জ্ঞা*ন ট*জ্ঞা*ন হয়ে যায়!
নিজের আ*জ*গু*বি চি*ন্তা ভাবনা ত্যা*গ করে আরশির মুখে আলতো করে ফুঁ দিলো আবরার। এতেই কাজ হলো। ধীরে ধীরে চোখ খুললো আরশি। আবরারের মুখ টা নিজের অতি নিকটে আবিষ্কার করলো সে। লোক টা এখনো কেমন নি*র্ল*জ্জে*র মতো তাকিয়ে আছে! ঠোঁটের হাসি যেনো স*র*ছেই না। কিছু সময় আগের ঘটনা মনে পড়তেই আবরারের উপর থেকে চোখ সরিয়ে ফেললো আরশি। লজ্জায় মুখ র*ক্তি*ম বর্ণ ধারণ করলো যেনো।
প্রিয়তমার লজ্জা মিশ্রিত মুখের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো আবরার। ইচ্ছা হলো লজ্জা টা আরেকটু বাড়িয়ে দিতে। ঠোঁট বা*কি*য়ে হাসলো সে। আরশির সামনে থেকে উঠতে উঠতে ফিসফিস করে বললো,
— জীবনে প্রথমবার এতো মিষ্টি জিনিস টেস্ট করলাম। এখন বারবার টেস্ট করার অপেক্ষায়….
আবরারের কথা কানে যাওয়া মাত্র কান যেনো জ্ব*লে উঠলো আরশির। লজ্জায় হাঁ*স*ফাঁ*স করতে লাগলো সে। আরশির অবস্থা দেখে আবরার আর তার সামনে দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। বলা তো যায় না অতিরিক্ত লজ্জা পেলে যদি আবার তার সামনে আসতে না চায়! তখন তার কি হবে! তার তো আর ডজন খানেক বউ নেই, আছে একটামাত্র বউ। সুইট, সুইট বউ। কথাগুলো ভেবে নিজের অধরে হাত বু*লা*লো আবরার।
অন্যদিকে আবরার যেতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো আরশি। জো*রে জো*রে শ্বাস টা*ন*তে লাগলো। আরেকটু সময় আবরার সামনে থাকলে হয়তো দম আ*ট*কে যেতো তার। কিছু সময় আগের ঘটনা স্মরণ হতেই দুই হাতে মুখ চে*পে ধরলো আরশি। মনে মনে ঠিক করে নিলো আজ দুনিয়া উ*ল্টে গেলেও রুমে আসবে না। বাইরে বসেই রাত কা*টি*য়ে দিবে। যেই ভাবা, সেই কাজ। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো আরশি। নিচে এসে দেখলো তার শ্বশুর মশাই চোখে চশমা এঁ*টে কিছু একটা পড়ছেন। আরশির দিকে চোখ পড়তেই নিজের কাছে ডাকলেন তিনি। আরশি কে নিজের পাশে বসিয়ে বিভিন্ন গল্প জুড়ে দিলেন। আরশি ও তা*ল মি*লা*লো উনার সাথে।
আবরার ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আরশি রুমে নেই। বুঝলো আরশি পা*লি*য়েছে। সে ভাবলো কিছুক্ষন নাহয় বাইরেই থাকুক। তাতে যদি মেয়েটা স্বাভাবিক হয়!
——-
— বস এমপির বউয়ের সম্পর্কে সব খোঁজ এনেছি।
নিজের বস কে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো সোহেল নামের একটা ছেলে। চেয়ারে পায়ের উপর পা তু*লে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো বস লোক টা। সোহেলের মুখে এই কথা শুনে চোখ খুললো সে। বললো,
— কি কি জানতে পেরেছিস বল…
সোহেল বলতে শুরু করলো,
— নাম আরশি রহমান। পরিবারে আছে মা আর একটা বোন। বাবা নেই। মেয়েটা এতদিন নিজের পরিবার চা*লা*তো।
এতটুকু বলে থেমে গেলো সোহেল। বস লোক টা ভা*রী আওয়াজে বললো,
— বাপের নাম কি? বাপ ম*র*লো কি করে?
সোহেল পুনরায় বলা শুরু করলো,
— বাপের নাম আনোয়ার রহমান। পাঁচ কি ছয় বছর আগে এ*ক্সি*ডে*ন্ট করে মা*রা গেছে।
আরশির বাবার নাম শুনে চ*ম*কে উঠলো বস লোক টা। মুহূর্তের মাঝে সোজা হয়ে বসলো সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জ*ম*লো তার। কোনোরকমে কপালের ঘাম মু*ছে জিজ্ঞাসা করলো,
— কি নাম বললি আবার বল…
সোহেল ছেলে টা বস কে এমন করতে দেখে ঘা*ব*ড়ে গেলো। দ্রুত বললো,
— আনোয়ার রহমান।
বস লোক টা অ*স্থি*র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— সে কি সাংবাদিক ছিলো?
সোহেল ছেলে টা অবাক কণ্ঠে বললো,
— জি বস। কিন্তু আপনি কি করে জানলেন?
বস লোক টা রা*গী কণ্ঠে বললো,
— সেটা তোকে অবশ্যই বলবো না। যা এখান থেকে। আমি একা থাকতে চাই।
সোহেল ভ*য় পেয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সোহেল যেতেই লোক টা উঠে দাঁড়ালো। রুমজুরে পা*য়ে*চা*রী করতে লাগলো সে। মনের মাঝে ভ*য় জাগলো কোথাও অতীত সামনে না চলে আসে! পরোক্ষনেই নিজেকে অ*ভ*য় দিলো সে। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,
— সবাই কে শেষ করে দিবো। আমার রাস্তায় যে আসবে সবাই কে ম*র*তে হবে। কেউ ছাড় পাবে না। কেউ না।
চলবে?
#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩৭
রাত্রি ১০ টা। আরশি এখনো রুমে ফেরে নি দেখে কপালে ভা*জ পড়লো আবরারের। এতক্ষন অফিসের কিছু ফাইল চেক করছিলো সে। ভেবেছিলো আরশি বোধহয় চলে আসবে কিছুক্ষন পর। কিন্তু মেয়ে টা গেলো তো গেলো আর রুমে আসলো না। একটা চুমুই তো খেয়েছে আর তো কিছু করে নি। তাই বলে এতো লজ্জা! আরও দুই চার টা চুমু খেলে বোধহয় এই মেয়ে কে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। ভীষণ বি*র*ক্ত বোধ করলো আবরার। চোখ মুখ কুঁ*চ*কে বিড়বিড় করে বললো,
— জামাই বাসায় আছে, কোথায় সারাক্ষন জামাইয়ের আশেপাশে থাকবে, জামাইয়ের সাথে দুই চার টা রোমান্টিক কথা বলবে, একটু রোমান্স করবে তা না উনি কোথায় গিয়ে লু*কি*য়ে বসে আছেন। হায় এ কেমন বউ পেলাম আমি! একটা চুমু দিয়েছি বলে বউ আমার দুই তিন ঘন্টা ধরে রুমে আসে না। নাহ এমন হলে তো চলবে না। আমার বউ হবে আমার মতো রোমান্টিক, তা না একটা চুমু দিয়েছি বলে সে পা*লি*য়ে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে বউ কে রোমান্টিক বানানোর দায়িত্ব টা আমাকেই নিতে হবে।
আবরারের আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝে একজন সার্ভেন্ট দরজা নক করে জানিয়ে গেলো ডিনারের জন্য ডাকা হয়েছে তাকে। এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা করলো না আবরার। দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসলো। উদ্দেশ্য একটাই আরশি নামক রমণী কে দেখা।
আবরার ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে দেখলো সেখানে শুধুমাত্র তার বাবাই বসে আছে। আব্বাস আহমেদ ছেলে কে বসতে বলে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন। কিন্তু আবরারের মন যে এখানে নেই। তার মন টা তো পড়ে আছে আরশি নামক রমণীর কাছে। মেয়েটা কে একটু দেখার জন্য অ*স্থি*র হয়ে পড়েছে সে। আবরার কে অ*ন্য*ম*ন*স্ক হয়ে এদিক ঐদিকে তাকাতে দেখে কনুই দিয়ে খু*চা দিলেন আব্বাস আহমেদ। রসিকতা করে বললেন,
— কি বাবা কাকে খুঁজছো?
আব্বাস আহমেদের প্রশ্নে তার দিকে তাকালো আবরার। গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিলো,
— তোমার বউ কে খুঁজছি।
হো হো করে হেসে উঠলেন আব্বাস আহমেদ। আবরার চোখ ছোট ছোট করে তাকালো নিজের বাবাইয়ের দিকে। আব্বাস আহমেদ কোনো মতে নিজের হাসি থামিয়ে কণ্ঠ খাঁ*দে নামিয়ে বললেন,
— আমার বউ কে না নিজের বউ কে খুঁজছো বললেই পারতে। হয় হয় এমনটাই হয়।
আবরার আবার চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে নির্বিকার কণ্ঠে বললো,
— জানোই যখন কাকে খুঁজছি তাহলে জিজ্ঞাসা করছো কেনো? কোথায় আছে জানলে তা বলো আর নাহলে আমাকেই খুঁজতে দাও।
নি*রা*শ হলেন আব্বাস আহমেদ। ছেলে কে একটু লজ্জা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ছেলে তার লজ্জা পেলে তো! তার ছেলে টা এতো নি*র্ল*জ্জ কবে হলো? তার সময় যখন তাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল কি লজ্জাটাই না পেয়েছিলেন তিনি! আর তার ছেলে কে দেখো, দিব্যি এখনো বউ কে খুঁজে যাচ্ছে। কোনো লাজ লজ্জা নেই।
বাপ ছেলের ভাবনা আর খোঁজাখুঁজির মাঝেই হাজির হলেন মিসেস বন্যা। আরশি ও তার পিছে পিছে আস্তে আস্তে পা ফেলে এগিয়ে আসলো। আরশি কে এতক্ষন পর দেখে অ*শান্ত মন টা শান্ত হলো আবরারের। মনে মনে ভাবলো মেয়ে টা তাকে কি থেকে কি বানিয়ে দিয়েছে! কিছু সময় চোখের আ*ড়া*ল হলেই মন মস্তিষ্ক অ*শান্ত হয়ে পড়ে। আবরার শান্ত চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে। তবে তাকাচ্ছে না আরশি। সে এদিক ওদিক চোখ ঘুরাতে ব্য*স্ত। আরশি কে একবারও তার দিকে না তাকাতে দেখে মনের মাঝে চা*পা রা*গ অনুভব করলো আবরার। ইচ্ছা হলো আরশি কে তার দিকে তাকাতে বাধ্য করতে।
অন্যদিকে আরশি আবরারের দিকে না তাকালেও বেশ বুঝতে পারছে আবরার তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আব্বাস আহমেদ আর মিসেস বন্যার সামনেই এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে অ*স্ব*স্তি বোধ করলো আরশি। মনে মনে আবরার কে বারংবার নি*র্ল*জ্জ উপাধি দিলো সে। আরশি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিসেস বন্যা আবরারের পাশের চেয়ারের দিকে ইশারা করে গম্ভীর গলায় বললেন,
— যাও ওখানে গিয়ে বসো। দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।
মিসেস বন্যার কথা শুনে বাঁ*কা চোখে আবরারের দিকে তাকালো আরশি। দেখলো আবরারের চোখে মুখে স্পষ্ট রা*গে*র আভাস। আরশি একটা ঢো*ক গি*লে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আবরারের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। আরশি কে নিজের পাশে বসতে দেখে শ*য়*তা*নি হাসি দিলো আবরার। তাকে ই*গ*নো*র করার মজা ঠিক বুঝাবে সে।
মিসেস বন্যা সবার প্লেটে খাবার সার্ভ করতে লাগলেন। আরশি সেটাই দেখছিলো। হুট করে টের পেলো কেউ তার হাত শ*ক্ত করে চে*পে ধরেছে। দ্রুত নিজের হাতের দিকে চোখ ফেরালো আরশি। বুঝতে পারলো কাজ টা আবরারের। আরশি হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে আরও শ*ক্ত করে আরশির হাত মুঠোয় পুরে নিলো আবরার। আবরারের দিকে চোখ রা*ঙি*য়ে তাকালো আরশি। কিন্তু আবরার পা*ত্তা দিলে তো! সে বাঁ*কা হেসে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে খাওয়া শুরু করলো। হাত ধরে রাখার কারণে খেতে পারছে না আরশি। দাঁ*তে দাঁ*ত চা*প*লো সে। অনবরত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। শেষমেষ আবরার হাত ছাড়ছে না দেখে ন*ড়া*চ*ড়া বন্ধ করে দিলো আরশি। আরশি কে আর ছাড়ানোর চেষ্টা না করতে দেখে খেতে খেতেই বাঁ*কা চোখে তাকালো আবরার। দেখলো আরশি শ*য়*তা*নি হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এই হাসির মানে সাথে সাথে না বুঝলেও দুই মিনিটের মাথায় বুঝে আসলো আবরারের। আরশি সর্বশ*ক্তি প্রয়োগ করে নিজের পা দিয়ে আবরারের পায়ে পা*ড়া দিয়েছে। পা যেনো জ্ব*লে উঠলো আবরারের। আবরারের হাতের মুঠ লু*জ হতেই হাত উপরে তুলে নিলো আরশি। বাঁ*কা হেসে খাওয়া শুরু করলো। পায়ে বেশ ব্য*থা পেলেও টু শব্দ টা করলো না আবরার। ফের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মনে মনে ঠিক করে নিলো এর শা*স্তি অবশ্যই সে আরশি কে দিবে।
আবরারের খাওয়া শেষ হতেই সে টেবিল ছেড়ে উঠার আগে আরশির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
— খাওয়া শেষ করা মাত্র রুমে আসবে। এক মিনিট ও যেনো দেরি না হয়। নাহলে তোমার কপালে দুঃ*খ আছে মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। বড্ড জ্বা*লি*য়ে*ছো আজ। সেই হিসাব টা বরাবর করা বাকি।
আবরারের থ্রে*ট শুনে খাবার আর গলা দিয়ে নামতে চাইলো না আরশির। তবুও কোনোরকমে খেলো সে। আর ভাবতে লাগলো কি করা যায়। আজ কিছুতেই আবরারের সামনে যাওয়া যাবে না। লোক টা নিশ্চিত পায়ে পা*ড়া দেয়ার প্র*তি*শো*ধ নিবে! সে যতোই বা*হা*দু*রি করুক না কেনো আবরারের সাথে শ*ক্তি*তে কখনোই পারবে না এটা আরশি ভালোই জানে।
খাওয়া শেষ করে চু*পি*চু*পি ছাদে চলে আসলো আরশি। নিচে থাকলে মিসেস বন্যা স*ন্দে*হ করবে বলে ছাদে চলে এসেছে সে। আজ আকাশে বেশ বড় চাঁদ উঠেছে। অসংখ্য তারার ঝিকমিক করছে। মৃদু বাতাস ব*ই*ছে। পরিবেশ টা মনোমুগ্ধকর মনে হলো আরশির। চাঁদের আ*ব*ছা আলোয় ছাদের এক কর্নারে একটা দোলনা নজরে আসলো তার। বেশ বড় দোলনা। আরশি শাড়ি খানিকটা উঁচু করে পা টিপে টিপে দোলনার দিকে এগিয়ে গেলো। দোলনায় বসে মুগ্ধ চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ আরশির মনে একটা ইচ্ছা জাগলো। শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখবে সে। যখন তার নিজের বাড়ি ছিলো, বাবা বেঁচে ছিলো তখন প্রায় প্রায় এমন করতো সে। ছাদে পাটি বি*ছি*য়ে বাবা মা কে সাথে নিয়ে শুয়ে শুয়ে তারা ভ*রা আকাশ দেখতো। আজ অনেকদিন পর সেই ইচ্ছা জাগ্রত হলো আরশির মনে। কিন্তু পাটি তো নেই! কিছুক্ষন চি*ন্তা ভাবনার পর আরশি দোলনাতেই আধশোয়া হয়ে মুগ্ধ চোখে তারা ভরা আকাশ দেখতে লাগলো। মৃদু বাতাসে দোলনা হালকা দু*ল*ছে। আকাশ দেখতে দেখতে একসময় চোখ লেগে আসলো আরশির।
অন্যদিকে আরশি এখনো রুমে আসছে না দেখে রুমজুরে পা*য়ে*চা*রী করতে লাগলো আবরার। এতক্ষন তেমন রা*গ না হলেও এবার বেশ রা*গ হচ্ছে আবরারের। মেয়ে টা তার কথায় পা*ত্তা দিলো না! তার অ*বা*দ্ধ হলো! আবরার আরও কিছু সময় অপেক্ষা করলো। কিন্তু আরশির আসার কোনো নাম নেই দেখে এবার রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসলো সে। নিচে এসে কাউকে দেখলো না আবরার। আব্বাস আহমেদ এবং মিসেস বন্যা এতক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। উনারা বেশ দ্রুত ঘুমান। আরশি কে কোথাও না দেখে অ*স্থি*র হলো আবরারের মন। সে একে একে রান্নাঘর থেকে শুরু করে সকল রুম চেক করলো কিন্তু ফলাফল শূন্য। আরশি কোথাও নেই।
বাগানের কথা মাথায় আসতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানে আসলো আবরার। কিন্তু সেখানেও নেই আরশি। এবার মনের মাঝে ভ*য়ে*র সৃষ্টি হলো আবরারের। এতো রাতে কোথায় গেলো মেয়ে টা! কোনো ক্ষ*তি হলো না তো! মুহূর্তের মাঝে আবরারের চোখ র*ক্তি*ম বর্ণ ধারণ করলো। মাথার চুলগুলো খা*ম*চে ধরলো সে। গা*র্ডদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে যাবে এমন সময় তার চোখ গেলো ছাদের দিকে। এক সেকেন্ড সময় ব্যয় না করে দৌড় দিলো ছাদের দিকে। মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো আরশি যেনো ছাদেই থাকে।
ছাদে পৌঁছাতেই রা*গে গা জ্ব*লে উঠলো আবরারের। মেয়ে টা তাকে ক*ঠি*ন চি*ন্তা*র মাঝে ফেলে এখানে এসে দোলনায় নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে! ধু*প*ধা*প পা ফেলে আরশির দিকে এগোলো আবরার। উদ্দেশ্য একটাই আরশি কে ক*ষি*য়ে একটা থা*প্প*ড় মা*রা। চুমু দিয়ে আদর করতে পারলে থা*প্প*ড় দিয়ে ঘাড় ত্যা*ড়া*মি ও ছু*টা*তে পারে সে। কিন্তু ঘুমন্ত আরশির কাছাকাছি আসার পর রা*গ উধাও হয়ে গেলো আবরারের। চাঁদের আবছা আলোয় আরশির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। সেই চোখে এখন আর নেই কোনো রা*গ, যা আছে তা হলো একরাশ মুগ্ধতা।
ঘুমে আ*চ্ছ*ন্ন আরশি। তার লম্বা বিনুনি টা দোলনার বাইরে ঝু*ল*ছে। সামনের ছোট ছোট চুলগুলো কপাল জুড়ে ছড়িয়ে আছে। দোলনার সামনে হাঁটু গে*ড়ে বসলো আবরার। আলতো হাতে আরশির কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে মুগ্ধ কণ্ঠে বিড়বিড় করে বললো,
— আমার শুভ্র মায়াবিনী, আমার শুভ্র পরী। আর কতো রূপে ঘা*য়ে*ল করবে আমায় বলো তো! আর কি কি নাম দিবো তোমায়! তুমি যে দিনদিন আমায় ব*দ্ধ উ*ম্মা*দে পরিণত করছো তা কি জানো! তুমি কিছু সময়ের জন্য চোখের আ*ড়া*ল হলেই অ*স্থি*র হয়ে উঠছে আমার মন, মস্তিষ্ক। এই যে এতো রা*গ নিয়ে এসেছিলাম তোমায় শা*স*ন করবো বলে অথচ এখন নিজের মাঝে রা*গে*র ছি*টা*ফোঁ*টাও খুঁজে পাচ্ছি না! এটা কি ঠিক হলো বলো? একদম ঠিক হয় নি কিন্তু।
কথাগুলো বলেই চুপ হয়ে গেলো আবরার। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইলো আরশির পানে। বেশ খানিকটা সময় এভাবেই অতিবাহিত হলো। আবরার যেনো এক ঘো*রে*র মাঝে ডু*বে আছে। এক দ*ম*কা হাওয়া দেহে আ*ছ*ড়ে পড়তেই ঘো*র থেকে বেরিয়ে আসলো আবরার। আলতো হেসে উঠে দাঁড়ালো। যত্ন সহকারে অতি সা*ব*ধা*ন*তার সহিত কোলে তু*লে নিলো আরশি কে। মেয়েটা কে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবেনা সে এটা বেশ বুঝতে পেরেছে আবরার।
চলবে?