তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব-৪০+৪১

0
316

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৪০

আবরার আরশি এসেছে সেই উপলক্ষে অনেক পদের খাবার রান্না করেছে রিফা। রান্নাবান্নায় বেশ পটু সে। সুযোগ পেলেই এটা ওটা রান্না শেখে। এইদিক দিয়ে আরশি সম্পূর্ণ উল্টো। সে একদমই ভালো রান্নাবান্না পারে না। আরশির সাহায্য নিয়ে সব সাজিয়ে গুছিয়ে আবরার কে ডেকে নিয়ে আসলো রিফা। এতো রকমের খাবার দেখে অবাক হলো আবরারের। সব খাবার একটু একটু করে খেলো সে। খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢে*কু*র তু*লে বললো,

— বাহ্ শ্যালিকা দেখি হেব্বি রান্না জানে। তা আমার বউ ও এমন রান্না জানে তো নাকি?

কথা টা বলে বাঁ*কা চোখে আরশির দিকে তাকালো আবরার। রিফা উত্তর না দিয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। আবরার আর রিফা কে এভাবে তাকাতে দেখে গাল ফু*লা*লো আরশি। আবরার হা হু*তা*শ করে বললো,

— কি হলো শ্যালিকা কিছু বললে না যে? তারমানে কি আমার বউ রাঁধতে পারে না? ইশ কতো বড় ল*স হয়ে গেলো তোমার বোন কে বিয়ে করে। বউ আমার রাঁধতে জানে না। এখন আমি বউয়ের হাতের টেস্টি টেস্টি খাবার খাবো কি করে? আহা স্বপ্ন ছিলো বিয়ের পর বউ আমাকে টেস্টি টেস্টি ডিশ রান্না করে খাওয়াবে। আমার স্বপ্ন তো ভে*ঙে গুঁ*ড়ো গুঁ*ড়ো হয়ে গেলো।

আবরার কথা শেষ করে আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো আরশি চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুকনো ঢোক গি*ল*লো আবরার। বুঝতে পারলো বেশি বলে ফেলেছে সে। এবার তার কপালে দুঃ*খ আছে। বউ তার না*রা*জ হয়ে গেছে। আরশি কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা হাসি দিলো আবরার। আবরারের হাসি দেখে গা জ্ব*লে উঠলো আরশির। তাকে বিয়ে করে আবরারের ল*স হয়ে গেছে? রান্না পারে না বলে এমন কথা বলতে পারলো আবরার? তাও আবার রিফার সামনে! আরশি আর বসলো না ওখানে। রা*গে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তার। ধু*প*ধা*প পা ফেলে রুমে চলে গেলো সে। আরশি যেতেই শব্দ করে হেসে উঠলো রিফা। হাসতে হাসতে বললো,

— ভাইয়া এবার আপনার কপালে দুঃখ আছে। আপু মনি হেব্বি রে*গে*ছে।

আবরার ভেতরে ভেতরে না*র্ভা*স হলেও বাইরে বুক ফু*লি*য়ে বললো,

— আরে তোমার আপুর রা*গ ভা*ঙা*নো আমার এক মিনিটের কাজ।

কথা টা বলেই উঠে রুমে চলে আসলো আবরার। রুমে ঢুকে দেখলো আরশি বিছানা ঝা*ড়ু দিচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় জো*রে জো৬রে শব্দ করে বা*রি দিয়ে ঝা*ড়ু দিচ্ছে সে। আবরারের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো আরশি বিছানা কে নয় বরং তাকে বিছানার জায়গায় কল্পনা করে ঝা*ড়ু*র বা*রি মা*র*ছে। গলা শু*কি*য়ে আসলো আবরারের। ভালোই রে*গে*ছে তার মিসেস বুঝতে বাকি রইলো না তার। সে দরজা আ*ট*কে আদুরে কণ্ঠে বললো,

— বউউউউউউউ…

চোখ পা*কি*য়ে ঝা*ড়ু হাতে আবরারের দিকে ফিরলো আরশি। তে*ড়ে এসে ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,

— একদম ন্যা*কা*মি করবেন না… আমাকে বিয়ে করে তো আপনার ল*স হয়ে গেছে। তাইলে এখন বউ বউ করছেন কেনো? যান না যান যেই মেয়ে ভালো রান্না পারে তাকে বিয়ে করুন। তারপর বউ বউ করুন। আপনার জীবন টা ধন্য হোক।

কথাগুলো বলে শব্দ করে ঝা*ড়ু টা রাখলো আরশি। ধু*প*ধা*প পা ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। অ*স*হায় চোখে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো আবরার। বিড়বিড় করে দুঃ*খী কণ্ঠে বললো,

— আমার সেই লাজুক বউ টা কই গেলো? বউ দেখি আবার তার আগের স্বভাবে ফেরত এসেছে।

আ*ফ*সো*স করতে করতে বেডে স*টা*ন হয়ে শুয়ে পড়লো আবরার। কিছু সময় পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো আরশি। একবারও আবরারের দিকে তাকালো না। তবে না তাকিয়েও বুঝলো আবরার তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মুখ বাঁ*কা*লো আরশি। ঘরের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বা*লি*য়ে দিলো। তারপর চুপচাপ বেডের এক কোণে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। সেকেন্ডের মাঝেই টের পেলো আবরার তাকে জড়িয়ে ধরেছে। আরশি নড়েচড়ে উঠতেই আবরার জড়িয়ে আসা কণ্ঠে বললো,

— নড়াচড়া করো না মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। আমি ভীষণ ক্লান্ত। একটু ঘুম প্রয়োজন। আবার কাল সকালে অফিসে যেতে হবে। তোমার রা*গ টা নাহয় আপাতত তু*লে রাখো।

মন নরম হলো আরশির। আসলেই তো আবরার অনেক ক্লান্ত। সে তো গাড়িতে আরামে ঘুমিয়েছে কিন্তু আবরার তো সারাদিনে এক ফোঁটাও ঘুমায় নি। আর নড়াচড়া করলো না আরশি। চুপটি করে শুয়ে রইলো। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। গাড়িতে এতো সময় ঘুমানোর কারণে ঘুম আসছে না তার। আবরারের গাঢ় নিঃশ্বাস ঘাড়ে, গলায় আ*ছ*ড়ে পড়তেই ধীরে ধীরে আবরারের দিকে মাথা কা*ত করলো আরশি। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় অপলক দেখতে লাগলো প্রিয় পুরুষটা কে।

——

সকালে ঘুম ভা*ঙ*তে অন্যান্য দিনের মতোই আরশি কে নিজের বুকে পেলো আবরার। কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়ে টা! আবরার সা*ব*ধা*নতার সাথে আরশি কে বেডে শুইয়ে দিয়ে কপাল গভীর চুম্বন একে দিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো বাইরে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে রিফা কে বলে গেলো বিকালে এসে আরশি কে নিয়ে যাবে সে।

আবরার যাওয়ার দেড় ঘন্টা পর ঘুম ভা*ঙ*লো আরশির। রাতে লেটে ঘুমানোর কারণে লেটে ঘুম ভে*ঙে*ছে তার। পাশে আবরার কে না দেখে বুঝতে বাকি রইলো না আবরার অফিসে চলে গেছে। ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে আসলো আরশি। রিফা তাকে নাস্তা দিয়ে জানালো আবরার তাকে বিকালে নিতে আসবে বলেছে।

সারাদিন রিফার সাথে বেশ ভালোই কে*টে*ছে আরশির। ফাঁ*কে ফাঁ*কে মায়ের রুমে উঁকি দিতেও ভু*লে নি সে। তবে ভেতরে যায় নি সে একবারও। আর কিছুক্ষন পর হয়তো আবরার তাকে নিতে আসবে। তাই নিজের বই পত্র গু*ছা*চ্ছে আরশি। রিফা তাকে সাহায্য করছে কম, ফ্যা*চ ফ্যা*চ করে কাঁ*দ*ছে বেশি। বই খাতা প্যাক করে কোমরে হাত দিয়ে রিফার দিকে চাইলো আরশি। চোখ ছোট ছোট করে বললো,

— এভাবে ফ্যা*চ ফ্যা*চ করে কানের সামনে কাঁ*দ*ছিস কেনো? আমি কি ম*রে গেছি নাকি?

আরশির কথা শেষ হতে না হতেই তার বুকে ঝাঁ*পি*য়ে পড়লো রিফা। নাক টে*নে বললো,

— এমন কথা আর কখনো বলবে না আপু মনি। তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছ তাতেই এতো ক*ষ্ট হচ্ছে। আর তোমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে ম*রে*ই যাবো হয়তো। তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আপু মনি? আমার না খুব ক*ষ্ট হচ্ছে।

চোখে জল চলে আসলো আরশির। শ*ক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রিফা কে। এই মেয়ে টা তার র*ক্তে*র সম্পর্কের কেউ না অথচ তাকে কতো টা ভালোবাসে। তার ও যে ক*ষ্ট হচ্ছে এই বাড়ি ছেড়ে যেতে! কিন্তু তাকে যে যেতেই হবে। আরশি রিফার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— আরে পা*গ*ল মেয়ে আমি কি একেবারে চলে যাচ্ছি নাকি? আবার আসবো তো। দুই তিনদিন পর ই আবার আসবো। এতো সহজে তোদের পিছু ছাড়ছি না হুম।

ওদের কথার মাঝে বেল বে*জে উঠলো। রিফা আরশির কাছ থেকে সরে এসে বললো,

— ভাইয়া এসে গেছে হয়তো। আমি দরজা খুলে আসি যাই।

রিফা যেতেই আরশি ধীর পায়ে নিজের মায়ের রুমে প্রবেশ করলো। মিহি বেগম তাকালেন আরশির পানে। চোখ ছ*ল*ছ*ল করছে তার। সকল ভ*য়, ল*জ্জা, অ*স্ব*স্তি কে দূরে ঠে*লে হুট করে মিহি বেগম কে জরিয়ে ধরলো আরশি। বাঁ*ধা দিলেন না মিহি বেগম। কোনো সারাশব্দ ও করলেন না। নীরবেই কয়েক ফোঁটা অশ্রু গ*ড়ি*য়ে পড়লো তার চোখ থেকে। আরশি জড়িয়ে আসা কণ্ঠে বললো,

— আসছি আম্মু। নিজের খেয়াল রেখো আর তোমার মেয়ের জন্য দোয়া করো। আমি আসবো মাঝে মাঝে তোমাদের সাথে দেখা করতে।

কথা শেষ করে মিহি বেগম কে ছেড়ে দিলো আরশি। দ্রুত বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। আর কিছুক্ষন থাকলে হয়তো কা*ন্না*য় ভে*ঙে পড়তো সে। নিজের রুম থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে রিফা কে বিদায় জানিয়ে আবরারের সাথে বেরিয়ে পড়লো আরশি। আরশির উ*দা*স মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো আবরার। বুঝতে পারলো আরশির ক*ষ্ট হচ্ছে। তাই কোনো কথা বলে আরশি কে বি*র*ক্ত করলো না সে। শুধুমাত্র আরশির হাত টা শ*ক্ত করে ধ*রে রাখলো। যেনো বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছে,

— “আমি সর্বদা তোমার পাশে আছি মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি…”

চলবে,

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৪১

বাড়িতে প্রবেশ করতেই আবরার আরশি উভয়ের কপালে ভাঁ*জ পড়লো। কারণ বসার ঘরে আবরারের মামা ইরফান চৌধুরী, তার স্ত্রী মিসেস মনা ও ইশা বসে আছে। ইশা কে দেখে রা*গ হলো আবরারের। এই মেয়ে তার মায়ের সাথে এতো বা*জে আচরণ করেছে। আবার এখন নি*র্ল*জ্জের মতো তাদের বাড়িতে চলে এসেছে!

হুট করে ইশার নজর পড়লো আবরার আরশির দিকে। সে বসা থেকে উঠে ছুটে আসলো। ইশা কে এভাবে আবরারের দিকে ছুটে আসতে দেখে গা জ্ব*লে উঠলো আরশির। সে দ্রুত পায়ে আবরারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। আরশির হুট করে এভাবে সামনে চলে আসার কারণ টা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো আবরারের। বুঝতে পেরে মনে মনে হাসলো সে। অন্যদিকে আরশি ইশা কে কিছু ক*ড়া কথা শোনানোর প্রিপারেশন নিলো। তবে আরশি কে অবাক করে দিয়ে তাকেই জড়িয়ে ধরলো ইশা। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আরশি কে ছেড়ে ছলছল চোখে বললো,

— আমাকে ক্ষ*মা করে দাও আরশি। ঐদিনের ব্যবহারের জন্য আমি ল*জ্জি*ত। আসলে তখন রা*গে*র মাথায় কি বলছিলাম নিজেই বুঝতে পারি নি। প্লিজ আমাকে ক্ষ*মা করে দাও…

ইশার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো আরশি। বুঝার চেষ্টা করতে লাগলো আসলেই ইশা নিজের ব্যবহারের জন্য অ*নু*ত*প্ত কিনা! নাকি আবার কোনো নাটক করছে! আরশি মনে মনে ভাবলো,

— ইশা পে*ত্নী আপু মনে তো হচ্ছে না তুমি চেঞ্জ হয়েছো। নিশ্চয়ই এটা তোমার নতুন কোনো নাটক হবে। কি ভেবেছো তুমি এসব নাটক করবে আর আমিও বো*কা হয়ে যাবো? এতো বো*কা নয় এই আরশি। তুমি ভালো তো আমি ভালো। কিন্তু আমার জামাইয়ের দিকে যদি নজর দিয়েছো তাহলে তোমার তেরোটা বা*জা*নোর দায়িত্ব আমার।

আরশি কোনো জবাব দিচ্ছে না দেখে তাকে ঝা*কা*লো ইশা। বললো,

— কি হলো আরশি? কিছু তো বলো… তুমি আমাকে ক্ষ*মা করেছো তো?

মিষ্টি একটা হাসি দিলো আরশি। বললো,

— তুমি তোমার ভু*ল বুঝতে পেরেছো, আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমি অবশ্যই তোমাকে ক্ষ*মা করেছি।

চওড়া হাসলো ইশা। আরশির হাত ছেড়ে ফট করে আবরারের হাত ধরলো। অ*নু*ত*প্ত কণ্ঠে বললো,

— আবরার তুমিও আমাকে ক্ষ*মা করে দাও। ফুপ্পি ও আমাকে ক্ষ*মা করে দিয়েছে। এবার তোমার পালা। প্লিজ ক্ষ*মা করে দাও…

ইশা কে আবরারের হাত ধরতে দেখে আ*গু*ন চোখে তাকালো আরশি। যেনো দৃষ্টি দিয়েই ইশা কে জ্বা*লি*য়ে দিবে। আরশির রা*গে লাল হয়ে আসা চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে ইশার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো আবরার। গম্ভীর স্বর তু*লে বললো,

— ক্ষ*মা করতে পারি। তবে তোমাকে কিছু শর্ত মানতে হবে।

ইশা হাসিমুখে বললো,

— কি শর্ত বলো.. আমি সব শর্ত মানবো।

আবরার পুনরায় বললো,

— আমাকে এখন থেকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করবে। আমি তোমার চেয়ে বয়সে যথেষ্ট বড়। আর আরশি কে ভাবী বলে ডাকবে। সে হয়তো বয়সে তোমার চেয়ে ছোট কিন্তু সম্পর্কে তোমার তুলনায় বড়। আমার মা এবং স্ত্রী কে সম্মান করবে। আর আরও একটা কথা। আমাকে আর কখনো এভাবে স্পর্শ করবে না। এসব শর্ত যদি মানতে পারো তবে তোমাকে ক্ষ*মা করতে রাজী আছি আমি। আর যদি না মানতে পারো তবে এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাবে। আর কখনো তোমার ফেস টা দেখাবে না আমাকে। এবার তুমি সিদ্ধান্ত নাও কি করবে।

কথা শেষ করে পকেটে হাত গুঁ*জে দাঁড়ালো আবরার। চোখ মুখ শ*ক্ত হয়ে আছে তার। সে জানে ইশা মোটেও ভালো হয় নি বরং সে শুধুমাত্র ভালো হওয়ার নাটক করছে। অন্যদিকে আবরারের শর্ত গুলো শুনে ইশার হাসি হাসি মুখে ঘন কালো অ*ন্ধ*কার নেমে আসলো যেনো। তার সেই মুখের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো আরশি। আবরার বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে আরশির কান্ড দেখতে লাগলো। হাসতে হাসতে হুট করে আবরারের চোখে চোখে পড়ে গেলো আরশির। সে দ্রুত হাসি বন্ধ করে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। ঠোঁট বা*কি*য়ে হাসলো আবরার। মনে মনে ভাবলো,

— এই মেয়ের কখন কি হয় বোঝা ক*ঠি*ন। এই আ*গু*ন চোখে তাকিয়ে ছিলো, এই এখন আবার হাসছে। যাক শেষমেষ বউ টা হাসলো তো এইই বেশি। তবে বউ আমার জে*লা*স ফীল করছে! আরেকটু জে*লা*স ফীল করালে ম*ন্দ হয় না। ওই ধা*রা*লো দৃষ্টি, আ*গু*ন ঝ*রা মুখশ্রী দেখতে হেব্বি লাগে।

কিছুক্ষন নীরবতা পালনের পর মুখ খুললো ইশা। মলিন কণ্ঠে বললো,

— আমি তোমার সকল শর্ত মানতে প্রস্তুত আছি। এবার বলো আমাকে ক্ষ*মা করেছো তো?

আবরার শ*ক্ত কণ্ঠে বললো,

— হু…

জবাব দিয়েই গ*ট*গ*ট শব্দ তু*লে উপরে চলে গেলো আবরার। আবরার কে চলে যেতে দেখে আরশি ও আর দাঁড়ালো না। আবরারের পেছন পেছন গেলো। ওদের যাওয়ার দিকে র*ক্ত লাল চোখে তাকিয়ে রইলো ইশা।

——

আরশির আগে পিছে ঘুরছে আবরার। বিভিন্ন ভাবে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পা*ত্তা দিচ্ছে না আরশি। তার হাব ভাবে বুঝা যাচ্ছে সে এখনো ওই বাড়ির ঘটনার জন্য আবরারের উপর রে*গে আছে। আরশির মুখ থেকে কথা বের করতে না পেরে হ*তা*শ হলো আবরার। হুট করে কিছু একটা মাথায় আসলো তার। বাঁ*কা হাসি দিয়ে বেশ জো*রেই বললো,

— যাচ্ছি আমি নিচে। এখানে তো কেউ পা*ত্তা দিচ্ছে না। তবে নিচে গেলে পা*ত্তা পেতেও পারি।

চোখ বড় বড় করে তাকালো আরশি। আবরার ইন্ডিরেক্টলি ইশার কথা বলেছে বুঝতে পেরে এক লাফে আবরারের সামনে এসে দাঁড়ালো। কোমরে হাত রেখে চোখ পা*কি*য়ে বললো,

— কোথায় যাচ্ছেন? একদম বাইরে যাবেন না বলে দিলাম…

মনে মনে হাসলো আবরার। কিন্তু উপরে প্রকাশ করলো না। এক ভ্রু উঁচু করে আরশির দিকে তাকিয়ে বললো,

— কেনো যাবো না? অবশ্যই যাবো। বউ তো পা*ত্তা দিচ্ছে না। আবার আরেক বিয়ে করার অনুমতি ও দিয়ে দিয়েছে। তাই আমাকে অবশ্যই অবশ্যই নিচে যেতে হবে। কারণ নিচে গেলে শুধু পা*ত্তা না বউ ও পেয়ে যেতে পারি। জোস্ না মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি!

আবরারের কথাগুলো কানে যাওয়া মাত্র ভ*য়ং*কর রে*গে গেলো আরশি। মুহূর্তের মাঝে আবরারের শার্ট এর কলার টে*নে ধরলো সে। হি*স*হি*সি*য়ে বললো,

— দ্বিতীয় বিয়ের কথা চিন্তা করলেও মে*রে ফেলবো, আমি ব্যতীত অন্য কোনো মেয়ের দিকে নজর দিলে চোখ তু*লে ফেলবো। কি বলেছিলাম মনে আছে তো এমপি সাহেব? আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকানো আমার বরের জন্য নি*ষি*দ্ধ করবো। আর যদি তাকায়… যদি তাকায় তবে চোখ ফু*টো করে দিবো। চোখ তু*লে মার্বেল খেলবো। সে অ*ন্ধ হয়ে থাকবে কিন্তু অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না। কি মনে পড়ছে কিছু? সৌভাগ্যবসত ওর দু*র্ভা*গ্যবসত আপনিই আমার বর।

শেষের কথা টা বলে বাঁ*কা হাসলো আরশি। আরশির মুখের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরার। হুট করে আরশির কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের আরও কাছে টে*নে নিলো সে। আরশির চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করলো,

— আর ইউ জে*লা*স মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আজ যেনো কোনো ল*জ্জা, অ*স্ব*স্তি ছুঁতে পারলো না আরশি কে। আবরারের শার্ট এর কলার ছেড়ে দুই হাতে তার গলা জড়িয়ে ধরলো আরশি। চোখে চোখ রেখে দৃঢ় কণ্ঠে বললো,

— ইয়েস, আ’ম জে*লা*স এমপি সাহেব…

কথা টা বলেই এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো আরশি। আবরারের খোঁ*চা খোঁ*চা দাঁড়ি যুক্ত গালে আলতো করে অধর স্পর্শ করলো। অবাক হলো আবরার, ভীষণ ভীষণ অবাক। আরশির কোমর জড়িয়ে থাকা হাতের বাঁধন ঢি*লে হলো। এই সুযোগে রুম থেকে পা*লা*লো আরশি। তবে ন*ড়*চ*ড় হলো না আবরারের। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশির যাওয়ার পানে। বুকের হৃদস্পন্দন কয়েক গুন বেড়ে গেছে বুঝতে পেরে বুকে হাত রাখলো আবরার। চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে হাসলো সে। বিড়বিড় করে বললো,

— আমার অদ্ভুত চোখওয়ালির শুধু চোখ জোড়াই অদ্ভুত না বরং সে মেয়েটাই সম্পূর্ণ অদ্ভুত। এই যে আমার হৃদয়টাকে অদ্ভুত ভাবে কাঁ*পি*য়ে দিয়ে গেলো!

—–

আরশি ও মিসেস বন্যা মিলে খাবার টেবিল সাজাচ্ছে। আজ ইরফান চৌধুরী ও তার পরিবার এই বাড়িতেই থাকবে শুনেছে আরশি। তাই সে ইশা কে চোখে চোখে রাখছে। মেয়ে টা আবার তার জামাইয়ের উপর নজর না দেয়! একে একে সবাই টেবিলে এসে বসলো। এখন শুধু ইশা ও আবরার বাকি। দুই মিনিট বাদে আবরার ও চলে আসলো। পিছন পিছন ইশা কে আসতে দেখে চোয়াল শ*ক্ত হলো আরশির। আবরার নিজের চেয়ারে বসতেই ইশা আবরারের পাশের আরশির চেয়ার টা টা*ন*লো বসার জন্য। অমনি আরশি এসে ইশা কে সরিয়ে সেখানে বসে পড়লো। চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বললো,

— আসলে ইশা আপু এটা আমার চেয়ার…

ইশা কিছু না বলে মুখ অ*ন্ধ*কা*র করে আরশির পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। জয়ের হাসি হাসলো আরশি। আরশির কান্ডে আবরার ও মিটমিট করে হাসতে লাগলো। খাওয়ার সময় ইরফান চৌধুরী জানালেন উনারা আগামীকাল আবার দেশ ছাড়বেন। ইশার খালা অনেক অ*সু*স্থ হয়ে পড়েছেন। উনাদের সেখানেই যেতে হবে। এটা শুনে স্ব*স্তি*র নিঃশ্বাস ছাড়লো আরশি। বিড়বিড় করে বললো,

— যাক আ*প*দ তাহলে বিদায় হচ্ছে।

আরশির কাছাকাছি থাকায় আরশির কথা আবরারের কানে আসলো। সে আরশির কিছু টা নিকটে এসে ফিসফিস করে বললো,

— ঠিক বলেছো মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। এখন শুধু তুমিইই আর আমি, আমিইই আর তুমি। উফঃ হেব্বি রোমান্টিক না?

চোখ পা*কি*য়ে তাকালো আরশি। রা*গ দেখানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু রা*গ দেখাতে ব্য*র্থ হয়ে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো সে। একবারও আবরারের দিকে ফিরে তাকালো না। লোক টা যে তাকে উঠতে বসতে এখন ওই সময়ের ব্যাপার টা নিয়ে খু*চা*বে এটা বেশ বুঝতে পেরেছে আরশি। তখন অতিরিক্ত জে*লা*সি*র বশে অমন আচরণ করলেও এখন প*স্তা*তে হবে ভেবেই কা*ন্না পেলো আরশির।

চলবে,