তোমাতে করিবো বাস পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
227

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৩
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বকুল আপুর কথা মতন তটিনি বাপ্পির পাশে এসে দাঁড়ায়।বাগানে বসে থাকা আসিফ ওর দিকে তাকিয়েছিল অথচ সে জানলোইনা সেটা।তার চোখ ছিল বাপ্পির উপর।বাপ্পি হাত দিয়ে গেইট সাজানোর একজন লোককে দেখিয়ে দিচ্ছিলো নাম কোথায় লাগাবে।
তটিনি ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে চুপ করে থাকলো। তটিনির গায়ের সেই পারফিউমের ঘ্রান নাকে এসে বাঁধতেই বাপ্পি চুপ হয়ে গেছে।তাও পেছনে তাকালোনা।পুনরায় আবারও কাজে মন দিলো সে।
ওর বাবা তটিনিকে দেখে ওখান থেকে চলে গেছেন।
বাপ্পি কাজে যেন আরও ভাল ভাবে মনযোগ দিয়ে বসেছে।
তটিনি হাতের চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ করলো হাতটাকে নাড়িয়ে।বাপ্পি এবার আরও সামনে চলে গেছে কথা বলতে বলতে।তটিনিও কম না সেও পিছু পিছু গেলো।
মাটিতে পড়া ছিল দুইটা কাঁচি আর একটা দা।
বাগানের মালি থেকে এগুলা চেয়ে এনেছিল ডেকোরেশনের লোকেরা।তটিনির চোখ বাপ্পির দিকে ছিল বলে সে আর নিচে খেয়াল করেনি।তার পায়ে জুতা ও ছিল না।বাগানে বের হবার আগে জুতা খুলে বেরিয়েছিল সে, কারণ শাড়ীর সাথে জুতা আটকে যাচ্ছিল বারবার।
যে দূর্ঘটনা ঘটার তাই ঘটলো।তটিনি পা রাখলো কাচির উপর।পায়ের অনেকটাই কেটে গেলো যখন তার পা কাচিতে পড়ে।
তটিনির চিৎকারে বাপ্পি পেছনে তাকায়না।সে ভাবে হয়ত নাটক করে ওকে ফেরাতে চেয়েছে।এদিকে আসিফ আর রিনি বাগান থেকে ছুটে আসলো ওখানে।আসিফ নিচে বসে তটিনির পা ছুঁতেই তটিনি হাত দিয়ে চোখ মুছে পা পিছিয়ে নিয়ে বললো,’যে দেখার সে আসেনি যখন,, তখন কাউকে আর দেখতে হবেনা’

‘বুবু রাগ করেন কা!চাই কেতো কাটছে।দেখান আঁরে’

রিনি নিচে বসে তটিনির পা ধরে দেখে অনেকটাই কেটে গেছে।সে ভয় পেয়ে আসিফের দিকে তাকালো।আসিফ তটিনির ধমকে ওকে ধরার সাহস পাচ্ছেনা।তাই বাপ্পির দিকে তাকিয়ে ওকে ডাকলো।বাপ্পি এবার পেছনে তাকায়।বিরক্তি নিয়ে বলে,’কি?’

‘তোমার বউ পা কেটে ফেলেছে।আসবেনা?নাকি আমি কোলে তুলে বাসায় নিয়ে যেতাম?তোমার বউ কিন্তু এখন আর আমার কোলে উঠতে চায়না।তার কোলে উঠার নতুন মানুষ হয়েছে কিনা!’

বাপ্পি তাও বিশ্বাস করেনি কিন্তু তটিনির পায়ের উপর চোখ পড়তেই রক্তাভ দেখে তার বুক কেঁপে উঠলো।ওর পায়ের দিকে তাকাতে তাকাতে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে তটিনির চোখে অশ্রু দেখে নিচে বসে যায় বাপ্পি।
তটিনি বারবার চোখ মুছতেছিলো।রিনি ভেতরে চলে গেছে সবাইকে ডাকতে।বাপ্পি ওকে ধরতে যাবে তখনই তটিনি আসিফের ঘাঁড়ে হাত রেখে উঠে দাঁড়ায়।তারপর আসিফের হাতটা ধরে বলে,’আমায় বাসায় দিয়ে আসুন ভাইয়া’

আসিফ তটিনির হাতটা বাপ্পির হাতে দিতে যেতেই তটিনি চোখ রাঙিয়ে তাকায়।আসিফ আর সাহস করেনা।তটিনিকে ধরে বাসায় নিয়ে যাওয়া ধরে কিন্তু ওর পায়ের এত বাজে অবস্থা যে সে এক পা দিয়েও হাঁটার জোর পারছেনা।
আসিফ বাপ্পির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে তটিনিকে নেয়ার জন্য।
তটিনি তা দেখেনি।সে হাঁটার বৃথা চেষ্টা করছে।
বাপ্পি কাছে এসে ওকে কোলে তুলে নিলো সোজা।তটিনি ভাবতেও পারেনি সে এমনটা করবে।
বাপ্পি ওকে নিয়ে সোফায় নামিয়ে পা ধরতে যেতেই তটিনি পা ছাড়িয়ে ফেলে মাথা তুলে রিনিকে বললো রুম থেকে তার ফেন এনে দিতে।বাপ্পিকে সে পা ধরতেই দিচ্ছেনা।
রিনি ফোন এনে দিতেই তটিনি তার বাবাকে কল করে জানালো তারা কখন আসবে, সে বাসায় ফিরতে চায়।বাবা জানতে চাইলেন এত তাড়াহুড়োর কি আছে।
তটিনি কিছু বলেনা।তাদের শুধু তাড়াতাড়ি আসতে বলে।
বাপ্পি দূর থেকে তটিনির পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তটিনি তাকে ধরতেই দিচ্ছিলোনা।শেষে আসিফ আর রিনি তড়িগড়ি করে ব্যান্ডেজ নিয়ে ওর পা ঢেকে দিতে দিতে বললো এটা ডাক্তার দেখাতে হবে,তাদের ফার্স্ট এইডে কিছু হবেনা।

তটিনি মুখটা কালো করে বসে ছিল।ইতোমধ্যে বাড়ির সবাই খবর পেয়ে গেছে তটিনির পা কাটা গেছে।বাপ্পি দূরে সরে গেলো আর সকলে তটিনিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
কার রাগ হয়ে থাকার কথা,আর কে রাগ করছে।

ডাক্তারের কাছে যেতে হলোনা।ডাক্তার নিজেই আসলো বাসায়।তটিনির পায়ে ভালভাবে ঔষুধ লাগিয়ে ওর হাতে ইনজেকশন লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
বকুল আপু বাপ্পিকে বললেন তটিনিকে যেন রুমে নিয়ে যায় কিন্তু তটিনি মানা করে দিতে চাইলো,এইবার তার মানা কেউ শোনেনি কারণ মেহমান আসা শুরু হয়ে গেছে।সকলে এসে সোফাতেই বসবো।তাই নতুন বউকে এভাবে সোফায় বসে থাকতে দেয়া যাবেনা।
তটিনি অনিচ্ছার সত্ত্বেও রুমে ফেরত আসলো তাও বাপ্পির সাথো।রুমে আসতেই ওদের পেছনে আর কেউ আসলোনা।বাপ্পি দরজা লাগিয়ে তটিনির কাছে চলে আসতেই তটিনি মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।
বাপ্পি ওর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,’আমার চাইতে আসিফের হাত বেশি নিরাপদ মনে হলো?’

‘যখন আমি ব্যাথা পেলাম তখন ঐ আসিফই ছুটে এসেছে’

‘আমি জানতাম না।জানলে ওর আগে আমিই আসতাম’

তটিনি আর কিছু বলেনা। বাপ্পি ওর পাশে বসে পা ছুঁতে নিতেই তটিনি পা সরিয়ে নেয় আবারও।এরপর বলে,’আমি বাবার বাসায় গেলে আমার সাথে আপনাকে আসতে হবেনা।যাবার দরকার নেই।আমি চাই কদিন একা থাকতে’

বাপ্পি কিছু বললোনা।শুধু তটিনির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তটিনির ইনজেকশনে ঘুম আসার মেডিসিন ছিল বলে ওপাশ ফিরে বসতেই তার চোখ লেগে গেলো।
বাপ্পি আর ওকে বিরক্ত করেনি।ওর গায়ে কম্বল টেনে রুম থেকে বের হয়।আসিফ এখন বাপ্পির জায়গায় গিয়ে ডেকোরেশনের দিকটা দেখছে।

বাপ্পি ওর সাথে এসে দাঁড়াতেই আসিফ মাথা ঘুরিয়ে বলে,’তটিনি খুব জেদি তাই না?’

‘অনেক’

‘কেনো রাগ করেছে?’

‘সে পড়ে গেছে আর আমি না দেখার ভান ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।এটা ওর ধারণা আর কি।তাছাড়া এর আগে ওকে একটু ইগনর করেছি”

‘ওসব কিছুনা।ব্যাথার সাথে সাথে রাগটাও কমে যাবে’

‘তটিনির রাগ কমে কিসে জানো?’

‘আমি জানি চকলেট চিপস খেলে।তবে তুমি যেহেতু ওর হাসবেন্ড হও।ওকে আদর সোহাগেই জেদ কমিয়ে নিতে পারো।এইসব আবার জিজ্ঞেস করা লাগে?’

ওমনি রিনি এসপ আসিফের হাত জোড় করে ধরে বলে,’আঁরেও আদর হোয়াগ করেন ‘😌

‘উঃ!!সর সামনে থেকে।সারাদিন চুইংগামের মতন লেগে থাকা আমার একদম পছন্দ না।’

‘আন্নে আঁরে আদর হোয়াগ কইরলে আঁই ভালা অই যাইয়াম’

‘তোর আবার কি হইছে?পা ভাঙছে না হাত?’

‘আঁর কলিজা টুকরা টুকরা অই গেছে আন্নের বিরহে।এইবার আদর হোয়াগ করি আঁরে সারি দেন’
[আমার কলিজা টুকরাটুকরা হয়ে গেছে আপনার বিরহে।এইবার আদর সোহাগ করে আমাকে সারিয়ে দেন]
——-
বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হবার পর গাড়ীতে তটিনি যখন উঠলো তখন সে তার পাশে বাপ্পিকে বসতে দেখে তার মেজাজ খারাপ হলো আরও দ্বিগু।চেঁচিয়ে বললো সে যেন না আসে।
কিন্তু গাড়ীর একটা মানুষও তার চেঁচানোতে কোনো রিয়েকশান দেখায়নি।যেন সব আগ থেকে ঠিক করে রাখা।
তটিনি নিজে নিজে গাড়ী থেকে বের হতে চাইলো কিন্তু বাপ্পি তার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলে বসিয়ে রাখে।

‘জোরজবরদস্তি করে যাবেন সাথে?’

‘কিসের জোরজবরদস্তি? বৌভাতের দিন বর বউ যাইতে হয় একসাথে।তুমি না চাইলেও যেতে হবে’

তটিনি আর কিছু বলেনা।গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।পথে তার আবারও ঘুম আসায় সে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমালেও এক ধাক্কায় তার মাথা ঘুরে জানালা থেকে সরে যায়।আর একটা সময়ে সে বাপ্পির ঘাঁড়ে মাথা রেখেই পুরাটা পথ কাটিয়ে দেয়।ফিরতে তাদের রাত দশটা বাজে।তটিনি সেসময় চোখ মেলে নিজেকে বাপ্পির বুকে পেয়ে ছিটকে সরে যায়,পরেই পায়ে ব্যাথা পেয়ে তার হুশ আসে একেবারে।বাপ্পি নিজে গাড়ী থেকে আগে নেমে তটিনির পাশের দরজা খুলে ওর দিকে হাত বাড়ায়।তটিনি গাড়ী ধরে নিজে নিজে নামার চেষ্টা করে আবারও পড়ে যাওয়া ধরলো।বাপ্পি ওকে এবারও ধরে ফেলে বলে,’এরপর আর ধরবোনা।ঠাস করে পড়ে আসিফকে ডেকে নিও বরং।দাঁত থাকতে তো দাঁতের মর্ম বুঝোনা’

বাপ্পি তটিনিকে নিয়ে ওর রুমে এসেই দুজনে থেমে যায়।
তটিনির মামাতো ভাই বোনেরা মিলে রুমটাকে সাজিয়ে রেখেছে ওদের জন্য।
ওরা রুমে আসতেই বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে সকলে হিহি হাহা করতে করতে চলে গেছে।

তটিনি বিছানায় বসে গাল ফুলিয়ে বললো,’ওদের মানা করেন এরকম করে যেন না হাসে।এমন করে হাসতেছে যেন আজই আমরা!!!আমার বয়ে গেছে!এরকম দায়িত্বহীন মানুষকে ছোঁয়ার!’

চলবে♥

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৪
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি সেই বিয়ের শুরুর দিকের মতন করে মাঝখানে বালিশ রেখে দেয়াল বানিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে এক পাশে।
বাপ্পি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখে গেলো।তটিনি চোখ বুজতেই বাপ্পি ওর পায়ের কাছে এসে হাত দিয়ে ছুঁলো কাটা জায়গায়।তটিনি টের পায়নি।সে মনে মনে বাপ্পির উপর রাগের সাথে যুদ্ধ করছে।বাপ্পি হাত বুলিয়ে দিয়ে মাথা তুলে তটিনির মুখের দিকে তাকায়।আজ এই এক্সিডেন্টের চোটে তটিনির একটুও সাজগোজ করা হয়নি।শুধু শাড়ীটাই পরা হয়েছিল।তার পরেও যে মানুষটাই নতুন বউ দেখেছে সেই মানুষটা মাশাল্লাহ বলে গেছে।
বাপ্পি নিজের পছন্দের উপর নিজেই আজ ভীষণ সন্তুষ্ট।নিঃশব্দে হাসতে হাসতে উঠে রুমের আলো নিভাতেই দরজার ওপার থেকে শোনা গেলো রিনির কন্ঠ।সে বলছে’দুলাভাই কিছু লাগবে?’

বাপ্পি মুচকি হেসে দরজায় হাত রেখে বলে,’একটা শালি এনে দাও।তোমাদের আপু ঘুমানোর নাটক করছে’

‘আঁই আই?’

বাপ্পি হেসে বলে,’নাহ তুমি বরং আসিফের কাছে যাও।ঘুমালেও বউ তো বউই!’

তটিনি ততক্ষণে উঠে বসে গেছে আবার।বাপ্পির গলা শুনতে পেলেও কি কি বললো সে তার কিছুই সে বোঝেনি।বাপ্পি বিছানার কাছাকাছি আসতেই ড্রিম লাইটের আলোয় তটিনিকে বসে থাকতে দেখে বললো,’একি তুমি ঘুমাওনি?’

‘কার সাথে কথা বলছেন?’

‘রিনি’

তটিনি আর কিছু বললোনা।আবারও শুয়ে পড়ে।বেশ কয়েক মিনিট শেষ হবার পর সে টের পায় বাপ্পি ওর কাছে।শরীর ছোঁয়নি কিন্তু তার শ্বাস প্রশ্বাস সে শুনতে পায়।
তটিনি যেভাবে শুয়েছিল সেভাবেই শুয়ে থেকে বললো,’আমার পারমিশন ছাড়া যদি ছুঁয়েছেন তবে বেশ ভারী খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি’

‘বাব্বাহ!বলতে চাইছি একটি কবিতা।হয়ত আমি কবি নই তবুও প্রেমে পড়ে অনেক মানুষই কবিত্ব রুপ লাভ করে।

বলছি—–
আসিফের কথা ভুলে যেদিন বাপ্পির জন্য মন পুড়বে সেদিন এসো,,,,নিজে ছুঁয়ে দেখো এই আমায়…
এই শরীর,এই প্রাণ তোমারই অপেক্ষায় আজ নিস্তেজ
তুমি ছুঁয়ে ফিরিয়ে দাও শত সতেজতা!’

তটিনি মিটমিট করে হাসছিল।সব রাগ সব ক্ষোভ এক নিমিষে কেমন বদলে গেলো।তার হাসি বাপ্পি দেখলোনা কিন্তু ওর হাত দিয়ে মুখ ধরে হাসার সময় চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ কানে লাগলো ভীষণ।বাপ্পি আন্দাজ করে বলেই ফেললো,’তুমি কি হাসছো?’

‘নাহ তো’
——-
রিনি করিডোর দিয়ে শুধু শুধু হাঁটাচলা করছিল।পরে আসিফ এসে ওর কান ধরে রুমে নিয়ে এসে বলে,’এইসব করছিস?’

‘তো কিত্তাম?’

‘নাচ একটু!’

রিনি দাঁত কেলিয়ে গায়ের ওড়না খুলে কোমড়ে পেঁচিয়ে আসিফকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে শুরু করলো একটি হিন্দি গানের সঙ্গে নাচা।তার সাথে ওর চিৎকার করে গান গাওয়া ফ্রি!

শেষে আসিফ বাধ্য হয়ে রিনির মুখটা চেপে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,”হইছে।নাচ দেখার শখ আমার আজীবনের জন্য গুচে গেছে।ক্ষেমা দে’

রিনি আসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে ওর মাথার চুলগুলো নাড়িয়ে দিয়ে বললো,’আমারে কেমন লাগে?’

‘অসহ্য’

‘আর!’

‘বিরক্তিকর ‘

‘আর?’

‘ইমম্যাচিউর’

‘আর?’

‘আর কিছুনা।’

‘কিছুনা?’

আসিফ পিছোচ্ছে আর রিনি এগিয়ে চলছে কথাগুলো বলতে বলতে।আসিফ যেতে যেতে খাটের শেষ প্রান্তে এসে স্থির হতেই রিনি সরে গেলো।তারপর বালিশ কোলে ধরে বললো,’আম্মা কইছে বেডা মানুষরে জোর না করতে’

আসিফ ব্রু কুঁচকে দম ফেলে সহজভাবে বসে বললো,’কেন?’

রিনি চট করে আসিফের গায়ের দিকে তেড়ে এসে বললো,’জোর কইরলে হেতারা ডরাই যায়।এর হরে আজীবন বউরে ডরায়!’

কথাটা রিনি ফিসফিস করে বললো।কেমন যেন ভূতুড়ে লাগলো।তখন রিনি আসিফের ঠোঁটজোড়া মনযোগ দিয়ে দেখছে দেখে আসিফ ঠোঁট গুটিয়ে বললো,’ওমন করে ছেলেদের ঠোঁট দেখা কে শিখিয়েছে তোকে?’

‘এগুলা শেখানো লাগেনা।এরকম টস…….!!’

‘এই চুপ!কি অশ্লীল! ছিঃ!!’

আসিফ বিছানা থেকে উঠে বালিশ টান দিতেই রিনি কপাল কুঁচকে বলে,’এগিন মাইয়ারা কয়!হোলারা কইলে খাডে?’
[এগুলা মেয়েরা বলে,ছেলেরা বললে মানায়?]
———
বাপ্পি ঘুমাচ্ছে।তটিনি নিজে নিজে বিছানা থেকে নামলো।এরপর ধীরে ধীরে পা রেখে রুম থেকে বের হয় সে।সে ভেবেছিল সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু দরজা খুলতেই সে দেখে সোফার রুমের সবাই টিভি দেখা বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে এখন।তটিনি এটার জন্য একেবারে প্রস্তুত ছিল না।

বাবা চশমা ঠিক করে বললেন,’কি রে মা?কিছু লাগবে?’

‘না কিছুনা’

‘তবে বের হলি যে?বাপ্পি কোথায়?’

‘ঘুমায়’

বাবা উঠে এসে তটিনির হাত ধরে টেনে এনে সোফায় বসালেন তারপর বললেন ভাল না লাগলে টিভি দেখতে।তটিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার বাবার দিকে চেয়ে বললো,’ঘুমাবেনা?’

‘আমি আজ ঘুমের ঔষুধ খাইনি।খাব!না খেলে ঘুম আসবেনা।চেয়েছিলাম না খেয়ে ঘুমাতে।কিন্তু দেখ!ঘুম আসতেছেই না’

তটিনি কিছু না বলে বাবার ঘাড়ে মাথা রাখে।বাবা ওর মাথায় হাত রেখে বললেন,’জানি রে মা!কাউকে অল্প কদিনে এক্সেপ্ট করা কঠিন।কিন্তু কি জানিস।যা হয় ভালর জন্যই হয়।তুই হয়ত সেদিন বুঝিস নাই!কিন্তু একদিন ঠিক বুঝবি!’
——
বাবা চলে যাবার পর তটিনি আর রুমে ফেরেনি।সোফায় পা তুলে লম্বা হয়ে শুয়ে মাথার নিচে কুশন দিয়ে শুয়ে শুয়ে টিভির চ্যানেল বদলাচ্ছিল।হঠাৎ মুখোর সামনে এক বাটি পপকর্ণ দেখে রিমোট রেখে মাথা তুলে তাকায় সে।বাপ্পি ওর দিকে বাটিটা ধরে রেখেছে।দশ মিনিট ধরে রান্নাঘরে কিছু একটার আওয়াজ সে পেয়েছিল বৈকি।ওটা যে বাপ্পি ছিল সেটা ও জানতোনা।
তটিনি পপকর্ণের বাটি টা হাতে নিতেই বাপ্পি চলে যাচ্ছিল তখন সে ওকে একটু বসতে বলে।বাপ্পি যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল।চট করে সেও বসে গেলো তটিনির পাশের সোফায়।তটিনি বাটিটার দিকে তাকিয়ে ছিল,তারপর কৌতূহল নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনি করলেন?’

‘নাহ আমার জমজ ভাই করছে।’

‘খাবেন আমার সাথে?’

‘আমি বাজারের গুলা খাই।নিজের বানানো টাতে মজা পাইনা।তাও তুমি খেয়ে দেখো”
——–
রিনি আজ খুব একটা অন্যরকম মুডে আছে।বিছানার সব জায়গা দখল করে ত্যাড়াব্যাঁকা হয়ে শুয়ে শুয়ে চোখ দিয়ে আসিফকে চিবিয়ে খাচ্ছে।
আসিফ এতক্ষণ পড়াতে মন দেয়ার চেষ্টা করলেও এখন কিছুতেই পারছেনা আর পড়তে।একটু ঘুমানো জরুরি।কিন্তু রিনি এরকম চিংড়ি মাছের মতন বেঁকে আছে কেন!

‘এই সর!আমি ঘুমাবো’

‘ঘুমান না!মানা কইচ্ছি?’

‘তুই এরকম সাপের মতন নড়ছিস কেন?সোজা হয়ে শুতে পারিস না?তোর এই দৃশ্য দেখে আমার ঘুম পালিয়ে যাচ্ছে’

রিনি সোজা হয়ে বসে ওকে এইবার আসতে বললো।আসিফ ধীরে ধীরে বিছানায় বসে বালিশে মাথা রেখে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে।
চারিদিকে নিরবতা বিরাজ করছে।রিনি কিছু করছেনা কেন?আসিফ তাই ভাবছিল।প্রথমে তো ভেবেছিল শোয়ার পরই রিনি ঝাপটে ধরবে।কিন্তু তা না করে সে এত শীতল কেন?
আসিফ ভয়ার্ত চোখে পেছনে মাথা ঘুরায়।ঘুরাতেই দেখে রিনি আগে থেকে দাঁত কেলিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

‘তুই ঘুমাসনি?’

‘আন্নে যেরকম আঁর ডরে ঘুমান না।তেমনই আঁই ও আন্নেরে ডর লাগান বিদে ঘুমাইতন ন’

‘কককককককি করবি তুই?’

রিনি ঠাস করে আসিফের মাথায় হাত রেখে বলে,’ঘুম পাড়াই দিয়াম’
——
বাপ্পি একটা শো দেখছিল মনযোগ দিয়ে। তটিনি গপাগপ পপকর্ণ চিবোতে চিবোতে বাপ্পিকেই দেখছিল।বাপ্পি ওর সাথে মিলিয়ে আজ গোলাপি পাঞ্জাবি পরেছে।এত কিছুর মাঝে সল এটা খেয়াল করেনি।এখন নজরে পড়ায় দেখছে মনযোগ দিয়ে।
বাপ্পি বুঝতে পারছিল তটিনি তাকে দেখছে তাই সে টিভিতে চোখ রেখে বললো,’আসিফ কি পরেছিল জানো?’

তটিনি ঘোরের মাঝে ছিল।সে উত্তর দিলো,’জানিনা’

‘আর বাপ্পি?’

‘গোলাপি পাঞ্জাবি,সোনালী লেইস!’

বাপ্পি মুচকি হেসে টিভি থেকে চোখ সরিয়ে তটিনির দিকে তাকাতেই তটিনির হাত কেঁপে উঠলো সাথে সাথে।নিজেকে ঠিক করে সে হন্তদন্ত হয়ে টিভির দিকে তাকায়।বাপ্পি উঠে যেতে যেতে বলে গেলো,’ভাঙবে তবু মচকাবেনা!’
চলবে♥

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৫
লেখনীতে-আফনান লারা
.
‘তটিনি একটা কথা শুনবে?’

‘কি?’

‘আমার দিকে তাকাও’

তটিনি টিভিটা বন্ধ করে তাকালো।বাপ্পি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,’You fell in love with me’

এটা বলেই সে নিচু হয়ে তটিনিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে চলে আসে।তটিনি কেবল হা করে তাকিয়ে ছিল বাপ্পির দিকে।ওকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বাপ্পি আবার বললো,’জোর করছিনা!’

এই বলে সে পাশেই শুয়ে পড়ে।তটিনি এবারও হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি কি বললো!আসলেই কি তাই।এত জলদি মানুষ প্রেমে পড়ে?
হঠাৎই বাপ্পির উপুড় হয়ে থাকা পিঠে মাথা রেখে তটিনি চুপ করে নিজের রুমের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে।সেখানে ওর হাই স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে তোলা কিছু ছবি ঝোলানো।বাপ্পি এক হাত দিয়ে তটিনির খোলা চুলগুলা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল তখন।দুজনেই চুপ।এরপর হঠাৎ বাপ্পি প্রশ্ন করে তটিনির শরীর ঠিক আছে কিনা।তটিনি ছোট্ট করে জবাব দেয় সে ভাল আছে।
———-
আসিফের আজ অনেক কাজ হয়েছে বলে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই তার ঘুম এসে যায়।কিন্তু রিনি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।কি মায়া এই লোকটার মুখে। স্ত্রী হয়েও কতগুলো বছর সে এই মায়ায় ধারের কাছেও আসতে পারেনি।
আসিফের কপালে হাত রেখে ওর চুলে হাত বুলিয়ে রিনি মুচকি হাসছিল হঠাৎ করে আসিফ চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
রিনি থতমত খেয়ে একটু সরতে নিতেই আসিফ ওর হাত ধরে বলে,’আমাকে খুব ভালবাসিস তাই না?’

রিনি কিছু বলেনা।শুধু তাকিয়ে থাকে।আসিফ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বলে,’তটিনিও বাসতো’

‘আঁর আর বুবুর তফাৎ কইতে হাইরবেন?’
[আমার আর বুবুর তফাৎ বলতে পারবেন?’]

‘পারবো।তটিনি আমায় ভালবেসে পায়নি,আর তুই পেয়েছিস।’

‘আর আন্নে কারে ভালবাসেন?’

আসিফ রিনির চোখের দিকে চেয়ে থাকে।এর বেশি কিছুই বলেনা।ধীরে হাতটা ছেড়ে দেয় ওর। রিনি তার উত্তর পেয়ে যায়।সেও শুয়ে পড়ে।এতক্ষণ যে ঘুমকে সে আটকে রেখেছিল সেই ঘুমটাকে খুব যত্নে নিয়ে আসলো চোখে।তলিয়ে গেলো গভীরের চেয়ে গভীরতর ঘুমে।
——–
বাপ্পির পিঠের উপর নিজেকে সবচাইতে বেশি উষ্ণতায় অনুভব করছিল তটিনি। এর আগে এমনটা হয়নি,সে করেও দেখেনি।বাপ্পির পিঠের উপর থাকতে থাকতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে দুজনের একত্রে ঘুম ভাঙ্গে ঐশীর গলা শুনে।
সে দরজায় আস্তে আস্তে বাড়ি দিতে দিতে বলছে দরজা খোলার জন্য।তটিনি চোখ ডলতে ডলতে বাপ্পির পিঠ থেকে সরে যায়।বাপ্পি উঠে পিঠে হাত দিয়ে বলে,’তোমায় দিয়ে তেল মালিশ করাবো।পিঠ শেষ আমার!৫৪কেজির একটা মানুষ পিঠের উপর শুয়ে থাকা গোটা একটা রাত।এটা কি ছোট কিছু?’

তটিনি চুপটি করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।বাপ্পি পিঠ চাপতে চাপতে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে ঐশী হাতে নাস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

‘কি গো শালি!কি খবর?সকাল সকাল তোমার মুখ দেখলাম।দিন তো ফাটাফাটি যাবে তবে’

ঐশী লজ্জায় লাল হয়ো ট্রেটা বাপ্পির হাতে দিয়ে দৌড়ে পালালো।বাপ্পি ট্রে এনে টেবিলের উপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেছো।তটিনি ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে ছিল বসে।রিনি মাথা বের করে রুমের ভেতর তটিনিকে দেখছিল,বিছানা দেখছিল,বাসর ঘরের হাল দেখছিল।সব দেখি যেভাবে সাজিয়েছিল সেভাবেই আছে।তবে কি তটিনি বুবু!!
তটিনি মাথা ঘোরাতেই রিনিকে দেখে ফেলে।তাই ওকে ভেতরে আসতে বলে।রিনি ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে ভয়ে আসে সেখানে।তটিনি জানতে চায় সে কিছু বলবে কিনা

‘না এক্কানা চাইতেছিলাম যে হুলগুন কত ভালা আন্নে গো লাই এবো তাজা রই গেছে।
[না একটু দেখছিলাম ফুলগুলো কত ভাল।তোমাদের জন্য এখনও তাজা রয়ে গেলো’]

তটিনি বুঝলো আবার বুঝলোনা।রিনির কথায় কোনো জবাব নেই বলে সে তাকিয়ে থাকলো।রিনি বিছানায় উঠে বসে পড়েছে তটিনির।তারপর তটিনির গায়ে শুঁকে বললো,’কোন পারফিউম দেন?’

তটিনি কিছু বলবে তখনই সেখানে আসিফ আসে।সে করিডোর দিয়ে যাবার পথে রিনিকে দেখতে পায় এখানে।সে ঠিক বুঝে গেছে রিনি তটিনিকে বিরক্ত করতে এসেছে।

‘এই তুই এখানে কি করিস?’

‘গল্প করি’

‘গল্প করতে হবেনা আর’

এটা বলে আসিফ রিনির হাত ধরে টান দিয়ে নামিয়ে নিলো।তটিনি তখন বললো,’থাক না।ওর কথা বলতে ইচ্ছা করেছে যখন থাকুক’

‘কিসের থাকুক!তুই ওরে চিনিস না।সুবিধাবাদি একটা!বাসর ঘরের পরেরদিন কেউ ঐ রুমে ঢোকে? কমন সেন্স নাই ওর!’

আসিফ বকতে বকতে রিনির কান টেনে রুম থেকে নিয়ে চলে গেলো।সেসময় বাপ্পি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে বললো,’কেউ এসেছিল?’

‘হ্যাঁ।’

‘কি বলে গেলো?’

‘বললো আমাদের ভাগ্য অনেক।যার কারণে বাসর ঘরের ফুল আমাদের জন্য এখনও তাজা রয়ে গেছে’

বাপ্পি অবাক হয়ে জানতে চাইলো এই কঠিন কথাটা কে বলেছে।তটিনি রিনির কথা বলে।বাপ্পির বিশ্বাস হয়না এই কথা রিনির মতন ছোট একটা মেয়ে বলবে!
—–
রিনিকে রুমে এনে তারপর কান ছাড়ে আসিফ।রিনি কান ঘঁষতে ঘঁষতে বলে, ‘এটা ভালা করেন ন!!আঁই কিচ্চি🐸?’

‘তুই কিচ্ছস?’

আসিফ রিনিকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে।রিনি যা যা বলতে চেয়েছিল তার সব ভুলে বসে আছে।আসিফের এমন আচরণে সে হতভম্ব’

আসিফ ওর গাল টিপে ধরে বলে,’তটিনিকে জ্বালাবি না। এমনিতেও ও শরীর, মন দুটোই ভাল নেই’

‘তাই বলে গাল টিবি দিবেন😼?’

এই কথায় আসিফ রিনির গাল ছেড়ে দেয়।এরপর ওর কান আবারও টেনে ধরে বলে,’ আজকে তটিনি বাপ্পিকে নিয়ে এই বাড়িতে থাকবে।তুই যদি ওদের ধারের কাছেও গেছিস তো এই কান ছিঁড়ে হাতে ধরিয়ে দিবো’
——-
তটিনি একটা গোলাপ হাতে নাড়িয়ে দেখছিল।গোলাপটা দেখে আসলেই তাজা মনে হচ্ছে।তাজা দেখে কানে গুজে তটিনি নিজের পা কাছে এনে দেখে ক্ষত টার কি অবস্থা।
বাপ্পি একটা পাউরুটি মুখে দিয়ে তখন কাছে এসে তটিনিকে কোলে নিতে চায় সেসময় তটিনি পিছিয়ে বলে,’আমি একাই পারবো।আপনি খান’

বাপ্পি আরও একবার জোর করে কিন্তু তটিনি এবারও মানা করে দেয়।তাই বাপ্পি আর কিছু না বলে খেতে বসে।
তটিনি নিজে নিজে পায়ে হেঁটে চলে গেলো।বাপ্পির কোলে উঠলে কেমন একটা ভয় কাজ করে মনের ভেতর।মনে হয় এই বুঝি সে লোকটার প্রেমে পড়ে যাবে।

তটিনির বাবা সেইসময় রুমে আসে।বাপ্পি ওনাকে দেখে খাওয়া বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়লো।

‘বসো বাবা।ব্যস্ত হইওনা’

তটিনির বাবা বাপ্পির পাশের চেয়ারে বসলেন এরপর ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে বললেন,’তটিনি খুব জেদী তাইনা?’

‘সবাই একই কথা কেন বলে?’

‘কারণ সে জেদি’

‘আমার তো মনে হয়না।সে নরম মনের মানুষ।অল্পতেই গলে যায়’

‘যদি তাই হয় তবে সে তোমায় ভালবেসে ফেলেছে।নাহলে তটিনি গলে যাওয়ার মতন মেয়ে না।সর্বদা নিজের কথাতে অটল থাকে সে।তবে ভাল। হাসিল করতে পারলে তোমার আর কিছু করতে হবেনা।চোখের সামনে মনের মতন একটা মেয়েকে দেখবে।প্রশংসা করছিনা।সব খারাপ তো একটা মানুষের মধ্যে থাকেনা।’

বাপ্পি তটিনির বাবার হাত ধরে বলে,’তটিনি যেরকম সেরকম টাই দেখে আমি বিয়েটা করেছি।আমি জানি ওর অতীত বর্তমান সব!আপনি চিন্তা করবেন না।তাকে ভাল রাখার সব চেষ্টা আমি করবো’

তটিনির বাবার চোখ ছলছল করে ওঠে।মুচকি হেসে বাপ্পির মাথায় হাত রেখে দোয়া করে উঠে চলে যান।
বাপ্পি তখন দেয়ালে ঝোলানো তটিনির একটি ছবির দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে মুখে আরেকটা পাউরুটি দিয়ে পেছনে তাকালো।তটিনি সবেমাত্র বেরিয়েছে ওয়াশরুম থেকে।ভেজা মুখ বেয়ে পানি পড়ছে তার।আর সে এদিক ওদিকে তোয়ালে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।
চলবে♥