তোমাতে সূচনা তোমাতেই সমাপ্তি পর্ব-২৯ এবং শেষ পর্ব

0
35

#তোমাতে_সূচনা_তোমাতেই_সমাপ্তি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#শেষ_পর্ব

দীর্ঘদিন পর আদনানকে দেখে উৎফুল্ল হলেন এনায়েত সাহেব, রোজার সঙ্গে পরিচিত হয়েও খুশি হলেন তিনি।

‘আমি তো ভেবেছিলাম আর কোনোদিন বুঝি তোর দেখা পাবো না, সেই যে গেলি আর কোনোদিন একটা ফোনও করিসনি’

‘ নিজেকে সময় দিতে ব্যস্ত ছিলাম বাবা ‘

‘ বুঝলাম, এজন্যেই তো সব ছেড়ে গেছিলি। তবে নিজেকে সময় দিতে গিয়ে যে এভাবে আমাকে পর করে দিবি ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম তুই একলা হয়ে যাবি কিন্তু নাহ, বিয়ে করেছিস দেখে ভালো লাগলো।’

রোজার সঙ্গে কথা বললেন এনায়েত সাহেব, ওর নম্র কথাবার্তা ও আচরণে এনায়েত সাহেব খুশি হলেন। আদনানের নিজের স্ত্রী হিসেবে যোগ্য কন্যাকেই বিবাহ করেছে বটে! দুপুরে কুককে খাবারের ব্যবস্থা করতে বললেন এনায়েত সাহেব, এর মাঝে বাড়িটা ঘুরে রোজাকে দেখালো আদনান। কিছু সময় পর ফারহান আসে, অনেকদিন পর মুখোমুখি হলো দুই ভাই। একান্তে কিছু আলাপ হলে মন্দ হয় না। ছাদে…পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দুইজন। আদনান প্রশ্ন করলো…

‘যা চেয়েছিলি সবকিছু পেয়ে গেছিস, কেমন চালাচ্ছিস সব?’

হাসলো ফারহান…

‘কেনো অতি লোভ ভালো নয় সেটা এখন বুঝতে পারছি, একা হাতে সব সামলানো এতো ঝামেলার আর তুই যাওয়ার পর বাবাও সবকিছু আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়েছে। এতকিছু হ্যান্ডেল করা অনেক ধৈর্যের ব্যাপার, পা’গল হয়ে যাচ্ছি আমি’

ফারহানের হতাশা দেখে অবাক হলো আদনান…

‘কি বলছিস! এতো বছরের আকাঙ্খার পর নিজের আশা পূরণ করেছিস, মাত্র এক বছরেই তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এতো হা হুতাশ করছিস? আমি প্রায় পাঁচ বছর সামলেছি সব ‘

‘তুই বোধহয় এলিয়েন! নাহলে সম্ভব হতো না, স্টাফদের হ্যান্ডেল করতে গিয়েই অবস্থা খারাপ হয়ে যায় আমার। এখন বুঝছি বাবা কেনো আমাকে দায়িত্ব না দিয়ে তোকে দিতো, আমার দ্বারা সত্যি সব সামলানো দায়!’

‘ তাহলে বোঝ, এতগুলো বছর আমার কি অবস্থা ছিলো?’

‘তুই এই বাড়িতে ফিরে আয় আদনান ‘

‘আমার আর ইচ্ছে নেই ‘

‘ রাগ করে বলছিস?’

‘ নাহ! নিজের আলাদা দুনিয়া গড়েছি, সেখান থেকে হুট করেই বেরিয়ে আসতে পারবো না। কষ্ট হলেও সবটা হ্যান্ডেল করতে শেখ। বাবার বহু বছরের কষ্টের ফল তোর হাতে এখন, ঠিকঠাক সামলাতে না পারলে কিন্তু বাবা হতাশ হবেন’

ফারহানের সঙ্গে সেদিন অনেকক্ষণ কথা হলো আদনানের, একসঙ্গে থাকা অবস্থায় কোনোদিন এতো শান্তভাবে দুজনে কথা বলেছে বলে মনে হয় না। লোকে বলে দূরত্ব বাড়লে গুরুত্ব বোঝা যায়, ফারহান এখন সেটা উপলব্ধি করছে। সেদিন আদনানের পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছে রোজা, ওকে ফারহান ও এনায়েত সাহেব উভয়েই পরিবারের অংশ হিসেবে স্বাগমত জানিয়েছে….
__________________________________

শীতের রাতে বসে উলের সোয়েটার বুনতে ব্যস্ত রোজা, শুধু নিজে নয় বরং আদনানের হাতেও কুশিকাটা ধরিয়ে দিয়েছে। হসপিটালের কাজ নেই, সারাদিন ঘরে বসে বোর হচ্ছিলো রোজা তখন ইউটিউব দেখে দেখে উলের কাজ একটু আধটু শিখেছে। বেবির জন্যে ছোটো একটা সোয়েটারও বুনেছে, যদিও তেমন ভালো হয়নি তবে সন্তানের জন্যে নিজের হাতে প্রথম পোশাক তৈরি করতে পেরে ভীষণ উৎফুল্ল রোজা কিন্তু আদনান কিছুতেই পারছেনা। এক সময় বিরক্ত হয়ে ও বলে ওঠে…

‘ আমি পারছি না ‘

‘ আমি যেভাবে করছি সেভাবে করো ‘

‘ হচ্ছেনা তো ‘

‘তুমি এদিকে মনোযোগ দিচ্ছো না তাই হচ্ছেনা, সোয়েটার না বানাতে পারো অন্তত রুমাল টাইপের কিছু বানানোর চেষ্টা করো আগে। আস্তে আস্তে শিখে যাবে। এইযে দেখো এভাবে করতে হবে’

‘ নাহ! এগুলো করতে অনেক মনোযোগ দরকার। আমি পারবো না’

এসব ছোটোখাটো কাজের ক্ষেত্রে আদনানের ধৈর্য্য সীমিত, যদিও কুশিকাটা নিয়ে সোয়েটার বোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ওর ছিলো না শুধু রোজার আবদার রাখতে বসেছিলো কিন্তু এসব ওর দ্বারা হবেনা…

‘তুমি এগুলো রেখে ওঠো এখন, অনেকক্ষণ ধরে এভাবে চাপ দিয়ে বসে আছো। উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করো’

‘আরেকটু আছে, করেই উঠি একেবারে’

‘অনেক করেছো, বাকিটা পরে করে নিও। এবার ওঠো ‘

আদনান সব সরিয়ে রেখে রোজাকে ধরে ওঠালো, বাড়ির বেশিরভাগ কাজ আদনানই করে তাই দিনের বেশিরভাগ সময় শুয়ে বসে কাটছে রোজার বিধায় ওর হাতে পায়ে পানি এসে গেছে। ডাক্তার বলেছে হাঁটাহাঁটি করতে কিন্তু ভারী শরীর নিয়ে হাঁটতেই ইচ্ছে হয় না ওর! হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় এলো ওরা…

‘ কিছু খাবে?’

‘উহু! আদনান, আমি একটা কথা ভাবছি। আমার মনে হয় আমাদের উচিত তোমার বাবার সঙ্গে গিয়ে থাকা। ওনার সঙ্গে কথা বলে যা মনে হলো উনি তোমাকে অনেক মিস করেন’

‘আই নো, আমিও বাবাকে অনেক মিস করি কিন্তু আমি এখন আর ওখানে গিয়ে থাকতে চাইনা। এটাই এখন আমার বাড়ি’

‘তবে মাঝে মাঝে গিয়ে ওনার সঙ্গে দেখা করাটা তোমার দায়িত্ব, সময় করে গিয়ে ওনার সঙ্গে দেখা করো নাহলে ওনাকে এখানে আসতেও বলতে পারো’

‘ হুমম! এটা করা যায়, যেমন তোমার মা এসে থাকেন তেমন বাবাও যদি চায় তাহলে মন্দ হয় না’

‘ সবাই মিলেমিশে থাকাই ভালো, শুধু নিজের ভালোর কথা ভেবে একলা থাকতে গেলে একটা সময় এমন একা হয়ে যেতে হয় যে প্রয়োজনের সময় আশেপাশে আর কাউকে পাওয়াই যায়না’

‘আমরা একলা নই! আমরা আছি একে অপরের জন্যে, আর যতদিন আমরা একসঙ্গে আছি, দুনিয়ার কেউ পাশে না থাকলেও সমস্যা নেই’

স্মিত হাসলো রোজা…

‘ তুমিও না…সবসময় এতো…’

পুরো কথা শেষ করার আগেই পেট চেপে ধরলো রোজা, পেটে ব্যথা হচ্ছে। একটু পরেই লক্ষ্য করলো যে ওর পা গড়িয়ে পানি পড়ছে, পানি ভেঙে গেছে। সবে সাড়ে আট মাস চলছে, এখনই পানি ভাঙলো দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো রোজা। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আদনানের দিকে তাকালো রোজা, আদনানও চিন্তিত…

‘ তোমার ডেট তো…’

পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে রোজার, দাড়িয়ে থাকতে পারছেনা মেয়েটা। আদনান আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত রোজাকে নিয়ে হসপিটালে গেলো, যাওয়ার পথে রোজার বাড়িতেও খবর দিলো। রোজাকে চেক করার পর ডাক্তার বললেন ইমারজেন্সি সিজারে নিতে হবে। আদনানও আর আপত্তি করলো না, ওটির সামনে সিটে শোয়া অবস্থায় আদনান শক্ত করে ওর হাতটা ধরলো। কপালে চুমু দিয়ে বললো…

‘আমি অপেক্ষা করবো, আমার কাছে ফিরে এসো!’

রোজা মুখে কিছু বলেনি, শুধু অশ্রুভেজা নয়নে মুচকি হেসেছিলো। মেয়েটার মুখ দেখে আদনানের বুক ফেটে যাচ্ছিলো, ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। রোজাকে যখন ভেতরে নিয়ে গেলো তখনই মেয়েটার মুখে হাসি, আদনান ছলছল চোখে বিদায় জানালো। কিন্তু এ বিদায় যে শেষ বিদায় হবে তা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেনি আদনান….
_____________________________

কেটে গেছে দশ বছর…এনায়েত সাহেব বছর নয়েক আগে স্ট্রো’ক করে মৃ’ত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তিন ছেলেকে সম্পত্তি সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন এবং আদনানকে বাড়ির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আদনান এখন ভাইদের সঙ্গে নিজের বাড়িতেই থাকে। এনায়েত সাহেবের অনুপস্থিতিতে বর্তমানে সেই এই বাড়ির প্রধান। আদনানের প্রতি ফারহান ও ঈশানের যে বিদ্বেষ ছিলো তা বাবার মৃ’ত্যুর পর আর নেই। আদনানকে এখন দুজনেই বেশ মান্য করে আর তার নেওয়া সকল সিদ্ধান্তও মেনে নেয়। শুরুতে আদনানের এখানে আসার ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু বাবার ইচ্ছা পূরনের উদ্দেশ্যে এসেছিলো, ভেবেছিলো পূর্বের ন্যায় এখনও বুঝি ওর দুই ভাই ওকে মেনে নেবেনা কিন্তু ওরা সহজেই মেনে নিয়েছে। হয়তো হঠাৎ বাবাকে হারিয়ে দুজনেই দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে পড়েছিলো। মাথার ওপর বড় কারো ছায়ায় প্রয়োজন উপলব্ধি করেছিলো বিধায় পূর্বে আদনানের প্রতি থাকা সকল রাগ – হিংসা ধুয়েমুছে ফেলে দিয়েছে। পরিবার, ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি আরেকটি গুরু দায়িত্ব পালন করতে হয় আদনানের। মেয়ের মা – বাবা উভয়ের দায়িত্ব একসঙ্গে পালনের ভার এখন ওর কাঁধে। সেদিন অপারেশন থিয়েটার থেকে জীবিত ফিরলেও মেয়ের সঙ্গে বেশিক্ষণ কাটাতে পারেনি রোজা। যে সন্তানের জন্যে এতো ত্যাগ করেছে তার সঙ্গে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় কাটাতে পেরেছিলো সে। রোজার মৃ’ত্যুর পর প্রথম কয়েকমাস মেয়েকে মেনে নিতে পারেনি আদনান, শুধু মনে হতো এই সন্তানের জন্যেই রোজা ওকে ছেড়ে চলে গেছে। দু – তিন মাস রোজার মা আরোহীকে সামলেছে এরপর ধীরে ধীরে মেয়ের প্রতি টান জন্মায় আদনানের। আদনান উপলব্ধি করে যে যার জন্যে রোজা এতকিছু করলো তাকে হেলা করা তো অন্যায়। তাছাড়া রোজার পর নিজের বলতে একমাত্র ওর সন্তানই আছে। মা ছাড়া এতো ছোটো বাচ্চা সামলানো সহজ কথা নয়, শুরুতে ভীষণ অসুবিধা হতো। রোজার মা আদনানকে বুঝিয়ে দিতো কিভাবে কি করতে হবে। আস্তে আস্তে সব শিখে যায় আদনান, কাজের থেকে বেশি সময় মেয়ের সঙ্গেই কাটাতো। মেয়ের যত্নে বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখেনি সে। মেয়ের স্বভাব যদিও কিছুটা বাবার মতো তবে আদনান চেষ্টা করেছে ওকে রোজার মতো করে বড় করার। বর্তমানে আরোহী বয়স দশ বছর, বাড়িতে সাধারণত ফারহানের স্ত্রীর সঙ্গেই থাকে ও। তবে বাকি সময়টা আরোহীর বাবার সঙ্গেই কাটে, মেয়ের প্রয়োজনীয় সকল কাজ আদনান নিজের হাতে করতেই পছন্দ কই। সকালে স্কুল যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে স্কুল ড্রেস পড়ে বাবার রুমে আসে আরোহী…

‘আব্বু!’

শার্ট ঠিক করতে করতে মেয়ের দিকে তাকালো আদনান…

‘কি ব্যাপার, তুমি এখনও রেডি হওনি কেনো?’

আরোহী কিছুটা চিন্তিত কণ্ঠে বললো…

‘আমি জানি তোমার অফিসে দেরি হয়ে যাবে আর আজ আমার স্কুলেও দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম। আই অ্যাম সরি!’

‘এদিকে এসো, কি হয়েছে বলো আমাকে। স্কুলে কিছু করেছো তুমি?’

‘ না না আব্বু, আসলে আমার চুলগুলো বড় হয়ে গেছে তো তাই আমাদের ম্যাডাম বলেছে বিনুনি করে যেতে। আমার তোমাকে বলতে মনেই ছিলো না, আর চাচীও বাসায় নেই। বিনুনি না করে গেলে যদি বকা দেয়!’

‘এরকম সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এতো প্যানিক করার কি আছে? সব নিয়ে এসো, আমি করে দিচ্ছি’

‘ তুমি পারো?’

‘তোমার জন্যে তোমার আব্বু করতে পারবেনা এমন কোনো কাজ নেই, যাও! দ্রুত সব নিয়ে এসো নাহলে আমাদের দেরি হয়ে যাবে’

‘ ওকে! থ্যাংক ইউ আব্বু ‘

আদনানের পাশের রুমটাই আরোহীর তাই যেতে আসতে মিনিট দুয়েক মতো সময় লাগলো, আদনান প্রথমে নিজে তৈরি হলো এরপর বসলো মেয়ের কাছে। আরোহীর চুলগুলো আঁচড়ে শুরু করলো, প্রথম কয়েকবার ভুল হয়েছিলো এরপর ঠিকঠাক করতে পেরেছে। সেসময় হঠাৎই চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক দশক পূর্বের স্মৃতি, অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার পূর্বে রোজাও বায়না করেছিলো যে ওকে বিনুনি করে দিতে হবে। আদনানকে বলে বলে দিয়েছিলো কিভাবে করতে হবে এবং সেটাই ছিলো রোজার শেষ আবদার। সেই বেদনাময় দিনের স্মৃতিচারণ করতে করতেই মেয়েকে তৈরি করলো আদনান। আরোহী বিনুনিদুটো দু হাতে ছুঁয়ে দেখলো…

‘ অনেক সুন্দর হয়েছে আব্বু, থ্যাংক ইউ ‘

বাবার গলা জড়িয়ে ধরে চু’মু গেলো আরোহী, আদনানও মেয়ের গালে চু’মু দিয়ে বললো..

‘ইউ আর ওয়েলকাম মাই প্রিন্সেস!’

‘ আব্বু! কাল তো আমার বার্থডে, তুমি আমায় কি গিফট দেবে?’

‘ সারপ্রাইজ!’

‘ আব্বু! বলো না প্লিজ প্লিজ!’

‘ এখন বলে দিলে আর সারপ্রাইজ কিভাবে থাকবে বাবা? কালকেই দেখো? এখন তুমি যাও, আমি আসছি’

বাবার কথা শুনে একগাল হাসলো আরোহী কারণ সে জানে বাবা তার পছন্দের কিছুই গিফট করবে। আদনান বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ফারহানকে জিজ্ঞাসা করলো…

‘চেক পাঠিয়ে দিয়েছিস?’

‘হ্যাঁ, তিনটা চেক তিন জায়গায় দিয়েছি। আরো যদি দিতে চাস তাহলে সাইন করে দিস আমি পাঠিয়ে দেবো’

‘ হুমম! আজকে বিকেলে একটা মিটিং আছে, ওটা তুই সামলে নিস। আজ বিকেলের সময়টা আমি একান্তে কাটাতে চাই ‘

ফারহান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো, বছরের এই দিনটায় যতোই ব্যস্ততা থাকুক না কেনো দু ঘণ্টা সময় আদনান বরাদ্দ রাখে কারণ আজ রোজার মৃত্যুবার্ষিকী। মেয়ের জন্মদিনও এইদিন, কিন্তু আদনান একদিন পর মেয়ের জন্মদিন পালন করে। লাঞ্চের পর আদনান গোরস্থানে এসেছে, হাতে একটা লাল গোলাপ। আদনান যখনই এখানে আসে একটা গোলাপ নিয়ে আসে কারণ রোজার লাল গোলাপ ভীষণ প্রিয় ছিলো। রোজার কবর জিয়ারত করার পর পাশে বসলো আদনান, ফুলটা পাশে রেখে নিজেও বসলো একপাশে। মিনিট পাঁচেক পর হেসে বললো…

‘কি হয়েছে জানো? আরোহীর রেজাল্ট দিয়েছে, তোমার মেয়ে এবারও ফার্স্ট হয়েছে। মেয়ে আমাদের ভীষণ ট্যালেন্টেড বলতে হবে’

রোজার সঙ্গে আরো কিছুক্ষণ কথা বললো আদনান, আর বেশিরভাগ কথাই ছিলো আরোহী কেন্দ্রিক। প্রতিবার আদনান আরোহীর বিষয়ের সব কথা এসে বলে, রোজাকে সে জানাতে চায় যে রোজার রেখে যাওয়া মূল্যবান জিনিসটাকে সে খুব করে আগলে রাখছে। রোজার মৃ’ত্যুর কয়েকবছর পর কেউ ওকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বলার সাহস করেনি, কারণ আদনানকে দেখেই যেনো সকলে বুঝেছিলো মেয়ে ব্যতীত আর কারো ওর দরকার নেই আর রোজার জায়গা ও কাউকে দেবেনা। রোজার অসময়ে চলে যাওয়াটা বেদনা দিলেও জীবনে রোজার আগমন আদনানের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি অধ্যায় ছিলো। রোজার আগমনের মাধ্যমে জীবনে যে প্রেম বসন্তের সূচনা হয়েছিলো রোজার চলে যাওয়ার মাধ্যমেই তার সমাপ্তি ঘটেছে আদনানের জীবনে। জীবন থেমে নেই… তা চলছে কিন্তু ভালোবাসা? তা সারাজীবনের জন্যে শুধু একজনের তরেই তুলে রেখেছে আদনান!!

____ সমাপ্ত ____

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]