#তোমাতে_সূচনা_তোমাতেই_সমাপ্তি
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৮+০৯
অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে আদনান, মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত সে। এতগুলো বছর এনায়েত সাহেবের ছেলে হিসেবে কোনো দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেনি আদনান, শুধু কৃতজ্ঞতাবোধ নয় বরং মন থেকেই লোকটাকে নিজের বাবা ভাবতো। যেভাবেই হোক এতো বছর ধরে মানুষ তো সেই করেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এনায়েত সাহেব আদনানকে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন, অপরদিকে আদনান হয়ে যাচ্ছে এনায়েত সাহেবের আপন ছেলেদের শত্রু। যদিও ফারহান ও ঈশানকে আদনান নিজের ভাই হিসেবেই ভাবার চেষ্টা করেছে কিন্তু ওরা দুজনে কখনো আদনানকে নিজের ভাই হিসেবে ভাবেনি। এনায়েত সাহেব আদনানকে সবসময় এক্সট্রা কেয়ার করতেন বলে ঈশান ফারহান দুজনেই আদনানকে নিজেদের ভাই কম শত্রু বেশি ভাবতো। হাই স্কুলে থাকা অবস্থায় দুইবার ফারহান আদনানকে বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো, কলেজ লাইফেও একবার মা’রা’র চেষ্টা করেছিলো। পুরোনো দিনের কথা ভেবে আদনান ভেবেছিলো এবারও হয়তো ফারহানই ওকে মা’রা’র প্ল্যান করেছিলো কিন্তু না..এবার ফারহান নয় বরং ঈশান লোক ভাড়া করে ওকে মা’রা’র চেষ্টা করেছে। ঈশান বাড়ির বাইরে থাকে, ও হয়তো ভেবেছিলো দুর থেকে কাজ করালে ধরা পড়বে না কিন্তু আদনানের কাছে ধরা পড়েই গেছে। যাদের সঙ্গে এতো বছর কাটিয়েছে, একসঙ্গে বড় হয়েছে তারা কেউই আদনানকে আপন ভাবতে পারেনি। এনায়েত সাহেব, যিনি বাবা হিসেবে পালন করেছেন তিনি নিজের স্বার্থে আদনানকে ব্যবহার করেছে। আর ফারহান ঈশান তো কখনো ভাই হিসেবেই মানেনি। সবমিলিয়ে আদনান বেশ উপলব্ধি করতে পারছে যে এই পৃথিবীতে আসলে ওর নিজের বলতে কেউই নেই, এই ভবে ও সম্পূর্ন একা! চোখ বুজে শুয়ে কথাগুলো ভাবছিলো আদনান, ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখের কোণ গড়িয়ে কয়েক ফোঁটা পানি পড়লো ওর। নিজের পরিবার বলে যাদের মানতো তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আজ চলে এসেছে, এখন শুধু এক রোজাই আছে। যদিও আদনান এখনও জানেনা রোজা তার হবে কিনা। মেয়েটার যদি অন্য কারো সঙ্গে সত্যিই বিয়ে হয়ে যায় তাহলে কি হবে? কিছু ভেবে পাচ্ছেনা আদনান। নিজেকে আজ বড্ড অসহায় লাগছে, এতোটা অসহায়বোধ সে কখনোই করেনি। মাথা ব্যথা করছে, এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতে কখন যে ওর চোখ লেগে এসেছে বুঝতে পারেনি….সকালবেলা খাবার টেবিলে জামাল সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে মেয়েকে বলেন…
‘ রোজা, সামনে তোর বিয়ে জানিস তো?’
পাশ থেকে রোজার মা বললেন…
‘আহা, খাওয়ার সময় আবার এসব কথা কেনো? পরেও তো বলতে পারবে’
‘ সময়ের কথা সময়েই হওয়া ভালো ‘
জামাল সাহেব পুনরায় মেয়েকে একই প্রশ্ন করতেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো রোজা…
‘ সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে, মোটামুটি আমাদের তরফ থেকে সব কাজই সম্পন্ন হয়ে গেছে’
‘ জ্বি বাবা ‘
‘ গতবারের ঘটনার পর কি হয়েছিলো সেটা নিশ্চয়ই ভুলে যাসনি। নিষাদ নেহাৎ ভালো ছেলে তাই এতকিছু পরও তোকে মেনে নিচ্ছে নাহলে তো যেভাবে পাড়ায় তোর বদনাম রটে গেছিলো। আমাদের মান সম্মানের চিন্তা না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু ভবিষ্যতে তোকে আর কখনো বিয়ে দেওয়াই যেতো না। সঙ্গে তোর ছোটো বোনের কপালেও দুঃখ ছিলো। এবার পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো না ঘটে সেটা মাথায় রাখিস ‘
রোজা চোখ নিচু করে বাবার কথা চুপচাপ শুনলো, এবার এই বিয়েতে কোনো ঝামেলা হলে যে ওর বাবা ওকে ছেড়ে কথা বলবে না সেটা রোজার বুঝতে বাকি নেই। জামাল সাহেব বরাবরই নিজের সম্মানের প্রতি বিশেষ মনোযোগী ছিলেন, সম্মানে বিন্দুমাত্র আঘাত আসবে এমন কর্ম থেকে সদা তিনি বিরত থাকতেন। রোজাও চায়না এবার কোনো ঝামেলা হোক বা ওর জন্যে ওর পরিবারের পুনরায় সম্মানহানি হোক। বিয়েটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বটে কিন্তু ওর মনের মধ্যে নিষাদকে নিয়ে একটা খটকা রয়েই গেছে। আদনান এখন এনায়েত সাহেবের সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে, আপাতত রোজার ব্যাপারে মনোযোগ দিচ্ছে ও। এতোদিন সাদিককে কাজে লাগালেও এখন নিজেও নিষাদের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছে। কয়েকদিন যাবত অফিস যাচ্ছেনা আদনান, তো আজ দুপুরে তানভীর এসেছে আদনানের বাড়িতে…
‘অফিসে গেছিলাম, তোকে পেলাম না। বাড়িতে কি করছিস তুই?’
‘ আমাকে খুঁজতে এরপর সোজা আমার বাড়িতে চলে আসবি, আমি আর অফিসে যাবো না ‘
তানভীর যেহেতু সব জানে তাই আর বিস্তারিত কিছু জানতে চাইলো না, তবে যে আদনান কাজের প্রতি এতো সিরিয়াস সে সব বাদ দিয়ে কয়েকদিন ধরে বাড়িতে কেনো বসে আছে তার কারণ তানভীর কিছুটা হলেও বুঝেছে…
‘ তুই কি সবকিছু ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিস?’
‘চেষ্টা নয়, আমি সব ছেড়েই দিয়েছি। বাবার সঙ্গে বা ওই বাড়ির সঙ্গে আমার এখন আর সম্পর্ক নেই। অবশ্য আমি সম্পর্ক না রাখলেও তাদের কোনো সমস্যা হবেনা’
‘আঙ্কেল আর তোকে ফোন করেনি?’
‘এসব কথা ছাড় তানভীর, আমি আর এসব নিয়ে আলোচনা করতে চাইনা। তুই কি কাজে এসেছিস বল’
‘ এসেছিলাম তো কাজের জন্যে কিন্তু তুই যখন আর কাজের মধ্যেই নেই তাহলে আর ওসব কথা তুলবো না। বাদ দে। কিন্তু তোকে ব্যস্ত মনে হচ্ছে, কিছু হয়েছে?’
‘ ইয়াহ, আমি কিছুদিন যাবত ব্যস্ত। একজনের ওপর নজর রাখছি ‘
‘ মানে?’
‘ সে অনেক কথা, এক্সপ্লেইন করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। আমার একটু বাইরে যেতে হবে, তুই কি যাবি আমার সঙ্গে নাকি…’
‘ আমার এখন কাজ নেই, তোর সঙ্গে যেতে পারবো। তবে যেতে যেতে আমাকে কিন্তু সবটা এক্সপ্লেইন করতে হবে ‘
‘ ফাইন! চল ‘
নিষাদের ব্যাপারে কিছু খোজ পেয়েছে, সেটাই সত্য না মিথ্যে দেখার জন্যে যাচ্ছে আদনান। তানভীরও ওর সঙ্গে আছে, যাওয়ার পথে বন্ধুকে রোজার কথা জানায় আদনান। শুধু তাই নয় রোজার প্রতি ওর কি অনুভূতি তাও প্রকাশ করে। বন্ধুর মুখে এসব কথা শুনে তানভীর যেনো হতভম্ব হয়ে যায়, কারণ আদনানের কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো যে সে রোজাকে কতোটা চায়…
_______________________________
রোজার লাঞ্চটাইম সম্পর্কে অবগত আদনান, তাই সেই সময়ই রোজার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। আজ না করে সোজা ভেতরে ঢুকে গেছে, রোজা ওকে দেখে বললো…
‘ আপনি এভাবে হুটহাট আমার কর্মস্থলে চলে আসেন কেনো?’
‘ তুমি আমার কল রিসিভ করছিলে না কেনো? নাকি তোমার হবু হাসবেন্ড কারো কল রিসিভ করতে মানা করেছে?’
‘ সবকিছুতে নিষাদকে আপনার না টানলে হয় না? আমি আগেই তো বলেছি আপনার বাজে কথা শোনার ইচ্ছে আমার নেই ‘
‘বাজে কথা বলিনি আমি রোজা ‘
‘ আদনান প্লিজ, স্পট ইট! আমি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইনা আপনি বারবার কেনো সেসব নিয়ে কথা বলার জন্যে জোর করেন? ‘
আদনান পকেট থেকে একটা খাম বের করে রোজার সামনে রেখে চেয়ার টেনে বসলো…
‘ এটা কি?’
‘ নিজেই খুলে দেখে নাও ‘
রোজা খাম খুলতেই কতগুলো ছবি পেলো, নিষাদ ও এক মহিলার ছবি। মহিলাটি বয়সে নিষাদের থেকে বড় হবে তা বোঝাই যাচ্ছে। কিছু ছবি রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে বসে খাওয়ার, আরো কিছু বাইরের ছবি। প্রত্যেকটা ছবিতেই দুজনের ক্লোজনেস স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ছবিগুলো একে একে দেখে রোজা থমকে গেলো…
‘ এ.. এগুলো তো…’
‘ ইয়াহ! নিষাদ আর তার গার্লফ্রেন্ড। সেদিন আমার বলা কথা তো তোমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না। এগুলো বিগত কয়েকদিনের ছবি, এই মহিলা নিষাদের অফিসের বস। ওনার সঙ্গেই নিষাদের সম্পর্ক ‘
কিছুদিন যাবত নিষাদের আচরণে রোজারও কিছুটা খটকা লাগছিলো কিন্তু তা যে সত্যিই হবে ভাবেনি রোজা। সেদিন আদনান বলার পরও রোজা ওর কথা বিশ্বাস করেনি, কারণ নিষাদ ওর সামনে যে মধুর আচরণ করে তাতে বোঝার উপায় নেই ছেলেটা এমন!
‘ নিষাদের কয়েক বছর ধরেই তার মহিলা বসের সঙ্গে অ্যাফেয়ার চলছে, কিছুদিন আগে একসঙ্গে তারা বিজনেস ট্রিপেও গেছিলো একসঙ্গে। এমনকি ওর অফিসেও অনেকে এই বিষয়টা জানে। আমি নিশ্চিত নিষাদের ফ্যামিলিও তাদের ছেলে কাহিনী ভালোভাবেই জানে। আই থিঙ্ক নিষাদ শুধু নামমাত্র তোমাকে বিয়ে করতে চায় যাতে ওর এই অ্যাফেয়ারের কথা কেউ জানতে না পারে। তাছাড়া…’
‘ নিষাদ যা করার বাড়ির বাইরে করবে, মহিলাকে নিয়ে তো আর বাড়িতে আসবে না। ও বাড়ির বাইরে কি করলো তা আমার দেখার দরকার নেই ‘
কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলা রোজার কথাগুলো শুনে আদনান রীতিমতো চমকে উঠলো, মেয়েটা তাও বিয়েতে রাজি?
‘ রোজা, কি বলছো তুমি এসব? এ ধরনের ছেলেরা কেমন হয় সেটা তোমার অজানা নয়। বর্তমান যুগে এমন বহু কেস আছে আর সব জানার পরও এরকম একটা লোককে বিয়ে করবে?’
নিজের চোখে প্রমাণ দেখার পর যদিও রোজা নিজেও শকড কিন্তু আদনানকে বুঝতে দিলো না, কারণ এবার বিয়েটা ভাঙলে ওর বাবার আবারো সম্মানহানি ঘটবে যেটা ও চায়না। আপাতত নিজের বিবাহিত জীবন নিয়ে ভাবছে না রোজা, বিয়েটাই মুখ্য!
‘ আদনান, আমি আপনাকে আগেও বলেছি আবারো বলছি আমার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে আসবেন না। আমার জীবন, আমিই বুঝে নেবো ‘
রোজা যেনো জেদ ধরে বসেছে যে বিয়েটা করবেই, আদনান এবার রেগে গেলো…
‘ রোজা, হ্যাভ ইউ গন ম্যাড? ছেলেটার বর্তমানে সম্পর্ক আছে, তোমাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও সে এটা কন্টিনিউ করছে তারমানে ভবিষ্যতেও করবে। তোমাকে বিয়ের পর সেই সম্পর্ক হবে প’র’কী’য়া ‘
‘ তাতে আপনার কি সমস্যা?’
‘ রোজা, তোমাকে কি তোমার বাড়ি থেকে প্রেসারাইজ করা হয়েছে? টেল মি, আমি সাহায্য করার চেষ্টা করবো’
রোজা এবার কিছুটা উচুঁ কণ্ঠেই রেগে বললো…
‘আপনার জন্যেই আজ এতকিছু হয়েছে আদনান, এসবের পর আপনি আমাকে সাহায্য করার নাম করে উল্টে আমার ঝামেলা আরো বাড়াতে আসবেন না প্লিজ’
রোজার আচরণ দেখে অবাক হচ্ছে আদনান, তবে এইটুকু ঠিকই বুঝেছে যে রোজা ওর পরিবারের জন্যে নিষাদের সত্যিটা জেনেও বিয়েতে আপত্তি করছেনা। পরিবারের জন্যে রোজার এই ত্যাগ করতে চাইছে? মেজাজ গরম হচ্ছে আদনানের, তবুও নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করে ও বললো…
‘পরিবারের কথা ভেবে এই লোককে বিয়ে করে নিজের জীবন নষ্ট করবে তুমি? সিরিয়াসলি?’
‘ মেয়েদের তার পরিবারের জন্যে অনেকসময় ত্যাগ স্বীকার করতে হয় আদনান, ছেলেরা কোনো দোষ করলে তার জন্যে পরিবারের সম্মান কমে না কিন্তু মেয়েরা চুল পরিমাণ দোষ করলেও মেয়ের পরিবারের সম্মানহানি হতে একটুও সময় লাগেনা। আপনি আমার পরিস্থিতি বুঝবেন না, তাই হয়তো আপনার জন্যে বিয়ে করো না বলাটা সহজ কিন্তু আমার বিয়ে করবো না বলার পরিস্থিতি এখন নেই ‘
আদনান চুপচাপ রোজার কথা শুনছে, মেয়েটা যে অনিচ্ছায় বিয়েটা করছে তা ওর কথায় স্পষ্ট। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছবিগুলো আরেকবার দেখলো রোজা, এরপর খামে ভরে রেখে বললো…
‘ আমি জানিনা আপনি আমার জন্যে এতকিছু কেনো করছেন, কেনোই বা আমার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। যেটুকু করেছেন তার জন্যে ধন্যবাদ, ভবিষ্যতে দয়া করে আর আমাকে কোনো সাহায্য করতে আসবেন না। আমার জীবন যেভাবে চলবে সেভাবেই আমি মেনে নেবো। তাছাড়া আমাদের সমাজে তো প্রচলনই আছে যে মেয়েরা মুখ বুজে মেনে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমিও না হয় তাই করবো’
আদনান চুপচাপ মেয়েটাকে দেখছে, মেয়েটা কি শান্ত হয়ে কথাগুলো বললো। আদনান ভেবেছিলো ওকে বোঝাবে উল্টে ওই আদনানকে বুঝ দিলো।আদনান বুঝেছে রোজাকে বুঝিয়ে বা বললে লাভ হবেনা। আদনান রোজার সঙ্গে তর্কে জড়াতে চাইলো না, কিন্তু রোজার ইচ্ছেমতো ওর জীবন আদনান নষ্টও হতে দেবেনা! রাতে…আদনান বাড়িতে এসেছে, নিজের কিছু জিনিস এ বাড়িতে ছিলো সেগুলোই নিতে। নিজের রুম থেকে সব জিনিস গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে রেখে আদনান পুনরায় বাড়ির ভেতরে এলো, বসার ঘরে এনায়েত সাহেব ও ফারহান উপস্থিত আছে। আদনানও এসে বসলো, পকেট থেকে নিজের ক্রেডিট কার্ড বের করে টি টেবিলের ওপর রেখে বললো…
‘ ক্রেডিট কার্ড সহ আরো যা যা আছে আমি সবই রেখে গেছি, নিজের টাকায় কেনা গাড়িটা শুধু আমি সাথে নিচ্ছি ‘
এনায়েত সাহেব শান্ত কণ্ঠেই বললেন…
‘ আদনান, এগুলো কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে ‘
‘ সরি বাবা, কিন্তু আমি এখানে থেকে গেলে আমার তোমার কথামতো চলতে হবে। আপাতত সেটা আমি আর চাইছি না। আমি এবার নিজের মতো চলতে চাই, যেখানে আমার কন্ট্রোল অন্য কারো হাতে থাকবেনা ‘
‘ আমার কন্ট্রোলে থেকে তোর কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং লাভই হয়েছে। সেটা তো আর অস্বীকার করতে পারবি না ‘
‘ আই নো, কিন্তু জীবন তো একটাই বাবা। সারাজীবন শুধু অন্যের ইচ্ছামতো কাটিয়ে দিলে আফসোস তো রয়েই যাবে ‘
পাশ থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ফারহান বললো..
‘ আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম বাবা, যে একদিন না একদিন আদনান তোমাকে ধোঁকা দেবে। কিন্তু তুমি আমার কথায় পাত্তা দাওনি, দেখলে তো এখন? নিজের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে তাই সব গুটিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে ‘
আদনান সব ছেড়ে চলে যেতে চাইছে তবুও ফারহানের মনে এখনও ওর জন্যে এতটুকু রাগ কমেনি! আদনান স্মিত হেসে বললো…
‘ হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস পালাচ্ছি আমি সবকিছু থেকে কিন্তু আমার এই সিদ্ধান্তে তোদের দুই ভাইয়েরই লাভ হবে। তোদের বাবা এখন থেকে শুধু তোদেরই থাকবে। ইউ শুড বি হ্যাপি রাইট?’
ফারহান কিছু বলতে যাচ্ছিলো, ছেলেকে থামিয়ে এনায়েত সাহেব বলেন..
‘ আমি ঈশানকে আসতে বলেছি, ও আসুক। সামনাসামনি কথা বলে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে ‘
‘ এখানে আর কথা বলার কিছুই নেই বাবা, আমি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে নিয়েছি। কারো প্রতি আমার কোনো রাগ বা অভিযোগ নেই, আমি এ বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম সেটাই অনেক! তাছাড়া আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি, আর বাকি জীবন শুধু ওকে নিয়েই কাটাতে চাই ‘
‘ হোয়াট? তারমানে তুই একটা মেয়ের জন্যে এতো আয়েশের জীবন ছেড়ে যেতে চাইছিস?’
‘ না বাবা, আমি নিজের খুশির জন্যে সব ছেড়ে যাচ্ছি। অ্যান্ড আই হ্যাভ অ্যা রিকোয়েস্ট, আমাকে সময় দিতে গিয়ে তুমি নিজের ছেলেদের ইগনোর করেছো। এখন অন্তত ওদের একটু সময় দিও, দে নিড ইওর লাভ!’
এনায়েত সাহেব মৌন রইলেন, আদনান যে কোনোদিন এভাবে সব ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে তা উনি কখনো কল্পনাও করেননি। সর্বদা যে ছেলেটা ওনার কথায় উঠতো বসতো সে আজ এভাবে চলে যাচ্ছে দেখেও এনায়েত সাহেব আটকাচ্ছেন না, ওনার মনে হচ্ছে আদনান যেনো নিজের প্রয়োজন মিটে গেছে বলেই সব ছেড়ে যাচ্ছে!
‘এনিওয়ে, ভালো থেকো সবাই। গুড বাই!’
আদনান উঠে দাঁড়ালো, এনায়েত সাহেবও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন…
‘ তুই যদি আজ এ বাড়ি থেকে চলে যাস তাহলে মনে রাখিস, তোর সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক আজকেই শেষ হয়ে যাবে ‘
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সম্মতি সূচক মাথা নেড়ে আদনান বললো…
‘ ক্যান আই হাগ ইউ ফর অ্যা লাস্ট টাইম?’
এনায়েত সাহেব কোনো জবাব দিলেন না, আদনান নিজেই এগিয়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। জীবনে প্রথমবার বাবাকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লো আদনান, পূর্বে কয়েকবার জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলো কিন্তু এনায়েত সাহেব এসব পছন্দ করতেন না কিন্তু আজ উনি কিছুই বললেন না। মিনিট দুয়েক পর এনায়েত সাহেবকে ছেড়ে আদনান সোজা হেঁটে দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো। আজ থেকে সব দায়িত্ব থেকে মুক্তি, এবার শুধু নিজের কথা ভাবার পালা!
____________________________________
বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে বিধায় আজ নিষাদের সঙ্গে বিয়ের কেনাকাটা করতে এসেছে রোজা, নিষাদের এক বোনও সঙ্গে এসেছে। বিয়ের কেনাকাটা করতে এসেছে ঠিকই কিন্তু এদিকে রোজার মনোযোগ নেই, নিষাদকে দেখলেই এখন রাগ হয় রোজার তবুও নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে কারণ রোজার বাবা জোর দিয়েছে এবার বিয়েতে কোনো ঝামেলা করা চলবে না! বাবার বাধ্য মেয়ের মতো রোজা সব মেনে নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। অন্য নারীর সঙ্গে বিয়ের আগেই যে পুরুষ জড়িত সে কি বিয়ের পর আদৌ শুধরাবে? বর্তমান যুগে তো তেমন উদাহরণ পাওয়া যায়না, উল্টে বিয়ের পর কতো পুরুষ পরনারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। এসব দুঃচিন্তা যেনো ঝেঁকে ধরেছে রোজাকে। নিষাদ একটা লেহেঙ্গা পছন্দ করেছে, ব্লাউজটা একবার ট্রাই করে দেখতে হবে তাই রোজা ওটা নিয়ে ট্রায়াল রুমের কাছে যেতেই পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো…
‘ এই রংটা তোমাকে স্যুট করবে না ‘
চলবে…
[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]