তোমায় হৃদমাঝারে রাখিবো পর্ব-১১

0
5

#তোমায়_হৃদমাঝারে_রাখিবো ( একাদশ পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<১৩>
সেদিন এরপর অর্ণব সারা দুপুর না খেয়েই ছিল। এদিকে আজ ষষ্ঠী। ঢাকের কাঠি বাজতে শুরু করেছে মণ্ডপে। কিন্তু অর্ণবের মনটা ভীষণ খালি খালি লাগছে এর মধ্যে। শুধু অস্মিতার কথা মনে পড়ছে। মেয়েটা ভীষণ রেগে চলে গেছে আজ। কে জানে এরপর আর কথা বলবে কি না! এইসব ভাবনার ভিড়ে অর্ণব আর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারলো না ঘরে। সন্ধ্যেবেলা যখন ষষ্ঠীর পুজো শুরু হয়েছে, অর্ণব কোনভাবে উঠে রেডি হয়েছিল একটু। তারপর ব্যাথা যন্ত্রণা নিয়েই হাজির হয়েছিল মণ্ডপে। এখানে নিশ্চয়ই অস্মিতা আসবে। একবার অন্তত দেখতে তো পারবে! তবে সেদিন মণ্ডপে অস্মিতা যেই মুহুর্তে অর্ণবকে দেখেছিল ও আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি। ছেলেটার কি মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেছে! এই একদিন আগে এত বড় এক্সিডেন্ট হলো, ওরকম ধুম জ্বর এসেছিল! সে এই ব্যাথা যন্ত্রণা নিয়ে মণ্ডপে হাজির হয়েছে! অন্তত আর একটা দিন তো রেস্ট নেবে! কথাটা ভেবেই বেশ রাগি রাগি মুখ করে অস্মিতা এসেছিল অর্ণবের কাছে সঙ্গে সঙ্গে। তারপর বেশ শাসন করে বলে উঠেছিল,
———” তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এই শরীরে এখনই উঠে মণ্ডপে চলে এলে? কাল অব্দিও তো মাথা ঘুরছিল। হাতে মাঝে মাঝে ব্লিডিং হচ্ছে। অন্তত আর একটা দিন বাড়িতে থেকে রেস্ট নিতে কি হয়? ”
এই প্রশ্নে অর্ণব বেশ রাগ দেখিয়ে নিজেও বলে উঠেছিল,
———-” তাহলে কি করবো? তুমি যেইভাবে দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলে! এরপর আমার ফোন মেসেজ কিছুর রিপ্লাই দিচ্ছ না। তাই তোমার দেখা পেতে আমাকে মণ্ডপে আসতেই হতো। ”
কথাটা শুনে অস্মিতা কি বলবে আর ঠিক ভেবে পেল না! তাই সেই শাসনের সুরেই বললো,
———” বাড়ি চলো এখন। এইখানে এইভাবে এই শরীরে দাঁড়িয়ে থেকো না। ”
এই কথায় অর্ণব পট করে একটা শর্ত চাপিয়ে দিয়ে বললো,
———-” বাড়ি তখনই যাবো, যদি তুমি আমার সাথে যাও। নইলে আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। সে আমার হাতে কাঁধে যতই যন্ত্রণা হোক। ”
কথাগুলো শুনে অস্মিতার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। ছেলেটার মাথাটা সত্যিই খারাপ হয়ে গেছে। এখন সাথে যেতেই হবে। নইলে হয়তো জেদ ধরে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে এই অবস্থায়! কথাগুলো ভেবে অস্মিতা বলে উঠলো শান্ত গলায়,
———” ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। চলো এবার। ”
সেদিন এটা শোনার পর অর্ণবের মনে শান্তি। যাইহোক, এরপর ও আর কোন তর্ক করেনি। ভালো ছেলের মতন বাড়ি চলে এসেছিল। কিন্তু বাড়ি এসে অস্মিতা থমকে গেছিল। দুপুরের ওষুধ যেরকম ছিল সেরকম পড়ে আছে টেবিলে। দৃশ্যটা দেখে অস্মিতা বেশ অস্থির হয়ে বললো,
———” এটা কি! তুমি দুপুরের ওষুধ খাওনি? তিতলি এত স্যুপ আর নুডলস খাওয়ালো! এদিকে ওষুধটা খাওয়ার কথা মনে করেনি একবার? ”
এই প্রশ্নে অর্ণব আস্তে গলায় বলে উঠলো,
——–” দুপুরে কিছু খাইনি আমি। তাই আর ওষুধ খাইনি। ”
এটা শুনে অস্মিতা কিরকম চুপ হয়ে গেছিল দু সেকেন্ড। তারপর থমকে থাকা গলায় বলেছিল,
———” কিছু খাওনি মানে? তিতলি যে ওইসব খাবার! ”
ওর কথাটাকে শেষ হতে না দিয়েই অর্ণব বলে উঠলো,
———” আমি ওইসব খাবার খাবো না তো তোমার সামনেই বললাম দুপুরে। আমি তো ভাত খেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো সব নিয়ে চলে গেলে। আর তিতলিকেও তারপর আমি বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি ওই নুডলস আর স্যুপ সমেত। ভালো লাগছিল না কিছু আমার। ”
কথাগুলো নিজের মনেই বলে গেল অর্ণব। কিন্তু অস্মিতা স্থির হয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড। ছেলেটা এই শরীরে এতক্ষণ ধরে কিছু না খেয়ে আছে! ভেবেই কেমন এলোমেলো লাগছিল। অস্মিতা সেই মুহূর্তে আনমনেই বলে উঠলো,
———” তুমি বসো। আমি কিছু নিয়ে আসছি খাবার। আমি বুঝিনি তুমি তিতলির আনা খাবার গুলো খাবে না! ”
কথাটা শুনে অর্ণব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেই মুচকি হেসে বললো,
———” তুমি কি এখন আর বোঝো আমায়! আমি কি চাই। কাকে চাই। ”
কথাগুলো বলতে বলতে ওর গলাটা ধরে এসেছিল হঠাৎ। অস্মিতা এই সময় আর দাঁড়ায়নি ওই ঘরে। তাড়াতাড়ি নিজের চোখের জলটা আড়াল করার জন্য রান্নাঘরে চলে এসেছিল। তারপর কোনভাবে নিজেকে সামলে একটু সুজি রান্না করে নিয়ে এসেছিল অর্ণবের জন্য। তারপর কিছুটা নরম স্বরে বলেছিল,
——–” এটা খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও এক্ষুনি। আর দেরি কোরো না। ”
এটা শুনে অর্ণব এই সময় ভীষণ এলোমেলো হয়ে বলেছিল,
———” এত চিন্তা আমাকে নিয়ে! তাও মুখে বলো কোন ফিলিংস নেই! আর কত শাস্তি দেবে আমাকে? ”
এই প্রশ্নে অস্মিতা দু সেকেন্ড চুপ থেকে কিরকম থমকে বলে উঠেছিল,
———” আমি কাউকে শাস্তি দিচ্ছি না অর্ণব। কিন্তু কিছু নতুন করে শুরু করার মতন মন নেই আর আমার। আমি চাইলেও মাঝের ওই দেড় বছরকে ভুলতে পারবো না। ”
কথাগুলো বলেই অস্মিতা চলে যাচ্ছিল আজ। কিন্তু পারলো না। অর্ণব এখন কেমন বেহিসাবি হয়েই ওর হাতটা ধরে ফেললো হঠাৎ। তারপর অস্মিতাকে জোর করে নিজের খুব কাছে টেনে নিয়ে ওর নরম ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রাখলো আলতো করে। অস্মিতা যেন স্থির হয়ে রইলো এই মুহূর্তে। চোখ থেকে নিজের অজান্তেই গড়িয়ে এলো জল। যেন অনেকদিনের মৃত পরিত্যক্ত কোন পাথরে ভালোবাসার স্পর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে অর্ণব! অস্মিতা সেই স্পর্শে হারিয়ে গিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো নিজের। হাতটা মুঠো হয়ে এলো ওর আপনাআপনি। বুকের মধ্যে দলা পাকানো যন্ত্রণাগুলো এক নিমিষে বৃষ্টিতে ভিজে গেল হঠাৎ। অস্মিতা এই সময় কিছুতেই নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে অর্ণবকে সরিয়ে দিতে পারলো না নিজের কাছ থেকে। বরং মন আঁকড়ে ধরতে চাইলো এই ছেলেটাকে, আরেকবার। নিজের সর্বস্ব দিয়ে।

এই ভাবে কিছু মুহূর্ত পার হয়ে যাওয়ার পর অর্ণব নিজেকে সামলালো কোনভাবে। অস্মিতাও মুহূর্তটা থেকে বেরিয়ে এলো যেন বাস্তবে। তবে এই ঠোঁটের স্পর্শ আজ এতদিনের জমানো অভিমানকে ভেঙে ফেলেছে অবচেতনে। যদিও অস্মিতা আর এরপর অর্ণবের চোখের দিকেও তাকায়নি। কোনভাবে ওকে এড়িয়ে বেরিয়ে এসেছিল বাইরে। তবে অর্ণব আজ স্পষ্ট বুঝেছিল মেয়েটা ওকে ভালোবাসে ভীষণ। এই দেড় বছর দূরত্ব তৈরি করলেও অস্মিতার মন থেকে ওকে মুছতে পারেনি। আর এইভাবে অর্ণব এক পা এক পা করে এগিয়ে ঠিক এই মেয়েটার সাথে এক আলোকবর্ষ সমান দূরত্ব গুলোকে শেষ করবে। ভালোবাসবে আবার নতুন করে।
< ১৪ >
এর পরেরদিনের সকাল বাঙালির জীবনে সপ্তমী নিয়ে এলো। অর্ণব এর শরীর আজ বেশ ভালোই। সাথে মনটাও। যদিও অস্মিতা কেমন এলোমেলো হয়ে আছে কাল সন্ধ্যের পর থেকে। অর্ণবের সাথে এটা কি করে ফেললো! একবারও নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করলো না! এতদিনের এত শক্ত দেয়ালটা কাল এইভাবে ভেঙে ফেললো! তাহলে কি অস্মিতা আজও মনে মনে অর্ণবকেই চায়! ওর সাথেই জুড়ে থাকতে চায়! প্রশ্নগুলো বার বার করছিল মনকে। তার ওপরে আজ ওদের ফাংশনের দিন। এখন তো ছেলেটার মুখোমুখি হতেই হবে। যতই সকাল থেকে বাড়ি বসে থাকুক, সন্ধ্যেবেলা তো সেই মণ্ডপে যেতেই হবে। এইসব আকাশ পাতাল চিন্তার মাঝে অবশেষে বিকেল পার করে একটা শাড়ি পড়ে রেডি হলো অস্মিতা। তারপর কিছুটা অস্থির মনেই এলো মণ্ডপে। কিন্তু আজ ফাংশনে এসে থমকে গেল হঠাৎ এনাউন্সমেন্ট শুনে।
” এখন আপনাদেরকে গিটারের সুরে গান গেয়ে শোনাবে অর্ণব। ”
কথাটা শুনেই ও স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওই হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধেই গিটার নিয়ে ছেলেটা উঠছে স্টেজে। সত্যি! কেন করছে এইসব! দুটো দিন হাতটাকে রেস্ট দিলে কি হয় কে জানে! কথাগুলো চিন্তা করতে করতেই অস্মিতার কানে বেজে উঠলো সেই পুরনো গান, একটা খুব চেনা সুর।
” তোমাকে না লেখা চিঠিটা
ডাক বাক্সের এক কোণে
সাদা খামের না লেখা নাম
এঁকেছি সেই খামে।
সেই চিঠির যত লেখা থাকে একা একা
সেই গানের না লেখা সুর একা একা আঁকা
ছুঁয়ে যায় তবু কখন এসে
যদি বলি সে সবই তোমারি
একা চিঠি একা আঁকা গান
যদি বলি সে সবই তোমারি
দু চোখে ভেসে যাওয়া নীল আমার।। ”
গানটা অর্ণব সেই ভিড় মণ্ডপে অস্মিতার চোখে চোখ রেখেই গাইছিল, আর অস্মিতার মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই পুরনো পাঁচ বছর আগের কথা। এরকমই একটা সপ্তমীর বিকেলে অর্ণব এইভাবে গান গেয়েছিল সেদিন শুধুমাত্র ওর জন্য। তারপর ফাংশনে শেষে বলেছিল নিজের মনের কথা। বলেছিল ভালোবাসি। অর্ণব যেন সেই সময়টাই ফিরিয়ে নিয়ে আসছে ওর জীবনে! কিছু না বলে শুধু পুরনো মুহূর্তগুলোকে তৈরি করছে বার বার অস্মিতার সামনে, আর অস্ফুটে বোঝাচ্ছে
‘ ভালোবাসি ‘।
তবে সেদিন এরপর অস্মিতা নিজের বাড়ি চলে এসেছিল। চোখ দুটো বার বার ভিজে আসছিল ওর জলে। বাড়ির একলা ছাদটাই এখন সঙ্গী। দূরে এই মুহূর্তে ঢাকের আওয়াজ বেজে চলেছে নিজের ছন্ধে। বিভিন্ন পাড়ার মাইকের গান হালকা হয়ে আসছে কানে। আর এই সপ্তমীর সন্ধ্যার মাঝে অস্মিতা একা দাঁড়িয়ে চুপচাপ। অর্ণব কেন এরকম করছে! কেন আবার সব নতুন করে শুরু করতে চাইছে যেটা একদিন নিজেই ভেঙে চলে গিয়েছিল! কথাগুলো ভেবে রাগ কষ্ট দুটোই হচ্ছে এখন। তবে বেশিক্ষণ এইভাবে একা থাকতে হলো না ওকে। এই একলা ছাদে অর্ণব এসে হাজির এই মুহূর্তে। অস্মিতা যদিও এটা খেয়াল করেনি প্রথমে। নিজের মনেই দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ। অর্ণব এসে ডাকতে বেশ অবাক হয়ে পিছনে ফিরলো হঠাৎ। সেই সময় অর্ণব এসে বলে উঠলো,
——-” তুমি এখানে একা একা কি করছো? ফাংশন তো এখনও শেষ হয়নি! ”
কথাটা শুনে অস্মিতা বেশ রেগেই বললো এবার,
———” তাতে তোমার কি! কেন এসেছ এখানে? আর স্টেজের মধ্যে ওই গানটা গাওয়ার মানেটা কি ছিল! কি প্রমাণ করতে চাও তুমি? ”
অর্ণব এই প্রশ্নে এবার সরাসরি বলে উঠলো,
———” তোমাকে ভালোবাসি এটাই প্রমাণ করতে চাই। আর কিছু বদলায়নি আমাদের মাঝে অস্মিতা। সব কিছু একই আছে। সেই গান, সেই আমি সেই তুমি। তাহলে কেন শুধু শুধু এই শাস্তি? এই দূরত্ব গুলো রেখে দিয়েছো ? ”
কথাগুলো কেমন কাতর স্বরে বললো অর্ণব। তবে অস্মিতা আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বেশ জোর গলায় বলে উঠলো,
——” শুধু শুধু দূরত্ব! বললে কি করে এটা? তুমি নিজে চলে গেছিলে আমাকে ছেড়ে। আর ভালোবাসা? যদি সত্যি ভালোবাসতে তাহলে অন্তত নিউইয়র্ক যাওয়ার আগে একবার আমার সাথে যোগাযোগ করতে। একবার জানাতে যে তুমি চাকরি নিয়ে বাইরে যাচ্ছ। তুমি তো সেইটুকু অব্দি করোনি। ”
কথাটা শুনে আজ অর্ণব আর চুপ থাকলো না। ও নিজেও এবার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো,
———” চাকরি পাওয়ার দিন তোমার নাম্বারে কতবার ফোন করেছি তুমি জানো? কতগুলো মেসেজ করেছি। মেল করেছি। তোমাদের বাড়িও এসেছিলাম সেই সন্ধ্যেবেলা। কিন্তু তোমরা দু সপ্তাহের জন্য ঘুরতে চলে গেছিলে। আর তুমি নিজের নাম্বার চেঞ্জ করেছিলে, যেই নাম্বার আমাকে কেন, তোমার কোন পুরনো বন্ধুকেও দাওনি। কিভাবে কনট্যাক্ট করতাম এরপর? এদিকে অফিস থেকে চাপ আসছিল জয়েন করার জন্য। তাই না বলে যেতে বাধ্য হয়েছি। যদিও আমি জানি আমি ভুল করেছি। আমার কোনদিনই যোগাযোগ বন্ধ করা উচিত হয়নি। আসলে আমি ভেবেছিলাম একটা চাকরি জোগাড় করে তোমার বাবার সামনে মাথা উঁচু করে আসবো। আমাদের বিয়ের কথা বলবো। কিন্তু কোনদিন ভাবিনি যে এই সম্মানের জন্য লড়াই করতে গিয়ে নিজের ভালোবাসাটাই হারিয়ে ফেলছিলাম! ”
কথাগুলো বলতে বলতে চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে এলো অর্ণবের। গলাটা ধরে এলো কান্নায়। মনে হলো এই মুহূর্তে দূরে কোথাও চলে যেতে, যেখানে অস্মিতা ওর কান্নাটা দেখতে পাবে না। তাই ও আর দাঁড়ালো না। কথাগুলো শেষ করেই অস্মিতাকে একা করে চলে গেল এই সপ্তমীর সন্ধ্যেটা খালি করে। তবে অস্মিতা এরপর কেমন এলোমেলো হয়ে গেছিল যেন। অর্ণব ওর সাথে নিউইয়র্ক যাওয়ার আগে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল! এটা যদি সত্যি হয় তাহলে কি এতদিন অস্মিতা ছেলেটাকে ভুল বুঝেছে! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও প্রায় দৌড়ে এসেছিল নিজের ঘরে। এরপর বেশ অস্থির হয়েই আলমারিটা খুলে নিজের পুরনো ফোনটা বার করেছিল। তবে চার্জ না থাকায় এতদিন ব্যাটারিটা নষ্ট হয়ে গেছিল মনে হয়। তাই ফোনটা আর খোলেনি। এরপর মনে পড়েছিল পুরনো মেল বক্সের কথা। সেখানে তো মেল গুলো থাকবে নিশ্চয়ই। কথাটা ভেবেই আজ অনেকদিন বাদে সেই পুরনো চিঠির ঠিকানা খুলে থমকে গেছিল অস্মিতা। অর্ণবের কত মেল কত মেসেজ এখানে বাক্স বন্দী হয়ে পড়েছিল এতদিন! আর অস্মিতা সেইসবের হদিশ না জেনেই ছেলেটাকে ভুল বুঝে গেছে, এতদিন ধরে! কথাগুলো শুনেই ও কেমন স্থির হয়ে গেছিল সেদিন। মনে হচ্ছিল আর শাস্তি দেয়াটা ঠিক না ছেলেটাকে। আর শুধু অর্ণবকে কেন, অস্মিতা তো নিজেকেও এতদিন জোর করে শাস্তিই দিচ্ছিল এক রকম। যাকে মন এত চায়, এত ভালোবাসে, তার থেকে দূরত্ব তৈরি করে থাকার শাস্তি। তবে আর না। এবার এই মনের দেয়াল ভেঙে ফেলবে অস্মিতা। অর্ণবের কাছে নিজে গিয়ে বলবে ‘ ভালোবাসি ‘। শুধুমাত্র আর একটা রাতের অপেক্ষা। কাল অষ্টমীর সকালে নতুনভাবে শুরু করবে নিজেদের গল্পের।
চলবে।