#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#অন্তিম_পর্ব
“প্রকৃতির অমোঘ নিয়মানুসারে পৃথিবীতে রাত দিন পালাক্রমে আসে। কালপরিক্রমায় দিনের পর রাত আসে আর রাতের পর দিন আসে । তাই রাতের বেলায় মানুষের সূর্যের প্রত্যাশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়, যারা রাতের আকাশে সূর্য দেখার জন্য কাতর হয় তাদের রাত হয় দুঃখের ও দীর্ঘস্থায়ী । তাদের সকলের বুঝতে হবে রাত যত দীর্ঘ ও কষ্টের হোক না কেন একসময় স্বাভাবিক নিয়মে প্রভাতের সোনালী সূর্য উদিত হবেই ।
রাত-দিনের মতোই মানুষের জীবনেও সুখ – দুঃখ পালাক্রমে আসে। পৃথিবীতে যেমন নিরবচ্ছিন্ন সুখ বলে কিছু নাই, তেমনি দুঃখও কারো জীবনে স্থায়ী আসন পেতে বসে না । মানুষের জীবনে দুঃখের পর স্বাভাবিক নিয়মেই সুখ আসে।
চৌধুরী বাড়ির একমাত্র ছেলে আর আহমেদ বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছে বড় ফাইভ স্টার হোটেলে। সায়ান এভাবে ধুমধামে বিয়ে করতে চায়নি খুব সিম্পল ভাবেই বাড়িতে কাজী ঢেকে বিয়েটা করে নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সায়ানের মা- বাবা তো তা কোনোভাবেই মানতে নারাজ কারন একটা মাএ ছেলে তার বিয়েটা সিমসাম ভাবে হবে সেটা কোনো ভাবেই মানতে পারছেন না উনারা তাই তাদের কথায় বাধ্য হয়ে রাজি হতে হলো।
এদিকে মিরাজ আহমেদ এতো আমোদ ফুর্তির মাঝে রুমের ভেতর অন্ধকার ঘরে সুয়ে আছেন। আর ভাবছেন আর নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছেন কি করে রাজ্জাকের মতো খারাপ লোকটার সাথে তার পরিচয় কিভাবে তাদের বন্ধুত্ব কিভাবে নিজের মেয়ের সাথে রাজ্জাকের ছেলের বিয়ে ঠিক করা। এতো সব ভাবতে গেলেই বুকের ভেতর স্যাত করে উঠে আজ যদি নিশিকে সায়ানের কথা মতো সিফাতের বদলে রিফাতের সাথে না দিতো তাহলে এতোদিনে নিজের মেয়েকে একেবারেই হারিয়ে ফেলতো। এতো কিছুর ভাবার মাঝেই রুমের দরজাটা খুলে প্রবেশ করলো তারিন বেগম , নিজের স্বামী কে এমন অন্ধকার রুমে সুয়ে থাকতে দেখে স্বামীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলো,
-আপনি এমন ভর -দুপুরে দরজা জানালা বন্ধ করে অন্ধকার রুমে সুয়ে আছেন যে, শরীরটা কি খারাপ লাগছে।
মিরাজ আহমেদ চোখ টা খুলে তারিন বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,,
– না শরীর ঠিকই আছে কিন্তু মনটায় শান্তি পাচ্ছি না । সায়ান না আসলে কি যে হতো এতো দিনে আমি আমার একটা মেয়ে হলেও হারাতাম । বলেই ডান হাত দিয়ে চোখের নিচে নোনতা পানিটা মুছে নিলো।
তারিন বেগম স্বামীর পাশে গিয়ে বসে বলে উঠলো,,
-যা হয়েছে তা ভুলে যান তো, মানুষের জিবনে কিছু খারাপ স্বপ্ন থাকে আপনি এগুলো খারাপ স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দেন নতুন করে ভালো স্বপ্ন দেখা সুরু করেন।
মিরাজ তারিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-জিবনেও ভাবিনি এতো বড় একটা ধোঁকা খাবো। যারে আমি বন্ধু ভেবে নিজের একটা অংশ দিতে চেয়েছিলাম সেই বন্ধুই যে পিছন থেকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করবে কখনো ভাবিনি।
-দেখেন আপনি ঐসব কিছু আর মনের মাঝে না রেখে ঝেড়ে ফেলুন৷ সামনে কি হতে চলেছে সেই চিন্তা করেন । আপনার আদরের ছোট মেয়ে যার আর মাএ দুইদিন পর বিয়ে সেটা কি ভুলে গেছেন এসব আজেবাজে চিন্তা করে। যা হওয়ার হয়ে গেছে ঐসব কিছু আর ভেবে কোনো লাভ নেই তো বরং যা হয়েছে ভালোই হয়েছে আমরা আমাদের মেয়েদের নরপশুদের কাছ থেকে বাঁচাতে পেরেছি এটাই আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে লক্ষ লক্ষ শুকরিয়া । এখন সুন্দর মতো সায়ান আর নুশার বিয়ে হলেই হবে, সায়ানটা খুব ভালো বাসে আমাদের নুশাটারে বুঝলেন সেটা কালকেই যখন সিফাত নুশাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করতে গিয়েছিলো তখনই বুঝতে পেরেছি।
মিরাজ আহমেদ চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,,
-হুম, এতোদিন হিরা সামনে রেখে কয়লার পিছনে ছুটেছি আমি।
তারপরই কালকের ঘটনাটা ভাবতে লাগলো যখন সায়ান নুশাকে সায়ানের নামে আজেবাজে কথা আবার সায়ানকে নুশার নামে আজেবাজে কথা তার উপর নুশাকে কিডনাপের কথা বলে তখনই মিরাজ আহমেদ বলে উঠলো,,
-কিসব বলছো তুমি সায়ান।
সায়ান মিরাজ আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-আংকেল আমি যা বলছি তা একদম সত্যি বলছি।
মিরাজ কিছু বলার আগেই রাজ্জাক বলে উঠলো,,
-এই ছেলে এই কিসব বলছিস , কি প্রমান আছে তোর কাছে হ্যাঁ।
সায়ান তখন রাজ্জাকের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো ,,
-প্রমান ছাড়া এই সায়ান চৌধুরি একটা কথাও বলে না তাই গলার স্বর টা নামিয়ে কথা বলেন।
সায়ানের কথা শুনে নিশাত বেশ জোরালো কন্ঠেই বলে উঠলো ,
– সায়ান ব্রো কথায় আছে না চোরের মায়ের বড় গলা এখানে হবে চোরের বাপের বড় গলা তাই তো অন্যায় করেও বলছে কি প্রমান আছে।
নিশাতের কথা শুনে রাজ্জাক আর রাজ্জাকের ফেমেলী ষ
খুব বেশিই রেগে গেলো তাই রাজ্জাক এবার মিরাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কিরে মিরাজ বাড়িতে নিয়ে এসে এভাবে পরিবার সমেত অপমানিত করার জন্য ইনভার্ট করেছিস নাকি। মেয়ে বিয়ে দিবি না সেটা আগে বললেই হয় বাড়িতে এনে এভাবে মিথ্যা কথা বলে আমাকে সহ আমার পরিবার কে অপমান করার কি মানে আছে।
মিরাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান বলে উঠলো,
-আঙ্কেল আপনার এখান থেকে কেটে পড়ার তাড়া দেখি একটু বেশিই আছে নো টেনশন আঙ্কেল আমি এখনি আপনাদের সব ভালোভালো কাজের সুন্দর সুন্দর প্রমান গুলো এখানে সবার সামনে হাজির করছি। বলেই বাহিরের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে উঠলো,,
“আপনারা এখন আসতে পারেন ”
সায়ানের বলার সাথে সাথেই তিনজন পুলিশের ড্রেস পরা লোক ভেতরে আসলো আর একেএকে সবার সামনে বাপ বেটার সব গোপন খারাপ কাজ গুলো ফাস করে দিলো কয়েকটা ভিডিওর মাধ্যমে। সবাই যখন চোখের সামনে ভিডিও দেখতে মগ্ন তখনই সিফাত সোফার পিছনের দিক দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে নুশার কাছে এসে নুশার মাথার কাছে তার কাছে থাকা বন্ধুকটা এগিয়ে ধরলো আর মিরাজ আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,,
-ডেয়ার কয়েকদিনের শ্বশুর মশাই আপনি যখন সব কিছু যেনেই ফেলেছেন তাহলে তো আর এই বিয়েতে আপনি কোনো ভাবেই রাজি হবেন না, আর এখন আপনাকে আর রাজি হতেও হবে না আমি আপনার আদরের ছোট মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি কেউ আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসলে এখনি সুট করে দিবো ওর মাথায় । আর সায়ান ভালোই এগিয়ে গেলি তর নুশাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে কিন্তু তর এতোসব কষ্ট সেগুরে বালি কোনোটাই কাজে দিলো না আমি নিয়ে যাচ্ছি তোর নুশা রানিকে পারলে আটকে দেখা। এটা বলেই নুশাকে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে, চলো নুশা পাখি তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়ে করে বাসর করতে হবে তো , তারপর তোমাকে দূর দেশে পাঠাতে হবে চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে । বাবা তোমরা চলে আসো কিছু করবে না এরা বলে নুশাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো পিছন পিছন রাজ্জাক হোসেনও একটা ডেবিল হাসি দিয়ে সিফাতের পিছে পিছে যেতে লাগলো পিছন পিছন মনিরা বেগম আর ইফাতও তাদের পিছন পিছন যেতে লাগলো।
সিফাতের কথা শুনেও সায়ান তার মুখে হাসিটা এখনো সেভাবেই রেখেছে কোনো ভেদাভেদ হয়নি এমনকি কোনো কথা না বলে খুব শান্ত ভাবেই চুপ করে সিফাতের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে ।
নুশা সিফাতের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেছে কিন্তু সে নড়াচড়াও করতে পারছে না যদি গুলি করে দেয় সিফাতের হাত থাকা বন্ধুকটা দিয়ে । তাই করুন ভয় চোখে একবার বাবার দিকে নিশাতের দিকে সায়ানের দিকে পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কেউ কিছুই বলছে না এটা দেখে নুশার যেনো বুক ফেটে কান্না আসছে কেউ তাকে ভালোবাসে না সবাই কেমন সার্থপরের মতো তাকে খারাপ মানুষদের সাথে যেতে দিচ্ছে সায়ানকে দেখে আরো বেশি করে জ্বলে উঠে কারন সায়ানের ঠোঁটের কোণায় এখনো এক টুকরো হাসি লেগেই আছে। নুশা এটাই বুঝতে পারছে না সায়ান না নুশাকে ভালোবাসে তাহলে কিভাবর একটা খারাপ মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে তখনই মনে পরে গেলো মিরাজ আহমেদ যখন সায়ানকে মানা করে দেয় তখন কি সুন্দর হাসি খুশি ভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছিলো। নুশার হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে তারপরও সিফাত তাকে টেনে টেনে নিচ্ছে । আরেক পা এগিয়ে গেলেই বাড়ির বাহিরে চলে যাবে নুশা , তারপরও তার আপন মানুষ গুলো কিভাবে চুপচাপ কোনো প্রতিবাদ না করে চেয়ে আছে এমনকি পুলিশ গুলোও। নুশা এসব ভেবে চোখের পানি ছেড়ে দিলো আর পিছনে ফিরে সবাইকে দেখে যেই পা টা বাহিরে নিয়ে যাবে তার আগেই নুশার পিছনে সিফাত জোরে ‘আহ’ বলে চিৎকার করে নুশার থেকে বন্ধুক দেওয়া হাতটা সরিয়ে নিলো আর মাটিতে লুটিয়ে পরলো । সিফাতের সাথে সাথে রাজ্জাক হোসেনরও একই অবস্থা দুইজনই মাটিতে লুটিয়ে পরে আর উপরে তাকিয়ে দেখে মনিরা আর ইফাতের হাতে লাঠি যেটা দিয়ে দুইজন দুইজনকে আঘাত করেছে । রাজ্জাক হোসেন ব্যাথায় কাতর হয়ে বলে উঠলো,,
-মনিরা তুমি এমনটা করতে পারলে নিজের স্বামী আর ছেলের সাথে । আর ইফাত কিভাবে করলি বাবা আর বড় ভাইয়ের সাথে।
রাজ্জাকের কথা শুনে তেজি গলায় বলে উঠলো মনিরা বেগম,,
-একদম ঠিক করেছি আমি আর আমার ছেলে। আর শুনে রাখো আমার বড় ছেলে আর স্বামী তো সেই দিনই মারা গেছে যেদিন আমার চোখের সামনে আমার বাবার সম্পত্তির জন্য নিজের হাতে গলা টিপে মেরে ছিলে। তখনই আমি আমার বাবার সাথে আমার স্বামীকেও হারিয়ে ফেলেছি আর বড় ছেলেকে হারিয়েছি যখন থেকে ছেলেটা কালোপথে নিজের নামটা দিয়ে দিছে এখন তো শুধু আমি আর আমার ছোট ছেলেই জীবিত আছি আর বাকী সবাই মারা গেছে আমার কাছে । এরেস্ট করে নিয়ে যান আপনারা , আর কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেন আমার বাবার খুনি কে (পুলিশদেরকে উদ্দেশ্য করে বল)
মনিরা বেগম আর কিছু বলার আগেই পুলিশ এগিয়ে এসে সিফাত আর রাজ্জাককে এরেস্ট করে তাদেরকে নিয়ে চলে যায়। পুলিশরা যেতেই মনিরা বেগম কান্না করতে করতে বলে উঠলো,,
-আজকে আমার ব্যবহারে আমি সত্যিই খুব লজ্জিত সবটা সায়ানের পরিকল্পনায় হইছে । সায়ান তোমাকে ধন্যবাদ বলে আর ছোট করবো না তুমি যে আমাকে কতোবড় উপকার করছো আজ আমি সত্যিই অনেক খুশি আমার বাবার খুনিকে শাস্তির জন্য আরেকটু সাহায্য কইরো ওরা বাপ ছেলে যেনো কখনো ঐ অন্ধকার জেল থেকে বের হতে না পারে। আর কিছু না বলে কারো কথা না শুনে ইফাতের হাত ধরে শাড়ীর আচল দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
নুশা এতোক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে সবকিছুই দেখছিলো কিন্তু তার ব্রেন আর এতো কিছু নিতে না পারায় সেখানেই ঢলে পরে। সায়ান নুশাকে পরে যেতে তাড়াতাড়ি দৌড়ে নুশার মাথাটা নিচে থেকে উঠিয়ে নিজের হাটুর উপর রেখে নুশাকে একাধারে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না তাই নিশিকে তাড়াতাড়ি পানি আনতে বললো । নিশিও তাড়াতাড়ি পানি আনে সায়ান নুশার চোখে মুখে পানি দিচ্ছে কিন্তু নুশা চোখই খুলছে না এতে সায়ান হঠাৎ করেই ভয় পেয়ে গেলো কি হলো তার নুশা রানীর পানি দেওয়ার পরও কেনো চোখ খুলছে না । পাগলের মতো করতে লাগলো সায়ান আর নুশাকে পাগলের মতো ডাকতে লাগলো আর নিশাত কে বলতে লাগলো তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে নিয়ে আসতে। নিশাতও সায়ানের কথা মতো দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো ডাক্তার নিয়ে আসতে। তারিন বেগম মিরাজ আহমেদ নিশি নিশির শ্বাশুড়িও সায়ান আর নুশার কাছে এসে নুশা হাতে পায়ে ঘসতে লাগলো। নুশা৷ হাত পা কেমন অস্বাভাবিক গরম হতে লাগলো এতে সায়ান আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো তাই তাড়াতাড়ি নুশাকে কোলে তুলে নুশার রুমের দিকে চলে গেলো ।
বেশ কিছুক্ষণ পর নিশাত ডাক্তার নিয়ে আসলে ডাক্তার নুশাকে দেখে বলে যে বেশ কিছুদিন ধরেই নাকি নুশা খাওয়া দাওয়া একদম কমিয়ে দিয়েছে তাই শরীরটা একটু দুর্বল আর অনেক্ক্ষণ পানির মধ্যে থাকায় হালকা জ্বর জ্বর ভাব তবে চিন্তার কোনো বিষয় না ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে কিছু ঘন্টার মাঝেই ঠিক হয়ে যাবে।
_________
দুই পরিবারের সবাই একসাথে ভির জমিয়েছে মার্কেটে কেনাকাটা করার জন্য। আজকের মধ্যেই যা কেনা কাটা আছে সব করতে হবে । সায়ানের বাবা আর নুশার বাবা কোনো বিয়ের কার্ড ছাড়াই ফোনের মাধ্যমে সকলকে ইনর্ভাট করে দিয়েছে।
” হলুদ সন্ধ্যা ” বর কনের একসাথেই অনুষ্ঠান হবে। নুশাকে হলুদ শাড়ী আর কাঁচা হলুদ আর গোলাপ ফুলের হাতের বানানো গহনা দিয়ে সাজানো হয়েছে। সায়ান সাদা পান্জাবি তার উপর হলুদ কুর্তি পরেছে হাতে ব্রেন্ডের ওয়াচ সামনে গলায় কর্তির উপর কালো সানগ্লাস, যে কেউ দেখলে ফিদা হয়ে যাবে সায়ানের এই লুক দেখে।
সায়ান সেই কখন থেকে ভেন্যুতে বসে থেকে নুশার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু নুশার আসার কোনো খবরই নাই। সোফায় বসে থেকে হাফ সাফ করছে বলতেও পারছে না যেতেও পারছে তার যেনো আর ধৈর্য হচ্ছে না এখানে একা একা বসে থাকার। বেশ কিছুক্ষণ পর ইমা আর নিশি নুশাকে সাথে নিয়ে ভেন্যুতে নিয়ে চলে আসলো আর নুশাকে সায়ানের পাশে বসিয়ে ইমা বলে উঠলো,,
-জিজু দেখেন তো কেমন সাজিয়েছি আপনার উনাকে, আপনার কথা মতো আমরা পার্লার থেকে সাজাইনি আমি আর নিশি আপু সাজিয়েছি।
ইমার কথার আগেই সায়ান এক মনে তাকিয়ে আছে নুশার দিকে। নুশা নিচের দিকে মাথা নামিয়ে রাখছে তার খুব লজ্জা লাগছে এভাবে সায়ানের তাকানো দেখে। সায়ানের পাশে বসার আগে একবার চোখে চোখ রেখেছিলো নুশা সায়ানের এতে করে আরো বেশি করে অসস্থি লাগছে।
ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী সায়ান আর নুশার একেক স্টাইলে ছবি তোলা হলো। হলুদ আর মেহেদী লাগানো এখনো হয়নি খাওয়া দাওয়ার পর হবে সেটা। নুশা আর সায়ান একসাথে খাওয়ার সময় সায়ান নিজের চেয়ারটা নুশার দিকে টেনে নুশার পায়ের সাথে পা লাগিয়ে বসলেন। আর টেবিলের নিচ দিয়ে সায়ান তার বাম হাতটা দিয়ে নুশার বাম হাতটা আঁকড়ে ধরে রেখেছিলো। নুশা দুই তিনবার সরাতে চাইলেও সরাতে পারে নাই তার আর জোরাজোরি করে নাই ।
খাওয়া দাওয়া শেষ আবার স্টেজে একসাথে বসা হলো । হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হতেই এক এক করে সায়ান আর নুশাকে একসাথে একে একে হলুদ ছুয়ে দিলো। তারপর সায়ান নিজের হাতে নুশাকে মেহেদী দিয়ে দিলো।
ফটোসেশানের সময় এক এক করে এখানে উপস্থিত সবার সাথেই কম বেশি হাজারটার মতো ছবি তুলা হয়ে গেছে। এতো এতো ফ্লাশের আলোয় চোখ জ্বালা পোরা করছে নুশার। বাড়িতে আসারপরও নুশার শান্তি নাই চোখ বন্ধ করে রেখেই শেষ রাত অব্দি কথা বলেছে। ফজরের আজান দিচ্ছে এমন সময় সায়ান বলে,,
– বউ এখন সুন্দর করে ওযু করে নামাজটা পরে নেও আজকের দিনটা আমাদের জন্য খুব স্পেশাল একটা দিন তাই নামাজটা পরে একটু ঘুমিয়ে নেও দশটার আগে উঠবে না আজকে রাতটা ওতো এভাবে সজাগ থাকতে হবে এখন না ঘুমালে কিভাবে থাকবে। আমি আর পারছি না তোমাকে ছাড়া আর একমুহূর্ত থাকতে।
-এই আপনি আর এক মূহুর্ত থাকতে পারছেন না এই কথাটি কয়বার বলেছেন বলেন তো।
-তুমিও অতো এখন ফোনটা রাখি ঘুম পেয়েছে এই কথাটা কয়বার বলেছো।
-তো বলবো না রাতের বেলা ঘুম তো চোখে আসবেই এটা স্বাভাবিক ।
-আমার ওতো তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে এটা স্বাভাবিক ।
-হো এখন রাখি।
– হুম যাও নামাজটা পরে তারপর ঘুমাবা, আর মাএ কিছু ঘন্টা তারপর একেবারে আমার হয়ে যাবে। তুমাকে কিন্তু একটা জিনিস আবারও বলে দিচ্ছি বিয়ের পর একটা রাতও আমাকে ছাড়া বাপের বাড়িতে থাকতে পারবে । আমাদেের মাঝে হাজারো দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া হলেও।
নুশা আর কিছু না বলে ফট করে কলটা কেটে দিলো সারারাত শুধু এই একটা কথাই বলে যাচ্ছে। ঘুমের জন্য মাথা ব্যথা করছে এখন, তারপরও নুশা শোয়া থেকে উঠে ওয়াশরুম থেকে ওযু করে নামাজটা পরে বিছানায় শুয়ে পরলো সাথে সাথেই চোখে গভীর ঘুম নেমে আসলো ।
সকাল এগারোটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হালকা খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে গোসল করে বিয়ের সাজে সাজতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। সায়ানের কর্ড়া নির্দেশ গায়ের হলুদ বিয়ে কোনোটাই যাতে পার্লার থেকে সাজানো না হয়। তাই নিশি আর ইমা আজকেও নুশাকে সাজাতে ব্যাস্ত । নুশাকে আজ রেড কালারের বেনারসি পড়ানো হয়েছে, বিয়ের সাজ কমপ্লিট হলে নুশাকে নিয়ে বাড়ির সকলে মিলে ক্লাবে উপস্থিত হলো একঘন্টা পর বরের গাড়ি ক্লাবের সামনে উপস্থিত হলে সকলে মিলে গেটের কাছে দাঁড়ায়।
বিয়ে পড়াতে পড়াতে সন্ধ্যা হয় যায়৷। তিনটা কবুলের মাধ্যমে সায়ান আর নুশা এক বাধনে আটকা পরে যায় বিদায়ের সময় মিরাজ তারিন অনেক কান্না করে । নিশাতো তার নুশু বুড়ির জন্য কান্না করে নুশাকে জরিয়ে ধরে। মিরাজ আহমেদ তার তিন ছেলে মেয়ে জরিয়ে ধরে কান্না করে আর তাদের তিনজনের ছোট বেলার সব সৃতিচারণ করে।
নুশা মাথায় দশহাত বড়ো ঘুমটা দিয়ে বিছানার মাঝে বসে আছে। নয়টার দিকে সায়ান রুমের ভেতর ঢুকে নুশাে সাথে কোনো কথা না বলে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ ফ্রেস হয়ে বাহিরে এসে নুশার পাশে গিয়ে বসে নুশার মাথার কাছ থেকে ঘুমটা টা সরিয়ে নুশার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উচু করে নুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-বউ,,
নুশা সায়ানের চোখের দিকে তাকায়, কিন্তু কিছু বলে না।
-অনেক সাধনার পর অবশেষে তোমাকে নিজের করে পেলাম তাই না।
নুশা এবারও কিছু বললো না।
নুশাকে চুপ করে থাকতে দেখে সায়ান এবার নুশার শরীর থেকে সব গহনা আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো গলার কাছে হাত নিতেই নুশা কেমন করে কেঁপে উঠলো এটা দেখে সায়ান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,
-এত টুকু তেই এভাবে কেঁপে উঠলে চলবে ।
নুশা এবারো চুপ করে রইলো তার গলা দিয়ে কোনো কথাই আসছে না ।
গহনা সব শেষ হলে সায়ান নুশার হাতে একটা শাড়ি দিয়ে বললো,
-যাও ফ্রেস হয়ে একেবারে ওযু করে আসো ।
নুশা আর এক মূহুর্ত দেরি না করে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে আসলো। কিন্তু এখানে এসে পরলো আরেক ঝামেলায় নুশা তো শাড়ি পরতে পারে না । নুশাকে অনেক্ক্ষণ ধরে ওয়াশরুমে থাকতে দেখে বাহির থেকে সায়ান বলে উঠলো,
– নুশারানী হয়নি তুমার।
নুশা এবারো বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,,
-আাসলে ভাইয়া আমি শাড়ি পরতে পারি না।
নুশার মুখে ভাইয়া ডাক.শুনে মেজাজ টাউ গরম হয়ে গেলো সায়ানের তার পরও কিছু না বলে থ্রী -পিছ দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি বের হতে। নুশাও তাড়াতাড়ি অযু করে বের হলো। তারপর দুইজনে দুই রাকাত নফল নামাজ পরে বেলকনিতে দু’জন মিলে দোলনায় বসে পরলো। নুশার জন্যই সায়ান এই দোলনাটা আগে থেকেই আনিয়ে রেখেছে। নুশা বসে আছে আর নুশার কোলে সায়ান মাথা রেখে শুয়ে আছে তার তখন সাড়ে দশটা সায়ান চোখ বন্ধ করে নুশাকে বলে উঠলো,,
-বউ,,
সায়ানের বলা বউ শব্দ যতবার শুনে নুশা ততবারই ভেতরে কেমন যানি কেপে কেঁপে উঠে। নুশা কুব মোলায়েম কন্ঠে বলে উঠলো,
-হুম,,
-অনেক ভালোবাসি তোমায়।
-হুম
-কি হুম।
-এই যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
-হুম কেনো বিশ্বাস হয় না আমি যে তোমাকে ভালোবাসি।
-ভালোবাসলে এভাবে এই কয়দিন এতো কষ্ট কিভাবে দিলেন বলেন তো।
-তুমি কি আমাকে কম কষ্ট দিয়েছো নাকি।
এবার আর নুশা কিছু বললো না। এতে করে সায়ান তার মাথাটা ঘুরিয়ে নুশার পেটের কাছে নিয়ে বলে উঠলো,,
– ঐ বউ, ভিশন ভালোবাসি আমি তোমাকে৷ কখনো আমাকে একা ফেলে চলে যেওনা। তোমাকে ছাড়া আমি নিঃস্ব একেবারে মারা যাবো আমার কোনো অস্তিত্ব নাই তুমি হীনা।
সায়ানের বলা প্রতিটা কথা নুশার মনে এক ভালোলাগা কাজ করছে। নুশা নিজে ওতো সায়ান কে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। সে ওতো সায়ানকে কোনোভাবেই হারাতে চায় না। সব সময় সায়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চায় যতদিন এই পৃথিবীতে বাঁচে ততদিনই যেন সায়ানের বুক মাথা রাখতে পারে।
এসব ভাবনার মাঝেই সায়ান আবার বলে উঠলো,,
-বউ ও বউ বলো না কখনো আমাকে ছেগে যাবে না।
নুশা চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস ফেলে সায়ানের দিকে ঝুকে বলে উঠলো,,
— মরন ছাড়া আর কোনো কিছুই আমাকে আপনার থেকে আলাদা করতে পারবে না। বিকজ আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।
নুশার মুখে এমন কথা শুনে সায়ান ধরফরিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসলো আর বললো,
-কি বললে, আবার বলো বউ আমি আরেকবার শুনতে চাই।
সায়ানের এমন করাতে নুশা এবার লজ্জায় নুয়ে গেলো,আর মনে মনে ভাবতে লাগলো কেনো যে বলে ফেললাম এখন কে বাঁচাবে আমায় এই মাফিয়ার থেকে।
সায়ানের যেনো এখন নুশার চুপ থাকাটা সয্য হচ্ছে না তাই লাগাতার বলতে লাগলো,
– এই বউ বলো না, বউ ও বউ আরেকবার প্লিজ বলো ।
নুশা এবার দুই হাত দিয়ে মুখটা ডেকে বলে উঠলো,,
-আমি আপনাকে ভালোবাসি মাফিয়া জামাই।
সায়ান এবার আর দেরি না করে বসা থেকে উঠে দাড়ালো আর নুশাকে কোলে তুলে নিলো আর বললো,
-আমিও আমার এই মিষ্টি বউ টারে অনেক ভালোবাসি বলে রুমের ভেতর যেতে লাগলো আর গলা ছেড়ে গায়তে লাগলো,,
♪♪♪♪♪বুকের মাঝে আগলে রেখো
ভালোবেসো মুরে♪♪♪
#সমাপ্ত