তোমার জন্য এক পৃথিবী
রেশমী রফিক
২৯।
আমিরা জবুথবু ভঙ্গিতে বসে আছে। রিফায়াত ওকে শোবার ঘরে রেখে গেছে। সম্ভবত মামিকে ডেকে আনবে। কলিংবেল বাজানোর পর দরজা খুলেছিল কাজের বুয়া। আমিরা আর রিফায়াতকে একসাথে দেখে সে কী ভেবেছে, আল্লাহ মালুম। রিফায়াতের সাথে কথা বললেও আমিরার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। রিফায়াত জিজ্ঞেস করছিল বাসার বৃত্তান্ত। কে আছে, কে নেই, কে কী করছে ইত্যাদি। বুয়ার দৃষ্টি সন্দেহজনক। বোধহয় কিছু একটা অনুমান করতে পেরেছে। রিফায়াত মামির ঘরে যাবার পর দরজা দিয়ে কয়েকবার উকি দিল। দু’বার আমিরার সাথে চোখাচোখিও হয়েছে। বুয়া সরাসরি ঘরের ভেতর ঢুকছে না। বাইরে ঘুরাঘুরি করছে। কাজের ছুতোয় বারবার রিফায়াতের ঘরের সামনে দিয়ে তার যাওয়া-আসা চলছে। আমিরা স্পষ্ট বুঝতে পারছে, এই যাওয়া-আসা আসলে তাকে দেখার জন্যই। তৃতীয়বার চোখে চোখ পড়তেই সে হাত ইশারা করে বুয়াকে ডাকল। বুয়া তখনই ঘরে ঢুকল না। সেও ইশারা করে বুঝাল,
– আসতেছি।
এরপর চোখের আড়াল হয়ে গেল। অবশ্য খুব বেশি সময় নিল না। খানিকবাদেই চট করে ঘরে ঢুকল সে। বলল,
– কী হইছে? ডাকেন কিল্লাই?
আমিরা বলল,
– আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে পারবেন? গলা শুঁকিয়ে গেছে।
বুয়া কথা না বাড়িয়ে ঝটপট পানি ভর্তি গ্লাস নিয়ে এলো। আমিরা ভেবেছিল, ঠান্ডা পানি দিবে। ফ্রিজে নিশ্চয়ই আছে। গরমে তার প্রচন্ড পিপাসা হচ্ছে। কিন্তু বুয়া নিয়ে এসেছে নরমাল পানি। সম্ভবত ডাইনিং টেবিল থেকে নিয়ে এসেছে। আমিরা বলল,
– ঠান্ডা পানি নাই?
– আছে। তুমি খাইবা?
আমিরা কিছু না বলে হ্যা-সূচক মাথা ঝাঁকাল। বুয়ার মতিগতি সুবিধের না। কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে। আচানক গলা নামিয়ে বলল,
– তুমি হের কী হও? নতুন বান্ধবী?
– কার কথা বলছেন?
– রিফায়াত ভাই। তোমার লগে নয়া প্রেম?
আমিরা চট করে উত্তর দিল না। পিপাসায় তার গলা শুঁকিয়ে যাচ্ছে। একটু আগে নরমাল পানি খেয়েও লাভ হয়নি। পিপাসা আরও বেড়েছে। সে বলল,
– একটু ঠান্ডা পানি দেন প্লিজ।
বুয়ার তাড়া অনেক। সে খালি গ্লাস নিয়ে আবার দৌড়াল। কয়েক মুহূর্ত পর ফ্রিজের ঠান্ডা পানি সমেত গ্লাস নিয়ে এলো। আমিরার হাতে দিতেই সে ঢকঢক খেয়ে সবটুকু খেয়ে ফেলল। বুয়া ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,
– তুমার লগে রিফায়াত ভাইর পরিচয় কেমনে?
– উনি আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন।
– অহ। তুমারে আজকা বাসায় আনল কেন? কী বইলা আনসে?
– বলছে, এখন থেকে আমি এইখানে থাকব।
বুয়া চোখ কপালে উঠে গেছে। প্রায় চিৎকার করতে গিয়েও গলা নামিয়ে ফেলল,
– কী কইতাছ?
– জি। ঠিক শুনছেন।
– তুমি হের মামিরে চিনো? যেই বদরাগি! তুমারে এইখানে থাকবারই দিব না। ঘাড় ধইরা বাইর করবে।
– কেন? আমি তো নিজে ইচ্ছা করে আসি নাই। উনি নিয়ে আসছেন।
– উনি আবার কেডা?
– রিফায়াত।
– আর তুমিও সুরসুর কইরা চইলা আসছ! তুমার কি আদব লেহাজ নাই? ব্যাডা মাইনসের হাত ধইরা চ্যালচ্যাল কইরা আইসা পড়লা।
আমিরা বুঝতে পারছে না বুয়ার কথাবার্তার সারমর্ম আসলে কী। খটকা লাগছে কথার ধরনে। সে বলল,
– ব্যাডা মাইনসে জোর কইরা নিয়া আসলে আমি কী করব?
– ওরেব্বাপ। চটর চটর কথাও কইতে পারো দেহি। মামি তুমারে ধুলাই দিলে তখন আর মুখ দিয়া কথা বাইর হইব না।
– আমার এমনিতেও কথা বলার ইচ্ছা নাই। যা বলার, উনি বলবে।
– উনি উনি করতেছ কিল্লাই? বয়ফেরেনরে কেউ আপনি কইরা কয়?
– কেউ কয় না কিন্তু আমি কই। আমার তো বয়ফ্রেন্ড লাগে না।
– বয়ফেরেন না তুমার? তাইলে নিয়াইছে কিল্লাই?
– এইটা তাকেই জিজ্ঞেস করেন।
আমিরার রহস্যময় কথাবার্তা বুয়ার ঘটে ঢুকছে না। আবার মামি হুট করে এই ঘরে চলে আসলেও সমস্যা হবে বোধহয়। কথা বলার ফাঁকে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আমিরা আবার বলল,
– ওদিক তাকান কেন বারবার? কোনো সমস্যা?
– তুমি অহনো বুঝতেছ না? ঘরের ভিত্রে আজকা তুফান চলব। মামি যেই ফালডা দিব আরেকটু পর। এরপর দেখবা খ্যামটা নাচ।
আমিরা শব্দ করে হেসে ফেলল। বুয়া বলল,
– হাসো হাসো। হাইসা লও। আরেকটু পর কাইন্দা কুল পাইবা না।
– শুনেন বুয়া, কান্নাকাটি করার কিছু নাই। আপনি রিল্যাক্সড থাকেন। অত টেনশন কইরেন না। রিফায়াত বলছে, যত ঝড় ঝাপটা সব উনি একলা সামলাবে।
– এই কথা আগের বারও কইছিল।
– আগেরবার?
আমিরা হঠাৎ সতর্ক হলো। বুয়া বলল,
– হ। মাইয়াডা অনেক কানছিল হেইদিন। মামি অর বাপ-মা তুইল্লা গাইলাইছে। চেহারা নিয়া খুটা দিছে। সেই মাইয়া তুমার থেইকা ধলা ছিল। উচা লাম্বা। দেখতে মাশাল্লাহ সুন্দরী আছিল। খালি গায়ের রঙডা এট্টু ময়লা বইলা মামি কিয়ামত নামাইয়া ফালাইছিল।
– মানে কী? রিফায়াত কি আগেও একটা বিয়ে করছিল?
– না, বিয়া করবে কেন? তার কি ঠেকা পড়ছে ওই মাইয়ারে বিয়া করনের? কয়দিনের লাইগা গালফেরেন…
বলতে বলতে বুয়া হঠাৎ থেমে গেল। বলল,
– তুমি আঁতকা বিয়ার কথা বললা কেন? তুমারে কি হেয় বিয়ার কথা বলছে নাকি? বিয়া করতে চাইছে?
– বিয়ে করে ফেলছে।
বুয়া প্রশ্নটা কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেছিল। উত্তরটা আশা করেনি। এবার সে হতভম্ব হলো। বলল,
– কী কইলা?
– বললাম, বিয়ে করে ফেলছে। এইজন্যই নিয়ে আসছে বাসায়। কিন্তু আপনি গার্লফ্রেন্ডের কথা কী জানি বললেন। কে সে?
বুয়া উত্তর দিল না। আমিরার উত্তর শুনে তার জবান বন্ধ হয়ে গেছে প্রায়। ঝড়ের গতিতে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমিরা নির্বিকার। সে অলস ভঙ্গিতে আশপাশে তাকিয়ে দেখছে। এই ঘরটা রিফায়াতের, দেখেই বুঝা যায়। ছেলেদের শোবার ঘরে যেমন হয়, এটাও তেমনই। এলোমেলো, অনেকটা গোয়াল ঘরের সাথে তুলনা দেয়া যাবে। চারদিকে জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। দেয়ালে সিঙ্গেল কতগুলো ছবি ফ্রেমে আটকে রাখা। একটা ছবি আছে কাপল। ওর বয়সী বা ওর থেকে একটু বড় হবে। আমিরা কাছে গিয়ে ছবিটা খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখল। পুরনো দিনের ছবি। সম্ভবত রিফায়াতের বাবা-মা উনারা। কোলে একটা বাচ্চা আছে। এই বাচ্চাটা রিফায়াত নিজে হতে পারে। যদিও বাচ্চাটার পরনে মেয়েদের জামা। চোখে কাজল দেয়া। রিফায়াতের মনে হয় একটা বোনও ছিল! দু-একটা ছবি রিফায়াতের ছোটবেলার।
এই ঘরের আসবাবপত্র বলতে একটা ডাবল বিছানা, পড়ার টেবিল। তার পাশে কম্পিউটার টেবিল। অন্যপাশের দেয়ালে আলমারি। আলমারির পাল্লার উপরই আয়না। বিছানার ওপাশে একটা ছোট বেডসাইড টেবিল। ব্যস, আর কিছু নেই। ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দা আছে। দরজাটা বন্ধ। এই ঘরের জানালাগুলোও বন্ধ করা। পর্দা সরিয়ে রাখা হয়েছে শুধু। উপরদিকে সিলিংয়ের পাশ ঘেঁষে একটা এয়ার কন্ডিশনার লাগানো। যদিও এই মুহূর্তে ঘরের ভেতরটা ঠান্ডা নয়। সম্ভবত রিফায়াত আজ সকালে বাসা থেকে বের হবার পর কেউ এই ঘরে আসেনি। এসিও ছাড়া হয়নি। আমিরা ঘুরে-ঘুরে আয়নার সামনে দাঁড়াল। মনোযোগ দিয়ে সে নিজেকে দেখতে লাগল।
কতক্ষণ আপনমনে নিজ প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়েছিল, আমিরা বলতে পারবে না। সে আসলে ফাঁকা দৃষ্টিতে দেখছিল সামনে। আদতে হারিয়ে গিয়েছিল অন্য কোথাও। ঠিক কোথায়? রিফায়াতের হাত ধরে কল্পনার সুখরাজ্যে? ভবিষ্যৎ সংসারের স্বপ্ন দেখায় মগ্ন ছিল? নাকি বাবা-মা আর বোনদের কথা ভাবছিল, তা জানে না। তার সংবিৎ ফিরল রিফায়াতের সাড়াশব্দ পেয়ে। রিফায়াত ঠিক পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই দুই হাতে আমিরাকে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে। কাঁধের উপর থুতনি ঠেকিয়ে আয়নার দিকে তাকাল। এক হাতে সাপের মতো পেচিয়ে ধরে, অন্য হাত দিয়ে মাথার উপরকার কাকের বাসায় হাত বুলাতে লাগল। আমিরা সরে যাবার পায়তারা করছিল। কিন্তু রিফায়াতের বাহুডোর থেকে ছুটতে পারল না। রিফায়াত ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কী দেখতেছিলা ওভাবে? কাকের বাসা?
– জানি না।
– তোমার মাথার উপর এই চুলগুলো এভাবে আউলা ঝাউলা হয়ে আছে কেন? গতকাল তো এরকম ছিল না।
– গতকাল বড়াপা ক্লিপ দিয়ে সেটআপ করে দিয়েছিল। এইজন্য ফুলে থাকেনি।
– আজও ক্লিপ দিয়ে সেট করতা।
– আজকে সকালে তো বড়াপা স্কুলের জন্য রেডি হইতেছিল। এইজন্য আমি বলি নাই কিছু।
– তুমি একা পারো না সেট করতে?
আমিরা আয়নার ভেতর তাকিয়ে না-বোধক মাথা নাড়ল। বলল,
– পারি না।
– ঠিক আছে। এখন থেকে আমি ক্লিপ লাগিয়ে দিব।
চুলগুলো হাত দিয়ে যতটা সম্ভব ঠিক করে আয়নার ভেতর দিয়ে পরখ করল রিফায়াত। তারপর বলল,
– এইখানে একটা ক্লিপ দিলেই মনে হয় সেট হয়ে যাবে।
– হয় না। আমি অনেকবার ট্রাই করছি। আপার কাছে হেয়ার স্প্রে আছে। ওইটা দিলে চুল শক্ত হয়ে থাকে। তখন আর নড়ে চড়ে না। ফুলেও থাকে না। কালকে ওইটা দিয়েই চুল সেট করছিল।
– আচ্ছা, আমরা মার্কেটে গিয়ে হেয়ার স্প্রে কিনে আনব। একটা স্প্রে আর একপাতি ক্লিপ।
আমিরা হঠাৎ বলল,
– আমার মাথায় এরকম আউলা চুল থাকলে কি খুব বেশি খারাপ দেখাবে? মানে সবসময় তো স্প্রে দিয়ে চুল ঠিক করে রাখা পসিবল না।
রিফায়াত কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আয়নার ভেতর। তারপর বলল,
– তুমি যেরকম, আমার ওভাবেই ভালো লাগছে। তবে তুমি এই আউলা চুল নিয়ে অনেক টেন্সড থাক, এটা বুঝতে পারছি। কালকে কথা বলার সময় বারবার মাথায় হাত দিচ্ছিলা। নিজে নিজেই চুল ঠিক করতেছিলা। এজন্য বললাম স্প্রে কেনার কথা। তুমি এরকম এলোমেলো হয়ে থাকলেও আমার কোনো সমস্যা নাই। তোমার এই কোঁকড়া চুল, তোমার চোখ, তোমার দাঁতগুলো সবকিছুই ভালো লাগছে খুব।
আমিরা চোখ সরাল না। পরস্পরের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় হলো বেশ খানিকক্ষণ। রিফায়াত দুই হাতে আমিরাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বেশ শক্ত করেই। গালের সঙ্গে গাল মিশিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে যেন, কে আগে চোখের পলক ফেলবে!
আমিরা জিতে গেল। অনেকক্ষণ একটানা তাকিয়ে থাকার পর হুট করে চোখের পলক ফেলল রিফায়াত। খানিক হাসল সে। কিন্তু আমিরার কোনো সাড়াশব্দ নেই। তখনও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। রিফায়াত ডাকল,
– এই যে, বউ!
আমিরা চমকে উঠে বলল,
– হু। শুনতেছি।
– কিছুই শুনতেছ না, আমি জানি। এতক্ষণ কতকিছু বলে ফেললাম, তোমার কানেই যায়নি।
আমিরা বিভ্রান্ত ভঙ্গিতে বলল,
– না শুনতেছিলাম, কী জানি বললেন! ঠিক খেয়াল করি নাই। আবার বলেন।
রিফায়াত আসলে কিছুই বলেনি। আমিরাকে পরীক্ষা করছিল। এবার বলল,
– কিছু একটা ভাবতেছিলা তুমি। মনে মনে। বলো কী ভাবতেছিলা।
– জানি না।
– জানো। কিন্তু আমাকে বলতে চাচ্ছ না। ঠিক বলছি না?
– হু।
– আমাকে বলতে কী সমস্যা, আমিরা? আমি কি তোমার পর?
– উহু।
– তাহলে? আমি বাঘ-ভাল্লুক? খেয়ে ফেলব তোমাকে?
– না।
– তোমার কী হয়েছে আবার? তুমি একদম ঠান্ডা মেরে আছ! ঘটনা কী?
– কিছু না।
– কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে। বলো আমাকে!
– না মানে আমার খুব ভয় লাগতেছে।
– ভয় কীসের? তুমি এখন তোমার নিজের বাসায় আছ। এটা এখন থেকে আমাদের ঘর।
– আপনার মামি যদি কিছু বলে!
রিফায়াতের মুখটা এতক্ষণ উজ্জ্বল ছিল। আমিরাকে জড়িয়ে ধরে খুনসুটি করছিল নিচু সুরে। এবার ছেঁড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। আমিরা পেছন ফিরল। তার চোখে অবাক দৃষ্টি। যদিও অবাক হবার মতো কিছু ঘটেনি। সে আবার বলল,
– আপনার মামি চিল্লাচিল্লি করবে, তাই না? আমাকে খুব বকবে!
রিফায়াত চোখমুখে অস্বস্তি। বলল,
– ঘটনা তার থেকেও বেশি গুরুতর হয়ে গেছে। মামি কাপড়চোপড় গোছাচ্ছে।
– কেন?
– এই বাসায় নাকি আর থাকবে না। চলেই যাবে।
– আমি এসেছি বলে?
– হু।
– উনার আমাকে পছন্দ হয়নি। তাই না?
– তোমাকে তো দেখেইনি। দেখলে পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টা আসে।
– তাহলে?
– মামি চেয়েছিল তার বোনের মেয়ে আসুক আমার বউ হয়ে।
– আপনি তাকে বিয়ে করলেন না কেন? মামির বোনের মেয়ে কি দেখতে ভালো না?
রিফায়াত লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেঁড়ে বলল,
– অনেক ভালো। অনেক সুন্দর। অনেক স্মার্ট। অনেক ফ্যাশনেবল। এক কথায় সুপার্ব।
– তাহলে?
– কোনোকিছুই ‘অনেক’ ভালো না।
– ওহ।
– তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে এর মধ্যে। মামি চায়নি, আমি তোমাকে বিয়ে করি। তার ধারণা, বাবার কোনো পছন্দ ছিল না। ফুপু এটা বানিয়ে বলেছে।
– আপনার কি তাই মনে হয়?
– না, তা মনে হয় না। আমি ফুপুকে চিনি। সে আর যাই করুক, বানিয়ে কিছু বলবে না। তাও আমার বাবার নামে। তার যদি নিজের পছন্দ হতো তোমাকে, সরাসরিই বলত।
– আচ্ছা।
– আমি নিজেও ব্যাপারটা অল্পসল্প জানতাম।
– কোন ব্যাপার?
– আমাদের বিয়ে। আমার খুব ভালোমতো মনে নাই। কিন্তু আবছা-আবছা চোখের সামনে ভাসে। অনেকগুলো মানুষ একসাথে বসা। উঠানেই চেয়ার পেতে বসেছে। আব্বুও আছে। আমি তখন আব্বুর পাশে বসা। বড় স্যার মানে তোমার চাচা তখন স্কুলের হেড স্যার। সবাই উনাকে ঘিরে গল্প করছে। হঠাৎ আব্বুকে উনি বললেন, তোমার ছেলেটা আমাকে দিয়ে দাও। আব্বু হাসতে হাসতে বলল, আমার ছেলে নিয়ে তুমি কী করবা? তুমি তো বিয়েশাদি কিছু করো নাই? তোমার বউ থাকলে নাহয় বুঝতাম, আমার ছেলে তুমি নিজের ঘরে পালতে চাও। উনি হেসে বললেন, আরে, নিজের ঘরে পালতে চাইলে বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি। আমার বউ না থাকলেও ভাইয়ের বউ আছে। তার ছেলেমেয়েরাও আছে।
– তারপর?
– এটুকুই। এরপর বোধহয় উনি বিয়ের কথা বলছিলেন। আমার অত খেয়াল নাই। আব্বু বিষয়টা বুঝতে পারছিল। কিন্তু মজা করে বলল, তোমার ভাইয়ের তো ছেলে আছেই। আবার আমার ছেলে নিয়ে টানাটানি করতেছ কেন? তখন…
– থামলেন কেন? তখন কী হলো?
– তোমার ভাই কোথায়, আমিরা?
আমিরা হকচকিয়ে গেল। রিফায়াত আবার বলল,
– তোমার বড় ভাই। নাম সাব্বির বা এরকম কিছু হবে। আমার সমান। সে কোথায় এখন?
আমিরা চোখমুখে আতঙ্ক। সে মাথা নিচু করে ফেলল। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আমতা-আমতা করে বলল,
– আমার কোনো ভাই নাই। আমরা তিন বোন।
– তাহলে সাব্বির কে? তোমার কাজিন?
– আ-আমি সাব্বির নামে কাউকে চিনি না।
– নামটা সাব্বিরই তো নাকি? স দিয়ে নাম ছিল আমার যতদূর মনে হয়।
আমিরা চুপ করে রইল। রিফায়াত বলল,
– আচ্ছা বাদ দাও। সাব্বির-টাব্বির হবে তোমার কোনো রিলেটিভ। আমার নিজেরও ঠিক খেয়াল নাই। এনিওয়ে, মামি ব্যাপারটা মানতে পারতেছে না। আগেই বাসার মধ্যে গুমোট সিচুয়েশন ছিল। আজকে তো বিগড়ে গেল। লাগেজ প্যাক করতেছে। মামাকেও কল দিয়েছে। মামা মে বি আসতেছে বাসায়। আমি কী করব এখন? বুঝতেছি না কিছু। বুবু থাকলে একটু ভরসা পাইতাম। বুবু ঠিক ম্যানেজ করে ফেলত মামা-মামিকে। বুবু আর সময় পাইল না গ্রামের বাড়ি যাওয়ার! আমি তো বিয়ের কথাও এখন পর্যন্ত বলতে পারলাম না।
– বলেন নাই আমরা বিয়ে করছি?
– না। শুধু বলছি আমিরা আসছে বাসায়। তোমার সাথে দেখা করানোর জন্য নিয়ে আসলাম। ভাবছিলাম, মামি তোমার সাথে কথা বলতে বলতে ইজি হয়ে যাবে। মন থেকে মানতে না পারলেও অ্যাটলিস্ট ফরমালি কথাবার্তা তো বলত। এর ফাঁকে কোনো একসময় বলে দিতাম বিয়ের কথা।
– এখন কী করবেন? উনারা কি সত্যি সত্যি চলে যাইতেছে?
– বুঝতেছি না। তুমি কোনো আইডিয়া দিতে পার?
আমিরা সতর্ক সুরে বলল,
– আমার মাথায় একটাই জিনিস ঘুরতেছে। উনাদেরকে যে কোনো মুল্যে আটকাতে হবে। আমি আসছি বলে উনারা যদি বাসা থেকে বের হয়ে যায়, বিষয়টা খুব খারাপ হবে। সারাজীবনের জন্য আমি অপরাধী হয়ে থাকব। মনে হবে, আমিই বুঝি উনাদেরকে বাসা থেকে বের করে দিলাম।
আমিরার হাত চেপে ধরল রিফায়াত। তার চেহারায় অন্ধকার নেমেছে। চোখ লাল। মনে হচ্ছে এখনই কেঁদে ফেলবে। ফিসফিস করে বলল,
– আমিরা, আমি মামা-মামিকে ছাড়া থাকতে পারব না। ওরা আমার বাবা-মা না। কিন্তু বাবা-মায়ের থেকেও অনেক বেশি কিছু। সারাজীবন আমাকে বুকের মধ্যে রেখে বড় করছে মামি। নিজের ছেলেমেয়েদেরও এত বেশি আদর করে নাই, যতটা আমাকে করছে। আমি তার কাছে বড় ছেলে। প্রথম সন্তানের মতো।
রিফায়াতের কান্না আমিরার চোখেও সংক্রমিত হচ্ছে। সে বলল,
– ‘প্রথম সন্তানের মতো’ বলতে কিছু নাই। আপনিই উনার প্রথম সন্তান। শুধু জন্ম দিলেই কি বাবা-মা হয়? তাহলে তো কেউ সন্তান পালক নিত না দুনিয়াতে। আপনার মামা-মামি শুধু নামে মাত্রই মামা-মামি। আসল পরিচয় হচ্ছে, উনারা আপনার বাবা-মা। আপনি যেভাবে পারেন, মামিকে আটকান। মনের মধ্যে যতই রাগ থাকুক, মুখে বকাবকি করুক, আপনার পছন্দ আপনার ভালো থাকাটাই উনাদের একমাত্র চাওয়া। এটা যখন বুঝতে পারবে, ঠিক দেখবেন আপনার পছন্দটাই মেনে নিবে।
রিফায়াত কান্না লুকিয়ে ফেলেছে। নিঃশব্দ হাসি ফুটল তার মুখে। আমিরার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
– আমার পছন্দ মানেই তুমি!
আমি তাল দিল না। তার কথা শেষ হয়নি। সে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
– বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া মানে ঘটনা গুরুতরের থেকেও বেশি খারাপ। বুঝছেন? একবার বাসা থেকে বের হয়ে গেছে মানেই সিচুয়েশন আপনার কন্ট্রোলের বাইরে। এরপর আপনি যত যাই করেন, রিলেশন আর ঠিক করতে পারবেন না আগের মতো। মনের মধ্যে খচমচ লেগেই থাকবে সারাজীবন। আপনি এক কাজ করেন। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসছে।
– কী বুদ্ধি?
– আপনি মামির কাছে যান। গিয়েই পা জড়িয়ে ধরবেন। একদম বসে পড়বেন ফ্লোরে। তারপর কান্নাকাটি শুরু করে দিবেন। কান্না না আসলে জোর করে কাঁদবেন। চোখের পানি সহজে বের হবে না। কিন্তু আপনি মুখ লুকিয়ে রাখবেন। মামির পায়ের সাথে মাথা ঠেকিয়ে ভাব করবেন যেন কান্না করতে করতে ফিট হয়ে যাচ্ছেন।
রিফায়াত হতভম্ব ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। আমিরার বুদ্ধি শুনে মনে হচ্ছে, এখনই বুঝি জ্ঞান হারাবে। সত্যিই কি মামির পা ধরলে কাজ হবে? সে বলল,
– তারপর?
– তারপর আর কী? ওভাবেই বসে থাকবেন। যতক্ষণ না মামি আপনার পছন্দ মেনে নিচ্ছে, যতক্ষণ না লাগেজ গোছানো বন্ধ করছে, ততক্ষণ পা ধরে ওভাবেই বসে থাকবেন। একদম নড়বেন না। বোম ফালাইলেও স্ট্রিক্ট হয়ে বসে থাকবেন। আর হ্যাঁ, পা কিন্তু ভুলেও যেন হাত থেকে না ফস্কায়। মামি অনেক চেষ্টা করবে পা ছাড়ানোর। আপনাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ সরানোর প্ল্যান করবে। এরপর চট করে পা ছাড়িয়ে নিবে। এইটা করা যাবে না। পা ধরবেন তো ধরবেনই। ছাড়াছাড়ি নাই। ঠিক আছে?
– এইভাবে কাজ হবে? মামি মানবে?
– মানতে বাধ্য। বড়াপাও ঠিক এভাবেই খালার পা ধরে বসেছিল। আমার বড় খালা অনেক শক্ত মানুষ। উনি গলে একদম মাখন হয়ে গেছিল বড়াপার কান্না দেখে।
– তাহলে তো কাজ হবেই। কিন্তু তুমি? তুমি কী করবা?
– আমি এখন ভাগব।
– কীহ?
– আমার মনে হয় বাসায় চলে যাওয়া উচিত। আমি এখানে থাকলে সিচুয়েশন আরও খারাপ হবে। আমাকে না দেখেই মামির এই রিএকশন। আর দেখলে যে কী করবে, আল্লাহ মালুম। এত রিস্ক নেয়া উচিত হবে না। মামির তো বয়স হয়েছে। যদি স্ট্রোক করে ফেলে? যদি হার্ট অ্যাটাক হয়?
রিফায়াত তড়িঘড়ি করে বলল,
– কী বলতেছ এইসব হাবিজাবি? মামির স্ট্রোক হবে কেন? আমার মামি একদম সুস্থ। কোনো রোগ-বিরোগ নাই। সহজে ধরেও না রোগে। হার্ট একদম ভালো।
– তা ঠিক আছে। কিন্তু স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এইসব যে কারও হইতে পারে। এজন্যই বলতেছি, রিস্ক নেয়া যাবে না।
– কিন্তু তুমি বাসায় গেলে আরেক ঝামেলা হবে। তোমাকে যদি আটকে ফেলে? যদি কোনো ফাঁদে পড়ো?
– কী ফাঁদ? ওই ছেলেটা আসবে বিকালে। আমি তার আগেই বড়াপাকে বলে দিব বিয়ের কথা। আপা রাগ করবে, বকবে। এরপর মাকে বলবে। মা ক্ষেপে যাবে। চিল্লাচিল্লি করবে। বড় খালাকে কল দিয়ে ঘটনা জানাবে। এরপর তো ওই ছেলেকে বাসায় আনার কোনো মানে হয় না। দেখাদেখি ক্যানসেল। আর ওই ছেলে না আসলে হুট করে বিয়ে পড়ানোর চান্সও নাই।
– ব্যস? কাহিনি এটুকুই?
– ওই ছেলের কাহিনি এখানেই শেষ হবে। বাকিটা যাবে আমার উপর দিয়ে।
– বাকিটা কী?
– জানি না। খুব বেশি হলে মাইর দিবে। এরপর আপনাকে কল দিতে পারে। আবার নাও দিতে পারে। আমি ঠিক জানি না, কী হবে।
রিফায়াত কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর বলল,
– তোমার ব্যাপারে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না, আমিরা। আমি তোমাকে হারাতে পারব না। মামা-মামি আমার জন্য ইম্পরট্যান্ট। কিন্তু তুমিও কম না। আমার ওয়াইফ তুমি! সো, পুরান ঢাকায় যাওয়ার নাম করো না। ওদিকের অলিগলি সব দেখতে একরকম। ঘুলঘুলির মতো। গতকাল তোমাদের বাসায় যাওয়ার সময় কী যে হয়রানি হয়েছিল! এক ঘন্টা ধরে বাসা খুঁজছি। আরেকবার খুঁজতে যাবার এনার্জি নাই। রিস্কও নিতে চাই না। যদি আবার হারিয়ে ফেলি বাসা? যদি আর খুঁজে না পাই? কোথায় পাব তোমাকে তখন? কোথায় খুঁজব?
=========================
তোমার জন্য এক পৃথিবী
রেশমী রফিক
৩০।
আমিরা ঘুমুচ্ছিল। রিফায়াত তার বুদ্ধিতে মামির পা ধরে বসে থাকতে গেছে। তখনই বুঝতে পেরেছিল, এই যাওয়াটা অনেকক্ষণের। মামি অত সহজে হার মানবেন না। রিফায়াতও হাল ছাড়বে না। তাকে ওটাই বলা হয়েছে। এরপর মামা আসবেন বাসায়। তার পা ধরেও বসে থাকতে হতে পারে রিফায়াতের। এই লম্বা সময়টুকু আমিরা শোবার ঘর থেকে বের হবে না। ঘরের ভেতরেই আরেকটা দরজা আছে। ওটা ওয়াশরুম। তাই প্রাকৃতিক ডাকের তাগিদেও ঘর থেকে বের হবার দরকার নেই। যাবার আগে রিফায়াত দরজা আটকে দিয়ে গেছে। আমিরাকে বলেছে,
– ঘটনা যাই ঘটুক। বাইরে যতই ভাঙচুর হোক, চিল্লাচিল্লি হোক। তুমি ভুলেও বাইরে আসবে না। চুপচাপ বসে থাকবে। ঠিক আছে?
আমিরা লক্ষী মেয়ের মতো মাথা নেড়ে হ্যা-সূচক সম্মতি দিয়েছে। এরপর রিফায়াত চলে যেতেই বিছানায় শুয়ে পড়েছে ধুপ করে। শরীর আর চলছিলই না। রাতভর না ঘুমুনোর ক্লান্তি আর সকাল থেকে এই অবধি যে ধকল সইতে হলো, এরপর শরীর চলার কথাও না। অবশ হয়ে যাচ্ছিল সে। আর রিফায়াতের বিছানাটাও দেখতে লোভনীয়। দেখলেই মনে হয় হাতছানি দিয়ে ডাকছে, আয় শিগগির! এই ঘরে কোনো সোফা নেই। কম্পিঊটার টেবিলের সামনে একটা চেয়ার আছে। কিন্তু তাতে দুনিয়ার জামাকাপড় রাখা। এগুলো বোধহয় ধোয়া হয়েছে। বারান্দায় শুকোতে দেয়া হয়েছিল। এরপর সেগুলো নিয়ে এসে এই চেয়ারে জড়ো করে রাখা হয়েছে। তাই আমিরা বিছানার একপাশে বসেছিল। তখনই টের পেয়েছে কতটা আরামদায়ক! মন চাইছিল, তখনই ধুপ করে শুয়ে পড়তে। বুয়া বারবার উঁকি দেয়ায় আর রিফায়াত কতক্ষণে মামিকে নিয়ে এই ঘরে আসবে, এই টেনশনে শরীর হেলে পড়েনি। কিন্তু এখন রিফায়াত নিজেই ওর ঘুমুবার বন্দোবস্ত করে দিয়ে গেছে। অবশ্য সরাসরি বলেনি ঘুমুতে।
বিছানা আগেই গোছানো ছিল। তবু আমিরা হাত দিয়ে যতটা সম্ভব ঝাড়তে চেষ্টা করল। তারপর ঘরের অগোছালো জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা জিনিসপত্রের কারণে ঘরের ভেতর ভালোমতো পা ফেলার উপায় নেই। প্রতিটা পদেই পায়ের তলায় কিছু না কিছু বাঁধছে। এই অবস্থায় ঘুমুনো সম্ভব না। আমিরা নিজে খুব একটা গোছানো স্বভাবের নয়। ঘর গোছগাছ করার পর্ব আনিসার উপর বর্তায় সবসময়। কিন্তু এই ঘরটা এখন থেকে তাকেই গুছিয়ে রাখতে হবে। আনিসা আসবে না ঘর গোছাতে।
আমিরা উঁচু স্তুপ করে রাখা জামাকাপড়গুলো দ্রুত ভাঁজ করল। এগুলো আলমারিতে রাখবে কি না, ভাবছিল প্রথমে। এই ঘরে কোনো ড্রয়ার নেই। এর মানেই আলমারিতে থাকে রিফায়াতের সব জামাকাপড়। আলমারিটা কাঠের। তিনটা পাল্লা। একটায় তালা মারা। বাকি দুটো পাল্লা হ্যান্ডেল ধরে টান দিলেই খুলে আসে। একপাশে হ্যাঙ্গারে জামা ঝোলানোর জায়গা। অন্যপাশে সারি-সারি তাক। কোন কাপড়টা কোথায় রাখতে হবে, আমিরা জানে না। তবু আন্দাজ করে জামাকাপড় সব গুছিয়ে রাখল। কম্পিউটার টেবিলের উপরটা সাজিয়ে ফেলল। প্রায় আধঘন্টা পর দেখা গেল, ঘরের চেহারা মোটামুটি বদলে গেছে। এখন নিশ্চিন্তে ঘুমুনো যায়!
বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই তার চোখ বুজে এসেছিল ওর। এই ঘরটায় যাদু আছে। এসি ছাড়া না থাকলেও অদ্ভুতভাবে ঘরটা বাইরের তুলনায় ঠান্ডা। তার উপর আমিরার সবসময় কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমুনোর অভ্যেস। এই ঘরে কাঁথা নেই। কম্বল আছে। রিফায়াত বোধহয় রাতে এসি ছেঁড়ে ঘুমোয়। এজন্য কম্বল গায়ে জড়ায়। দিনের বেলায় এসি অন না থাকলেও আমিরা ওই কম্বল টেনে গায়ে জড়াল। শুয়ে-শুয়েই কলেজ ইউনিফর্মের বেল্ট আর ক্রসবেল্ট খুলে ফেলেছে। পায়ে মোজা-টোজা কিছু নেই। সকালে তাড়াহুড়োয় কেডসও পরেনি সে। একটা স্যান্ডেল সু পরেই বের হয়েছিল। ওটা এই বাসায় এসে সদর দরজার সামনেই খুলে ফেলেছে। রিফায়াতই বলল স্যান্ডেল খুলতে। মামির নাকি শুচিবাই আছে। ঘরদোরের কোথাও একটু ময়লা থাকলেই তার মেজাজের পারদ ধাই ধাই করে উপরে উঠে যায়। এজন্য বাসার ভেতর স্যান্ডেল বা জুতা পরে হাটাহাটি করে না কেউ।
কতক্ষণ ঘুমিয়েছিল, বলতে পারবে না আমিরা। যখন চোখ মেলল, চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। পর্দা গলে দিনের আলোর বদলে চাঁদের রুপালী আলো চলে এসেছে ঘরের ভেতর। সেই আলোয় ঘরটা আবছা-আবছা দেখা যাচ্ছে। আমিরা প্রথমে বুঝে উঠতে পারল না, কোথায় আছে। বরাবরের মতোই আড়মোড়া ভাঙ্গল সে। বিশাল হাই তুলল। তারপর পিটপিট করে তাকাল। লম্বা সময় ধরে ঘুমুনোর পরও তার দু-চোখে ঘুম লেগে আছে। শরীরটা এখনও ক্লান্ত। খুব ম্যাজম্যাজ করছে। বিকেলে আমিরার চা পান করার অভ্যেস। তার বাসায় দিনে একবার দুধ-চা পানের চল আছে। সকালে দুধ-চা পান করলে বিকেলে রঙ চা মিলে। আজ সকালে আমিরা চা পান করেনি। সে হিসেবে দুই কাপ চা তার পাওনা আছে। তবে এই বিকেলবেলায় দুধ-চা পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। মাকে বলা যাবে না। আনিসাকে বলতে হবে। বড়াপা বোধহয় বাসায় নেই। সে থাকলে আর এই ভরসন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমুতে দিত না। সুর্য যখন পশ্চিমাকাশে ঝুলে পড়লেই ডাকাডাকি শুরু করে দিত। মাও ভরসন্ধ্যায় ঘুমুনো পছন্দ করে না। আজ অবশ্য তার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। বাসার ভেতরটা নীরব হয়ে আছে। বাবা প্রতিদিন এই সময়ে টিভি দেখে। শোবার ঘরের ড্রয়ারের উপর টিভি রাখা আছে। পাশের ঘরে টিভির শব্দ অনায়াসে পৌঁছে যায়। কিন্তু আজ টিভির শব্দও নেই। কী হলো? সবাই কি মুখে টেপ লাগিয়ে বসে আছে?
পাশ ফিরতেই আমিরা টের পেল, কেউ একজন তার পাশে শুয়ে আছে। তার হাতটা আগেই ওর পেটের উপর আলতো করে রাখা ছিল। আমিরা সেই হাতটা টেনে নিল কোমর অবধি। এক পা তুলে দিল তার গায়ের উপর। হাতটা আলতো ভঙ্গিতে তার গালের উপর রেখে ঘুমজড়ানো কন্ঠে বলল,
– আনিসা, এক কাপ চা খাওয়াবি?
– আনিসা উঠ! চা বানিয়ে আন।
– আনিসা!! মরার ঘুম দিছিস নাকি?
– আনিসার বাচ্চা, কথা শুনিস না কেন? এক কাপ চা-ই তো চাইছি। পোলাও-গোশত রান্না করতে বলি নাই। প্লিজ যা। তুই চা বানিয়ে আন। দুধ আছে নাকি দেখ। থাকলে দুধ-চা বানাবি। আমি তো আজকে সকালে চা খাই নাই। আমার চায়ের দুধ তো থাকার কথা। দুধ না পাইলে মাকে জিজ্ঞেস করবি।
পাশের মানুষটা ঘুমায়নি। সজাগ কিন্তু ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। আমিরার ঘুমের ঘোরেই টের পেয়েছিল তার নড়াচড়া। ঘুমটা মূলত এজন্যই ভেঙ্গেছে। আমিরার ঘুম পাতলা না। ভালোই গভীর। কিন্তু তার পাশে শুয়ে কেউ অনবরত নড়চড় করলে ঘুম পাতলা হয়। আমিরা আলতো ধাক্কা মেরে আবার ডাকল,
– আমি জানি তুই ঘুমাস নাই। মটকা মেরে শুয়ে আছিস। বদমাইশ, তুই কি মনে করছিস আমি টের পাই নাই? একটু আগেও নড়তেছিলি। যা উঠ!
মানুষটা বিছানা ছেঁড়ে উঠার বদলে আমিরার কাছে সরে এলো। ওই মুহূর্তে ওর মনে হলো, কিছু একটা ঠিক নেই। এই বিছানাটা ওর না। এই ঘরটাও আলাদা। বিছানার একটা পরিচিত ঘ্রাণ থাকে। ঘ্রাণটা অপরিচিত লাগছে। বালিশটাও নরম। মাথা এলিয়ে দিতেই দেবে গেছে ভেতরে। এমনকি শরীরের নিচে তোষকটাও তুলতুলে লাগছে। আমিরার মনে হচ্ছে, একগাদা তুলোর উপর শুয়ে আছে সে। সচকিত হলো সে। ঠিক তখন কানের কাছে পুরুষালী কন্ঠ শোনা গেল,
– ঘুম ভাঙ্গছে, বউ?
কে বউ? কার বউ? আমিরা ধড়মড়িয়ে উঠল। গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতে যাবে, ওই সময় আচানক কেউ তার মুখ চেপে ধরল। কানের কাছে শোনা গেল আবার সেই কন্ঠ,
– শসসসস, চিৎকার দিও না। ভয় পাইছ নাকি?
আমিরা সত্যিই ভয় পেয়েছে। তার বুক ধড়ফড় করছে। গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে ছিল আগেই। এখন মনে হচ্ছে গলার ভেতর কিছু একটা আটকে গেছে। দম নিতে পারছে না সে। পরক্ষণে হালকা আলো জ্বলে উঠল ঘরের ভেতর। রিফায়াত বেডসাইড টেবিলে রাখা ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়েছে। ওকে দেখার পর আমিরার বুকে দম ফিরল। এতক্ষণ তার মনে পড়ল সবটুকু্, সকাল থেকে যা যা হয়েছে। সে এখন তার নিজের বাসায় নেই। এই ঘরটা তার নয়। এই বিছানাও তার চিরপরিচিত না। রিফায়াত কীভাবে যেন বুঝল। বলল,
– পানি খাবা?
আমিরা মাথা ঝাঁকাল। পানির বোতল আর গ্লাস এই ঘরে আছে। রিফায়াতই নিয়ে এসেছে বোধহয়। গ্লাসভর্তি পানি সে আমিরার দিকে এগিয়ে দিল। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি মুখের ভেতর যেতেই আমিরার মনে হলো, এটাই বুঝি সত্যিকারের সুখ! বহুকাল সে তৃষ্ণার্ত ছিল। এই পানি তার তৃষ্ণা মিটিয়ে দিচ্ছে কানায়-কানায়। রিফায়াত বলল,
– তুমি ঠিক আছ?
আমিরা উত্তর দিল না। সে আদৌ ঠিক আছে নাকি নিজেও বলতে পারবে না। রিফায়াত আবার বলল,
– খারাপ লাগছে খুব? তুমি তো রাতে ঘুমাও নাই! সারাদিনেও কিছু খাওয়া হয় নাই তোমার। এখন চা খাওয়ার দরকার নাই। আগে ভারি কিছু খাও। আমার মনে হয়, একবারে ভাত খেয়ে ফেললেই ভালো হবে। এরপর বুয়াকে বলব, চা বানাইতে। নাকি আরেকটু ঘুমিয়ে নিবা?
শুনেই আমিরার পেটে ক্ষুধা মোচড় দিল। ক্ষুধার জন্যই কেমন অবশ লাগছে। রিফায়াত বলার পর বুঝতে পারল। সকালের নাশতার পর বারগার খাওয়া হয়েছিল। এরপর আসলেই আর কিছু খাওয়া হয়নি। দুপুরে রিফায়াত বলেছিল খাবার কেনার কথা। সে তখন রাজি হয়নি। বারগারটা বোধহয় বাসি ছিল। হজম হচ্ছিল না ঠিকঠাক। পেট ফুলে ছিল। এখন অবশ্য ফুলে নেই। হজম হয়ে গেছে বারগার। রিফায়াত ডাকল,
– আমিরা!
– হু।
– চুপ করে আছ কেন? এনি প্রবলেম?
– না। কিন্তু আপনি এখানে কেন?
রিফায়াত হাসল। বলল,
– এখানে না থাকলে আর কোথায় থাকব? আমাদের রুম তো এটাই।
– না মানে আপনার তো মামির পা ধরে বসে থাকার কথা ছিল।
রিফায়াতের মুখে আবার হাসি ফুটল। সে বলল,
– কাজ হয়ে গেছে। তোমার বুদ্ধিটা এত্ত জোশ ছিল! মামির পা ধরে বসে পড়তেই সে ঘাবড়ে গেছে একদম। বলতেছে, এই কী করিস। তুই আমার পা ধরছিস কেন? ছাড় বলতেছি। আমি কি সহজে পা ছাড়ি? কান্না-টান্না আসতেছিল না। খুব হাসি পাচ্ছিল মামির বেকায়দা অবস্থা দেখে। তাই কান্নার ভান করলাম। মামি তাতেই গলে-টলে একদম মাখন থেকে তেল হয়ে গেল।
– তারপর?
– তারপর আর কী। বলল, তুই যখন পছন্দ করছিস। আমার আর কী বলার আছে। বিয়েটা তোর। তুই সারাজীবন সংসার করবি। তোর যদি কোনো সমস্যা না থাকে, আমারও আপত্তি নাই। আমি সবসময় চাই তুই ভালো থাকবি।
– বড় খালাও এই কথা বলছিল। আপা আর দুলাভাই দুইজন দুই পা ধরে বসেছিল। খালার তখন ছেঁড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। বারবার বলে, ওই তোরা পা ছাড়! পায়ে হাত দিবি না। পা ছেঁড়ে দিয়ে এরপর কী বলবি, বল। দুলাভাই তখন পা ছেঁড়ে দিছে। কিন্তু বড়াপা হইতেছে বৃশ্চিক। ধরছে তো ধরছেই। লাগলে খালা পা অপারেশন করে কেটে ফেলুক। কিন্তু সে পা ছাড়বেই না।
রিফায়াত শব্দ করে হাসতে লাগল। বলল,
– তুমি খুব মজা করে কথা বলতে পার।
– মজা করে বললাম কোথায়। যা দেখছি, তাই বললাম।
– তাহলে তো আমাদের মিশন পুরোপুরি সাকসেসফুল। মামি অলরেডি ম্যানেজড। মামাও চলে আসছিল বাসায়। এসে দেখে মামি ঠান্ডা। লাগেজ আলমারিতে তুলে রাখছে। বাকি রইল তোমার ফ্যামিলি। মানে বড় খালা। আমার মনে হয়, তোমার বড় খালার পা আরেকবার ধরার সময় চলে আসছে। উনার পা ধরলে তোমার বাবা-মা-বোন সবাই ম্যানেজ হয়ে যাবে।
– এই তো আসল জিনিস ধরতে পারছেন। বড় খালাই হচ্ছে আসল চাবি।
– আমরা কাল সকালে উনার বাসায় যাব। তারপর শুরু হবে পা ধরা মিশন। উনি ম্যানেজ হয়ে গেলেই আমাদের সারাজীবন একসাথে থাকায় আর কোনো বাঁধা নাই।
আমিরা হাসছিল। হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। ঘুমন্ত অবস্থায় আরামদায়ক বিছানায় গড়াগড়ি দেয়ার কারণে তার চুল খুলে গেছে। এই কোঁকড়া চুলের মুল জ্বালা হচ্ছে, যেমন ফুলেফেপে থাকে, তেমনি প্রচন্ড সিল্কি। কোনো রবার-ব্যান্ড সহজে টিকতে পারে না চুলে। এজন্য আমিরা প্রতিদিন বিকেলে তেল দেয় মাথায়। গতকাল পাত্র দেখাদেখি উপলক্ষ্যে চুলে শ্যাম্পু করেছিল। এরপর আর তেল দেয়া হয়নি। আজও চুল শ্যাম্পু করা অবস্থাতেই রয়ে গেছে। ফলাফল স্বরূপ, মাথার উপর কাকের বাসা এখন বিশাল আঁকার ধারণ করেছে। আয়নার দিকে না তাকিয়েও আমিরা স্পষ্ট বুঝতে পারছে, তাকে দেখতে খুব বিশ্রি লাগছে। রিফায়াতের সামনে এভাবে বসে থাকতে তার খুব অস্বস্তিও হচ্ছিল। কিন্তু রিফায়াতকে দেখা গেল, মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এক হাত চুলে। কোকড়া চুলের উপর বোধহয় দুর্বলতা আছে রিফায়াতের। সুযোগ পেলেই সে আমিরার চুলে হাত বুলায়।
অস্বস্তি হবার আরেকটা কারণ আছে। আমিরার পরনে কলেজের জামা আর পায়জামা শুধু। ক্রসবেল্ট ঘুমুনোর সময় খুলে ফেলেছিল। সেটা এখন কোথায় আছে, কে জানে। দৃষ্টিসীমানার ভেতর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর সাথে বড় সাইজের সাদা ওড়না ছিল। ওদের কলেজ ইউনিফর্মে এই ওড়না নেই। কিন্তু শরীরের প্রতিটা বাঁক স্পষ্ট বুঝা যায় বলে মা এই ওড়না কিনে দিয়েছে। প্রতিদিন কলেজে যাবার সময় ওড়না মাথা আর শরীরে জড়ায়। কলেজে গিয়ে আবার খুলে ফেলে। মহিলা কলেজ, তাই ওড়না না পরলে খুব একটা অসুবিধে হয় না। এখন এই হালকা আলোয় সেই ওড়নার অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে রিফায়াত বসে আছে খুব কাছে।
রিফায়াত বলল,
– আবার চুপ হয়ে গেলা কেন? কী সমস্যা?
আমিরা থেমে-থেমে পালটা প্রশ্ন করল,
– সত্যি কি আমরা সারাজীবন একসাথে থাকব?
– তোমার এখনো বিশ্বাস হয় না?
– হয় কিন্তু…
– কিন্তু কী?
– ভয় লাগতেছে। আমার মনে হইতেছে, আপনার মন হয়তো ঘুরে যাবে। মনে হবে, আমি আপনার লাইফে ভুল মানুষ।
রিফায়াত আচানক আমিরাকে কাছে টেনে আনল। আমিরা শক্ত হয়ে আছে। তাকে পাশ ফেরানোর চেষ্টা করেও লাভ হলো না। রিফায়াত দুই হাতে ওভাবেই জড়িয়ে ধরল ওকে। কাঁধের উপর থুতনি রেখে প্রায় কোলের উপর নিয়ে এলো। কানের কাছে মুখ রেখে ফিসফিস করে বলল,
– ভুল মানুষ বলতে কিছু নাই, আমিরা। আমরা যাকে ভুল মনে করি, আল্লাহ কিন্তু তার সাথেই জোড়া লিখে রাখেন। আর জোড়া লিখা থাকে বলেই দুজন মানুষ একসাথে থাকে আজীবন।
আমিরার অস্বস্তি বাড়ছে। কোনোমতে বলল,
– এমন তো হতে পারে, আমাদের হয়তো বিয়ে হবার কথাই ছিল না।
– কথা না থাকলে তো বিয়ে হবেই না। তাই না?
আমিরা আর কিছু বলল না। রিফায়াত বলল,
– তুমি বেহুদা ভয় পাচ্ছ। আমি প্রমিজ করতেছি, লাইফে যা কিছু হোক, যেমনই হোক, আমরা একসাথেই থাকব।
– আর যদি কোনো কারণে একসাথে থাকা না হয়, আপনি আমাকে আপনার প্রপার্টি আর ব্যাংক ব্যালেন্সের অর্ধেক ট্রান্সফার করে দিবেন। এটাও প্রমিজ করছিলেন। মনে আছে?
রিফায়াতের হাসি চওড়া হলো। সে বলল,
– তুমি অর্ধেক নিয়ে পড়ে আছ! এটা বুঝো নাই, আমার সবকিছুই এখন তোমার। পুরোটাই তোমার!
আমিরা চোখ বড় করে তাকাল। হতবাক সুরে বলল,
– পুরোটা!
– হু।
– মানে সবকিছু আমার?
– হ্যাঁ। স-ও-ব তোমার।
– কিন্তু আপনি কীভাবে চলবেন? আমি সবটা নিয়ে নিলে আপনার অনেক অসুবিধে হয়ে যাবে। তাই না?
– হু। তা তো হবেই!
– তাহলে? কী করবেন তখন?
– এইটা এখন তোমার বিবেচনা। তোমার যদি আমার জন্য দয়া হয় মনের মধ্যে, তুমি আমাকে খুশি হয়ে যতটুকু দিবা, ততটুকুই সই!
আমিরা হেসে ফেলল এবার। তার জড়তা কেটে যাচ্ছে। রিফায়াতের সান্নিধ্যে এক ধরনের ঘোর তৈরি হচ্ছে মস্তিষ্কে। দুই হাতে রিফায়াতের গলা জড়িয়ে ধরল সে। নাকে নাক ঘষে বলল,
– এর চেয়ে ভালো, আমরা একসাথেই থাকি। সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, এইসব ভাগাভাগি না করে আমরা দুজন সবটুকু দিয়ে চলব।
ঠিক তখন দরজায় নক করার শব্দ হলো। ওপাশ থেকে বুয়ার কন্ঠ শোনা গেল,
– রিফায়াত ভাই, মামি আপনারে বুলাইছে। অক্ষনই যাইবার বলছে। হের টেম্পার হাই হইয়া যাইতাছে আবার। আপনে তো কালসাপ আইনা ঘরে ঢুকাইছেন।