তোমার নেশায় মুগ্ধ পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

0
104

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা #পর্ব:- অন্তিম পর্ব (প্রথম ভাগ)

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য🥀

” তুমি যেমন চাইছো তেমনই হবে মম। ইসহাকের সাথেই আমাদের আয়নার বিয়ে হবে।”

আকস্মিক চেনা কন্ঠ শুনে পিছনে ফেরে সবাই। দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ইভান ও মুগ্ধ। দুজনের কোলে নীল রঙের তোয়ালে তে জড়ানো দুটি ছোট্ট প্রাণ।

ওদের দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে বলে ওঠেন বুশরা বেগম ” বেটা তুমি?? মুগ্ধতা??…… বেটা তুমি মুগ্ধতা কে কোথায় পেলে?? আর এই বাচ্চারা??”
” তোমার নাতি মম।”

ইভানের কথা শুনে সবার মুখে আনন্দের ঝলক খিলে যায়। আবেগাপ্লুত বুশরা বেগম ও ইশতিয়াক সাহেব এগিয়ে এসে নাতি ডের কোলে নেন।

” ওলে বাবালে চৌধুরী সাহেব আমার নাতি গুলো কি সুন্দর দেখতে হয়ছে গো। একবারে আমার বেটার ছোটোবেলার মুখ বসানো।”
” আজকে আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে না গো বউ জান। আমার একটা নয়, দুইটা নয়, তিন তিনটা নাতি নাতনির দাদা হইছি গো।”
” বাব্বাহ ড্যাড তাহলে তো আজ আমাদের বিশাল খুশির দিন গো।” ইয়ানা হই হই করে বলে ওঠে।
“উহু উহু তাহলে আমিও একটা খুশির খবর দি??”ইনায়া বলে।
” কি খবর রে??”বুশরা বেগম বলেন।
” মম ড্যাড তোমরা খুব শীঘ্রই দ্বিতীয় বার নানা নানি হতে চলেছো।”
” কি?? সত্যি ইনায়া?” ইশা বলে ওঠে।
” হুমম বড়ো আপু।”
“আগে বলিসনি তো?”
” আসলে এই সবে এক সপ্তাহ আগেই জানতে পারলাম।”
” কংগ্রাচুলেশন ইনায়া আপু।” মুগ্ধ বলে।
” থ্যাঙ্ক ইউ ভাবী। আচ্ছা ভাবী আমাদের জুনিয়র চ্যাম্পদের নাম কি কিছু ভেবেছো?কি গো বিগ ব্রো তুমি কিচ্ছু ভাবোনি?”
” না আসলে আমার ইচ্ছা মুগ্ধই ছেলেদের নাম রাখুক।” ইভান বলে।
“কিন্তু ভাইয়া আমার একটা আবদার আছে।” ঈশান এগিয়ে এসে বলে।
” কি বল??”
” দেখো আয়নার নাম মেহেকই রেখেছে। আমি রাখতে পারিনি।তাই আমার ইচ্ছা আমি আমার এক ভাইপোর নাম রাখি। অবশ্যই যদি ভাবীর অনুমতি থাকে।”
” অনুমতির কি আছে ঈশান ভাইয়া? আপনি বলুন না কি নাম ভেবেছেন??”মুগ্ধ বলে।
” আমার বড়ো ইচ্ছা ছিল ভাবী যে আমার মেয়ে হলে নাম হবে আয়না আর ছেলে হলে নাম হবে আহান। আমার ইচ্ছা আমার এই ছোটো ভাইপোটির নাম হোক আহান আহান চৌধুরী।”
” বাহ্ দারুন সুন্দর নাম।”

” তাহলে আমার ছেলের ঘরের ছোটো নাতির নাম হলো আহান চৌধুরী। আর বড়ো নাতির??” বুশরা বেগম বলেন।
” বলো মুগ্ধ। কি নাম ভেবেছো ছেলের??” ইভান বলে।
” আদ্রিয়ান চৌধুরী। দি ইভান চৌধুরীর ছেলে আদ্রিয়ান চৌধুরী।”
” বাহ্ ভাবী দারুন। নামেই কেমন একটা হিরো হিরো ভাইব আছে।” ইয়ানা বলে ওঠে।
” তবে আমারো একটা ইচ্ছা আছে বৌমা।” ইশতিয়াক সাহেব বলেন।
” কি বাবা? বলেন না”
” আমার চ্যাম্পের জুনিয়র চ্যাম্প দেখা আমার অনেক বছরের সাধ। বলতে গেলে অনেক মুহূর্ত আমায় অপেক্ষা করতে হয়েছে ছেলের সম্পূর্ন সুখের সংসার দেখার জন্য।আমার ইচ্ছা এই ছোট্টপারা বড়ো নাতিটির ডাকনাম মুহূর্ত হোক। কি বলো কেমন হবে??”
” খুবই সুন্দর নাম বাবা।”
” তাহলে ওই কথায় রইলো। আমাদের বিগ ব্রো দি ইভান চৌধুরীর দুই পুত্রের নাম যথাক্রমে আদ্রিয়ান চৌধুরী ও আহান চৌধুরী।আর দি আদ্রিয়ান চৌধুরীর ডাক নাম হলো মুহূর্ত।” ইয়ানা বলে।

মুগ্ধের চোঁখ যায় মেহুর দিকে,মেহু সোফায় বসে আছে। মুগ্ধের চোঁখ কুঁচকে আসে। এসে থেকে মেহু একবারো এগিয়ে এসে দেখা করলো না কেনো?? মনে ভারী খটকা লাগলো মুগ্ধের। সবার চোখ এড়িয়েই এক প্রকার মেহুর পাশে গিয়ে বসে সে।

” এই মেহু কি ভাবছিস বলতো?? একবারো এগিয়ে এলি না?? বুনপোদের বুঝি কোলে নেওয়ার ইচ্ছা নেই তোর??”
” না আসলে ওই আরকি। মেয়ে কে কোলে নিয়ে আছি তো তাই আর যেতে পারিনি। তা তোর মেয়ে কে বুঝি তুই কোলে নিয়ে থাকবি?? আমাকে দিবি না?? আমিও তো দেখি আমার ছোট্ট পরীটা দেখতে কেমন হয়ছে।”

মুগ্ধ আয়না কে কোলে নিয়ে আদর করে।

” হ্যাঁ রে মেহু আমাদের আয়নার তো চোঁখ জোড়া খুবই সুন্দর হয়েছে রে। কেমন ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে আছে দেখ। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি দেখিস।আমাদের আয়না যখন বড়ো হয়ে যাবে,ওর জন্য আমাদের ছেলে খুঁজতে হবে না। ছেলে ছেলের পরিবার বাড়ি বয়ে এসে আমাদের আয়না কে নিয়ে যাবে।”
” ছেলে তো এমনিতেও খুঁজতে হবে না আপাই। শুনলে না মা তখন কি বললেন?? ইসহাকের সাথেই বিয়ে দিতে হবে আমার মেয়ের।”
” আরে বাবা তুই মায়ের কথা অত মাথায় নিচ্ছিস কেনো বলতো?? পরে ঠিক আমি মা কে বুঝিয়ে বলবো, উনি ঠিক শুনবেন দেখিস”
” সে তো তোমার কথা শুনবেই আপাই, তুমি হলে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সি ই ও এবং চৌধুরী ম্যানসনের বড়ো ছেলে দি ইভান চৌধুরীর স্ত্রী।তোমার কথা কে না শোনার সাহস দেখাবে বলোতো??”
” এভাবে কেনো বলছিস মেহু?? আমি যেমন এবাড়ির বউ, তুইও তো তেমন এবাড়ির বউ……”
” তবুও আমরা এক নয় আপাই।আমাদের গুরুত্ব ও ভূমিকা এই পরিবারে এক নয়। দেখছো না তোমার ছেলেদের পেয়ে সবাই কেমন আমার মেয়ে কে ভুলে গেছে??”
” তুই ভুল ভাবছিস মেহু….”
” থাক না আপাই। বাদ দাও।”

মেহু মেয়ে কে নিয়ে উপরে রুমে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে স্তম্ভিত নয়নে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ। এ কোন মেহু কে দেখছে সে?? ইশার কথায় ধ্যান ফেরে মুগ্ধের।

” হ্যাঁ রে ইভান তা তুই এতোদিন কোথায় ছিলি?? যখনই ফোনে কথা হতো খালি বলতি যে বাড়ি গিয়ে সব জানবি। আর মুগ্ধের খোঁজই বা কোথায় পেলি??”
” এতোদিন আমি মুগ্ধের সাথেই ছিলাম। আসলে একমাস আগেই ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরতাম কিন্তু ডাক্তার ওকে জার্নি করতে মানা করে, তাই আর আমিও রিক্স নিতে চাইনি।”
” সে খুব ভালো করেছিস। কিন্তু তুই মুগ্ধের খোঁজ পেলি কোথায়??”
” সাজিদের কাছে থেকে। আচ্ছা মম এবার আমরা রূমে যায়। অনেক টায়ার্ড লাগছে।”
” তোরা যা আমরা এখন আমাদের মুহূর্ত আর আহান কে নিয়ে খেলবো।” ইশতিয়াক সাহেব ও বুশরা বলেন নাতিদের নিয়ে ঘরের দিকে রওনা দেয়।

ওনাদের কান্ড দেখে উপস্থিত সবাই হেঁসে ফেলে।



” আচ্ছা ইভান আপনি আমাকে বলেননি তো যে আমার খোঁজ আপনাকে সাজিদ ভাইয়া দিয়েছে??”

ফ্রেশ হয়ে এসে চুল আচড়াছিলো ইভান। মুগ্ধের কথা শুনে ভুরু কুঁচকে পিছনে তাকায় সে।

” কেনো?? হঠাৎ সাজিদ ভাইয়ার কথা মনে হওয়ার কারণ কি??”
” এমনিই বললাম। কেনো বলতে পারি না??”
” না।সাজিদের শাস্তি সে পেয়ে গেছে বেইব। এক পা ভেঙে সে এখন হাসপাতালে ভর্তি। আমার Snowflake এর দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিল তার শাস্তি তবটাকে পেতেই হতো।”
” মানে??”
” সাজিদের ইচ্ছা ছিলো তুমি যদি আমায় ডিভোর্স দিতে তাহলে তারপর ও তোমায় বিয়ে করতো।”
” হ্যাঁ? আমার তো একবারোমনে হয় নাই?”
” কয়েক ঘা পরার পর তার মুখ থেকে নিজেই বেরিয়ে আসে কথাটা”

ইভান মুগ্ধের কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নেয়। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,

“তোমারো একটা শাস্তি প্রাপ্য আছে বেইব।”
” কি??”
” এই যে তুমি একবারো আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না যে তুমি প্রেগন্যান্ট যার ফলে তোমার প্রায় গোটা প্রেগন্যান্সির সময়টা তে তোমার পাশে থাকার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তাই তোমায় আবার প্রেগন্যান্ট হতে হবে বেইব। যাতে করে আমি তোমার পাশে থাকতে পারি।”
“অ্যা??”

#চলবে
#লেখিকা_রাইমা

গল্প:- #তোমার_নেশায়_মুগ্ধ
লেখিকা:- #রাইমা।#পর্ব:- আন্তিম পর্ব (শেষ ভাগ)

🥀কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমণাদের জন্য🥀

” আসবো মেহু??”

মেয়ে কে ঘুম পাড়াছিলো মেহু। মুগ্ধের ডাকে দরজার দিকে তাকায়।

” এসো আপাই।”
” কিছু কথা ছিলো।”
” বলো”
” নিচে তখন ওই কথা গুলো কেনো বললি তুই?? আমার মেহু তো এমন নয়। তোর কথা তে আমি ছোটো চাচীর রূপ খুঁজে পেয়েছি!!”
” না আপাই সেরকম কিছু না।”
” তাহলে আমায় বল কি হয়েছে তোর?? এতো মন মরা হয়ে কেনো আছিস?? নাকি এখন তোর আপাই এতোটাই পর হয়ে গেছে যে তোর মনের দুটি কথা পর্যন্ত সে জানার যোগ্য নয়? নাকি আমার ছেলেরা তির নিজের কেও নয়?”

মেহুর চোঁখের কোনায় জল জমে আসে।মেহু গিয়ে জড়িয়ে ধরে তার আপাই কে।

” আম সরি আপাই। আমি ওই ভাবে তোমায় কথা গুলো বলতে চাইনি। প্লীজ তুমি রাগ করো না।”

মুগ্ধের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে তার বোনের কপালে স্নেহ চুম্বন এঁকে দেয়।

” তাহলে কেনো বললি ওই কথা গুলো??”
” মা যে আমার মেয়ের সাথে ইসহাকের বিয়ের কথাটা বলবেন সেটা মোটেও ভাবিনি আপাই। সত্যি বলতে আমার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই ইসহাকের সাথে আয়নার বিয়ে দিতে।…. আচ্ছা আপাই আমার মতামতের কোনো দাম নেই কেনো বলোতো??”
” কে বলেছে দাম নেই?? আয়না তোর আর ঈশান ভাইয়ার মেয়ে। তোর অমতে তোর মেয়ের বিয়ে কোনো জায়গায় হবে কেনো??”
” মতামতের কথা বলছো আপাই?? ঈশান বললেন না তখন যে আমার মেয়ের নাম নাকি আমি রেখেছি, আসলে ঐ নাম মা রেখেছেন। আমার ইচ্ছা ছিলো অহনা নাম রাখার।”
” ঈশান ভাইয়া কে তুই বলিসনি??”
” কি বলবো?? আমার বলার আগেই তো ওনার মা মিথ্যা করে ওনাকে বলে দেন যে আমার পছন্দ করা নাম নাকি আয়না। তারপর আমি যখন ঈশান কে বলি উনি কি বলেন জানো??”
” কি বলেন??”
” বলেন যে মমের যখন ইছা ওই নামই থাকুক কি অসুবিধা। আমার ভয় হচ্ছে আপাই যদি আমার মেয়ের বিয়েটাও ওই ভাবেই……”
” ভরসা রাখ মেহু। তোর অমতে ইসহাকের সাথে আমাদের আয়নার বিয়ে হবে না।”

মুগ্ধের কথায় মেহু একটু স্বস্তি পাই।

” আমার বুনপোরা কোথায় আপাই??”
” ঘুমাচ্ছে।”
” আম সরি। অনেক অনেক সরি। প্লীজ ক্ষমা করে দাও। আমার কথায় তোমার কষ্ট হয়েছে না গো??”
” মোটেও না।আমি তো জানি যে আমার বোনটা এক নম্বরের পাগলী। রাগ মাথায় উঠলে তার আর কি বলছি সেই খেয়াল থাকে না।”
” সরি গো আপাই। এই দেখো কান ধরছি,আর কখনও এমন বলবো না।সরি।”
” ঠিক আছে ঠিক আছে অতো ঢং করতে হবে না যা।”
” এই আমার সোনা আপাই। লাভ ইউ।”
” পাগলী একটা। এক বাচ্চার মা হয়ে গেলি তবুও তোর বাচ্চামো গেলো না বল??”
” আর কোনোদিন যাবেও না।”

দুই বোনই খিল খিল করে হেসে ওঠে।

” আচ্ছা আপাই তোমার ডেলিভারি কবে হলো??”
” বলতে গেলে দশ দিন আগে।”
” তাহলে নয় মাস পরার আগেই তো হলো নাকি??”
” সেই দিন রাতের বেলা হঠাৎ ব্যাথা ওঠে। হাসপাতাল যেতে যেতে জল ও ভেঙে যায়। তাই ইমিডিয়েট ডেলিভারি করাতে হয়। তবে একটা কথা কি জানিস??”
” কি??”
” বলতে নেই বাচ্চা দুটো হেলথিই ছিলো। শুধু মাত্র ছোটোটাকেই যা একটুকিছু অসুবিধার জন্য আট দিন হাসপাতালে রাখতে হয়েছিলো ওজনটা ওর একটু কম ছিলো তাই।”
” যায় হোক এখন দুজনেই সুস্থ আছে এটাই অনেক।”
” হুমম। আচ্ছা মেহু ঈশান ভাইয়া কেমন আছে??”
” ঠিক আছেন। জানো আপাই আমার মনে হয় উনি সত্যিই এখন অনুতপ্ত। যখন আয়না হাসপাতালে ছিলো তখন উনি আমায় মানসিক ভাবে অনেক সাপোর্ট করেছেন।”
” তোরা সুখে থাকলেই ভালো রে মেহু। ঈশান ভাইয়া নিজের অনেক ক্ষতি করেছেন, তুইও অনেক সাফার করেছিস। এবার তোরা অনেক সুখী হ।”

মেহু উত্তরে মিষ্টি হাসি হাসে।
______________

মধ্য রাতের অন্ধকারে চারিদিক নিমজ্জিত। চতুর্দিকে নির্জনতা বিরাজমান।মেহু ঘুমাচ্ছিলো হঠাৎ পায়ে ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই চমকে ঘুম থেকে উঠে বসে সে। দেখে ঈশান তার পায়ের কাছে বসে কাঁদছে।

” কি হয়েছে আপনার?? এভাবে বসে আছেন কেনো??”

মেহুর কথায় চমকে ওঠে ঈশান।

” আপনি কাঁদছেন??”
” আমায় ক্ষমা করেছো তো তুমি মেহেক?? আমায় ছেড়ে চলে যাবে না তো??”
” এটা কি করছেন ঈশান?? পা ছাড়ুন।”
” আমার ভুল হয়ে গেছে বিশ্বাস করো। আমি জানতাম না যে তুমি নিরপরাধ ছিলে। আমি হাত জড়ো করছি।আমায় দরকার পড়লে তুমি শাস্তি দাও কিন্তু আমার সাথে থেকে শাস্তি দাও।আমায় ছেড়ে যেও না। আমি মরে যাবো মেহেক। তোমাকে ছাড়া আমি মরে যাবো।”

মেহুর চোঁখ ভিজে ওঠে।

” আমার একটু সময় চাই ঈশান। স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় চাই আমার।”
” তুমি কি তাহলে আমায় ক্ষমা করলেনা আমায় মেহেক??”
” আমি আপনাকে শেষ সুযোগ দিয়েছি ঈশান।তবে একটা কথা মনে রাখবেন যে সব কিছুর ক্ষমা হয়না। জীবনে অনেক সময় আমাদের পরিস্থিতির জন্যও অনেক কিছু মানিয়ে নিতে হয়। আমাদের মেয়ের জন্য তার মা বাবা দুজনকেই দরকার।”
” আজ আমিও তোমায় একটা কথা দিচ্ছি মেহেক, একদিন তুমি আমাকে নিশ্চয় আমায় ক্ষমা করে দেবে দেখো তুমি।”
” দেখা যাক”।





মানুষের জীবন চলমান। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সে এগিয়ে চলে। মেহু–মুগ্ধের জীবনেও আজ অতিবাহিত হয়েছে পাঁচটা বছর। এই পাঁচ বছরে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে।আজ ছোট্ট আয়নার পাঁচ বছরের জন্মদিন। অনেক জমকালো আয়োজন করা হয়েছে আজ চৌধুরী ম্যানসনে। আলোক সজ্জায় সেজে উঠেছে চারিদিক।

আয়না গালে হাত দিয়ে বসে আছে বিছানায়। পাশে সাঁজতে ব্যাস্ত মেহু।

” মাম্মাম আমি কোন ড্রেসটা পরবো? ও মাম্মাম কোনটা পরবো আমি?”
” কি হয়েছে আমার সোনা পাখিটার?এমন গোটা বিছানায় জামা ছড়িয়ে রেখেছো কেনো??” ঈশান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
” দেখো না পাপা মাম্মাম কখন থেকে খালি নিজেই সেজে যাচ্ছে,আমাকে রেডী করাচ্ছে না। আচ্ছা তুমিই বোলো বার্থডেটা তো আমার নাকি?? তাহলে আমাকে না সাজিয়ে মাম্মাম নিজেই সেজে যাচ্ছে কেনো??”
” ওরে আমার পাকা বুড়িটা রে এসো দেখি আমি তোমায় আজ তৈরী করে দিই।”
” ওকেই। কিন্তু তার আগে বলো আমার বার্থডে গিফট কি দিছো পাপা??” ঈশানের গলা জড়িয়ে বলে আয়না।
” কি চাই তোমার মা??”
” আমার একটা ট্যাব চাই”
” এই তুই ট্যাব নিবি কি রে?? ছোটো মেয়ে। ওই সব কিচ্ছু হবে না।অন্য কিছু বল।” মেহু চোঁখ রাঙিয়ে বলে মেয়ে কে।
” পাপা।”
” দেখো মা এই কথাটা কিন্তু মাম্মাম ঠিকই বলেছে। এখন তো তুমি ছোটো বলো। এখন অন্য কিছু চাও। বড়ো হলে ট্যাব পাবে।”
” তাহলে ইসহাক ভাইয়া যে বললো আমি ট্যাব ইউজ করতে পারবো। সেও তো ইউজ করে।”
” ওই হলো?দেখলে তো আমি কেনো বলি মেয়ে কে ইসহাকের সাথে মিশতে মানা করো। মেয়েটা কে কি সব শেখাচ্ছে দেখো।” মেহু বলে।
” আহা মেহু, দাঁড়াও না আমি দেখছি।”ঈশান বলে।
” মা এদিকে এসো। ইসহাক ভাইয়া তো তোমার থেকে বয়সে বড়ো তাই না?? আর তাছাড়াও সে ফ্রান্সে থাকে সেখানের ধরন আলাদা। তুমি আদ্রিয়ান ও আহান কে দেখো ওদের কি আছে ট্যাব??”
” না।……. তাহলে আমাকে একটা চকলেটের বাড়ি বানিয়ে দেবে পাপা??”
” একদম অবশ্যই। আমার বুদ্ধিমতি মা চাইবে আর আমি দেবো না?? আমি আজই অর্ডার দিচ্ছি।”
” ইয়া হুররে”

আয়না পাপার দুই গালে চুমু খেয়ে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে চলে যায়।

” মেয়ে যায় চাইবে মেয়ে কে সেটাই দিছো তো দেখবে এই করে করে ও একটা বাদর তৈরী হবে। জেদি হবে অনেক।”
” মোটেও না আমার মেয়ে অনেক বুঝদার। ও খুব ভালো মেয়ে হবে তুমি দেখো, মোটেও জেদ থাকবে না।”
” সে দেখায় যাবে।”

ঈশান মেহু কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মেহুর কানে মুখ লাগিয়ে বলে,

” কি দেখা যাবে?? আজকে তোমায় যা দেখাচ্ছে এই দেখে তো আমার দশ রাতের ঘুম উড়ে যাবে। হ্যায়ে!!”
” ধ্যাৎ নির্লজ্জ কোথাকার। ছাড়ো আমাকে যতো সব ঢং।”
” উফফফ মেহু তোমাকে লজ্জা পেলে যা লাগে না !!”
” অসভ্য। দরজা খোলা আছে মেয়ে চলে আসবে।”
” আই লাভ ইউ ”
” হয়েছে এবার ছাড়ো, কেও চলে এলে।”
” আগে উত্তরটা দাও।”
” লাভ ইউ টু। হয়ছে এবার ছাড়ো।”
” হুম”
______________

” মুগ্ধ তুমি এই ওষুধটা খেয়েছো??”
” হ্যাঁ”
” আর এইটা??”
” হ্যাঁ ইভান, এতো হইয়ো না। আমি সব ওষুধ খেয়েছি”
” ব্যাস্ত কেনো হচ্ছি বোঝোনা বুঝি?? ইউ আর সিক্স মান্থ প্রেগনেন্ট বেইব, আই হ্যাভ টু টেক কেয়ার অফ ইউ। আমি তোমার স্বামী আমি ছাড়া কে খেয়াল রাখবে শুনি??”
” উফফ বাপরে বাপ এমন করছো যেনো মনে হচ্ছে ফার্স্ট টাইম বাবা হচ্ছো। ভুলে যাও নাকি যে তোমার দুটো বাচ্চা আছে??”
” শোনো সেই বাচ্চা দুটোই থাকুক আর দশটায় থাকুক, বউ আমার একটাই। আর আমি তার কেয়ার করবো।আর তাছাড়াও ডাক্তার তোমার যত্ন করতে বলেছে।”
” বাবা না ঠিকই বলেন, ওনার চ্যাম্প একেবারে বউ পাগলা হয়েছে।”
” আমি গর্বিত আমি বউ পাগলা।”
” ঠিক আছে বুঝেছি আমি।”

ওদের কথার মাঝেই আদ্রিয়ান আর আহান রুমে প্রবেশ করে।

” পাপা পাপা আমার হেয়ারটা একটু সেট করে দাও না।” আদ্রিয়ান পাপার কাছে আবদার করে।
” মা মা তুমি আমার চশমাটা একটু পরিষ্কার করে দেবে??” আহান মায়ের কাছে আবদার করে।

” শুনেছ তোমার বড়ো ছেলের কথা। এই আদ্র তুই ছোটো ছেলে তোর আবার কিসের চুল সেট করা রে?? ভাই কে দেখ কতোটা নরমাল সেজেছে।”
” ওহ মা আমি পাপার মতো সাজবো প্লীজ তুমি না করো না। আই রিকুয়েস্ট।” আদ্র বলে।
” একদম আমার ছেলে আমার মতো সাজবে। অলওয়েস লুকিং পারফেক্ট। আহান আয় তোকেও……”
” একবারে না। একটাকে তোমার মত বানাচ্ছ বানাও আরেকটা কে টানবে না। আহান কে আমি আমার মনের মতো সাজাবো।”
” হ্যাঁ আমি মায়ের মতে সাজবো।” আহান বলে।
” আর আমি পাপার মতে।”

ছেলেদের কথায় মুগ্ধ আর ইভান দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠে।
_______________

” ছোট্ট পরী এটা তোমার জন্য।”

এক গুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দেয় ইসহাক আয়নার দিকে।

” তুমি আমায় লাল গোলাপ কেনো দিছো ইসহাক ভাইয়া?? লাল গোলাপ তো হাজবেন্ডরা ওয়াইফদের দেয়।”
” হ্যাঁ তো তুমিও তো আমার হবু ওয়াইফ। তাই তোমায় দেওয়ায় যায়।”
” হবু ওয়াইফ মানে??”
” হ্যাঁ নানি তো তাই বলছিলো মম কে আমি শুনেছি।”
” না আমি তোমায় বিয়ে করবো না। না না না।”

আয়না কাঁদতে কাঁদতে ছুটে সেখান থেকে চলে যায়।

” এই আয়না কাঁদছিস কেনো??”
” দেখ না আহান ইসহাক ভাইয়া বলছে আমি নাকি ওনার হবু বউ। দাদি কে নাকি বলতে শুনেছে। আমি বিয়ে করবো না।”
” আরে ধুর বোকা তুই সামান্য এই কথায় কাঁদছিস কেনো রে?? আমি আছি তো তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড।আমি তোর বিয়ে ইসহাক ভাইয়ার সাথে হতেই দেবো না।”
” সত্যি??”
” সত্যি। এই নে চকলেট খা।”
” থ্যাঙ্কু আহান। ইউ আর দা বেষ্ট।”

আহান আর আয়না কে দুর থেকে দেখছিলো মেহু। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ।

” কি দেখছিস মেহু??”
” দেখছি আমাদের আয়না আর আহানের বন্ডিংটা কতো স্ট্রং না?? একেবারে আমাদের মত তাই না আপাই??”
” হুমম। তা তো বটেই। আসলে দুটোই খুব শান্ত তো তাই।”
” আচ্ছা আপাই এইবার যদি আবার তোমার ছেলে হয়??”
” বলিস না বোন আমার। আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে চাই। ‘অহনা’ নাম হবে তার।”
” আপাই…… আমার পছন্দ করা নামটা তোমার মনে আছে?? এতো ভালোবাসো তুমি আমায়??”
” আমার দশটা নয় পাঁচটা নয় একটা মাএ ছোটো বোন তোকে ভালোবাসবো না তো কাকে বাসবো শুনি?? হ্যাঁ রে মেহু তুই সুখি তো??”
” খুব আপাই। ঈশান সত্যিই আমাকে অনেক ভালবাসে। জানো আপাই আমি যখন ওনার কাছে সময় চেয়েছিলাম উনি একবারো না করেননি। সেদিন থেকে প্রায় দেড় বছর উনি কখনও একবারের জন্যও আমাকে কোনো ভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা পর্যন্ত করেননি। আমি ওনার সাথে হাজারো খারাপ ব্যবহার করেছি ঘরে বাইরে সব জায়গায়, উনি চুপচাপ সহ্য করেছেন। ওনাকে তো কতোবার আমি চর পর্যন্ত মেরেছি। উনি আমার আমার কাছে ক্ষমা পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। ওনার অনুতপ্ততা আমার মনে ওনার জন্য ভালবাসা সৃষ্টি হতে বাধ্য করেছে।”

ওদের কথার মাঝেই ঈশান ইভান এসে দাঁড়ায় ওদের পাশে।

” কি গল্প হচ্ছে ভাবী দুই বোনে??”
” এই যে তেমন কিচ্ছুই না ।”
” আচ্ছা মুগ্ধ আফরা( ইনায়ার মেয়ে), আবিদ (ইয়ানার ছেলে), আদ্র, আহান, আয়না আর ইসহাক সব বাচ্চারা স্টেজে পৌঁছে গেছে কেক কাটার জন্য। চলো তোমরা সবাই।”

কেক কাটার সময় চারি দিকে হই হই রব। প্রতিটা মানুষের মুখে হাসি বিদ্যমান। আজ জীবনের হাজারো চড়াই উতরাই পেরিয়ে যে যার জীবনে সুখী। এই জন্যেই হয়তো বলে জীবনে কখনোও হেরে যেতে নেই। আজ যদি নির্মল সেদিন জীবনের কাছে হেরে না যেতো তাহলে হয়তো আজ সেও বাকীদের মতো সুখের ঠিকানা খুঁজে পেতো।

কিছুক্ষণ পর,

” আচ্ছা বৌমা তোমাদের জীবন যুদ্ধ না হয় শেষ হলো, এবার আমার নাতি নাতনিদের কবে হবে সেটাই হচ্ছে দেখার।”ইশতিয়াক সাহেব মুগ্ধের পাশে এসে বসেন।
” যা হবে ভালোর জন্যই হবে বাবা। যুদ্ধে যাই হোক না কেনো উপসংহারে আনন্দ থাকলেই হলো। ওই যে কথায় আছে না যার শেষ ভালো তার সব ভালো।

(শব্দ সংখ্যা –১৯০৩)

সমাপ্ত ✨

#লেখিকা_রাইমা