তোমার সনে বেঁধেছি আমারও প্রাণ পর্ব-১০+১১

0
27

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১০

নিজের কেবিনে গাল হাত দিয়ে বসে আছে তনয়া। একটু বাদে বাদে চোখ দুটো জুড়িয়ে আসছে তাঁর। চোখ বুজতেই সকালের সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্ত ভেসে উঠে। আঁতকে উঠে সে। চোখ মেলে এদিক ওদিক ফিরে তাকায়। কি আশ্চর্য! কি অ*দ্ভুত হচ্ছে তার মন অনূভুতি তার মন জুড়ে আনচান করছে। পানির বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি খেল। পেছন থেকে কেউ হাত রাখতেই চমকে উঠল সে। তন্ময় শুধায়, “কি হলো? ভ*য় পেলি নাকি?”

তনয়া হেসে উঠে। তাঁর হাসি টুকু এলোমেলো। তন্ময় এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত বুলায়। মুচকি হেসে বলে, “বড্ড ধক*ল যাচ্ছে না তোর উপর। হ্যাঁ আমি বুঝতে পারছি।গত কয়েকদিন ধরে স্যারের পিছন পিছন ছোটাছুটি এরপর আবার কাজ তো আছেই। রোজ ফ্যাক্টরি ভিজিট করা কম কিছু না।”
তাঁর নরম আলতো হাতের ছোঁয়া পেয়ে চোখ বুজে নেয় তনয়া। শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বুজে। কিঞ্চিত হেসে উঠে বলে, “ঠিক আছি আমি। তোর এতোটুকু চিন্তা আমার জন্য য*থেষ্ট তন্ময়।”

তন্ময় হেসে উঠে। চেয়ার টেনে এগিয়ে বসে পড়ে। তনয়ার হাতটা আলতো করে ছুয়ে বলে, “আজ তাড়াতাড়ি বের হবি?”
“আজ! অসম্ভব! গতকালই তো ছুটি ছিল। আজ কি দিবে?”
“হ্যাঁ, তাই তো। নাহলে ঘুরতে যাওয়া যেত বল।”
“ছাড় ওসব। তুই বল! গতকালই তো আংকেলের সাথে দেখা করে এলি। কি বলল?”
তন্ময় হাসল। নরম গলায় বলল, “বাবার শ*রীরটা ভালো না। আমায় দেখে তো মা কেঁ*দে একাকার। খুব জোরাজুরি করছে তাদের কাছে থাকার জন্য।”
“ঠিকই তো করছে। তুই ছাড়া আর কে আছে বল। যখন জীবনের শে*ষ মুহূর্তে আমরা চলে আসি তখন একজোড়া আপন হাতের খুব দরকার হয় বুঝলি। তো যাচ্ছিস কবে?”
তন্ময় গালভর্তি হেসে বলল, “খুব জলদি। তোকেও নিয়ে যাবো। মা জিজ্ঞেস করছিলো তোর কথা।”
“তুই গেলে আমি তো যাবোই। ইশ্ কতো বছর ধরে আন্টির হাতের রান্না খাই না বল তো!”
খিলখিলিয়ে হেসে উঠল দুজন। সবে মাত্র অফিসে এলো শেহনেওয়াজ উ*ষ্ণ চৌধুরী। কেবিনে ঢুকতে গিয়ে সানগ্লাসের আড়ালে তী*ক্ষ্ম চোখজোড়া দৃ*ষ্টিপাত তাদের উপর। তন্ময় টের পেয়ে উঠে দাঁড়াল। মিনমিন স্বরে বলে উঠল, “বস চলে এসেছে। কাজে লেগে পড়!”

উষ্ণ দ্রুত কেবিনে ঢুকে গেল। দরজা বন্ধ করেই আড়ালে ফের তনয়ার দিকে নজর দিল। তন্ময় চলে গেছে। তনয়া নিজের চেয়ারের উপর আরাম করে বসে আছে। আজ সকালের ঘটনা মনে পড়তেই মুচকি হাসল সে। চোখের সানগ্লাস খুলে রেখে চেয়ারে বসে পড়ল। তনয়ার ডাক পড়তে সময় লাগল না।

ক্লা*ন্ত দেহ নিয়ে তনয়া ফের এসে হাজির হলো স্যারের রুমে। উষ্ণ স্যার কয়েকটা ফাইল তাঁর দিকে তাক করে বলল,‌ “এখানে অনেক কিছুই একটু গোলমেলে লাগছে মিস তনয়া। বিশেষ করে প্রোডাক্টের প্যাকেজিং!”
“স্যার আপনিই তো বললেন আমাদের গ্রোসারী আইটেম গুলোর‌ প্যাকেজিং বদলাতে চান। তো আমি আপনার পছন্দমতো কিছু ডিজাইন আপনার সামনে রেখেছি!”
উষ্ণ বাঁ*কা হাসল। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল, “আমার পছন্দমতো মানে? আপনি কি করে জানেন আমার পছন্দ কি?”

তনয়া চুপ করে গেল। শুরু হলো ভা*দাইম্যা*র ভাদাইম্যা*র গিরি। সারাদিন তো কোনো কাজ করবো না শুধু ওখানে বসে অর্ডার দিবো। তাই আলতু ফালতু কাজ। দরকার নেই এমন কাজ করার জন্য লোকটা কি বসে আছে। তনয়া হাসার চেষ্টা করল। মলিন কণ্ঠে বিনয়ের সাথে বলল, “স্যার আমার মনে হলো আপনার পছন্দ হতে পারে..

“না আমার পছন্দ হয়নি মিস তনয়া। এগুলো খুব পুরনো। আমার নতুন কিছু চাই। আপনি নতুন কিছু দেখান আমায়! তনয়া নিজের রা*গ সংযত করল। অন্যের হয়ে কাজ করতে গেলে এমন টুকটাক কথা তো শুনতেই হবে। কিছু করার নেই। ঠোঁটের রেখা টেনে হাসল। নরম গলায় বলল, “জি স্যার। আমি দেখছি!”

ফাইল হাতে নিয়ে গাল ভর্তি হাসি নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। বের হয়ে আসতেই হাসি মিলিয়ে গেলো। ইচ্ছে করছে ফাইল গুলো স্যারের মাথায় গিয়ে রেখে আসতে। মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইল। ম্যানেজার সাহেব তাকে দেখতে পেয়ে কিঞ্চিত হেসে বলল, “কি ব্যাপার? বড্ড য*ন্ত্রণায় আছো মনে হচ্ছে?”
“শুধু য*ন্ত্রণা! স্যার আপনিই দেখুন তো এগুলো কোথায় খা*রাপ!”
ফাইল গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল সে। ম্যানেজার সাহেব হেসে বললেন, “আরে রাখো রাখো। তোমার কাজ আমার জানা আছে।”
“বলে কি না আমি কাজ ভালো করে করি না। কাজে নাকি আমার মন নেই। ফাঁ*কি*বাজ আমি! আপনিই বলুন স্যার কখনো দেখেছেন আমায় ফাঁ*কি*বাজ করতে!”
ম্যানেজার সাহেবের হাসির রেখা দীর্ঘ দিল। তিনি বললেন, “আমাদের কাজই এটা তনয়া। তাদের মনমতো কাজ করাই আমাদের দায়িত্ব। পছন্দ না হলে অভি*যোগ করার নিয়ম নেই।”
তনয়া বুকভর্তি হ’তা’শা নিয়ে মাথা নাড়ল। স্যার ভুল কিছু বলেনি। অভি*যোগ করার সুযোগ আমাদের নেই। নতুন উদ্যমে আবারো নিজের টেবিলে এসে বসল সে। আগের ডিজাইন গুলো দেখে নিয়ে নতুন ভাবে ডিজাইন করতে বসল। ব্যাপারটা চ্যা*লে*ঞ্জের ছিল। কিন্তু সে পেরে উঠল। পুরো লাঞ্চের সময়টুকু কাজ করে কাটাতে হয়েছে তার। তন্ময় এসে লাঞ্চের জন্য সাধার পরেও লাঞ্চ করতে গেলো না। মাথায় রা*গ চেপে বসেছে। যেভাবেই হোক, এবার আর ভা*দাই*ম্যা বসের অভিযোগ সে শুনবে না। কোনভাবেই না!

বিকেলের দিকে আবারো তার কেবিনে কড়া নাড়ল তনয়া। উষ্ণ স্যার অনুমতি পেতেই ভেতরে প্রবেশ করল সে। উষ্ণ চৌধুরী তখন বিরাট ব্যস্ত। সামনে বোঝা বোঝা ফাইল এদিকে ল্যাপটপ খোলা। একবার এদিকে চোখ বুলায় তো আরেকবার এদিকে। তনয়া মলিন স্বরে বলল, “স্যার ডিজাইন গুলো!”
উষ্ণ চৌধুরী হাতের ইশারায় তাকে কাছে ডাকল।‌ তনয়া বুঝতে পেরে এগিয়ে এলো। স্যারের পাশে দাঁড়িয়ে ডিজাইন গুলো আবারো দেখাচ্ছে সে। উষ্ণ একদৃষ্টিতে তার ডিজাইন গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। তনয়া কথা বলছে তার কানের কাছে। কথা গুলো কানে বেজে যাচ্ছে। দৃষ্টি এদিকে তো মন অন্যদিকে। হাত গুলো মু*ষ্টিবদ্ধ করে অনুভূতি চেপে রাখার অদ্ভু*ত প্রয়াস করল। একবার আড়চোখে ফিরে তাকাল। শুভদৃষ্টি প্রায় হতেই যাচ্ছিল। উষ্ণ তৎক্ষণাৎ মুখ ফিরিয়ে বলল, “ঠিক আছে ফাইনাল করে দিন!”

মুখ ফেরার সাথে সাথে তার ঝুটি করা চুল গুলো এসে বারি খেলো তনয়া উগু*জ*ট। র চোখে মুখে। তনয়া চোখ মুখ বন্ধ করে হ’ক’চ’কিয়ে উঠল। হ্যাঁ এটাই বাকি ছিলো। কিছু তো ঠিক করে দেখলোই না এখন বলছে ফাইনাল করে দাও। দুপুরের লাঞ্চের বদলে এখন চুলের বা*রি খেতে হচ্ছে। গুনগুন শব্দ পেয়ে উষ্ণ পিছন ফিরে বলল, “কোনো সমস্যা মিস তনয়া?”
“জি স্যার। আপনার বিড়ালের লেজের মতো চুলগুলো আমার মুখে এসে লাগছে!”
“এক্স*কিউজ মি?”
“কিছু না। আমি এটা ফাইনাল করে দিচ্ছি। আসছি স্যার!”
তাড়াহুড়ো করে চলে গেল মিস তনয়া। উষ্ণ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়াল। আয়নার সামনে ঘুরে ফিরে নিজের চুলগুলো দেখতে লাগল। এগুলো বিড়ালের লেজের মতো মনে হয় তার কাছে। কি আশ্চর্য! এতো সুন্দর চুলগুলো শেষে কি না বিড়ালের চুল! বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল উষ্ণ!

দুপুরের লাঞ্চ সারতে হচ্ছে বিকেলে। ক্যান্টিনের এক কোণে একা বসে তনয়া। লাঞ্চ আজ বাসা থেকেই নিয়ে এসেছিলো। লাঞ্চ বক্স খুলে একা খেতে বসল। সামনে চেয়ার টেনে বসল কেউ। তাকে দেখতে পেয়ে মৃদু হাসল সে। তন্ময় পেটে হাত রেখে বলল, “অনেক ক্ষুধা লেগেছে তনু!“
“বসে ছিলি কেন? খেয়ে নিলেই তো পারতি?”
“এতোদিনে কখনো একা লাঞ্চ করেছি আমি? তোকে ছাড়া আমার লাঞ্চ জমে না তনু। নে শুরু কর। ১৫ মিনিটের সময় নিয়ে এসেছি।”
তনয়া হেসে উঠল। এই যে, এতো খানি এ*ফোর্ড, এতোখানি গুরুত্ব দেওয়া এগুলো কি সবাই পারে? সব বন্ধুত্বে কি এমন হয়? জানে না সে! বন্ধু সংখ্যা বরাবরই তার কম। যাও আছে ঠিক করে যোগাযোগ নেই। কিন্তু তন্ময় তার জন্যে যতখানি করে ততোটুকুই তার মনে সু*প্ত বাসনার জাগান দেয়। তনয়া মিটিমিটি হাসল। সেই হাসি তন্ময়ের চোখের আড়াল হলেও উষ্ণ স্যারের চোখের আড়াল হলো না। উষ্ণের তী*ক্ষ্ম সূ*ক্ষ্ম দৃ*ষ্টি তনয়ার উপর। সেও তো এসেছিলো কিন্তু আগাতে পারল না। বার বারই কি তাকে এভাবে পিছিয়ে যেতে হবে? আর কতো পিছাবে সে। না! এখন আর না। বহু বছর পরে নিজের কা*ঙ্খিত ল*ক্ষ্যে এসে পৌঁছেছে সে। এখান থেকে পিছানোর পথ নেই। সে পারবে না! উষ্ণ চৌধুরী হা*রতে শিখেনি। যখন এই পথে নেমেছে পথের শেষ অবধি যাওয়াই তার লক্ষ্য। তনয়া কে আ*মৃ*ত্যু ভালোবাসাই এখন তার লক্ষ্য। তাকে নিজের করে পাবার এই যু*দ্ধে বিজয়ী কেবল সে! আর কেউ না!

#চলবে….

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১১

আজ সকাল থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে। বাইরের আবহাওয়া দারুণ। একটু শীত শীত করছে। আকাশজুড়ে ঘন কা*লো মেঘের আনাগোনা। গতরাতে ভারী বর্ষণে রাস্তায় অবস্থা মা*রা*ত্মক খা*রা*প। কিন্তু ভোরের পর এখন অবধি বৃষ্টি হয়নি। হবে কি না সন্দেহ? মেঘ তো আছেই। যদি কেটে যায় তখন? অফিসে এসির মধ্যে থেকে যেন শীত আরো বেড়ে যাচ্ছে। এদের বলে এসি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। নাহলে একটু পরেই যে জমে যাবে। পিটপিট চোখের পাতা ফেলে জানালা দিয়ে বাইরের আকাশ দেখছে। বৃষ্টি কি তার পছন্দ? কখনো তো ভাবা হলো না। বৃষ্টি সুখকর না হলেও তাঁর কাছে বন্ধুর চেয়ে কম নয়। বর্ষণের প্রতিটা ফোঁটার সাথে তাঁর অ*শ্রু জুড়ে যায়। হৃদয়ের ভা*র নেমে যায়। নিজেকে হালকা মনে হয়। মেঘের গ*র্জনে মনে হয় আজ কেবল তাঁর একার মন খারাপ নেই। কেউ তো আছে!

চোখাচোখি হলো উষ্ণ স্যারের সেক্রেটারি সাথে। যাক! ফাইনালি সে চলে এসেছে। আজ নিজেকে মুক্ত মনে হচ্ছে তনয়ার। চট করে টেবিল ছেড়ে উঠে এগিয়ে গেল। সেক্রেটারি তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল সে। হালচাল জিজ্ঞেস করে নিল। কিছু কাজের দায়িত্ব এবার তাঁর কাধ থেকে নেমে যাবে। সেগুলোও বুঝিয়ে দিতে হবে। তনয়া ফাইল গুলো তার হাতে দিয়ে আলোচনা করছে। ভীষণ কাজের মেয়েটা। নরম, বিনয়ী, সুন্দরী! সেক্রেটারি জেএস কান পেতে শুনছে ঠিকই কিন্তু মনে তার অন্য চিন্তা ভাবনা। স্যার আদৌও কি ভাবছে তনয়াকে নিয়ে। যদিও এসব নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা সাজে না। সে তো হুকুমের গো*লা*ম!

উষ্ণ স্যার চলে এসেছে। তার আসাতেই কেমন উষ্ণ উষ্ণ ভাব চারদিকে। নিজের কেবিনে ঢুকার আগে একবার বুঝি আড়চোখে তাকাল এদিকে। সেক্রেটারি জেএস এবার কাগজপত্র নিয়ে মাথা দুলিয়ে বলল, “সব বুঝেছি। এবার আমি আসি। আবারো ধন্যবাদ তোমায় তনয়া!”

“নট ম্যানশন!”

একগাল হাসল মেয়েটা। মেয়েটার হাসিও তার মতো কোমল। জেএস এবার তড়িঘড়ি করে স্যারের রুমে ঢুকে গেল। তনয়া যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। যাক বাবা বাঁচা গেছে। একটু উঁকিঝুঁকি ওদিকে দূরের টেবিলে দেখার চেষ্টা করল। তন্ময় কি এখনো আসেনি?

রোজকার মতোই আজও তনয়া আর তন্ময় একসাথে লাঞ্চ করতে বসেছে। তনয়া সকালে উঠে খিচুরি আর মুরগির মাংস রান্না করেছে। তন্ময়কে আজ আর নিজের হাতে রান্না খাওয়াবে। বহু দিনের শখ ছিলো যে। তন্ময় খাবার চেখে দেখল। চোখ বন্ধ করে বলল। “উফ! তোর হাতের রান্না, পুরো স্ব’র্গী’য় খাবার তনয়া। যেই ভাগ্যবান পাবে না তোকে মাথায় করে রাখবে। মিলিয়ে নিস!”

“আমি তো এখনো একজনের মাথায় চড়ে নাচছি!”

তন্ময় হেসে বলল, “হ্যাঁ, আমার মাথায় তো! তবে যাই বলিস। খিচুড়ি টা যা হয়েছে না। রোজ এভাবে আমার জন্য রেঁধে আনতে পারিস না।”

“নিজের বউ পেয়েছিস নাকি আমায়?”

তন্ময়ের হাসি মুখে লেগে রইল তবে কণ্ঠস্বর যেন পাল্টে গেল। বলল, “আর বউ! ভালোবাসা শব্দটা এখন আমার কাছে মূল্যহীন। এখন আর ভালোবাসায় আমি বিশ্বাসী নই তনু।”

তনয়ার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। প্রশ্নটা করা বুঝি ঠিক হলো না। কথা ঘুরিয়ে বলল, “আন্টির কথা বল। কি খবর ওখানে? সবাই খুব খুশি তাই না।”

তন্ময়ের মুখের হাসি এবার পুরোপুরি মিলিয়ে গেল। মিনমিন শব্দে বলল, “মা‌ বুঝলি তো বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে চাইছে।”

“কার তোর?”

“মা বুঝতে চাইছে না। আমি পারব না এসব করতে। কি দরকার শুধু শুধু আরেকটা জীবন ন*ষ্ট করার। এতো অধিকার কি আমার আছে।”

বুকের মধ্যে যেন পাথর চা*পা দিল। হা*হা*কার হচ্ছে ভেতরে। অসহায়, অ*সহ্য লাগছে। বলতে ইচ্ছে করছে, “আমায় বিয়ে করে নে তন্ময়। আমি সত্যিই তোকে সুখী রাখব। সত্যি বলছি। আমি যে এখনো তোর পথ চেয়ে আছি। আচ্ছা আমি আবারও হা*রি*য়ে ফেলব না তো তোকে।”

হাসার চেষ্টা করল। মেয়েদের বুক ফা*টে তো মুখ ফা*টে না। অবলীলায় বলে উঠল, “কি বলছিস এসব? সে মুড অন করতে পারলে তুই কেন পারবি না। সেই অধিকার কি তোর নেই।”

“তুই বুঝতে পারছিস না। ভালোবাসিস নি তো কখনো কাউকে বুঝবি কি করে বল!”

তনয়া খিলখিলিয়ে হাসল। হাসতে হাসতে তার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানিও গড়িয়ে পড়ল। তন্ময় বড্ড বি*র*ক্ত হয়ে বলল, “আমি এমন কি বললাম? হাসছিস কেন?”

“কিছু না। খাবার খা! দেরি হয়ে যাচ্ছে। তুই এমন ভাবে বলছিস যেন আর কটা দিনই আছে তোর কাছে। পুরো জীবনটা পড়ে আছে। এখনই হা*র মেনে যাবি!”

“দরকার পড়লে বাকি জীবনটা একাই কাটাবো। সে নয় তো কেউ নয়!”

তনয়া বিমুগ্ধ হয়ে তার দিকে ফিরল। মনে মনে আওড়ালো, “বেশ তবে আমিও!”

দূর থেকে বেশ কিছুক্ষণ তাদের দিকে চেয়ে থেকে উষ্ণ পা বাড়াল। দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে লম্বা দেহটা সোজা করে হাসছে। তার দৃষ্টি সামনের দিকে। প্রখর দৃষ্টি একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে যাচ্ছে। মানুষ বড় বিচিত্র জীব। এদের মন বোঝা দায়। এই যেমন এখন নিজেকেই বুঝতে পারছে না সে। আচ্ছা সে কি মানুষের থেকে ধীরে ধীরে প*শু*র মতো হয়ে যাচ্ছে! হতে পারবে কি আদৌও। হঠাৎ থেমে গেল। ভ্রু কুঁচকে কিছুটা আন্দাজ করে খোলা দরজার দিকে পা বাড়ালো। জেএস দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। উষ্ণ বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথাবার্তা শুনল। ভুল কিছু শুনেনি। আন্দাজ তবে মি*থ্যে নয়। তাদের কথাবার্তার বুঝি সমাপ্তি হতে চলেছে। উষ্ণ চৌধুরী এগিয়ে আসছে। জেএস বুঝি টের পায়নি। ফোনটা কেটে নিতেই ছো মেরে উষ্ণ চৌধুরী ফোনটা নিয়ে নিল। জেএস চমকে গেল। আ*ত্মা বুঝি বেরিয়ে যায়। উষ্ণ চৌধুরী মুচকি হেসে তার ঘাড়ে হাত রেখে ফোনের কললিস্ট ঘেঁটে দেখল। অতঃপর তী*ক্ষ্ম দৃষ্টিপাত করে বলল, “ধোঁ*কা দিচ্ছ আমায় জেএস!” জেএস স্থি*র হয়ে চেয়ে আছে। তার মস্তি*ষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। শুকনো ঢোক গিলল সে।

উষ্ণ গাড়ি স্টার্ট করলো। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো। দ্রুত গতিতে গাড়ি চলছে। শক্ত হাতে গাড়ির হ্যান্ডেল চেপে ধরে আছে উষ্ণ। রা*গে নাক ফুলিয়ে রেখেছে সে। তী*ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জেএস এর দিকে তাকাল। সে তট*স্থ হয়ে তাকিয়ে আছে। ভয়ে তার পা মাটিতে জমে গেছে। একবিন্দু নড়তে পারছে না। গাড়ি ধেয়ে আসছে তার দিকে। ভ*য়ে চোখ বন্ধ করে নিল। ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল। দ্রুত ছুটে আসা গাড়ি নিমিষেই থেমে গেল। জেএস চোখ মেলে তাকিয়ে মুখ খুলে শ্বাস নিচ্ছে। গাড়ি থেমে গেছে! চারদিক নিস্তব্ধ নিরব! কা*লো এই আঁধারে কেবল গাড়ির আলোয় পড়া জেএস এর আ*তং*কিত মুখখানি দেখা যাচ্ছে। বেচারা ভীষণ ভ*য় পেয়ে গেছে। ভ*য়ে তার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। শেহনেওয়াজ উষ্ণ চৌধুরী গাড়ি থেকে নামল। সুটের মাঝের বোতাম টুকু আটকে জেএস এর দিকে ফিরল। জেএস তখনো ভ*য়ে তটস্থ। তার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। সে হাঁফাচ্ছে। সামনে দাঁড়ানো লম্বা ব্যক্তিটিকে আ*জ*রাইল থেকে কম কিছু মনে হচ্ছে না তার। প্রাণ বুঝি আজ গেল। উষ্ণ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে জেএস এর চারদিকে ঘুরতে লাগল। সে একটু পরপর শুকনো ঢোক গিলছে। বড্ড পিপাসা পেয়েছে তার। উষ্ণ চৌধুরী আচমকা তার দিকে ঝুঁকে গেল। চমকে উঠল জেএস। উষ্ণ চৌধুরী হেসে বলল, “এভাবে আমার পিছন থেকে ধোঁকা দিলে জেএস! কি ভেবেছো আমি জানতে পারব না?”

থতমত খেয়ে গেল জেএস। কথা বলতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে তার। কম্পিত স্বরে বলে উঠল, “স্যার, বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি।”

উষ্ণ চৌধুরী পিছিয়ে গেল। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বলল, “তোমাকে তো বিশ্বস্ত ভেবেছিলাম।”

জেএস তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াল। চোখ নামিয়ে বলতে লাগল, “আমি সত্যিই কিছু করিনি স্যার।”

ফোনটা বেজে উঠলো আচমকা। জেএস আত্মা সুদ্ধ কেঁপে উঠলো। উষ্ণ চৌধুরী হেসে বলল, “ফোনটা দাও!”

ভ*য়ে ভ*য়ে ফোনটা বের করল সে। স্ক্রিনের উপর নামটা দেখেই তার কলিজার পানি শুকিয়ে গেল। হাতটা কাঁপছে। ফোনটা বাড়িয়ে দেবার সাহস জুগাতে পারছে না। উষ্ণ চৌধুরী ছিনিয়ে নিল। স্ক্রিনের উপর নিজের বাবার নাম্বারটা দেখে মুচকি হাসল সে। আকস্মিক এসে জেএস এর গলায় হাত রাখল। বেচারা মরিয়া হয়ে উঠল। উষ্ণ চৌধুরী ফোনটা তার সামনে ধরে বলল, “এভাবে ধোঁকা দিচ্ছিলে আমায়! আমার সব ইনফরমেশন নিজের বস কে দিয়ে বড্ড বিশ্বস্ত সাজা হচ্ছে। তুমি কি ভু*লে গেছো? কোম্পানির মালিক এখন কে?”

জেএস তৎক্ষণাৎ তার পা ধরে বসে পড়ল। কাকুতিমিনতি করতে লাগল। কিন্তু উষ্ণের উপর তার ছিটেফোঁটাও পড়ল না। সে মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। চাঁদ কে আজ বড়ই বি*ষ*ণ্ণ দেখাচ্ছে। চাঁদ ও কি তার মনের কথা টের পেয়ে বুঝি। এমন হয় কখনো? তার জন্য আদৌও কারো চিন্তাভাবনা হবে? কেউ কি আছে তার? কেউ নেই তো! কখনো মনে হয়নি আপন বলেও পৃথিবীতে কেউ আছে। সবাই সবাইকে নিয়ে ভাবে, তাদের ইচ্ছাই বড়! কেউ তো তাকে জিজ্ঞেস করেনি, “উষ্ণ, তোমার ইচ্ছে কি?”

উষ্ণ! নামটা মায়ের দেওয়া ছিলো। অথচ মায়ের উষ্ণতার ছোঁয়া আজ অবধি কখনো পায়নি সে। হাতের ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। শক্ত করে চেপে ধরল সেটা। চোখ ছোট ছোট করে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল। দাঁত কিড়মিড় হচ্ছে। রা*গ হচ্ছে ভীষণ। তবুও ঠান্ডা গলায় বলল, “কতোটুকু জানে সে?”

কাঁদতে কাঁদতে জেএস এর অবস্থা খা*রাপ। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “তনয়া ম্যামের কথা এখনো কিছু বলিনি। স্যার কিছুদিন আগেই আমায়…

পুরোটা শোনার ইচ্ছা ছিলো না। ফোনটা ছুঁড়ে ফেলল। কড়া গলায় শাসিয়ে বলল, “সেটা যেন না জানে। যতটুকু আমি জানাতে বলব ঠিক ততোটুকুই জানবে। নাহলে এরপর তোমার এক মাসের ছুটি কনফার্ম! হসপিটালের বেডে গিয়ে দিন গুনো তখন!”

জেএস পা ছেড়ে দিল। উষ্ণ চৌধুরী হনহন করে গাড়িতে এসে বসল। গাড়ি স্টার্ট করে এগিয়ে চলল দ্রুত গতিতে। ফোনটা তখনো রাস্তার এক ধারে বেজে যাচ্ছে। জেএস গিয়ে তুলল সেটা।

.

উষ্ণের গাড়ি এসে থামল রাস্তার এদিকে। রাত তখন অনেক গভীর। দু একটা মানুষজন ছাড়া রাস্তায় কেউ নেই। এই দু একজন এসে আবার উষ্ণের কাছে কিছু চাইলো খাবার জন্য। টাকা হাতে পেতেই গালভর্তি হাসল তারা। বি*শ্রী হাসি তাদের! এগুলো রাস্তায় থাকা লোকজন। সারাক্ষণ কেবল রাস্তার ধারেই পড়ে থাকে। লোকজনের কাছে ভিক্ষা করে খায়। উষ্ণের গাড়ি এসে থামতেই তারা ছুটে এসেছিলো টাকার জন্য। এতো সহজে পেয়ে যাবে সেটা ভাবেনি। যাক; আজ রাতে বিরিয়ানি খাবে। মতিউর দোকানের সারারাত ধরে বিরিয়ানি বিক্রি হয়। গরম গরম বিরিয়ানি। দু বান্দা এসেছিলো। টাকা পেয়ে তারা খুশিতে গদগদ। ভালোই কামাই হলো। তাঁরা চলেও গেল। উষ্ণ তখন গাড়ির ভেতরে পায়ের উপর পা তুলে‌ শুয়ে পড়ল। সেই বদ্ধ জানালার দিকে চেয়ে আছে। এই জানালা কখনো খোলে না কেন? উষ্ণের মনে হতো তনয়ার চাঁদ ভারি পছন্দ। তার টেবিলের কাছে কাগজপত্রের উপর প্রায়ই পেন্সিল দিয়ে আঁকা চাঁদ দেখতে পেতো। অথচ এই মেয়ে জানালা খুলে একটিবার চাঁদ কে দেখছে না। কেন? এই সৌভাগ্যে হয়তো তাঁর চাঁদের দেখা সেও পেয়ে যেত। ক্ষ*তি কি হতো শুনি?

সেই দু’জন বান্দার একজন আবার এলো। গা থেকে বি*শ্রী গন্ধ* আসছে। গা গু*লিয়ে দেবার মতো! উষ্ণের উপর সেই প্রভাব পড়ল না। মনের মধ্যে ক*ষ্টে থাকলে সকল বাজে জিনিস স*হ্য হয়ে যায়। গাড়ির জানালা খুলে বলল, “কি? আরো টাকা চাই!”

সে দাঁত বের করে হাসল। বলল, “না স্যার! সি*গা*রেট আনছি খাইবেন?”

উষ্ণ ভ্রু কুঁচকালো। অ্যা*ল*কো*হল সে খায় কিন্তু কখনো সি*গা*রেট খায়নি। সি*গা*রেট খাবার বিষয়টা তার কাছে সস্তা মনে হতো। খুব কম দামেই যেখানে সেখানে পাওয়া যায়।‌ তাই এটাকে এড়িয়ে চলত। উষ্ণ এবার উঠে পড়ল। গাড়ির দরজা খুলে সিটের উপর বসে পড়ল। সে দুটো সিগারেট এনেছে। একটা নিজেই খাচ্ছে অন্যটা উষ্ণ কে সাধল। উষ্ণ হাত বাড়িয়ে সিগারেট নিল। হ্যাঁ! সস্তাই বটে। দুই ঠোঁটের মাঝে রেখে শ্বাস টানল। ধোঁয়া ছুঁড়ল শূ*ন্যে! প্রথমবার হিসেবে খারাপ না। বড়লোকের ছেলে রাস্তার টোকাইয়ের সাথে বসে সিগারেট খাচ্ছে। এই খবর তার নামমাএ মা বাবার কানে গেলে কি হবে এটাই ভাবছে সে! ইরিশা জামান কি করবে? বিয়েটাই বুঝি ভে*ঙে দিবে। হেসে উঠল‌ সে! আচ্ছা বিয়েটা করছে তো সে! সে আবারো দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল, “ভাললাগছে স্যার?”

উষ্ণ মাথা দুলিয়ে আবারো সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ল। সে এবার গাড়ির পাশে উষ্ণের পায়ের কাছে মেঝেতে বসে পড়ল। উষ্ণের দৃষ্টি সেই বাসার উপর পরে আছে তার দিকে ইশারা করে বলল, “ম্যাডাম কি এই বাসায় থাকে?”

উষ্ণ আবারো মাথা নাড়ল। সে নিজের সিগারেটে টান দিয়ে বলল, “জানতাম। অনেকদিন ধইরা আপনারে দেখতাছি এদিকে আসতে। তহনি ভাবছি মাইয়াগো চক্কর!”

উষ্ণ আবারো হেসে উঠল। ম*ন্দ নয়, ভালোই লাগছে। এরমধ্যে একটা কু*কু*র এসে জুটল। গাড়ির ভেতর কিছু খাবার ছিলো। সেগুলোই ছুঁড়ে মা*র*ল সে। একটা কু*কু*রের জায়গায় এখন তিনটে এসে জুটল। কি আশ্চর্য! যার জন্যে এখানে তার এই দীর্ঘ রাত্রির অপেক্ষা তাঁর দেখা নেই। অথচ রাস্তায় লোক থেকে শুরু করে কু*কুর অবধি তাকে আপন করে নিয়েছে। যার নে*শা*য় সে মা*তাল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে তারই কেবল কোনো পাত্তা নেই। এভাবে বুঝি আর কদ্দিন চলবে!

.

তন্ময়ের বোধহয় আজ বসে থাকার জো নেই। বেচারা দু দণ্ড বসে থাকতে পারছে না। একবার স্যারের কেবিনে যাচ্ছে আরেকবার ফিরছে। টিমের সাথে দুবার মিটিং অবধি করে ফেলেছে। মার্কেটিং টিমের কাজ আজ বোধহয় একটু বেশি। তনয়া তার মিনিপ্যাক চকলেট কেক কা*ম*ড়ে খাচ্ছে আর পা দুলিয়ে দেখছে। ল্যাপটপের খুলে কেবল বসে আছে। কাজ হচ্ছে না কোনো। তন্ময়ের সাথে দু একবার একটু চোখাচোখি হলো। তন্ময়ের হাসি দেখে ক্লান্তি দূর হয়ে গেল তার। শরীরে আবারো যেন প্রাণ ফিরে পেল। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছে সে।

সারাটে দিন পেরিয়ে গেছে। হঠাৎ কেমন খালি খালি লাগছে নিজের কাছে। কিছু একটা আজ সে ভুলে গেছে। হ্যাঁ! এখন মনে পড়ল। স্যারের কেবিন। ভাদাইম্যা স্যার আজ তাকে একবারের জন্যও ডাকেনি। ব্যাপারটা কি হলো? উষ্ণ স্যার আজ তাকে একটিবারের জন্য ডাকল না। হঠাৎ রুম ছেড়ে সেক্রেটারি বেরিয়ে এলো। তনয়া একটু নড়েচড়ে বসল। ভাবল তাকেই বুঝির ডাকতে এসেছে। না! তার টেবিল পেরিয়ে জ্যোতির কাছে চলে গেল। স্যার আজ জ্যোতিকে ডাকল! কি আশ্চর্য! কিন্তু আশ্চর্য হবারই বা কি আছে? ভ্রু কুঁচকে নিজেকেই শুধালো সে। ভালোই তো হলো উষ্ণ স্যার তাকে ডাকেনি। সে কি তবে উষ্ণ স্যারকে মিস করছে! তওবা তওবা করে উঠে দাঁড়াল। হতেই পারে না। কিসব ভাবছে সে। এ ক’দিনে এতো তাকে দিয়ে দৌড়ঝাঁপ করিয়েছে যে এখন অভ্যাস হয়ে গেছিলো এই যা। এসব কিছু না! তনয়া বেরিয়ে গেল। এক কাপ চা খাওয়া দরকার!

চা হাতে নিয়ে ফিরে তাকাল। ছোটখাটো একটা ভিড় জমেছে। সবাই দাঁড়িয়ে গল্প করছে। অফিসে নতুন কিছু হলেই সবাই কা*না*ঘুষো শুরু করে দেয়। তনয়ার মন্দ লাগে না। সে অবশ্য কিছু বলে না কিন্তু শুনতেই ভালো লাগে। এদের মধ্যে শরীফ কেও দেখা যাচ্ছে। সে ডেকে উঠল, “এই তনয়া এখানে আসো!”

“কি হচ্ছে বলো তো? এতো শোরগোল কিসের?”

“নতুন বস কে নিয়ে। এখানের মেয়েরা তো স্যারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। জানো না তুমি?”

তনয়ার মুখটা পেঁ*চার মতো হয়ে গেল। এই লম্বা চুল ওয়ালা বেডার প্রেমে মাইয়ারা প্রেমেও পড়ে। কি হচ্ছে এই জেনারেশনের! পাশেই জ্যোতি গুঁতো মে*রে বলল, “জানিস স্যার আজ আমায় ডেকেছে। ইশ সামনে থেকে দেখতে কতোই না হ্যান্ডসাম!”

আরেকজন তাল মিলিয়ে বলল, “হ্যাঁ, পুরো রনবীর কাপুর!”

তনয়া মুখের হাসি পেটে রেখে চায়ের কাপে চুমুক দিল। মনে মনে আওড়ালো, “হ্যাঁ, গরিবের রনবীর কাপুর বটেই!”

ঐতি আবার গুঁতো মে*রে শুধালো, “তোমার কথা কি তনয়া? অনেক তো দেখলাম স্যারের পিছন পিছন ঘুরতে। তুমি কিছু বলো!”

“আমি তো কাজের জন্য ঘুরেছি ঐতি। আমার কি ওসব চিন্তা ভাবনা ছিল।”

“যা! মিথ্যে বলো না।”

জ্যোতি হেসে শুধাল, “আরে সত্যিই! এই ম্যাডামের তো অন্য আরেকজন আছে।”

তনয়া গাল ততোক্ষণে লাল হতে শুরু করেছে। হেসে বলল, “কি বাজে বলছিস!”

শরীফ বলল, “নতুন বস কিন্তু তোদের দুজনকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে তাই না!”

বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না। দাঁত কেলিয়ে হাসল কেবল। সত্যিটা আর বলতে পারল না।বললেই আবার নতুন গসিপ শুরু হয়ে যাবে। তনয়া এসব ঝামেলায় পড়তে চায় না!

#চলবে