#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_২১
কোম্পানি থেকে এবার সবাই সাজেক ট্রিপে যাচ্ছে। যাওয়া আসার খরচ তো আছেই সাথে থাকা খাওয়ার খরচ ও আকাশচুম্বী! যদিও বসের জন্য তা হাতের ময়লা। তবুও বেকার বেকার টাকা খরচ হোক এটা কে চায়। কিন্তু তারা যাচ্ছে। ২ রাত ৩ দিনের প্ল্যান। মন্দ নয়! তনয়া নিজ উদ্যোগে সবকিছু ঠিক করেছে। এদিক থেকে যাওয়ার বন্দোবস্ত, ওখানে গিয়ে কোন রিসোর্টে থাকবে সেখানকার এডভ্যান্স সবকিছু। বসকে বাদ দিয়ে পুরো ২৫ জনের মতো যাচ্ছে তারা। সবাই ভীষণ এক্সসাইডেট।
তনয়া তার প্রয়োজন সামগ্রী সব গুছিয়ে নিচ্ছে। ব্যাগে কাপড় ভাঁজ করে রাখছে মৌ। রাত্রির ৮ টা বাজে। ডিনার আজ একটু জলদিই করেছে। একটু বাদেই তন্ময় চলে আসবে নিতে। ঢাকা থেকে বাস ছাড়বে রাত্রির ১০ টার দিকে।
মৌ সবগুলো কাপড় ব্যাগে রেখে দিল। চাঁপা স্বরে বলল, “তোমাদের স্যার ও সাথে যাচ্ছে তাই না?”
“হুঁ, বস তো যাবেই।”
“এখন কেমন আছে? সেদিন যা বৃষ্টিতে ভিজল।”
“সুস্থ আছে বলেই তো ট্রিপে যাচ্ছে তাই না।”
মৌ ভ্রু কুঁচকে আনল। তনয়া বেশ হেয়ালী করে জবাব দিচ্ছে। তনয়ার আবার পছন্দ হচ্ছে না, মৌ উষ্ণ স্যারের ব্যাপারে অতিরিক্ত কথাবার্তা জিজ্ঞেস করছে। এই প্রথমবার নয়, তন্ময়ের ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করে। তখন বলতে ভালো লাগে কিন্তু উষ্ণ স্যারের ব্যাপারে দুটো কথা যেন তার সহ্য হয় না।
মৌ এসে দাঁড়াল জানালার কাছে। জানালার পর্দা সরিয়ে বলল, “তিনি এখানে রোজ দাঁড়িয়ে থাকে!”
“কে?”
“তোমার স্যারের কথা বলছি।”
হ্যান্ডব্যাগে ফোনের চার্জার রেখে এদিক ফিরল তনয়া। মৌ মুচকি হাসল। জানালার সাথে পিঠ ঘেষে দাঁড়িয়ে বলল, “তুমি জানতে?”
“না এখন জানলাম।”
“তোমার ভালো লাগছে না?”
“ভালো লাগার কথা বুঝি?”
“উফ, আপু তুই কিছু বুঝিস না। লোকটা তোকে অনেক ভালোবাসে। আমি নজরে রেখেছি। সে রোজ রাতে গাড়ি করে এদিক আসে। ভোর অবধি তোর অপেক্ষা করে চলে যায়। বুঝছিস কি ভালোবাসা? একটা মানুষ কতোটা ধৈর্য নিয়ে এমন অপেক্ষা করে জানিস?”
তনয়া হাসল গাল ভরে। মৌয়ের কথাবার্তা ঠিক নেই। কখনো তুই কখনো তুমি। তনয়ার অবশ্য শুনতে ভালোই লাগে, মনে হয় ছোট বোনের সাথে আছে। মৌয়ের সব আবদার তো দিনশেষে তারই কাছে।
মৌ পিছন থেকে এসে ঝাপ্টে ধরে তাকে। ফিসফিস করে বলল, “তোমার ভালো লাগে না বুঝি?”
“ভালো লাগার কি আছে মৌ?”
“তন্ময় ভাই হলে বুঝি খুব ভালো লাগত!”
তনয়া থমকে গেলো কয়েক সেকেন্ড। অতঃপর হেসে শুধায়, “আমরা যাকে ভালোবাসি তাকেই মনে প্রাণে চাই মৌ!”
“এইজন্যই লোকটার প্রতি তোমার দয়ামায়া হয় না। সবটুকু যে তন্ময় ভাইকে দিয়ে দিলে। তাহলে বিনিময়ে কি পেলে আপু?”
তনয়া হাসে। পেছন ঘুরে মৌয়ের মাথায় থা*প্পড় মেরে বলে, “ভালোবাসায় বিনিময় শব্দটা থাকে না পাগলি। এতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা!”
“একপাক্ষিক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা অনেক ভয়া*নক আপু। এতো দিনে বুঝো নি।”
“তুই বুঝি আমার উপর অনেক রে*গে আছিস।”
“আছি, কারণ মা বলে। আমাদের তাকে ভালোবাসা উচিত যে আমায় ভালোবাসে। তাকে নয়, যাকে আমি ভালোবাসি! নয়তোবা ভালো থাকা যায় না।”
তনয়া অভিমানী কণ্ঠে জবাব দিল, “নাই বা ভালো থাকলাম মৌ!”
ফোনটা বেজে উঠলো। তন্ময়ের ফোন দেখেই তনয়া হৈচৈ করে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। তন্ময় বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে নিচে।
তন্ময়ের বাইকে করে যখন অফিসে পৌঁছাল তখন বাজে রাত্রির ৯ টা ২০। অনেকেই প্রায় এসে গেছে। কিন্তু বস এখনো আসেনি। তার অপেক্ষাই হচ্ছে। অফিসের ক্যান্টিন খোলা নেই। তনয়া ফ্লাক্সে করে চা নিয়ে এসেছে। সেখান থেকেই দু কাপ ঢালল তাদের দুজনের জন্য। একটা ভিড় জমে গেল আস্তে আস্তে!
ফ্রেব্রুয়ারির মাঝামাঝি! শীতের প্রায় শেষ, সারাদিন ওতো ঠান্ডা না পড়লেও রাতের দিকে খুব ঠান্ডা লাগে। তনয়ার পরনে হলদে সুতি গোল জামা, মিলিয়ে সেলোয়ার। তার উপর কালো রঙের সুয়েটার। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাঁধা। তন্ময় চায়ের কাপ হাতে পাশেই দাঁড়িয়ে। তার পরনে কালো রঙের একটা জ্যাকেট। শফিক, জ্যোতি, তরী সকলে দাঁড়িয়ে গোল হয়ে। ম্যানেজার সাহেব আসতেই আড্ডা জমে গেল। শফিক বলল,
“বছরের এই একটি দিন, যখন স্যারের টাকা খরচের সুযোগ পাই।”
জ্যোতি বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ ভালো করে খরচ করিস। কিপটেমে করিস নে একদম।”
ম্যানেজার সাহেব বললেন, “উষ্ণ স্যারের সাথে এই প্রথম আমাদের ট্রিপ। সবাই একটু সাবধানে থাকবেন। দেখবেন স্যারকে কেউ রাগিয়ে দিবেন না।”
তরী বলল, “স্যার কি বড় স্যারের থেকেও রাগী? বাপকে সামলাতে পারলে ছেলেকেও পারব। কি বলিস তনয়া!”
তনয়া মাথা দুলাল। তন্ময় তার ঘাড় চেপে বলল, “এটা আমাদের প্রথম ট্রিপ। অনেক বছর পর দেখা হবার পর এই প্রথম আমরা দূরে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি।”
“বাহ বেশ তো। এই স্যার আসছে!”
সকলে পিছন ফিরে তাকাল। উষ্ণ স্যার আসছে। পরনে কালো শার্ট, আর কালো জিন্স। লম্বা চুলগুলো সবটুকু পিছনে ঝুটি করা। সামনে দু একটা চুল কেবল কপালের উপর এসে পড়ছে, চোখে আবার কালো সানগ্লাস ও আছে। এতো রাতে সানগ্লাস কোন কাজে আসবে? তনয়া উপর থেকে নিচ অবধি দেখে ললাট কুঁচকে নিল। ভ্যাদাইমা স্যার ভালো করেই সেজেগুজে এসেছেন দেখছি। মডেলিং করতে এসেছেন নাকি?
পাশ থেকে জ্যোতি বলে উঠলো, “এই দেখ দেখ, স্যারের চিকন কোমর!”
পাশ থেকে আরেকটি মেয়ে বলল, “ওহ চিকনি চামেলি!”
“হ্যাঁ, তাই তো। ভাব শার্ট ছাড়া তাকে দেখতে কেমন লাগবে?”
ও জন মুখ টিপে হেসে ফিসফিসিয়ে বলল, “অন্ধকার রাত, রুমে তুই কেবল একা আর স্যার দাঁড়ানো। ভাব স্যারের গায়ে শার্ট নেই সেই শার্ট তুই..
“চুপপপ!!
মেয়ে দুটো কেঁপে উঠলো। সকলে হতভম্ব হয়ে তনয়ার দিকে তাকাল। তনয়া হুশে ফিরল। তন্ময় ভ্রু নাচিয়ে বলে বেড়াচ্ছে, “কি হলো? শরীর খারাপ লাগছে?”
কপালে হাত খান রেখে পরীক্ষা করে নিল। তনয়া চঞ্চল আঁখি জোড়া ওদিক ফিরল। স্যার ঘাড় বাঁকিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সেই রাতের কথা মনে পড়তেই শরীর শিউ*রে উঠল তার। পাশের মেয়ে দুটিকে চোখ রাঙাতে তারা মুখ টিপে হাসল। তন্ময় তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “ঠিক আছিস? কি হলো আবার?”
তনয়া মাথা দুলিয়ে জবাব দেয়, “আছি আছি। ঠিক আছি!”
উষ্ণের ঘাড় তখনো বাঁকা। নিচের ঠোঁট কামড়ে দেখছে কেবল। আঁখি দুখান দেখলেই টের পেতো কেমন রে*গে আছে। তবে রা”গের পাল্লা ভারী হওয়া যে এখনো বাকি!
রাত্রির ১০ টা বাজে। উষ্ণ স্যার বাসে উঠার পর পরই সকলে একে একে উঠে পড়ছে। সকলের দৃষ্টি স্যারের দিকে। মেয়েগুলোই চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে অনুমানের কথা আর নাই বলা হলো। সেগুলো সবার শোনার যোগ্য কথা নয়। তবে বলা যায়, উষ্ণ চৌধুরী এখন বাসের মধ্যে ছোটখাটো সেলিব্রিটি যার পাশে বসার জন্য মেয়েরা ওত পেতে আছে। কারণ পাশের সিটটা খালি। কোনো বিশেষ একজনের জন্যই বরাদ্দ সিটটা। এরা ফিসফিস করছে। গিয়ে বলবে নাকি, স্যার সিটে আমি বসতে পারি? খালিই তো আছে!
কিন্তু বাবা এতো সহজ কাজ নাকি? এতো ইঁদুর হয়ে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার মতো। একটা ধম*ক দিলেই বাসের মধ্যে মান সম্মান সব যাবে!
তন্ময় ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে আগে আগে উঠছে। তার পিছনে উঠছে তনয়া। উষ্ণের সিট একদম সামনের সিটে। জানালার পাশের সিটটা খালিই আছে। তনয়াকে দেখা পেয়েই থামতে বলল। বড্ড কড়া ভাষায় অথচ মিহি গলায় বলল, “মিস তনয়া। এদিক বসুন। আপনার সাথে রিসেন্ট ফুড প্যাকেজিং নিয়ে কথা আছে!”
ট্রিপে এসেও কাজের আলাপ! সকলে শুনতে পেলো কথাটা। ফিসফিস এবার দ্বিগুন উদ্যমে শুরু হলো। তনয়া মুখটা ফ্যাকাসে করে দাঁড়িয়ে আছে। ইশ! ৬ কি ৭ ঘণ্টার পথ এই ভাদাইম্যা স্যারের সাথে বসে কাটাবে সে? কষ্মিনকালেও সম্ভব না। তথাপি সে মুখের উপর বলে বসলো,
“স্যার, আমার শরীর খুব খারাপ। বাসের মধ্যে লং জার্নির অভ্যাস নেই। মাথা ঘুরে, বমি করে ফেললে আরেক কেলেঙ্কারি। আমরা ওখানে পৌঁছে কথা বলি। আচ্ছা স্যার!”
দাঁত বের বিনয়ী হাসি হাসল। জবাবের অপেক্ষা না করে তন্ময়ের পিছু পিছু সে চলে গেল। উষ্ণ অবাক আর হতাশ দুটোই হলো। ঘাড় বাঁকিয়ে পিছন অবধি দৃষ্টি নিল। তারা বসেছে পাশের সারিতে মাঝের সিটে। তনয়া জানালার পাশের সিট দখলের পর পরই তার পাশে তন্ময় বসে পড়ল। পানির বোতলের ছিপি খুলে এগিয়ে দিলো। গুনগুন করে কিছু বলছেও যেন! ভাদাইম্যা স্যার চোখ দুটো ছোট ছোট করে নিল। চশমার আড়ালে কেই বা দেখবে তার লোচনে ভরা গভীর রা*গ। ঠোঁট কামড়ে নাক ফুলিয়ে জানালার সিটে নিজেই বসে পড়ল। জ্যোতি দাঁড়িয়ে পড়ল তৎক্ষণাৎ। চুল ঠিক করে এগিয়েই আসছিলো ওদিকে, হাওয়ার বেগে ছুটে এসে জেএস বসে পড়ল স্যারের পাশে। মুখখানা হুতুম পেঁচার মত করে ফেলল সে। অগত্যা পিছনের মেয়ে গুলো হেসে উঠল। জ্যোতি গিয়ে বসে পড়ল ধপ করে!
হাসির শব্দে তন্ময় গাল মিলালো। এদিক ফিরে বলল, “তনু, ওরা বুঝি অনেক মজা করছে।”
“ট্রিপে সবাই মজা করে!”
“তোর মুখটা এমন কেন? নেতিয়ে কেন পড়েছিস? এখনি খারাপ লাগছে?”
“না না ঠিক আছি।”
হুট করে তন্ময়ের গায়ের উপর এসে পড়ল। বাস ছেড়েছে! তন্ময় ও তাকে আগলে ধরল।
“সামলে তনু!”
“ঠিক আছি, ঠিক আছি! এমন হঠাৎ করে স্টার্ট দিলো।”
তন্ময় হেসে উঠল। তার দেখাদেখি তনয়াও হাসি মিলাল। উষ্ণের মুখখান ভারি গম্ভীর। ভেতরে ভেতরে রা^গ কতোজানি জমছে বলা মুশকিল। সবে তো ৫ মিনিট হলো। এই ঝঞ্ঝাট তার আগামী ৭ ঘণ্টা বইতে হবে। পারবে তো! জেএস গাল কামড়ে বসে আছে। তার হাতে খাম*চির দাগ। হুটহাট স্যার হাতে খাম*ছি দিয়ে বসছে। কেন? কি কারণ? প্রসঙ্গ সে জানে না। তবে মনে হচ্ছে জান হাতে নিয়েই বেচারা বসেছে। হাতে ছু*রি নেই ভাগ্যিস কখন না হয় পেটে বসিয়ে দেয়। হঠাৎ এতো রে*গে কেন যাচ্ছেন তিনি?
#চলবে
#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_২২
ভালোবাসা ভীষণ বেদনা*দায়ক শব্দ। হৃদয়দহ*নের একমাত্র কারণ! ভালোবাসার মানুষের উপর কেবল একা নিজের রাজত্ব চলে। অন্যের রাজত্বে সে থাকলে সারা শরীরে বি*ষের জ্বালা বয়ে যায়। উষ্ণ চৌধুরী অবস্থা এখন প্রায় তেমন। তার আহত দৃষ্টি সানগ্লাসের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। হৃদয়ে যে দ”হন হচ্ছে তা বাইরের কেউ টের পাবে না। ক্ষণে ক্ষণে সে মরিয়া হয়ে উঠে। ঠোঁট কামড়ে শপথ নেয়, পিছন ফিরে তাকাবে না। কিন্তু ফের বেহারায় মতো অবলীলায় পিছন ফিরে। তার তীর্যক দৃষ্টি পড়ে তাদের উপর!
নজর সম্পর্কে উষ্ণের ভালো একটা ধারণা আছে। নজরে নাকি সম্পর্ক নষ্ট হয়। কই? এতো নজর দিচ্ছে এদের দুজনের বন্ধুত্ব কেন নষ্ট হয় না? বন্ধুদের এতো পিরিতি তার স*হ্য হয় না।এরা কি তাবিজ পরে থাকে নাকি?
জেএস অনেকক্ষণ ধরে উসখুশ করছে। সুযোগ বুঝে এবার প্রশ্ন করেই ফেলল,
“স্যার, আপনার কি সমস্যা হচ্ছে?”
উষ্ণের তীক্ষ্ণ চাহনি পড়ল তার উপর। জেএসের শুকনো মুখ। খসখসে কণ্ঠে জবাব দিল,
“তোমার কি মনে হয় জেএস?”
“আপনাকে অস্থির লাগছে বলে জিজ্ঞেস করছি? কোনো সমস্যা? বাস থামাতে বলব?”
“বাস থামিয়ে কি করবে? আমার পাশের সিটে কোনো মেয়েকে বসাতে পারবে? সারারাতের জার্নি, মেয়ে মানুষের বদলে পুরুষ পাশে বসে আছে। আমার মন ভালো থাকবে কি করবে?”
জেএস এমন জবাবের আশায় ছিল না। চোখের কোটরে মণিদ্বয় ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে লাগল। মিনমিন স্বরে বলল,
“আপনি কি তনয়া ম্যাডামের কথা বলছেন?”
“আমায় তোমার কি মনে হয় জেএস?”
জেএস পিছন ফিরল। তনয়া ম্যাডাম আর তন্ময় স্যার পাশাপাশি বসে আছে। একটা হেডফোন দু’জনের কানে লাগানো। তারা গান শুনছে আবার কথাও বলছে। হাসছে ক্ষণে ক্ষণে! জেএস চোখ সরিয়ে ফেলল। উষ্ণ এবার চোখের চশমা খুলে ভ্রু যূগল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট!
“স্যার কেউ দেখে ফেলবে?”
“দেখুক! আচ্ছা জেএস, কোনো ভাবে ওই তন্ময়ের বাচ্চাকে বাস থেকে ফে*লে দেওয়া যায় না।”
“না স্যার সম্ভব না।”
“ডাকা*তের সাথে তোমার যোগাযোগ আছে? থাকলে কল দাও, বলো শা*লা কে ধরে নিয়ে যেতে।”
“পুরুষ মানুষ নিয়ে তারা কি করবে স্যার?”
“যা ইচ্ছে করুক। তনয়ার পাশ থেকে ওকে সরাতে পারলেই হয়। মে*রে ফেলে রাখুক। আমার কি?”
“স্যার এমন কথা বলবেন না। কেস হয়ে গেলে কেলেংকারি।”
“আমার বাপ এতো টাকার মালিক হতে আমি কেন জে*ল খাটব। তুমি খাটবে! তোমার বউ বাচ্চার দায়িত্ব আমার!”
জেএসের মুখ শুকিয়ে গেল। বেচারা অনুনয় স্বরে বলল, “স্যার এমন ভ*য় দেখাবেন না। ওদের ছাড়া আমি বাঁচবো না।”
“আমিও তনয়াকে ছাড়া বাঁচবো না। কিছু ব্যবস্থা করো জেএস।”
“দেখছি স্যার।”
“তুমি দেখতেই থাকো। আচ্ছা পুরো বাস উ*ল্টে দিলে কেমন হয় জেএস?”
“সবাই ম*রে যাবে স্যার।”
“তনয়া আর আমি বেঁচে থাকলেই হয়। তোমরা কেউই কাজের নয়। অকাজের মানুষ বেঁ*চে থেকে লাভ কি? পরিবেশ নষ্ট!”
জেএস জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে চুপসে গেল। স্যারের মাথায় জ্বী*ন ভর করেছে। উল্টোপাল্টা কথা বলছে। ওদিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া ঠিক হবে না।
———-
কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ! সর্বনাশ হচ্ছে উষ্ণ স্যারের হৃদয়ের। প্রতি ক্ষণে হৃৎপিণ্ডে ক্ষত*বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। বেচারা কোন প্রতিক্ষায় যে বেঁচে আছে। ধৈর্য ধ*রে রাগ পুষিয়ে রেখেছে কেবল।
পৌষ মাস হচ্ছে তনয়ার। বিশ্বাস হয় না, পৌষ মাস শেষ হয়ে যাবার পরেও এখনো তার জীবনের পৌষের ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে। ধীরে ধীরে সেই আবহাওয়া বসন্তের বাতাসে দুলতে লাগবে। তখন হাওয়ার সাথে সাথে তনয়াও দুলবে।
কথা বলছিলো বিদেশের ব্যাপার নিয়ে। কয়েকবছর দূরে থাকার একটা সুবিধা পাওয়া গেছে, অনেক কথা জমা আছে। দু’জন পাশপাশি থাকলে চুপ করে থাকা লাগে না। একটা না একটা কথা উঠেই যায়। আরামসে গল্প করে কথা আগানোর দারুণ উপায়। তন্ময় একটা মজার গল্প বলছে। সেই গল্প শুনে হাসতে হাসতে তার গায়েই লুটিয়ে পড়ছে তনয়া। উষ্ণের তী*ক্ষ্ণ চাহনি উপেক্ষা করে বড় সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। নিজের উপর কেমন যেন গর্ব হচ্ছে!
হঠাৎ গানের আসর বসে গেল। কে উঠাল মনে নেই, তবে কাজে দিল। একে একে সবাই গান গাইতে শুরু করল। উষ্ণ ফিরেও তাকাল না। জেএস আবদার করল,
“স্যার দেখুন, সবাই গান গাইছে।”
উষ্ণ শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“দেখবো না জেএস! আমার চোখ সইতে পারবে না। বুকে লাগবে বড্ড!”
জেএস মুখ বন্ধ করে নিল। বুঝে গেল যতক্ষণ চুপ থাকবে ততক্ষণ মঙ্গল! গানের আসর জমল অনেকক্ষণ। কুমিল্লায় পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না। বাস থামল সেখানে। কারণ এরপর গিয়ে বাস থামবে সোজা দিঘীনালা স্টেশনে। সেখান থেকে জিপ ভাড়া করেই সাজেক যাবে তারা।
কুমিল্লায় নেমেই সবাই হাত পা মুচরে নিচ্ছে ঠিক করে। এতোক্ষণ বসে থেকে শরীরে জ্যাম লেগে গেছে যেন? ম্যানেজার সাহেব বার বার এসে জিজ্ঞেস করছে, “স্যারের অসুবিধা হচ্ছে না তো, কোনো সমস্যায় পড়লেই আমায় বলবেন। চিন্তা করবেন না আপনার সব সমস্যার সমাধান আমার কাছে?”
উষ্ণ চৌধুরী চোখের চশমা খুলে ঘাড় বাঁকিয়ে ছোট ছোট চোখ করে তাকাল ম্যানেজারের দিকে। জেএস ছোট্ট একটা ঢোক গিলল। এই না স্যার বেফাঁস কিছু বলে ফেলে। এভাবেই মাথা গরম। তনয়া ম্যাডামের ব্যাপারে কিছু বললে বড় স্যারের কানে যেতে সময় লাগবে না।
উষ্ণ মুখ খুলল বলার জন্য। তার আগেই জেএস বলল, তনয়া ম্যাডাম!”
দুজনেই আহম্মক বনে তার দিকে ফিরে তাকাল। জেএস তাকিয়ে সামনে। ম্যানেজার সাহেব আর উষ্ণ স্যার দুজনেই তাকে অনুসরণ করল। তনয়া একটু অবাক হলো যেন। এতো জোরে ডাকার কি দরকার ছিল? জেএস গলা উঁচু করেই বলল,
“কোনো অসুবিধে হলে জানাবেন?”
উষ্ণ ভ্রুযূগল কুঁচকে জেএসের দিকে তাকাল। ম্যানেজার সাহেব হেসে ওদিক চলে গেলেন। প্রকৃতির ডাক এসেছে তার। তনয়া মাথা নাড়িয়ে চলে গেছে আরো আগেই। উষ্ণ স্যার হালকা কেশে বললেন,
“তোমায় কেন বলবে?”
“তো স্যার আপনাকে তো আর বলবে না!”
খোঁচা কোথায় এসে লাগল উষ্ণ চৌধুরী বুঝতে পারল। কপালের ভাঁজ সরিয়ে চড়াও হলো। আঁখি জোড়া এদিক ওদিক করছে। তনয়া কোথায়?
চায়ের কাপ এসে হাজির হলো মুখের সামনে। চায়ের কাপ দেখে খুশি হলেও মুখখান দেখে ম্যাডাম খুশি নন। সচরাচর চায়ের কাপ সে রিজেক্ট করে না। কিন্তু এবার করল। নাক খাড়া করে বলল,
“ধন্যবাদ স্যার লাগবে না।”
“নিন, নিন। সারারাত গল্প করতে হলে এর্নাজি দরকার!”
খোঁচা মারল না কথা শোনাল। যাই হোক তার কি যায় আসে। চায়ের লোভ সামলাতে না পেরে কাপটা নিয়ে নিল। উষ্ণ চৌধুরী নিজের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“আপনি খুব কথা বলেন মিস তনয়া। অফিস টাইমেও কি তাই করেন।”
তনয়া চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে হেসে বলল,
“স্যার এটা আমার অফিস টাইম না।”
উষ্ণ মাথা নেড়ে শুধায়, “বমি ক’বার করলেন?”
“করিনি তো। একবারও করিনি। কি বলুন ভালো মানুষের পাশে বসলে আমার বমি পায় না!”
উষ্ণের চায়ের কাপে চুমুক বসাতেই যাচ্ছিল। চায়ের বদলে তনয়ার কথা গিলে ফেলল। জবাবে জিজ্ঞাসা করল, “আপনার এর্লাজি নেই মিস তনয়া?”
“না, কেন বলুন তো?”
“না থাকলেও হয়ে যাবে। যেভাবে গায়ে ঘেসে বসছেন। ছোঁয়াচে রোগ ছড়ায় বড্ড। একটু কম ঘেসে বসুন!”
তনয়া জবাবে এক ফালি হেসে বলল, “এটা কি অফিসের রুলস?”
“আপনি চান আমি অফিস রুলস করি?”
তনয়া ভ্রু উঠালো। মাথা নাড়িয়ে না করল। উষ্ণ চৌধুরী তার পাশেই দাঁড়িয়ে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বিড়বিড় করছে। “সেদিন একটু জড়িয়ে ধরেছি বলে সহসা একটা চ*ড় মেরে দিল। এখন আর মা*রতে পারছে না। ওই তন্ময়কে কেন মা*রে না? ওর না গার্লফ্রেন্ড আছে। শা লা খবিশ একটা!”
“কিছু বলছেন স্যার?”
উষ্ণ জবাব দেবার আগেই তন্ময়ের ডাক এলো। গাড়ি ছাড়ছে। তনয়া এদিক ফিরতেই উষ্ণ বলল, “যান আপনার ভাই ডাকছে!”
তনয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “ও আমার বন্ধু!”
“ওহ হ্যাঁ ভুলেই তো গেছিলাম। এতো নামের মিল আপনাদের। জমজ ভাইবোন মনে হয়!”
তনয়ার মুখটা শুকিয়ে গেল। একটা শুকনো “থ্যাংক ইউ” বলে বিদায় নিল সে। ধন্যবাদ ছিল চায়ের কারণে।
তখন শেষরাত। খাগড়াছড়ি পৌঁছেতে আর কিছুক্ষণ মাত্র। এখন থেকে পথ বেশি নেই। বাসের সকলে ঘুমাচ্ছে। কেবল কয়েকটা আলো জ্বালানো বাসে। নিভো নিভো আলোয় উষ্ণের শকুনের দৃষ্টি পড়ছে তনয়ার উপর। সেও ঘুমাচ্ছে বিভোর হয়ে!
আচমকা ঘাড়ের মাংস শক্ত হাতে চেপে ধরল কেউ। জেএস চিৎকার করতে গিয়ে থেমে গেল। মানুষটা তার স্যার। হায় হায়, ঘাড় যেন ভেঙে*ই ফেলে। জেএস না পেরে সরে গেল। উষ্ণ সিটের উপর ধপাস করে প*ড়ে গেল। শব্দ না করে উঠে দাঁড়াল। ভ্রুযূগল কুঁচকে চোখ ডেকে ফেলেছে। ললাটে ভাঁজ পরেছে চারটে। মুখের চোয়াল শক্ত। কারণ তার একটাই, তনয়া ঘুমের ঘোরেই তন্ময়ের ঘাড়ে মাথা রেখেছে। তন্ময় ও মাথা রেখেছে মিলিয়ে। এই প্রেম প্রেম দৃশ্য তনয়া দেখতে পেলে সুখের সাগরে ভেসে যেত। তার কতো দিনের স্বপ্ন যে!
অথচ উষ্ণের মোটেও সুখ সুখ পাচ্ছে না। তার মন চাইছে বাসটা এখনই কষিয়ে একটা ব্রেক দিক। এদের মাথা আলাদা হয়ে যাক। আলাদা হয়ে যাক বন্ধুত্ব। কিন্তু তা হচ্ছে না। সুকৌশলে রাতের অন্ধকারে বাস চালক যা বাস চালিয়ে নিচ্ছে তা তারিফের সামিল। উষ্ণ তাকে কয়েকটা অশ্রাব্য গালি দিল। ঠিক করে নিল, সাজেক যাবার পরই এর চাকরি খাবে। এতো ভালো ড্রাইভ করতে বলেছে কে তাকে?
ভোরে গাড়ি থামল খাগড়াছড়ি। ঘড়ির সময় অনুযায়ী এখন ভোর অথচ চারদিক দেখে মনে হচ্ছে এখনো রাত। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা পেতে সময় লাগবে আরো। নিভো নিভো অন্ধকার চারদিকে। এতো ভোরে কোনো খাবারের হোটেল খোলা থাকার কথা নয়। কিন্তু এখানে আছে। কারণ তাদের মতো আরো অনেক পর্যটনরা এখানে এসেই অপেক্ষা করছে। সবাই নেমে পড়ল। ভালোই একটা ঘুম দিয়েছে তারা। উষ্ণের চোখ জ্বালা করছে। সারাটে রাত তার একবিন্দু ঘুম হয়নি। স্যারের ভয়ে জেএসও ঘুমাতে পারেনি। শরীর মন সবকিছু দুর্বল লাগছে। মাতাল মাতাল লাগছে ভীষণ।
সবাই নেমে হাত মুখ ধুয়ে নিল। তনয়া টিস্যু দিয়ে মুখ মুছছে। ঘাড় ভীষণ ব্যাথা করছে তার। এদিক ফিরে দেখল তন্ময়ের হাল ও তাই। ঘাড়ে হাত দিয়ে এদিক ওদিক ফিরছে। দুজনের চোখাচোখি হতেই হেসে ফেলল। ভোরের আলোয় দুজনের হাস্যোজ্জ্বল মুখ, মাখো মাখো প্রেম দেখে উষ্ণের মাথা চক্কর দিল। বমি বমি পাচ্ছে!
এখান থেকে নাস্তা সেরে সবাই চড়ল চাঁদের গাড়িতে। মোটে তিনটে চাঁদের গাড়ি তাঁদের। তারা মেয়েরা ১০ জন। বাকিরা ছেলে! এই চাঁদের গাড়িতে তারা সোজা যাবে রিসোর্টে। আলোর রেশ পাওয়া যাচ্ছে একটু একটু। সূর্যিমামা জেগেছে আরো আগেই। কিন্তু ঘন মেঘ আর ভারী কুয়াশার কারণে আলোর দেখা পেতে সময় লাগল।তাও যৎসামান্য। চাঁদের গাড়ি তনয়া আগেই বুকিং করে রেখেছিলো। পুরো রাস্তায় দোয়া করছিলো যাতে কোনো গণ্ডগোল না হয়। যে দায়িত্বের ভার নিয়েছে তা যেন ভালোয় ভালোয় মিটাতে পারে।
তন্ময়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তনয়া। তন্ময়ের হাতে ব্যাগপত্র। সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। উষ্ণ চৌধুরী দুই হাত বাহুতে গুঁজে গলা উঁচিয়ে বলল, “মেয়েরা সব যাবে এক গাড়িতে, বাকি দু গাড়িতে ছেলেরা সব!”
জেএস তার পাশেই ছিল। স্যারের এমন প্রস্তাবে সে হতভম্ব। গলা নামিয়ে বলল, “এটা কেমন কথা স্যার?”
“ছেলে মেয়ে একসাথে বসা খুবই অশালীন ব্যাপার জেএস। তোমার মনে হয় না আমাদের এ ব্যাপারে কিছু করা উচিত!”
উষ্ণ স্যারের কথায় কেউ তাল না মিলালেও বয়স্ক ম্যানেজার সাহেব মাথা দুলালেন। তিনিও চেঁচিয়ে একই কথা বললেন। আজকালকার যুগের ছেলেমেয়েরা বড়ই অবাধ্য। কথা শুনতে চায় না। সবাই এবার ব্যাগপত্র নিয়ে গাড়িতে উঠে যাচ্ছে। তন্ময় পিছনের গাড়িতে যাবে আর তনয়া সামনের গাড়িতে। সবটা স্যারের জন্য। এতোক্ষণ কি দারুণ লাগছিলো ট্রিপটা। এখন সব বিষাদময়!
তনয়ার পাশে এসে উষ্ণ দাঁড়াতেই তনয়া বিড়বিড় করল,
“রাতবেরাতে অফিস স্টাফের বাসায় একা যাওয়া অশালীন কাজ না, ছেলেমেয়ে একসাথে বসা অশালীন হয়ে গেল।”
“আমি তো আর অফিস টাইমে যাইনি মিস তনয়া।”
মুখ ভেংচি কাটলো তনয়া। স্যার হয়েছে বলে মাথা কিনে নিয়েছে লোকটা!
সবাই চাঁদের গাড়িতে উঠে গেছে। সামনের গাড়িতে মেয়েরা। পিছনের দু গাড়িতে ছেলেরা। ড্রাইভিং সিট এখনো খালি। তনয়া ডান দিকের সারির একদম সামনে বসেছে। তার সামনেই ড্রাইভিং সিটের বা দিকে ড্রাইভার এসে বসল। তার পাশের সিটে উষ্ণ স্যার উঠে এলেন। মেয়েদের মধ্যে গুনগুন রব শোনা গেল।
তনয়া চিকন সুরে বলে উঠলো,
“স্যার, মেয়েদের গাড়িতে আপনি কি করছেন?”
“এমন রাস্তায় একটা গাড়িতে শুধু মেয়েরা যাওয়াই সেভ নয় মিস তনয়া। আপনাদের দেখাশোনার জন্য আমি আছি। সমস্যা হলে বলুন, নেমে যাই।”
তনয়ার আগেই বাকি মেয়েরা চেঁচিয়ে উঠলো। না না, স্যার এদিকেই থাকবেন। উষ্ণ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ডান দিকে তাকাল। তনয়া মুখ ঘুরিয়ে ভেংচি কাটলো। সব বুঝে সে। উষ্ণ স্যার ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে। তার আর তন্ময় কে আলাদা করার ধান্দা। দেখা যাক কতোদূর অবধি যায়!
ভোরের ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় সবাই ঝিমুচ্ছে। কিন্তু কেউ ঘুমাতে পারছে না। কারণ ঢালু রাস্তায় একবার গাড়ি উঁচু হচ্ছে একবার নিচু। হেলদুলের কারণে ঘুমের দফারফা হয়ে যাচ্ছে। জ্যোতি, লিলি ওরা একটু যেন বিরক্তিই হলো। কেবল তনয়া চুপ হয়ে বাইরের আবহাওয়া দেখছে। এখান থেকে সাদা মেঘগুলো দেখতে এতো সুন্দর লাগে মনে হয় হাত উঁচু করলেই ছোঁয়া যাবে। একেক পাহাড়ের চূড়া দেখে বিস্ময়ে তার চোখ ঝাপসা হয়ে উঠল। ফোন বের করে ভিডিও করতে লাগল। সবাই এবার চুপ হয়ে ঝিমুচ্ছে। তনয়া উপভোগ করছে বাইরের দৃশ্য। চলন্ত রাস্তায় তারা ভোরের সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখল। এতোক্ষণ বাদে সূর্যের পুরোপুরি দর্শন পাওয়া গেলো। মনে হলো যেন স্বপ্নে বসবাস করছে তারা। এতো দারুণ এতো সুন্দর! সূর্যের সোনালী আলো পড়তেই রাতের অন্ধকার পালিয়ে গেল চোখের নিমিষে। এতো দারুণ ভাবে সকালটা হলো যে তনয়ার মন ভালো হয়ে গেল। হাসি ফুটল অধরপুটে। উষ্ণ চৌধুরী আড়ালে সামনের আয়নায় সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখল। দিন আজ ভালো না হয়ে যায় কোথায়?
বেলা ১০ টার মধ্যেই তারা রিসোর্টে পৌঁছাল। রুম বুকিং করাই ছিল। প্রতিটা রুমে চারজন করে । ডাবল সাইজের দুটো বেড থাকবে প্রতি রুমে। সবকিছুই ঠিকঠাক করাই ছিল। রুমের চাবি নিয়ে সবাই কক্ষে পৌঁছাল। ঘোষণা হলো তার ঘণ্টা তিনেক পড় নেমে লাঞ্চ করবে। এরপর ঘুরতে বেরুবো। ততোক্ষণ সবাই যেন একটু বিশ্রাম নিয়ে নেয়। ঘুমে ঢলতে থাকা ক্লান্ত মানুষগুলো কেবল মাথা নাড়ল। একবার বিছানা পেলে এদের উঠানোর সাধ্যি কার?
#চলবে