#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৪৭
আধমরা উষাণ চৌধুরী এখন কিছুটা সুস্থ। তবে চোখে মুখে এখনো ক্ষ*তের চিহ্ন কেটে আছে। আয়নাতে নিজের নিজের সুদর্শন চেহারা ওমন হালত দেখে কোনোভাবেই মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে না সে। উষ্ণের প্রতি রা*গ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাকে নাস্তানাবুদ করার জন্য হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খায় মাথায়। এখন সে বসে আছে ইরিশার বিশাল বড় কেবিনে। মেয়েটা মিটিং এ গেছে। তাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে। কতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় কে জানে? এদিক ওদিক ঘুরে দেখছিলো। টেবিলের উপর ইরিশা জামানের হাস্যোজ্জ্বল ছবিখানা দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। দরজা খোলার শব্দে মনস্থির করল। ভেতরে এলো ছাই রঙা লেডিস ব্লেজারের আবৃত এক নারী। ঊষাণ তাকে দেখে বিনয়ী ভঙ্গিতে মাথা নোয়ালো। ইরিশা জামানের গম্ভীর মুখ। রেগে আছে নাকি বিরক্ত বোঝা বড় দায়। নাকি আবার দুটোই!
উষাণকে দেখে বোধহয় কটাক্ষ করল। নিস্তব্ধ ঘরে উঁচু হিলের ঠকঠক শব্দ তার দম্ভের পরিচয় দিচ্ছে। চেয়ারের ওপ্রান্তে বসে বলল,
“এতো তাড়াহুড়োর কি ছিল? চাইলে আরো কিছুদিন পরেই তোমার মুখটা দেখাতে পারতে!”
উষাণ দাঁত বের করে হেসে উঠল। চেয়ারে বসে বলল, “কেন? মুখটা কি তোমার পছন্দ হচ্ছে না।”
“পছন্দ হবার মতোও তো কিছু না। যেই পানসে মুখ তোমার। উষ্ণ ফার বেটার দ্যান ইউ। হট, হ্যান্ডসাম, ড্যাসিন লুক, ফ্যাশন সেন্স ও আছে! তোমার আর কি?”
“দেখো আমার লুক নিয়ে কথা বলো না।”
“আমার কথা বলার কোনো শখ ও নেই। শুনলাম উষ্ণ চৌধুরী নাকি নিজের লম্বা চুলগুলো থেকে রেহাই নিয়েছে।”
“কেন? এখন বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে!”
ইরিশা জামান মাথা দুলিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, ওই। আমিও বলেছিলাম কতোবড় লম্বা চুলগুলো কেটে ফেলতে। তাহলে তোমায় আরো হ্যান্ডসাম লাগত। কখনো শুনতই না। এখন কি হলো?”
উষাণ মিনমিনিয়ে হাসল। “ইরিশা জামান যতই বলুক, যে ব্রো কে সহ্য করতে পারে না কিন্তু মনে মনে তাকে কাছে পাওয়ার তীব্র চাহিদা আছে। প্রতি রাতেই বোধহয় তাকে কাম*না করে। হাহ, ব্রো”র একটা লুক তো আছে। মেয়েরা তাকে দেখেই ফিদা হয় সবসময়!”
ঊষাণ কটাক্ষ করে বলল, “দেখো গিয়ে, নিশ্চিত তনয়া বলেছে!”
“ওহ গড, তুমি এখনো তনয়াকে নিয়ে আছো। আমার মনে হয় না উষ্ণের তাকে এতো পছন্দ হতে পারে। সি, ও খুব সাধারণ একটা মেয়ে।”
“সাধারণ মেয়ের মধ্যেই কিন্তু অসাধারণ ব্যাপার থাকে।”
ইরিশা জামান ভাবনায় পড়ে গেলেন। রয়ে সয়ে জবাব দিলেন, “এটা বলতেই কি এখানে এসেছো!”
ঊষাণ হাতের তালু দিয়ে মাথার চুলগুলো ঠিকঠাক করে বলে, “ওই আর কি? কিছু কথা কানে এলো।”
“কি কথা?”
“না, আমি বললে তুমি আবার হার্টফেল করতে পারো। খোঁজ নিয়ে দেখো। উষ্ণের পিছনে লোক লাগিয়ে খোঁজ নাও। কোথায় থাকে? কার সাথে থাকে? তাহলেই সবটা জানতে পারবে।”
“সবসময় এরকম ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে একটু সহজ করেও তো বলতে পারো। আল্লাহ তোমাদের ভাইদের কি দিয়ে বানিয়েছে কে জানে? দুটোই এক!”
ঊষাণ হেসে উঠে বলল, “হ্যাঁ আমরা দু’জনেই এক!”
———-
অফিস থেকে ফিরে এই রাতের গোসল সেরেছে তনয়া। যা গরম, রাতে গোসল না করলে শান্তিতে ঘুমাতে পারত না সে। ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছছিলো। আচমকা হঠাৎ আয়নাতে তার প্রতিবিম্ব দেখা গেল। তনয়া চমকে উঠল। উষ্ণ হাতড়ে তার তোয়ালে নিয়ে দাঁড়াল। তনয়া ঠায় দাঁড়িয়ে দেখছে। শুভ্র রাঙা তোয়ালে দিয়ে খুব যত্ন নিয়ে তনয়ার চুলগুলো থেকে পানি ঝেরে দিচ্ছে সে। তনয়া অবাক পানে চেয়ে ভাবছে, “এই লোকটাকে ভালোবাসলে বুঝি আর ঠকবো না আমি!”
“তনয়া!”
গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বরে ভাবনার সুতোয় টান পড়ল। তনয়া চোখ নামিয়ে বলল, “হ্যাঁ বলুন!”
“একটা আবদার করব?”
“কি আবদার?”
“আগে বলো রাখবে!”
“না আগে শুনি।”
“না বললাম তো।”
“আচ্ছা বলুন!”
“আজ রাতে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। পালাবে না একদম। বুঝলে তো!”
তনয়া হকচকিয়ে উঠল। উষ্ণ মুচকি হেসে তার গালের কাছে একটা চুমু খেলো। তনয়ার পরনে সুতির হালকা একটা জামা। গরমে ভীষণ আরামদায়ক। সাথে পাজামা, গলায় চিকন জর্জেটের ওড়না। এসব ছেড়ে উষ্ণের সাথে ঘুমাতে তার লজ্জা লাগে। লোকটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখে। তার গায়ের গন্ধ তনয়াকে দিশেহারা করে দেয়। কি অদ্ভুত ! একসময় লোকটাকে সহ্যই করতে পারত না। আর আজ, লোকটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে সে। কিভাবে? বিয়ের কারণে?
বিয়ের পর প্রতিটা মেয়েরই বোধহয় স্বামীর প্রতি ভালোবাসা জন্মে। তনয়া ক্ষেত্রে তাই ঘটছে। এই মানুষটি তার স্বামী, তার হৃদয়ের ভাগিদার, বাকিটা জীবনে তাকে আগলে রাখার একমাত্র অবলম্বন । তার প্রতি আসা আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা কোনোটিই মন্দ নয়। এ তো একধরনের আর্শিবাদ। যা স্বয়ং উপরের আসমান থেকে বর্ণিত হয়েছে।
তনয়া কথা রেখেছে। একই চাঁদেরর নিচে তারা দুজন। তনয়া বিপরীত দিকে মুখ ঘুরে শুয়ে আছে। তার চিকন ঢেউ খেলানো কোমরের উপর একাধিপত্য দেখাচ্ছে উষ্ণ চৌধুরী। এই সুযোগে তনয়াকে কাছে টেনে তার গলায় মুখ ডুবালো সে। তার লম্বা চুলগুলোর ঘ্রাণ তাকে মাতোয়ারা করে দিচ্ছে। উষ্ণ চোখ বন্ধ করে বুক ভরে নিল সেই ঘ্রাণ। তনয়ার অস্বস্তি হচ্ছে, একরকম শক্ত হয়েই শুয়ে আছে সে। তার নিস্তব্ধতা আর রুমের নিস্তব্ধতা অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এখানে কেবল উষ্ণের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। তনয়া শুকনো ঢোক গিলল। কারণ উষ্ণ তার কোমরটা বা হাতে খুব শক্ত ভাবেই চেপে ধরেছে। একরকম করলে ঘুম আসে মানুষের। তনয়ারও আসছে না।
“তনয়া!”
তিমিরে ঢাকা পড়া ঘরের মধ্যে অস্ফুট স্বরে মাতাল করা কণ্ঠে তনয়াকে ডাকতেই সে ভিড়মি খেয়ে উঠল। গম্ভীর কণ্ঠস্বরের অধিকারী আবারো ডেকে বলে উঠলেন, “এদিক ঘুরো!”
শুকনো ঢোক খেলার চেষ্টা করল সে। কিন্তু পারল না। গলা শুকিয়ে গেছে। কোনো তরল পদার্থের আভাস পাচ্ছে না মুখের মধ্যে। অগত্যা তনয়া এদিক ঘুরল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কারো ছায়া দেখার সুযোগ নেই। সেখানে উষ্ণ কে দেখতে পাবার প্রশ্ন করা যায় না। তবে অনুভব করা যায়! হ্যাঁ উষ্ণ কে অনুভব করতে পারছে সে। কাছাকাছি আসছে,খুব কাছাকাছি! তার গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তার মুখের উপর। তবুও দাঁড়িয়ে নেই আরো কাছে আসছে। আচমকা এসে তার অধর জোড়ার উপর হা*মলে পড়ল সে। সে ভ*য় পেয়ে উঠল, শক্ত হাতে তার টি শার্টের কলার চেপে ধরল। লোকটা চুমু খাচ্ছে শক্ত ভাবে। তিমিরের এই মিছি মিছি আলোয় কিভাবে যে একজন অপরজনের চুম্বনে মগ্ন হয়ে উঠল বুঝতে পারল না। যখন থেমে গেল তখন কেবল শ্বাস প্রশ্বাসের ধ্বনি। দুজনেই সমান তালে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। উষ্ণ তাকে টেনে নিজের বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিল। গা হিম করা স্বরে বলে উঠলো,
“এদিকেই থাকবে তুমি, কোথাও যাবে না। কোথায়ও না!”
তার কণ্ঠে কেবল আকুতি মিনতি। প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার এক অজানা ভয়!
#চলমান
#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৪৮
তন্ময়ের প্রতি তনয়ার অনুভূতি না থাকলেও মায়া আছে। মেয়েরা খুব সহজে কাউকে মায়া থেকে সরিয়ে ফেলতে পারে না। এতো দিন অফিসে কেবল একজনের সাথে বসেই গল্প করত সে। অভ্যাস হয়ে গেছে তো। হুট করে অভ্যাস ছাড়াতে গেলে কষ্ট হয় ভীষণ! মানুষটা তার সামনেই দাঁড়ানো অথচ সে কথা বলতে পারছে না। একসময় তো বলতো! কতো আড্ডা দিত। এখন আর কিছুই করা হবে না।
বিকেলের দিকে তনয়া ক্যান্টিনে এসেছিল চা খেতে। দূরে তন্ময় কে দাঁড়িয়ে চা খেতে দেখে এই কথাগুলো ভাবছিলো সে। ভেতরে ভেতরে কষ্ট হচ্ছিল তার জন্য। কিন্তু এসব ভাবা অন্যায়। নিজের স্বামী ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের জন্য ভাবা অন্যায় তনয়া। কিন্তু তন্ময় কি শুধুই পরপুরুষ! তার জীবনে বেড়ে উঠার শুরু থেকে তাদের পরিচয়। ঠিক ১৫ বছরের বন্ধুত্ব তাদের। ছেলেবেলা থেকেই একসাথে। এখন হুট করে কথা বন্ধ করে দিলে তার কি কষ্ট হওয়া অন্যায় কিছু?
তবু তনয়া চোখ নামিয়ে নিল। এড়িয়ে গেল। তন্ময়কে ভীষণ ছন্নছাড়া লাগছে। এলোমেলো আর অবাধ্য মনে হচ্ছে যেন। তন্ময় আনমনেই ছিল। তনয়াকে আর দেখল না। তনয়া দূরের টেবিলে এক কোনে বসে চুপচাপ চা খাচ্ছিল। মানুষজন সেখানেও আসা শুরু করে। এরই মধ্যে দু একজনের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে তনয়া।
একজন হতাশ হয়ে বলল,
“আহ ছেলেটার জন্য খারাপই লাগে!”
“কোন ছেলে? কার কথা বলছো?”
“তন্ময়ের কথা বলছি।”
“ওহ হ্যাঁ আমারও লাগল। ইশ কি অবস্থা হয়েছে দেখছো। হাসপাতাল আর অফিস ছোটাছুটি করে ক্লান্ত ছেলেটা!”
হাসপাতাল আর অফিস ছোটাছুটি! কথাটা শুনেই চমকে উঠল তনয়া। হাসপাতালে আবার কার কি হলো? আন্টি আংকেল ঠিক আছে তো। যেচে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কার কি হয়েছে?”
“কি বলছো?”
“একটু আগে না তোমরা কথা বললে তন্ময় কে নিয়ে। হাসপাতাল আর অফিস ছোটাছুটি করে। হাসপাতালে কার কি হলো? জানো কিছু?”
দুজন ব্যক্তি আহম্মকের মতো তনয়ার দিকে চেয়ে রইল। যেন এরচেয়ে অদ্ভুত কিছু তারা যেন শোনেনি। একজন বলল, “তুমি জানো না? তোমরা না বেস্ট ফ্রেন্ড!”
“হ্যাঁ, সেটাই তো তনয়া। তুমি জানো না স্ট্রেঞ্জ!”
প্রতিত্তুরে বলার মতো তনয়ার কাছে কিছু ছিলো না। লজ্জায় সে ম*রে যাচ্ছে। এদের কথার যে কোনো উত্তর নেই তার কাছে। তাদের এই বিস্ময়, কৌতূহলী চোখ ঠেকাতে পারছে না সে। সত্যিই তো,এতদিন তন্ময়ের সাথে ঘোরাঘুরি করলে আর এখন তার দুঃখের সময় তার পাশে নেই। কেমন বন্ধু তুমি?
তবু একজন বলল, “তন্ময়ের বাবা আইসিইউতে ভর্তি, তাও কি জানো না?”
তনয়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তার নতুন ঘর হয়েছে, সংসার হয়েছে, এসব ছেড়ে তন্ময় কে নিয়ে ভাবার সময় পায়নি। যে তুচ্ছ সময়টুকু পায় তাও আবার হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কিন্তু এখন তন্ময়ের এতো বড় বিপদে তার পাশে থাকতে না পারে নিদারুণ এক যন্ত্র*ণায় ভুগছে সে। কেন? কি কারণে? প্রশ্ন করে সময় বাড়ালো না। ওই তো তন্ময় বেড়িয়ে যাচ্ছে দেখে তার পিছন ছুটল। তন্ময়ের সাথে আজ তো কথা বলবেই। কিন্তু? পা দুটো থেমে গেল। তন্ময় ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে বা দিকে মোড় নিল। তনয়া পিছনই ছিল। বা দিকে পা ফেলার আগেই সামনে তার বরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থেমে গেল সে। উষ্ণ হেসে হাত নাড়িয়ে তাকে ডাকছে। তনয়া পা থেমে গেল। মতি পাল্টে গেল। যেন ভাগ্য তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, তোমার পথ ওদিকে না এদিকে।
——–
তনয়ার চিকন লম্বা আঙ্গুল গুলো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল উষ্ণ। তনয়া ছটফট করে বলে উঠলো,
“এটা অফিস কেউ দেখে ফেলবে?”
উষ্ণের বেপোরোয়া জবাব, দেখুক! দেখলেই বা কি? তুমি আমার বিয়ে করা বউ এখন কি আর হাতটাও ধরতে পারব না!
“কি জন্য ডেকেছেন?”
“শোনো আমায় শহরের বাইরে যেতে হবে। আজই যাবো, ইমার্জেন্সি কাজ আছে। কাল সকালেই চলে আসব। একা থাকতে পারবে তো?”
“হঠাৎ? কি দরকার?”
“তেমন কিছু না। এই জরুরি একটু কাজ!”
“আমায় সাথে নিবেন?”
“বাবাহঃ তুমি দেখি আমায় ছাড়া দু’দন্ড থাকতে পারো না।”
তনয়া গম্ভীর মুখো হয়ে বলল, “বেশি কথা কেন বলেন? যাবেন কখন?”
“ওহ এখন দূরেও সরিয়ে দিচ্ছ?”
তার খামখেয়ালি কথা তনয়ার হজম হচ্ছে না। হাতটা ছুটিয়ে পা বাড়াতে গিয়ে হেঁচকা টান খেলো। সোজা এসে থামল উষ্ণের মুখোমুখি। আচমকা উষ্ণ তার ললাটে চুমু খেয়ে বলল, “খুব জলদি চলে আসব। বাসায় একা থাকতে ভয় পাবে না তো?”
“আমায় কি আপনি বাচ্চা ভাবেন?”
উষ্ণ তার গাল টেনে বলল, “তুমি তো বাচ্চাই বেবী!”
উষ্ণের মুখ থেকে প্রথমবার এই ডাক শুনে খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেল তনয়া। লজ্জায় নেত্র নামিয়ে ফেলল।
অফিস ছুটির আগেই তনয়াকে নিয়ে উষ্ণ বেরিয়ে গেলো। তার ইচ্ছা প্রথমে তনয়াকে বাসায় রেখে এরপর বেরুবে। তার সাথে জেএস ও থাকবে। তনয়াকে একা রেখে দিতে মনে সায় না দিলে আগন্তুক ব্যক্তিকে রেখে গেল নজরে যাতে তনয়া বিপদে না পড়ে।
উষ্ণ বেরিয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে তনয়া বেশি একটা কাজ করেনি। খাবার তৈরি করাই ছিল কেবল সেগুলো গরম করল। এরপর সোফায় এসে শুয়ে পড়ল। সোফার পাশেই নীল রঙের চমৎকার একটি ফুলদানি। মনে পড়ল, গতকালই উষ্ণ কে নিয়ে যখন বেরুলো তখনই ফুলদানিটা পছন্দ হয়েছিল তার। তাই নিয়ে এসেছিলো। ফুলদানিতে রাখা রজনীগন্ধার সুবাস পুরো লিভিং রুমে মৌ মৌ করছে! সোফায় উল্টো হয়ে শুয়ে রইলো সন্ধ্যা অবধি। তন্ময়ের কথা মাথা থেকেই যাচ্ছে না তার। কি মনে করে উঠে বসল। মন আনচান করছে বড্ড। ফোন হাতে তন্ময়ের নাম্বার ডায়াল করল। এক মিনিট কথা বলার পরপরই ছুটে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে, যেই সাধের বাসা সাজিয়েছিল সে আর উষ্ণ চৌধুরী!
তন্ময়ের বাবা আইসিইউতে আজ গোটা তিন দিন। হঠাৎ হার্টের ব্যথা শুরু হলো এরপর কিভাবে থেকে যেন কি হয়ে গেল। চোখের নিমিষে সাদা পোশাকধারী লোকগুলো তাকে বদ্ধ আইসিইউতে ঢুকিয়ে দিলেন। ঢুকতে দিলো না তাদের! মা বদ্ধ দরজায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রতি মূহূর্তে। লোকটা একটু চোখ খুলে তাকে যেন দেখতে পারে। কিন্তু কই? সাড়াশব্দ নেই যেন।
সারাজীবনে এই মানুষটির হাত ধরে কাটাবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। লোকটা কি এবার প্রতিজ্ঞা ভে*ঙ্গে চলে যাবেন। ভয় হচ্ছে তার। সাথে ছেলেটাও কেমন গুমরে মুচরে গেছে। তিনি আর সইতে না পেরে আঁচলে মুখ ডেকে কেঁদে উঠলেন। তখনই পিছন থেকে তার ঘাড়ে হাত রাখল তনয়া। আশ্বাসের একটা হাত পেয়ে আরো যেন কিছুটা দুর্বল হয়ে উঠলেন তিনি। তনয়াকে দেখতে পেয়ে কান্নার বেগ বাড়ল। তনয়া কোনোরকম তাকে চেয়ারে বসাল। তিনি হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলেন। বলে উঠলেন, “কোথায় ছিলে তুমি এতোদিন? আগে আসলে না কেন? একটা বারেও কি মনে পড়েনি আমাদের কথা। আজ তিনটে দিন হয়ে গেল!”
তনয়ার কণ্ঠ কাঁপছে। আহ*ত স্বরে বলে উঠলো,
“আন্টি, আন্টি আমায় তো কেউ বলেনি। তন্ময় আমায় ফোন করলেই চলে আসতাম। ও তো আমায় বলল না!”
তিনি আঁচল মুড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। প্রলাপ করছেন, “আমার যে কেউ নেই তনয়া। কেউ নেই। এই পৃথিবীতে আমি একা। উনিই আমার সব। আমার আর আমার ছেলেটার কেউ নেই তনয়া। কেউ নেই!”
এতো বড় এক হাসপাতালের করিডোরে কেবল তিনিই আছেন অসুস্থ স্বামীর পাশে। আর কেউ নেই সামলানোর। গোটা এই পৃথিবীতে একা থাকার কষ্ট তনয়ার চেয়ে ভালো আর কেই বা বুঝবে। তাকে জড়িয়ে ধরল ও। চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জলরাশি আটকানোর জন্য ঠোঁট কামড়ে ধরল। ঝাপসা চোখে ঝলমল করছে বিধ্বস্ত তন্ময়। দূরে দাঁড়িয়ে থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তনয়ার পানে। টুপ টুপ করে অবাধ্য জলরাশির বন্যা ছুটে গেল। তন্ময়ের জন্য এতো কেন ক*ষ্ট লাগছে। এই তো তরী এখন আবার বাবা! ওর সাথেই কেন এমনটা হয় বারবার!
অনেক রাত অবধি অপেক্ষা করা হলো। অনেকক্ষণ! তন্ময়ের বাবা চোখে মেলে তাকাননি। জ্ঞান ফিরেনি এখনো। স্বামীর অসুস্থতা*য় স্ত্রী সবচেয়ে বেশি অসুখী! একদম ভে*ঙ্গে পড়েছে। তিনটে দিন বাসায় ও যায় নি। তবে আজ যে আর রাখা যায় না। তন্ময় আর তনয়া জোর করে তাকে বাসায় নিয়ে গেলেন। খাওয়া দাওয়া, জলপান, নিদ্রা সবকিছুই উবে গেছে তার। এভাবে আর কতোদিন!
তাকে ধরে তন্ময়ের বাসায় আনা হলো। তাকে আগলে ধরে তন্ময়ের বেডরুমে নিয়ে এলো তনয়া। বিছানার উপর বসাতেই শরীর ছেড়ে দিলেন। ক্লান্ত শরীরে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলেন না। কেবলই বিড়বিড় করছেন। তনয়া চেয়েছিল একটু গোসল করে আন্টি ঘুমাক। তাহলে ভালো লাগবে। কিন্তু তা হলো না। তার জ্ঞান আছে। একটু বাদে বাদেই কাঁদছে। তনয়া মেঝেতে বসে তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, “একটু পানি নিয়ে আসি আন্টি। ঠান্ডা পানি আনব।”
“না তুমি বসো!”
“এখন দুশ্চিন্তা করবেন না। আংকেল সত্যিই সুস্থ হয়ে যাবে। একটু সময় লাগবে। কেবল আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। দেখুন, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“হ্যাঁ, সব ঠিক হয়ে যাবে তনয়া। সব! আমি উনাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না এটা তো তিনি জানেন। কিছু হবে না!”
তনয়া মাথা দুলাল। কিছুক্ষণ বসে থেকে হাতটা সরিয়ে ফেলতেই আন্টি শক্ত করে ধরলেন। বলে উঠলেন, “তনয়া, তুমি তন্ময়কে বিয়ে করে ফেলো। আমি ম*রার আগে ছেলেটাকে নিয়ে নিশ্চিত হতে চাই। পারবে না বিয়ে করতে?”
তনয়া হতভম্ব, হতবুদ্ধির মতো চেয়ে রইল। মানুষ স্বার্থ*পর হয়ে উঠলে তখন ভালো খারাপ কোনো মাইনে রাখে না। নিজের স্বার্থ পূরণে যথাসম্ভব নিচে নামতে পারে। এই তো কয়েক মাস আগে, এতিম বলেই তনয়ার উপর তার এতো অগ্রাহ্য! অথচ আজ বিপদের মূহুর্তে বার বার কেবল এই তনয়ার কথাই তার মনে পড়ছিলো। না আসায় অভিমানে বুক ফেটে যাচ্ছিল। কি বিচিত্র মানুষ আমরা!
তনয়া আহম্মক হয়ে পড়ল নিজের ভাগ্য নিয়ে। ভাগ্যের এই নিদারুণ খেলা তার কাছে গলার কাঁটার মতো বাঁধছে। বি*ষে শরীর জ্বা*লা করছে। কেন ভালো হলে সব ভালোই হতে থাকে। একবার পেয়ে গেলে বার বার হাতড়ে স্বপ্ন উঁকি দিতে থাকে! কেন? কেন এখনি?
———–
তখন বোধহয় রাত দুটো বাজে। আন্টি ঘুমাচ্ছে দেখে তনয়া সেখান থেকে উঠে চলে এলো বেডরুমে। পুরো রুম আঁধারে ঢাকা। তনয়া এসেই বাতি জ্বালাল। তন্ময় বোধহয় সোফায় শুয়ে ছিল। আচমকা উঠে বসল। চোখ জ্বালা করছে। লজ্জায় তনয়ার সাথে চোখাচোখি না করেই বলে উঠলো, “কয়টা বাজে? হাসপাতালে যাবার দরকার ছিল!”
“দুটো বাজে। যাবি ভালো কথা। খাবি না কিছু?”
তনয়া রান্নাঘরের কাছে গেল। তন্ময় উঠে পিছন পিছন এসে বলল, “খাবার অর্ডার করে এনেছিলাম। ফ্রিজে আছে!”
“বাইরের খাবার খাবি?”
বলেই তনয়া ঘুরল পিছনে। তন্ময় কে এতোক্ষণ বাদে দেখল ঠিক করে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না সে। চোখ নামিয়ে নিল। তবে তন্ময় তাকিয়ে ছিল। তার চোখেতে ভাসছে মনের কথা, অপরাধ*বোধের চিহ্ন!
তনয়া খাবার গুলো গরম করে এনে রাখল টেবিলের সামনে। তন্ময় খাবার নিল অল্প। সেগুলোই শেষ করতে পারল না। চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল, “মা?”
“ঘুমাচ্ছে।”
“থাক ঘুমাক। আমি হাসপাতালে যাই। তুই চল। তোকেও নামিয়ে দিব।”
“না ঠিক আছে, যেতে পারব।”
তন্ময় ঘড়ির পানে চাইল। কিঞ্চিত হেসে বলল, “রাত তিনটে বাজে তনু। তোর কি ভয় লাগছে আমার সাথে যেতে?”
“না ভয় কেন লাগবে!”
মুখটা ছোট করে জবাব দিল তনয়া। তন্ময় হাসল। বলল, “তবে? অহং*কার হয়? ঘৃ*ণা করিস আমায়?”
তনয়া আতঙ্কিত স্বরে জবাব দিল, “কি আজব? এসব কেন বলছিস?”
“আমার মনে হয় আমার উপর বদদো*য়া পড়েছে তনু। তোর সাথে খারাপ করেছি বলে সৃষ্টিকর্তা আমায় বদ*দোয়া দিয়েছে। এইজন্যই করু*ণ দশা আমার!”
চিত্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসা দমকালো ঘন মেঘ গুলোকে আড়ালে যত্ন করে রেখে দিল সে। এই মূহুর্তে বর্ষণের কোনো ইচ্ছা নেই তার। কেবল অবাক পানে তার মুখাবয়বে চেয়ে রইল। বেশিক্ষণ তাকাতে পারল না। কেমন অস্বস্তি হয়। মনে হয় সে অন্যা*য় করছে। এখন তন্ময় কে দেখলেই কেবল উষ্ণ স্যারের কথা মনে পড়ে। তাকেই মনে পড়ে ভীষণ রকম ভাবে!
তন্ময়ের বসার ঘরের বাতির আলো জানালা দিয়ে দূর দূরান্ত অবধি দেখা যাচ্ছে। তাদের দুজনকে আরো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দূরবীন দিয়ে। আগন্তুক দূরবীন চোখ থেকে সরিয়ে বাজতে থাকা ফোনটা তুলে জবাব দেওয়া শুরু করল, জি স্যার, তারা বেড়িয়ে যাচ্ছে!”
রাস্তার ওপারেই কালো গাড়িতে থাকা উষ্ণ চৌধুরী চোখের কালো চশমা খুলে তাকাল এ পানে। তার বির্ম*ষ আঁখি জোড়ায় আ*গুন জ্ব*লে উঠল। তনয়া শেষমেষ তাকে ঠকা*লো! এই ভাবে। ক্রোধে চোয়াল শ*ক্ত হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়ি স্টার্ট দিল।
উষ্ণ চৌধুরীর গাড়ি তখন প্রায় শহরের বাইরে চলে গেছিল। সেই মূহূর্তে আগন্তুক ফোন করে জানাল তনয়া বাসা ছেড়ে বেড়িয়েছে। এতে উষ্ণ অবাক হয়নি। বের হতেই পারে। তাও নজর রাখতে বলেছিল। এরই কিছুক্ষণের মধ্যে জানতে পারল তনয়া হাসপাতালে তন্ময়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। কথাগুলো কানে আসতে দেরি গাড়ি নিয়ে ব্যাক করতে দেরি নেই। উষ্ণ সোজা চলে এলো তন্ময়ের বাসার কাছে। তনয়া এখানেই আছে। রাত্রির শেষ প্রহর! গোটা একটা রাত তনয়া কাটিয়ে দিল তন্ময়ের বাসায়, তারই সাথে। অজুহাত, কারণ যাই হোক না কেন, উষ্ণ সেসব মেনে নিতেই পারছে না। কারণ মেনে নেবার পরিস্থিতিতে নেই সে। তার মাথায় আ*গুন জ্বল*ছে। পুরো শরীর জ্বা*লা করছে অস্থিরতায়। ছটফট করছে নিদারুণ যন্ত্রণায়। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই কথা, তনয়া তো তাকে ভালোবাসে না তবে? তবে এখনো কি তন্ময়ের প্রতি তার ভালোবাসা রয়েছে। রয়েছে কি সেই আকাশসম অনুভূতি আর আবেগ!
“না তনয়া, তুমি আমায় নিয়ে এভাবে খেলতে পারো না। তুমি তো কেবলই আমার। কথা দিয়েছ না! বিয়ে মানেই তো এটা। বিয়ের পর তুমি আমার, এই প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা! তবে? তবে কেন তোমার এই রূপ দেখাচ্ছো আমায়! কষ্টে আমার শ্বাস নিতেও বুকে ব্য*থা করছে!”
হাঁপি*য়ে উঠে জোরে ব্রেক কষল উষ্ণ চৌধুরী। তার মাথা ঠিক নেই। উ*ন্মাদ হয়ে গেছে সে। তনয়ার প্রেমে তার প্রতিটি উন্মা*দনা হয়ে থাকে। তনয়ার এরকম দূরে সরে যাওয়া মেনে নেওয়া বেশ অস*ম্ভব তার পক্ষে!
দ্রুত বেগে গাড়ি জ্বালিয়ে ফাঁকা রাস্তা পাড়ি দিতে বেশিক্ষণ লাগল না উষ্ণের। ঘরে আসার পর থেকেই তার পাগ*লামি বেড়ে যাচ্ছে। পাগ*লের মতো আচরণ করছে। এই পায়চারি করছে তো আবার জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তনয়া কখন ফিরবে? কখন? এই অপেক্ষা যে তার সহ্য হচ্ছে না। হায় হুতাশ করে সোফায় গিয়ে বসল। ঘড়ির কাঁটার সময়ও যেন আজ তার ধৈর্য নিয়ে খেলছে। রাগে সোফার পাশের নীল রঙের ফুলদানি তুলে আ*ছাড় মা*রল সে। ভে*ঙ্গে গুড় গুড় হয়ে সারা মেঝেতে ছড়িয়ে গেল তা। উষ্ণের রা*গ তখনো কমেনি। এরই মধ্যে বাইকের শব্দে ছুটে এসে জানালায় দাঁড়াল।
তন্ময় বিদায় দিচ্ছে তনয়াকে। এই নতুন জায়গায় তনয়া কে থামতে দেখে ভীষণ অবাক সে। তনয়া মিনমিন স্বরে বলল, “বাসা চেঞ্জ করেছি।”
“কবে করলি? জানালি না তো!”
কথাটা বলেই ঠোঁট চেপে ধরল। তন্ময় ভুলেই গেছে সেই সম্পর্ক যে এখন আর তাদের নেই। বন্ধুত্ব সর্ম্পকটা নিজের হাতেই ক*বর দিলো সে। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে উষ্ণ স্যারের কথা। তিনি তো বলেছিলেন আর বিরক্ত করবেন না। এখনো কি বিরক্ত করেন? জিজ্ঞেস করার আগেই তনয়া বলে উঠলো, “আমি আসি আজ!”
তন্ময় কথা না বাড়িয়ে মাথা দুলিয়ে তাকে বিদায় দিল। তনয়া দ্রুত পায়ে হেঁটে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। ওখানে থাকতেই তার অস্বস্তি হচ্ছিল। লিফটে চড়ে সোজা এসে থামল ফ্লোরে। নিচে তাকিয়ে একমনে ভাবতে ভাবতে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। দরজা ধরতেই খুলে গেল। তনয়ার সেই খেয়াল ও নেই। ঘরের মধ্যে পা রাখতেই মনে পড়ল, আরে দরজা না তালা দিয়ে গেছিলাম! তাহলে?”
দরজায় ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করল সে। অন্ধকারে দাঁড়ানো বিশাল এক ছায়ামূর্তি দেখে তনয়ার প্রা*ণ শুকিয়ে গেল। দেখার জন্য আলোর প্রয়োজন নেই। তার ইন্দ্রিয়, মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে সামনে কে আছে? শরীরের সমস্ত লোমকূপ জানিয়ে দিচ্ছে তার উপস্থিতি। তনয়ার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে। লোকটা কেমন শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে মিশে গেছে। মূর্তি নড়চড় করতেই তনয়া দরজা চেপে ধরল শক্ত করে। তাহলে কি সে বুঝে গেছে আজ তবে তার নিস্তা*র নেই..
#চলমান
তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৪৯
তখন মধ্যরাত! রাতের আকাশে চাঁদের জোৎস্না এক অকৃত্রিম গল্প তৈরি করছে। কালো কালো ভেসের ভাসা দৈ*ত্যের ছায়ার মতো। ভোর হতে বাকি আর কিছুক্ষণ। ঠিক এই মূহুর্তে স্টাডি রুমের টেবিলের কাছে আরাম করে চেয়ারে বসে আছে শেহনেওয়াজ জাওয়াদ চৌধুরী। মন মেজাজ তার ভালো নেই। বড় ছেলেটা কথা শুনে না। ছোট ছেলে ভবঘুরে। ছেলে হিসেবে সে নিজেও তেমন একটা ভালো ছিল না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের অসুখ বাড়তে থাকে। রাতের পর রাত জেগে থাকা হয় কোনো কারণ ছাড়াই। তিনিও আছেন। সারারাত জেগে থেকেও ক্লান্তির ছাপ নেই। সামনের ফাইলখানা কয়েক বার পড়েছেন। জরুরী কিছু না, এভাবেই। ডান দিকের এস্ট্রেতে সিগারেটের শেষাংশ পড়ে আছে অবহেলায়। একটি থেকে একটা ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে কুণ্ডলী পাকিয়ে। সবেমাত্র ছেড়েছেন বোধহয়!
স্টাডি রুমে নিভো নিভো আলোয় মাখা। এমনই থাকে, বেশি আলোতে চোখ জ্বালা করে। গুমোট একটা ভাব আছে। তিনি ছাড়া এই ঘরে কেউ আসে না। সবার জন্য নিষিদ্ধ! স্বয়ং তিলোত্তমা বেগম ও পা রাখেন না। জাওয়াদ চৌধুরী একদমই তা পছন্দ না। এসেও লাভ নেই, তিনটে আলমারির সবগুলোতেই তালা দেওয়া থাকে সবসময়! আলমারি গুলো বেশ পুরনো! পুরো ঘরে আধুনিকতা থাকলেও এই ঘরটাতে যেন পুরনো স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে আছে। কিছু বদলায়নি। দেয়াল ঝরে রঙ উড়ে যাচ্ছে তবুও ঠিক করায়নি। দেখলে মনে হয় কতোটা অযত্নে আছে, অথচ এই ঘরেই যত্নে রেখেছেন ভালোবাসার মানুষটিকে।
চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলেন। চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবছেন। উষ্ণের বিয়ের খবর তিনি পেয়েছেন। সঙ্কা*য় আছেন! উষ্ণ আর তার যেন খুব মিল। এভাবেই সবার অগোচরে ইধিতা বেগমকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। প্রথমে কেউ জানত না তাদের বিয়ের ব্যাপারে। কলেজ জীবনে প্রথম ভালোবেসেছিলেন ইধিতাকে। বিশ্ব সুন্দরীর উপাধি দিলেও ভুল হতো না, এতোই সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। তার এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও আবার ভ*য় ও পেতেন। কারণ ইধিতার সৌন্দর্যের পূজা*রী সে না আরো অনেকেই ছিলো।
কি ভাগ্যের নির্মম পরি*হাস, এতো সৌন্দর্য থেকেও ভালোবাসার মানুষটিকে পায়নি ইধিতা। না কেউ তাকে ছেড়ে যায়নি। তার এক পাগল প্রেমিক তাকে জোর করে তুলে বিয়ে করে নেয়। পাগল প্রেমিক ভাবত জো*র করলে সব হয়। টাকা পয়সার অঢেল মালিক হওয়ায় নিজের প্রতিপত্তি খাটিয়ে ইধিতাকে বিয়ে করে নিলেন তার পাগল প্রেমিক। পুরোপুরি পাগল ছিল না, একটু আধটু পাগল ছিলো। সাথে ভালোমানুষীও ছিলো। ইধিতার প্রেমে সে উন্মাদ ছিলো সে।
কিন্তু ইধিতার মনে সেই উন্মা*দনা সৃষ্টি করতে পারেনি। ভালোবাসার মানুষটিকে তো পেয়ে গেল কিন্তু তার ভালোবাসা পাবার যোগ্য হলো না সে। একসময় তাকে নিয়ে উঠলেন এই বাড়িতে। সংসার শুরু হলো তাদের!
ইধিতা তার ভাগ্যকে মেনে নিলেও মনকে মানাতে পারেনি। হৃদয়ে, মনে, মস্তিষ্কে এখনো তার পুরনো প্রেমিক জেগে আছে আঠার মতো। সংসার করছে ঠিকই কিন্তু মন তো অন্যখানে। এরপর হঠাৎ একদিন দেখা পেল সেই ভালোবাসার মানুষটির সাথে। তখন বহু বছর পেরিয়েছে। সেই সংসারে একটা ছেলেও হয়েছে। বছর পেরিয়ে গেলেও ইধিতার রূপ আর যৌবন কোনো কিছুর কমতি হয়নি। উল্টো ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পাবার তীব্র কামনায় কা*মুক হয়ে উঠল সে। রাতের আঁধারে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেই ভালোবাসার মানুষের সাথে পালি*য়ে গেল। ভাবল না কাউকে নিয়ে। গোটা এতো গুলো বছর, ৭ বছরের সংসার, ৬ বছরের ছোট ছেলে, সেই উন্মাদ প্রেমিক যে কি না তার স্বামীর পরিচয়ে আছে তাকে নিয়েও ভাবল না। স্বা*র্থপর, স্বার্থা*ন্বেষীদের মতো পা*লিয়ে গেল অন্য কারোর সাথে।
তখন সেই উন্মাদ প্রেমিক বুঝতে পারল, এতো বছরেও ইধিতার মন সে পায়নি। এমনকি ছোট ছেলেটার জন্য ও তার মায়া হয়নি। হয়নি কেন? কারণ বুঝি ছেলেটা দেখতে বাপের মতো। তাই রা*গে, ঘৃ*ণা আর ক্ষো*ভে তাকে ফেলেই গেছে। যদি কাছে থাকলে মনে পড়ে তি*ক্ত স্মৃতির কথা!
তিক্ত স্মৃতি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি না। সময়ের সাথে সাথে আমাদের ক্ষ*তের দাগ মুছে যায় কিন্তু হৃদয়ের ব্য*থা মুছে না। মন যাকে একবার ভালোবেসে ফেলে তাকে মন থেকে উপড়ে ফে*লা সহজ না। ভালোবাসার মানুষটিকে একনজর দেখার তীব্র বাসনা জাগে। তখন মনে অস্থিরতা হয়। গলা শুকিয়ে যায়। হন্যে হয়ে দৃষ্টি জোড়া ছুটে চলে তার পানে।
জাওয়াদ চৌধুরী উঠে দাঁড়ালেন। দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ালেন কর্ণারের আলমারির কাছে। চাবি সবসময় তার কাছেই থাকে। এর দ্বিতীয় কোনো চাবি নেই। আলমারি খুলতেই প্রিয়তমার মুখ দেখতে পায়। শান্তি পান তিনি। হৃদয়ের অন্তঃপুরে প্রশান্তির ঢেউ খেলে যায়। অথচ একি! এতো কোনো সাধারণ মানুষের চেহারা নয়। থাকবে কেমন করে? মৃ*ত মানুষের গায়ের চামড়া ক’দিন থাকে তার সাথে। সবকিছু যে প*চে যায়, মিলিয়ে যায়। মিলায় না কেবল হাড়*গুলো! বিভৎস এক কঙ্কাল কে কোলের মাঝে নিয়ে বসে আছে তিনি। তার মুখের হাড়*গুলো হাতড়ে দিচ্ছেন। এগুলো কেবলই হা*ড়, ম*রা মানুষের হার! অথচ তার কাছে এগুলো তার প্রিয়তমার শেষ অংশবিশেষ! তার দেহ! স্নিগ্ধ আঁখি মেলে তাকিয়ে থাকেন প্রহরের পর প্রহর হাঁপিয়ে যান না। কি রকম ভয়ং*কর ভালোবাসা! এগুলো ভালোবাসা না! অনুভূতি না, আবেগ না! এটা কেবল অব*সেশন! মারা*ত্মক নি*ষ্ঠুর অবসেশন। এখানে ভালোবাসার নামে কেবল মনের অধিপতি চলে। একাধিপত্য! নিজের মানুষকে কেবল কাছে রাখার তীব্র আকা*ঙ্ক্ষা, আর ইচ্ছাকে উ*পড়ে ফেলা যায় না। এদের ভালোবাসা হিং*স্র আর ভয়ং*কর!
জাওয়াদ চৌধুরী মানসিক রোগী! সময়, বয়স আর চিকিৎসার সাথে সাথে এখন তিনি সুস্থ কিন্তু অসুস্থ তার চারপাশ। নাহলে কিভাবেই বা পারে, বছরের পর বছর চামড়া, রক্ত, মাংস*হীন একটা দেহ এভাবে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে। সেদিনের পর ইধিতা বেগমকে আর কেউ দেখেনি। দেখেনি তার প্রেমিকেও। দু’জনেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সকলে অস্তিত্ব ভুলে গেলো!
ভুলেনি কেবল রক্তের সম্পর্ক! মাতৃত্ব ভোলা কি এতোই সহজ। উষ্ণের আজও মনে পড়ে তার মায়ের কথা। মায়ের স্পর্শের কথা। অথচ মায়ের এই ক*রুণ দ*শার অবস্থা কি সে জানে?
তনয়া তটস্থ হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে দরজার পানে। আলো জ্বালানো হয়েছে। উষ্ণ তার সামনের সোফায় বসে আছে শান্ত ভঙ্গিতে। তনয়া এক পা একা পা করে সামনে আগালো। জুতো জোড়া খুলে রেখে এগিয়ে এসে বলল,
“আপনার না কাল আসার কথা ছিলো?”
উষ্ণ আচমকা উঠে দাঁড়াল। বুকটা ধড়প*ড়িয়ে উঠল তার। দুই হাত পকেটে গুঁজে শান্ত ভঙ্গিতে উষ্ণ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,
“হ্যাঁ, তোমার কথা মনে পড়ছিলো খুব। তাই চলে এলাম।”
তনয়া পিছু হটতে লাগল।
“কখন আসলেন?”
উষ্ণ এগিয়ে যাচ্ছে। তার ঘাড় বাঁকিয়ে যাচ্ছে। চোখে মুখে হিং*স্রতা টের পাওয়া যাচ্ছে। তনয়া তার মুখের দিকে না তাকিয়েই সবটা আঁচ করে নিল। পিছু হটতে হটতে টেবিলের সাথে এসে ঠেকেছে সে। উষ্ণ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। বলল,
“অনেকক্ষণ! কোথায় ছিলে তুমি?”
তনয়ার জবাব দিতে সময় লাগল। শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“মৌয়ের সাথে। ও বাসায় ছিলাম।”
উষ্ণ তার পানে চেয়ে থেকে তাচ্ছিল্য করে হাসল। তনয়ার আ*ত্মা যেন বেরিয়ে আসে। সত্যি বলার সাহস সে পাচ্ছে। উষ্ণ এগিয়ে আসে। তার তীব্র পারফিউমের গন্ধ নাকে ভেসে আসে। ভ*য়ে তনয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজায়। শ্বাস*রোধ করে নেয় কারণ উষ্ণ ঠিক তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে, “আমি গিয়েছিলাম ওখানে, তুমি ছিলে না। সত্যি কথা বলো কোথায় ছিলে?”
অস্ফুট স্বরে জবাব এলো, “তত্্তন্ময়ের বাসায়!”
“কেন?”
“ওর বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি..
“তো তুমি ওর বাসায় কি করছিলে?”
তনয়া চমকে উঠল। উষ্ণের কথাবার্তায় সন্দেহের রেশ। তিনি কি তাকে সন্দেহ করছেন। উষ্ণ হাত বাড়িয়ে দেয় তার নরম তুলতুলে গালে। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
“গোটা একটা রাত তুমি পর পুরুষের সাথে কাটি*য়ে এলে। আমি একরাত বাসায় নেই বলে এতো সা*হস হয়ে গেল তোমার?”
“আআপনি আমায় সন্দেহ করছেন?”
“সন্দেহ করা কি উচিত নয়? যাবার আগে আমার পারমিশন নিয়েছিলে? বলেছিলে একবার আমায়?”
তনয়ার কাছে কোনো জবাব নেই। তার এখন মনে হচ্ছে সে ভু*ল করেছে। তন্ময় কে যতই আপন ভাবুক না কেন সত্যিই তো, তন্ময় তার জন্য এখন পরপুরুষ। এই সত্য অস্বীকার করার ক্ষমতা তার নেই। অতঃপর লজ্জায় চিবুক নামিয়ে নিল গলায়। তৎক্ষণাৎ উষ্ণ শক্ত হাতে তার চিবুক ধরে মুখ তুলল। বা হাতে তনয়ার কোমর চেপে ধরল জো*রালো ভাবে। ভ*য়ে তনয়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। গা হিমশীতল হয়ে উঠল। উষ্ণের চোখে মুখে অস্থিরতার রেশ। তনয়া করুণ সুরে বলল,
“বিশ্বাস করুন এমন কিছু না। আআ আমি হাসপাতালেই ছিলাম। ওই আন্টি অসুস্থ হয়ে গেছিল তাকে বাসায় নিয়ে গেছিলাম। এতোটুকুই। সারারাত আন্টির সাথেই ছিলাম। তন্ময়ের সাথে…
উষ্ণ আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল তনয়ার ঠোঁটের মাঝৈ। গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো, “আমার মায়ের সাথে কি হয়েছে জানো তনয়া?”
হঠাৎ মায়ের প্রসঙ্গ কেন? তনয়া চোখ মুখ কুঁচকে নিল। উষ্ণের তীক্ষ্ণ নজর ঠোঁটের দিকে। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিচ্ছে চোখের মাঝে। আবারো দৃষ্টি নড়ছে। তার নড়বড়ে দৃষ্টি ভীষণ ভয়া*নক। উষ্ণ তার চোখে চোখ রেখে মনে মনে আওড়ালো,
“জানো তনয়া, আমার মা আমার বাবাকে ঠকি*য়েছিল। বাবা খুব ভালোবাসতেন তাকে। মায়ের এই প্রতা*রণা তিনি সহ্য করতে পারেননি। তাই নিজ হাতে মা’কে গু*লি করেছেন। মা মা*রা গেছে তার বক্ষদেশে। আমার সেই মা কে বাবা এখনো ছাড়েনি। আমি জানি, বাবার আলমারিতে মায়ের মৃ*তদেহ এখনো রাখা আছে। বাবা প্রতিরাতে তাকে দেখেন। তাই বাবাকে আমি ঘৃ*ণা করি। আমি মানতে পারি না এসব। এসবে ভাবলেই আমার দম ব*ন্ধ হয়ে যায়। তিনি যা করেছেন তার কোনো ক্ষমা নেই। সেই বাবার ছেলে আমি! আমার শরীরেও তারই রক্ত! কিন্তু বিশ্বাস করো, এতোটা পশুত্ব আমার শরীরে নেই। বাবার মতো নিষ্ঠুর* আমি নই। আমি বিশ্বাস করি আমি আমার বাবার মতো হবো না। কিন্তু তুমি? তুমিও যদি আমায় ঠকা*ও তাহলে আমি পাগল হয়ে যাবো। তখন কি করব নিজেও জানি না। নিজেকে আর আয়ত্তে রাখতে পারব না। আমায় নি*ষ্ঠুর করে দিও না তনয়া। নীলাম্বরী! আমি হিং*স্র হতে চাই না। আমি কেবল তোমার হতে চাই। শুধু তোমার!”
টলমল করছে অশ্রুকণা তার দৃষ্টিতে। বিন্দু বিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে। দু একটা এসে পড়ল তনয়ার মুখে। তনয়া কান্না থামিয়ে দিল। উষ্ণ কে কাঁদতে দেখে তার বুকটা ফে*টে যাচ্ছে। কেবল নিজের বোকামির জন্য এই মানুষটিকে ক*ষ্ট দিচ্ছে। আচ্ছা এখানে তো উষ্ণ স্যারের কোনো দোষ নেই। তাহলে তিনি কেন ক*ষ্ট পাচ্ছেন।
তনয়া আলতো হাতে তার চোখের অশ্রু মুছিয়ে দিল। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, “আপনি কাঁদছেন কেন?”
গভীর স্বরে উষ্ণ বলে উঠলো, “তুমি কার তনয়া?”
আড়ষ্ট হয়ে উঠল তনয়া। চোখ নামিয়ে ধীরে ধীরে জবাব দিল, “আপনার!”
আচমকা তাকে কোলে তুলে টেবিলের উপর বসিয়ে দিল উষ্ণ। ঘাড়টা শক্ত করে ধরে কাছে টেনে নিল। সে কি করতে যাচ্ছে তনয়া তা বুঝতে পেরেই তার বুকে হাত রাখল শক্ত ভাবে। উষ্ণ তার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বলল, “ইটস ওকে নীলাম্বরী! ইট যাস্ট অনলি কিস। আই নো মাই লিমিটস!”
শক্ত তার কোম*র চেপে* আঁকড়ে ধরল অধর জোড়া। উঁহু এটা মোটেও শান্ত আর আদুরে চুমু ছিলো না। আক্রোশে সে চুমু খাচ্ছে তনয়াকে। ঠোঁট কা*মড়ে রক্তা*ক্ত করে ছাড়ল। তনয়া কেবল হাঁসফাঁস করছে। উষ্ণ সেদিকে নজর দিলো না একবারও। বরঞ্চ তার ঘাড়ের কিছু দুটো কাম*ড়ের দাগ* না করে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না সে।
#চলমান