তোমার সনে বেঁধেছি আমারও প্রাণ পর্ব-৫৭+৫৮

0
19

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৫৭

উষ্ণ ঘরের কলিং বাজিয়েছে অনেকক্ষণ হয়েছে। দরজা খুলতে সময় লাগছে। লাগবে নাই বা কেন? একহাতে কতো ছোটাছুটি করা যায়। কি জানি কি করছিলো মেয়েটা! দাঁড়িয়ে পা নাড়াচ্ছে উষ্ণ। অফিসের সবাই অদ্ভুত আর অবাক হয়ে তাকাচ্ছিল তার দিকে। ম্যানেজার সাহেব ঘুরে ফিরে কয়েকবার কেবিনে এলেন। বোধহয় বিয়ের কথাই জিজ্ঞেস করতে এসেছিলেন। সাহস পেলেন না। কাল নিশ্চিত জিজ্ঞেস করবেন। তার আর তনয়ার বিয়ের খবরে নিশ্চিত অফিসের সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেছে। কি করে এমন একটা মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল এই নিয়েই পড়ে আছে সকলে। ভালোই হয়েছে তনয়া এখন আর অফিসে যায়নি। তাকে কেউ না ধরতে পারলেও তনয়াকে সবাই ঝাপ্টে ধরত। তনয়া অফিস যেতে যেতে পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে যাবে। দরজা খোলার শব্দে উষ্ণ নড়চড়ে উঠল। ওপাশের দরজা সরাতেই মায়াবী মাখা মুখশ্রী থেকে থমকে গেল যেন। তনয়া ঘেমে একাকার। চোখে মুখে গলায় ঘামে চিকচিক করছে মুক্তোর মতো। কপালের সাদা ব্যান্ডেজ দেখে উষ্ণ শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“কি করছিলে?”

তনয়া পায়ের কাছে ঝাড়ুটা তুলে রাখল। বলল, “ঝাড়ু দিচ্ছিলাম।”

উষ্ণ জুতা খুলে পাশে রেখে বলল, “কেন?”

“কেন আবার কি? ঘরে কতো ময়লা জমেছে দেখেছেন? হাঁটলেই মনে হয় বালি কিচকিচ করে পায়ের কাছে!”

উষ্ণ হতভম্ব হয়ে গেল। ঘরের মধ্যে অপরিচিত মানুষের আনাগোনা তার একদমই পছন্দ ছিলো না। ফ্ল্যাটটা ছোট, ছোটখাটো কাজ তারা নিজেরাই করে ফেলতে পারে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাউকে রাখা দরকার। এই টুকটাক কাজ করার জন্য হলেও কাউকে দরকার।

তনয়ার অন্যহাতে ব্যাথা পেলে কি হবে? দুদণ্ড বসে থাকতে তার ইচ্ছে করে না। সাংসারিক মেয়ে একদম। উষ্ণ খেয়াল করল, তনয়া তার শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে আছে।

“বসুন, পানি এনে দিচ্ছি!”

বা হাত চট করে ধরে নিল উষ্ণ। রাগে*র কারণে কপাল কুঁচকে গেছে। গম্ভীর স্বরে বলল, “এই শরীর নিয়ে এসব কেন করছো তুমি? শান্তি দিবে না আমায়? কি চাও তোমার যন্ত্র*ণায় ছটফট করে মা*রা যাই আমি!”

আচমকা কথাবার্তা গুলোয় তনয়া কথা হারিয়ে ফেলল। উষ্ণ তাকে ধরে সোফার উপর বসাল। গায়ে ব্লেজার খুলে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে নিজেই ছুটল রান্নাঘরে। পানির গ্লাস নিয়ে ফিরে এলো সে। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে দ্রুত স্পিডে। উষ্ণ এসে বসল তার সামনে। পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, “পুরোটা খাও!”

ঠান্ডা গলায় বলা কথাগুলোর ঝাঁঝ তীব্র। তনয়া নিশ্চুপে পানির গ্লাস শেষ করল। উষ্ণ নিজের রুমাল বের করে তার গলার ঘাম মুছে দিয়ে বলল,

“নাস্তা করেছিলে? ঔষধ খেয়েছিল। বলেছিলাম নাস্তার পর ঘণ্টাখানেক ঘুমাবে। ঘুমিয়েছিলে? এরপর কিছু খেয়েছো? বারোটা তো বাজে!”

তনয়া একটাও প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলে, “দুপুরে কি খাবেন?”

“বাইর থেকে অর্ডার করব? না, তুমি তো বাইরের খাবার খাও না। আচ্ছা আমি রেঁধে দিচ্ছি বলো কি খাবে?”

“ওমা রাঁধতে জানেন আপনি?”

“জানব না কেন? বিদেশে বেশ কয়েকবছর একা থেকেছি। টুকটাক রান্না তো শিখেই গেছি। কি খাবে বলো?”

“যা রাঁধবেন।”

উষ্ণ উঠে দাঁড়াল। কালো রাঙা শার্টের হাতা ফ্লোট করতে করতে বলল, “ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকো। রান্না করে তোমার সামনে হাজির করছি।”

“না একা একা ভালো লাগে না। আমি এখানে বসে দেখব। আপনি যান!”

এমন আদুরে গলায় বললে উষ্ণ কি না করতে পারে। মুচকি হেসে কিচেনে চলে গেল সে। দ্রুত কি রান্না করা যায়? চালে ডালে খিচুড়ি বসিয়ে দিলে কেমন হয়? নাকি বিরিয়ানি রেঁধে ফেলবে। ভাবতে ভাবতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, ভাত বসিয়ে দিন আর ডিম ভিজে আনুন। ভীষণ খিদে পেয়েছে!”

উষ্ণ ঠোঁট কামড়ে হেসে দ্রুত ভাত বসিয়ে দিল। ডিম ভাজার সাথে সাথে দু পিস মাছ ও ভেজে ফেলল। খাবার প্লেটে সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখল তার নীলাম্বরী সোফার উপর বসেই ঘুমাচ্ছে। কি কাণ্ড! বলেছিলো ঘরে যেতে। উষ্ণ খুব সাবধানে খাবার টি টেবিলে রাখল। তবুও তনয়া জেগে উঠল। ঘুমিয়ে পড়ে যেন ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেছে। সোজা হয়ে বসে বলল,

“সরি আসলে একটু ঘুম আসছিলো।”

“খেয়ে দেয়ে ওষুধ খাবে। এরপর ঘুম দিবে একটা ঠিক আছে।”

বাধ্যমেয়ের মতো মাথা নাড়ল তনয়া। কি আশ্চর্য! ইদানিং উষ্ণ কথা মানতে খুব দ্রুত শিখে গেছে সে। উষ্ণ ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে তাকে। এটা নতুন না, গতকাল ও খাইয়ে দিয়েছিল। তনয়া ভালো লাগছিলো খুব কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেনি, লজ্জা লাগছিলো। তার জীবনে যত্নের বড় অভাব ছিলো। মানুষের পিছনে ঘুরেছে কেবল যত্নের আশায়। ভুল মানুষের পিছনে ঘুরেছে। অথচ ভাগ্য আজ তাকে নিজ থেকে ধরা দিচ্ছে। মেয়েরা বোধহয় একটু যত্ন পেলেই গলে যায়। এই যে উষ্ণ স্যার তাকে পানি খাইয়ে দিচ্ছে। ঠোঁট গড়িয়ে একটু পড়তেই হাত দিয়ে মুছে দিচ্ছে। পরপর কয়েকবার চুল গুলো কানে গুঁজে দিচ্ছে, কপালে গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করছে, জ্বর আসছে কি না! এগুলোই তো যত্ন! কিন্তু সব পুরুষ এসব বুঝে না। নয়তো বুঝেও না বুঝার ভান ধরে। প্রিয় নারীকে একটু যত্ন করলে কি হয় তাদের!

ঔষধ খাইয়ে উষ্ণ তাকে ধরে নিয়ে গেছে বেডের কাছে। তনয়া ঘুমিয়ে যাওয়া অবধি তার পাশে বসে থেকে কপালে হাত বুলিয়ে দিয়েছে। সে ঘুমিয়ে যেতেই কপালে চুমু খেয়ে নিশ্চুপে ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছে। সত্যিই কি তনয়া ঘুমিয়ে গেছিলো। এক ফোঁটা নোনতা জল যে গাল বেয়ে বালিশে পড়েছিল!

উষ্ণ ড্রয়িং রুমে ফিরে জেএস কে ফোন করেছে। “হ্যাঁ, হ্যালো জেএস! শুনো আমার ইর্মাজেন্সি লোক চাই। ঘর দোর ঝাড়ু দেওয়া আর থালাবাসন ধোঁয়ায় জন্য। রান্নাবান্না? না ওটা আমিই করতে পারব। কাপড়চোপড়? না সেটাও আমি ধুয়ে নিব। এখানে থাকতে হবে না। সকালে এসে কেবল কাজ করে চলে যাবে। হ্যাঁ কালকের মধ্যেই নিয়ে এসো!”

ফোন রেখে কপাল কুঁচকে ফেলল। তার নীলাম্বরীকে রান্না করে সেই খাওয়াবে নিজের হাতে। অন্যকারো রান্না কি ও খেতে পারবে। আর ছেলে হলে! তনয়ার জামাকাপড় ধুয়ে দিবে? অসম্ভব! আদৌ হয়নি তবু ভেবেই উষ্ণ চোখ মুখ সব লাল হয়ে উঠল। ভাবলেই শরীর জ্ব*লে উঠে। এই রা*গ নিয়েই রান্নাঘরে ঢুকল। গতরাতের থালাবাসন ধুয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার করে রাখল। নাহলে দেখা যাবে তনয়া এক হাত নিয়েই এখানে এসে কাজ শুরু করে দিয়েছে। অতঃপর কাপড়চোপড় গুলো ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে গোসল করতে গেলো। গোসল সেরে দেখল তনয়া এখনো ঘুমাচ্ছে। ভিজে জামাকাপড় শুকাতে দিয়ে আবারো রান্নাঘরে এলো। রাতের রান্না করে ফেলা উচিত। ব্যস্ত হয়ে উঠল সে তার নারীর সেবাযত্নে!

———-

ইরিশা জামানের জ্ঞান ফিরেছে। অবস্থা ওতো ভালো না। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। জ্ঞান ফিরলেও সে এখনো সুস্থ হয়নি। শরীর নাড়াতে পারছে না। মনে হচ্ছে চামড়া খ*সে পড়ে যাচ্ছে। অস*হ্য যন্ত্র*ণায় বেডে শুয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। তবু জামান সাহেব খুব জোরাজুরি করে ভেতরে এলেন। কেবল একটি কারণেই? মেয়ের এই হাল কে করেছে? কার জন্য তার মেয়ের এই অবস্থা? মাথায় অবশ্য একটা নাম ঘুরছে। শুধু ইরিশার মুখ থেকে শোনা বাকি। সাথে থানার ওসিও আছে। ভিক্টিম নিজের মুখে ক্রিমিনালের নাম বলার অপেক্ষায় আছেন। কারণ ক্রাইম সীনে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেই লোক এতো জঘন্য*তম কাজ করেছে সে অবশ্যই অনেক চালাকচতুর! কোনো প্রমাণ রাখেনি। কি আশ্চর্য! এতো ভয়ং*কর মানুষ ও হয় পৃথিবীতে। একটা মেয়েটাকে এভাবে মরণ*যন্ত্রণা দিলো কিন্তু মে*রে ফেললো না। বাঁচিয়ে রাখল যাতে একটু একটু করে মরা*র স্বাদ পায়! দুনিয়াতে এসব ভয়ংকর মানুষের অস্তিত্ব আছে জেনেই তার শরীর শিউরে উঠে।

জামান সাহেব মেয়েকে দেখছেন। একমাত্র মেয়ে! সব মা বাবার কাছেই তার সন্তান কলিজার টুকরো। অক্সিজেন মাস্কে অক্সিজেন সরবারহ দিচ্ছে তার শরীরে। তিনি মেয়ের পাশে দু’বার নাম ধরে ডাকতেই মেয়ে চোখ তুলে তাকাল। মেয়েকের মুখখানা দেখেই বি*ধ্বস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। মেয়ের ক্ষ*ত বি*ক্ষত দেহ বিধ্ব*স্ত করে দিল হৃদয়কে। তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“কেমন লাগছে মা?”

ইরিশা চোখ বুজে ফেলে। কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে চোখ বেয়ে। জামান সাহেব নিজেকে আর সামলাতে পারছেন না। ছুটে বেড়িয়ে এলেন। কে বা কারা তার কলিজার সাথে এমন হিং*স্র আচরণ করল তা জিজ্ঞেস করার সাহ*স পেলেন না। বাইরে এসেই অস্থির হয়ে উঠলেন। জাওয়াদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে গেলেন। তার চিন্তা হচ্ছে ইরিশা না আবার উষ্ণের নাম নিয়ে ফেলে। যদি তাই হবে তবে তাকে আটকাতে হবে। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।

সবাই যখন ইরিশা কে ফেলে চলে গেল তখন একা কেবিনে ইরিশার সঙ্গ দিচ্ছে তার অক্সিজেন মাস্ক আর পাশের এক যন্ত্র। যেখানে প্রতিনিয়ত ইরিশার হার্টবিটের পরীক্ষণ চলছে। ইরিশা হাত তোলার চেষ্টা করল। নিজের হাত দেখেই ভ*য়ে আঁতকে উঠলে সে। ঝ*লসে গেছে তার হাত। শরীরের অর্ধেক ঝল*সে গেছে। যেই রূপের দম্ভে নিজের মাথা উঁচিয়ে রাখত সেই দম্ভ এখন আগু*নে পু*ড়ে ছাই হয়ে গেছে। ইরিশা চোখ বন্ধ করতেই উষ্ণের মুখটা ভেসে উঠল। সে চোখ বুজে নিল। উষ্ণের বলা কথাটা তার মনে পড়ছে, “পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ কি জানো? নিজেকে মে*রে ফেলা, নিজেকে হ*ত্যা করা!”

কানে বারংবার বাজছে সেই কথা। ইরিশা বুঝতে পারছে, উষ্ণ কেন তাকে একেবারেই মে*রে ফেলেনি। তার কথার অর্থ বুঝতে পারছে সে। বা হাতে অল্প অল্প করে অক্সিজেন মাস্ক আঁকড়ে ধরে খুলে ফেলল। দুনিয়ার বিশুদ্ধ অক্সিজেন তার কাছে বি*ষের মতো লাগছে। শরীর জ্বা*লা করছে। চোখ বন্ধ করে হাঁসফাঁস করছে একটু শ্বাস নেবার জন্য। পারছে না! চোখে আঁধার নেমে আসছে। এতো কষ্ট স*হ্য করছে কারণ তুচ্ছ পৃথিবীতে থাকতে চায় না সে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কারণ কি তবে ফুরি*য়ে গেছে তার।

#চলমান

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৫৮

বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙলো তনয়ার। লম্বা একটা ঘুম দেওয়ার কারণে তার শরীর নিমিয়ে গেছে। ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে মিষ্টি স্নিগ্ধ আলো আসার চেষ্টা করছে। ঝিমিয়ে পড়া বিকেলের আলো আঁটকে রেখেছে উষ্ণ। তার নীলাম্বরী ঘুমাচ্ছে। ওই তুচ্ছ আলো কি পারে তার‌ ঘুম নষ্ট করতে! বিছানার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল সে। তনয়ার ঘুম ভেঙ্গেছে অনেকক্ষণ। তবুও বিছানায় বা দিক করে শুয়ে আছে সে। তার গা ঘেসেই বসে আছে উষ্ণ। হাতে তার ল্যাপটপ। কিছুক্ষণ আগেই ইরিশা জামানের মৃত্যু*র খবর পেয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই খবর ছড়িয়ে গেছে স্যোশাল মিডিয়াতে। সেই দু*র্ঘটনার পর তনয়ার ফোন ভে*ঙ্গে গেছে। ভালোই হয়েছে। ইরিশার খবর সে না জানাই ভালো। তনয়া যেন কখনোই না জানতে সেই ব্যবস্থা করবে বলে ঠিক করে উষ্ণ চৌধুরী।

তনয়া পিটপিট আঁখি মেলে দেখছে উষ্ণ চৌধুরীকে। ল্যাম্পটপের‌ মৃদু আলো এসে পড়ছে তার মুখেতে। তনয়ার দেখার আভাস অনেকক্ষণ ধরেই পাচ্ছিল সে। মুচকি হেসে উঠে শুধায়,

“কি দেখছো?”

“আপনাকে দেখছি!”

অপ্রত্যাশিত উত্তর পেয়ে উষ্ণ অবাক হলো। থেমে গিয়ে দৃষ্টি ভিড়াল এদিকে। শুধাল,

“কি বললে?”

“বললাম আপনাকে দেখছি। কেন? কি হয়েছে?”

“আমায় দেখছো!”

“এতো অবাক হওয়ার কি আছে? দেখি সরুন তো গায়ের সাথে ঘেসে বসে আছেন কেন?”

উষ্ণ আর বাকি কথা শোনার আশায় নেই। সে মা*রাত্মক চমকে গেছে। প্রায় ঘোরের মধ্যেই চলে গেছে সে। ঘোর থেকে বের হয়েই তনয়াকে আঁকড়ে ধরল। একা একা বিছানা থেকে উঠতেও কষ্ট হয় তনয়ার।

“কি হয়েছে?”

“মাথাব্যাথা করছে।”

“এতোক্ষণ ঘুমানোর পর মাথাব্যথা কার করে?”

“আমার করে। কেন কোনো অসুবিধে!”

“বিরাট অসুবিধা! আগে বলবে না? রেডি হও এখনই ডাক্তারের কাছে যাবো। তোমার মাথার এ*ক্সরে করাবো। চো*ট পেয়ে কি এমন হলো নাকি?”

তনয়া গম্ভীর মুখে কিছুক্ষণ তার মুখ পানে চেয়ে বলল, “গাধা!”

“কি বললে?”

“বললাম আপনি একটা গাধা। মাথা ব্যাথা করছে চা খাইনি বলে!”

“ওহ সেটা বলো, চা খাবে। এতো বাহানা করার কি আছে। নিয়ে আসছি চা!”

ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো উষ্ণ। তনয়া তখনো বিছানায় বসা। হাতের ফোনটা নেই তার। ফোন ছাড়া থাকতে মন্দ লাগছে না। এর আগেও ফোনের প্রতি তার ওতো আকর্ষণ ছিলো না।

হুট করে আবারো ঘরে ঢুকল উষ্ণ। তনয়া চমকে উঠে বলল, “চা হয়ে গেল এতো তাড়াতাড়ি?”

“না, মৌয়ের ফোন। নাও কথা বলো!”

ফোনটা এগিয়ে দিল সে। যাক একমাত্র মৌয়ের কথাই মনে পড়ছিলো তার। অসুস্থ খালাকে দুশ্চিন্তা দিয়ে কি লাভ। খালাত ভাই বোনের সাথে সম্পর্ক বিয়ের পরই কেমন যেন একটা হয়ে গেল। আগেও তো এতো ভালো ছিলো না। এপাশ থেকে “হ্যালো” বলার সাথে সাথেই মৌ চেঁচিয়ে উঠলো।

“কি আশ্চর্য চেঁচাচ্ছিস কেন?”

“কেমন আছো?”

বেঁচে আছি দেখেই তো কথা বলছি তাই না।

কিভাবে থাকো তুমি আপু। একটু নিজেকে দেখে রাখতে পারো না। কি করে এই কাণ্ড ঘটালে বলো তো।

বিপ*দের কি হাত পা থাকে রে মৌ। তুই বল কেমন আছিস।

তোমায় ছাড়া ভালো নেই আপু। নতুন রুমমেট তোমার মতো না। তোমাকে অনেকগুলো ফোন দিয়েছি। বন্ধই আসছিলো বারবার তাই‌ তোমার উষ্ণ স্যারের ফোনে কল দিলাম।

হ্যাঁ ফোনটা হারিয়ে ফেলেছি। ফোন কেন দিচ্ছিলি?

কিছু না এমনেই। কথা বলতে ইচ্ছে হলো। জানো তো কতো ভালোবাসি তোমায়।

রসের কথা শুনে হাসলো তনয়া। মিষ্টি স্বরে বলল, রুমমেটের সাথে মিলেমিশে থাক। ঝগড়া করিস না মৌ।

কি বলো আপু? আমি কি ঝগড়া করার মানুষ?

না বলছি তোকে। সাবধানে থাকিস। যত্ন নিস নিজের।

তা তো নেই আপু। তুমি বলো না, তোমার উষ্ণ স্যার কি করছে?

চা বানাচ্ছে।

বাব্বাহ কি ভালোবাসা। যত্নআত্তি করছে নিশ্চয়ই। হুঁ হুঁ। শুনেছি খাবারও নাকি খাইয়ে দেয়। রান্নাও করে তো সে।

মুখখানি তার মূহূর্তের রক্তিম হয়ে উঠল। ইতস্তত করে বলল, “তোকে এসব কে বলল?

মৌ জবাব দিলো না। হাসল। তার হাসির শব্দ এদিক অবধি পাওয়া যাচ্ছে। তনয়া শুকনো ঢোক গিলে নিল। মৌ একটা কথা বলেছে। ভীষণ বাজে কথা। শুনেই তনয়ার মুখ কান সব লাল হয়ে গেছে। এমনকি কান দিয়ে ধোঁয়া অবধি বের হচ্ছে। সে চট করেই ফোন কেটে দিল। বিছানায় বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। লোকটা কতো অ*সভ্য! ব*জ্জাত লোকটা কি সবাইকে সব বলে বেড়ায় নাকি!

কিছুক্ষণের মধেই গলা ছেড়ে ঢাকল উষ্ণ। রান্নাঘর থেকেই জিজ্ঞেস করছে, “চায়ে ক’চামচ চিনি দিব?”

“চিনি ছাড়া চা খাই আমি!”

উষ্ণ মাথা নেড়ে মুখস্থ করে নিল। তার নীলাম্বরী চিনি ছাড়াই চা খায়। দু কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকে গেল। তনয়া যেভাবে ছিল সেভাবেই বিছানায় পড়ে ছিল। ক্লান্ত নি*থর দেহ হঠাৎ চায়ের কাপ দেখেই নড়েচড়ে উঠল। এক কাপ চা তার এনার্জি বাড়িয়ে দিল। উষ্ণ চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। তনয়া অপরিপক্ক ভাবে বা হাতে চায়ের কাপ তুলে নিল। উষ্ণ তার চায়ের কাপ নিয়ে বসেছে বিছানার অন্যপাশে। তনয়া প্রথমে চায়ের কাপে চুমুক দিল। চোখ মুখ সব কুঁচকে নিয়ে বলল,

“কি বাজে খেতে!”

“সত্যিই বাজে।”

“হ্যাঁ, কখনো চা বানান নি নাকি?

“না সেই সৌভাগ্য হয়নি। এছাড়াও চিনি ছাড়া চা খেলে ওমনই লাগে।”

তনয়া মুখ ভেংচি কেটে বলল, বলেছে আপনাকে। আমি তো সবসময় চিনি ছাড়াই চা খাই।

“তেতো তেতো চা খাও বলেই তোমার মুখটা তেতো হয়ে গেছে।

“কি বললেন?

“যা শুনলে।

“অস*ভ্য!

“স্বামীকে কেউ অসভ্য বলে? সম্পর্কে তোমার আমি বড় জানো।”

সে মুখ ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিল। যেন পাত্তাই দিলো না। চায়ের কাপ শেষ করার পরপরই উষ্ণ চিরুনি হাতে নিয়ে বসল। দু’দিন চুলগুলো না আঁচড়ে একদম জট পাকিয়ে গেছে। সেই জট খুলতে খুলতে উষ্ণের নাস্তানাবুদ অবস্থা। এরপর তো রয়েছে তনয়ার আ*র্তনাদ। চুল ধরতে না ধরতেই বলে উঠে,

“আরে লাগছে তো। কি করছেন? আহা এতো জোরে কেউ টান দেয়। ছিঁ*ড়ে ফেললেন চুলগুলো। উফ! কে বলেছে আপনাকে চুল আঁচড়াতে। আমার শখের চুলগুলো!”

উষ্ণ ফ্যাকাশে মুখ করে চুল আঁচড়ে দিল। সে তো ভালোর জন্যই আঁচড়ে দিয়েছিলো। মাথাব্যথা করছে ভেবে.. কিন্তু এখন কি হিতে বিপরীত হলো। নিজের অপরিপক্ক হাতে এলোমেলো করে একটা বেনী করে দিল। বেনীর হাল দেখে তনয়া মুখ টিপে হেসে বলল, “ধন্যবাদ। চুল না আঁচড়ে শান্তি পাচ্ছিলাম না। আপনি আমার মনের কথা বুঝলেন কি করে বলুন তো।”

উষ্ণ রহস্যময় একটা হাসি টেনে তার গাল টেনে দিল। চুল আঁচড়ানোর জন্য কপালের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছিলো। সেই ক্ষ*ত স্থান নজরে পড়তেই হাত ছুঁইয়ে দিল।

“আহ!”
উষ্ণ হকচকিয়ে উঠে বলল,
“কি হলো? লাগল নাকি।”
তনয়া শব্দ করে হেসে বলে উঠল, “না!

“উফ তনয়া। এমন ফাজলামি করবে না আমার সাথে তুমি। আরেকটু হলেই..

তনয়া মুখ সামনে ঘুরিয়ে বলল, “আপনার সাথে ফাজলামি করব না তো কার সাথে করব।

উষ্ণ থমকে গেল। কথার মাঝে তনয়া বুঝিয়ে দিল সে তনয়ার কতো আপন। বড্ড আপন! ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক সহজ করছে। একজন অপরজনকে আপন করে নিচ্ছে। তনয়ার মনে উষ্ণের জন্য জায়গা হচ্ছে। পেছন থেকে তার কোমর আগলে ধরল সে। চিবুক ঠেকাল তনয়ার ঘাড়ে। তনয়া কিচ্ছুটি বলল না! নিস্তব্ধ ঘরে দুজনেই নিস্তব্ধ রইল।

#চলমান