তোমার সনে বেঁধেছি আমারও প্রাণ পর্ব-৫৯+৬০

0
16

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৫৯

উষ্ণের জীবনের প্রতিটি ভোর এখন চমৎকার হয়। ভোরের মিষ্টি আদুরে রোদ এসে ভিড় করে তাদের জানালায়। তনয়ার বিয়ের পর প্রতিটা ভোরে ঘুম ভেঙেছে উষ্ণের বুকের মধ্যে। একদিনও এর অন্যথা ঘটেনি। শুরুতে উষ্ণ তাকে জোর করে বুকে আগলে রাখত। ধীরে ধীরে তনয়ারও যেন অভ্যাস হয়ে গেছে। উষ্ণের বক্ষ স্থল ছাড়া আর কোথাও শান্তির ঘুম পায় না সে। এখন তো আরো হাতে প্লাস্টার। হাত পা সব উষ্ণের গায়ে তুলেই আরামে ঘুমায় সে। ভালো লাগে উষ্ণর। সে তো চেয়েছিল তনয়ার জীবনে একমাত্র সেই থাকুক, সেই হোক তাকে আগলে রাখার মানুষটি!

আজও তার বৃথা হয়নি। তনয়া এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ইদানিং এতো এতো ওষুধ খেতে হয় যে ঘুমের তেজ বেড়ে গেছে। উষ্ণের ঘুম ভেঙেছে অনেকক্ষণ। সে মিটিমিটি আঁখি মেলে তনয়ার মুখপানে চেয়ে আছে। তনয়ার গাল তার বুকের সাথে মিশে আছে।‌ কি মিষ্টি লাগছে মেয়েটাকে! সে নড়েচড়ে উঠল। এদিক ওদিক নড়াচড়া করতে গিয়ে হাতে না ব্যাথা পেয়ে বসে এই ভেবে উষ্ণ তার হাতটা ধরে নিল। সে চোখ মুখ কুঁচকে উষ্ণের মুখের দিকে তাকাল। দুচোখে এখনো রাজ্যের ঘুম। হামাগুড়ি খেয়ে আবারো পড়ল তার বুকের মধ্যে। অন্যহাতে তাকে জড়িয়ে ধরে হারিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে। মুচকি হেসে উঠল সে। সকাল টা এতো দারুণ কাটলে খুশিতে মন ভরে যায়। সারাটেদিন কতোই না ভালো যাবে!

তনয়ার হাতে প্লাস্টার আজ তিনদিন। তিনদিন ধরে তার পোশাক আশাক হচ্ছে উষ্ণের শার্ট আর ট্রাউজার। উষ্ণের কালেকশনে অনেক ভালো ভালো শার্ট আছে। সে একেকটা ট্রাই করে। ভালোই লাগে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে শার্টের সাথে মেশে থাকা ঘ্রাণ। ফুলের মিষ্টি সুবাস ভালোই লাগে। তনয়া মাঝে মাঝে ভাবে তার ভাদাইম্যা স্যারের পছন্দ এতো ভালো হয় কি করে! বহুদিন পর ভাদাইম্যা নামটার কথা মনে করে হেসে ফেলল সে। নামটা তো ভুলেই গেছিলো। মুখ টিপে হেসে উঠে। উষ্ণের নজর সেই হাসিতে যেতেই জিজ্ঞেস করে,

“কি হলো? হাসছো যে!”

উষ্ণের মুখের দিকে তাকিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে হেসে উঠে সে। উষ্ণ চামচে করে ড্রাগন ফলের স্লাইস তার মুখের কাছে নিয়ে বলল,

“আমার মুখে কিছু লেগে আছে? হাসলো কেন?”

তনয়া ফল মুখে নিয়ে বলল, “না হঠাৎ করে আপনার লম্বা চুলগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।”

“ওহ লম্বা চুলগুলো, হ্যাঁ মায়া লাগে চুলগুলোর জন্য।

তনয়া আবারো হেসে উঠল। উষ্ণ চোখ মুখ কুঁচকে বলল, “হেসো না। এখন মনে হয় আমার মাথায় চুলই নেই। টাকলা টাকলা লাগে। মাথার চুল ঘাড়ে না পড়লে ভালো লাগে।

“হ্যাঁ, সেটাই তো। আপনার ছাগলের লেজের সমান চুলের ঝুঁটি।

“তনয়া!

তনয়া হাসতে হাসতে তার গায়ে এসে পড়ল। হঠাৎ করে তাকে এমন হাসতে দেখে ভালো লাগছে উষ্ণর। এই হাসির জন্য না হয় জোকারই হলো সে। তনয়া নিজেকে সামলে নিল। পানির গ্লাস হাতে নিয়ে আড়চোখে উষ্ণ কে দেখে বলল, “তবে আপনাকে লম্বা চুলে অনেক মানায় কিন্তু উষ্ণ স্যার!”

“সত্যি বলছো।

তনয়া মাথা দুলিয়ে বলে, হ্যাঁ লম্বা চুলেই বেশি মানায়। লম্বা চুল তো আপনার পরিচিতি।

“তাহলে অনুমতি দিচ্ছ চুলগুলো বড় করে ফেলার।

তনয়া জবাব না দিয়ে ঘুরে বসে। উষ্ণ নিজের হাতড়ে বলে, “যাক চুলগুলো আবারো বড় করে ফেলব এবার।

তনয়া মিটিমিটি হেসে বলে, “আপনার সেই ছবিটা আমায় দেখাবেন।

“কোন ছবি?

“ওই লাল বাঁদর।

“একদম না!

“উষ্ণ স্যার, প্লিজ। আমি দেখব!
হাসতে হাসতে তার হাত ধরে বলল। উষ্ণ মাথা নাড়িয়ে বলল, “একদম না। আমি তোমাকে দেখাব না।

“কেন? আপনিই তো বলেছিলেন। লাল চুলে আপনাকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছিলো। আমিও দেখতে চাই কতো বড় লাল বাঁদর লাগছে।

“খুব বাঁদরামি করছো তুমি!

তনয়া হাসতে থাকে। উষ্ণ বলে উঠে, ঠিক আছে দেখাব।

সত্যি!

হ্যাঁ, তার আগে আমার নাম থেকে স্যার নামটা কেটে দাও।

মানে?

বর কে কেউ স্যার ডাকে। উষ্ণ স্যার, উষ্ণ স্যার এসব কি? উষ্ণ বলে ডাকতে পারো না?

তনয়া মাথা দুলিয়ে বলে, না। কেমন যেন শুনা যায়। উষ্ণ স্যারই বেটার আছে।

উষ্ণ এবার তার সামনে বসে পড়ে। হঠাৎ তার দিকে ঝুঁকে বলে, আমি এর থেকেও বেটার নাম খুঁজে দিব তোমায়! বলবে, এই অমুকের আব্বু শুনছেন? সুন্দর না নামটা!”

চোখে চোখ রেখে কথাটা বলে ফেলল উষ্ণ। তনয়া থতমত খেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল। আর তুলতে পারছে না। লোকটা তো তার সামনেই। লজ্জায় তার শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে। উষ্ণ স্যারের ছোঁয়া পেয়ে আরো কেঁপে উঠল।

“কি হলো? বলো! নামটা বেটার কি না? আমার তো মনে হয় বেস্ট।

“জানি না, সরুন। আপনার সাথে কথা বলাই আমার অন্যায় হয়েছে। দেখা লাগবে না কোনো ছবি।”

বলেই তড়িঘড়ি করে নেমে ঘরের দিকে ছুটে যায় সে। নীলাম্বরীর লজ্জা মাখা মুখশ্রী উষ্ণের হৃদয়ে প্রণয়ের ঝড় তুলে। আজ তনয়ার চোখে মুখে অন্যকিছু ছিলো। যা কেবল ভালোবাসার মানুষই বুঝতে পারে!

———

দুপুরের দিকে তনয়া বের হলো ঘর ছেড়ে। উষ্ণ তখন রান্নাঘরে পেয়াজ কাটতে ব্যস্ত। চোখ জ্বালা করছে ভীষণ! ঘরের কাজ করার জন্য একট খালা পাওয়া গেছে। তনয়ার সাথে এখনো তার দেখা হয়নি। তার কাজের যা গতি, কখন যে এলো আর কাজ মিটিয়ে চলে গেলো উষ্ণ অবধি টের পেলো না। খালাকে বলে কয়েকটা পেঁয়াজ কাটিয়ে রাখতে হবে। নয়তবা এই পেঁয়াজ তার রফাদফা করে ছাড়বে।

পেঁয়াজের শোক কাটানো গেলো না তনয়া এসে হাজির হয়েছে। এসেই কাঁচুমাচু মুখ করে বলল,

-আপনার ফোনটা একটু দিবেন?
– ফোন? হ্যাঁ নাও। কাকে কল দিবে?
– মৌ কে!
– আচ্ছা দাঁড়াও!

উষ্ণ নাম্বার ডায়াল করে দিল। ফোন হাতে নিয়ে তনয়া সরে গেল অন্যদিকে। উষ্ণ পেঁয়াজ কাঁটা থামিয়ে তনয়াকে দেখছে। নিশ্চিত কিছু পাকাচ্ছে তনয়ার মাথায়!

-হ্যালো, হ্যাঁ আপু বলো।
-আমাদের বাসায় একটু আসতে পারবি?
– একটু কেন? বেশিই আসতে পারব। কি হয়েছে?
– কাল না তোর অফ ডে।
– হ্যাঁ, আচ্ছা তুমি বলো না কি সমস্যা?
– আমার মাথায় একটু শ্যাম্পু করা লাগবে মৌ। আমি একা পারছি না তুই…
– ওহ্ এই বলো! কেন? তোমার উষ্ণ স্যার আছে কোন কারণে বলো তো। তাকে বললেই তো তোমাকে সাবান দিয়ে ঘসে গোসল করিয়ে দেয়।
– উফ্, আবার শুরু করলি তুই।
– আপু তুমিও না। বর থাকতে আমায় কেন ডাকছো?
– ওহ আবারো! মৌ!
– আহা রা*গ কেন করছো? তোমার শরম কি আমার থেকেও তোমার উষ্ণ স্যারের কাছে বেশি নাকি। স্বামীই তো!
– রাখলাম আমি। আসা লাগবে না তোর।
– আচ্ছা আচ্ছা *রাগ করো না। আমি আসব কাল। দেখব তোমাদের, নতুন দম্পতির প্রেম কতোটুকু আগালো, জল গড়ালো কতদূর!
– পাজি মেয়ে একটা!

বলেই ধপ করে ফোনটা কেটে নিল। অতঃপর ফোনটা উষ্ণ স্যারের কাছে দিয়েই ঘরে চলে গেল সোজা। বিছানার উপর বসে মৌ কে কতো গুলো গালিগালাজ করল। “মৌ একটা নষ্ট মেয়ে! অল্প বয়সেই পেকে গেছে। উনি আমায় যতটুকু সাহায্য করে ততোটুকুই তো অনেক। এরপর এসব কিভাবে বলে? এতোই কি সহজ! উনি আমায় গোসল.. ছিঃ ছিঃ ছি!” ভেবেই তনয়া লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। আগে সে উষ্ণ স্যারের সামনে লজ্জা পেতো না। এখন লজ্জা পাওয়া শিখে গেছে। দুদিন পর লজ্জা ও ভেঙে যাবে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এতো লজ্জা আবার থাকে নাকি?

পরদিন তনয়া অপেক্ষা করছে মৌয়ের জন্য। মেয়েটাকে বলেছিলো তাড়াতাড়ি আসতে। দুপুর হতে চলল এখনো তার আসার নাম নেই। তনয়া কেবল পাইচারি করছে আর মাথা চুলকাচ্ছে। ডিভানে বসে উষ্ণ একটু পর পর তাকে দেখছে আর কফি মগে চুমুক দিচ্ছে। তনয়ার এতো অধৈর্য্য হবার কারণ সে জানে। কারণ তার ফোনে অটোমেটিক কল রেকর্ডিং করা আছে।

তনয়া অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠল। সে জেনে গেছে মৌ আসবে না। মেয়েটাকে খুব ভালো চিনে। আস্ত একটা শয়*তান মেয়ে! আসবি না বলে দিলে কি এমন ক্ষ*তি হতো। সবসময় ঢং করবে। পাজি মেয়ে একটা!

রে*গে মেগে ঘরে ঢুকে গেল। উষ্ণ ঘাড় বাঁকিয়ে তার চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখল। সে ফের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো। উষ্ণের সামনে দাঁড়িয়ে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে নিচু গলায় বলল,

“শুনছেন!”

তনয়ার ডাক শুনেই উষ্ণ বেসামাল হয়ে গ*রম কফি গায়ে ফেল দিল। উরুর উপর গরম কফির পড়ে জ্ব*লছে খুব। তবুও তার চোখে মুখে কোনো ভঙ্গি নেই। সহজ গলায় বলল, “হুম!”

তনয়া অন্যদিকে চেয়ে আছে। সরাসরি কথাটা বলতেও তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। আবার উপায়ও দেখছে না। অতঃপর বলেই ফেলল,

“আমার চুলে একটু শ্যাম্পু করিয়ে দিবেন!”

বেসামাল হয়ে এবার কফি মগটাই হাত থেকে পড়তে যাচ্ছিল সামলে নিল। ওষ্ঠজোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে মাথা দুলাল। তনয়া তা দেখল না। দেখার দরকার ও নেই। সে জানে উষ্ণ স্যার রাজি হবেই হবে। ও বাঁদর লোক রাজি না হয়ে যাবে কোথায়!

#চলমান

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৬০

ইরিশা জামানের মৃ*ত্যু শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে জামান সাহেব আর তিলোত্তমা বেগম। দুই ভাইবোনের চোখের মণি ছিলো সে। তিলোত্তমা বেগমের নিজেরও কোনো মেয়ে ছিল না। ইরিশাকেই মেয়ের আদর দিয়ে মানুষ করেছে। বিশ্বাস করতে ক*ষ্ট হচ্ছে মেয়েটা আর নেই। উষাণ ও চুপচাপ হয়ে গেছে। ছোট থেকে এক সাথেই ইরিশার সাথে বড় হয়েছে সে। তার বোন ছিলো, খেলার সাথী ছিল। কতো গুলো বছর একসাথে কাটালো তারা। ইরিশা জামান আজ নেই কেবলমাত্র উষ্ণের জন্য। হ্যাঁ উষ্ণই মেরে*ছে ইরিশাকে। কি নি*র্মম মৃত্যু! একটা মানুষকে এতোটা মৃ*ত্যু যন্ত্রণা দিলো যে মেয়েটা শেষপর্যন্ত নিজেই নিজের প্রাণ দিয়ে দিল। এই ক*ষ্ট সহ্য করে আর বেঁচে থাকতে চায় না সে। তিলোত্তমা বেগম নিজেও খানিকটা নেতিয়ে গেছেন। তিনিও জানেন এই কাজ উষ্ণের। আশ্চর্যভাবে সবাই জানে, উষ্ণ ছাড়া এই কাজ আর কারোরই হতে পারে না। কেবল প্রমাণের অভাবে কিছু করতে পারছে না। কিন্তু একটা মেয়ের প্রা*ণ এভাবে চলে গেল কেউ কিচ্ছু করবে না সেটাও হয় না।
জাওয়াদ চৌধুরী সোফার উপর শান্ত উপায়ে বসে সিগারেট ধরালেন। সামনেই তার শালা আর বউ একটু একটু করে ইরিশার কথা মনে পড়ছে আর চোখের জল ফেলছেন। ইরিশার জামানের জন্য জাওয়াদ চৌধুরীর খারাপ লাগে না। তিনি লাগতে দেন না। তাহলে ছেলেকে আগলে রাখবেন কি করে? মা বাবাদের একটু স্বার্থপর না হলে হয় না।
ঊষাণ তার বাবার দিকে তাকিয়ে কেবল দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।

———-

পানিতে ভেজা ঠান্ডা মেঝে। তনয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে উষ্ণ চৌধুরী। একটু আগেই তনয়ার হাতে একটা ওয়াটার প্রুফ কাস্ট পরিয়ে দিয়েছে যাতে গোসলের সময় হাতের প্লাস্টার ভিজে না যায়। চুলে শ্যাম্পু করানো শেষ। তনয়া ভিজে শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে তার পিঠের কাছে। ভিজে শার্টটাও আড়ষ্ট হয়ে শরীরে লেগে আছে। বদ্ধ কাম*ড়ায় দু’জনে আছে বেশ গম্ভীরভাবে। কেউ কোনো কথা বলছে না। যেন কথা বলাই অ*পরাধ। উষ্ণের হাত কাঁপছে। একটা একটা করে তনয়ার শার্টের বোতা*ম খু*লে দিচ্ছে সে। শার্টের শেষ বোতাম খোলার সাথে সাথে উল্টো হয়ে পিছন ঘুরে দাঁড়াল। মিনমিন স্বরে বলল,

“কোনো অস”ভ্যতা করবেন না।

“তোমার কি মনে হয়? আমি সবসময় অস*ভ্যতামো করি।

তনয়া শুকনো ঢোক গিলল। উষ্ণ বলে উঠলো, “যত আড়ালে থাকতে চাও থাকতে পারো। আড়ালে থাকাই ভালো। নাহলে আমি একবার বে*সামাল হয়ে গেলে তোমার ভীষণ ক*ষ্ট হয়ে যাবে।

তনয়া দু”ঠোঁট চেপে নিল। উষ্ণ তার ঠান্ডা হাতে ভেজা চুলগুলো পিঠ থেকে সরিয়ে দিলো। উষ্ণের ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পেয়েই কেঁ*পে উঠলো সে।তার মন কেমন আন*চান করছে। পেছন থেকে ঘাড় ছাড়িয়ে শার্ট টা*নছে উষ্ণ। শরীর উন্মু*ক্ত হতেই ভেজা ফর্সা লাজুক দেহ উ*ন্মুক্ত হলো তার সামনে। নিজেকে ধা*তস্থ করে চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নিল। নিজেকে আটকে রাখা প্রায় অসম্ভব। এই আকর্ষণীয় নরম মসৃণ দেহ চুম্বকের মতো টানছে তাকে। সে তার দুটো হাত রাখল তনয়ার ঘাড়ের কাছে। শি*উরে উঠল মেয়েটি। হাতের ছোঁয়ায় মনের আন্দাজ করতে পারে সে। শুকনো ঢোক গিলল। উন্মু*ক্ত পিঠের উপর উষ্ণের নরম দুটো অধরের ছোঁয়া তাকে দি*শেহারা করে তুলল। উষ্ণ স্যার পাগল হয়ে গেছে। দ্বিগবিদিক কি ভুলে গেছেন নাকি। তনয়া পালি*য়ে আসতে চাইলেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল তাকে। লজ্জায় আ*ড়ষ্ট তনয়ার চিবুক এসে মিশেছে গলার কাছে। কতোক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো জানে না। উষ্ণ তার হাত টেনে নিয়ে এলো ঝর্ণার কাছে। ঝর্ণার পানি ছুঁয়ে যাচ্ছে তার শরীরের প্রতিটা অংশ। সেখানেও যেখানে উষ্ণ এখনো অধিপত্য পায়নি। তার বুঝি হিং*সে লাগল। দাঁড়িয়ে সেও ভিজছে একনাগাড়ে। তনয়া চোখ মিলাচ্ছে না। দৃষ্টি না ভিড়লে ভালোবাসায় কমতি থেকে যায়। উষ্ণ তার থিতুনি ধরে বলল, “তাকাও আমার দিকে,‌নাহলে কিভাবে বুঝবে আমি তোমায় কতো ভালোবাসি!”

তনয়া দৃষ্টি মিলাল। লজ্জায় বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেনি সে। উষ্ণ তার ঘাড়টা কাছে টেনে নিয়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকাল। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো, “বিশ্বাস করো আমায়, তুমি না চাইলে কিছুই সম্ভব না। আমি কখনো তোমায় জোড় করব না!”

তনয়া আঁখি বুঝে নিল। কাঁদছিল নাকি? কাঁদতেও পারে। ঝর্ণার ধারার সাথে ওতোটুকু নোনতা অশ্রু মিশে গেলে কেই বা টের পাবে!

গোসল শেষে উষ্ণের হাতে খাবার খেয়েছে। পরিস্থিতি এখন খুব স্বাভাবিক আর নিয়ন্ত্রণে। অথচ তখনকার কথা ভাবতেই তার ল*জ্জা পায়। উষ্ণ কা*মুক দৃষ্টিতে নিজেকে হারি*য়ে যেতে দেয়নি। সামলে নিয়েছে। কেবল অনুমতির অপেক্ষা করছে। সেই অনুমতি কবে পাবে জানা নেই। তবে অপেক্ষা করতে ক্ষ*তি নেই। কারণ সে জেনে গেছে, তনয়া তারই। তার হৃদয়ে এখন কেবল তার আধিপত্য!

বিকেলের স্নিগ্ধ মৃদু মিষ্টি আবহাওয়ার উষ্ণের শরীরের সাথে লেপ্টে থেকে ঘুমিয়ে পড়েছে তনয়া। এতো দিন বাদে গোসলের পর আজ এতোটা ফ্রেশ লাগছে সে ঘুমটাও খুব গাঢ়। ইদানিং উষ্ণের গায়ের গন্ধ ছাড়া সে ঘুমাতে পারে না। কষ্ট হয় বড্ড। নিজেকে একা একা লাগে।‌ মনে হয় তার আগের বাসায় বিছানার উপর একা শুয়ে আছে সে। কেউ নেই তার জীবনে। নিঃসঙ্গ সে। উষ্ণ স্যার কাছে থাকলে সেই নিঃসঙ্গতা কমে আসে! ঘুমের মধ্যেই হাত খামচে ধরে রাখে তার শার্টটা। যেন ঘুমের মধ্যেও হারিয়ে যায়। তাকে আগলে রাখতে দেখে মৃদু হাসে উষ্ণ। বেশিদিন বুঝি আর দেরি করতে হবে না!

———-

তনয়ার প্লাস্টার খোলা হয়েছে আজ। আহ শান্তিতে সে ছটফট করছে। এতোদিন বাদে তার হাত মুক্তি পেলো আজ। হাতে তেমন ব্যাথা নেই। একটু টানটান। খুশিতে দুই হাতে উষ্ণের বাহু ধরে বলল, “বলুন আজ কি খেতে চান! আমি আপনাকে আজ রেঁধে খাওয়াবো!”

“হ্যাঁ, তাই তো। আর আমার হাতে পঁচা রান্না খেতে হবে না।

“ধুর কি যে বলেন না। আপনার হাতের রান্না ভীষণ ভালো।”

“তাই।

“হুম সত্যি!

উষ্ণ হেসে উঠে। অতঃপর ডাক্তারের সাথে কথাবার্তা শেষ করে ফিরে তারা। গাড়িতে চড়ে। একটু আগাতেই উষ্ণ আবার থেমে যায়। গাড়ি থেকে বের হয়ে ওদিকের রাস্তায় যায়। তনয়ার সাথে দুটো আইসক্রিম কিনে ফিরে সে। একটা আইসক্রিম তাকে এগিয়ে দিয়ে বলে, “নাও খুশিতে আইসক্রিম খাও!”

“থ্যাংকু” বলেই ঝলমল হাসিতে তনয়া আইসক্রিম হাতে নিয়ে নেয়। গাড়িতেই খাওয়া শুরু করে দেয়। উষ্ণ ধীরে সুস্থে গাড়ি ড্রাইভ করে। তনয়া আইসক্রিম খাওয়ার সাথে সাথে উষ্ণ কেও সাধে। উষ্ণ না করবে ভেবেও খেয়ে নেয়। মাখামাখি হয়ে যায় গালে আর ঠোঁটে। তনয়া হাত বাড়িয়ে তার ঠোট টা মুছে দেয়। ঠোঁট কা*মড়ে ধরে উষ্ণ। তনয়া নিজেও থতমত খেয়ে যায়। এই কাজটা না করলেও বুঝি চলত।

রাতে তনয়া রান্না করে। গরম গরম ভাত আর মুরগির মাংসের রেজালা। উষ্ণ খেতে বসেছে। আজ তার আনন্দের কমতি নেই। এতোদিন নিজের পানসে খাবার খেতে তার নিজেরও ভালো লাগত না। কিন্তু তনয়া এসেই তো বাড়াবাড়ি শুরু করে দিল। ভাতের প্লেটে খাবার বাড়ছে, উষ্ণ বলে,

“হাতে এখন জোর দিও না তনয়া। সবে সবে হাতটা ঠিক হয়েছে। একটু সময় নাও।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ কিছু হবে না!

উষ্ণ চট করে হাতটা ধরে ফেলে। হাতের উল্টৈ পিঠে চুমু খেয়ে বলে, “অনেককিছু হবে। খাবারের পর তুমি আর একটা কাজও করবে না। বুঝলে! না, বলেছি তো। একটা কাজ ও না!

তনয়া মাথা দুলাল। খেতে বসল পাশাপাশি দুজন। তনয়া নিজের হাতেই খেতে ব্যস্ত।‌ উষ্ণ তাকে আড়চোখে দেখে বলল, “তুমি তো বেশ ছিলে! কখনো কখনো আমারও ইচ্ছে করে কেউ আমায় খাইয়ে দিক!”

তনয়া থেমে গেল। ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করে আবারো গিলতে লাগল। ফিরেও তাকাল না ওদিকে। লোকটা তো একটা ভণ্ড। খাইয়ে আবার কথা শুনাচ্ছে। কে বলেছিলো তাকে খাইয়ে দিতে। তনয়ার হালত দেখে উষ্ণ মিটিমিটি হাসে।

রাতে ঘুমানোর সময় ঘটল বিপত্তি। তনয়া এখন আর তার কাছে ঘেসে ঘুমাতে আসে না। তার লজ্জা পাচ্ছে। অন্যদিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছে। অন্ধকার ঘর। আচমকা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণ। কেবল জড়িয়ে ধরাই নয়। একদম গা ঘেঁষে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে কোমরে হাত জড়িয়ে ঘুম দেয় সে। তার এমন কর্মকাণ্ড তনয়া হতভম্ব। তার কেবল ভ*য় করে ভীষণ ভ*সয়! কারণ তার হাত তো এখন ঠিক হয়ে গেছে। উষ্ণ স্যার যদি এখন! না মাথা নেড়ে বালিশে মিশে যায় সে। ততোই আরো ঘনিষ্ঠতা বাড়ে দুজনের মধ্যে। ইঞ্চি অবধি ফারাক নেই কোনো! তবুও এখানে সে নির্ভয়। উষ্ণ স্যার যখন বলেই দিয়েছে তুমি অনুমতি না দিলে কিছুই সম্ভব না, এই কথাটি তনয়া বিশ্বাস করেছে। করতে প্রায় বাধ্য সে। উষ্ণ স্যারের মতো এমন ধৈর্য্যশীল পুরুষ এই প্রথম দেখল। ওদিক থেকে ঘুরে এবার তার বুকের সামনে বরাবর ফিরল। আশ্রয় নিল বুকের মধ্যিখানে। উষ্ণ তখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। অন্ধকারের মাঝে তনয়া উপলব্ধি তার অবয়ব, শ্বাস প্রশ্বাস। প্রতিটা নিঃশ্বাসে যেন তারই নাম লেখা। কথাটা একবার উষ্ণ স্যার নিজেই বলেছিলো। বলেছিলো বড় করুণ স্বরে, “আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে তুমি মিশে আছো নীলাম্বরী!”

প্রেমের এই উপাখ্যান ওই বেদনা ভরা কণ্ঠে বলার মানে কি তনয়া জানে না। আর জানতেও চায় না। কিন্তু খারাপ লেগেছিলো ভীষণ। আন্দাজে ঠান্ডা হাত উষ্ণের গালে রাখতেই যেন সে আরো তলিয়ে গেল। আষ্টেপৃষ্ঠে তনয়াকে জড়িয়ে ধরে নিল। তনয়া মৃদু হাসল। আচ্ছা এই মানুষটিকে কি সে ভালোবাসতে পারে না? একবার না হয় ভালোবেসেই দেখল। লোকে বলে, তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে নয় বরং যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে ভালোবাসো!” একবার কি চেষ্টা করে দেখবে। তাদের এই সম্পর্কটাকে খুব কি সহজ করা যায় না। উষ্ণের প্রতি ভালোবাসা কি না জানে না সে, তবে উষ্ণ স্যারের প্রতি অসম্ভব মায়া হয় তার। তাদের দুজনের জীবনেই কোনো আপনজন নেই। এরা একে অপরের সঙ্গী এছাড়া তো আর কেউ নেই। এসব কথা ভাবতেই চোখে ঘন কালো মেঘপুঞ্জ ভিড় করল। তনয়া নিজের অজান্তে নয় বরং ইচ্ছে করে উষ্ণের বুকের মধ্যে লুটিয়ে পড়ল। দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। মনের মধ্যে তখন শীতল হাওয়া বয়ে যায়, উতলা সমুদ্রের ধারা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কোনো উধালপাতাল নেই। কোনো ভ*য় নেই!

বিরতির দিন! কর্মদিবস শুরু কাল থেকে। উষ্ণ জানে তনয়াকে বলে লাভ নেই, কাল সে অফিস যাবেই যাবে। দীর্ঘদিন ঘরে বন্দি থেকে নিশ্চিত এখন তার আর ভালো লাগছে না। তনয়া সুস্থ হয়ে উঠায় উষ্ণ নিজেও এবার কাজে মনোযোগ দিলো। বেশ কিছুদিন ধরে কাজ আটকে আছে। ওদিকে নজর দেওয়া হয়নি। এই তো সকাল সকাল জেএস এসে এক বান্ডিল ফাইল ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। সকালে নাস্তা খেয়ে এসব নিয়ে বসেছে ড্রয়িংরুমের সোফায়। তনয়া তার চারপাশ ঘুরে ঘুরে কাজ করছে। একসময় দেখল চা নিয়ে খালার সাথে গল্প করছে। অন্যদিন হলে কাজ শেষেই খালা ছুটে পালাত। আজ পালায় নি। তনয়ার সাথে চা বিস্কিট নিয়ে বসেছে। এই আলাপ হবে দীর্ঘক্ষণ!

দুপুরে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া হলো। এরপর দেখল তনয়া ঘুমোতে গেছে। উষ্ণ কিছুক্ষণ তার বিছানার পাশে বসে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। এরপর কাজে ফেরত চলে এলো। সময় বেশি পেরোয়নি তনয়ার ঘুম ভেঙে গেছে। সে এসেই রান্নাঘরে ছুটল। চা বানাল। দু জন মিলে বারান্দায় বসে গল্প করতে করতে চায়ের কাপ শেষ করল। পুরো গল্প জুড়ে অফিসের আলাপ। কাল তনয়া অফিসে গেলে সবাই চেপে ধরব। তনয়া মৃদু হেসে আকাশের দিকে তাকাল। ঘন মেঘ করছে। বৃষ্টি আসবে বলে মনে হচ্ছে। স্বচ্ছ আঁখি জোড়া ঘুরে তাকাল লোকটার দিকে। মেঝেতে আরাম করে বসে চা খাচ্ছে লোকটা। তনয়া বসে আছে বেলকনিতে ঝোলানো সাদা দোলনায় বসে। চায়ের কাপে হারিয়ে গেল মধুর সময় গুলো।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যের আগে আগে বৃষ্টি নামল আকাশ ভেঙ্গে। উষ্ণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাইরে ঝড় বৃষ্টি। একটু বাদে বাদে মেঘের গর্জন,‌ বজ্রপা*তের শব্দ সবকিছু যেন ভেঙে*চুরে চূ*র্ণ বি*চূর্ণ করে দেয়। কাজের ফাঁকে উষ্ণ এদিক ওদিক ফিরছে। তনয়াকে দেখছে না অনেকক্ষন। নীলাম্বরী গেলো কোথায়?

ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলো। ল্যাপটপের‌ মৃদু আলো উপচে পড়ছে তার মুখের উপর। এরপর আবারো বাজ পড়ার শব্দ। এরপর আরেকটি বিস্ফো*রণ! ধপ করে আলো নিভে গেল। যাহ, ট্রান্সমিটার বোধহয় ব্লা*স্ট হয়েছে। উষ্ণের গলা শুকিয়ে আসছে। ল্যাপটপের আলোয় তার মুখাবয়বের দেখা মিলে। একটু গলা উঁচু করে তনয়াকে ডাকতেই যাচ্ছিল দেখল সে ঘর ছেড়ে বেরুচ্ছে। হ্যাঁ, ঘরের পর্দা নড়েচড়ে উঠল তো। উষ্ণ সেদিক ফিরে আছে। হাতে মোমবাতি সমেত সে এলো। ডাইনিং টেবিলের উপর মোমবাতি রেখে চুপটি করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। একদম নিশ্চুপ হয়ে!

উষ্ণের চোয়াল যেন ঘ*সে পড়ে। চুড়ির ঝিনঝিন শব্দ তার কানে বাজছে। মুগ্ধে সে বিমোহিত! এ সত্যিই তো তার নীলাম্বরী নাকি কোনো অপ্সরা! দৃষ্টি মনোযোগ সব একদিকে। লাল শাড়িতে আবৃত রমনী তার শরীর কে যেন ঝাঝি*য়ে তুলল। ও তনয়া!

লাল শাড়িতে সেজেগুজে হঠাৎ হাজির! কারণ কি? কি তার মনোভাব? কোন উৎসব! শাড়িটা চেনা চেনা লাগছে? মোমবাতির নিয়ন আলোয় উষ্ণ ভালো করে দেখার চেষ্টা করল। তনয়াকে বিয়ে ব্যতীত আর লাল শাড়ি উপহার দেয়নি সে। তবে কি এটা তাদের বিয়ের শাড়ি! তার নীলাম্বরী শাড়ি পড়ে সেজেগুজে তবে কি তার জন্য এসেছে!

ভাবতেই শরীর নি,*স্তেজ হয়ে গেল। উষ্ণর হাত পা অব*শ হয়ে আসছে। বাইরের ঝড় বৃষ্টির ঠান্ডা হাওয়ায় শরীরে বোধ ফিরে পেল। দমকা হাওয়ার তেজে‌ জানালার পর্দাগুলো যেমন নৃত্য করছে তেমনি নৃত্য করছে তনয়ার হৃদয়। চেয়ার আঁকড়ে ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে। লজ্জায়, অস্থিরতায় আড়ষ্ট হয়ে পড়েছে। নড়চড় করার শক্তি পাচ্ছে না। ওই লোকটাও কি? ভাদাইম্যা একটা! বসে বসে দেখছে! গাধা কিছু তো বলবি!

না, উষ্ণ এখনো বিভোর! তার চোখ জুড়াচ্ছে না। খোলা ল্যাপটপ সোফার উপর রেখে দিয়ে হা হয়ে এদিক চেয়ে রইল। মনে হচ্ছে এটা কোনো স্বপ্ন। কাছে গেলেই কি ও হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে? *য় হচ্ছে! ভীষণ ভ*য়! ঘুটঘুটে অন্ধকার করে ওই ওখানেই একটু আলোর ঝিলিমিলি। সেখানে লাল শাড়ি পরিহিত তার হৃদয় রাগিনী! উষ্ণ মুখ খুলে শ্বাস নিচ্ছে।

চুড়ির ঝনঝন শব্দ আবারো শোনা গেল। পিঠের উপর ছড়িয়ে থাকা কেশ গুলো সরিয়ে বুকের উপর নিল সে। উষ্ণ যেন এই অপেক্ষায় ছিল। এটা কি কোনো ইশারা? আত্মসমর্পণের ইশারা! কিসের আত্মসমর্পণ? ভালোবাসার! নাকি অন্যকিছু?

কিন্তু সে‌ তো ধরা দিয়েছে। তনয়া নিজে তাকে কাছে ডাকছে। উষ্ণ স্যার আজ কি আর কোনো বাঁধাধরা মানবে? কোনো লিমিট কি আজ থাকবে? বর্ডার ক্রস করার অনুমতি যে সে পেয়ে গেছে। এরপর কিসের অপেক্ষা? দমকা হাওয়ায় ঘরের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। মোমবাতির আগুন টুকু উতলা ভঙ্গিতে নৃত্য করছে। তনয়া সেটাকে আগলে নিল। অন্ধকার যে হতে দেওয়া যায় না। মূহুর্তেই অনুভব করল সে এসেছে। কাছে এসেছে। তার শ্বাস প্রশ্বাসের উপস্থিতি জাগান দিয়েছে হৃদয়ের তীব্রতার সুর। তনয়া শুকনো ঢোক গিলল। শাড়ির ফাঁকে তার ঢেউ খেলানো সরু মসৃন কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পাওয়া মাত্র পাথরে*র মতো শক্ত হয়ে গেল সে। ঘাড়ের কাছে অনবরত চুমুর স্পর্শ! উষ্ণ স্যার আজ ধৈর্য্যহারা হয়ে উঠেছেন। আপত্তি নেই তার? উনার জন্যই তো সব!

ঠান্ডা হাতের স্পর্শে শরীর শিউরে উঠল। লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল সাথে সাথে। গরম নিঃশ্বাসে*র প্রতিটা দপ এসে পড়ছে পিঠের উপর। তনয়ার ভ*য় হচ্ছে,‌ লোকটা না তখনকার মতো.. বলতে দেরি হলেও উষ্ণ থেমে নেই। তার গাঢ় চুম্বনের স্পর্শে নেতি*য়ে পড়ল যেন সে। সর্বাঙ্গ কাঁপ*ছে তার থরথর করে। হৃৎপিণ্ড ছুটছে ট্রেনের গতিতে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে উত্তে*জনা ছড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ এই অবধি আসতে কতোই না সাহস জুগিয়েছিল। উষ্ণের একটিমাত্র ছোঁয়ায় সব শে*ষ!

উষ্ণ তাকে সরাসরি দাঁড় করল। তনয়ার লাজুক নজরকাড়া দৃষ্টি থেকে সে রেহাই পাচ্ছে না। মেয়েটা আজ মা*রার প্ল্যান করেই এসেছে। দু হাত ভর্তি লাল চুড়ির ঝনঝন শব্দ কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই শরীর ফের ঝাঝি*য়ে উঠে যেন। এরপর তার লাজুক দৃষ্টি, লোচনে পাতা জোড়া কাঁপছে কেমন, অধর জোড়া যেন সঙ্গ পাবার ছলে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। ব্যাকুল হয়ে উঠেছে উষ্ণের হৃদয়টাও। হুট করে কোমর ধরে টেনে নিজের কাছে নিল। ফিসফিস বলে উঠলো,

“কি চাও তুমি? এভাবে কেন এসেছো ? আমায় মার*তে?”

লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল সে। তনয়ার থিতুনিতে আঙুল রেখে সেই নোয়ানো মাথা তুলল। চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখে অশ্রু জমে উঠল। কি মাধুর্য! কাজল টানা আঁখি দুটো অশ্রুতে টুইটুম্বর। মাধুর্যতা বুঝি একেই বলে। উষ্ণের সকল সীমা আজ ভেঙে*চুরে চূর্ণ*বিচূর্ণ হয়ে গেল। তনয়ার নরম অধর জোড়ায় হাম*লে পড়ল হিংস্র*তার ন্যায়। আজ যেন রেহা*ই নেই তার। একটু একটু করে অনেক শো*ধ তুলবে! অনেক! ঠোঁটজোড়া নিস্তার দিতেই গলায় ঘাড়ে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছিল। তনয়া শ্বাস নেবার সময়টুকু পাচ্ছে না। মনে মনে একবার ভেবেই বসল, “কি জন্য সে আসলাম!”

হৃদয়ে হৃদয়ে যেন জবাব এলো, “আমার জন্য এসেছো!”

পরনের শার্ট খুলতে সেকেন্ড মাত্র। তার উ*ন্মুক্ত বুকের উপর হাত দিতেই কতো দ্বি*ধা হচ্ছে তার। সুঠাম টান টান সুগঠিত দেহ। হাতটা বুকের উপর রাখতেই হৃদয়ে যেন ছ*লাৎ করে উঠল। তনয়া নজর তুলে এদিক ফিরতেই অত্যা*চার শুরু আবারো। এই একমাত্র অত্যা*চার সকল রমনী তার প্রিয়পুরুষ থেকে নিতে প্রস্তুত। ক*ষ্ট যতই হোক না কেন আজ তারা হা*র মানবেই।

সোফার উপর আধশোয়া উষ্ণ তার দিকে উপুড় হতেই তনয়া শাড়িল আঁচল টেনে ধরল। উষ্ণ থেমে গেল। সে কি ভুল করছিলো নাকি ভুল বুঝল! থতমত খেয়ে শুধাল, “কি হলো?”

তনয়া কণ্ঠে জড়তা। আড়*ষ্টতা সমেত জবাব দিল, “আমরা ঘরে যাই…

উষ্ণের হুশ ফিরল। আশপাশ তাকাল! ডাইনিং টেবিলের উপর ওই ক্ষুদ্র আলো বাদে বাকি সবকিছু লণ্ড*ভণ্ড হয়ে আছে। ল্যাপটপ পড়ে আছে মেঝেতে, ফাইলগুলো পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। মেঝের ওদিকে তনয়ার লাল চুড়ির ভা*ঙা অংশ দেখেই আঁত*কে উঠল। তনয়ার হাত টেনে বলল, “দেখি দেখি লাগেনি তো!”

তনয়া মাথা এদিক থেকে ওদিক দুলিয়ে জবাব দিল, লাগে নি। কাঁচের চুড়ি ছিল। টেবিলের সাথে শক্ত করে হাত চাপতেই ভে*ঙ্গে চুর*মার। উষ্ণ উন্মা*দ হয়ে উঠেছে। নিজের উন্মা*দনা দেখে সে নিজেই বিস্মিত। সোফার কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে তনয়া। সাজসজ্জার বিন্দুমাত্র কিছু ঠিক নেই। ঠোঁটের লিপস্টিক গালে ঘাড়ে সর্বত্র। উষ্ণের বুকের উপর চিকচিক করছে লাল লিপস্টিকের দাগ। ওতোটুকু দেখেই ল*জ্জায় মাথা নামিয়ে ফেলে ঠোঁট কাম*ড়ে ধরল তনয়া। উন্মা*দ কেবল উষ্ণ স্যার একাই না, সেও হয়েছে! উষ্ণ স্যারের উষ্ণ ছোঁয়ায় নিজেকে হারি*য়ে ফেলেছিলো প্রায়। কোনমতে ফিরে এসেছে। আধখোলা শাড়ি সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। বুকের উপর থেকে শাড়িটা গড়িয়ে পড়তেই ধরে নিল। উষ্ণের ধৈর্য্যের বাঁধ ফে*র ভেঙে*ছে। আবারো উ*ন্মাদ হয়ে উঠেছে। মেঝেতে গড়িয়ে থাকা শাড়ি তুলে তনয়া কে পেঁচিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নিল সে। পেশিবহুল হাত জোড়ায় শক্ত করে জড়িয়ে নিল। তনয়া জড়োসড়ো করে তার গলা জড়িয়ে ধরেছে। ঠিক বাচ্চাদের মতো। উষ্ণ তার দিকে ফিরে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, “ভ*য় করছে?”

তনয়া মাথা নেড়ে জবাব দিল, “না!” ব্যস! দ্বিতীয় ঝ*ড়ের আ*ভাস দিচ্ছে এবার। তাকে নিয়ে সোজা চলে গেল বেডরুমের মধ্যে। সেখানকার দরজা বন্ধ করতেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল মোমবাতির ক্ষুদ্র আলো শিখা। কেবল অন্ধকা*র! অথচ এই আঁধারে ভয় নেই, ঠান্ডা সুস্থ সুন্দর পরিবেশে হৃদয়ে স্রোতে ভেসে যায়। বৃষ্টি ঝিনিঝিনি শব্দ যেন কানে নৃত্য করে বেড়াচ্ছে। খোলা জানালার পর্দাগুলো বাতাসে দপদপ শব্দ করে উড়ছে। কি মিষ্টি স্নিগ্ধ বাতাস!

#চলমান