#তোর_মায়ায়_আবদ্ধ
#পর্ব_১১
#আঁধারিনী(ছদ্মনাম)
আমার সামনে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে।অভ্র নিজেও যে আমাকে দেখে অবাক হয়েছে তা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিস্মিত কন্ঠে বলেও উঠলো,
” তুমি এখানে?”
” এই ভার্সিটিতে পড়ি তাই।”এইটুকুই বলেই দ্রুত রিকশায় উঠে পরলাম।
রিকশাওয়ালাকে তাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি চলতে বললাম।পিছন থেকে অভ্র অনেক বার ডেকেছিলো কিন্তু আমি থামিনি।ভাগ্যিস তখন রিকশাটা পেয়েছিলাম।নাহলে কি হতো জানি না।সেইদিন ওমন বাজে ভাবে আমাকে অপমান করে তো সব সম্পর্কই সেইদিন শেষ করে দিয়েছিলো তারপরও কোন মুখে আমাকে ডাকতে পারে!আর ও এখানেই বা কি করছে?জানি না আর জানতেও চাই না এমন একটা লোকের সাথে কথা বলতেও ঘৃণা লাগে।যদি শুধুমাত্র আমাকে নিয়ে কিছু বলতো তাহলে হয়তো ক্ষমা করতে পারতাম কিন্তু আমার মাকে নিয়ে বা আমার পরিবারের একটা মানুষ কে নিয়ে কোনো রকম বাজে কথাই আমি সহ্য করতে পারি না।সেখানে আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে কথা তাহলে তো প্রশ্নই আসে না।এসব নিয়ে আর ভাববো না তবে অভ্রকে এড়িয়ে চলতে হতে হবে।একবার যখন কথা বলতে এসেছে আর আর জানে আমি এই ভার্সিটিতে পড়ি তারমানে ও আবার আসবে এখানে।তাই আমাকে এখন থেকে খুব সাবধানে চলতে হবে।রিকশার ভিতর থেকে একবার পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আবার পিছু নিলো নাকি!পিছনে কাউকে না দেখতে পেয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে দেড়টা বেজে গেছে।তাই সোজা শাওয়ার নিতে চলে গেলাম।শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে নিচে নেমে দেখে খাবার টেবিলে মোটামুটি সবাই এসে পরেছে।রোকেয়া একা হাতে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে আসছে তাই ওকে একটু হেল্প করতে গেলাম।খাওয়া দাওয়া শেষে আবার উপরে চলে এলাম।আজ কোনো কিছুতেই মন নেই। সারাক্ষন অভ্রকে নিয়ে ভেবে যাচ্ছি।
এই লোক টা নিজে বিয়ে ভেঙ্গে আমার গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগাতেও দুবার ভাবেনি।নিজ থেকেই তো আমার জীবন থেকে চলে গেছে।তাহলে আবার কেনো আমার সাথে কথা বলতে আসলো।আর কি কথা থাকতে পারে।দূর আর ভাবতে পারছি যা ইচ্ছে তাই করুক তো বিরক্ত লাগছে এসব।
পরদিন……..
আজ বোরখা হিজাব নিকাব সব পরে নিয়েছি যাতে আমাকে অভ্র চিনতে না পারে।কারণ আমি অভ্রকে যতোদূর চিনি ও আজ আবার আসবে আমার সাথে কথা বলার জন্য। তাই এই ব্যবস্থা।ঘড়িতে সাড়ে নয়টা অলরেডি বেজে গেছে আমার ক্লাস দশটা থেকে।হিজাব বাঁধতে বাঁধতেই দেড়ি হলো।ইস যেতে যেতেও তো টাইম লাগবে কমছে কম বিশ মিনিট। আর না ভেবে দ্রুত বেরিয়ে পরলাম।
এমনিতে দেড়ি হলো তারউপর আবার এখন কোনো রিকশাও পাচ্ছি না।তাই হাঁটা শুরু করলাম ভাগ্য ভালো ছিলো বেশিদূর হাঁটতে হয়নি একটু যেতেই একটা খালি রিকশা পেয়ে গেছি।ভার্সিটির গেইটের সামনে আসতেই আমার ধারণা সত্যি হলো অভ্র গেইটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে তো আবার আশেপাশে তাকাচ্ছে।আমি সবটা রিকশায় বসেই দেখছি।কোনোরকমে নিজেকে শান্ত রেখে রিকশাওয়ালাকে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে শান্ত ভাবে অভ্রের সামনে দিয়েই হেঁটে আসলাম।উপরে শান্ত দেখালে ভিতরে আমার অবস্থা খুব বাজে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছি।আমার বোরখা পরাটা কাজে লাগলো চিনতে পারেনি আমাকে।
অভ্রকে এভাবে বোকা বানাতে পেরে দারুণ শান্তি লাগছে।মনে মনে একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে ক্লাস করতে লাগলাম।নিয়ম মাফিক আজো একটা ক্লাস শেষ হলো।ক্লাস শেষ হওয়ার পরও আমি বেরোলাম না একে একে সবাই বের হইছে তারপর বেরিয়েছি।যদি এখনো অভ্র থেকে থাকে তাই একটু লেট করে বেরোনো।আর এমনিতেও আমাকে চেনারও কোনো উপায় নেই।ওর সামনে দিয়ে গেলেও ও টের পাবে না।
মনের সুখে মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলাম।হঠাৎ অভ্রকে দেখলাম অভ্রও সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসছে।হঠাৎ করে দেখাতে প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও পরে আর পাত্তা দিলাম।ও তো আমায় চিনতেও পারবে না।এবারো আমার ধরনা সঠিক প্রমাণিত হলো।অভ্র আমার পাশ দিয়েই উপরে চলে গেলো।
” আলমুন উপরে আসো তোমার ক্লাসে যাচ্ছি।”
এক পরিচিত পুরুষালী কন্ঠের এইটুকু কথা কানে আসতেই চমকে ঘুরে তাকালাম।অভ্র বাকা হেঁসে আমার ঠিক কয়েক ধাপ সিঁড়ি উপরে দাঁড়িয়ে আছে।অভ্র এক ধাপ এক ধাপ সিঁড়ি নিচে নামতে নামতে আবারো বলতে লাগলো,
” তুমি কি ভেবেছিলে সুইটহার্ট নিজেকে এইরকম ভাবে আড়াল করলেই তোমাকে আমি চিনতে পারবো না! ও কামন তুমি ভুলে গেলো চারটা বছর আমরা একসাথে ছিলাম।তোমার নাড়ি নক্ষত্র সব কিছু আমার জানা আছে।”বলতে বলতেই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
” তততারমানে ততততুমি তততখন…?”ওর এমন এন্ট্রিতে আমি এতোটাই শকড যে মুখের কথাই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
” ইয়েস সুইটহার্ট!সকালেও আমি তোমার চিনে ফেলছি কিন্তু তখন তোমার ক্লাসে দেড়ি হয়ে যাচ্ছিলো বলে আর আটকাইনি।আমার বউকে তো পড়ালেখা টা ঠিকঠাক ভাবে করতে হবে।না হলে আমারই তো সম্মান থাকবে না দ্যা গ্রেট অভ্র চৌধুরীর বউ কিনা পড়ালেখাই জানে না।”
” কিসের বউ?তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।তুমি নিজে সেই সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেছো।ভুলে গেলেন নাকি অভ্র চৌধুরী?” তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম।
অভ্র এবার অপরাধীর সুরে বলতে লাগলো ” বিশ্বাস করো আলমুন সেইদিনের কোনো ঘটনাই আমি ইচ্ছে করে করিনি আমি বাধ্য হয়েছিলাম।”
কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলাম ” হয়েছে এখন আর তোমাকে কোনো কৈফিয়ত আমাকে দিতে হবে না।আমি তোমার মতো মানুষের সাথে কোনো কথাই বলতে চাই না।নেক্সট টাইম আমার ভার্সিটির আসেপাশে তোমাকে আমি দেখতে চাই না।”
” প্লীজ তুমি আমার কথাগুলো একবার শোনো।তারপর তোমার যা মনে হয় তুমি আমার সাথে তাই করবে। কিন্তু একটি বার আমাকে আমার কথাগুলো বলতে দেও।একজন ফাঁসির আসামিরও কিন্তু শেষ ইচ্ছে বলার মতো অধিকার থাকে আর আমার কি এইটুকু অধিকার নেই আলমুন?”অসহায় মুখ করে বললো অভ্র।
” না নেই আমার উপর কোনো অধিকারই তোমার আর নেই।সব অধিকার শেষ যেদিন তুমি নিজ হাতে সেদিন বিয়ে টা ভেঙ্গে দিয়ে আসছো মিস্টার অভ্র চৌধুরী।”এইটুকু বলেই আমি ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলাম।
ফাইলাল ইয়ারের ক্লাসে ছুটি হয়ে যাওয়ার ফলে ওরা সবাই একসাথে আসছিলো আর আমি ঠিক সেই সুযোগ টা কাজে লাগিয়েই অভ্রের সামনে থেকে হুট করে ওদের মধ্যে মিলিয়ে গেলাম।অনেক গুলো মেয়েই বোরকা পড়া ছিলো তাই অভ্র আমাকে খুঁজলেও খুঁজে বের করতে পারবে না।আর বলতে গেলে ঝড়ের বেগেই আমি ছুটছিলাম তাই আমাকে ধরা এতো সহজ না।
ভার্সিটির পেরিয়ে গেইটের কাছে আসতেই শুভ্রকে দেখে অবাক হলাম।আমি তো একাই আসি একাই যাই কখনো আমাকে নিতে আসবে এমন টা তো বলেনি। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম দু’টো বেজে গেছে।অভ্রের জন্য এতোটা দেড়ি হয়ে গেলো।কিন্তু এখন কি বলবো আমি!
” তোমার কোনো কমনসেন্স নাই?”শুভ্রের মুখোমুখি হতেই বিরক্তিমাখা গলায় শুভ্র বলে উঠলো।শুভ্র যে রেগেও আছে তাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
” আসলে আজ একটা এক্সট্রা ক্লাস ছিলো তাই এতো দেড়ি হয়ে গেছে।” মিথ্যেই বলতে হলো।
” অন্তত একটা ফোন করে জানাতে পারতে!তাহলে আর বাবার কাছে আমাকে তোমার জন্য কথা শুনতে হতো না।”
” সরি আমি বুঝতেনি এমনটা হবে।হুট করেই ক্লাসটা হলো তাই জানানোর সময় পাইনি।”
আর কিছু বলতে হয়নি তার আগেই শুভ্র দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বাইকটার উপর উঠে বসলো।আর আমাকেও বসতে বলতো তাই আর সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।বলা তো যায় না অভ্র আবার হুট করে চলেও আসতে পারে।এভাবে আর কতোদিন পালিয়ে পালিয়ে বাঁচবো আমি! আচ্ছা ও কি বলতে চায় একবার শুনে নিলেই তো হয় তাহলে যদি আমার পিছু ছাড়ে তাহলে ক্ষতি কি।সেদিনের কোনো ঘটনাই ওর ইচ্ছেতে হয়নি এরমানে কি বলতে চাইলো অভ্র!আমি নিশ্চয়ই কালও অভ্র আসবে তাই যা জানার তা কালই জেনে নিতে হবে।
একটা সত্যি লুকাতে কতোগুলোই না মিথ্যে বলতে হয়।অভ্রের ব্যপার টা আড়াল করতে গিয়ে বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষকে আজ মিথ্যে বলতে হলো।ফারহান আংকেল তো আমার জন্য প্রচন্ড চিন্তা পড়ে গিয়েছিলেন।আর শুভ্রের প্রতিও খুব রেগেছেন।বলে দিয়েছেন কাল থেকে জেনো আমার ভার্সিটি নিয়ে যাওয়া আবার ছুটির সময় গিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব শুভ্রের।
চলবে,,,,,,,