দখিনা দুয়ারে প্রেমের ছোয়া পর্ব-১০

0
109

গল্পের নাম : #দখিনা_দুয়ারে_প্রেমের_ছোয়া
লেখনীতে : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্বসংখ্যা : ১০ (❌কপি করা নিষেধ❌)

“জান, বিশ্বাস করো। আমি শুধু তোমার।”

ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে কোনো জবাব এলো না। শাওন বুঝতে পেরেছে তার হবু বৌ, মানে গার্লফ্রেন্ড সাদিয়া খুব রেগে আছে। কাল সারাদিন বিয়ের কার্ড সবাইকে দিতে দিতে শাওন এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে, সাদিয়াকে একবারের জন্যও কল করেনি। এদিকে সাদিয়া তুমুল রেগে ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে বলে,

“এখন আর এভাবে চলবে না। একটু ভিন্ন ভাবে ট্রাই করো।”

শাওন ভেবেচিন্তে কলেজ থাকতে মজার ছলে মুখস্ত করা কবিতাগুলো বলল,

“বামে গরু, ডানে খাসি
আমি তোমারে ভালোবাসি।”

“দুধ মাখন দই খাই,
আমি শুধু তোমাকেই কাছে চাই।”

“শিরায় শিরায় রক্ত,
আমি সাদিয়ার ভক্ত।”

“টিনের উপর কাক,
সাদিয়ার রূপ দেখে আমি পুরো অবাক।”

“হাগতে গিয়া দিলাম পাদিয়া,
আই লাভ ইউ সাদিয়া।”

সব ঠিকঠাক ছিলো। শুধু শেষের কবিতাটা শাওন ভুলে মুখ ফসকে বলে ফেলেছে।

ফোনের ওপাশে পিনপিন নিরবতা। শাওন অনেকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করলো। তবে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কোনো জবাব নেই। শুধু একটু পর টুংটুং করে কলটা কেটে যায়। আর একটা মেসেজ ফোনের স্কিনে ভেসে উঠে,

“তোর মতোন মদনের সাথে প্রেম করা আমার জীবণের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। কোথায় কি বলতে হয় এই নুন্যতম সেন্সটা তোর মাঝে নেই। তুইকি আসলেই এত বোকা? নাকি নিগা? আর কোনোদিন আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, তোর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তোকে ফা/সিতে ঝুলিয়ে দেবো অসভ্য।”

শাওন আর পাল্টা কিছু লিখতে পারল না। সব জায়গা থেকে ব্লক মেরে দিয়েছে সাদিয়া। সেতো একটু মজা করতে চাইছিল। মেয়েটা তাই বলে এত রিয়েক্ট করবে। ঘোড়ার ডিম।

( কবিতাগুলো অনেক জায়গায় দেখি মাঝে মাঝে। তাই একটু সাজিয়ে লিখলাম। 🐸 কারো খারাপ লাগলে সরি। একটা গ্রুপে দেখলাম শাওনের একটা কথা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এত বুঝে তখন বাশঝাড়ের কথাটা লিখি নাই। ক্ষমাপ্রার্থী।)

এইদিকে মুগ্ধ শাওনকে ডাকতে এসে তাদের কথা শুনে আর কিছুই বলতে পারে না। হা হা করে হাসতে হাসতে নিচে বসে পড়ে। পেট খমচে ধরে হাসতে হাসতে বলে,

“ভাই আমারেও কয়েকটা কবিতা শিখাইস। আজকে রাতে গায়ে হলুদ। কালকে বিয়ে। দেখি বৌকে ইমপ্রেস করা যায় নাকি।”

শাওন মুখ গোমড়া করে বলে,

“এগুলো এখন ব্যাকডেটেড হয়ে গিয়েছে মুগ্ধ ভাই। আমিতো মজা করে ছাপড়ি সাজতে গিয়েছিলাম। সাদিয়া আমাকে সত্যি তেমন ভেবে ব্লক মেরে দিয়েছে। এখন কি করব ভাই?”

মুগ্ধ হাসি থামিয়ে বলে,

“ওর রাগ পরে ভাঙাতে পারবি। এদিকে যে বিকাল হয়ে গিয়েছে খেয়াল আছে। কিছু জিনিস আনা বাকি। এখন যা, ফিরতে এমনিতেও দেরী হবে।”

শাওন জিহ্বায় কাম /ড় দিয়ে বলে,

“হায় হায় ভাই। ঠিক বলছো। চাচি কতকিছু আনতে বলছে। আমি গেলাম।”

“আমার বিয়ে অথচ আমাকেই সব মনে করিয়ে দিতে হয়। কপালের নাম গোপাল।”

শাওন একটা ভো দৌড় দেয়। ফিরতে ফিরতে আসলেই দেরী হয়ে যাবে। মুগ্ধ স্নিগ্ধর ডাক শুনতে পায়। এখন গিয়ে হলুদ পানজাবি পড়ে রেডি হতে হবে। প্রথমে তাকে হলুদ দিয়ে তারপর এ বাড়ি থেকে তত্ত নিয়ে ঐ বাড়ি যাবে। সেই হলুদই ছোয়ানো হবে নবনীর গালে।

নবনীর কথা ভাবতেই মুগ্ধর সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। বিশ্বাসই হচ্ছে না ঐ মেয়েটার সাথে তার বিয়ে। আজ বাদে কাল সে তার রুমে থাকবে। আল্লাহ কখন কার ভাগ্য কোথায় নিয়ে যায় অবিশ্বাস্য !
…….

পুরু বাড়িতে আজ উৎসব মুখর পরিবেশ । নবনীর চাচারা সবাইও বেড়াতে এসেছে। কীভাবে কি হয়ে যাচ্ছে নবনীর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তবে সেও হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্রী নয়। বিহানের সাথে আগে থেকে সব প্লান করে রেখেছে সে।

সারাদিন নানান গ্রাম্য রীতিতেই কাটে। নবনীর জন্য সব বিবাহিত মহিলারা গাছ থেকে মেন্দি পাতা পেড়ে আনে। তাকে পাটার উপর দাড় করিয়ে তার মাথার উপর মায়ের আচল ধরে। সেখানে দুধ, মেন্দি, হলুদ আরো কি কি দিয়ে নবনীকে গোসল করায়। আরো কত কি নিয়ম কানুন। সারাদিনে এসবে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে নবনী।

এখন ছেলের বাড়ি থেকে পাঠানো হলুদ শাড়ি পড়ে স্টেজে বসে আছে। ফুলের গহনা খোপা থেকে গলা, হাত সব জায়গায় দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে নবনীকে। যে স্টেজে বসে থাকা একটা হলুদ পরী। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার নাচ গানও চলছে খুব

নানাভাই অবশ্য বিয়ের অনুষ্ঠানে যেন কোনো কমতি রাখেনি। বিহানও স্টেজের পাশে একটা চেহারে বসে বসে হাত তালি দিচ্ছে গান গাইছে। তাকেও বেশ সুন্দর লাগছে এখন। উচা লম্বা শ্যামলা ছেলেটার গায়ে গেরুয়া রংটা বেশ মানিয়েছেও বটে। বিহান একটু পর পর নবনীর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে ইশারায় কথা বলছে।

ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ নিয়ে আসলে ভিড়ে আর কিছু করা সম্ভব নয়। তাই এক্ষুনি পালাতে হবে। নবনী সাত পাচ না ভেবে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।

“মা আমি একটু ঘরে যাবো।”

নবনীর কথায় তার মা তার দিকে তাকিয়ে বলে,

“এখন কেন? বসতো। একটু পর ওনারা এসে পড়বে।”

“না মা। এখনি যেতে হবে। বাথরুমে যেতে হবে আমার।”

“আচ্ছা, চল আমি নিয়ে যাচ্ছি।”

“তোমার যেতে হবে না, নাফিজাকে নিয়ে আমি যাচ্ছি।”

নবনী একপ্রকার জোর করেই নাফিজাকে নিয়ে রুমে চলে যায়। এইদিকে বিহানও সুযোগ বুঝে পিছনের বাগানে আগে থেকেই দাড়িয়ে আছে।

“আহ হা রে! নাফিজা আমি মনে হয় আমার ফোনটা রেখে এসেছি একটু নিয়ে আয়তো।”

নবনীর কথা শুনে সরল মনে নাফিজাও ফেরত চলে আসে ফোন খুজতে। নবনী আস্তে আস্তে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে দেখে বিহান সেখানে নেই। আজবতো! ও এখানে নেই কেন?

এখানেইতো ছিল একটু আগে। এখন কোথাও গেল? নবনী কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না। হঠাৎ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে বিহানের ফোন থেকে মাত্র একটা মেসেজ এসেছে,

“নবনী, এক কাজ করো। তাড়াতাড়ি বাগান পেরিয়ে পিছনের খালি জমির পাশে যে ছোট চিকন গলির মতো একটা রাস্তা আছে। ঐখানে এসে পড়ো। আমি আছি সেখানে।”

নবনীর কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। বিহান কেন সেখানে যেতে বলছে? প্লানতো এটা ছিলো না। মেইন রাস্তা দিয়ে অটোতে করে সোজা সদর ঘাটে গিয়ে ট্রলারে উঠার কথা ছিল। নবনী নিজেকে নিজে বলে উঠে,

“অনেক বড় কাজ করতে যাচ্ছিস নবনী, ভেবে চিন্তে লাভ নেই। এর থেকে যেভাবে বিহান যাওয়ার প্লান করে সেভাবেই কর।”

নবনী আর দাড়ায় না। শাড়ির পাড়গুলো এক হাত দিয়ে খামচি দিয়ে কিছুটা উচিয়ে ধরে। আর পুকুরের সাইড দিয়ে দেয় এক দৌড়। সোজা গিয়ে সেই রাস্তার সামনে গিয়ে দাড়ায়। ঐতো…। কেউ একজন পানজাবি পড়া ওপর দিকে ঘুরে দাড়িয়ে আছে। নবনী অতি সাবধানে সেই চিকন রাস্তা দিয়ে সামনে আগাতে থাকে।

তবে অন্ধকার এতই বেশি, লোকটার চেহারা ঠিক দেখা যাচ্ছে না। তবে একটু লম্বা মনে হচ্ছে বিহানকে।

“বিহান ভাই। আমরা এখানে কেন?”

ওপাশ থেকে কোনো জবাব আসে না।

“কি হলো বলুন?”

“কারণ তোমার আর যাওয়া হবে না।”

কথাটা শুনেই নবনী আতকে উঠল। এটাতো বিহানের কন্ঠনা। ভয়ে একটু একটু করে পেছাতে থাকে। উল্টা ঘুরে যেতে নিতেই কেউ একজন তার হাত দিয়ে কোমর পেচিয়ে নবনীকে একদম কাছে টেনে নেয়। নবনীর ফুল দিতে সাজানো খোপাটা গিয়ে বারি খায় সুঠার দেহের পুরুষটার বুকে।

নবনী ভয়ে বার বার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যার্থ। কান্নাটাকে আর আটকে রাখতে পারে না। কাদতে কাদতে বলে উঠে,

“প্লিজ ছাড়ুন। যেতে দিন আমাকে।”

“বিহান ধরলেও কি এমন করতে?”

“প্লিজ ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি। আর বিহান ভাই এভাবে কেন ধরবে আমাকে? তার সাথে ভাই বোন ব্যতীত কোনো সম্পর্ক নেই আমার।”

“তাহলে পালাচ্ছ কেন তার সাথে।”

“আমি পালিয়ে আমার হোস্টেলে চলে যাবো। এই বিয়েতে আমাকে বিক্রি করা হচ্ছে, আর বেশি কিছু না। এখানে অনেক রহস্য, অনেকের স্বার্থ লুকিয়ে আছে।”

কোমর থেকে হাতটা সরিয়ে লোকটা নবনীর হাত ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়। অন্য হাত দিয়ে ফোনের ফ্লাস জালাতেই নবনী চোখ বড় বড় করে সামনে হলুদ পানজাবি পড়া লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকে। গালে হলুদের দাগ এখনো যায় নি। কী সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে!

তবে তাতে কি? এই বিয়েতো নবনী করবেই না। সামনে দাড়িয়ে থাকা মুগ্ধ বলে উঠে,

“তোমাকে এখন অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। তবে সময় নেই হাতে। ইতিমধ্যে হয়ত সব জায়গায় ছড়িয়েও পড়েছে বিয়ের কন্যা বাড়ি থেকে পালিয়েছে। শুধু এইটুকুই বলব, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, যদি তোমার কথা সত্যি হয়। যেদিন তুমি এটা প্রমাণ করবে, আমি তোমাকে সব সম্পর্কের জাল থেকে মুক্তি দিয়ে দিবো। এখন চলো।”

নবনী শুধু এক কান দিয়ে কথাগুলো ঢূকালো। কিছু ভাববার সময় নেই। মুগ্ধ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে হাত ধরে। এ তো বাড়ির পথ। নবনী বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ। তখনই…

#চলবে ….