দখিনা দুয়ারে প্রেমের ছোয়া পর্ব-০৯

0
2

গল্পের নাম : #দখিনা_দুয়ারে_প্রেমের_ছোয়া
লেখনীতে : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্বসংখ্যা : ৯ (❌কপি করা নিষেধ❌)

“স্নিগ্ধর সাথে কি তোমার সবকিছু ঠিকঠাক আছে?”

স্নিগ্ধর মায়ের এমন কথায় হঠাৎ থেমে যায় শ্যামলী। পাটায় মসলা বাটছিলো। এমন কথার কি উত্তর দিবে বুঝতে না পেরে সে চুপ থাকে। স্নিগ্ধর মায়ের যা বুঝার সে বুঝে যায়।

“শোনো, পুরুষ মানুষ হলো বিড়ালের মতো। যে বাটিতে দুধ দেখবে মুখ দিবেই। তাই যার বিড়াল তাকেই সামলে রাখতে হয়।”

শ্যামলী লজ্জায় আর কিছু বলতে পারে না। এই কয়দিন সে রুমে যায়নি বললেই চলে। রাতেও নানান সুতো দেখিয়ে দেরী করে রুমে যেত। যেন স্নিগ্ধর সাথে কথা না হয়। আর ঐ মানুষটাও ভদ্র ছেলের মতো দূরে দূরে থাকে।

স্নিগ্ধর মায়ের যা বলার বলে ফেলে। শ্যামলীর দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোমার আর মসলা বাটতে হবে না। স্নিগ্ধর কাছে গিয়ে দেখো কিছু লাগবে কি না।”

শ্যামলী এবার আর কোনো সুতো দিয়ে দূরে থাকতে পারে না। শাশুড়ির চোখ থেকে সন্দেহ সরানোর জন্য হলেও স্নিগ্ধর কাছে যায়। এদিকে একা একা স্নিগ্ধ সিগারেটের ঠোট লাগিয়ে একটার পর একটা টান দিয়ে যাচ্ছে। অনেকদিন পর আজকে একটু ধোয়া উড়াতে মন চাইল। শীতের বেলা শরীরটা একটু গরম না করলে হয় নাকি?

তবে বেশিক্ষণ আর সেটা সম্ভব হয়নি। শ্যামলীর ছোট ছোট কাশির শব্দে সে সিগারেট জানালা দিয়ে ফেলে পিছন ফিরে তাকায়। দেখে শ্যামলী মূর্তির মতো দাড়িয়ে নিচে তাকিয়ে আছে। আর তার স্বভাবমতো শাড়ির অাচল হাতের আঙুলের ফাকে গুজে পেচাতে থাকে।

স্নিগ্ধ ওকে দেখা মাত্রই কিছুটা অভিমানী সুরে বলে,

“কি দরকার?”

“হুমম।”

“নেকামি না করে বলো কি দরকার?”

শ্যামলী চুপ করে নিচে তাকিয়ে থাকে। এমন ইনোসেন্ট একটা চেহারা বানায় যে স্নিগ্ধ দেখে শুধু তাকিয়েই থাকে। আল্লাহ নিজ হাতে সবটুকু মায়া দিয়ে একে বানিয়েছে। কোথায়, মৌরির চেহারায় তো এমন মায়া সে খুজে পায়নি। ঘরে সোনা রেখে বাহিরে ছাই খুজতে গেলে ঠিক এমনই হয়।

স্নিগ্ধ হঠাৎ শ্যামলীর খুব কাছে এসে ওর একটা হাত ধরল। শ্যামলী কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা হেচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,

“তোমার যখন জন্ম হয়েছিল, তোমাকে মধুর জায়গায় লজ্জাবতীর পাতার রস খাইয়েছিল মনে হয়। নয়ত এতো লজ্জা পাও কেন?”

শ্যামলী কিছু বলতে পারে না। হঠাৎ মানুষটা তাকে এভাবে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরল। বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে সে ব্যর্থ। শেষে স্নিগ্ধর কাছে হার মেনে সে স্নিগ্ধর বুকেই মুখ লুকায়।

স্নিগ্ধ শ্যামলীর কোমর পেচিয়ে ধরে বলে, “জানো? শহরে আমার এক সুন্দর প্রেমিকা ছিল।”

হঠাৎ যেন গায়ে কাটা দিয়ে উঠে শ্যামলীর। কি বলল মানুষটা? প্রেমিকা? মানে ভালোবাসার মানুষ। এভাবে কাছে টেনে এমন কথা বলার কোনো মানে হয়? শ্যামলী স্নিগ্ধকে সরিয়ে রুম থেকে চলে যেতে নেয়।

তবে স্নিগ্ধ নাছোড়বান্দা। শ্যামলীকে পাজা করে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দেয়। পাশে হেলান দিয়ে বলে উঠে,

“এখন আমি একটা ছেলের গল্প বলব। আর তুমি চুপচাপ শুনবে। একদম উঠার চেষ্টা করবে না। নয়ত সবার সামনে গিয়ে জড়িয়ে ধরে নিয়ে আসব।”

এমন কিছু হলে শ্যামলী আর কাউকেই মুখ দেখাতে পারবে না। তাই সে চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।

“মেয়েটা আমি যেখানে এডমিশনের কোচিং করাতাম। ঐ খানে পড়ত। দুধে আলতা গায়ের রঙ। বব কাট দেয়া ছোট ছোট চুল। একবার দেখলে কেউ চোখ ফিরাতে পারবে না এমন।”

শ্যামলীর চোখে এবার পানি আসে। তবে সে চোখ খুলে না। কি বলবে স্নিগ্ধ শেষ অব্দি?

“মেয়েটার সাথে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক হলো। যুবক বয়সে তুখুর প্রেম যাকে বলে। তবে একদিন সব শেষ হয়ে গেল।”

এবার শ্যামলী যেন চোখ খুলে। এরপর কি বলবে স্নিগ্ধ তার শোনার আগ্রহ জমেছে।

“তবে কথায় আছে না, মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে বিচার করতে হয় না। মেয়েটা ডাবল টাইমিং করত।”

শ্যামলী হা করে তাকিয়ে থাকে। ডাবল টাইমিং মানে আবার কি? জীবনে প্রথম হয়ত এই শব্দ শুনেছে সে। স্নিগ্ধ বুঝতে পেরে বলে,

“ডাবল টাইমিং মানে, ধরো এক সাথে দুজনের সাথে সম্পর্ক রাখা। যেমন তুমি ধরো আমাকে ভালোবাসো বলে আমার সাথে আছো। এখন আরেকজনকেও ভালোবাসার কথা বলে তার সাথেও সম্পর্ক রাখবে এরকম।”

ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে শ্যামলীর। ছিহ! মেয়ে মানুষ এতো খারাপও হয় সেটা যেন তার অজানা ছিল। স্নিগ্ধ শ্যামলীর চেহারার ভাব দ্রুত বদলে যেতে দেখে হেসে ফেলে। আরেকটু গায়ে লেগে কপালের ঠিক মাঝ বরাবর ঠোট ছুইয়ে দেয়। শ্যামলীও যেন কোনো এক কারণ বসত বাধা দেয় না।

“শুনো। আজকে রাতে দেরী করে রুমে আসতে হবে না। যদি আসো, সারারাত ঘুমাতে দিবো না কিন্তু।”

লজ্জায় স্নিগ্ধকে আলতো করে সরিয়ে দিয়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পরে ভাবে, মানুষটা এখন শুধু তার। একান্তই তার।
……..

নবনী গালে হাত দিয়ে বসে আছে পিছনের বারেন্দার একটা চেহারে। এটাকে বারান্দা না বলে আরো ছোট একটা ঘর বললেই হতো। গালে এখনো পাচঁটা আঙুলের ছাপ পড়ে আছে।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। হঠাৎই নানা সবার সামনে বলে উঠে পরশু নবনীর বিয়ে। বাড়ির সবার মুখ দেখে মনে হয়েছিল তারা বেশি চমকায় নেই। মানে, নবনী বাদে সবাই জানতো। আজ বাদে কাল গায়ে হলুদ। বাড়ি ভর্তি মেহমান।

কষ্টে মাথা ঠিক রাখতে পারেনি নবনী। মাকে গিয়ে বলে,

“মা একটু কথা ছিল। এসো প্লিজ।”

নবনীর মা বুঝে মেয়ে হয়ত কান্নাকাটি করবে। তবে এমন ভালো ছেলে কোথাও পাওয়া যাবে নাকি সন্দেহ আছে। তার বাবাকে সে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। সে যেহেতু সম্বন্ধ এনেছে। খারাপ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

“মা নানাভাই কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাকে বিয়ে দিচ্ছে।”

এরপর এক নাগাড়ে ফোনআলাপের কথা সব বলে দিলো নবনী। তবে পুরোটা শেষ করার আগেই গালে প্রচণ্ড ব্যাথা নিয়ে মায়ের দিকে তাকাল। বুঝে গেল আর কিছু বলে লাভ নেই। কাদতে কাদতে দৌড়ে পিছনের রুমটায় চলে যায় সে। এখন শুধু একটাই উপায় পালানো।
……..

“তা মুগ্ধ। তোমার বাবার শরীর কেমন? সব ঠিকঠাক তো?”

চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল মুগ্ধ। শীতে গ্রামের গরীব পরিবারগুলোকে ত্রাণ দিতে হবে সে ব্যাপারে। এমন সময় বিহানের বাবাও সেখানে উপস্থিত হয়। সাবেক মেম্বার। মুগ্ধর কেন জানি মানুষটাকে ভালো মনে হয়। তবে তার বাবা মতিসুর সবসময় তাকে এনার বিরুদ্ধে খারাপটাই বুঝায়।

” আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল। জ্বী ভালো আছে।”

টুকিটাকি কথা হয় দুজনের মাঝে। যার মাঝে একটিও রাজনীতি নিয়ে ছিল না। কি যেন বারবার লোকটা বলতে নিয়ে বলে না। সে জানে মুগ্ধ কখনোই এসব বিশ্বাস করবে না। মুগ্ধও বুঝতে পারে সামনের মানুষটা কিছু লুকাচ্ছে। তবে জোর করার আগ্রহ সে দেখায় না।

সেখান থেকে উঠে তারা তাদের আড্ডাখানায় চলে যায়। আজ একটু রাত অব্দি গল্প করা যাক। কাল থেকেতো নতুন সম্পর্কে বাধা পড়তে চলেছে। আর কখনো এভাবে নিশ্চিন্তে আড্ডা দেয়া হবে নাকি কে জানেহ।

এদিকে মতিসুর মেম্বারের আজ অনেক কাজ। কত লোককে বিয়ের দাওয়াত দিতে হবে। এই বিয়েটা ভালোভাবে হলেই তার আর নবনীর দাদার সম্পর্কটা আরো ভালো হবে। পা চারের কাজগুলো সহজ হবে।

মাঝে মাঝে নিজের উপর বেশ গর্ব হয় মতিসুরের। গোপনে গোপনে এত কিছু করে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। নিজের বাইজিশালা তৈরি করছে, অথচ কেউ কিচ্ছু টেরও পাচ্ছে না। এই নোংরা খেলায় মেতে উঠে সে নিজের ছেলেদের ভবিষ্যৎ এর কথাও ভাবৃর সময় নেই। শরীফকেও নে /শার শহরে সেই টেনেছে।

আর মুগ্ধ? হা হা করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে মতিসুর। তার ছেলে এত বুদ্ধিমান। অথচ বাবার কাজ নিয়ে কিছু টেরই পাচ্ছে না। পাবেই বা কি করে? নিজের ছেলের চোখে নিজেকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বাবা বানিয়েছ সে। এখন শুধু আসল খেলা শুরু। এখন আর এমন কেউ নেই যে তার কালো পর্দা ফাঁস করবে।

#চলবে …..