দৃষ্টিনন্দনে তুমি পর্ব-২৮ এবং বোনাস পর্ব

0
335

#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২৮

সুখের মূহুর্ত বুঝি চোখে পলকে স্বপ্নের মতো পার হয়ে যায়। তারপরে আসে দুঃখ। সময়টা বেশ কঠিন। কিছুতেই কাটতে চাই না। অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে ধুকে ধুকে বাঁচতে হয়। সেই কঠিন মূহুর্তে যদি নিজের প্রিয়জনকে পাশে না পাওয়া যায় তবে এর চাইতে কষ্টের কি বা থাকে। ডিপ্রেশনে জীবন তছনছ হয়ে যায়। অনেকেই বাধ্য হয়ে জীবনের সমাপ্তি খুঁজে পৃথিবী থেকে মুক্তি দিয়ে চলে যায়। আবার কেউ সবটা কাটিয়ে জীবন সুন্দর করে সাজিয়ে তুলে। নোংরা সংকীর্ণ থানার ছোট্ট একটা সেলে হাটুর মধ্যে মাথা গুজে বসে আছি আবির। গতকাল রাতটা ছিল স্বপ্নের মতো সুন্দর। আর আজকের রাতটা ভয়ংকর। চারদিকে শুধু অন্ধকার হতাশা আর অসম্মান। কিভাবে কলঙ্কমুক্ত হবে সেই চিন্তা ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। একদিকে ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরুত্ব অন‍্যদিকে সমাজ সংস্কারের ঘৃণা। কিছুক্ষণ আগেও ওর উপরে অমানবিক অত‍্যাচার হয়েছে। নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। হাতের কয়েক জায়গাই ছুলে গেছে। স্বীকারোক্তির জন্য এরা এসব করছে। আবির জানে একবার যদি ও সবটা স্বীকার করে তবে ওকে আর চর্চার করবে না। জেলে পাঠিয়ে দিবে কিন্তু ওতো খুনী না। নিজের আপন ফুপিকে ও কিভাবে খু*ন করতে পারে? যে অন‍্যায় করেছিল জেনেও তার চিকিৎসার কোনো ত্রুটি রাখেনি। মাদ্রাজে গোলনাহার বানুর কাছে রফিক আর ওর বাবা আছে। যাদেরকে বাড়িতে ফিরতে মানা করা হয়েছে। হঠাৎ এমন ঝামেলা হবে ভাবতেও পারেনি। বিপদ বুঝি হঠাৎ করেই আসে। আবিরের শরীরের কষ্টের চাইতে মনের কষ্ট ওকে বেশি পিড়া দিচ্ছে। হৈমীকে লেখা চিঠিটা এক প্রকার বাধ্য হয়েই লিখতে হয়েছে। বারবার হুমকি আসছে ওর উপরে এটাক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ও যেখানেই থাকবে সেখানেই বিপদ। ওর জন্য পুরো পরিবারের উপরে হামলা হতে পারে ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দূরে গিয়ে মেয়েটা ভালো থাক। সাময়িক রাগ কখনও ভালোবাসার সামনে বাধা হতে পারেনা। আবির জানে একবার যদি হৈমন্তীর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারে তবে মেয়েটা ওকে দূরে সরিয়ে দিতে পারবে না। যারা ভালোবাসতে জানে তাঁরা আপন করতেও জানে। এলোমেলো ভেবে চলছে আবির। হঠাৎ শব্দ করে দরজা খুঁলে যেতেই ও মাথা তুলে তাকালো। ঠোঁটে কেটে গেছে। সামনে থাকা পুলিশের পোশাক পরা লোকটাকে ওর দানব বলে মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র মিডিয়া আর টাকার লোভে এরা সত্যিটা সামনে আনছে না। একজন লোক বলল ও খু*নী আর এর তাই সবাই মেনে নিলো কিন্তু কেনো? আসল অপরাধীকে ধরার কোনো তাঁড়া নেই। প্রচণ্ড ঘৃণা হচ্ছে পুলিশ জাতীর উপরে। এরা টাকার জন্য সব পারে। আবিরের ধ‍্যান ভাঙলো অলিয়ার হোসেনের কথা শুনে। লোকটার চোখেমুখে বিস্ময়। উনি দ্রুত আবিরের সামনে বসে পড়লেন। টিস্যু দিয়ে আবিরের ক্ষতবিক্ষত হওয়া হাত চেপে ধরে বললেন,

> সরি মিস্টার আবির। আমি ছিলাম না। আপনার উপরে টর্চার হবে বুঝতে পারিনি। আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন? সেদিন মহিতের কেসটাতে আপনার স্ত্রী আমাকে সাহায্য করেছিলেন। উনি নিজের জীবনের পরোয়া না করে আপনার জীবন বাঁচাতে ফাঁ*সিতে ঝুল দিয়েছিলেন। আমি বুঝতে পারছি আপনাকে ফাঁসানো হয়েছে। একটু সময় দিন সবটা সামনে আসবে। আমি কথা দিচ্ছি সবটা ঠিক হয়ে যাবে।

আবির বিরক্ত হলো ভদ্রলোকের কথা শুনে। ওকে এতক্ষণ পিটিয়ে এখন সমবেদনা জানাতে এসেছে। তাছাড়া সেদিন এই ভদ্রলোকের কথা শুনে হৈমন্তী ওরকম পাগলামি করছিল। আর ও বিনা দোষে মেয়েটার উপরে রাগারাগি করেছে। ক্ষণস্থায়ী জীবনে এক মিনিট লস করার মানে অনেক কিছু। কতটা সময় হৈমন্তীর থেকে দূরে থাকতে হয়েছে এই বদ পুলিশের জন্য। আবির বিরক্তি নিয়ে বলল,

> আপনার হুকুমে আমার স্ত্রী সেদিন ওরকম ফালতু একটা কাজ করেছিল আমি আপনার উপরে বিরক্ত।

অলিয়ার সাহেব শব্দ করে হেসে বললেন,
> আপনি নিজের কথা ভাবুন। সেদিনের কথা ভুলে যান। স্ত্রীকে খুব ভালোবাসেন?
> স্বাভাবিক বাসতেই পারি।
> আপনার সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছে। যদিও অনুমতি দেওয়া হয়না তবুও বাধ্য হয়েছি। উনি একরোখা টাইপের তাই।
আবির সামনে তাকালো। সেখানে ধীরগতিতে প্রবেশ করলো আরাফাত। ছেলেটার চোখমুখ শুকিয়ে আছে। আবিরকে এভাবে বসে থাকতে দেখে হাটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে একবারে আবিরর সামনে গিয়ে বসে পড়লো। ছেলেদের কান্না করতে নেই কিন্তু আবিরের অবস্থা দেখে ওর কান্না পাচ্ছে। আবির অসুস্থ ছিল। তার মধ্যে এতোটা টর্চার হয়েছে ওর অবস্থা কাহিলি। ওকে দেখে আবির মলিন হেসে বলল,

> হৈমী চলে গেছে? ও ঠিক আছে? আমাকে ভুল বুঝেছে তাই না?

আবির একদম কতগুলো প্রশ্ন করে থামলো।ওর এমন ছটফট করতে দেখে আরাফাত শত কষ্টের মধ্যেও হাসলো। আবিরের মাথায় হাত রেখে বলল,

> আমার বোন অবুঝ নয়। আর যাইহোক তোমাকে ভুল বুঝবে না। আমাকে দুটোদিন সময় দাও সব ঠিক করে ফেলবো। অষ্ট্রেলিয়া পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহ না যে যেতে অসুবিধা হবে। তাছাড়া তোমার ভিসা পাসপোর্ট সব রেডি আছে। চোখের নিমিষেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার বোনের চোখের পানি বেশিক্ষণ ঝরতে দিয়ে পারিনা আমি। ছোট থেকে এই দুহাতে ওকে মানুষ করেছি। ওর কষ্ট মানে আমার কষ্ট।

> আমাদের ঝামেলায় পড়ে তোমাদের কষ্ট পেতে হচ্ছে। আমি বুঝতেই পারছি না ফুপির সঙ্গে এসব কে করতে পারে।

আরাফাত দাঁড়িয়ে পড়লো। মাথা চুলকে বলল,

> স্বার্থের টানে প্রিয়জনও অনেক সময় বেইমানি করে জানো? রক্তের সম্পর্ক পর হয়ে যায়। বাবা ছেলেকে, ছেলে মাকে আর ভাই বোনকে পযর্ন্ত হত‍্যা করতে পারে। আমাদের মফস্বলে একবার কি হয়েছিল জানো? মামা আর বোনের ছেলেদের মধ্য ঝগড়া হয়েছিল।এই দুদলের মারামারীতে মামা মারা গিয়েছিল। অপর দলে থাকা বোনের ছেলেরা দারুণ ভাবে ফেঁসে গেলো। ওদের দলের কেউ মা*রা গেলো না কিন্তু একজনের অবস্থা বেশ খারাপ ছিল হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। তবে আহামরি কিছু ছিল না চিকিৎসা করলে ভালো হতে সময় লাগতো না। কিন্তু আচার্যের বিষয় দুদিন পরেই লোকটা মারা গেলো। দুই দলে দুজন মারা গেছে কেস নড়বড়ে হয়ে গেলো। তারপর দুপক্ষের বৈঠকে কেস খারিজ হয়ে গেলো। সবটা কেমন পানির মতো তাই না?

আবির মাথা নাড়াতেই আরাফাত হাসলো। বলল,

> প্রথমে পানির মতো ছিল না। যদি না সেই ভদ্রলোক মারা যেতো। উনি মারা গিয়ে সবটা সহজ করে দিলেন। এই সহজ বিষয়ের মধ্যে নোংরা একটা খেলা ছিল। যেটা শুনলে শরীর ঘৃণাতে ভরে উঠে মানুষের উপরে। কতটা জঘন্য তুমি ভাবতেও পারবে না। সেই ভদ্রলোকের স্ত্রী পুত্রকে অতিরিক্ত জমি আর টাকা দিয়ে বাকি ভাইয়েরা উনাকে খুন করে দোষটা বিরোধীদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছিল। বুঝতে পারছো স্বার্থের কাছে কেউ আপন না? আমার যতদুর মনে পড়ছে তোমার ফুপিকে উনার মেয়ে পিউলি মেরেছে। প্রতিশোধ নিতে। ওদেরকে আমি ভালো করে চিনি। এই যে তোমাকে জিঞ্জাসা করতে এনে অযথা পিটিয়েছে এটার জন্য থানায় কয়েক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। আমি এখানে এসেছি দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। এদেশের আইনের উপরে আমার কোনো ভরসা নেই। টাকা ছাড়া এরা কিছুই চিনে না। মিডিয়া যেটা কভার করবে ওটা নিয়ে কয়েকদিন হৈচৈ হয়ে হঠাৎ থমকে গিয়ে মাটি চাপা দিতে এদের জুড়ি মেলা ভার। যাইহোক সময় কম আমি যাচ্ছি। তুমি চিন্তা করোনা। এরা আর কিছুই করবে না। আমি সবটা সামলে নিবো। ভাইয়া দেখছে বিষয়টা।

আরাফাত একদমে কথাগুলো বলে থামলো। আবির এখনো থমথমে মুখ করে বসে আছে। কিভাবে মানুষ এরকম করতে পারে। নিজের মাকে হত্যা করতে হাত দুটো কাঁপলো না? কিসের স্বার্থ,মাটিতে যখন শরীর মিশে যাবে তখন কোথায় থাকবে অর্থসম্পদের অহংকার? ক্ষমতার বল বা অর্থ দিয়ে আখিরাতের শাস্তি কমানো যাবে? কখনও যাবে না। পাপ করে অর্থসম্পদের মালিক হয়ে দুদিন পরে চলে যেতে হবে তখন সেসব ভোগ করবে মৃত ব‍্যাক্তির আত্মীয়স্বজন স্ত্রী ছেলেমেয়েরা। তারা কি বাবার পাপের ফল ভাগাভাগি করে নিবে? কখনও নিবে না। তাহলে তাদের জন্য কেনো নিজের পরকাল হারাতে হবে আবিরের মাথাতেই আসছে না। দুদিনের দুনিয়া অথচ মানুষ সবটা ভুলে গিয়ে পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া ঝামেলায় লিপ্ত হচ্ছে। আপন মানুষকে হত্যা করছে। কথাগুলো ভেবে ও দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। আরাফাত ওর দিকে তাঁকিয়ে অলিয়ার সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। বহুকাজ বাকী আছে।
____________________________
চুপচাপ ফোন হাতে বসে আছে হৈমন্তী। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ চলছে। কোন এক সাংবাদিক রক্তাক্ত অবস্থায় আবিরের একটা ছবি পাবলিক করেছে। সেটাই ঘুরেফিরে সংবাদে প্রচার করছে। হৈমন্তী এক দৃষ্টিতে সেটা দেখছে। কিছুক্ষণ আগে অরিন ফোন করেছিল ওর থেকে বাড়ির খোঁজখবর নিয়েছে। গতকাল রাতে ওর ফ্লাইট হয়েছে। সকালবেলায় এখানে পৌঁছাতেই বাংলাদেশের থেকে ফোন এসেছে। ওর বড় ফুপি আবেদা মির্জা অষ্ট্রেলিয়া আছেন দীর্ঘ পঁচিশ বছর। উনার স্বামী এখানকার ভালো একজন ডাক্তার। ভদ্রমহিলার তিন ছেলেমেয়ে। দুজন মেয়ে আর একটা ছেলে। হৈমন্তী তাদের সঙ্গে তেমন পরিচিত না। এখানে এসেছে কারো সঙ্গে দেখা পযর্ন্ত হয়নি। হৈমন্তী সেসব নিয়ে ভাবছে না। ফুপা ফুপি ওকে আনতে গিয়েছিল। হৈমন্তী সকলের প্রিয়। দীর্ঘ জার্নির পরেও হৈমন্তী আজ ক্লান্ত হয়নি। কোনো ঘুম পাচ্ছে না। চুপচাপ নিউজ দেখছে। লোকটার রক্তাক্ত শুকনো মুখটার দিকে তাঁকালেই হৈমন্তীর নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। দেশে থাকলে হৈমী থানার পাশে গিয়ে বসতে থাকতো। যদি একবার দেখা হতো সেই আশায়। আবিরের দেওয়া চিঠিটা ও যত্ন করে তুলে রেখেছে। এটার উত্তর ও দেখা হলে দিবে। কিন্তু যদি দেখা না হয় এর মধ্যেই যদি কিছু হয়ে যায় তখন? কথাটা ভেবেই ও অস্থির হয়ে উঠেছে। দেখা হবে না কেনো হতেই হবে। উপরে সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন। উনি সবটা দেখছেন। সব ঠিক করে দিবেন। হৈমন্তী নানারকম ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। আবার ভেঙে পড়ছে। হঠাৎ আবেদা মির্জার কথা শুনে হৈমন্তীর ধ‍্যান ভাঙলো। উনি হৈমন্তীর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,
> কি হচ্ছে হৈমী? খেতে হবে তারপর ঘুম। এভাবে থাকলে শরীর খারাপ হবে। চিন্তা করবে না একদম।

হৈমন্তী কোনো উত্তর করলো না। কেনো জানি কথা বলতেই ওর ইচ্ছা করছে না। সৌজন্যতার খাতিরে মলিন হাসলো। ভদ্রমহিলা ওকে টেনে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে বাকী ছেলেমেয়েকে ডেকে নিলেন। ওরা রুমে ছিল। একে একে সকলেই হাজির হলো। হৈমন্তীকে দেখে কেউ আগ্রহ দেখালো না। স্বাভাবিকভাবে আলাপ সারলো। হৈমন্তীকে আবেদা মির্জা হাতে তুলে খাওয়ায়ে দিলেন। ভদ্রমহিলা আর উনার স্বামী ছাড়া এখানে কেউ হৈমন্তীর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেনা। ওয়েস্টার্ন প্রভাবে ওদের মধ্যে বাংলা কালচারালের ক ও অবশিষ্ট নেই। চালচলন একটু বেশিই অন‍্যরকম। হৈমন্তীকে সবাই আড়চোখে দেখলো। হৈমন্তীর দৃষ্টি শূন্য। মনে শুধু আবিরের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। হৈমন্তী খাওয়া শেষ করে চুপচাপ উঠে গেলো।
☆☆☆
আরাফাত ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলো। পরিবারিক ঝামেলাটা এখন আর পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। রাজনৈতিক গণ্ডিতে গিয়ে কড়া নেড়েছে। শহর জুড়ে তোড়পাড় চলছে। এর মধ্যে হঠাৎ করেই আবির গায়েব। ওর খোঁজ মিলছে না। দুদিন পার হয়েছে। সব ঠিকঠাক ছিল। এক দল সাংবাদিক প্রচার করছে রাজীব এমপি ক্ষমতার জোরে বোনের স্বামীকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিদেশে পালাতে সাহায্য করেছে। বিষয়টা আরাফাত পাত্তা দিচ্ছে না। আসল অপরাধীকে ধরার চেষ্টা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি আসল সত্যিটা সামনে আসবে। এর মধ্য গোল নাহার বানু দারুণ একটা কাজ করেছে। নিজের নামের সব অর্থ আর জমি ছেলেদের নামে দলিল করেছেন। সেটা নিয়ে চলছে আরেক ঝামেলা। পিউলি বাবাকে নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আজেবাজে কথা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। মায়ের মৃত্যুর পরে সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারসূত্রে ওদের দুই বোনের প্রাপ্য ছিল সেটা থেকে ওদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তোড়জোড় করে কিছু করা ঠিক না। একটু বুদ্ধি দিয়ে চলতে হয়। কি দরকার ছিল এই মূহুর্ত্তে এমন একটা পাগলামি করার। আরাফাত বিরক্তি নিয়ে অরিনকে পানি আনতে বলল। অরিন মুখটা ভার করে ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,

> ভাইয়ার খোঁজ পেয়েছেন? খুব ভয় করছে। অস্থির লাগছে।

> আমাদের দুভাইবোনের কপালে শশুর বাড়ির সুখ নেই বুঝলে? কাজীরা ঝামেলা নিয়ে ঘুরাঘুরি করে। বোনটার কথা ভেবেই আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। বিশ লক্ষ শেষ। আরও কত যাবে আল্লাহ্ ভালো জানে।

> আপনি কি যৌতুক নিতে চাইছেন?
আরাফাত বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিল,

> মির্জা বাড়ির ছোট ছেলেকে যৌতুক দেওয়ার মতো টাকা কাজীদের নেই বুঝলে? ফালতু কথাবার্তা না বলে হাত পা টিপে দাও। সারাদিন দৌড়ের উপরেই আছি। বোনটার কথা ভাবলে নিজের কষ্টের কথা মনে থাকে না।
অরিন অবাক হয়ে বলল,
> আপনার হাত পা টিপে দিবো? ছোঁয়া যাবে আপনাকে?
> না আমার গায়ে ছোঁয়াচে রোগ আছে। স্পর্শ করলে সংক্রমণ হতে পারে। তোমার বাপ ভাইয়ের অত‍্যাচারে জীবন অতিষ্ঠ একটু সেবা টেবা করো। অসুস্থ হলে তখন কিন্তু সব ঝামেলা হয়ে যাবে।
অরিন অপেক্ষা করলো না। দ্রুত আরাফাতের পাশে বসে পড়লো। কাঁপা কাঁপা হাতে আরাফাতের বাহু স্পর্শ করে আবার হাত টেনে নিলো। অস্বস্তি হচ্ছে। আরাফাত ওর মুখের আকৃতি দেখে হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। একজন দুর্নীতি করে থানা থেকে কিছুতেই বের হতে চাইছিল না। আরেকজন নিজের স্বামীর হাত ধরতে গিয়ে কাঁপাকাঁপি করে ভূমিকম্প করে বাড়ি উড়িয়ে দিচ্ছে। কাজীদের বাড়ির সবগুলো অকর্মার ঢেকি।

চলবে

#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
বোনাস পর্ব

থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে হৈমন্তী। এখানে আসার পরে ফুপি আর ফুপা ছাড়া কেউ ওর সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলেনা। ফুপির দুজন মেয়ে ওকে এলিয়েন ভাবছে হয়তো। আড় চোখে দেখছে। এরা এমন কেনো করছে বুঝতে পারছে না। আসার পর থেকে নিয়মিত মাসুদ ফোন দিচ্ছে। ওখানের আপডেট বলছে। হৈমন্তীর মন কিছুটা শান্ত আছে। ভাইদের উপরে ওর পুরোপুরি ভরসা আছে। হৈমন্তীর জন্য সব করতে পারে। এরকম ভাই থাকা সত্যি সৌভাগ্যের বিষয়। বিষণ্নতা কাটাতে ফুপি ওকে পাশের একটা পার্কে ঘুরতে নিয়ে যেতে চেয়েছে। হৈমন্তী না করতে পারেনি। বড়দের মুখের উপরে মানা করা কেমন বেমানান লাগে। হৈমন্তী লাল রঙের একটা গাউন পরে তাঁর উপরে সোয়েটার জড়িয়ে নিলো। চুলগুলো সুন্দর করে মাফলারে জড়িয়ে নিয়ে বের হলো। হৈমন্তীকে দেখে আবেদা মির্জার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। ওকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললে,

> মাশাল্লাহ্ আমার মাকে দেখতে পরির মতো লাগছে। মায়ের মুখটা তোকে দেখলেই মনে পড়ে যায়। ঠিক তোর মতো ছিল জানিস? বাবা আমার মাকে প্রথম দেখাতে পছন্দ করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। আমার দাদাজান তো প্রথমে মানতেই চাইনি পরে নাকি অনেক ঝামেলা করে বিয়ে হয়। মা বলতেন আমার শুনতে বেশ লাগলো। মায়ের কথা প্রচণ্ড মনে পড়ে। তোর জন্মের আগেই মারা গেছেন তোর দেখা হয়নি। আমি সবাইকে বলি হৈমীর মধ্যে আমার মা ফিরে এসেছে।

আবেদা কাজী একদমে কথাগুলো বলে থামলেন। হৈমী ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> ফুপি আম্মু রোহান ভাইয়া জুলি আপু নায়রা আপু ওরা আমাকে পছন্দ করছে না তাইনা?কথা বলেন না কেনো?
> সবগুলো হয়েছে এক নাম্বারের ফাজিল। একগাদা বন্ধু বান্ধবী জুটিয়ে রাতদিন পার্টি ফার্টি করছে। কথায় বলে না দুই দিনের বৈরাগী ভাতের বলে অন্ন।এদের হয়েছে তাই। চলতো ওদের লাগবে না। তোর ফুপি একাই একশো। তোকে ঘুরতে আমি আর তোর ফুপা সাহায্য করবো। কলেজে নিয়ে যাবো। একা ছাড়বো না।
হৈমন্তী প্রশন্ন হলো ফুপির কথা শুনে। একা একা চলাফেরার অভ‍্যাস নেই। ভয় ভয় করে। চলাফেরাটা শিখে নেওয়া উচিত ছিল। কিছু সময় আসে যখন পাশে কাউকে পাওয়া যায় না। নিজের কাজ নিজেকেই করতে হয়। সব সময়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকা উচিত। হৈমন্তী আফসোস করতে করতে ফুপিকে নিয়ে বের হলো। বাসার সামনে গাড়ি আছে কিন্তু পার্ক বেশিদুরে না। হেটে যাওয়া আসা করা যাবে। বিকেল টাইমে লোকজন হাটতে বের হয়েছে। শীতের শেষ হয়তো। হৈমন্তী আছে অষ্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা শহরে দক্ষিণে। চমৎকার একটা শহর। হৈমন্তীর বেশ পছন্দ হয়েছে। আরব মহাসাগরের পাশ ঘেঁষে অবস্থিত অষ্ট্রেলিয়াকে নিয়ে হৈমন্তীর বেশ কৌতূহল ছিল। খুব ইচ্ছা পুরো অষ্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করার কিন্তু সেটা সম্ভব না। এর আয়তন অনেক দীর্ঘ।তবে যতটা পারে আশপাশটা ঘুরবে। হৈমন্তী ফুপির হাত ধরে সামনে এগিয়ে গেলো। প্রতিবেশিরদের সঙ্গে আবেদা মির্জার ভালো সম্পর্ক আছে ওটা হৈমন্তীর বেশ ভালো লাগলো। পথে দেখা হলো পাশের বিল্ডিংয়ের এক মহিলার সঙ্গে। ভদ্রমহিলা এটা ওটা জিঞ্জাসা করছে। হৈমন্তী চুপচাপ ফুপিদের কথা শুনতে শুনতে পার্কে পৌঁছে গেলো। দুরে অল্প বয়সি ছেলেমেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে। কেউ দৌড়াদৌড়ি করছে। হৈমন্তী সেসব দেখছে। হঠাৎ দুর থেকে জুলি দৌড়ে এসে হৈমন্তীর হাত ধরে বলল,

> হৈমী চলো আমার বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করবে। ওরা তোমার সঙ্গে আলাপ করতে ইচ্ছুক। আসো আসো। মাম্মা ওকে নিয়ে যায়?

হৈমন্তী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আবেদা মির্জা ওষ্ঠে হাসি এনে ওকে অনুমতি দিলো। হৈমন্তী ভয়ে ভয়ে বোনের হাত ধরে সামনে এগিয়ে গেলো। প্রচণ্ড ভয় করছে। তাছাড়া ওর তেমন কোনো বন্ধু নেই। যারা আছে একান্ত কলেজে গিয়ে ছাড়া কথা হয়না। হৈমন্তীর চুপচাপ জুলির বকবক শুনছে। হঠাৎ মেয়েটার কি হলো কে জানে। দূর থেকে ওকে দেখেই দৌড়ে এসেছে। জুলি ওকে নিয়ে ওর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলো। নায়রা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। হৈমন্তী এদের ছোট। ওদের সঙ্গে কয়েকজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। হৈমন্তীকে এখানে আনার কারণ ও এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে। হৈমী কোনোভাবে সামনের ছেলেমেয়েগুলোর নজরে পড়েছিল তাই এখানে আনা হয়েছে। হৈমন্তী অস্বস্তি নিয়ে সকলের সঙ্গে হাই হ‍্যালো করলো। কথা বলে বুঝলো এরা খারাপ না বেশ ভালো। ফুপি কেনো যে এদের নামে এতগুলো কথা বলেছিল বুঝতে পারলো না। এর মধ্যেই রোহান বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে হৈচৈ করে হাজির হলো। হৈমন্তী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রোহানের চালচলন আর চেহারা মোটামুটি বিদেশিদের মতোই তবে গায়ের রঙটা হালকা চাপা। বাংলাদেশের হলে বলা যায় ছেলে ভীষণ সুদর্শন। রোহানের দৃষ্টি হৈমন্তীর দিকে। লাল গাউনের উপরে কালো রঙের ছোয়েটার আর লাল রঙের মাফলার পরা মেয়েটাকে ওর ছোটখাটো একটা পুতুলের মতো লগছে। এতোটা খেয়াল করে আগে দেখা হয়নি। বিষয়টা ভেবে ও চনচল হয়ে উঠলো। মিষ্টি হেসে জুলিকে বলল,

> ওর চোখের পানি শুকিয়ে গেছে? চোখের পানিতে আমাদের হাউজ ডুবিয়ে দেওয়ার উপক্রম করেছিল। চারদিকে এই সাদার মধ্যে কটকটে লাল রঙে ওকে দখতে পেত্নীর মতো লাগছে।

হৈমন্তী ভ্রু কুচকে রোহানের দিকে তাঁকালো। ছেলেটা ওকে বিনা কারণে খোচা দিচ্ছে কিন্তু কেনো? জুলি ওর কথার উত্তর দিলো,

> ভাইয়া তুই জানিস আমার বন্ধুরা ওকে ভীষণ পছন্দ করেছে। রেড ড্রেসে ওকে দারুন লাগছে।

> ওদের দৃষ্টি পচে গেছে। ওকে এভাবে বাইরে বাইরে ঘুরতে নিষেধ করে দিস।

রোহান যেভাবে হুট করে এসেছিল সেভাবেই চলে গেলো। হৈমন্তী হতবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে নিরাশ হয়ে জুলির দিকে তাকালো। মনের মধ্যে আবির ঘোরাঘুরি করছে। এমনিতেই অশান্তিতে আছে। এসব আজেবাজে বিষয় নিয়ে ও ভাবতে চাইছে না।
__________________
আবিরের ক্লিনিক বন্ধ। যত রোগী ছিল সব বের করে দেওেয়া হয়েছে। হাসপাতালের জব থেকে ওকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ছেলেটার খোঁজখবর নেই সে নিয়ে বাড়িতে কেউ চিন্তিত না। ওর বিষয়টা আরাফাত দেখছে। রাজীব বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে কেসটা উল্টোদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে। মার্ডার না হলে সমস্যা ছিল না। আবিরের ফুপাতো বোন আর ফুপা বেশ মুখোশধারি লোক। প্রথমেই মিডিয়াকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। কিছু একটা হলেই সাংবাদিকদের নিয়ে বসে যাচ্ছে মিটিংয়ে। মাসুদ ঢাকায় বদলি নিয়েছে। বাসাই থাকতে অসুবিধা হচ্ছে না। আমেনা বেগম আবিরের উপরে প্রচণ্ড ক্ষেপে আছে। বদ ছেলেটা নিজের ফুপিকে হত্যা করেছে। যদিও বা না করে তবুও দেশের লোকজন সব জেনে গেছে। মির্জা বাড়ির ছোট জামাই খুনী। উনার মান সম্মান চলে যাচ্ছে। চয়নিকা বুঝিয়েছে বলেছে যখন সত্যি সামনে আসবে তখন আর কেউ আবিরকে ভুল বুঝবে না। অরিন দুপুর বেলায় বাবার বাড়িতে গেছে। এটা আরাফাত জানে না। আসমা বেগম ওকে যেতে বলেছে। বাড়িতে কোনো ছেলেমেয়ে নেই। সবগুলো বাইরে শুধু অরুনি বাড়িতে আছে। মেয়েটাকে কাছে পেলে শান্তি পাবে এই আশায় ওকে ডেকেছে। আরাফাত রাতে বাড়িতে ফিরে ঘরে অরুনিকে না পেয়ে সারা বাড়িতে খোঁজ করলো। ভেবেছিল কাউকে জিঞ্জাসা না করেই খুঁজে নিবে কিন্তু শেষমেশ বাধ্য হয়ে বড় ভাবির রুমে উঁকি দিলো। চয়নিকা তখন ছেলেকে পড়াতে বাস্ত ছিল। আরাফাত গিয়ে সোজাসুজি জিঞ্জাসা করলো,
> ভাবি সেই গাধীটা কোথায়?দেখছি না।
চয়নিকা ঠোঁট উল্টে হেসে বলল,
> মিস করছো বুঝি?
> না সব সময় চোখের সামনে দুখি দুখি মুখ করে ঘুরে বেড়ায় আজ হঠাৎ নেই তাই বললাম। যাইহোক কোথায় তিনি?
> বাবার বাড়িতে। তোমাকে ফোন করা হয়েছিল পাওয়া যায়নি। তুমি সারাদিনব্যাপী কোথায় যাচ্ছো কি করছো কিছুই তো বলে যাও না।আধার রাতের চাঁদ হয়ে গেছো।
> ভাবি এসে বলবো এখন যাচ্ছি ।
> বাহ দুদিনেই বউয়ের প্রতি এতো মায়া?
> একটা মাত্র বউ আমার। হাতছাড়া হতে দেওয়া চলবে না। ঘুমের মেডিসিন বুঝলে?
আরাফাত উত্তরের আশা করলো না। চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে বেরিয়ে গেলো। চয়নিকা সামান্য হেসে ছেলের দিকে নজর দিলো। রাজীব বাড়িতে তেমন থাকতে পারে না। কখন আসে কখন যায় বলা কঠিন। সব সময় লোকজন নিয়ে চলাফেরা করে।
☆☆
ছোট মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে অরিন। আসমা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর চোখের পানি ফেলছেন। ছেলেটার সঙ্গে কথা বলা হয়নি। কোথায় আছে কি করছে কিছুই জানে না। বড় ছেলেটা বিদেশ গিয়ে বাড়িতে ফেরার নাম করে না। সেখানেই বিয়ে করে সংসার পেতেছে। ছোট ছেলেটার এই কঠিন সময়ে বড় ছেলে একবার ফোন দিয়েছিল মাত্র। সেসব কথা অরিনকে উনি বলছেন। এমন সময় আরাফাত এসে হাজির হলো। কাজীদের বাড়িতে ওর বেশ কদর বেড়েছে। শশুর শাশুড়ি চাচি শাশুড়ি সকলের চোখে এখন ও সুপার হিরো। বিপদে যারা পাশে থাকে তারাই প্রকৃত বন্ধু। ভালো সময়ে বন্ধুর অভাব হয়না কিন্তু খারাপ সময়ে তাদের পাওয়া যায় না। ওরা সুসময়ের বন্ধু। আরাফাতকে দেখে অরিন দ্রুত উঠে বসলো। আসমা বেগম মিষ্টি হেসে আলাপ করলো। আরাফাত উনার পাশে বসে অরিনকে হুকুম দিলো পানি আসতে। অরিন ছুটলো ঠাণ্ডা পানির খোঁজে। আসমা বেগমের দিকে তাকিয়ে আরাফাত বলল,
> চিন্তা করবেন না। আবির ভালো আছে।
> একবার কথা বলা যাবে?
> এখন তো বলা যাবে না। আশাকরি সকালে যাবে। নেটওয়ার্কের বাইরে আছে। আপনি ওকে নিয়ে একটুও ভাববেন না। তাছাড়া এদিকটা আমি সামলে নিবো। ক্লিনিকের তালা ভাঙার ব‍্যবস্থা করছি।
এর মধ্যেই অরিন পানি নিয়ে হাজির হলো। আসমা বেগম জামাইয়ের খাবারের ব‍্যবস্থা করতে উঠে যেতেই আরাফাত অরিনের হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
> না বলে আসার জন্য আজ সারারাত তুমি আমার পা টিপে দিবে।
অরিন চোখ বড়বড় করে বলল,
> দজ্জাল শাশুড়িরা যেমন করে আপনিও আমার সঙ্গে তেমন করবেন?
> দূর ওসব না। সাইকো বরের মতো করবো। কথা না শুনলেই মার চলবে।
অরিন ভেঙচি দিয়ে চলে গেলো। লোকটা যে ওকে পচানোর চেষ্টা করছে বুঝতে বাকি নেই। কঠিন মূহুর্ত্তেও লোকটার মজা করা যায় না। আরাফাত ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। আবিরকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে বহু ঝামেলা হয়েছে। লোকজনের চোখের আড়ালে টাকা দিয়ে ওকে বের করেছে। তাছাড়া আবিরের নামে এখনো মুল চার্চশিট দেওয়া হয়নি। আগে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হবে তারপর দেখা যাবে। তিনমাস না পার হলে ওসব কোর্টে জমা হবে না। একবার য‍দি ওকে জেলে দেওয়া হয় তিনমাসের আগে বেল পাওয়া যেতো না। আপাতত ওকে সকলের দৃষ্টির আগচরে থাকা জরুরি। আরাফাত ওর হয়ে এদিক সামলে নিবে। মির্জাদের ক্ষমতা আছে সেই সঙ্গে আছে টাকা। দেশে যে হারে দুর্নীতি হচ্ছে সেখানে বাঁচতে হলে এই দুটো থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।