দ্যা লাস্ট ব্লাড মুন পর্ব-০১

0
501

#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#সূচনা_পর্ব
#সারিকা_হোসাইন

কুচকুচে কালো রঙের রেকটেঙ্গুলার শেপের একটি রাজকীয় কফিন।কফিনের মাথার অংশে বিশ্রী রকমের দাঁত খেঁচানো বাদুড়ের মাথার মূর্তি।সেই সাথে সারা কফিন জুড়ে টকটকে রক্তিম লাল রঙের কারুকাজ ।দূর থেকে এক পলকের জন্য ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকালে মনে হবে সারা কফিন জুড়ে তাজা রক্তের বন্যা।কফিনটির বা পাশের দেয়ালের কর্নারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো আরেকটি সার্কোফ্যাগাস রাজকীয় কফিন।
বিশাল রাজ প্রাসাদের স্যাৎস্যাতে গ্রাউন্ড বেজমেন্টে এই কফিনটি খুবই যত্ন সহকারে রাখা হয়েছে।আপাতত দৃষ্টিতে তাকালে মনে হয় কেউ একজন সকাল বিকাল খুব করে কফিনটির যত্ন নেয়।

হঠাৎই বেজমেন্টের ছাদে ঝুলে থাকা শত শত বাদুর ক্যাচ ক্যাচ শব্দ তুলে চিৎকার করে উঠলো।ভয়ানক এক আত্ন উল্লাস পরিলক্ষিত হলো তাদের মাঝে।বাদুড়ের চিৎকারে সযত্নে জাল বিস্তার করা মাকড় গুলো জানের ভয় নিয়ে নিমিষেই কোথাও একটা পালিয়ে গেলো।ধীরে ধীরে দিনের আলো মিলিয়ে নিভে গেলো টকটকে সূর্যের শেষ আলোক বিন্দু।ভয়ানক শো শো বাতাসে দুমড়ে মুচড়ে একাকার হলো প্রাসাদের বাইরের বার্চ,পাইন আর ওক গাছ।কীয়তখন বাদে সমস্ত কিছু নিগুড় নিস্তব্ধতায় ঢেকে গিয়ে খট করে খুলে গেলো কফিনের ঢাকনা।

কফিনের ঢাকনা উন্মোচিত হতেই নজর কাড়লো ধবধবে শ্বেত রঙের লম্বা চওড়া সুদর্শন এক রাজকুমার।রাজকুমারের ঠোঁট জোড়া যেনো রেড হিবিস্কাস।ফ্লাকি পর্বতের ন্যায় উঁচু খাড়া নাক আর বাঁকানো সুন্দর ভ্রু।রাজকুমারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই টকটকে লাল ঠোঁট ভেদ করে বেরিয়ে এলো দুই পাটি দন্ত শলাকা।ধবধবে সাদা সুচালো দাঁত যেনো ধারালো কোনো অস্ত্র।
নির্দিষ্ট সময় গড়াতেই আগুন লাল মনি নিয়ে চোখ মেললো রাজকুমার।
ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলো শ্বাস প্রশ্বাস সেই সাথে নড়ে উঠলো হাত পা।
রাজকুমারের ঘুম ভাঙতেই কালো কাপড়ে আবৃত লম্বা চওড়া এক যুবক কফিনের পাশেই হাটু গেড়ে বসে মেঝেতে মাথা ছোয়ালো।

“কফিন ছেড়ে উঠুন রাজকুমার।আপনার সন্তুষ্টির জন্য হাজারো কুমারী কন্যার উষ্ণ রক্তের বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।সেই অমৃত সুধা পান করে তাদের জীবন ধন্য করুন।উঠুন রাজকুমার।উঠুন!

ধীরে ধীরে মশালের আলোয় আলোকিত হলো কূটকুটে বেজমেন্ট।কলের পুতুলের ন্যয় শোয়া থেকে সহসাই উঠে বসলো রাজকুমার।সারা দেহে প্রাণ সঞ্চালিত হতেই মুখে ফুটে উঠলো ক্রুর হাসি সেই সাথে লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে এলো কফিনের বাইরে।

“আরেকটি সুন্দর অন্ধকার নিমজ্জিত রাতের দেখা পেলাম আলফ্রেড।চলো শিকার করা যাক”

মাথা অবনত রেখেই স্মিত হাসলো আলফ্রেড নামক অর্ধেক মানব অর্ধেক পিচাশ যুবক।দীর্ঘ নিরানব্বই টি বছর ধরেই ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স জর্জ লিও এর বিশ্বস্ত সেনাপতি হিসেবে অভিষেক হয়েছে তার।এই নিরানব্বই বছরে কতো কিছুর পরিবর্তন হয়েছে।কতো মানুষের উষ্ণ রক্তে হলি উল্লাস করা হয়েছে।শূন্য করা হয়েছে গ্রাম থেকে গ্রামন্তরের মানুষ সেই সাথে গবাদি পশু।ধীরে ধীরে বেড়েছে সুদীর্ঘ আয়ু।কিন্তু সব কিছুর ভীড়েই একটাই হতাশা।
সেই হতাশার নাম হচ্ছে জর্জ লিও এর মৃ*ত্যু!

“এতো কি ভাবছো আলফ্রেড?

গম্ভীর মোটা স্বরের অদ্ভুত সম্মোহিত কন্ঠস্বর আলফ্রেড এর ভাবনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করলো।মাথা ঝুকে রেখেই আলফ্রেড নিচু স্বরে বলে উঠলো

“আর কতবার এভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নেবেন রাজকুমার?ভবিষ্যৎ বাণীতে তো বলাই হয়েছে একবার ওই মেয়ের পুনর্জন্ম বন্ধ হয়ে গেলে আপনি চিরতরে নরকের দাস হয়ে পড়ে রবেন ভয়ানক নরকে”

আলফ্রেড এর এহেন ভাবনায় অবজ্ঞা জনক হাসলো লিও এরপর আলফ্রেড এর দিকে এগিয়ে এসে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

“কখনো ভালোবেসেছো আলফ্রেড?

সেবক আলফ্রেড কোনো উত্তর দেয় না।যখন মানুষ ছিলো তখন ভালোবেসে ছিলো অলিভিয়া নামক একটি মেয়েকে।কিন্তু সেই মেয়ের ছলচাতুরীর কাছে টিকতে না পেরেই আজ তার এই অবস্থা।

আলফ্রেড এর পক্ষ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে বিগলিত হেসে উঠে লিও।ঠোঁটে হাসির রেখা অব্যাহত রেখে বলে উঠে

“ভালোবাসা হচ্ছে আকর্ষণীয় ফুল বেলডোনার মতো।তুমি এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ধীরে ধীরে ঘ্রাণ নিতে নিতে কখন যে বিষক্রিয়ায় মৃ*ত্যুকে বরণ করে নেবে তা তুমি নিজেই জানতে পারবে না আলফ্রেড।হেমলকে তো যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হয়।কিন্তু বেলডোনা কখন তোমাকে গ্রাস করবে তুমি বুঝতেই পারবে না।”

রাজকুমারের এমন কঠিন কথা আলফ্রেড এর ফাঁকা মস্তিকে ঢোকে না।যেই মস্তিস্ক সারাক্ষন অন্যকে সম্মোহিত করে ঘায়েল এর কৌশলে ব্যাস্ত থাকে সেই মস্তিষ্কে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাববার ফুসরত কই?

লিও এর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কক্ষ পরিত্যাগ করতে করতে কন্ঠ খাদে ফেলে আলফ্রেড বলে উঠে

“শীতল র*ক্ত আপনার অপছন্দ রাজকুমার”

আর দাঁড়ায় না আলফ্রেড।তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব।সারাটা সন্ধ্যা রাজকুমারকে নিয়ে কাটিয়ে দিলে রাজ্যের অন্যান্য কাজ কে দেখবে?আর রাজ মাতা এমিলিয়ার কাছে পান থেকে চুন খসলেই এতো জবাবদিহিতা আলফ্রেডের মোটেও পছন্দ নয়।

**********
রাতের প্রথম প্রহর, ঝকঝকে পরিস্কার আকাশে থালার মতো মস্ত রুপালি চাঁদ আর হাজার হাজার তারকা।ধেয়ে আসা মোলায়েম শিরশিরে বাতাস শরীরে অজানা ভালো লাগার শিহরন সৃষ্টি করছে।মাঝে মাঝে দুই একটা অদ্ভুত পাখির মিষ্টি ডাক কর্ণকুহরে এসে বাড়ি খাচ্ছে। নিজের তুলতুলে মখমলি বিছানা ছেড়ে প্রকৃতির এতো সুন্দর রূপ নিজ চোখে অবলোকন করতে কক্ষ ডিঙিয়ে বিশাল খোলা বারান্দায় এসে দাড়ালো রাজকুমারী ম্যাপল জুন।
তার বয়স এখনো সতেরোর ঘর পেরোইনি।তাই আজ পর্যন্ত বাড়ির বাইরে পা রাখার মতো সৌভাগ্য তার হয়নি।কালে ভদ্রে কখনো গির্জায় যাবার প্রয়োজন পড়লে পর্দায় মোড়ানো ফিটনে চেপে মাথা নিচু করে গির্জা পর্যন্ত যেতে হয়েছে।শুধু কি তাই?আগে পিছে হাজারো অশ্বারোহির বহর।চার্চে গিয়েও মাথা তুলে চারপাশ দেখার ভাগ্য হয়নি।
রাজপরিবারের ঐতিহ্য মোতাবেক বিয়ের আগে রমনীদের মাথা তুলে আশেপাশে দৃষ্টি মেলা ঘোর পাপ।কোনো পুরুষ যদি রাজ পরিবারের কোনো মেয়ের চোখ মুখের উপযুক্ত বর্ননা দিতে পারে তাহলে সেই মেয়ের বা দাসীর জন্য রয়েছে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তির ব্যাবস্থা।
রাজ পরিবারের কারো চেহারা স্বচক্ষে দেখাকে সাধারণ মানুষ নিজেদের সৌভাগ্য হিসেবে মেনে নেয়।সেই সৌভাগ্যের বর্ননা চলে মহল্লায় মহল্লায়।শেষ পর্যন্ত সেই রূপ বর্ননা ধীরে ধীরে কুৎসিত নোংরা মন্তব্য রূপ নেয়।যা রাজপরিবারকে করে বিতর্কিত।
আগত সকল ঝামেলা এড়াতে রাজপরিবারের সকল বালিকা আর রমনীদের রাখা হয় কঠিন বেষ্টনীর আড়ালে।দিনের বেলাতেও রাজকন্যা দের নিজেদের বেকনিতে আসা কঠিন নিষেধ।তাই রাত ই যেনো সকল কঠিন আদেশ ভঙ্গের উত্তম সময়।বন্দির কঠিন শক্ত শিকল ছিড়ে মুক্ত বাতাসে প্রানভরে পরিপূর্ণ শ্বাস নেয়া যায়।

চাঁদের ফকফকে আলোয় প্রাসাদের বাইরের সৌন্দর্য স্পষ্ট।এই পাশটায় কোনো প্রহরী বা জন মানবের চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
বিশাল কালো গোলাপের বাগানটা ম্যাপলের বারান্দা থেকে স্পষ্ট।প্রস্ফুটিত বড় বড় গোলাপ গুলো হাওয়ার দাপটে হেলে দোলে অনন্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি করছে।সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে রাজকুমারী ম্যাপলের অবচেতন মন বলে উঠলো

“ইশ আমি যদি একবার এই শিশির ভেজা গোলাপ গুলো নিজ হাতে ছুঁয়ে দিতে পারতাম”

কল্পনা শেষ হতে না হতেই সাই সাই করে এগিয়ে আসা তীরের ফলা দেখে ভীত হলো ম্যাপল।অবুঝ রাজকুমারী কোনো কিছু বোঝে উঠার আগেই দেয়ালের কংক্রিটে শক্ত করে গেঁথে গেলো চোখা তীরের ফলা।
সেই তীরের সাথে শক্ত করে বাধা একটি কালো গোলাপের তোড়া আর চিরকুট।
দ্বিধানিত হয়ে চিঠি খুলতেই বিস্ফারিত হলো বড় বড় বাদামি রঙা অক্ষিদ্বয়।

“তুমি চাইবে আর সেটা পূরণ হবে না এমন কোনো ইচ্ছের অস্তিত্ব এই নশ্বর পৃথিবীতে থাকতে পারবে না প্রিয়তমা”

#চলবে