#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_৬
#সারিকা_হোসাইন
**********
ফ্লাকি পর্বতের আজকের আকাশটা অন্যান্য রাতের তুলনায় একটু বেশি ই যেনো নিকষ কালো।ফকফকে যেই চাঁদটা অকারণে অল্প অল্প আলো বিলিয়ে দেয় সেটাও যেনো আজ কোথায় হারিয়েছে।জঙ্গলের কোনো নিশাচর প্রাণীর সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না এমনকি বিষাক্ত বৃহৎ অজগর টাও আর ফসফস করে শ্বাস টানছে না।মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভয়ানক মৃ*ত্যু শান্তভাবে ওঁত পেতে যাচ্ছে।সুযোগ পেলেই বুঝি হামলে পড়বে।
প্রাসাদের বাইরে বেঁধে রাখা ঘোড়া গুলো হঠাৎই বিকট স্বরে চিৎকার করে ছুটোছুটি করতে লাগলো।তাদের চিৎকারে গাছের ডালে বসে থাকা হুতুম পেঁচা গুলোও ডানা ঝাপটিয়ে পালালো।ঘোড়া গুলোর অসীম শক্তির সাথে টিকে উঠতে পারলো না নাইলনের চিকন দড়ি।সব কিছু ছিড়ে ছুটে দিকবিদিক হয়ে অন্ধকার অরণ্য পেরিয়ে দৌড়ে চললো চারটা ঘোড়া।
অল্প কিছুক্ষন আগেও যেই প্রাসাদটি কে পরিত্যক্ত মনে করে চারজন সুপুরুষ সাহস দেখিয়ে স্বগর্বে ঢুকে পড়েছে তারা হয়তো ভাবতেও পারেনি যে রাত নামার সাথে সাথেই জরা জীর্ণ হয়ে থাকা এই প্রাসাদটির প্রাণ জীবন্ত হয়।দিনের আলোয় যেটা সাধারণ ধূলো পড়া প্রাসাদ রাতের আধারে সেটা মৃ*ত্যু পুরী।
********
হ্যাভেন আর জো প্রাসাদের এমন থমথমে নীরবতায় বেশ ঘাবড়ে গিয়ে গড কে স্মরণ করতে লাগলো।ক্রুশ চিহ্ন টা বার বার চোখে, কপালে আর বুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে যাচ্ছে বারংবার।
“ওই পাশের কক্ষে কি হচ্ছে তা দেখার খুব সাধ জাগছে হ্যাভেন”
জো এর এহেন কথায় রাগের নিয়ন্ত্রণ হারালো হ্যাভেন।তার ইচ্ছে জাগলো একটা লা*থি মেরে জো কে এই কক্ষ থেকে বের করে দিতে।কিন্তু চারিদিকের নিশ্চিত বিপদের কথা ভেবে কিছুটা মানবিক থাকার চেষ্টা করলো।
“অতিরিক্ত কৌতূহল বড়ই ভয়ঙ্কর জো।কথাটি সবসময় মাথায় রাখবে।
কথাটি বলতে বলতে আশেপাশে নজর বুলালো হ্যাভেন।অন্ধকার কক্ষটি তে হঠাৎই সামান্য আলোর রেখা দেখতে পেলো সে।জো কে হাতের ইশারায় সেই রেখা দেখাতেই চোখে চোখে ইশারা করলো জো।
‘মনে হচ্ছে এখানে কোনো গুপ্ত দরজা আছে।চলো আগে নিজের প্রাণ বাঁচানো যাক”
কথাটি বলে উঠে দাঁড়ালো হ্যাভেন।
“যদি আমাদের সামনে রাক্ষস এসে দাঁড়ায়?
হাতের ক্রুশ লকেট টি জো কে দেখিয়ে হ্যাভেন বলে উঠলো
“যতক্ষন এটা সাথে আছে ততক্ষণ ভয় কিসের?
হ্যাভেন এর হাতে থাকা ক্রুশ চিহ্নের সাহসে ঘন ধুলার আস্তরণ মাড়িয়ে আলোর রেখার সন্ধানে চলতে লাগলো দুজনে।
********
কফিন কে কেন্দ্র করে সতর্ক দৃষ্টিতে ঘুরে চলছে ইথার আর ম্যাডি।মনে হচ্চে এখনই যে কোনো একজন অপরজনের উপর ঝাপিয়ে পড়বে।একটা হাতিয়ার সাধারণ মানুষকে দান করবে অমরত্ব।এর চাইতে সুন্দর কান জুড়ানো কথা ধরনীতে দ্বিতীয় আর কিই বা আছে?
ম্যাডি হঠাৎই খেয়াল করলো ইথারের চোখের রঙ পরিবর্তন হচ্ছে।যা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে খুবই অদ্ভুত বিষয়।ইথারের বাদামি মনি যুক্ত চোখ দুটি হঠাৎই বাদামি সোনালী আর সবুজের মিশ্রনে ঢেকে গেলো।দেখে মনে হচ্ছে মনি দুটো জ্বলে উঠেছে।
ইথারের এমন রূপে বেশ ভড়কে গেলো ম্যাডি।
“হেই ডুড তোমার চোখ এমন অদ্ভুত লাগছে কেনো?
“কেনো তোর কি অনেক ভয় লাগছে ?
ইথারের অদ্ভুত বিকট কণ্ঠস্বরে কিছুটা ভয়ার্ত হলো ম্যাডি।কিন্তু মুখে সেসব প্রকাশ না করে নিজের ঠাট বজায় রেখে বলে উঠলো
“এমন ভেলকিবাজি জাদু পোল্যান্ড শহরে অহরহ দেখা যায়।নতুন ট্রিকস ফলো করো।আমি কিন্তু এতো সহজে হারছি না।
ম্যাডির এমন উদ্ধত্য পূর্ণ কথা শুনে নিজের আসল রূপে ফিরতে চাইলো ইথার।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কোনো ভাবেই সে তার রূপ বদলাতে পারছে না।
হঠাৎই অদ্ভুত মেয়েলি হাসির শব্দ শুনে সচকিত হলো ম্যাডি।সেই সাথে ইথার আশেপাশে নজর বুলিয়ে দাঁত খেচিয়ে উঠলো।
ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো সেই হাসির মাত্রা।হাসির শব্দ এতোটাই তীক্ষ্ণ যে ম্যাডি তার দুই কান চেপে ধরে মেঝেতে শুয়ে পড়লো।
কিন্তু ইথার নিজের অবস্থানে অটল।
হাসির শব্দ ম্যাডির দুই হাত ভেদ করে কানের গহীনে চলে গেলো সেই সাথে পর্দা ফাটিয়ে বের করে আনলো উষ্ণ তরল।
ম্যাডির দুই হাত উপচে রক্তিম পদার্থ গড়িয়ে পড়ছে আর পিন পিন শব্দ হচ্ছে।
চোখের সামনে হাত এনে র*ক্ত দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো ম্যাডি।
“নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনলি?একদম মৃ*ত্যু*পুরীতে ঢুকে গেলি?
ভয়ানক মেয়েলি গর্জনে থমকে গেলো ইথার।ম্যাডি তার কানে কিচ্ছুটি শুনতে পাচ্ছে না।
সেই মেয়েলি স্বরকে উদ্দেশ্য করে ইথার ধমকে উঠলো
‘কে তুই?সাহস থাকে তো সামনে আয়”
ইথারের এহেন ধমকিতে মেয়েটি যেনো বেশ মজা পেলো।মিহি স্বরে আরো এক চোট হেসে রসিকতা মিশ্রিত হিম করা কন্ঠে শুধালো
“মৃ*ত্যুকে সামনে আহ্বান করছিস?তবে তাই হোক”
*****(*
কুচকুচে কালো রঙের বৃহৎ শরীর টেনে টেনে হিংস্র সবুজ জলন্ত চোখে ঝড়ের গতিতে ছুটে চলেছে লুকাস।বড় বড় কক্ষ উঁচু উঁচু সিঁড়ি সব পেরিয়ে ধেয়ে আসছে শিকারের কাছে।অবশেষে মানুষের শরীরের সুঘ্রাণ লুকাসের নাসা রন্ধ্রে এসে বাড়ি খেলো।সেই গন্ধ শ্বাস ভরে পরম তৃপ্তিতে টেনে নিলো লুকাস।
“আহ খুব যে লোভনীয়।কতদিন পাইনি এই লোভনীয় স্বাদ”
মাংসের স্বাদের কথা ভাবতেই টকটকে লকলকে জিহ্বাদ্বয় বেরিয়ে এলো লুকাসের বৃহৎ মুখ গহ্বর থেকে।
অবশেষে শিকার বরাবর এসে ফনা তুললো লুকাস।ভয়ানক সেই ফনা অন্ধকার ভেদ করে শিহরণ জাগাচ্ছে।লুকাসের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে দরজার দিকে দৃষ্টি মেললো ইথার।সামনে দাঁড়ানো ভয়ঙ্কর এনাকোন্ডা কে দেখে ইথারের শিরদাঁড়া বেয়ে হিম স্রোত নেমে গেলো যেনো।নিমিষেই জলন্ত অক্ষিদ্বয় সাধারণ মনিতে ফিরে এলো।
কোনো কিছু বাছবিচার না করে বিশাল দরজা পেরিয়ে কক্ষের ভেতর অগ্রসর হলো লুকাস সেই সাথে নিজের বৃহৎ শরীর দিয়ে আগলে ধরলো কফিন টি।
এনাকোন্ডা টিকে স্বচক্ষে দেখে নিজের জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো ম্যাডির।ভয়ে অসাড় হয়ে মাটিতে থুবড়ে রইলো সে।ক্ষমা চাইবার জন্য দুই হাত জোড় করে কিছু বলতে চাইলো।কিন্তু ভারী জড়তা এসে ঘিরে ধরলো ম্যাডির জিহবা।কোনো কিছুই উচ্চারণের আগে লুকাস তার লেজ দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ঘিরে ফেললো ম্যাডির শরীর।এরপর শূন্যে তুলে নিজের অগ্নি চক্ষুর সামনে এনে সমানে জিভ বের করে কিছু বোঝাতে চাইলো।কিন্তু নির্বোধ ম্যাডি গড়গড় ফুসফুস আওয়াজ ছাড়া আর কিচ্ছুটি শুনতে পেলো না।লুকাসের চেহারা দেখেই ম্যাডি তার সাধারণ জ্ঞান হারালো।অসহায় ম্যাডিকে দেখে কোনো প্রকার দয়া হলো না লুকাসের।যেই ধৃষ্টতা এরা দেখিয়েছে তার পাওনা তো পেতেই হবে।
লুকাস তার মোটা ভারী লেজের শক্তিতে ধীরে ধীরে চেপে ধরলো ম্যাডিকে।সেই চাপে ম্যাডির শরীরের হাড় গুলো কট কট শব্দ তুলে ভাঙতে লাগলো।এক পর্যায়ে হাড় হীন মাংসপিণ্ডে পরিণত হলো ম্যাডি।এটাই যেনো চাইছিলো লুকাস।নিজের কাজ শেষ করে খাদ্য হিসেবে ম্যাডিকে গ্রহণ করতে বিরাট মুখ খানা খুললো এবং সেকেন্ডের ব্যাবধানে গিলে ফেললো বেচারা ম্যাডিকে।
পুরো দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো ইথার।তবে সে দমে যাবার পাত্র নয়।এতো সহজে সে এই সাপের সামনে ধরা দিবে না।যেই ভাবনা সেই কাজ ।খোলা দরজা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলো ইথার।ইথারের মনের গোপন ইচ্ছে কে জেনে গেলো জানা নেই।ইথার দৌড়ানোর আগেই স্বশব্দে বন্ধ হয়ে গেলো ভারী দরজার পাল্লা।ঘুটঘুটে বদ্ধ কামরায় পথ হারালো ইথার।শত শক্তি প্রয়োগ করেও নিজের নেকড়ে রূপ ধরতে পারছে না সে।
যখন শক্তি প্রায় শেষের পথে তখন ইথারের চেতন মন ভাবলো
“এখানে কারো শক্তি কাজ করে না,স্যাম আমাকে বোকা বানিয়েছে”
ইথারকে আর কিছু ভাবতে না দিয়ে ইথারের চোখের সামনে এসে ফনা তুললো লুকাস।সেই সাথে গড়গড় শব্দ তুলে কিছু বলে উঠলো।লুমসের সব কথাই ইথার বুঝলো।যা তার শরীরের লোমকূপ কে দাঁড় করিয়ে দিলো।
“তুমি পবিত্র জায়গায় তোমার নোংরা পা ফেলে ঘোর অপরাধ করেছো।সেই পাপের অপরাধে তোমাকে অবশ্যই মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হবে।হাজার বছরের ভালোবাসার সমাধিস্থল এটি।তুমি সাধারণ নেকড়ে হয়ে শেহজাদীর হৃদয়ে ঢোকানে হাতিয়ার নিয়ে পালিয়ে যাবে?এতো সহজ?এখানে যার প্রাণেশ্বরী ঘুমিয়ে আছে সেই ই তো কোনো দিন প্রবেশ করতে পারে নি।”
ধীরে ধীরে ইথারের অবস্থা ম্যাডির মতোই হতে থাকলো।হাড় ভাঙার যন্ত্রনায় ইথারের সারা শরীর নীল হয়ে উঠলো।বুকের পাঁজর ভেঙে গুঁড়িয়ে একপাশের সাথে আরেক পাশ লেগে গেলো।ফিনকি দিয়ে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো তরতাজা র*ক্ত।শরীর এই যন্ত্রনা আর কুলাতে পারছে না।নিজের দ্রুত মৃত্যুর জন্য মনেপ্রাণে প্রার্থনা করতে লাগলো ম্যাডি।কিন্তু মৃত্যু ও যেনো এই লুকাসের হাত থেকে তাকে বাঁচাতে পারছে না।
ধীরে ধীরে মাংসপিণ্ডে পরিণত হলো ইথার আর লুকাস তাকে গ্রাস করলো গভীর পেট গহ্বরে।
********
মানুষের গন্ধে অস্থির হয়ে দুর্গ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো লিও।এই মুহূর্তে তার প্রয়োজন উষ্ণ তাজা র*ক্ত।শরীরটা বড্ড ফ্যাকাশে লাগছে।চুল গুলোও হালকা সাদা বর্ণ ধারণ করতে চাইছে।নিজ ইচ্ছেতেই আজকাল লিও কিশোরীর র*ক্ত পান করা ছেড়ে দিচ্ছে।যদিও কুমারী কিশোরীর র*ক্তে তেজ বেশী ।কিন্তু কোমলমতি কিশোরী গুলো হ*ত্যা করতে লিও এর বুক কেঁপে উঠে বারংবার।ওই কিশোরী গুলোর মধ্যে সে ম্যাপল এর অস্তিত্ব খুজে পায়।লিও ভেবেছে এখন থেকে পশু শিকার করবে সে।আর যেসকল মানুষ অন্যের উপর জুলুম করে খুঁজে খুঁজে তাদের র*ক্তে নিজের তৃষ্ণা মেটাবে।
নিজের তৃষ্ণার চাইতে হঠাৎই ম্যাপল কে দেখার জন্য অন্তর মরিয়া হয়ে উঠলো লিও এর।
“কিন্তু এই বেশে কিভাবে তাকে দেখতে যাবো?যদি সে আমাকে দেখে ফেলে?
তন্ন তন্ন করে ফ্লাকি পর্বত জুড়ে শিকার খুঁজে চললো লিও।কিন্তু কিচ্ছুটি পেলো না।এরপর কুন্ডুলি পাকিয়ে ক্রাকোয়া শহরে চললো।ধীরে ধীরে শরীর খানা আরো ফ্যাকাশে আর দুর্বল হয়ে উঠলো।
মফস্বলে এসে একটা বাজারে ঢুকে পড়লো সে।কালো লম্বা ট্রেঞ্চ কোটের দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে গভীর চোখে খুঁজতে লাগলো শিকার।অবশেষে সরাই খানায় নজর গেলো তার।
লোকটির দিকে তাকিয়েই তার সকল খবর জেনে নিলো লিও।
শহরের সব চাইতে ধুরন্দর আর বাজে চরিত্রের অধিকারী এই ব্যাক্তি।শুধু তাই নয় মানুষের টাকা মেরে দিয়ে পালিয়ে যাওয়াই তার প্রধান কাজ।নিজ স্ত্রী থাকার পরেও অন্যের স্ত্রীর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা।
লিও এর মনের আকাঙ্খা যেনো সহজেই পূরণ হয়ে গেলো।লোকটি নেশায় চূড় হয়ে আবোল তাবোল বকে যাচ্ছে।ধীরে ধীরে সরাই খানার দিকে এগিয়ে গেলো লিও।এরপর লোকটির পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে ডেকে উঠলো
“ফেনডি”
লিও এর ডাক কর্ণপাত হতেই লোকটি টেবিল থেকে মাথা তুললো।মুহূর্তেই লিও এর সম্মোহিত চোখে দৃষ্টি মেলে আনন্দে চক চক করে উঠলো তার চোখ।চোখের সামনে জলন্ত আগুন সুন্দরী তাকে একান্তে ইশারা করছে ।আর যেনো তর সইছে না ।
আলুথালু পায়ে লিও এর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো ফেনডি।বিগলিত হেসে লিও বলে উঠলো
“চলো অন্ধকারে যাওয়া যাক”
অন্ধকারের কথা শুনে ফেনডির হৃদয় ছলকে উঠলো।নেশাক্ত শরীর উত্তাপে ছেয়ে গেলো।
“এযেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি”
লিও কে একপ্রকার টেনে হিচড়ে ফেনডি চলতে লাগলো অদূরের জঙ্গলটির দিকে।
বাঁকা হাসলো লিও।ফেনডি কে জাপ্টে ধরে হাওয়ার বেগে ছুটে চললো গহীন অরণ্যে।
হঠাৎই ফেনডি খেয়াল করলো সে হাওয়ায় ভাসছে।
“নেশা কি আজকে খুব বেশি হয়ে গেলো নাকি?আমি তো হাওয়ায় উড়ছি”
ফেনডির কথায় কিছুটা জোরে হাসলো লিও।সেই হাসির শব্দ শুনে লিও এর দিকে তাকালো ফেনডি।
গভীর নিগুড় অন্ধকারে লিও এর চোখ গুলো জ্বলছে।ফেনডি কিছুটা ভীত হলো।নেশার ঘোর ভেবে দুই চোখ কচলে আবার লিও এর চোখে দৃষ্টি মেললো।এবারের দৃষ্টি আরো ভয়ানক।
চিৎকার করতে চাইলো ফেনডি।তার আগেই লিও চেপে ধরলো ফেনডির সরু গলা খানা।
টকটকে লাল ঠোঁট গলিয়ে বেরিয়ে এলো দন্ত শব্দ শলাকা।হিংস্র থেকে হিংস্রত্বক হয়ে উঠলো লিও এর চেহারা।কিছুক্ষন আগের লাস্যময়ী রমণী মুহূর্তেই রূপ নিলো ভয়ংকর লম্বা চওড়া দানবীয় পিচাষে।
ফেনডির গলা চেপে ধরে সুচালো দাঁত বিধিয়ে দিলো ফেনডি র গলা বরাবর।
লিও ধীরে ধীরে চুকচুক করে পান করতে লাগলো ফেনডির তাজা র*ক্ত ।এক পর্যায়ে ফেনডি ফ্যাকাশে হতে শুরু করলো আর লিও এর শরীর লালচে আভা ছড়ালো সেই সাথে কালচে বাদামি হয়ে উঠলো আধ শুভ্র চুল গুচ্ছ।ফেনডির শেষ র*ক্ত বিন্দু পর্যন্ত শুষে নিলো লিও।নিজের পিপাসা মিটিয়ে এক পর্যায়ে ফেনডি কে ছুড়ে ফেললো লিও।এরপর ঠোঁটের কোন গড়িয়ে পড়া রক্ত ধা*রা হাতের উল্টো পিঠে মুছে হো হো শব্দে হাসতে হাসতে বলে উঠলো
“র*ক্তে*ই শক্তি রক্তেই প্রাণ”
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_৭
#সারিকা_হোসাইন✍️✍️
********
ধরনীতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই।পোল্যান্ড শহরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে হিমাঙ্কের নীচে নামতে শুরু করেছে।শো শো বাতাস আর ঠান্ডার মাত্রা দেখে মনে হচ্ছে যখন তখন তুষারপাত শুরু হবে।বছরের নির্দিষ্ট এই সময়টা বাকি সময়ের আবহাওয়ার থেকে দারুন রোমাঞ্চকর।হাওয়াই মিঠাই এর মতো ঝুরঝুরে সাদা বরফের সমারোহ মনে অনিন্দ্য প্রশান্তি দেয়।
ম্যাপল তার নিজ কক্ষে বসে বসে একটা জার্নাল পড়ছে ।আজকাল কিছুতেই তার সময় কাটতে চাইছে না।থেকে থেকেই অনন্য ভালো লাগায় তনু মন ছেয়ে যাচ্ছে আবার ভীষন রকম ভয় এসে পুরো শরীর গ্রাস করছে।এমন মিশ্র অনুভূতির কি নাম হতে পারে?ম্যাপল তা জানেনা।
হঠাৎই দরজায় ভারী করাঘাত হলো।আকস্মিক শব্দে নড়েচড়ে উঠলো ম্যাপল।সেই সাথে জার্নাল গুছিয়ে রেখে কাপড় ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো।এরপর মিহি গম্ভীর গলায় শুধালো
“কে ওখানে?
বাহির থেকে ধীরে কন্ঠে উত্তর এলো
“রাজকুমারী আমি স্যান্ডি”
স্যান্ডি হচ্ছে ম্যাপলের বিশ্বস্ত সহযোগী ।মেয়েটা বয়সে ম্যাপলের থেকে দু চার বছরের বড় হবে।কিন্তু কথায় আর কাজে খুব বুদ্ধিমতী।নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করে ম্যাপল এই স্যান্ডিকে।নিজে প্রাণ দিয়ে দেবে তবুও কারো কাছে গোপন কথা প্রকাশ করবে না এই দাসী।স্যান্ডির আগমনে ম্যাপল বেশ খুশি ই যেন হলো।মনে মনে ভাবলো
“মনের জমানো নিগুড় ভাবনা গুলো ভাগাভাগি করা যাক”
যেই ভাবনা সেই কাজ।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে প্রশস্ত হেসে ভারী দরজার খিল খুলে স্যান্ডিকে এক প্রকার টেনেই কক্ষে এনে দাঁড় করালো ম্যাপল।এরপর কিঞ্চিৎ মাথা বের করে বাইরে নজর বুলালো।
“নাহ কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।
সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরে শব্দহীন দরজা চাপিয়ে খিল টেনে দিলো।ম্যাপল কে আগাগোড়া অবলোকন করে সামান্য গলা খাকরি দিলো স্যান্ডি।এরপর চিকন অবনত স্বরে বলে উঠলো
“আপনাকে অনেক হাসিখুশি মনে হচ্ছে রাজকুমারী”
স্যান্ডির কথায় ম্যাপল অমায়িক হাসলো।সেই হাসিতে যেনো মুক্তা ঝরে পড়ছে।রাজকুমারীর গোলগাল অনন্য সুন্দর মুখশ্রী যে কারো মনে তৃপ্তি যুক্ত প্রশান্তি দিতে বাধ্য।
ম্যাপল একটা ওক কাঠের বাদামি টেনে বসতে দিলো স্যান্ডিকে।
এরপর বলে উঠলো
“তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য মন বেশ খচখচ করছে স্যান্ডি।”
“কি কথা রাজকুমারী?
ম্যাপল তার গুছিয়ে রাখা বইয়ের তাক থেকে একটা ভারী জ্ঞানের জগতের বই বের করে নিয়ে এলো।
“এতো ভারী বই দিয়ে কি হবে রাজকুমারী?
“এতো অধীর হইও না স্যান্ডি,তোমাকে কিছু দেখাতে চাই।ধৈর্য ধরে একটু শান্ত হয়ে বসো।
স্যান্ডি আর কোনো কথা বাড়ালো না।রাজকুমারী কি দেখাবে তাই দেখার অপেক্ষায় চুপচাপ বসে রইলো শুধু।
ভারী বৃহৎ মোটা বইটা ম্যাপল খুলতেই স্যান্ডির চোখ কপালে উঠার উপক্রম।
“এসব কি রাজকুমারী?
নিজের কৌতূহল ধরে রাখতে পারলো না স্যান্ডি।
স্যান্ডির প্রশ্নে নিজের সরু আঙ্গুলি গোলাপের পাপড়ি সম ঠোঁটে লম্বালম্বি খাড়া করে স্যান্ডিকে চুপ থাকার নির্দেশ দিলো ম্যাপল।
“হুশ,দেয়ালেরও যে কান আছে স্যান্ডি”
স্যান্ডিকে থামিয়ে অর্ধ শুকনো কালো গোলাপের তোড়া আর দুটো রঙিন চিঠি বের করে নিয়ে এলো ম্যাপল।
চোখে হাজার খানিক প্রশ্ন রেখে ম্যাপলের বাদামি রঙা গভীর চোখের মনির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো স্যান্ডি।
গোলাপের তোড়া বুকে জড়িয়ে চিঠি দুটো স্যান্ডির হাতে দিলো ম্যাপল।
চিঠি দুটো উল্টা পাল্টা করে পড়ে স্যান্ডি শুধালো
“কে সেই ভাগ্যবান পুরুষ যাকে আপনি মন বিনিময় করতে চাচ্ছেন?
স্যান্ডিকে ম্যাপলের বিশেষ ভালো লাগার আরেকটি কারন হচ্ছে মেয়েটি মনের গোপন অপ্রকাশ্য কথা গুলো খুব তাড়াতাড়ি বুঝে যায়।
ম্যাপল কিছুটা লাজুক হেসে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ধরে রেখে বলে উঠলো
“আমি নিজেও তাকে দেখিনি স্যান্ডি।
“তাহলে?
অবাকের সহিত শুধালো স্যান্ডি
“আমি প্রতিদিন তার অপেক্ষা করি,তাকে দেখার জন্য আমার দুই নয়ন বড্ড তৃষিত স্যান্ডি।
“রাজা মশাই জানলে যে বেশ কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে রাজকুমারী”
“কেউ কিচ্ছুটি টের পাবেনা স্যান্ডি,কারন প্রতিদিন সে আসে।আমি তার সুবাস টের পাই,কিন্তু কারো চোখ তাকে ধরতে সক্ষম হয়নি।
“জেনারেল এইডেন এর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রাসাদের ত্রি সীমানায় একটা হ্যামিং বার্ড পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে না রাজকুমারী।সেখানে জলজ্যান্ত একটা মানুষ”
স্যান্ডির কথায় বেশ মন খারাপ হলো ম্যাপলের।চোখে চিকচিকে জলের স্পষ্ট ছাপ নিয়ে আহত স্বরে বলে উঠলো
“আমি আমার জমানো মনের গোপন কথা কারো সাথে হাসতে হাসতে ভাগাভাগি করতে চাই স্যান্ডি।আমি এই প্রাসাদের বাইরের দুনিয়া কারো হাত ধরে উপভোগ করতে চাই।এই বিশাল ঘরটা আমার কাছে শীর্ন কয়েদিখানা মনে হয়।এখানে যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে স্যান্ডি।আমি কি রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ঘোর পাপ করেছি তবে?
ম্যাপলের করুন বিষাদে গ্রস্থ মুখশ্রী দেখে স্যান্ডির মনে কষ্টের কালো মেঘ এসে ভর করলো।নিজের গুটিয়ে রাখা হাত মেলে ম্যাপলের গড়িয়ে পড়া চোখের জল মুছিয়ে বলে উঠলো
“এই প্রাসাদে সবাই অবাধে ঘোরাঘুরি করতে পারছে শুধু আপনি ছাড়া।এই বিষয়টা জটিল মনে হয়নি কখনো আপনার কাছে?মনে কি কখনো কোনো ভাবান্তর হয়নি এই বিষয়ে?
“হয়েছে স্যান্ডি অনেক বার হয়েছে।হাজার খুঁজেও আমি সেই রহস্য খুঁজে পাইনি।আর আমার হাতের এই চিহ্ন টা বড়ই অদ্ভুত স্যান্ডি।এটা মাঝে মাঝেই আজকাল আমাকে বেশ যন্ত্রনা দিচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার হাত দুটো আগুনের তৈরি।কাউকে যেনো ঝলসে দিতে চাইছে দাউদাউ করে জ্বলে।
কথাটি বলেই স্যান্ডির দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলো ম্যাপল।
ফর্সা দুধ সাদা হাতে দগদগে লাল রঙের অদ্ভুত তলোয়ার এর চিহ্ন টা বেশ স্পষ্ট নজর কাড়লো স্যান্ডির।এমন তলোয়ার কখনো দেখেনি স্যান্ডি।তাহলে এই চিহ্ন এলো কোথা থেকে?
“কবে থেকে আপনি এই চিহ্নের সন্ধান পেয়েছেন রাজকুমারী?
“কয়েক দিন ধরে স্যান্ডি।শুধু তাই নয় আমার ঘরে আমি অদ্ভুত এক প্রাণী দেখেছি যার শরীর বৃহতকার আর লোমশ”
ম্যাপলের কথায় স্যান্ডি বেশ অবাক হলো।আজ যেনো একের পর এক চমক দেখতে পাচ্ছে সে।চতুর স্যান্ডির মনে হঠাৎই এক প্রশ্ন জাগলো
“তবে কি রাজকুমারী বিশেষ কেউ?যাকে দিয়ে বিশেষ কিছু হাসিল করা যায়?
**********
চলছে রাতের ত্রি প্রহর।সমস্ত কিছু শুনশান নীরব ভুতুড়ে।কোনো প্রাণীর নিঃশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।নিশাচর প্রাণী গুলোও বোধ হয় আজ গভীর নিদ্রা গিয়েছে।নয়তো প্রচন্ড শীতে নিজের বাসার ভেতর ঘাপটি মেরে রয়েছে।
মোটা ওক গাছের বড় ডালে হেলান দিয়ে বসে আছে লিও।গায়ে জড়ানো কালো রঙের ট্রেঞ্চ কোট টি বাতাসের দাপটে পতপত করে উড়ছে ।ম্যাপল কে দেখার সাধ তার কবে মিটবে সে জানেনা।হাজার বছরের ভালোবাসা বলেই কি এমন তৃষ্ণা?নাকি ভালোবাসার জাদুই এমন?
“তোমাকে দেখার সাধ আমার হাজার বছর কেনো পুরো দুনিয়া ধ্বংস হয়ে গেলেও মিটবে না”
হঠাৎই শো শো শব্দে কান খাড়া হলো লিও এর।নিজের স্বজাত কারো উপস্থিতি টের পেতেই গাছের ডাল ছেড়ে কুণ্ডুলি পাকিয়ে হাওয়ার বেগে পর্বতের দিকে ছুটতে লাগলো লিও।সেই ধেয়ে আসা বাতাস ও লিওকে অনুসরণ করে ছুটতে লাগলো কার্পাথিয়ান পর্বতের বিশাল উপত্যকায়।
ইতোমধ্যে কিঞ্চিৎ বরফ ঝরা শুরু হয়েছে পর্বতের উঁচু চূড়ায়।পর্বতের পাদদেশে পা রাখতেই লিও এর দুই চক্ষু জুড়িয়ে গেলো।চারপাশে বিস্তর উঁচুনিচু ভূমিতে ড্যাফোডিল ফুটে সমগ্র জায়গা সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ করে রেখেছে।সেই মনোমুগ্ধকর ড্যাফোডিল চাঁদের ফকফকে আলোয় অনিন্দ্য সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে পুরো পর্বত জুড়ে।
আনন্দে বিহ্বল হয়ে দুই হাতের সহায়তায় এক পাজা ফুল তুলে নিলো লিও সেই সাথে টকটকে লাল ঠোঁটে প্রশস্ত হাসির রেখা।
“লিও”
পরিচিত গাম্ভীর্য পূর্ন রিনরিনে ডাকে পিছন ফিরে তাকালো লিও।
“মা”
“তোমাকে আর কতবার বোঝালে আমার কথাটা বুঝবে তুমি বলতে পারবে আমায়,?
“আমি আগেই বলে দিয়েছি আমাকে কোনো কিছু বোঝাতে এসো না মা।যে অবুঝ তাকে গুছিয়ে কথা বলে বোঝানো যায়।কিন্তু যে বুঝেও বুঝতে চায়না তাকে কিভাবে তুমি বুঝাবে মা?
“এভাবে আর কতদিন?তুমি আমার সন্তান লিও।তোমার এই জীবন মরন আমি আর চোখে দেখতে পাচ্ছি না।একটু শান্তি দাও আমাকে।
“আমি তো জেনে বুঝেই এই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষন বেছে নিয়েছি মা।
কথাটি বলতে বলতে লিও এর গলা ধরে এলো।কিন্তু কঠিন হৃদয়ের পুরুষের কান্না কি মানায়?দুদিন পর যার এক আঙুলের ইশারায় পুরো দুনিয়া মাথা নত করবে তার আবার দুর্বলতা কিসের?
নিজের চোখের তেতো জল বহু কষ্টে গিলে নেয় লিও।ছেলের থুতনি চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে ভ্যাম্পায়ার রানী এমিলিয়া হুংকার ছেড়ে বলে ওঠেন―
“ভুলে যেও না লিও ,যাকে তুমি এক হাজার বছর ধরে জীবন্মৃত হয়ে ভালো বাসছো তার হাতেই কিন্তু তোমার মৃ*ত্যু অবধারিত।”
মায়ের কথায় খানিক চমকায় লিও।এই নিদারুণ সত্যি কথাটি সে জানে।কিন্তু মন যে মানতে চায় না?মনের উপর কারো দখলদারি চলে?নম্রতার খোলস কাটিয়ে শক্ত কন্ঠে লিও বলে উঠে;―
“তবুও তাকে আমি ভালোবাসি মা”
“একজন পিচাশ হয়ে কিভাবে কোনো সাধারণ মানুষকে তুমি ভালোবাসতে পারো?
“ভালোবাসা কি জাত,ধর্ম,নিষিদ্ধ, অনিষিদ্ধ দেখে হয় মা?
“তাহলে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স হয়েও দুর্বল মানুষের হাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চাচ্ছ?
“ভালোবাসার মানুষের হাতে নিজেকে বিসর্জন দেয়ার মাঝে অন্যরকম এক তৃপ্তি রয়েছে মা।নিজেকে দ্বিতীয় বার বিশুদ্ধ পুরুষ হিসেবে জন্ম দেয়া যাবে”
“তোমার আর জন্ম হবে না লিও।এটাই তোমার অন্তিম জন্ম।আর একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও,তোমার স্থান কিন্তু নরকে”
“আমি সেখানে যেতেই প্রস্তুত”
কথাটি বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না লিও।শক্ত হাতে ফুল গুলো ধরে হাওয়ায় ভেসে চললো।তাজা সুবাসিত ড্যাফোডিল ক্যারোলিন এর যে বেশ প্রিয়!
ছেলের যাবার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হুহু করে কেঁদে উঠলেন এমিলিয়া।নিজের জন্ম দেয়া এতো সুন্দর একটা ছেলের জীবন প্রতিনিয়ত ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে।মা হয়ে চোখের সামনে মুখ বুজে সব সহ্য করতে হচ্ছে।কাউকে মন খুলে কিচ্ছুটি বলা পর্যন্ত যাচ্ছে না।
“এ কেমন যন্ত্রনা?
“দুর্গে ফিরে চলো এমিলিয়া”
ভ্যাম্পায়ার কিং উইলিয়াম হেনরি স্ত্রীর পিঠে মমতার হাত রেখে কথাটি বলে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।
স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন এমিলিয়া।
“আমার ছেলেটার জীবন এমন কেনো হলো?
হেনরি নিজের প্রানপ্রিয় সহধর্মিনীর প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনা।যেখানে সব কিছুর জন্য নিজেই দায়ী সেখানে স্ত্রীর কথায় শান্তনা দেয়া অমূলক।
“মেয়েটাকে আমার ছেলে কখনো ছুঁয়েও দেখতে পারবে না।সারাটা জীবন শুধু দূর থেকেই ভালোবেসে যাচ্ছে।ওর হৃদয় যে পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছে রাজা মশাই।আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে দিন শেষ বারের মতো।
রানীর কান্না হেনরির হৃদয়ে শেলের মতো বিধছে।তবুও মুখ ফুটে কোনো শান্তনার বাণী আওড়াতে পারলেন না হেনরি।
স্বামীর বুক থেকে মাথা তুলে তাচ্ছিল্য হাসলেন এমিলিয়া।এরপর তেজ পূর্ন কন্ঠে বলে উঠলেন
“আমার ছেলের এবার কিছু হলে আমি নিজে আ*গু*নে ঝাঁপ দেবো।আর আমাদের মা ছেলের হত্যাকারক হিসেবে কুৎসিত জীবন নিয়ে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন আপনি।
#চলবে