দ্যুলোকে নব ঊষা পর্ব-২৩+২৪

0
6

#দ্যুলোকে_নব_ঊষা
#তাহসিনা_অরিন
#পর্ব_২৩

লাভ লেইন। দুটি ইংরেজি শব্দ। লাভ অর্থ ভালোবাসা এবং লেইন অর্থ গলি বা রাস্তা। একসাথে শব্দ দুটির অর্থ দাড়ায় ভালোবাসার গলি কিংবা ভালোবাসার রাস্তা । চট্টগ্রামে এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না যে লাভ লেইন নামক স্থানটির নাম শোনেনি। তবে লাভ লেইন নামের পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস। চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ী থেকে নূর আহমদ সড়ক হয়ে নৌ বাহিনীর অফিসার্স আবাসিক এলাকার বিপরীতে আঁকাবাঁকা সড়কটিকে বলা হয় লাভ লেইন। জানা যায় ব্রিটিশ আমলে এটি ইংরেজ কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা ছিলো। এই এলাকায় ইংরেজ নারী-পুরুষের প্রকাশ্যে প্রেমের কারণে লাভ লেইন নামটির উৎপত্তি। বর্তমানে এই সড়ককে আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ সড়ক নাম দেওয়া হয়েছে। তবে লাভ লেইন নামেয় অধিক পরিচিত এই স্থান।

লাভ লেইন রোডের পাশ দিয়ে পাশাপাশি হাঁটছে তাওসিফ ও অধরা। তাওসিফ কিছু সময় পর পর অধরার দিলে আঁড় চোখে তাকাচ্ছে। অধরা বুঝতে পারছে। নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসছে সে। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর তাওসিফ বলে উঠলো,

“এই রাস্তার নাম করণের ইতিহাস জানো?”

অধরা তাওসিফের দিকে তাকালো। চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসলো। বলল,

“জানি।”

তাওসিফ অধরার উত্তর শুনে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে উঠলো। বিরবির করে বলল,

“লাভ লেইনে লাভার নিয়ে হাঁটছি! কি সৌভাগ্য আমার।”

অধরা শুনতে পেলো না সে কথা। ভ্রূকুটি করে বলল,

“কি বললেন? শুনতে পাইনি।”

তাওসিফ ইনোসেন্ট বাচ্চার মতো করে বলল,

“কই? কিছু বলিনি তো।”

অধরা কিছু বললো না আর। তবে সে শিওর তাওসিফ কিছু একটা বলেছে। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর তাওসিফ বললল,

“শাহী মিষ্টি পান খাবে?”

অধরা পান খায় না। পাতের এতসব নাম সম্পর্কেও জানে না। সে অবাক হয়ে বলল,

“এটা আবার কেমন পান?”

তাওসিফ চোখ ছোট করে তাকালে অধরার দিকে। বলল,

“তুমি চট্টগ্রামের মেয়ে?”

“অবশ্যই।”

অধরার আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল। তাওসিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“নিজের ঐতিহ্য জানো কিছু? লাভ লেইনের অন্যতম এক ঐতিহ্য শাহী মিষ্টি পান। বহু দূর দূরান্ত থেকে কিংবা বিয়েতে শাহী মিষ্টি পানের কদর অনেক বেশি। লাভ লেইন থেকে সব জায়গায় পাঠানো হয় এটা। অনেক মজা। খেয়ে দেখতে পারো।”

অধরা নাক-মুখ কুঁচকে বলল,

“না থাক। আমি খাব না। পান ভালো লাগে না আমার।”

তাওসিফ মেনে নিয়ে বলল,

“ওকে।”

আবার হাঁটতে লাগলো দুজন। তাওসিফ গতকালের ঘটনা শোনার জন্য মুখিয়ে আছে। কিন্তু জিজ্ঞেস করছে না। সে চাইছে অধরা নিজ থেকে বলুক। অনেক ক্ষণ হাঁটার পর অধরা বলে উঠলো,

” কোথাও বসি?”

হুম বলে তাওসিফ অধরাকে নিয়ে আজ্ব ক্যাফেতে গিয়ে বসলো। মুখোমুখি বসেছে দু’জন। টেবিলে মেনু কার্ড। তাওসিফ সেটা একপলক দেখে অধরার দিকে এগিয়ে দিলো। মুখে বলল,

“অর্ডার দাও।”

অধরা একাবর তাওসিফের এগিয়ে দেওয়া হাতটা দেখলো। তারপর তাকালো তাওসিফের দিকে। বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,

“আমি?”

তাওসিফ হাসলো। উফ! সেই মাতাল করা হাসি। অধরা চোখ বন্ধ করে ফেললো এক সেকেন্ডের জন্য। ছেলেটা কি জেনে গেছে অধরা ওই হাসিতে ক্ষনিকের জন্য সব ভুলে যায়? চট করে চোখ খুলে ফেললো অধরা। আবার তাকালো তাওসিফের দিকে। তাওসিফ অধরার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। মাথা নাড়িয়ে জানালো হ্যাঁ। অধরা একবার মেনুর দিকে তাকিয়ে মাথা উঁচু করে মিনমিন করে বলল,

“আমি কোল্ড কফি পছন্দ করি।”

তাওসিফ হেসে বলল,

“জানি তো।”

অধরা চট করে তাকালো তাওসিফের দিকে। অবাক হয়ে বলল,

“কিভাবে জানেন?”

তাওসিফ কেশে উঠলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল,

“না মানে আমার বোনরাও কোল্ড কফি পছন্দ করে। ঝগড়াও করে। প্রায় সব মেয়েই পছন্দ করে তাই বললাম আরকি।”

তাওসিফ এতটুকু বলে শুকনো ঢোক গিলল। অধরা তাওসিফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

“ওহ আচ্ছা।”

তাওসিফ কথা ঘুরানোর জন্য দ্রুত ওয়েটারকে ডাকলে। দুটো কোল্ড কফি অর্ডার করলো। কফি চলে এলো কিছুক্ষণ পরে। তাওসিফ অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে। অধরা বুঝলো। সে বলে উঠলো,

“গতকাল দুপুরে মেঝ চাচা-চাচির রুমের সামনে গিয়ে কিছু কথা শুনে ফেলি। আমাদের পূর্বপুরুষ জমিদার ছিলেন। অনেক সম্পদ আমার দাদার নামে ছিলো। সে সেসব সম্পত্তির বিশেষ অংশ তার সব নাতি-নাতনীদের নামে উইল করে দিত। বয়স আঠারো হওয়ার পর যার নামে দিত সে কাগজ পেয়ে যেত। কেউ আঠারো হওয়ার আগে মানে কাগজ হাতে পাওয়ার আগে জানতোই না দাদু তাকে কোথাকার কতটুকু সম্পত্তি দিয়েছে৷ কিন্তু কোনভাবে মেঝ চাচা-চাচি জেনে যায় কক্সবাজারের একমাত্র রিসোর্ট আমার জন্য বরাদ্দ করে গেছেন আমার দাদু। সেই রিসোর্ট ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের মূল পরিকল্পনা ছিলো আমাকে বাড়ির সবার চোখে একদম নিচে নামানো যাতে আমাকে কেউ দেখতেই না পারে। সম্পত্তি দেওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়৷ আমার বাবা আর দাদুনির জন্য। তারা আমাকে একটুও অবিশ্বাস করেনি। এরপর তারা আমাদের পারিবারিক উকিল থেকে কাগজ নিতে চেয়েছে। তবে তিনি দেননি। চাচা এবার তাকে ঘুষ দিতে চাইবে। বাট দুঃখের ব্যাপর হলো গতকাল বিকেলে আমি আমার কাগজপত্র নিয়ে চলে এসেছি।”

অধরা থামলো। তাওসিফ তাকিয়ে রইলো তার দিকে। এখনো কিছু বলল না। অধরার ভাব দেখে মনে হচ্ছে আরও কিছু বলতে চায়। তাওসিফ তাই নীরব রইলো। অধরা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো,

“কিন্তু তাদের এতো বড়ো অন্যায় টা প্রাকাশ্যে আনবো কি করে? তারা আমার জীবন থেকে কি জঘন্য ভাবে পাঁচটা বছর নষ্ট করে দিলো। প্রতিনিয়ত মিথ্যা অপবাদ দিলো। এত সহজে ছেড়ে দিব তাদের?”

তাওসিফ ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। বলল,

“ওটা আমার হাতে ছেড়ে দাও। আর সাক্ষী হিসেবে আয়মান আঙ্কেল তো থাকছেই। তাকে ঘুষ দিতে চাইবে সেটা তিনি বলবেন অবশ্যই।”

“কিন্তু আপনি কি করতে চাইছেন?”

“দেখা যাক।”

তাওসিফ মুচকি হাসে। বলে উঠে,

“তবে হ্যাঁ, যা করবো তোমাকে নিজের ঘরে নেওয়ার পর। আপাতত চিল থাকো তুমি। বিয়ে নিয়ে মেতে থাকো।”

“এখন করলে কি সমস্যা?”

“আমি বাবা রিস্ক নিব না। ধরো যদি রেগে গিয়ে তোমার চাচা-চাচিকে কিছু বলে ফেলি আর তোমার বাড়ির মানুষ বলে উঠে এমন অভদ্র ছেলের কাছে মেয়ে দেব না তখন?”

অধরা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,

“আমার পক্ষে কথা বললে আমার বাবা খুশি হবে। তিনি তখন নিজ হাতে আপনার কাছে এসে রেখে যাবে। বাবা ছাড়া অন্য কারো সম্মতি চাই না আমার।”

তাওসিফ অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,

“অনেক সাধনার ফল আপনি। মিনিমাম রিস্ক আমি নিব না জান। আগে তোমাকে নিজের করে নেই তারপর বাকি সব।”

অধরা তাওসিফের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল,

“আবার কি বলেছেন?”

“কই?”

“মিথ্যা বলছেন আপনি। তখনও বলেছেন। এখনো বলেছেন। আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছেন আপনি।”

তাওসিফ হেসে স্বীকার করে নিলো,

“হ্যাঁ, লুকচ্ছি।”

“কি?”

তাওসিফ হাসলো। চোখ টিপলো অধরার দিকে তাকিয়ে। বলল,

“তাড়াতাড়ি বউ হয়ে যাও তারপর বলবো।”

অধরা চোখ বড় বড় করে তাকালো। বেশ কিছু সময় লাগলো তার কথাটা বুঝতে। বুঝতে পারার সাথে সাথে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো অধরার গাল। চোখ নামিয়ে ফেললো সে। তাওসিফ মুচকি হাসতে লাগলো। অধরা তড়িঘড়ি করে বলল,

“আ…আমরা এখন উঠি?”

তাওসিফ হেসে বলল,

“জি জি চলুন। শপিং করতে যাই।”

অধরা বলল,

“আপনি কি আন্টিকে বলবেন যেন তিনি আপনার সাথে আসে? আমি তার সাথে শপিং করতে চাই।”

তাওসিফ অধরার দিকে তাকালো। অধরা মৃদু হেসে বলল,

“আমার তো মা থেকেও নেই। তিনিই আমার মা হবে। মায়ের পছন্দে বউ সাজতে চাই আমি।”

তাওসিফ মুচকি হেসে বলল,

“সে তোমার মা”

অধরা হাসলো। কি মায়া সে হাসিতে। তাওসিফ মনে মনে বলল,

“তুমি যে তরুলতার আরেক সদস্য হয়ে আছো বহু আগে থেকে তা তো তুমি জানো না। বাড়ির প্রতিটি মানুষ তোমায় ভালোবাসে। তুমি তাদের ভীষণ আপন অধরা।”
——————————-

“আয়মান সহেব, আপনি আমাদের বাড়ির লোক। পছন্দের মানুষ। আমাদের সকল সম্পত্তির খবর আপনার জানা। আসফিনের বিশ হয়ে গেছে। মেয়েটা একটি শান্ত তো। ওর কাগজপত্র গুলো নেয়নি। বিয়ে সামনে। এখন সময় কোথায়। আমিই নিতে এলাম।”

ফারুক হাসান থামলেন। হেসে তাকালেন আয়মান সাহেবের দিকে। আয়মান সাহেব শান্ত ভঙ্গিতে বললেন,

“অাাফিনকে ছাড়া তো কাগজ দিতে পারছি না। আসফিনের সাইন লাগবে।”

“পরে এসে করে যাবে নাহয়। আমাকে বলুন না কোথায় সাইন করতে হবে। আমি সাইন করিয়ে আবার আপনাকে দিয়ে যাব। আসলে এখন ও অনেক ব্যস্ত তো।”

“ফারুক তুমি জানো আমি এভাবে কাজ করিনা।”

টাকার বান্ডিলটা এবার টেবিলে রাখলো ফারুক হাসান। হেসে বলল,

“এটা রাখুন। কাগজগুলো দিয়ে দিন। কাজ শেষ।”

আয়মান সাহেব এবার হাসলেন। টাকা গুলোর দিকে দ্বিতীয় বার তাকালেন না। ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বলল,

“তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ আমি সবার মতো না। যদি হতাম তাহলে তুমি কিংবা তোমাদের কারো সম্পত্তির কাগজপত্র অক্ষত থাকতো না। টাকার বিনিময়ে বিলিয়ে দিতাম।”

“আহা, আয়মান সাহেব। এতো কথার কি হলো। কাজটা হলে আপনারও ভালো আর আমারও।”

আয়মান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। শান্ত ভঙ্গিতে বললেন,

“দুঃখিত ফারুক। তোমার ভলোটা করতে পারলাম না। আসফিন ওর কাগজপত্র সব নিয়ে গেছে।”

চমকে উঠলেন ফারুক হাসান। বড়ো বড়ো চোখে তাকালেন আয়মান সাহেবের দিকে। বিস্মিত স্বরে বলে উঠলো,

“কি বলছেন আপনি?”

#চলবে…?

#দ্যুলোকে_নব_ঊষা
#তাহসিনা_অরিন
#পর্ব_২৪

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। আয়রাদের বিশাল বাগানে হরেক রকমের পাখির উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে আছে। সবদিকে কিচিরমিচির শব্দ। গাছের ডালে বসে আছে কত পাখি। গাছের উপর চক্রাকারে ঘুরছে আরো কিছু। আয়রা হাত বাড়িয়ে ধরার ভঙ্গি করলো পাখি গুলোকে। কিন্তু তারা পালালো না। নিজের ঘরকে হয়তো সবচেয়ে নিরাপদ মনে করলো কিংবা তারা জানে আয়রা তাদের ধরবে না। বন্ধুদের সাথে ঘুরেফিরে আয়রা সবে বাড়ি ফিরলো সে। বাড়িতে প্রবেশ করতেই বসার ঘরে ফারুক হাসানকে দেখলো। উদাস হয়ে বসে আছে তিনি। আয়রা সালাম দিলো কিন্তু উত্তর দিলেন না ফারুক হাসান৷ আয়রা ঠোঁট উল্টিয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। মনে মনে বলল,

“হয়েছেটা কি? এতো উদাস কেন? আর বাবা কোথায়?”

কিছুটা এগিয়ে যেতেই সে তার বাবাকে দুই হাতে দুটি কাপ হাতে নিয়ে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে আসতে দেখলো। আয়রা বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বিনিময়ে হাসলো আয়মান সাহেবও। কোন কথা না বলে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো আয়রা।

আয়মান সাহেব বসার ঘরে ঢুকে সামনের টেবিলে চায়ের কাপ দু’টো রাখলেন। ফারুক হাসান তা যেন দেখলোই না। তিনি গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন। আয়মান সাহেব বললেন,

“চা নাও ফারুক।”

ফারুক হাসান সেদিকে না তাকিয়ে বলে উঠলো,

“আপনি বলেছিলেন কাগজপত্র সব আপনার কাছে আছে।”

আয়মান সাহেব আরাম করে চা’য়ে চুমুক দিলো। কাপটা আবার টেবিলে রেখে বলল,

“হ্যাঁ, ছিলো। আসফিন গতকাল তার কাগজপত্র নিয়ে গেছে। তোমায় সাইন দেখালাম তো! তারিখ দেখোনি?”

ফারুক হাসান এবার কিছুটা চমকে উঠলো বোধহয়। বিরবির করে উচ্চারণ করলো,

“গতকাল!”

আয়মান সাহেব শুনলেন কিন্তু কিছু বললেন। তিনি শুধু অবাক হলেন। নিজের ভাইঝির সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে চাচার একি কারসাজি!
——————————–

অধরা বাড়ি ফিরে দাদুনির ঘরে প্রথমে উঁকি দিলো। দাদুনিকে ঘুমাতে দেখে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। ঘরের সামনে গিয়ে দেখলো তার মেঝ চাচি তার ঘরের চারপাশে হাঁটছে। অধরা বাঁকা হাসলো। বুঝতে পারলো তার চাচা খবর পেয়ে গেছে সকল কাগজ তার কাছে। অধরা নিজের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তার চাচির দিকে তাকালো। মায়মুনা হাসলেন অপ্রস্তুত হয়ে। বললেন,

“তুমি এলে আসফিন। আমি আরো ভাবছিলাম কোথায় গেলে?”

অধরা চাচির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

“ওহ!”

“আসলে ঘরে লক করা। কখনো তো লক করা থাকে না। তাই ভাবলাম কি হলো আবার।”

অধরা বাঁকা হাসলো আবারো। ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুললো। তারপর একদম তারা চাচির সামনে দাঁড়ালো। হিসহিসিয়ে বলল,

“আমাকে নিয়ে আপনার এতো না ভাবলেও চলবে হু?”

কথাটা বলেই অধরা নিজের ঘরে ঢুকলো। মায়মুনার মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো। মায়মুনা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো দরজার এপারে।

তাওসিফ বাসায় ফিরলো সন্ধ্যার অনেক পরে। অধরাকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। বাসায় এসে ডাইনিং রুমে বসলো সে। জগ থেকে পানি ঢেলে নিয়ে নিয়েছে সবে তখনই সেখানে চলে এলো তাইফা। কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁ বলল,

“শপিং করেছিস?”

তাওসিফ মুচকি হাসলো। কিছু না বলে পানি পান করতে লাগলো। তাইফা ক্ষেপে গেলো। গলার স্বর আরো কিছুটা উঁচু করে বলে উঠলো,

“এই ছেলে কি সমস্যা তোর? বিয়ে করবি না তুই? এমন করতেছিস কেন তাওসিফ?”

তাওসিফ মজা পেলো। ইচ্ছে হলো আরো একটু রাগাতে মা’কে। তাই হেঁয়ালি করলো সে। অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

“কেমন করতেসি মা?”

“তাওসিফ!”

“হুম মা।”

তাইফা এবার রেগে পুরো আগুন। রাগে গিজগিজ করতে করতে তিনি বলে উঠলেন,

“ঠিক আছে। তুই এভাবে বসে হেঁয়ালি কর। আমি বরং অধরার বাবাকে বলে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দেই।”

তাওসিফ অসয়ার স্বরে বলে উঠলো,

“না মা প্লিজ।”

তাইফা মুখ ভেঙচি দিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। তাওসিফ পিছন থেকে বলে উঠলো,

“কাল রেডি থেকো। তোমার পুত্রবধূ তোমার পছন্দে কেনাকাটা করবে বলে জানিয়েছে।”

তাইফা চকিত পিছে ফিরে চাইলো। ঠোঁটে তার হাসি। বলল,

“সত্যি?”

তাওসিফ মৃদু হেসে মাথা নাড়লো। তাইফার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো প্রাপ্তিতে।
—————————–

চোখে আতঙ্ক নিয়ে বিছানায় বসে আছে মায়মুনা। ফারুক হাসান চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে পাশেই। মায়মুনা অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,

“আমাদের পরিকল্পনা কি ব্যর্থ হয়ে গেলো?”

ফারুক হাসান সে প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। বিরবির করে বলতে লাগলেন,

“এই টুকু একটা মেয়ে, নিজের সম্পত্তি বুঝে নিলো? আমার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো? এতো সহজে? হু? তারপর? ওর নামে ব্যাংক একাউন্ট আছে তাই না? হ্যাকার দিয়ে পাসওয়ার্ড হ্যাক করলে কেমন হয়?”

ফারুক হাসান বাঁকা হাসলেন। স্বামীর মুখে হাসির রেখা দেখে মায়মুনা কিছুটা ভরসা পেলো। নরম সুরে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হলো গো?”

ফারুক হাসান হেসে বলল,

“ওই মেয়ে ডালে ডালে চললে আমিও পাতায় পাতায় চলি। এবার দেখো কি করি।”

তিনি আবিরকে ডাকতে গেলেন।

অধরা দাদুনির ঘরে বসে রাতের খাবার খেলো। দাদুনির সাথে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলল। বিয়ের শপিং এর কথাও বলল দাদুনি। অধরা জানালো তার শাশুড়িকে নিয়ে কাল বা পরসু যাবে। খুশি হলো দাদুনি। যাক মেয়েটা মা মা একটা আবহাওয়া পাবে। খাওয়া শেষ করে দাদুনিকে বিদায় জানিয়ে নিজের ঘরের দিকে আসার সময় অধরা দেখলো মেঝ চাচা আবিররে ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। নিশ্চয়ই নতুন কোন ফর্দি আটছে। অধরা শিস বাজাতে বাজাতে নিজের ঘরে গেলো। কোন টেনশন ছাড়া।

অধরা নিজ ঘরে গিয়ে অনেকদিন পর ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। অনলাইন ব্যাংকিং নিয়ে কিছুটা ধারণা নেওয়ার পর নিজের একাউন্টে প্রবেশ করলো। টাকার এমাউন্ট দেখে অধরা খুকখুক করে কেশে উঠলো। সাথে সাথে কল করলো বাবার নাম্বারে। ফয়জাল হাসান মেয়ের ফোন পেয়ে হেসে ফেললেন। একই বাড়িতে থেকে কেউ এভাবে ফোন করে? তিনি ফোন রিসিভ করে বলল,

“কি হয়েছে মা?”

অধরা কোনরকম ভণিতা ছাড়া বলল,

“এতো টাকা আমি কি করবো আব্বু?”

ফয়জাল হাসান হাসলেন। মৃদু স্বরে বললেন,

“তোমার যা ইচ্ছে তাই করতে পারো।”

“মাথা কাজ করে না।”

“ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নাও। চাপ নিচ্ছ কেন মা?”

আরো কিছুক্ষণ বাবার সাথে কথা বলে অধরা তার একাউন্টের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করলে। সাথে সব ধরনেট সিকিউরিটি অন করলো। ভয়েস থেকে শুরু করে সব রকম সিকিউরিটি অন করা শেষ করে ল্যাপটপ অফ করলো অধরা। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে তাওসিফের নাম। মেসেজ এসেছে,

“আগামীকাল সকাল এগারোটায়। রেডি হয়ে বের হবেন। আমরা শপিং এ যাচ্ছি।”

অধরা মুচকি হাসলো মেসেজটা দেখে। বাবাকে মেসেজ করে জানিয়ে দিলো। তাওসিফকে ওকে বলে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করলো। শান্তির একটা ঘুম দিবে সে এবার।
————————–

“কি সমস্যা বাবা? এভাবে লক করছো কেন?”

“আহা, বিরক্ত হচ্ছিস কেন? কাজ আছে।”

আবির বিরক্ত হলো। বিরক্তি নিয়েই বলল,

“কি কাজ? জলদি বলো।”

ফারুক হাসান ছেলের ঘরে ঢুকলো। ধীর কন্ঠে বলল,

“তোর কোন পরিচিত হ্যাকার আছে?”

আবির এবার কিছুটা বিস্মিত হলো। হ্যাকার দিয়ে বাবার কি কাজ? সে অবাক কন্ঠে বলল,

“আছে। কিন্তু কেন বাবা?”

ফারুক হাসান গম্ভীর হয়ে বললেন,

“অধরার ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করবো। কোম্পানির ১০% শেয়ার ওর। একাউন্ট ও ইউজ করে না। মানে সব টাকা ওখানে জমা হয়। সেগুলে হাতাতে হবে।”

আবির অবাক হয়ে বলল,

“রিসোর্টের পেপার’স পেয়েছো?”

ফারুক হাসান বললেন,

“নাহ, ও নিয়ে নিয়েছে।”

“তাহলে কিভাবে শিওর হচ্ছো একাউন্ট ও নেয়নি। ওর লাভের অংশ একাউন্টে জমা হবে এটা জানার পর ও একাউন্ট নিবে না?”

“নিলে নিক। আমরা টাকা হাতিয়ে নিব।”

আবির হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে উঠলো,

“ওকে ফাইন, আমি হ্যাকারের সাথে কথা বলবো। এখন যাও।”

ফারুক হাসান ছেলের ঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরে এলেন। পুরো পরিকল্পনা স্ত্রী কে বললেন। মায়মুনা খুশি হলো ঠিকই। তবে আফসোসের সুরে বলল,

“রিসোর্ট টা কি পাব না আমরা?”

“ওটারও একটা ব্যবস্থা করবো দাঁড়াও!”

#চলবে…?