#দ্যুলোকে_নব_ঊষা
#তাহসিনা_অরিন
#পর্ব_৩৩
বদ্ধ ঘরের এক কোণে বসে আছে ফারুক হাসান। কপালে চিন্তার ভাজ। থমথমে চেহারা। অধরার সম্পদ আত্মসাৎ করারা চিন্তা এখন অনেকদূর। বর্তমান চিন্তা তার নিকৃষ্ট রূপ ফাঁস হওয়ার। কি হবে যদি আয়মান সাহেব বলে দেয় সে অধরার কাগজপত্র নিতে গিয়েছিলো। কি জবাব দিবে সে নবনী আনজুমকে? এর থেকে বাঁচার জন্য কি করা যায় তাই ভাবছেন তিনি।
মায়মুনা নিজেও চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে। তার মূল চিন্তার কারণ অহি। মেয়েটা হঠাৎ এমন পরিবর্তন হলো কি করে? এখন যদি কাউকে বলে দেয় পাঁচ বছর আগের সব কথা। কি হবে তার ছেলেটার? কি হবে তার? নবনী আনজুমের চোখের তারা অধরা। সে-ই অধরাকে কম কষ্ট তো দেয়নি তারা। নিশ্চয়ই নবনী আনজুম কঠিন শাস্তি দিবে। ভয়ে আঁতকে উঠলেন মায়মুনা।
——————————–
সূর্য উঠার আগেই ঘুম ভেঙে গেলো অধরার। ঘুমঘুম চোখে চারপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় এখন সে। ঘুম কিছুটা কেটে গেলে বুঝতে পারলো সে এখন শ্বশুরবাড়িতে। তাওসিফের রুমে। তাওসিফ! মানুষটার কথা মনে হতেই দ্রুত পাশে তাকালো অধরা। বিছানার এক কোণে শুয়ে আছে সে। অধরা আনমনে হেসে ফেললো। মনে করতে চেষ্টা করলো গতকাল রাতের কথা,
“ঘুমাবে এখন?”
অধরা মাথা নাড়লো। বুঝালো সে ঘুমাবে না। তাওসিফ শান্ত হয়ে বসলো তার পাশে। মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“কি করবে তাহলে?”
অধরা কিয়ৎকাল ভাবলো। বলল,
“গল্প করি?”
তাওসিফ অমত করলো না। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
“আচ্ছা।”
তাওসিফ অধরাকে নিয়ে বারান্দায় যায়। কি সুন্দর তাওসিফের বারান্দা। কতগুলো গাছ। দেখেই মন ভরে গেলো অধরা। গাছের পাতা গুলোকে আলতো ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
“আমার গাছ ভীষণ প্রিয়।”
তাওসিফ বিরবির করে বললল,
“সেজন্যই বারান্দায় এতো গাছ।”
অধরা সে কথা শুনতে পেলো না। শুধু দেখলো তাওসিফ কিছু একটা বলতে চাইছে। অধরা জানতে চাইলো,
“কিছু বললেন আমাকে?”
তাওসিফ হুসে ফিরে। দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না, না। কই কি বললাম।”
অধরা কথা বাড়ায় না। দু’জন পা ছড়িয়ে বসে পরে বারান্দায়। পাশাপাশি। শুরু হয় কথোপকথন। অধরা চঞ্চল পাখির ন্যায় কথা বলে যায়। তাওসিফ বরাবরই মনোযোগী শ্রোতা। সে শোনে। তাকিয়ে থাকে প্রেয়সীর দিকে; মুগ্ধ নয়নে। অধরা থামে। তাওসিফকে বলে তার কথা বলতে। কিছু সময় মনোযোগ দিয়ে তাওসিফের কথা শুনলেও পরে ঘুমে টলে পরে অধরা। এরপর? অধরা আর মনে করতে পারে না। এর মনে সে বারান্দায় ঘুমিয়ে গিয়েছিল। তাহলে বিছানায় এলো কি করে? মস্তিষ্কে প্রশ্ন উদয় হওয়ার সাথে সাথে উত্তর পেয়ে যায় সে। তাওসিফ এনেছে। কি করে? কোলে করে নিশ্চয়ই! ইশ কি লজ্জা। অধরা নিজের দু’হাতের আঁজলায় মুখ লুকায়। বাইরে আলকা আলো দেখা দিয়েছে সবে। সেই আলো আঁধারের মাঝে অধরা মন ভরে দেখে পাশে শুয়ে থাকা পুরুষকে। খুব ইচ্ছে হলো ছুঁয়ে দিতে কিন্তু তার ঘুম ভেঙে যাওয়ার আশংঙ্কা করে আর ছুঁয়ে দেওয়া হলো না। অধরা উঠে বসে। চলে যায় বারান্দায়। সতেজ হিমেল হাওয়ার মন ভরো উঠে তার। অর্ধ-ফুটন্ত গোলাপটাকে আলতো ছুঁয়ে দেয়। তাকিয়ে থাকে অনিমেষ চোখে বাইরের দিকে। নজরে আসে বারান্দার ওপারে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে। রক্ত লাল ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে অধরা কি এক অপার্থিব সুখের সাগরে ভেসে গেলো। মনে মনে সে বলে উঠলো,
“আমার প্রতিটি সকাল এমন স্নিগ্ধ সুন্দর হোক।”
——————————–
তাওসিফ ঘুম থেকে উঠলো সাতটার দিকে। ঘুম ভাঙতেই পাশে তাকালো সে। অধরা নেই। তাওসিফ ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো। মনে মনে আওড়ালো,
“এতো সকালে কোথায় গেলো মেয়েটা?’
আরো কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বিছানাতে শুয়ে থাকলো সে। এরপর উঠে পরলো। দ্রুত ফ্রেস হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। সোফায় বসে ছিলো তানিম। তাওসিফকে দেখে হেসে বলল,
” শুভ সকাল দোস্ত। রাত ভালো কেটেছে তো?”
তাওসিফের দৃষ্টি সব দিকে বিচরণ করছে। খুঁজে চলছে কাউকে। তানিমের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করলো না। তানিম বুঝলো তাওসিফ কাকে খুঁজছে। দাঁত বের করে হেসে সে বলল,
“ভাবি রান্নাঘরে। আন্টির সাথে কাজ করছে।”
তাওসিফ তানিমের দিকে তাকালো। পরক্ষণেই উঠে হাঁটা ধরলো রান্নাঘরের দিকে। তানিম সেদিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে উঠলো।
হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি পরেছে অধরা। কানে, হাতে ও গলায় সোনার অলংকার। ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে রাখা। হালকা করে ঘোমটা দেওয়া। তাওসিফ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। অধরার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে উঠলো কেউ তাকে নিবিড় ভাবে দেখছে। ঝট করে পিছনে ফিরে তাকালো অধরা। চোখ পরলো তাওসিফের চোখে। তাওসিফ হাসলো। চোখের ইশারায় বুঝালো ঘরে আসো। অধরাও ইশারায় বলল সে কাজ করছে। তাওসিফ মানলো না। আসতেই হবে এমন পণ তার। অধরা তেমন কোন কাজ করছিলো না। তাকে করতে দেয়নি কেউ। সে দাঁড়িয়ে দেখছিলো আর গল্প করছিলো। অধরা তার শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলল,
“আমি একটু ঘরে যাব মা।”
তাইফা তরকারি নাড়তে নাড়তে তাকালো। হেসে বলল,
“যাও তো মা। এখানে কেন থাকতে হবে তোমার? এরচেয়ে ঘরে যাও।”
মুচকি হেসে ঘরের দিকে পা বাড়ালো অধরা। শিস বাজাতে বাজাতে আরো আগে ঘরে চলে গেছে তাওসিফ আবরার।
ঘরে ঢুকতেই তাওসিফ সরু চোখে তাকালো অধরার দিকে। তাওসিফের চোখে দুষ্ট হাসির ছাপ স্পষ্ট। ঠোঁটে বাঁকা হাসি। অধরা বুঝলো না এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে। সে কিছু বলতে যাবে তাট আগেই তাওসিফ এগিয়ে এলো। দাঁড়ালো একদম অধরার সামনে; ভীষণ কাছে। অধরা হকচকিয়ে গেলো। তাওসিফ নিজের মাথাটা নামিয়ে আনলো। ফিসফিস করে বলে উঠলো,
“সকাল সকাল গোসল করে কি বুঝাতে চাচ্ছেন ম্যাম?”
অধরা একটু দূরে সরে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,
“ক…ক..কই কি বুঝাতে চাইলাম? কিছু বুঝাতে চাইনি।”
তাওসিফ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সে হাসির দিকে তাকিয়ে শিরশির করে উঠলো অধরার শরীর। চেখ বন্ধ করে ফেললো মেয়েটা। রক্তিম লাল রঙে আরক্ত হলো তার গাল। এমন কৃষ্ণচূড়ার লাজ দেখে ঘোর লেগে গেলো তাওসিফের। ফের দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেললো ছেলেটা। আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো অধরার লাল রাঙা গালে। কেঁদে উঠলো অধরা। তাতে যেন আরো বেসামাল হলো তাওসিফ। তবে নিজেকে সামলে নিলো। সে অধরার অমতে কিচ্ছু করতে চায় না। তাওসিফ অধরার কপালে কপাল ঠেকালো। জোরে জোরে শ্বাস নিলো কয়েকটা। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠলো,
“তুমি লজ্জা পেও না অধরা প্লিজ। আমি মরে যাই ওই লাজে লাল হওয়া তোমাকে দেখে।”
কে শোনে কার কথা? তাওসিফের ঘোর লাগানো কথা শুনে আবারও লজ্জা পেলো অধরা। কেঁপেও উঠলো ফের। তাওসিফ অধরাকে ছেড়ে দূরে সরলো। হেসে ফেললো শব্দ করে। অধরা বোকার মতো তাকিয়ে রইলো তার দিকে। বুঝতে চেষ্টা করলো হাসির কি হলো। কিন্তু কিছুই বুঝলো না।
——————————
আরাবের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো আঁখি। লক করলো কয়েকবার। কোন সাড়া নেই। এবার ডেকে উঠলো আঁখি,
“আরাব, দরজা খোল। খাবার খাবি না?”
“তুই যা আপা। আমি খাব না।”
“দরজা খোল তুই।”
আরাব দরজা খুললো। আঁখি ঢুকে গেলো ঘরে। আরাব চুপ করে বসে আছে। আঁখি ভাত মেখে ওর মুখের সামনে ধরলো। মুখে বলল,
“নে হা কর।”
“আমি খাব না আপা।”
আঁখি চোখ পাকালো। আরাব চুপচাপ ভাত মুখে নিলো আঁখি পুনরায় ভাত মাখায় মনোযোগ দিয়ে বলল,
“প্রেমিক হতে হলে সাহসী হতে হয়। অতো ভীতু হলে চলে না। কিসের জন্য মন খারাপ করে বসে আছিস তুই? কোনদিন আসফিনকে বলেছিস তুই ও কে চাস? ওর মন পেতে স্পেশাল কিছু করেছিস কখনো? উল্টো কথা বন্ধ করে বসেছিলি। বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবেই তো পাশে থাকার কথা ছিলো তোর। থেকেছিস? আর তারপর! ওর বিয়ের কথা চলছে কত আগে থেকে কই একবারোও তো বাবা বা চাচাকে জানাসনি তুই কি চাস। এখন কান্নাকাটি করে লাভ আছে? তুই জানিস তিনটা বছর ধরে তাওসিফ ভাইয়া দূরে থেকে ও কে আগলে রাখে। তুই ওর কাজিন, বেস্ট ফ্রেন্ড আবার ভালোবাসিস। তুই যতখানি আসফিনকে চিনিস তার থেকে দ্বিগুণ বোধহয় তাওসিফ ভাইয়া চিনে। আসফিন হাসলে সেই হাসির কারণটা ওনি অকপটে বুঝে যায়।”
আঁখি থামলো। আরাব বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে তার বোনের দিকে। আঁখি আবার আরাবের মুখে ভাত দিয়ে বলল,
“আসফিন সব সময় বলতো, ওর জন্য এক রাজপুত্র আসবে। সকল বাঁধা পেরিয়ে নিয়ে যাবে। তাওসিফ ভাইয়া ওর সেই রাজপুত্র।”
আরাব কিছু বলে না। খাওয়া শেষ। আঁখি উঠে দাঁড়ায়। বলে,
“নিজেকে সামলাতে শিখ। তোর ভালোবাসার মানুষটা ভালো আছে, এইটুকু ভেবে খুশি হতে শিখ।”
আঁখি চলে গেলো। আরাব এখনো একই ভাবে বসে আছে। কি ভাবছে কে জানে!
#চলবে….?
#দ্যুলোকে_নব_উষা
#তাহসিনা_অরিন
#পর্ব_৩৪
আজ নবকুঞ্জে যাবে তাওসিফ, অরুমিতা ও অধরা। তাদের বউভাত অনুষ্ঠান করা হয়নি। তাওসিফের ইচ্ছেতেই করা হয়নি। তবে ফয়জাল হাসান কে কথা দিয়েছে মেয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাই আজ যাওয়া। বাইকে করে তিনজন চলে আসলো। অধরা ও অরুমিতাকে নবকুঞ্জের গেইটের সামনে নামিয়ে দিলো তাওসিফ। অধরার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার একটা কাজ আছে। কাজ শেষ করে চলে আসবো।”
অধরা ধীর কন্ঠে বলল,
“সত্যি আসবেন তো? নাকি বাসায় চলে যাবেন।”
তাওসিফ ভরসা দিয়ে বলল,
“আসব। সত্যি।”
অধরা মাথা নাড়লো। তাওসিফ ওদের বিদায় দিয়ে চললো নিজ গন্তব্যের দিকে। অধরা ও অরুমিতা বাড়ির ভিতর চলে গেলো।
বাড়ির নতুন জামাই আসবে বলে অধরারা সেজ চাচি আর ছোট ফুপি হরেক রকমের আইটেম তৈরি করছে। বড় চাচি আর বড়ো আপাও সাহায্য করছে। রান্নাঘরের ত্রিসীমানায় দেখা যাচ্ছে না কেবল মিসেস তুবা ও মায়মুনাকে। অধরা ও অরুমিতা বাড়িতে প্রবেশ করতেই ছুটে এলো তানিশা। হাতে মিষ্টির বাটি। নতুন জামাইকে মিষ্টি মুখ করাবে বলে কাজ ফেলে ছুটে এসেছে সে। কিন্তু তাওসিফকে কোথাও না দেখে অবাক হয়ে বলল,
“কিরে? তাওসিফ কই?”
অধরা মৃদুস্বরে বলল,
“সন্ধ্যায় চলে আসবে আপা”
তানিশা চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
“তুই কি জামাই রেখে একা একা চলে এসেছিস? ও যখন সন্ধ্যায় আসতে চেয়েছে একসাথে সন্ধ্যায় আসতি। এতো তাড়া কিসের তোর?”
অধরা হতভম্ব হয়ে তাকালো তার বড়ো আপার দিকে। মিনমিন করে বলল,
“বিয়ে হতে না হতেই পর হয়ে গেলাম আপা? এখন কিনা অন্যের জন্য বকা দিচ্ছো আমাকে?”
তানিশা আবার কিছু বলার আগে অরুমিতা বলে উঠলো,
“বড়ো আপা থামো। আপুইয়ের কোন দোষ নেই। ভাইয়া আমাদের নিয়ে এলো। বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বলল তার কাজ আছে। কাজটা শেষ করেই চলে আসবে। ভাইয়া যদি আগে বলতো তার কাজ আছে তাহলে তো আপুই বলতো যে কাজ শেষ করে আসুন একসাথে যাব। বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যদি বলে কাজ আছে তাহলে কেমনে হবে? আপুই কি এখন বলবে আমাকে আবার রেখে আসুন। কাজ শেষ হলে নিয়ে আসবেন?”
তানিশা পুরো কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। অরুমিতার গাল টেনে দিয়ে বলল,
“ওরে আপুই ভক্ত রে। পুরো দুনিয়া তোর আপুই এর বিপক্ষে চলে গেলেও কি তুই ওর পক্ষে থাকবি?”
অরুমিতা সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে হেসে বলল,
“অবশ্যই থাকবো। কারণ আমি জানি আমার আপুই কেমন।”
অরুমিতা ঘাঁর ঘুড়িয়ে একবার তাকালো বোনের দিকে। অধরা হাসলো। সেই হাসি দেখে হালকা হাসলো অরুমিতাও।
———————————-
নবনী আনজুম একটু আকটু আওয়াজ শুনতে পেলেন। নিজের ঘর থেকে ডেকে উঠলো,
“তানিশা, তানিশা। আসফিন এসেছে? হ্যাঁ? কই কথা বলো এলো?”
অধরা তার বড়ো আপাকে কিছু বলতে নিষেধ করে এগিয়ে গেলো তার প্রিয় দাদুনির ঘরের দিকে। দরজা একটু ফাঁক করে মিষ্টি করে ডেকে উঠলো,
“দাদুনি।”
নবনী আনজুম দরজার দিকে তাকালেন। তার ভাজ পরে যাওয়া ঠোঁটে ফুটে উঠলো মুচকি হাসি। হাত নেড়ে ডাকলো,
“আসফিন। আসো। এদিকে আসো। তোমাকে একটু দেখি। কতদিন দেখি না।”
অধরা হাসে। সে শ্বশুর বাড়িতে থেকেছে মাত্র দুইদিন। আর তার দাদুনি বলছে তাকে কতদিন দেখে না। আচ্ছা সে যে আনার কাল বা পরসু চলে যাবে। মাস পেরিয়ে গেলেও আর নবকুঞ্জে আসবে না। তখন কি তার দাদুনির খুব কষ্ট হবে? অধরাকে দেখতে চেয়ে বায়না করবে? বুড়ো মানুষ গুলে একদম ছোট বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়। ছোটদের মতো বায়না করে তারা। অধরা দাদুনির পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“এই তে আমি দাদুনি।”
নবনী আনজুম মন ভরে দেখতে লাগলো আসফিনকে। অধরার হাত, গাল ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। সত্যি মনে হলো কতশত দিন পর দেখছে সে অধরাকে। অধরার ভীষণ মন খারাপ হলো। ইশ! দাদুনি যদি তার সাথে যেত। কত ভালো হতো।
————————————
একটা বাগানবাড়ির সামনে এসে বাইক থামালো তাওসিফ। এখানে আসতে তার সময় লেগেছে দুই ঘন্টার মতো। শহর থেকে বেশ দূরেই বলা যায়। তাওসিফ থামতেই বিশাল লোহার গেইটটা ধীরে ধীরে খুলে গেলো। তাওসিফ বাইক সমেত ভিতরে প্রবেশ করলো। বাইক পার্ক করারা সময় একটা সাদা প্রাইভেট কার চোখে পরলো তার। তৎক্ষনাৎ তার ঠোঁটে দেখা গেলো বাঁকা হাসি। বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বাড়িটিতে প্রবেশ করলো সে।
বসার ঘরে রাহাত আর তানিম বসে বসে বার্গার খাচ্ছে। তুষার সোফায় ঘুমিয়ে পরেছে। তাওসিফ ওদের সামনে গিয়ে শুধু বলল,
“কোন রুমে?”
রাহাত হাতের ইশারায় দোতলা দেখালো। তাওসিফ আর কোন কথা বাড়ালো না। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
দোতালায় একদম শেষের দিকের রুমটায় কোন আসবাবপত্র নেই। শুধু তিন চারটে চেয়ার এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে। ফাঁকা ঘরটায় একটা কাঠের চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে কাউকে। রুমের জানালা গুলো বন্ধ। তাওসিফ দরজা খোলায় যেটুকু আলো পরেছে তাতে বোঝার উপায় নেই কাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
তাওসিফ ভিতরে গিয়ে আর একটা চেয়ার নিয়ে বেঁধে রাখা ছেলেটার ঠিক সামনে বসলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকলো সে। পরক্ষণেই পানির বোতলের মুখ খুলে পুরো পানিটা ঢেলে দিলো ছেলেটার উপর। সাথে সাথে ছেলেটা নড়েচড়ে উঠলো। কিয়ৎকাল পরেই পিটপিট করে তাকালো। তাওসিফ যেন এই ক্ষণের অপেক্ষায় ছিলো। বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
“কি খবর শালাবাবু, ঘুম ভাঙলো?”
মাথাটা ঝিমঝিম করছে। আলো-আঁধারির খেলায় সম্মুখের মানুষটিতে চিনতে কষ্টয় হলো তার। যখন চিনলো তখন অবাকের শীর্ষে পৌঁছালো সে। অবাক হয়ে বলল,
“আ…আপনি?”
তাওসিফ হাসলো। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
“দেখো শালাবাবু, আমাদের সম্পর্কটা মজার। তাই মারপিটে যেতে চাচ্ছি না। যদিও তোমাকে খু*ন করতে পেলে মনে শান্তি পাইতাম। কিন্তু আমার বউ যদি সেটা পছন্দ না করে? তাই তোমাকে আপাতত কিছু করছি না। আমি আবার বউ পাগল বান্দা। বউ ছাড়া দুনিয়া অচল আমার।”
তাওসিফ থামে। অধরার সরল মুখটা ভেসে উঠে মানসপটে। তাওসিফ হেসে উঠে। ফের বলে,
“তোমায় প্রশ্ন করবো, সোজা সাপ্টা উত্তর দিবা। আর যদি ত্যাড়ামি করো! তাহলে তুমি যে আমার শালা সেটা ঠুস করে ভুলে যাব আমি”
তাওসিফ ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। সামনে বসে আবির ঘামতে থাকে। ঘাবড়ে গেছে ছেলেটা। হচ্ছে কি তার সাথে। আবির কিছুটা ধাতস্থ হতেই তাওসিফ বলে উঠলো,
“অধরার সম্পত্তির প্রতি তোমার লোভ সীমাবদ্ধ নাকি অধরাতেও লোভ আছে?”
প্রশ্নটা তাওসিফ আবিরের অগোচরে একটু হাসলো। সে হাসির মানে কেউ জানে না। আবির বার কয়েক ঢোক গিলে বলল,
“শুধু সম্পত্তিতেই। পুরো প্লান মায়ের। আমি এমন কিছু কখনো ভাবিনি।”
আবিরের গলার স্বর কাঁপছে। তাওসিফ বলে উঠলো,
“গুড। বেঁচে গেলা শালাবাবু।”
আবির নিজেও মনে মনে স্রষ্টাকে হাজারবার ধন্যবাদ জানালো। ভাগ্যিস অধরার জন্য কখনো অন্য কোন অনুভূতি তৈরি হয়নি তার। তাওসিফ এবার উঠে দাঁড়ালো। আবিরের দিকে ঝুঁকে বলল,
“আমার প্রাণভোমরাকে ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য তোমাকে ঠিক কি করতে ইচ্ছে হচ্ছে সেটা নিশ্চয়ই তোমাকে বলতে হবে না।”
আবির ভয় পায়। চোখেমুখে স্পষ্ট ফুটে উঠে ভয়। তাওসিফ তৃপ্তির হাসি হাসে। সে এটায় চেয়েছিলো। তাওসিফ হিসহিসিয়ে বলে,
“তোমাকে কিছুই করবো না শালাবাবু। শর্ত একটায়। আজ বাড়ি গিয়ে নিজের ও নিজের বাপ-মায়ের সকল কুকর্ম ফাঁস করবে তুমি নিজে। আমার বউয়ের দিকে যেন কোন আঙুল না উঠে। কোন কিন্তু যেন তাকে ঘিরে নাহয়। বুঝতে পেরেছো?”
আবির ভয়ে মাথা নাড়ায়। তাওসিফকে এই মুহূর্তে তার হিংস্র মনে হচ্ছে। তার মাথায় শুধু এখন এটায় কাজ করছে যে কোন মূল্যে তাওসিফের হাত থেকে বাঁচতে হবে। তাওসিফ হাসলো। আগের চেয়েও শীতল কণ্ঠে বললো,
“আর যদি স্বীকার না করো, ভাবো যে এখান থেকে চলে গিয়ে পল্টি মারবে। নো পরবলেম। তোমাকে একবার যখন ধরে আনতে পেরেছি, দ্বিতীয় বারও পারবো। তবে দ্বিতীয় বার তোমার জন্য কোন সুযোগ থাকবে না। ডিরেক্ট….। ”
তাওসিফ দুই হাত ক্রস করে দেখালো। আবির যা বোঝার বুঝে নিলো। সে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আমি দাদুনির সামনে সব স্বীকার করে নিবো। আমাকে কিছু৷ করবেন না প্লিজ। আমি মোটেও পল্টি মারবো না। সব বলে দিবো। আসফির পা ধরে ক্ষমা চাইবো।”
তাওসিফ হাসলো। হেসে বলল,
“তাহলে চলো এবার। বউ অপেক্ষা করছে আমার।”
#চলবে…?