ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে পর্ব-১৬

0
307

#_ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
#_পর্বঃ১৬
#_আরজু_আরমানী

তাহমিদ ভাইয়ার করা প্রশ্নের জবাব দিতে পারিনি। তিনি আমার জবাব উপেক্ষা করে বাসার মধ্যে ঢুকে পরলেন। সোফায় বসে বললেন,

‘ নতুন বাড়িতে থাকার ফিলিংস জানতে এলাম। বল কেমন?’

তাকে আমার একটুও ভালো লাগছে না। কথাগুলো কেমন যেনো অসাড়ের মতো কোনো লাগাম নেই। আমি চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ আপনি কিভাবে জানলেন আমি এখানে থাকি? আমার ফেস দেখে তো আপনার চেনারও কথা না?’

এইবার তিনি বোমটা ফাটালেন। ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন। বিদঘুটে হাসি। বিশ্রী লাগছে। হো হো করে তিনি হাসছেন। আমি শুধু দেখছি। অবশেষে তিনি মুখ খুললেন,

‘তোর যে ছোট ফুপি সে কিন্তু আমার খালা। জানিস তো, খালারা সব সময় বোনের বাচ্চাদের বেশি ভালোবাসে ভাইয়ের বাচ্চাদের নয়। তোর ছোট ফুপিকে তোর মহান মানুষ মনে হয়। নো। তুই ভুলে আছিস। বোকার রাজ্যে বাস করছিস। সেই তোর ঠিকানা আমাকে দিয়েছে এমনকি তোর মা… ওপস.. তোর সৎ মা তাহিরা বেগমকেও দেখিয়েছে। তুই কি ভেবেছিস মামা তোকে প্রোটেক্ট করতে পারবে? না পারবে না।’

তাহমিদ ভাইয়ার কথা শুনে আমার পুরো পৃথিবী কেঁপে উঠেছে। আমার মা, সে আমার মা নয়। সৎ মা। এটা কি বললেন তাহমিদ ভাইয়া? আর ছোট ফুপি তিনিও সবার মতো মুখোশ পরা মানুষ।

‘ সৎ মা মানে? কি বলছেন এসব?’

‘ তোর বাবার থেকে জেনে নিস।’ তাহমিদ ভাইয়া হাসতে হাসতে বাসা থেকে বের হলেন। আমার মাথা ঘুরছে। আমি বাবাকে কল করলাম। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করলেন না। আচ্ছা নেহার আম্মু, নেহা ওরা আমাকে চিনলো কিভাবে? আমিতো তাদের আমার ব্যাপারে প্রথমে কিছু বলিনি। তারা তো কোনো প্রকার বিস্ময় প্রকাশ করেনি। আমি আজি তাদের জিজ্ঞেস করবো। সেদিন কলেজে গিয়ে ইশতিয়াকের সাথে কথা বলতে গেলে ও আমার সাথে তেমন কথা বলেনি তার মানে ও আমায় চিনতে পারেনি। ওর নাম নিতে না নিতেই ও ফোন দিলো।

‘ রাত্রি কবে আসবে কলেজে?’

‘ আমি তো কলেজে এসেছি তুমি কি আমায় দেখোনি?’
‘ না।’ ও আরো কনফিডেন্স নিয়ে বললো, ‘ তুমি কি নিকাব পরে এসেছো? তাহলে তো চিনতে না পারারই কথা। ‘

ইশতিয়াক থামতেই আমি বললাম,

‘ আমি আজ আসবো। তুমি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাড়িয়ে থেকো।’

‘ হুম।’

ফোন নিরবতায় ছেয়ে গেলেও আমি নিরব থাকতে পারলাম না। আমি নেহার আম্মুকে কল দিলাম। তিনি মনেহয় আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলেন। সাথে সাথে ফোন ধরে বললেন,

‘ রাত্রি তুমি আজ বিকালে না এসে সন্ধ্যায় এসো। আমাদের বাসায় একটু অনুষ্ঠান আছে।’

‘ আন্টি।’

‘ হ্যাঁ, মা বলো।’

‘ আন্টি আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?’

তিনি চুপ করে আছেন। কোনো শব্দ নেই। তিনি হয়তো এমন প্রশ্ন এখন আশা করেননি। না। তিনি আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে বললেন,

‘ তোমার প্রশ্নের জবাব কি এখন দিবো না কি সন্ধ্যায় দিবো?’ তার এমন প্রশ্ন শুনে আমি ক্ষীনস্বরে বললাম,

‘ আমি আসবো।’

আজকের সকালটা খুব অদ্ভুতভাবে শুরু হলো। তাহমিদ ভাইয়া এসে ভালোই হলো। তাহিরা বেগম আমার সৎ মা। এটা কি আদৌও সত্যি, নাকি তিনি কোনো ফালতু কথা বলে গেলেন? যদি আমি তার সৎ মেয়ে হই তবে আমার মা কে? তিনি কোথায়? বাবা কেন তার কথা আমাকে বললেন না? কি হচ্ছে কি এসব? কিছু মাথায় ঢুকছেনা। সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ওহ রাত্রি আর চাপ নিসনা। মরে যাবি।

_______________

সকাল নয়টা বেজে কুঁড়ি মিনিট। কৃষ্ণচূড়া গাছটার মাথায় সকালের রোদটা এসেছে। গাছের নিচে ইশতিয়াক দাড়িয়ে আছে। রাত্রি হেঁটে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইশতিয়াক ওকে দেখে আরেক দিকে তাকিয়ে রইলো। রাত্রি হাসলো। তার মনে দুষ্টু বুদ্ধি এলো। সে ইশতিয়াককে বললো,

‘ এই যে ইশতিয়াক সাহেব, আপনি কি রাত্রিকে চিনেন? ‘

‘ সেটা দিয়ে আপনার কোনো দরকার আছে?’

রাত্রি এবার চোখ বড়বড় করে ওর দিকে তাকালো। একটা কালো চশমা পরে বললো,

‘ বেশি কথা বললেনা একদম দেবো হাজতে ঢুকিয়ে। ‘

ইশতিয়াক এবার নড়েচড়ে দাঁড়ালো। ও রাত্রির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনি কে? এভাবে কথা কেন বলছেন?’

‘ আমাকে সত্যিই চিনতে পারোনি?’

এমন গম্ভীর কথা শুনে ইশতিয়াক কপাল কুঁচকে তাকালো। তার মনে কিছু একটা খটকা লাগছে। সে বললো,

‘ তুমি কি…..

‘ রাত্রি।’ ইশতিয়াক আমার কথা শুনে কপাল আরো কুঁচকালো। সে বিশ্বাস করতে পারছেনা। তার মনে হচ্ছে তার সাথে মজা করা হচ্ছে। রাত্রি যদি হয় তবে চেহারা কেন ভিন্ন? সে আমার থেকে সব শোনার পর একটা কথা বললো,

‘ রাত্রি ভারী সাহস তোমার।’

আমি তার এই কথার মানে বুঝলাম না। আমরা দুজন হাঁটছি ফুটপাত ঘেষে। ক্লাস আর করা হয়নি। ঢাকা শহর এই দুপুরের সময়ও শব্দে ভরপুর। এ শহর কখনোই কোলাহল মুক্ত নয়। একটু সময় সে জিরিয়ে নেয়ার জন্য পায়না। তার শুধু ব্যস্ততা। হাঁটতে হাঁটতে ইশতিয়াক বললো,

‘ রাত্রি তোমার কি রাত পছন্দ? ‘

আমি হাসলাম। আমার তেমন কিছুই পছন্দ নয়। না রাত না দিন। শুধু সকালটা আমার প্রিয়।

‘ রাতের সাথে মিলিয়ে নাম রাখা হলেও রাত তেমন প্রিয় নয়।’

‘ তুমি কখনো রাতের সৌন্দর্য দেখোনি। শোনো রাত যখন দেড়টা কি দুটো তখন ছাদে যাবে। একটা পাটি বিছিয়ে বসবে। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে। যদি আকাশে চাঁদ থাকে তবে তো আরো ভালো। তুমি দেখবে রাত কত সুন্দর।’

‘ আপনার রাতের বর্ননা শেষ হয়েছে নাকি আরো কিছু বাকি আছে।’

হঠাৎ এমন বাজখাঁই কন্ঠ শুনে আমরা দুজনে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি সাদ এখানে দাড়িয়ে আছে। ইশতিয়াক আমার দিকে তাকালো। আমি ওর দিকে। সাদ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আঙ্কেল তোমাকে তার অফিসে ডেকেছে। চলো।’

আমি তো হা করে দাড়িয়ে আছি। সাদ এখানে কখন এলেন। বাবা কখন ডাকলেন? তিনি তো আমাকেই কল দিতে পারতেন। আর সাদের সাথে আমার কিছু কথাও আছে। তাই ইশতিয়াককে বললাম,

‘ তুমি যাও। কাল দেখা হবে।’

____________

‘ আজ সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে আসবে?’

‘ কেন?’ আমি না জানার ভান করে বললাম। সাদ বললেন,

‘ একটা অনুষ্ঠান আছে। তোমাকে আসতে হবে।’

‘ আপনি আমাকে সেদিন কিভাবে চিনলেন?’

‘ এই প্রশ্নের উত্তর মা তোমাকে দেবে। আমি নই।’

এবার আমার মাথার কলকব্জা সব নষ্ট হলো। সবাই আজকাল এতো রাখঢাক করে কথা কেন বলছেন? আমি সাদকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ বাবা তো আমাকে ডাকেন নি, আপনি কেন মিথ্যে বললেন?’

‘ তোমাকে ওই ছেলেটার সাথে দেখতে একদম ভালো লাগছিলোনা। তাই আঙ্কেলের কথা বলে নিয়ে এসেছি।’

আমিতো আবারো অবাক। সাদ মহাশয় এই কারনে ইশতিয়াকের থেকে আমাকে সরিয়ে নিলেন। হি হি। তিনিও কি আমার প্রতি কোনো কারনে দূর্বল? নয়তো এতো জেলাস করতেন না। এবার তাকে একটু জ্বালাতে মন চাইলো। আমি তাকে বললাম,

‘ আপনার ভালো না লাগায় কি এসে যায়?’

‘ সেটা পরে বুঝতে পারবে। এখন আমার সাথে ঘুরতে থাকো।’

‘ কোথায় ঘুরবো?’

‘ গেলেই দেখতে পাবে।’

এই লোকের সাথে ঘুরতে ভালো লাগছে। সে এখনো মুখ পেঁচার মতো করে গাড়ি চালাচ্ছে। তাকে দেখতেও ভালো লাগছে। আমি তাকে বললাম,

‘ ওমন পেঁচার মতো মুখ করে থাকলে গাড়ি থামান। আমি নামবো।’

ও’মা কথা শেষ করার আগেই গাড়ি থামলো। আমি চমকে গেলাম। মানুষ কি ধরনের খারাপ হলে একটা মেয়ের কথার সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে দিতে পারে? আমি ফট করে গাড়ি থেকে নেমে পরলাম। সাদও নেমে এলেন গাড়ি থেকে। আমি মুখ গোমরা করে দাড়িয়ে আছি। তিনি এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন। তারপর বললেন,

‘ চলো ভেতরে চলো।’

চলবে……….