ধোঁকার ছায়া পর্ব-০১

0
2037

#ধোঁকার_ছায়া
লেখক: #আবু_সালেহ
(পর্ব ১:

সিজারের এক মিনিট আগে সায়রা জানতে পারে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে। নার্স তার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,আপনার স্বামী এসে গেছেন, ম্যাডাম!”
আপনার স্বামীর সঙ্গে একজন মহিলা এসেছে। তিনি বলেছেন, উনার নাম ইশরাত। উনি নিহাল সাহেবের নতুন স্ত্রী!”

সায়রা তখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। সিজারিয়ান অপারেশনের ঠিক এক মিনিট বাকি। সাদা হাসপাতালের দেয়াল, ঝকঝকে আলো, নার্সদের দ্রুত চলাফেরা—সব মিলিয়ে পরিবেশটা কিছুটা অস্থির লাগছিল।

তার শরীরের ভেতর এক অনির্বচনীয় শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ছিল, যদিও সে জানে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সন্তান পৃথিবীতে আসবে।

শুধু একজনকেই পাশে চাইছিল—নিহাল!

তাকে বলেছিল, সময়মতো হাসপাতালে আসতে। সে আসবেই, এই বিশ্বাস ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নার্স যখন বলল, তার স্বামী এসেছেন, তখন বুকটা ধক করে উঠল এক আশায়।

ডাক্তারের কণ্ঠ কানে এল, “ম্যাডাম, আমরা এখন আপনাকে অপারেশন থিয়েটারে নিচ্ছি।”

সায়রা হাত বাড়িয়ে দিল, “একটু… নিহালের সঙ্গে কথা বলতে চাই!”

ডাক্তার সামান্য বিরক্ত হলো, “সময় নেই। আপনি এখন কথা বলতে পারবেন না!”

কিন্তু নার্স তখনই তার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, “আপনার স্বামীর সঙ্গে একজন মহিলা এসেছে। তিনি বলেছেন, উনার নাম ইশরাত। উনি নিহাল সাহেবের নতুন স্ত্রী!”

সায়রার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেল।

এক মুহূর্ত আগে সে যেখানে একরাশ আশায় ছিল, সেখানে এখন মনে হলো, কেউ যেন তার বুকের ভেতর একটা ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে।

“নতুন স্ত্রী?”

নার্স কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বলল, “হ্যাঁ, ম্যাডাম। উনারা কয়েক ঘণ্টা আগে বিয়ে করেছেন।”

সায়রার নিঃশ্বাস আটকে আসছিল।

ডাক্তার তখনো কিছু একটা বলছিলেন, অপারেশন শুরু করতে চাইছিলেন, কিন্তু তার চারপাশের শব্দগুলো ঝাপসা হয়ে গেল।

তার মাথার ভেতর শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল—

“আমার সন্তান জন্ম নিতে যাচ্ছে… আর ঠিক এই মুহূর্তে আমি জানলাম, আমার স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে!”

শরীরের ভেতর অসহ্য এক শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ল।

তার চোখ দুটো জলে ভরে গেল।

ডাক্তারের কণ্ঠ ধ্বনিত হলো, “সায়রা, আপনি ঠিক আছেন?”

সায়রা চুপ।

তার পেটের ভেতর ব্যথা হচ্ছিল, শরীর কাঁপছিল, কিন্তু মানসিক কষ্টটা যেন তার সব অনুভূতি নিঃশেষ করে ফেলেছে।

সে ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বলল, “আমি… আমি নিহালের সঙ্গে কথা বলতে চাই!”

ডাক্তার বিরক্ত হলো, “এখন অসম্ভব, ম্যাডাম! আমাদের এখনই অপারেশন শুরু করতে হবে!”

কিন্তু নার্স তখন বলল, “ডাক্তার, উনি যদি না চান, তাহলে…”

ডাক্তার এক মুহূর্ত থামলেন, তারপর অসন্তুষ্ট মুখে মাথা নাড়লেন, “শুধু এক মিনিট!”

নিহাল যখন কাঁচের দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে ছিল, সায়রা তখন ক্লান্ত চোখে তাকাল তার দিকে।

তার পাশে ইশরাত।

স্মার্ট, গাঢ় নীল শাড়িতে মোড়া এক রহস্যময়ী নারী। মুখে বিন্দুমাত্র লজ্জা বা অনুশোচনা নেই। বরং তার চোখে এক অদ্ভুত বিজয়ের ছাপ।

নিহালের চোখে অনুশোচনা ছিল, কিন্তু সেটা যেন যথেষ্ট না।

সায়রার গলা কাঁপছিল, তবুও বলল, “এটা কি সত্যি?”

নিহাল কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল।

তারপর মাথা নিচু করে বলল, “সায়রা… আমার কিছু করার ছিল না!”

এই একটা লাইনই যেন সব ভেঙে চুরমার করে দিল।

সায়রার চোখ বুঁজে এল।

ডাক্তার তখন বললেন, “সময় শেষ! আমরা শুরু করছি!”

আর সেই মুহূর্তে, অপারেশন থিয়েটারের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

তার চোখের শেষ দৃষ্টিতে সে দেখল, নিহাল আর ইশরাত হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে—

আর সে একা, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে।

(চলবে…)