#ধোঁকার_ছায়া
পর্ব২
লেখক: #আবু_সালেহ
অপারেশন থিয়েটারের সাদা আলো চোখে লাগছিল।
সায়রার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিল, কিন্তু তার মনের ভেতরে তোলপাড় চলছিল।
নিহাল…
তার স্বামী… তার ভালোবাসার মানুষ…
কীভাবে সে এটা করল?
আর কেন?
তার শরীরে প্রবাহিত ওষুধের প্রভাবে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। কিন্তু অজ্ঞান হওয়ার আগেই তার কানে ভেসে এলো একটি কণ্ঠস্বর—
“সব ঠিক হয়ে যাবে, সায়রা… আমি… আমি কিছু করতে পারলাম না…”
নিহালের কণ্ঠ…
কিন্তু কেন যেন সেই কণ্ঠেও আতঙ্ক মিশে ছিল।
—
২
নিহাল হাসপাতালের করিডোরে বসে ছিল।
তার হাত মুষ্টিবদ্ধ, কপালে ঘাম জমেছে।
সে জানে, আজকের রাত তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
সে চেয়েছিল সায়রাকে আগেই জানাতে, কিন্তু পারেনি।
কারণ সে বন্দী।
শুধু ইশরাতের হাতে নয়… অতীতের এক ভয়ংকর সত্যের হাতে।
—
৩
পাঁচ বছর আগে…
নিহাল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। তার বাবা রফিক উদ্দিন ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী। আর তার মা, নুরজাহান, ছিলেন শান্ত স্বভাবের, সংসারপ্রীত মানুষ।
কিন্তু এক রাতে সব বদলে গেল।
নিহাল তখন ঘুমিয়ে ছিল, হঠাৎ চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙল।
বাইরে এসে দেখে, তার বাবা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। তার মা আতঙ্কে কাঁপছেন। আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক তরুণী— ইশরাত।
তার চোখে কোনো ভয় নেই, বরং যেন এক ধরনের ঠাণ্ডা প্রশান্তি।
“তোমার বাবা যা করেছেন, তার জন্য তাকে শাস্তি পেতেই হতো, নিহাল,” ইশরাত শান্ত কণ্ঠে বলেছিল।
“কী… কী বলছ?”
“তোমার বাবা আমার বাবাকে ধোঁকা দিয়েছেন। আমাদের ব্যবসা লুটে নিয়েছেন। আজকের ঘটনা ন্যায়ের প্রতিশোধ মাত্র।”
নিহাল অবিশ্বাসে তাকিয়ে ছিল।
তার বাবা মারা গেলেন সেই রাতেই।
পুলিশ তদন্ত করেছিল, কিন্তু কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় মামলা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে ইশরাত তখনই তার আসল খেলা শুরু করল।
—
৪
বর্তমান…
নিহাল হাসপাতালের করিডোরে বসে চোখ বন্ধ করল।
পাঁচ বছর ধরে ইশরাত তার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সে প্রতিশোধ চেয়েছিল।
নিহালকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।
প্রথমে ব্যবসায় জড়ানো, তারপর সম্পত্তির ওপর তার হাত বসানো… একসময় সে চাইলো আরও বেশি কিছু— নিহালের জীবন।
“তুমি যদি আমার সঙ্গে বিয়ে না কর, তাহলে তোমার মাকেও বাবার মতো হারাতে হবে,” ইশরাত এক রাতে বলেছিল।
নিহাল তখন বুঝতে পারল, সে কত বড় ফাঁদে পড়েছে।
তার মা এখনো জানেন না, ইশরাত আসলে কে।
তিনি ভাবেন, ইশরাত একজন ভালো মেয়ে, যে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু সত্যিটা জানার আগেই নিহাল বাধ্য হয়েছিল বিয়ে করতে।
এবং আজ… আজ তার স্ত্রী সায়রার জীবনও এতে জড়িয়ে গেল।
—
৫
অপারেশন শেষ হয়েছে।
সায়রার চোখ খুলতে সময় লাগছিল।
তার মাথার ভেতর ঝাপসা সব স্মৃতি ঘুরপাক খাচ্ছিল।
তার সন্তান?
সে কি বেঁচে আছে?
তারপরে ধীরে ধীরে তার স্মৃতি ফিরতে লাগল—
নিহাল… ইশরাত… সেই বিশ্বাসঘাতকতা…
তার ভেতরে তীব্র কষ্ট দাউদাউ করে জ্বলছিল।
আর তখনই দরজা খুলে গেল।
ভেতরে ঢুকল ইশরাত।
তার ঠোঁটে সেই রহস্যময় হাসি…
“অভিনন্দন, সায়রা,” ইশরাত বলল ধীর কণ্ঠে, “তুমি মা হয়েছো।”
সায়রার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।
এই নারী…
সে এখানে কেন?
তারপর ইশরাত ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এলো।
“এখন থেকে তুমি শুধু মা নও, তুমি একটা নতুন খেলার অংশ।”
সায়রার বুকের ভেতর ধকধক শব্দ করছিল।
কিন্তু তার চেয়েও বেশি… তার মনে জেগে উঠছিল একটাই প্রশ্ন—
এই খেলা কি শুধু নিহালকে নিয়েই? নাকি তার সন্তানের জীবনও এখন এই ছায়ার ফাঁদে আটকে গেছে?
(চলবে…)
—