নিঃসঙ্গতার পরের অধ্যায় পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
11

#নিঃসঙ্গতার_পরের_অধ্যায় (শেষ পর্ব)
নুসরাত জাহান লিজা

হৃৎপিণ্ডে ঢিপঢিপ শব্দ নিয়ে শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল শৈলী। ভীষণ মিষ্টি একটা স্বপ্ন দেখল। একটা খোলা প্রান্তর, তাতে অজস্র জোনাকি যেন প্রদীপ জ্বেলেছে। সেই জোনাকির মেলায় হাঁটছে শৈলী, একটা বলিষ্ঠ হাত ওর কোমল হাতটা ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ শুধু হাঁটল সেই জোনাকির প্রান্তরে। হাত ধরে রাখা মানুষটার মুখ না দেখেও সে জানে সঙ্গীটা কে! বহুদূর থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দও কী শুনল! ওর ভীষণ ইচ্ছে করল, এই অপার্থিব সৌন্দর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে মানুষটাকে একবার দেখে। ওর হাত ধরে এখনও কী বিষণ্ণ অভিব্যক্তি ধরে রেখেছে মানুষটা! আরও কিছুক্ষণ হাঁটার পরে সহসা যেন জোছনা বান ডেকেছে। এবার সে সরাসরি তাকাল কাঙ্খিত মানুষটার দিকে। ঠোঁটে, চোখে কী চিলতে মিষ্টি হাসি লেগে আছে। সেই হাসিতে চৌম্বকীয় এক শক্তি যেন, চোখ সরাতে পারছে না। সেই মুখাবয়বে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হৃদযন্ত্রের ঢিপঢিপ শব্দটা বেড়েই চলছে ক্রমশ। এতই প্রবল যে শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হচ্ছে।

আচমকা ঘুমটা ঘেমে গেল। কিছুক্ষণ বুঝতেই পারল না কোথায় আছে। সদ্য দেখা স্বপ্ন ওকে এখনো ঘোরগ্রস্ত করে রেখেছে। যখন উপলব্ধি করল এটা স্বপ্ন ছিল, তখন ভীষণ বিরক্ত লাগল। ঘুমটা এত তাড়াতাড়ি কেন ভাঙল! আরও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে স্বপ্নের দৃশ্যপট মনে করার চেষ্টা করল। পুরোপুরি অনুভব করা গেল না। তবে দৃশ্যটা এত জীবন্ত হয়ে ওর মস্তিষ্কে গেঁথে আছে। এরকম একটা মুহূর্ত স্বপ্নলোক থেকে এই মাটির পৃথিবীতেই যদি টুপ করে নেমে আসে ওর জীবনে! কেমন হতো তবে!

মনে মনে দোয়া করল, “স্বপ্নের ওই মুহূর্তটার মতো করে সারাজীবন যেন তার মুখে ওই হাসি লেগে থাকে, আল্লাহ।”

এরপর আর ঘুম এলো না। সকাল থেকে শৈলী চাতকের মতো অপেক্ষা করছিল কখন বিকেল হবে।

***
আজও পাশাপাশি হাঁটছে শৈলী আর মিফতা। আজ ওরা হাঁটছে নদীর পাড় ধরে। সোনারঙা গোধূলির আলো ওদের ছুঁয়ে যাচ্ছে। কেনাকাটা করতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছে। মিফতা ধৈর্য ধরে ওর সাথে থেকেছে।

শাফিনের জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনেছে, এরপর আরও দেখছিল। হঠাৎ একটা পাঞ্জাবি ওর পছন্দ হয়ে যায় মিফতার জন্য। শাফিনের সাথে ওর গড়নের মিল আছে, শুধু লম্বায় ইঞ্চিখানেক বেশি হবে মিফতা।

সেটা এখনো দেয়া হয়নি। কিছু ব্যাগ মিফতা নিয়েছে ওকে সাহায্য করতে।

এখন পাঞ্জাবিটা মিফতার দিকে বাড়িয়ে দিল শৈলী, “নিন, এটা আপনার জন্য।”

মিফতা খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে বলল, “আমার জন্য?”

“হ্যাঁ। বাবা আমাকে বলেছে ওই বাড়ির সবার জন্য উপহার কিনতে। সেজন্য কিনলাম।”

বাকিগুলো বাবার দেয়া টাকায় কিনলেও এই একটা উপহার সে নিজের জমানো টাকা দিয়ে কিনেছে। বাবার দেয়া টাকা এখনো কিছু অবশিষ্ট আছে, তবুও প্রথমবার কাঙ্ক্ষিত মানুষকে উপহার দিচ্ছে, সেটার পুরো কনট্রিবিউশন ওর নিজের হোক, এটাই চাইছিল।

“আপনার পছন্দ হয়নি?”

“না না, তা নয়। আসলে আমি হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া কারো কাছ থেকে উপহার পেতে অভ্যস্ত নই। সেজন্য একটু…”

এরপর অপ্রস্তুত ভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, “তুমি উপহার দিলে, আমি কিছু দিলাম না। বিষয়টা কেমন দেখায় না?”

“আপনি আমাকে উপহার দিতে চান?”

“হ্যাঁ।”

উচ্ছ্বসিত হয়ে হাত তুলে কিছুটা দূরে ফুল হাতে একটা শিশুকে দেখিয়ে বলল, “উপহার যখন দিতেই চাইছেন, তাহলে ওই বাচ্চা মেয়েটার হাতে বেলীফুলের মালা দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকে একটা আমাকে দিতে পারেন।”

“আপনি বসুন, আমি নিয়ে আসছি।”

নদীর পাড়ে বসার ব্যবস্থা আছে। অনেক মানুষের আনাগোনা। বিকেলে অনেকে নির্মল বাতাসের জন্য এখানে এসে বসে। শৈলী বসল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিফতা এলো। ওর হাতে অনেকগুলো মালা। বিস্মিত হয়ে শৈলী বলল,

“সবগুলো কিনেছেন?”

“তুমি এগুলো দেখে এত খুশি হয়েছিলে, তাতেই বুঝেছি বেলী তোমার খুব প্রিয়। উপহার তো মানুষকে খুশি করার জন্যই দেয়। মনে হলো সবগুলো একসাথে পেলে তুমি আরও খুশি হবে। সেজন্যই নিলাম।”

শৈলী আনন্দ লুকাতে পারে না, চায়ও না। উদ্ভাসিত হাসিতে ওর মুখ ঝলমল করছে।

“কাউকে উপহার দিতে হয় হাসিমুখে। উপহার দাতার মুখে হাসি না থাকলে যে উপহার পায় তার খুশি মাঠে মারা যায়। জানেন তো! উপহার দিতে হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে। যাকে দিচ্ছেন সে যেন কিছুটা হলেও স্পেশাল ফিল করে।”

মিফতা মৃদু হেসে বলল, “শৈলী, এই ফুলগুলো… স্যরি ফুলের মালাগুলো তোমার জন্য।”

মিফতা যে কোনোকিছু মিন করে বলেনি কথাটা তা শৈলী খুব ভালো করে জানে। তবুও কথাটা বিচিত্র এক দ্যোতনা তৈরি করল ওর মনে। স্বপ্নের ছবিটা বারবার ফিরে আসছিল মানসপটে। এও তো কম স্বপ্নময় নয়! ওকে খুশি করার জন্য উপহার দিয়েছে, আজকের এই হাসিটাও তো জন্য। মন কেমন করা এক অনুভূতি ওকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। মালাগুলো হাতে নিয়ে অবচেতনেই বলল,

“আপনি কখনো কাউকে ফুল দিয়েছেন? বিশেষ কাউকে?”

“না। আমার তেমন কেউ নেই।”

“তারমানে আমি আপনার বিশেষ কেউ। একমাত্র আমাকেই আপনি ফুল দিয়েছেন।”

মিফতা এবার ভালো করে তাকাল শৈলীর দিকে। অল্পবয়সী মেয়েটার দৃষ্টি আজ বড্ড অন্যরকম। এই দৃষ্টির মানে না বোঝার মতো বোকা মিফতা নয়। ওমন মুগ্ধতা সে চেনে। হাসি মিলিয়ে গেল মুহূর্তেই। গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত ভাবার চেষ্টা করল। নিজের অবচেতনেই কখন যেন মিফতার চারপাশে জড়িয়ে থাকা শক্ত খোলসের আবরণ সরে যাচ্ছে খুব ধীরে। এটা থেকেই কি মেয়েটা কোনো ইঙ্গিত পেল!

ধরা পড়ে গেছে, সহজেই বুঝতে পারল শৈলী। তাই আর রাখঢাক করল না। সরাসরি বলল,

“আপনাকে আমার জানতে ইচ্ছে করে। এই যে একটু আগে হাসলেন। আমি চাই আপনি সারাজীবন হাসিমুখে থাকুন। আমি আপনার সেই হাসির কারণ হতে চাই। অনধিকার চর্চা যাতে না হয়, একান্ত অধিকার নিয়ে সেই চর্চা করতে চাই।”

“এটা ইনফ্যাচুয়েশন শৈলী। তোমার বয়সে…”

“আপনি ভীষণ একা। এখন আপনার পাশে কাউকে দরকার যার কাঁধে মাথা রেখে আপনি নিজের সমস্ত বিষাদ উজাড় করে দিতে পারবেন, যার হৃদয়ের আলোতে আপনার চারপাশের আঁধার সরে যাবে। যাকে আপনি ভরসা করতে পারবেন, নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারবেন। তারজন্য তাকে আপনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হতে হবে। আমাকে বিয়ে করবেন?”

মিফতা কিছু বলতে যাচ্ছিল, ওকে থামিয়ে দিয়ে শৈলী বলল, “এখনই উত্তর দিতে হবে না। হ্যাঁ কিংবা না, কোনোটাই না। আপনি যতদিন ইচ্ছে সময় নিন। ভাবুন। এরপর সিদ্ধান্ত নিন।”

“তুমি এটা কেন চাইছ?”

“আমি আপনাকে ভালোবাসি। শুধু আমার অনুভূতিটুকু আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। কখনো কাউকে ভালোবাসার কথা ভাবলে আমার কথাটা যেন আপনার মনে পড়ে একবার হলেও। সেজন্য জানিয়ে রাখলাম। না বললে আপনি জানবেন কী করে! আপনার কষ্ট দেখে আপনার খালামনি কষ্ট পাচ্ছেন, সেটাই তো দেখেন না। আমি হয়তো আরও সময় নিতে পারতাম। কিন্তু আমি নিজের অনুভূতি সরাসরি জানাতেই পছন্দ করি। পরে মনে হবে, অন্তত একবার চেষ্টা তো করেছিলাম।”

“উত্তর যদি না হয়?”

“রবি ঠাকুরের একটা লেখা পড়েছিলাম কোথাও, ‘পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমের মত সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছুই নাই। প্রথম যৌবনে বালিকা যাকে ভালোবাসে তাহার মত সৌভাগ্যবানও আর কেহই নাই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিত থেকে যায়, কিন্তু সে প্রেমের আগুন সব বালিকাকে সারাজীবন পোড়ায়।’
আগে কথাগুলো সেভাবে উপলব্ধি করিনি, এখন করি। আপনার জন্য আমার যেই অনুভূতি, সেটা আগে কোনোদিন কারোর জন্য তৈরি হয়নি। আপনি আমার প্রথম প্রেম৷ আমি চেষ্টা করব ভুলে যেতে। কষ্ট হবে, পুড়ব, দগ্ধ হব। তারপর ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করব। আমার মনের জোর অনেক বেশি। বললাম না, আমি সব পরিস্থিতিতে আনন্দ খুঁজে নিতে চেষ্টা করি? তবে এটুকু বলতে পারি, আমি আপনাকে ভালোবাসি। ভবিষ্যতে কাউকে হয়তো আর ভালোবাসতে পারব না। এমন বিষাদ যাপন করা মানুষ আর কই পাব?”

শেষ কথাটা বলতে চাইল খানিকটা হেসে, তবে সেভাবে ফুটল না হাসিটা।

“তোমার জন্য আমি পারফেক্ট নই, তুমি…”

“আপনি সময় নিয়ে ভেবে উত্তর দেবেন। আপনার মন যা চায় সেটাই আগে দেখবেন। আমার কীসে ভালো সেসব নিয়ে ভাবার আগে আমি বলে দেই, আমি আপনার সাথে ভালো থাকব। তাই এটা নিয়ে দ্বিধায় ভুগবেন না। শুধু আপনি আমার সাথে থাকতে চান কি-না সেটা ভাবলেই চলবে।”

“শৈলী, আমি আবারও বলছি..”

মিফতাকে আবারও থামিয়ে দিয়ে শৈলী বলল, “আমি কালই ফিরে যাচ্ছি। হয়তো যাবার আগে আর দেখা হবে না। আমি আপনার কলের জন্য অপেক্ষা করব।”

বলেই দ্রুত পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেল শৈলী। মুখে যতই বলুক, ভুলে যেতে চেষ্টা করবে। আসলে তা পারবে না। একজন বিষাদগ্রস্ত লোকের সামনে নিজের কান্না সে কিছুতেই দেখাতে পারবে না এখন।

***
শৈলী ফিরে যাবার পরে আটাশ দিন কেটে গেছে। মিফতাকে আলাদা করে ভাবতে হয়নি।
শৈলী মেয়েটার মধ্যে কী যেন একটা আছে, কাছাকাছি থাকলে মন খারাপ করে রাখা যায় না। বহুদিন পরে ওর জন্যই তো সে হেসেছিল। অকপটে নিজের মনের কথাও এভাবে কয়জন বলতে পারে!

মিফতা বিস্মিত হয়ে খেয়াল করল সে শৈলীকে মিস করছে। কোনো একান্ত বিষণ্ণ মুহূর্তে মেয়েটার উদ্ভাসিত হাসিমুখ ওর বিষাদের মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে।

এখন নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলোতে মনে হয় শৈলী ওর পাশে এসে বসুক। অর্থহীন কথার ঝুড়ি খুলে দিক। সময় যত গড়িয়েছে, ততই উপলব্ধি করেছে, সে-ও প্রেমে পড়েছে, প্রথমবার।

সেদিন খালামনি বিয়ের কথা তুলতেই শৈলীর মুখটা ভেসে উঠেছে ওর মানসপটে।

ঠিক একত্রিশ দিন হতেই সে কল করল শৈলীর নম্বরে।

“এতদিনে বুঝি আপনার ভাবা শেষ হলো?”

“শৈলী, তোমার বয়স এখনো খুব অল্প। তোমার বাসায় রাজি হবে?”

“আপনি রাজি কি-না সেটা বলুন। বাসার সম্মতি আদায় করার দায়িত্ব আমার। এটুকু রেসপনসেবলিটি না নিতে পারলে আর সাহস করে প্রেমের পড়া কেন বাপু।”

শৈলীর বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেলল মিফতা, “আমি এই কয়দিন ভেবে দেখলাম। তোমাকে ভীষণ মিস করছি। তোমার হাসিমুখ আমাকে আনন্দ দেয়। তুমি বলেছিলে না মনের দরজা খুলে রাখতে। তুমি যেদিন চলে গেলে সেদিন থেকে বোধহয় সেই দরজা আপনা-আপনি খুলে গেছে। তোমার কড়া নাড়া এতটা প্রবল ছিল। আমি সেই ডাক শুনতে পেতাম।”

সেদিন শৈলী আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল, প্রাপ্তির আনন্দে।

তিনদিন পড়ে শৈলী বলল, “বাবাকে রাজী করিয়েছি। অবশ্য একটা শর্ত দিয়েছেন।”

মিফতা একরাশ আশঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী শর্ত?”

“ভয়ের কিছু নেই জনাব। বাবা বলল, বিয়ে দিতেই পারি। কিন্তু পড়ায় যেন একফোঁটা গাফিলতি না থাকে। যদিও মুখ গুঁজে পড়তে আমার ভালো লাগে না। তবে তুমি পাশে থাকলে ওটুকু সহ্য করে নিতে পারব।”

আবারও হাসল মিফতা। একরাশ প্রশান্তি তখন ছড়িয়ে পড়েছে ওর সমস্ত হৃদয়ে।

পরিশিষ্টঃ
এক দম্পতি হাত ধরে হাঁটছে গ্রামের মেঠোপথ ধরে। আকাশ জুড়ে অজস্র নক্ষত্র। পৃথিবীর বুকে যেন নক্ষত্রদের প্রক্সি দেবার দায়িত্ব নিয়েছে অজস্র জোনাকি। জ্বলছে-নিভছে। চাঁদটাও আলো ছড়াচ্ছে অকৃপণভাবে। পৃথিবীতে যেন জোছনার বান ডেকেছে।

বহুদিন আগে শৈলীর দেখা সেই স্বপ্নের মতন। আজ অবশ্য স্বপ্ন নয়। এই পৃথিবীর বুকে মঞ্চস্থ হচ্ছে স্বপ্নময় সুন্দর মুহূর্তটা।

মিফতার এই মাসেই বদলী হয়েছে এই গ্রামে। শৈলী ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে এখানে এসেছে। মিফতা ওকে বলেছে, এদিকে অনেক জোনাকি দেখা যায়। বলতেই সে চলে এসেছে।

“শৈলী, আজকের রাতটা সুন্দর না?”

“তোমার হাসির মতো সুন্দর মিফতা।”

মিফতা হাসল, চাঁদের কিছুটা অস্পষ্ট আলোয় স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাল একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে।

ভালোবাসার কথা, পাশে থাকার কথা বলা যতটা সহজ, করে দেখানো, দায়িত্ব নেয়া ততটাই কঠিন। এই কঠিন কাজটাই সহজভাবে করে যাচ্ছে শৈলী।

তিনটা বছর ওদের কেটেছে স্বপ্নের মতো। জীবনের মাঝের একটা অধ্যায়ে সে ছিল পুরোপুরি নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। সেই নিঃসঙ্গতা ঘুচিয়ে দিতে তার পরের অধ্যায়ে ওর জীবন পরিপূর্ণ করেছে শৈলী।

এমন না যে এই তিন বছরে ওদের কখনো মান-অভিমান হয়নি। কিন্তু আশ্চর্য বোঝাপড়ায় সেটা স্থায়ী হয়নি। শৈলী মাঝেমধ্যে হুটহাট রেগে যায়, আবার দুই মিনিট পরেই সহজ, অকপট, চিরন্তন। শৈলী ওর জন্য মন ভালো রাখার ম্যাজিক বক্স।

নিঃসঙ্গতার পরের অধ্যায় ওর জন্য ভালোবাসায় টইটম্বুর। সেখানে আজকের রাতের মতো অজস্র জোনাকি ঝিকিমিকি করে উঠে ওদের আলোকিত করে ভালোবাসার আশ্চর্য সুন্দর আলোয়।

মিফতা অস্ফুটস্বরে বলল, “তোমার ভালোবাসা আরও বেশি সুন্দর।”

শৈলী মৃদু হাসল, সুখী মানুষের প্রতিচ্ছবি তাতে। প্রথমদিকে মিফতার মধ্যে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা ছিল। হয়তো ভাবত, করুণা। অল্পদিনেই বুঝতে পেরেছে শৈলীর ভালোবাসার প্রগাঢ়তা।

এরপর থেকে সে-ও শৈলীর খুঁটিনাটি বিষয়ও খেয়াল রাখে। এখনো সে শ্রোতার ভূমিকাতেই বেশি থাকে। তবুও ভালোবাসা ঠিকই উপলব্ধি করা যায়।

মনে মনে দু’জনেই স্রষ্টার কাছে কামনা করল, এই ভালোবাসাময় সময়টা দীর্ঘায়িত হোক।

“বহুদিন আগে আমি এমন একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। জীবন মাঝেমধ্যে স্বপ্নের চাইতেও স্বপ্নময় হয়।”

নক্ষত্রের নিচে জোনাকির প্রান্তরে সুখী এক দম্পতি হেঁটে চলছে তখনও স্বপ্নলোকের পথ ধরে এই পৃথিবীর বুকে, ভবিতব্যের পথেও।
………….
(সমাপ্ত)