নিকৃষ্ট_মানব_বাসনা
পর্ব=৩
জয়ন্ত_কুমার_জয়
শালিক বারান্দায় দাঁড়ালো।তার বাবা গম্ভীর স্বরে অফিসারকে বলছে ” কোন মেয়ে অভিযোগ দিয়েছে?তার পরিচয়? ”
শালিক ঘৃণা নিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো।অফিসার বললো ” উনি নাম উল্লেখ করেননি।আপনাকে আমাদের সাথে একটু আসতে হবে ”
” কোথায় আসবো ”
” থানায় ”
” সেখানে কেনো?থানা কি আমার মামার বাড়ি? কে না কে ফোন দিয়ে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিলো আর চলে এলেন? ”
” আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করবো।মেয়েটাকেও থানায় ডাকা হয়েছে ”
” নাম কি তার? ”
” নাম বলেনি ”
” নাম,পরিচয় কিছুই বলেনি।মাঝরাতে কল করে আমার নামে বাজে অভিযোগ দিলো ওমনি আপনারা চলে এলেন? আবার থানায় যেতে বলছেন!এটা মামা বাড়ির আবদার নাকি ”
অফিসারের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।মা আমার হাত চেপে ধরে বললো ” তোর বাবার মাথা গরম হয়ে গেছে।পুলিশের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে! ”
শালিক নির্লিপ্ত স্বরে বললো ” আতঙ্কে বাবার পায়ের মাটি সরে গেছে মা ”
” উনি কেনো ভয় পাবে?উনি তো কোনো দোষ করেনি।মেয়েটা হয়তো ভুলে কল দিয়ে ওনার নামে বাজে কথা বলেছে।কি বলেছে শুনতে চাস? আমি মা হয়ে তোকে এসব কিভাবে বলবো!তবুও বলি,তুই তো বড় হয়েছিস,এর থেকেও নোংরা কথা শুনেছিস ”
” উফফ মা,থামো প্লিজ ”
” কেনো থামবো?কোন মেয়ের এতো সাহস আমার স্বামীকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলে।ওকে সামনে পেলে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো ”
শালিক মায়ের দিকে মুখ করে জিভ বের করে বললো ” এইযে,টেনে ছিঁড়ে ফেলো ”
” তোর কেনো ছিঁড়বো?যে বলেছে তার ছিঁড়বো।বেয়াদব মেয়ের চোদ্দগুষ্টিকে আমি দেখে ছাড়বো ”
” আমিই পুলিশকে কল করেছি ”
শালিকের কথায় মায়ের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো,মুখ হা হয়ে গেলো।শালিক বারান্দা থেকে সামনে গেলো।তাকে দেখে বাবা বললো
” আমি জানি এটা কার কাজ ”
শালিক ভ্রু কুঁচকে বললো ” কার কাজ? ”
শালিকের কাছে এসে তিনি কিছু বলতে চেয়েছিলেন।কিন্তু শালিক বাবার থেকে নিজেকে দুরত্বে নিয়ে বললো
” কাছে এসে বলতে হবে না।ওখান থেকেই বলো ”
শালিকের এই আচরণে বাবা অপমানবোধ করলেন।শালিকের দিকে কঠিনভাবে তাকালো, কিছু বললো না।অফিসারকে বলল
” আপনারা আমায় হেনস্তা করছেন।ভদ্র সমাজে থাকি আমি।আমার একটা রেপুটেশন আছে।আপনারা উপযুক্ত প্রমাণ যোগাড় করে আমায় কল দিবেন আমি নিজেই চলে আসবো।নাম্বার আছে? না থাকলে ফোনটা দিন আমি তুলে দিচ্ছি ”
অফিসার মাথা হেট করে চলে গেলেন।শালিক বাবার দিকে একপলক তাকালো।প্রথমে ভেবেছিলো বাবা পুলিশ দেখে আতঙ্কিত হয়েছে।এখন সেটা মনে হচ্ছে না।ওনাকে বেশ স্বাভাবিকই লাগছে।
শালিক বাবার পরবর্তী পদক্ষেপ কি সেটা বুঝতে চেষ্টা করলো।অফিসার চলে গেলে তিনি শালিকের দিকে তাকিয়ে
” তোমার বান্ধবী আজ পড়াতে আসলে বলবে আমি ডেকেছি ”
” ও আর পড়াতে আসবে না ”
” কেনো আসবে না? ”
” সামনে সেমিস্টার পরিক্ষা ”
” ঠিক আছে,বেতনের টাকাটা অন্তত নিয়ে যাক! ”
” টাকা আমি দিতে দিতে পারবো ”
” তোমার আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করছি।কিছু হয়েছে? ”
” না ”
” আমার ধারণা রেশমী মেয়েটা কোনো ঝামেলা করেছে ”
” সে ঝামেলা করবে কেনো ”
” আমার কাছে টাকা ধার চেয়েছিলো।আমি দিতে রাজি হইনি হয়তো সেজন্যই ”
” সবাইকে নিজের মতো ভাবার মানে নেই ”
শালিকের এই জবাবে তার বাবা থম মেরে গেলেন।শালিক নিজের ঘরে চলে এলো।বাবার প্রতি ঘৃণা তার বেড়েই চলেছে।কি স্বতঃস্ফূর্ত মিথ্যা বলতে পারে লোকটা!
শালিক কলেজের জন্য রেডি হলো।আয়নায় নিজেকে দেখে করুণা হলো।চোখের নিচে কালি জমে গেছে।বিধ্বস্ত শরীর!
শালিকের কাল রাত থেকে ফোন বন্ধ ছিলো।মাঝরাতে পুলিশে কল দিয়ে অভিযোগ জানিয়ে ফোন বন্ধ রেখেছিলো।কলেজ যাওয়ার পথে সিম অন করলো।রেশমিকে কল করলো।রেশমি কল তুলে
” হ্যালো শালিক, তোকে রাতে ফোন দিলাম,বন্ধ দেখালো ”
” বন্ধ রেখেছিলাম ”
” কোথায় এখন তুই? ”
” কলেজে যাচ্ছি।তুই কলেজে আয়।থানায় যাবো ”
ফোনের ওপাশ থেকে রেশমীর ভয়ার্ত স্বর ” থানা কেনো? ”
” আমি পুলিশকে জানিয়েছি।তুই সাক্ষী দিবি ”
” পাগল হয়েছিস? এসব করতে বলেছে কে তোকে।এক্ষুনি কল দিয়ে বল ভুলে বলে ফেলছিস।কি একটা কাজ করলি,আমায় জানাবি তো ”
” তুই এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো ”
” তুই বুঝবি না।কল কাটলাম,তুই থানায় কল দিয়ে বল অভিযোগ তুলে নিবি।তারপর কল কেটে সিমটা ভেঙ্গে ফেলবি।নতুন সিম তুলে কল দিবি আমায় ”
” রেশমি আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,আমার বাবা বলে তাকে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না ”
” ধ্যাত,তুই কলেজে দাড়া আমি আসতেছি।কল কাটার সাথে সাথে ফোন বন্ধ করবি।থানা থেকে যেন তোর সাথে যোগাযোগ করতে না পারে ”
” তুই থানায় আয়।আমি থানাতে যাচ্ছি।রিক্সায় উঠে বলবি থানায় যাবো,ডিরেক্ট নিয়ে আসবে ”
” শালিক তোর পায়ে পরি,প্লিজ এরকম করিস না।তাহলে আমি বাজে ভাবে ফেঁসে যাবো।গ!লায় দড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না ”
” কিচ্ছু হবে না।প্রয়োজনে পরিচয় গোপন রাখবো ”
” এসব গোপনে হয়না।তুই বোঝার চেষ্টা কর,আমি বিপদে পরবো ”
শালিক কল কাটলো।থানার সামনে দীর্ঘক্ষন বসে রইলো।রেশমির দেখা নেই।এক পর্যায়ে শালিক বিরক্ত হয়ে রিক্সা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।মনে ক্ষীণ সন্দেহ হলো,রেশমি এতোবার করে বারণ কেনো করছে!আর বারবার বলছিলো বাজেভাবে ফেঁসে যাবে,কি এমন হয়েছে তাদের মধ্যে যে ফেঁসে যাবে? তবে কি আমি যা ভাবছি সে ধরণের কিছু!
চলবে??