নীড়ের খোঁজে পর্ব-০৪

0
30

#নীড়ের_খোঁজে
#সিজন_দুই
পর্বঃ০৪
#জান্নাতুল_বিথী

স্টাডি রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে তুহা৷ সারা রুম জুড়ে বিভিন্ন রকম বইয়ে ঠাসা। বেশির ভাগই ইংরেজি লেখকদের বই। আবার শৈবালের ছাত্রজীবনের প্রতিটা বই আছে। সেগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে সে। মূলত রুমে শৈবাল আছে। কি জানি কাজে ব্যস্ত সে। শৈবালকে এড়িয়ে চলতেই এখানে আসা তার। রাত তখন সাড়ে দশটা বাজে৷ এবাড়িতে এতোগুলো প্রাণ আছে অথচ কারো সাথেই তেমন সখ্যতা নেই তুহার। শৈবালের ব্যবহারে মনটা সব সময় বিষিয়ে থাকে। কারো সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার ইচ্ছে হয় না। তুহা যখন এসব আকাশ পাতাল ভাবছে তখনি সেখানে উপস্থিত হয় শৈবাল। দোর খোলার শব্দে তুহা সেদিকে ফিরে। শৈবাল তুহাকে এখানে দেখে খানিকটা অবাক হয়। মেয়েটার তখনকার করা অপমান সে ভুলেনি। তাকে কি না বলে সে কাপুরষ? কাপুরষ কি জিনিস এবার হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবে তাকে। শৈবাল তুহাকে এড়িয়ে গিয়ে একটা বই নিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে৷ তুহা কিছু একটা ভাবে৷ শৈবালকে দিয়ে কাজ করানোর ইচ্ছে হয়। খুব তো হাজবেন্ড হাজবেন্ড করে মুখের ফেলা তুলেছে। এবার নাহয় হাজবেন্ডের দায়িত্ব পালন করা শুরু হোক। সব ভেবে মুচকি হাসে তুহা। যেচে এগিয়ে যায় শৈবালের দিকে। ধীর স্বরে আওড়ায়,

“আমার বই লাগবে। কখন এনে দিতে পারবেন?”

কথাটায় চমকে উঠে শৈবাল। বোকা বোকা চাউনিতে তাকায় তুহার দিকে। মেয়েটা এতোটা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে কিভাবে? তাকে অপমান করে এখন মজা নিতে আসছে না তো? রয়ে সয়ে সে উত্তর দেয়,

“রহিম আঙ্কেল কে বললে এনে দিবে তোমাদের বাড়ি থেকে।”

কথাটায় ঠোঁট ওল্টাল সে। সে যা ভেবে কথাটা বলেছে এই ছেলে তো তার ধারে কাছেও যায়নি। ফুসতে ফুসতে সে বলে,

“বাবার বাড়ি থেকে কেন বই আনাবো? বিয়ে করেছি কি বাবার বাড়ি থেকে বই আনাতে? সব গুলো বই আপনি কিনে দিবেন৷”

“সোজা কথা বললেই পারো। এতো ঘুরিয়ে বেহুদা তর্ক করে লাভ আছে?”

রেগে যায় তুহা। তাকে কি না বলে সে বেহুদা তর্ক করছে? কত্তো বড় সাহস। রাগে ফুসতে থাকা ও নড়ে ওঠে শৈবালের কথায়,

“কি কি বই লাগবে লিস্ট করে দিবে, আর যদি অন্য কিছু লাগে সেটাও বলতে পারো। পরে তো তোমার বাপের কাছে গিয়ে অভিযোগ করবা স্বামীর সংসারে অসুখে আছো তুমি। তারা তোমাকে কিচ্ছুটি দেয় না।”

শ্লেষাত্মক হাসে তুহা৷ কৌতুক করে বলল,

“স্বামীর সংসারে সুখে আছি কে বলল?”

উঠে দাঁড়ায় শৈবাল, এগিয়ে এসে তুহার সামনে দাঁড়ায়। ভ্রু কুচকে তার কাণ্ড দেখে তুহা। শৈবাল তার দিকে হালকা ঝুঁকে শুধালো,

“স্বামীর আদর সোহাগ পাচ্ছো, যা চাইছো এনে দিবে। টাকা আছে যখন যা খুশি উড়াতে পারবে, মেয়েরা এর থেকে বেশি কি চায়?”

“ওটাকে স্বামীর আদর সোহাগ বলেনা শৈবাল শাহরিয়ার। বলে স্বামীর চাহিদা। চাহিদা মিটিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে দেন। বিয়ে করা বউয়ের পাশে বসে খেতে পারেন না কিন্তু চাহিদা মিটাতে ঠিকই পারেন।”

হাসে শৈবাল, এই ছেলেটা অপ্রয়োজনেও হাসে। ফের এগিয়ে আসে তুহার দিকে। টুপ করে চুমু খায় তার গালে। ঘাড়ে হাত রেখে তাকে আরো নিকটে নিয়ে এসে অধরে গভীর স্পর্শ এঁকে দেয়৷ তুহা চোখ বন্ধ করে শৈবালের প্রতিটা স্পর্শ অনুভব করে।

মিনিট কয়েক পর তার অধর ছেড়ে গলায় ডুব দেয়। ততক্ষণ পর্যন্ত তুহার গলায় ছোট ছোট চুমু দিতে থাকে যতক্ষণ না সে তাকে আঁকড়ে ধরে। তুহা শৈবালের কোমড়ের পাশে শার্টের একাংশ মুঠোয় পুরে নেয়, আরেক হাতে তার চুল খামচে ধরতেই শৈবাল তাকে ছেড়ে দেয়। বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নিজ অধরে স্লাইড করতে করতে শুধালো,

“মেয়েরা ছেলেদের টাকা খুঁজে আর তাদের খুউউব করে কাছে চায়। আই মিন আমি কি বুঝাতে চাইছি আশা করি তুমি বুঝতে পারছো।

শেষ কথাটা বলে চোখ টিপে দেয় তুহাকে৷ অবাক হয় সে। তুরন্ত এগিয়ে এসে বলল,

“আপনার মাথা ভর্তি ভুল ধারণা শৈবাল শাহরিয়ার। সব মেয়েরা এক রকম নয় আর….

কথা শেষ করতে দেয় না শৈবাল, ফের শুধালো,

“সব মেয়েরা এক রকম৷ তুমি আমার থেকে আরেকটু বেশি পয়সাওয়ালা দেখলে নিশ্চিত তার কাছে চলে যাবা৷ ছাই পাশ বলতে এসো না। বিরক্ত লাগে!”

স্তব্ধ হয়ে যায় তুহা৷ কথা শেষ করে শৈবাল দাঁড়ায় না। হনহন করে বের হয়ে যায় স্টাডি রুম থেকে। তার বলা প্রতিটা বাক্য নিউরনে নিউরনে আন্দোলন করে৷ মেয়েদের নিয়ে এসব ভুল ধারাণা কিভাবে পুষে রেখেছে শৈবাল? সব মেয়েরা এক রকম হয় না৷ যেমন হয় না হাতের পাঁচ আঙুল সমান৷ অথচ কিছু মেয়েদের জন্য আজ সব মেয়েরা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তুহা সবচাইতে বেশি অবাক হয় তখন যখন শৈবাল তাকে পরোক্ষ ভাবে লোভী মেয়েদের সাথে তুলনা করে। একটু একটু করে পিছিয়ে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ে চেয়ারে। টুপ করে এক ফোটা জল পড়ে কপোল বেয়ে।
.
অন্তরিক্ষ জুড়ে মেঘের বিচরণ৷ ধরণী জুড়ে নেমে আসে অন্ধকার। যেকোনো সময় ধরণী জুড়ে বর্ষণ নামতে পারে। অন্ধকারে চারদিক অদ্ভুত আকর্ষনীয় হয়ে উঠে। ভোর পাঁচটা বাজে। বর্ষণের ছোঁয়া গায়ে লাগতেই ঘুম ভেঙে যায় শান্তর। ছাদের এক কোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছে সে। সারা রাত ছাদে বসে কাটিয়ে দিয়েছে। সঙ্গী হিসেবে ছিলো বেশ কয়েক প্যাকেট সিগারেট আর চোখের পানি৷ যতো চেষ্টা করে বেহায়া চোখের পানিকে আটকাতে ততোবারই সে ব্যর্থ হয়। শরীরের প্রতিটা নিউরনে যেন তুহার নাম লেখা আছে। নির্মম সত্যি সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। আজ চার দিন হলো তার তুহাকে কেউ নিজের নামে লিখে নিয়েছে। উফফফ কি নিষ্ঠুর কথা এটা। মেনে নিতে এতো কষ্ট হয় কেন? কেন নিজেকে সামলাতে পারেনা? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায় সে৷ ততক্ষণে সে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। ধীর পায়ে চলে রুমের উদ্দেশ্যে।
.
আজ চারদিন হলো বিয়ে হয়েছে। তুহা আর শৈবালের সম্পর্ক আগের মতোই। এখন তাদের কথা হয়না বললেই চলে। শৈবাল খুব ভোরে বের হয়ে যায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে, বাড়ি ফিরে তুহা ঘুমানোর পর। ফলস্বরূপ একজন আরেকজনের সামনে পড়েনা। এই চারদিনে বাকি সবার সাথেই তুহার সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। প্রিয়’র আর তার সাথে এখন খুব ভালো বন্ডিং তৈরি হয়েছে। দু’জনেই সময় পেলে আড্ডা দিতে বসে যায়। এই কয়েকদিন তুহা ভার্সিটিতে যায়নি। সবার সাথে সম্পর্কের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত ছিলো।

প্রিয় আর তুহা দুজনেই বসে আছে বাড়ির পেছনের জায়গাটায়। এদিকে কেউ খুব বেশি আসেনা। নিরিবিলিতে বসে থাকা যায়। এখানে আসলে মন ফুরফুরে মেজাজের হয়ে যায়। প্রিয় কথার মাঝে হঠাৎ বলল,

“ভাইয়ার এই জায়গাটা দারুণ পছন্দের। বাড়িতে থাকলে সে তার অর্ধেক সময়টা এখানেই কাটায়!”

শৈবালের কথা উঠায় থেমে যায় তুহা৷ তার চঞ্চলতায় ভাঁটা পড়ে। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। এই একটা মানুষ যাকে সে মনে প্রাণে ঘৃণা করতে চায়। কিন্তু কোথাও যেনো একটা একটা বাঁধা পড়ে। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের এতোটা শক্তি। তুহা ক্রমেই কেমন যেনো নেতিয়ে পড়ছে শৈবালের দিকে। বহু কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে। ওই মানুষটার রাগি কথা অপমানের বিনিময়ে সে তাকে অপমানই করতে চায়৷ এখন তো তাদের কথাও হয়না। কতোদিন এভাবে চলবে কে জানে। তুহা চুপচাপ বসে আছে। তখন তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের শব্দে চমকে উঠে ধ্যান ভাঙে তার৷ ফোন তুলতে তুলতে কেঁটে যায় কল। অবাক হয় তুহা, এসময় তাকে মিসড কল দেয় কে? স্কিনে তাকালে নজরে আসে চেনা নাম্বার। স্কিনে আঙুল ঘুরিয়ে ফোন আনলক করতেই নজরে আসে গুটি গুটি অক্ষরের কয়েক লাইন লেখা,

“আমার বন্ধুর বিয়ে শুক্রবার। আজকে রাতে বের হবো আমি। ভেবোনা তোমাকে শহরে রেখে যাবো ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়াতে। তাদের সাথে ঘোরাঘুরির ইচ্ছে মাটি চাপা দাও। আর সব কিছু গুছিয়ে রেডি থেকো। বের হবো!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,