নীড়ের খোঁজে ২ পর্ব-০৫

0
34

#নীড়ের_খোঁজে
#সিজন_দুই
পর্বঃ০৫
#জান্নাতুল_বিথী

শৈবালের মেসেজ দেখে ভ্রু কুচকায় তুহা। এই ছেলের আবার ফ্রেন্ড আছে নাকি? প্রশ্ন মনে হতেই পাশে বসা প্রিয়কে উগলে দিলো,

“তোমার ভাইয়ার বন্ধু আছে কোনো?”

“এক সময় ভাইয়ার অনেক বড় ফ্রেন্ড ছিলো। একজন একজন করে সবাই হারিয়ে গিয়েছে। এখন অবশিষ্ট দুইজন আছে!”

“শুক্রবারে কার বিয়ে?”

“জিহাদ ভাইয়ার বিয়ে। ভাইয়ার সবচাইতে ক্লোজ ফ্রেন্ড হলো ছিলো সমুদ্র ভাই। উনি তো আজ অনেক বছর ধরে অসুস্থ। চিকিৎসা চলছে। তাই ভাইয়া বিয়েতে যেতে চায়নি। কিন্তু জিহাদ ভাইয়া অনেক জোর করেছে।”

অবাক হয় তুহা। একটা মানুষ এতো বছর ধরে অসুস্থ থাকে কিভাবে? সে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তার দিকে তাকালে সে শুধালো,

“অসুস্থ আর চিকিৎসা চলছে বলতে?”

“আমি খুব একটা বেশি কিছু জানিনা। ভাইয়া কখনো বলেনি। হঠাৎ করে সমুদ্র ভাইয়ের আনাগোনা আমাদের বাড়িতে কমে যাওয়াতে ড্যাড ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করার পর বলেছিলো সমুদ্র অসুস্থ, তার চিকিৎসা চলছে। এর বেশি যেনো তাকে কিছু না জিজ্ঞেস করি। আমার ভাইয়া সমুদ্র ভাইয়ের অসুস্থতার পর থেকেই আরো বেশি বদলে যায়।”

শৈবালের বদলে যাওয়ার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায় তুহা। অমানুষটার সম্পর্কে কথা বলতেই ইচ্ছে হয় না তার। সে প্রিয়র থেকে বিদায় নিয়ে উঠে দাড়ায়। গোছগাছ করতে হবে তাকে। তুহা জানে শৈবালের সাথে যেতে অস্বীকার করে লাভ নেই। তার মামনি কিছু বলবে না বরং শৈবালের পক্ষেই থাকবে। কারণ তিনি চায় দু’জনে যেনো কাছাকাছি থাকে।

নিজের ভাগ্যের কথা ভেবে তুহা তাচ্ছিল্য হাসে। কতো স্বপ্ন ছিলো বিয়ে জিনিসটাকে ঘিরে। সব সময় প্রেম জিনিসটাকে এড়িয়ে চলেছে। বিয়ের পর নিজের বরের কাছে নিজেকে শুদ্ধ রাখতে, নিজেকে পবিত্র রাখতে। সে সব সময় একজন কেয়ারিং হাজবেন্ড চেয়েছে। যার সবটা জুড়ে থাকবে কেবল তুহা। যার কাছে সবার আগে তুহার প্রায়োরিটি থাকবে। কিন্তু সে পেয়েছে কেমন হাজবেন্ড?

তুহা খুব ভালো করে জানতো শান্ত তাকে ভালোবাসে। কখনো ছেলেটাকে একটুও প্রশ্রয় দেয়নি। বুঝতে দেয়নি যে সে সবটা বুঝে। একটা ছেলের চোখের ভাষা, তাকে নিয়ে কার কি অনুভূতি তা একটা মেয়ে ভালোই টের পায়। তুহাও ব্যাতিক্রম নয়। ছেলেটা ভালো আছে তো? নিজেকে সামলাতে পেরেছে? একবার ভাবে ছেলেটাকে ফোন করে একটু কথা বলবে। তার জন্য কোনো অনুভূতি না থাকলেও শান্ত তার বন্ধু। পরে ভাবলো কাঁটা গায়ে নুনের চিটা দিয়ে কি লাভ। আগে শক্ত হোক। তারপর হাজারো কথা বলা যাবে।

তুহা আফসানা বেগমের সঙ্গে কথা বলে সব গুছিয়ে নিয়ে নিজে রেডি হয়ে নেয়। তার পরনে নীল তাঁতের সুন্দর একটা শাড়ি। মুখে হালকা প্রসাধনীর ছোঁয়া। আর কতো নিজেকে গুটিয়ে রাখবে একটা অমানুষের জন্য? তাই তো নিজেকে নিজের মতো তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে কারো কথা ভাববে না। নিজেকে সময় দিবে এতে যা হওয়ার হোক।
.
শৈবাল কেবল তার কামরায় ঢুকেছে। ভেতরে ঢুকতেই তার হোঁচট খাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তুহাকে দেখে মাথা ঘুরে উঠে তার। মেয়েটা এমনি সুন্দর, তার উপর শাড়ি পরে সাজগোজ করেছে। দেখে মনে হয় যেনো কোনো নীল পরী ভুল করে তার রুমে ঢুকে পড়েছে। শৈবাল হালকা ঢোক গিলে টাই লুজ করে। তুহা এক মনে বসে মোবাইল টিপে। শৈবাল দ্রুত নিজেকে সামলে নেয়। এই মেয়ে এমনিতে তার থেকে এক কাঠি উপরে তার উপর যদি বুঝতে পারে শৈবাল তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছে তাহলে তাকে খোঁচা দিতে পারে। সে রুমে ঢুকে কিছুটা শব্দ করে দোর বন্ধ করে। যাতে করে তুহা বুঝতে পারে তার উপস্থিতি।

অথচ তুহা বুঝেও না বুঝার ভান করে বসে থাকে। মনে হয় সে ছাড়া বাকি সব কিছু তুচ্ছ, অদৃশ্য। শৈবাল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ওয়ারুমে ঢুকে যায়। সবটা অনুভব করে তুহা তৃপ্তির হাসি হাসে। এই মানুষটার জীবন সে জ্বালিয়ে দিবে। একটুখানি আগুনের প্রয়োজন শুধু। আর সেই আগুন হচ্ছে তার নির্লিপ্ত ভাব আর শান্ত প্রতিবাদ। মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে তুহা আবার মোবাইলে মনোনিবেশ করে।

সন্ধ্যার পর বের হওয়ার কথা থাকলেও তুহারা বের হতে হতে প্রায় এগারোটা বেজে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিদায় নিয়ে তারপর বের হয়। যেহেতু শৈবাল সারাদিন ডিউটিতে ছিলো তাই সে আর গাড়ি ড্রাইভ করছে না। তুহাকে নিয়ে পেছনে বসেছে। শৈবাল বাসায় আসার পর থেকে খুব বেশি কথা হয়নি তাদের৷ শৈবাল তার কয়েকটা শার্ট আর পাঞ্জাবি নেওয়ার কথা বলেছে। তাছাড়া টুকটাক দু একটা হয়েছে কথা। গাড়িতে বসার পর থেকে তুহা মোবাইলেই তাকিয়ে আছে। কানে হয়তো হেডফোন গুঁজে দেয়া। তার পাশে একটা জলজ্যান্ত মানুষ বসা অথচ তাকে উপেক্ষা করে মেয়ে দিব্যি মোবাইলে তাকিয়ে আছে।

ব্যাপারটা সহ্য হয় না শৈবালের। তাকে ইচ্ছে মতো জ্বালাতে ইচ্ছে করতেছে। শৈবাল তার হাত থেকে ফোন টেনে নিয়ে নেয়। তুহা ভ্রু কুচকে তাকাতেই সে বলে,

“বিশ লক্ষ টাকা কাবিন দিয়ে বিয়ে করেছি আমাকে ইগ্নোর করতে?”

রেগে যায় তুহা। কথায় কথায় বিশ লক্ষ টাকার কথা উঠছে কেন? তার রেগে যাওয়ার ভাব ধরতে না দিয়ে মুচকি হেসে সে উত্তর দেয়,

“এটা তো সব মেয়েদের অধিকার। তাছাড়া আপনার মতো জিরাফ পাশে থাকলে কার সাধ্য আছে আপনাকে ইগ্নোর করার? আপনি তো সেধে আসেন নিজের মূল্য বা উপস্থিতি বুঝাতে!”

তুহার প্রতিটি কথা খুব গায়ে লাগে শৈবালের। একবার তাকে কাপুরষ বলে তো আরেকবার বলে জিরাফ। আবার কি না বলে সে নিজে থেকে সেধে নিজের উপস্থিতি বুঝায়? কত্তো বড় সাহস এই মেয়ের৷ চট করে নিজেদের মাঝের দূরত্ব ঘুছিয়ে এগিয়ে যায় শৈবাল। ডান হাতে গাল চেপে ধরে কঠোর ভাবে আওড়ায়,

“আমার সাথে লাগতে এসো না তুহা পাটোয়ারী। ডানা কেঁটে মাটিতে ফেলে দিবো!”

তাচ্ছিল্য হাসে তুহা। ব্যাথায় গাল জ্বলে যায়। তারপরো টু শব্দটিও না করে বলে,

“আপনার সাথে লাগার মতো রুচি আমার নেই। আগে আমার লেভেলে আসেন তারপর একথা বলবেন!”

হতভম্ব হয়ে যায় শৈবাল। বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে থাকে তুহার দিকে। হাত শিথিল করে। যেখানে তার সাথে একটু কথা বলার জন্য মেডিকেলের স্টুডেন্ট রা পাগল হয়ে ছুটে আসে। তার ফিমেইল কলিগ গুলো হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে মিনিটের পর মিনিট। রোগী দেখতে বসলে মেয়েরা হাজারবার ক্রাশ খায় সেই ছেলেকে কি না বলছে তার সাথে কথা বলতে তার রুচিতে বাধে? তাকে লেভেল চেনাতে এসেছে মেয়েটা? তার পর্যায়ে আসা প্রত্যেকটি ছেলের স্বপ্ন। সেখানে তাকে কি না একথা বলা হচ্ছে?

শৈবাল কথা খুঁজে পায় না। কি বলবে যখন ভাবছিলো তখনি তার ফোন বেজে উঠে। স্বস্তির শ্বাস ফেলে শৈবাল। ফোন কলের জন্য হলেও তো এড়িয়ে যাওয়া যাবে ব্যাপারটা। কিন্তু কথা হলো তুহার এই কথা হজম করতে তার ঠিক কতো প্রহর লাগবে? কতো দিন পর সে এই কথাটা ভুলবে? আধো ভুলবে তো? এসব ভেবেই ফোনে কথা বলে। হু হা ছাড়া তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথাও বলছে না। শুধু একবার বলেছিলো তাদের যেতে যেতে ভোর হতে পারে।

তুহা সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বাহিরে তাকায়। ফরসা গালে শৈবালের তিন আঙুলের দাগ বসে গিয়েছে। জ্বলন অনুভব করছে। ভালোই জব্দ করতে পেরেছে এই ছেলেকে। শৈবাল ফোনে কথা বলা শেষ করলে তুহা হঠাৎ কিছু মনে পড়ার মতো করে বলে,

“আর শুনুন,”

শৈবাল জবাব না দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালে তুহা ফের বলে উঠে,

“যেখানে যাচ্ছেন সেখানে আপনার বউ হিসেবে আমাকে পরিচয় দিবেন না। যে পুরুষ নিজের স্ত্রীর পাশে বসে খেতে পারে না সে আমাকে অন্যের কাছে নিজের বউ বলে পরিচয় দিবে ব্যাপারটা আমি খুব একটা ভালো ভাবে নিবো না। আশা করি বুঝতে পারছেন!”

চলবে,,,,,,,,,,,