নীড়ের খোঁজে ২ পর্ব-১৬

0
33

#নীড়ের_খোঁজে [২]
পর্বঃ১৬
#জান্নাতুল_বিথী

শেফালি বেগম জামাই আদরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নিজের মেয়ের বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে। তুহাকে তিনি নিজের মেয়ের মতোই আদর যত্ন করেন। তাঁর স্বামী এসেছে, আদর যত্ন না করলে হয়? বাঙালীয়ানা সকল রান্না নিজ হাতে করেছে। এদিকে শৈবাল অসহায় মুখ করে টেবিলে বসে আছে। একটু পর পর তুহার দিকে ইনোসেন্ট ফেসে তাকায়। অথচ শৈবালের দিকে তুহার কোনো ধ্যান জ্ঞান নেই। মেয়েটা বাহিরে তাকিয়ে কি যেনো দেখতে ব্যস্ত। যেনো এদিকে কেউ নাই। বাহিরে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু হচ্ছে। ওইদিকে দিশারা মিটিমিটি হাসে শৈবালের অবস্থা দেখে। শেফালি বেগম শৈবালের পাতে আরো এক চামচ পোলাও দিতে দিতে বলল,

“কি ব্যাপার ইয়াংম্যান তুমি খাচ্ছো না কেনো? এতো কম খেলে চলে? এখনি তো বয়স খাওয়া দাওয়া করার। তোমার বয়সী থাকাকালীন তোমার খালু তিন প্লেট খেতে পারতো।”

শৈবাল কি বলবে খুঁজে পায় না। একদিকে তুহার অবহেলা অন্যদিকে এসব খাওয়ার প্যারা তাঁর সহ্য সীমার বাহিরে। তাও ভদ্র ছেলের মতো চুপটি করে বসে আছে। শৈফালি বেগমের কথা পিঠে মৃদু স্বরে উত্তর দেয়,

“খাচ্ছি তো আন্টি, আপনি ব্যস্ত হবেন না।”

“আরে তুমি খাও তো। এতো দিকে খেয়াল দিও না!”

কথা শেষ করে শেফালি বেগম কিচেন রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ভদ্রমহিলার প্রস্থান দেখে তুহা এগিয়ে আসে শৈবালের কাছে। তাঁকে দেখে শৈবাল খাওয়া থামিয়ে তাঁর দিকে তাকায়। তুহা চেয়ারের উপরে দুই হাত রেখে তাঁর উপর থুতনি রেখে অর্ধেক ভর ছেড়ে দেয়। শৈবালের দিকে তাকিয়ে শ্লেষাত্মক হেসে শুধালো,

“ফুপির জানা উচিত তাঁর আদরের মেয়ে জামাই মেয়ের উপর কতোটুকু মানসিক টর্চার করেছে। উচিত না? বলবো?”

শৈবাল ভেবে পায় না তুহার মুখ থেকে এতো কঠোর কথা কিভাবে বের হয়৷ কলিজা চিদ্র করা টাইপের কথাবার্তা বলে মেয়েটা। শৈবাল কিছুটা ভেবে উত্তর দেয়,

“মানুষ মাত্রই ভুল মিসেস। ক্ষমা করে নিজের মহত্ত্বের পরিচয় দাও।”

“দুঃখিত স্যার, আমি এতোটা মহৎ নই যে নিজের মহত্ত্বের পরিচয় দিবো। মিথ্যা বলা বা নিজেকে মিথ্যা দিয়ে বিশেষায়িত করার মতো অকাজ আমি করিনা!”

মুগ্ধ হয়ে শোনে শৈবাল। মেয়েটা কতো সুন্দর করে কথা বলে। অথচ কথার সারমর্ম বুঝলে তাঁর ভেতরটা তেঁতো হয়ে যাওয়ার কথা। শৈবালের হঠাৎ করে জিহাদের বলা একটা কথা কথা মনে পড়ে। ছেলেটা একদিন বলেছিলো,

“যেদিন তুই কারো প্রেমে পড়বি সেদিন প্রেমিকার তেঁতো কথাও মুগ্ধ হয়ে শুনবি। প্রেমিকা তোকে বকাঝকা করলেও সেটা মধুর মতো শোনাবে!”

সেদিন কথাটা শুনে খুব হেসেছিলো শৈবাল। আজ তুহার কথায় মুগ্ধ হয়ে সেদিনকার কথা মনে পড়ে গিয়েছে৷ মেয়েটা তাঁর প্রেমিকা না হলেও বউ তো। হা করে তাকিয়ে থাকে তুহার দিকে। বিরক্ত হয় রমণী৷ অতিষ্ঠ চিত্তে শুধালো,

“খাওয়া দাওয়া শেষ করে যেভাবে এসেছেন ঠিক সেভাবেই চলে যাবেন। আপনাকে যেনো আমার আসে পাশেও না দেখি।”

“ওমা আমি আমার বউ বাচ্চার কাছে থাকবো না?”

“ফর ইয়্যুর কাইন্ড ইনফরমেশন আপনি আপনার বউ আর বাচ্চার জন্য কি করেছেন? আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দেন তো। আপনি কি বাচ্চা চেয়েছিলেন?”

“চাওয়া না চাওয়া পরের ব্যাপার। তুমি যখন চাইছো না তখন আমি এমনিতেও এখানে থাকবো না।”

তুহা সেখান থেকে নিরবে প্রস্থান করে। কথা বাড়াতে ইচ্ছা করছেনা। তাছাড়া শৈবালকে বলার মতো আর কোনো কথা বাকি নেই। এই সুপুরুষ কে যতোটুকু চিনেছে তাতে মনে হয় না তুহার কাছে আর আসবে। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জীবনটা কেমন গন্তব্যহীন হয়ে যাচ্ছে। আপন নীড়ের খোঁজে ছটফট করে বেড়ায় গন্তব্যহীন রমণী।
.
তুহা রুমে এসে বন্ধুদের কল দেয়। গ্রুপ কলে জয়েন হয় শান্ত, হিমেল, রাতুল, ইকরা আর ইফা। সবাই মিলে আড্ডায় মেতে উঠে। সবার মাঝে নিরব থাকে শান্ত। নিজের নামের মতোই নিজেকে তৈরি করে নিয়েছে৷ মোবাইলের স্কিনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুহার দিকে। মাঝে মাঝে কথা বলতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়লে হয় তুহাকে। এতোদিনে অবশ্যই তাঁর অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর কাছে ব্যাপারটা ভীষণ খারাপ লাগে। সে এখন অন্য কারো বউ। তাঁর বাচ্চার মা হতে চলেছে। সেকথা শান্তকে কিছুতেই বুঝানো যায় না। তাঁর পাগলামি দেখে কেঁদে বুক ভাসায় ইফা। এখনো ছেলেটা কিসের পেছনে পড়ে আছে? কেনো নিজেকে কষ্ট দেয়?

ঘন্টা খানেক পরে রুমে আসে শৈবাল। তুহাকে ফোনে কথা বলতে দেখে অবাক হয়। সে জানতো এই মেয়ে ফোন ব্যবহার করেনা। এখন তো দেখছে ব্যাপারটা উল্টো হয়ে গিয়েছো। তুহার কাজে শৈবালের মিশ্র অনুভূতি হয়। কিছুটা রাগ, কিছুটা অভিমান। আবার কিছুটা হারিয়ে ফেলার ভয়। তাঁর যতোটুকু ধারণা আছে, তুহার বন্ধু শান্ত তাঁর মিসেসকে পছন্দ করে।

শৈবালকে আসতে দেখে নড়েচড়ে বসে তুহা৷ কিন্তু ফোন কাঁটে না৷ শৈবাল তাঁর পাশে বসে ভিডিও কলের ক্যামেরা বন্ধ করে মিউট করে দেয় কল। কিছুটা রেগে যায় তুহা। শৈবালের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল,

“সমস্যা কি আপনার? এসব কি শুরু করছেন?”

“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

“কিন্তু আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। আপনি প্লিজ চলে যান!”

“তুমি শান্তর সাথে যোগাযোগ রাখবে না তুহা!”

হতভম্ব হয়ে তাকায় তুহা। শৈবাল শান্তর ব্যাপারে কিভাবে জানে? না জেনে থাকলে এভাবে বলার কথা না। সে কিছুটা অবাক হয়েই বলল,

“এভাবে বলছেন কেনো? শান্ত কি করেছে?”

“শান্ত কি করেছে সেটা তুমি ভালোই জানো। আমি চাইনা কেউ আমার মিসেসের দিকে অন্য নজরে তাকিয়ে থাকুক!”

“আর আমি আপনার কথা শুনবো কেনো?”

শৈবালের মাথায় রাগ চড়ে বসেছে বহু আগেই। এখন তুহার ত্যাড়া কথা শুনে আরো বেশি মাথা নষ্ট হয়ে যায়। হাতে থাকা তুহার ফোনটা ছুড়ে ফেলে। দেয়ালের এক কোণে লেগে অবহেলায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে থাকে। তুহার এত্তো পরিমাণে খারাপ লাগে। আবার ভয়ও হতে থাকে। শৈবাল রক্তলাল চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টিতে কি আছে জানা নেই তুহার। হঠাৎ এমন কাজে বেশ ভড়কে গিয়েছে মেয়েটা। শৈবাল তুহার দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তুমি শুধু আমার বউ। আমি তোমার দিকে মন কেমনের দৃষ্টিতে তাকাবো। আমি তোমাকে ভালোবাসবো। অন্য কারো সেই অধিকার নেই। তোমার হাত ধরবো আমি, গোটা তুমিটাতেই আমি বিচরণ করবো। তাহলে সেখানে অন্য পুরুষ আসবে কেনো?”

“অন্য পুরুষের কথা এখানে আসছে কেনো? শান্ত আমার বন্ধু, আমি তাঁকে বন্ধুর নজরেই দেখি!”

বেশ কঠোরভাবে জবাব দেয় তুহা। কিন্তু তুহার যুক্তি মানতে নারাজ শৈবাল। তাঁর জবাব শৈবালের নিকট যুতসই মনে হয়নি।

“তুমি যাকে বন্ধুর নজরে দেখো সে তোমাকে বন্ধু ভাবে না। এটা বুঝার চেষ্টা করো। আমিও মানুষ তুহা। আমাকে কেনো কষ্ট দিতে চাও তুমি? পর পুরুষের সাথে কথা বলবা না!”

“আপনি কি আমাকে সন্দেহ করেন?”

“আমি তোমাকে সন্দেহ করিনা মিসেস। এধরণের কথা বলবা না৷ আমি জাস্ট তোমাকে বুঝাতে চাইছি…”

“আপনাকে কিছু বুঝাতে হবেনা। আপনি যেতে পারেন!”

শৈবাল প্রতিত্তর করেনা। তুহার কোমরে ডান হাত গলিয়ে দেয়। কাছে টেনে নেয় নিষ্ঠুররাণীকে। কোমরে স্লাইড করতে করতে তুহার ফুলে ওঠা গালে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দেয়। ছটফট করে উঠে তুহা। নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এদিক থেকে অন্যরকম শৈবালকে আবিষ্কার করে। তুহার গালে ঘাড়ে চুমুর সাথে কামড়ের বর্ষণ নামে। তুহা শৈবালকে ঠেলে সরিয়ে দিতে দিতে বলল,

“আমার কাছে আসবেন না। আপনার শরীর থেকে গ*ন্ধ আসে। আমার বমি পায়। আপনি প্লিজ আমাকে স্পর্শ করবেন না। আপনার এসব স্পর্শ আমি নিতে পারিনা। চলে যান এখান থেকে শৈবাল শাহরিয়ার। আপনি বারবার অপরাধ করবেন আর আমি আপনাকে ক্ষমা করতে পারবো না। আপনি দিনকে দিন আরো অসহ্যকর হয়ে যাচ্ছেন!।”

চলবে,,,,,,,,,,