নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব-০২

0
66

#নীরদ_ক্লেশের_অন্ত
[পর্ব-২]
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা

চু’মু খাওয়ার লোভে রুমে প্রবেশ করলো সারু। ঢুকতেই দেখলো শেরহাম গম্ভীর মুখশ্রীতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এই তাকানোর মানে বুঝলোনা সারু। ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো শেরহামের দিকে।

“এদিকে এসো।”

গম্ভীর কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো শেরহাম। সারু মুখ গোমড়া করে এগিয়ে গেলো শেরহামের দিকে। শেরহামের থেকে এক হাত দূরে দাঁড়ালে সে। হুট্ করেই শেরহাম সারুর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। ঝুঁকে সারুর কানে গম্ভীর ভাবে বলে উঠলো,,

“জেঠিমণির কাছে ডিভোর্স পেপার রেডি করতে গিয়েছিলে?”

সারু জমে গেলো, একই বিছানায় এতগুলো দিন থাকার পর এই প্রথম সে শেরহামের এতো কাছে, তার বুকে। শেরহামের প্রশ্ন সারুর কর্ণপাত হলোনা। সেতো জমে গেছে শেরহামের বুক স্পর্শে এসে।

“কী বললাম? তুমি জেঠিমণির কাছে গিয়েছিলে ডিভোর্স পেপার রেডি করতে?”

হুশ ফিরলো সারুর। হালকা কম্পিত স্বরে বলে উঠলো,,

“হ.. হ্যা গিয়েছিলাম।”(নিচু স্বরে)

“কেন?”

সারু কী বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এই প্রথম সে শেরহামের এতটা কাছে। হৃদস্পন্দন মনে হচ্ছে তড়িৎ গতিতে দৌড়াচ্ছে। অন্যসময় হলে এতক্ষনে সারু শেরহামের চোখের সামনে আঙ্গুল তুলে বলতো কী কারণে ডিভোর্স পেপার রেডি করতে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন সারু কেনো জানি পারছেনা।
ঢক গিললো সারু, নিঃশ্বাস নিলো প্রাণ ভরে। এবং নিঃশ্বাস ফেললো জোরে, শেরহাম সেই গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলো। সারুকে আরেকটু নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরলো।

“আপনার সাথে আমি থাকতে ইচ্ছুক না, আশাকরি কেনো বুঝতে পারছেন। বাড়ির পরিস্থিতি, আপনার মায়ের কথাবার্তায় স্পষ্ট বুঝার কথা। সবাই আমার মাতৃত্বের দিকে আঙ্গুল তুলছে, অনেক সহ্য করেছি। আমার দ্বারা আর সম্ভব হচ্ছেনা।”

শেরহাম পুরোটাই শুনলো। কিছুক্ষন চুপ রইলো। রুমটা এখন গম্ভীর ও নীরবতায় পরিপূর্ণ। অতঃপর নীরবতা ভেঙে শেরহাম বলে উঠলো,,

“আচ্ছা, এখন তুমি কী প্রস্তুত বাচ্চার প্রসেসিং শুরু করতে?”

সারু ভড়কে গেলো। কী কথার প্রসঙ্গে কী বলছে লোকটা। তার অবাক লাগছে, সে কী স্বপ্নে আছে? যে লোক মুখ ফুটে কোনোদিন বেশি কিছু বলেনি পড়ালেখার বিষয় বাদে। সেই লোক আজ এসব বলছে! কিভাবে সম্ভব এটা!
সারু মুখ তুলে হা করে তাকালো শেরহামের দিকে। শেরহাম গম্ভীর ভাব বজায় রেখেছে মুখশ্রীতে।

“আ..আমি কী স্বপ্নে আছি? একটা চিমটি কা”টুন আমাকে।”

শেরহাম চুপ করে রইলো, চিমটি কা’টলোনা।
সারু বলল,

“হ্যা এবার ঠিকাছে, এটা স্বপ্নই। নয়তো চিমটি তো কা’টতেনই। দিবাস্বপ্ন দেখার লিমিট থাকে আমি তো তা ক্রস করে ফেলেছি।”(আফসোসের স্বরে)

শেরহাম এবারই নিরুত্তর। এতো বছরে সারু যা চেয়েও পায়নি, তা আজ অনাকাঙ্খিত পেয়েছে শেরহামের থেকে। শেরহাম ঝুঁকে সারুর অধরজোড়া আঁকড়ে ধরলো নিজের অধর দ্বারা এবং কা”মড় দিলো। দিয়েই একমুহূর্ত দেরি করলোনা, ভরাট কণ্ঠে বলে উঠলো,,

“পড়ার টেবিলে গিয়ে বসো।”

বলেই সারুকে ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো শেরহাম। এদিকে শেরহামের এহেন কাজে বরফে পরিণত হলো সারু। শেরহাম তাকে চু”মু খেয়েছে, অবিশ্বাস্য! ঠোঁটে হাত দিলো সারু। ছুঁতেই ব্যথা অনুভব করলো খানিকটা। শেরহাম কা”মড় দিয়েছে। ব্যথা যেহেতু অনুভব হচ্ছে তাহলে এটা বাস্তব স্বপ্ন নাহ। সারুর মাথা ঘুরানোর দ্বারপ্রান্তে। এই লোক তাকে চু’মু খেয়েছে। ঠোঁটে হাত দিয়ে ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সারু। এমন ভাবে জমে দাঁড়িয়ে আছে যেন সে এই মুহূর্তে পৃথিবীর বাহিরে।

“এই লোকটা! এই লোকটা বিয়ের তিন বছরে এই প্রথম আমার এতো কাছে এসেছে! আমাকে চু”মু খেয়েছে। কিভাবে সম্ভব!”

সারুর নিজের ভাবনার মাঝে দরজার দিকে নজর গেলো। শেরহাম দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকে হাত ভাজ করে ব্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইতস্ততবোধ করলো সারু। শেরহাম ইশারা করলো পড়ার টেবিলে গিয়ে বসতে, সারু শেরহামকে একজনর দেখে এগিয়ে গেলো টেবিলের দিকে।
শেরহাম এসে তার পাশে চেয়ার টেনে বসলো।

“পরীক্ষার আর মাত্র অল্প কিছুদিন বাকি আছে। প্রিপারেশন কেমন?”

“ভ.. ভালো।”

“যদি কিছু বাকি থাকে তাহলে শুরু করো ওখান থেকে।”

সারু আর উত্তর করলোনা, পড়া শুরু করলো। শেরহাম তার পাশেই বসে রইলো। তার নজর ফোনের দিকে। সারু ভেবে পাচ্ছেনা এই লোকটা এভাবে তার পাশে শুধু শুধু বসে আছে কেনো। হুট্ করে চুমু খেলো, ওইরকম বাচ্চা নেয়ার প্রসেসিং এর কথা বললো আনএক্সপেক্টটেড ভাবে। এখন এভাবে পাশে বসে আছে। সারু ভেবে পাচ্ছেনা লোকটার মাথার স্ক্রু কী শক্ত হয়েছে? সারুর মনে প্রশ্ন জাগলো। আজকে যে সে তার জেঠি শাশুড়ির কাছে ডিভোর্স পেপার রেডি করাতে গিয়েছিলো তা শেরহাম কিভাবে জানলো?
সারুর মনে প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতেই থাকলো। এক পর্যায়ে সে শেরহামকে মিনমিনিয়ে বলে উঠলো,,

“জেঠিমণির কাছে যে ডিভোর্স নিতে গিয়েছিলাম আপনি কিভাবে জানলেন?”

শেরহাম ফোনের থেকে নজর সরালো। তার দিকে শান্তি দৃষ্টিতে তাকালো। সারু নজর সরিয়ে ফেললো। এই শান্ত দৃষ্টিতে তার হৃদস্পন্দন তড়িৎ বেগে ছুটছে। এ যেন চলন্ত ট্রেনকেও হার মানাবে।

“জেঠিমণি বলেছেন। “(গম্ভীর কণ্ঠে)

সারু চুপ করে রইলো, বলার মতো এখন কিছু নেই। তাই চুপ করে থাকাটাই ভালো। সারু পড়ায় মনোযোগ দিতে গিয়েও থেমে গেলো শেরহামের বাক্য বচন শুনে,,

“পরীক্ষা শেষ হোক, এরপর কাউকে তোমার মাতৃত্ব নিয়ে কথা তোলার সুযোগ দিবোনা। তৈরী থেকো, ইউ নো হোয়াট আই মিন?”(গম্ভীর কণ্ঠে)

সারুর শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো। শেরহাম এই কথাটা বলার সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালো এরপর হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
এদিকে সারু থমকে রইলো। হুট্ করে শেরহাম এমন এতকিছু বলবে ভাবেনি সারু। সারু কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে বুঝে উঠতে পারছেনা। ডিভোর্স এর কথা শুনে শেরহাম এমন এমন কথা বলছে যা সারুকে কাঁপিয়ে তুলতে বাধ্য করছে। শেরহাম যাওয়ার সময় যেই ভূমিকম্পর ন্যায় কথাটা বলে গেছে এখন সারু চাইলেও পড়ায় মন বসাতে পারবেনা। অদ্ভুত একটা কিছু অনুভব করছে সারু।
বিছানাতে সারুর ফোন রাখা ছিল, কলের শব্দে বিছানার দিকে তাকালো। ধীর গতিতে উঠে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলো। শেরহামের নাম্বার। সারু ব্রু কুঁচকালো। এইতো লোকটা উঠে বাহিরে গেলো এখন আবার ফোন কেনো দিচ্ছে?
সারু রিসিভ করতে যাবে, এমন সময় কলটা কে’টে গেলো। সারু গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো, বেশি গভীরে যাওয়ার আগেই আবারো কল আসলো।
হালকা কেশে কলটা রিসিভ করলো সারু। ওইপাশ থেকে গম্ভীর স্বরে শেরহাম বলে উঠলো,,

“এতো ভাবাভাবির কিছু নেই। চুপচাপ পড়তে বসো। আমার কথায় এতো শকড হওয়ার কিছু নেই। তুমি বাচ্চা বলে এতদিন ছাড় দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি সেই বাচ্চাকালেই আমাকে সিডিউস করার ট্রাই করেছো। তখনো ভেবেছিলাম বাচ্চা ঐজন্যই আবেগের বশে এমন করেছো। কিন্তু আজকে ডিভোর্স এর ব্যাপারটা জানার পর আমার বোধগম্য হলো তুমি বাচ্চা না। তোমার পাখা অনেক বড় হয়েছে, এখন আমার সময় হয়েছে তোমার পাখা কাঁ”টার। শুধু তোমার পরীক্ষাটা শেষ হোক সিডিউস আর ডিভোর্স এর শোধ তুলবো।”

বলেই শেরহাম কল কে”টে দিয়েছে। এদিকে বিস্ময়ের উপর বিস্মিত হয়ে চলছে সারু। সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো সারুর। মাথার মধ্যে তার একটা কথাই ঘুরছে সিডিউস আর ডিভোর্স এর শোধ তুলবে শেরহাম। এরমানে.. ভাবতেই কেঁপে উঠলো সারু। কী এক অদ্ভুত অনুভূতি।
মাথা ঝাকালো সারু। এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলা দরকার। সামনে পরীক্ষা, এখন পড়তে হবে। পরীক্ষার জন্য হলেও আপাতত বাড়িতে তাকে নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন উঠবেনা। কিন্তু শেরহাম! সে এটা কী বললো! পরীক্ষার পর তার মাতৃত্বে আর কাউকে প্রশ্ন তুলতে দিবেনা।
সারুর মনে পরীক্ষা ঘুরছে কিন্তু মাথা ভর্তি শেরহামের বলা প্রতিটা কথা।

চলবে,,