নীরবে নিভৃতে পর্ব-২৮

0
182

#নীরবে_নিভৃতে
#পর্ব_২৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

” তাহলে বাবাকে পাঠাবো আঙ্কেল? ”
বাজারে চায়ের দোকানে মুখোমুখি বসে কথাটি বলে আহনাফ। সিদ্দিক নিজেই আহনাফকে ডেকেছিল। চা খেতে খেতে দু’জনে কথা বলেছে এতক্ষণ।
” অবশ্যই! তোমার যখন সুবিধা তখনই বিয়ে হবে। ”
” তাহলে কি পাঁচ বছর পর বিয়ে করা সম্ভব আঙ্কেল? ”
আহনাফের এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছে মিষ্টির বাবা। এতো বছর কীসের জন্য অপেক্ষা করতে চাচ্ছে? হাতের চায়ের কাপটা বেঞ্চির উপর রেখে কৌতূহলী দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকালেন তিনি।
” কিন্তু কেনো?”
” মিষ্টি বলছিল, গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর ও বিয়ে করতো। শুধুমাত্র আপনাদের জন্য এখন বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।”
” বুঝতে পেরেছি। কিন্তু ওর মা এসব মানবে না। তারচে বিয়ের পর বরং নিশ্চিন্তে লেখাপড়া করবে।”
” ঠিক আছে। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আগামীকাল বাবাকে নিয়ে আসবো বরং। সাথে আমার কয়েকজন আত্মীয় থাকবে। বুঝতেই পারছেন, একমাত্র চাচা চাচি আছে আমার। খালামনির পরিবারের লোকজন আসবে তবে বিয়েতে একেবারে। ”
আহনাফ কিছুটা ইতস্ততভাবে বললো। সিদ্দিক আহমেদ হেসে আহনাফের কাধেঁ হাত রাখেন।
” হ্যাঁ উনাদেরও নিয়ে এসো। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। এখন তাহলে আসছি আমি। মেহেক এখনো বাড়ি ফেরেনি বলে মনটা খুব অশান্ত লাগছে। ”
আহনাফ মিষ্টির কাছে সবকিছুই শুনেছে। তাই আলাদা করে কিছু জানতে চাইলোনা।
” চিন্তা করবেন না। মেহেকের সাথে সবকিছু ভালো হবে। সাবধানে যাবেন। ”
” ঠিক আছে বাবা। ”

আহনাফকে রেখে মিষ্টির বাবা ধীর পায়ে বাড়ির দিকে এগোতে লাগলেন।

পড়ন্ত বিকেল। সূর্য প্রায় অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে আরামসে ঘুমিয়ে গিয়েছিল মেহেক। একটু আগেই উঠেছে। দীর্ঘদিনের অনিদ্রা আজ যেনো ঘুচল ওর। রোশনের সঙ্গ পেয়ে সব চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে মেহেক যতক্ষণ ঘুমিয়েছে রোশন ঠিক ততক্ষণ ওর পাশে বসে ছিলো। ঘুমন্ত স্ত্রী’র দিকে তাকিয়ে একা একাই সময় কাটিয়েছে লোকটা।
” বাবা তো অনুমতি দিয়ে দিয়েছে, আমরা কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই বের হবো।”
ব্যাগে রোশনের কিছু দরকারি জামাকাপড় ভরতে ভরতে বললো মেহেক। রোশন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে ।
” হ্যাঁ ঠিক আছে। ”
রোশন সিগারেটে খাচ্ছে বুঝে জামাকাপড় রেখে মেহেকও জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। সিগারেটের ধোঁয়ায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলেছে মেয়েটা।
” এতো বিশ্রী ঘ্রাণ! কীভাবে এসব ছাইপাঁশ খাচ্ছেন? ”
রোশন হেসে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশটুকু জানালার বাইরে ফেলে দিয়ে একহাত মেহেকের কোমরে রেখে নিজের কাছাকাছি নিয়ে এলো।
” ফেলে দিলাম। খাচ্ছি না সিগারেট তবে তোমাকে খেতে….”
” চুপ করুন! চরিত্রহীন লোক একটা। ”
মেহেক নিজেকে ছাড়াতে চাইলে রোশন আরো গভীরভাবে কাছে টেনে নিলো ওকে। মেহেক টাল সামলাতে না পেরে রোশনের দুই কাঁধে দু-হাত রেখে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে।
” শুধু শুধু চরিত্রের দোষ দিও না তো। আমি কি বলেছি তোমাকে খুব হট এণ্ড সেক্সি লাগছে? না-কি এটা বলেছি তোমার কোমরের তিলটা খুব সুন্দর! ”
কপালে লেপ্টে থাকা কিছু চুল মেহেকের কানের পাশে গুঁজে দিলো রোশন। কথাগুলো নিজে নিজে রিপিট করতেই তড়িৎ গতিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো মেহেক। কোমরে হাত রেখে বললো,
” বলার বাকি রেখেছেন কিছু? বাই দ্য ওয়ে, আপনি কোমরের তিল দেখলেন কখন! আজ তো শাড়ি পরিনি!”
রোশন ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে আবারো এগিয়ে এলো ওর দিকে।
” কেউ যদি ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের কামিজ নিজেই সরিয়ে রাখে আমার দেখা কি বারণ নাকি? আমি আরো ভালো করে সরিয়ে দেখেছি একটু। একটুখানি দেখেছি কিন্তু বেশি না হুহ্। ”
মেহেক রেগেমেগে আবারো বিছানায় গিয়ে বসে জামাকাপড় গোছাতে লাগলো।
” আপনি আসলেই একটা অসভ্য! এসব করা চলবে না বলে দিলাম। ভালোবাসি বলে কি এসব করতে হবে না-কি! ”
” না তো।”
” তাহলে? ”
” বিয়ে করলে করতে হয় বলেই ওসব করতে হবে। ”
” আপনি…. ”
রোশন কথাটা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মেহেক ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর একা একাই হাসতে শুরু করলো।

এশার আজান হচ্ছে চারদিকে। এরমধ্যেই নামাজ পড়তে দাঁড়িয়েছেন আহনাফের বাবা। আহনাফ বাসায় ফিরেছে মাত্র। বাবাকে নামাজ পড়তে দেখে নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হবার কথা ভাবছে। আরো আগেই ফিরতো বাসায় কিন্তু মিষ্টির পরিবার রাজি হয়েছে শুনে বন্ধুরা অনেক মজা করেছে। বিয়ে থেকে এতদিন দূরে থেকে হুট করে নিজের ছাত্রীকে বিয়ে করা নিয়ে তাদের কতো তামাশা! ওয়ারড্রব থেকে তোয়ালে নিয়ে পা বাড়াতেই ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা ফোনটা বেজে উঠল। আহনাফ ফোন হাতে নিয়ে মিষ্টির নম্বর দেখে মৃদু হেসে রিসিভ করে।

” আসসালামু আলাইকুম স্যার। ”
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। কী খবর মিষ্টি! কোনো ভালো খবর আছে না-কি, এতো উৎসাহী শোনাচ্ছে তোমাকে! ”
ফোনের অপরপ্রান্তে বসে মিষ্টি চমকাল। লোকটা গলার আওয়াজেই বুঝে গেলো?
” হ্যাঁ। মেহেক আপু এসেছে, সাথে রোশন ভাইয়াও!”
” ওয়াও! গ্রেট নিউজ। বলেছিলাম না সবকিছু ঠিকঠাক হবে? ”
” হ্যাঁ। তবে ভাইয়ার গুলি লেগেছিল। সেজন্য এতদিন অসুস্থ ছিলেন।”
আহনাফ দুঃখ প্রকাশ করে শুধালো,
” ইশ! এখন কী অবস্থা? ”
” এখন ঠিক আছে বললো। আপনি কোথায় আছেন? ”
” কেনো? দেখা করতে চাচ্ছ?”
আচমকা আহনাফের প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল মিষ্টি। এমনি জিজ্ঞেস করেছিল কথাটা কিন্তু আহনাফ কী বললো!
” না। আচ্ছা পরে কথা হবে। রাখছি।”
মিষ্টি নিজের বিব্রতবোধ বুঝতে না দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে কল কেটে দিয়েছে। আহনাফ ইচ্ছে করেই কথাটা বলেছিল বলে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমের দিকে এগোলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বাবাকে সবকিছু খুলে বলে চাচা, চাচিকে কল দিয়ে আগামীকাল সকালে আসতে বলে আহনাফ। একমাত্র চাচাতো ভাই সাইমুম প্রবাসী। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে বছর সাতেক আগেই কুয়েত পারি জমিয়েছিল সে। সামনের বছর দেশে ফিরবে একেবারে। তারপর বিয়ে!

ঘড়িতে রাত নয়টা বেজে দশ মিনিট। রাতের জন্য রান্না করছেন আনজুম বেগম। মেহেকও সাথে সাহায্য করছে। মিষ্টি রোশনের সাথে বারান্দায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। দু’জনে বেশ মিলেছে। মেয়ে জামাই আসাতে নিজেদের পালিত মুরগি জবাই দিয়েছেন আনজুম। ঘরে পোলাও এর চাল ছিলো আগে থেকেই। হুট করে যে রোশন আসবে তা তো সিদ্দিক আহমেদ জানতেন না। তাছাড়া পরিস্থিতি কেমন হয় সেসব নিয়েও চিন্তিত ছিলেন। সবমিলিয়ে তাই বাজার-সদাই করা হয়নি আজ। মুরগির মাংস রান্না প্রায় শেষের পথে। মেহেক পোলাও সিদ্ধ হলো কতদূর সেটা চেক করছে।
” মা দেখো তো পোলাও হয়ে গেছে মনে হয়। ”
মেয়ের কথায় আনজুম পাতিল থেকে চামচ দিয়ে কয়েকটা পোলাও উঠিয়ে দেখলেন। তারপর ব্যস্তসমস্ত ভঙ্গিতে বললেন,
” হ্যাঁ হয়ে গেছে। চুলো থেকে উঠিয়ে রাখ এখুনি। ”
মেহেক মায়ের কথামতো কাজ করে। এরমধ্যে মিষ্টি এসে দাঁড়াল রান্নাঘরের দরজার কাছে।
” রান্না হলো মা? আমার তো খিদে লেগেছে। আপা ভাইয়ারও মনে হয় সেইম!”
মেহেক হেসে বললো,
” তোরা দু’জন আরেকটু সময় হাওয়া খেতে থাক। এখনো মাংস হয়নি। ”
আনজুম বেগম মেয়েদের কথা শুনে মিটমিট করে হাসছেন। মাংসও হয়ে গেছে। কিন্তু মেহেক ইচ্ছে করে মিষ্টিকে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করছে।
” ধুর! যাই তাহলে ভাইয়ার সাথে গল্প করি।”
” আরে হয়ে গেছে রান্না। যা বাবাকেও ডেকে নিয়ে আয় তোদের সাথে। আমি খাবার বাড়ছি। ”
বোনের কথায় হাসতে হাসতে চলে গেলো মিষ্টি। মেহেক ও আনজুম খাবার-দাবার খাওয়ার টেবিলে নিয়ে যাচ্ছে।

” শ্বাশুড়ির হাতের রান্না তো জোশ!”
বিছানায় বসে বললো রোশন। মেহেক চেয়ারে বসে চুল বিনুনি করছে।
” হ্যাঁ, মায়ের হাতের রান্না খুব মজাদার হয়। ”
” মায়ের কাছ থেকে শেখো একটু হুহ্। ”
সিগারেট ঠোঁটের কোণে গুঁজে সুখটান দিচ্ছে রোশন। মেহেক ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
” আমি কি রান্না করতে জানি না?”
” হ্যাঁ। কিন্তু মায়ের মতো তো না। ”
” তা ঠিক। সবার রান্না তো একরকম হয় না। ”
” তুমি রাগ করছো না কেনো সুন্দরী? ”
মেহেক মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে বিনুনি পেছনে ফেলে মশারী টানাতে লাগলো।
” রাগ করবো কেনো? ”
” এই যে তোমার রান্না মায়ের থেকেও ভালো হওয়া স্বত্বেও আমি খারাপ বললাম! ”
” আপনার কি আমাকে পাগল মনে হয়? না-কি মিষ্টির মতো ছোটো? কিছু বললেই ক্ষ্যাপানো যাবে নাকি আমাকে!”
রোশন হেসে মেহেকের ডান হাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের বুকের উপর শুইয়ে দিলো। মশারীর এক কোণা এখনো টানানো হয়নি! মেহেক আঁতকে উঠল হঠাৎ।
” আরে কী করছেন! বুকে লেগে যাবে তো।”
” কিচ্ছু হবে না। ”
” কিন্তু মশারী… ”
” চুলোয় যাক তোমার মশারী, আগে আসো প্রেম করি।”

চলবে,